বিপদসঙ্কেত – ১১

এগারো

অন্ধকারাচ্ছন্ন ডাক্টের আরও গভীরে ঢুকে পড়ল কিশোর, আর ওর পায়ে-পায়ে টিনাও। ঠাণ্ডা ধাতু গায়ে শিহরণ জাগাচ্ছে, আস্তে-আস্তে গুড়ি মেরে এগনোর মত জায়গাটুকুই এখানে রয়েছে শুধু। আবারও সাহায্যের আর্তনাদ শোনা গেল, তারপর অটুট নিস্তব্ধতা।

কিশোর আর টিনা আরও খানিক দূর এগোল। ওদের ডানদিকে এক ওয়ায়্যারমেশ গ্রিল; ওটার ফাঁক গলে এক সাবমেরিনের কনিং টাওয়ারের কমলা আলো দেখা যাচ্ছে।

‘মনে হচ্ছে ওটা সুড়ঙ্গের ভেতরেই আছে,’ টিনা ফিসফিসিয়ে বলল। ‘তবে নড়ছে না।’

‘একটা ধুপ-ধাপ শব্দ পাচ্ছি। কেউ বোধহয় দেয়ালে- টেয়ালে কোথাও লাথি মারছে।’

শব্দ লক্ষ্য করে এগোচ্ছে কিশোর আর টিনা। এয়ার- কণ্ডিশনিং ডাক্টের শেষ বাঁকটা ঘুরল ওরা, তারপর ছোট্ট এক মই বেয়ে উঠে এল আরেকটি আঁধারময় অংশে। এক কাঠের দেয়ালের ফাঁক-ফোকর গলে চুইয়ে আসছে আলো। ক্ষীণ আভায় দেখা গেল দেয়ালের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে এক লোককে। মুখে এক টুকরো কাপড় গোঁজা তার। কিশোর কাপড়টা টেনে ছিঁড়তেই চিনতে পারল লুইস প্যাটেনকে। মরিয়ার মত হাঁফাচ্ছে লোকটা, চোখজোড়া বিস্ফারিত।

‘জলদি করো, বাছারা। মাত্র অল্প ক’মিনিট সময়। আমার পায়ের কাছে বোমা সেট করা, শিগিরি ফাটবে ওটা। দেয়ালের ওই ফাঁকটা দিয়ে গিয়ে মিস্টার কুপারকে মুক্ত করো, তিনি আমাকে এখান থেকে ছাড়াবেন।’

‘তাঁকে মুক্ত করব মানে?’

‘শীঘ্রি যাও! আমি এভাবে মরতে চাই না!’

রুক্ষ বোর্ডের মাঝখান দিয়ে চলে-যাওয়া সরু জায়গাটায় দৌড়ে গেল কিশোর আর টিনা। সামনে কী বিপদ ওত পেতে রয়েছে জানে না, আঁধার অনুসরণ করে এগিয়ে চলল ওরা, যতক্ষণ অবধি কিশোরের হাত এক কালচে মখমলের পর্দা স্পর্শ না করল। ওটাকে একপাশে সরাতেই, ম্লান আলোর ইকড়ি মিকড়ি দেখল ও। খোলা জায়গাটির মাঝখানে মাছের বিশাল এক ট্যাঙ্ক; স্টিংরে, গ্রুপার আর টার্পিন। ট্যাঙ্কের সার্ফেসের ওপরে বুকে দড়ি বাঁধা মি. কুপার ঝুলছেন। তাঁর হাত-পা-মুখ বাঁধা, এমনকী চোখও বেঁধে রাখা হয়েছে। ছাদ থেকে এক ব্র্যাকেটে জোড়া ঝুলন্ত দড়িতে ধীরে-ধীরে পাক খাচ্ছেন দশাসই মানুষটি।

ব্র্যাকেটের কাছে স্কুবা আউটফিট পরা কেউ একজন দাঁড়িয়ে, মুখোশে ঢাকা পড়েছে মুখ আর মাথা ঢাকা কালো রবারে। কিশোর আর টিনার শব্দ পেয়ে, অচেনা মানুষটি ওদের উদ্দেশে ঘুরল, হাতে স্পিয়ারগান।

বিপজ্জনক ভঙ্গিতে ওটা নেড়ে সামনে এগোতে নির্দেশ দিল ওদের কিশোর গেল ট্যাঙ্কের বাঁ দিকে, আর টিনা ডানে। কালো পোশাকধারী স্পিয়ারগানটা দু’পাশে ঘুরিয়ে ওদের দু’জনকে কভার করতে চাইছে। এবার দূরে কোথাও থেকে এক বিস্ফোরণের শব্দ এল, ফলে কেঁপে উঠল ট্যাঙ্কের কাঁচ এবং টার্পিন মাছগুলো সাঁত করে লুকিয়ে পড়ল। ট্যাঙ্কের তলদেশে, ওটার কাঁচের দেয়ালের পাশে, ফার্নের মাঝে এক প্যাকেজ চোখে পড়ল কিশোরের।

এবার দেখল হাঙরটাকে।

দূর থেকে তরতর করে ওর দিকে এগিয়ে এল ওটা। নিচের কাঁচের দেয়ালটির কাছে পৌঁছে সরে যেতেই, দ্বিতীয় আরেকটি হাঙর উদয় হলো। অবশেষে কিশোর টের পেল বোমা ফেটে ভেঙে গেছে ট্যাঙ্ক, মুক্ত করে দিচ্ছে হিংস্র হাঙরগুলোকে। ওরা এখন সাগরে, এবং দেয়ালের কাছে যে প্যাকেজটি রয়েছে সেটি ফাটলেই নিচের ট্যাঙ্কে ঢুকে পড়বে ভয়ঙ্কর প্রাণীগুলো। তারপর মি. কুপারের ওপর হামলে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

হঠাৎই চাপা এক আর্তচিৎকার। টিনা আছড়ে পড়েছে স্কুবা সুট পরা অবয়বটির ওপর, পেছন থেকে ধাক্কা খেয়ে কৃষ্ণমূর্তির স্পিয়ারগানটা টুপ করে পড়ে গেছে ট্যাঙ্কের ভেতরে। কিশোর গানটা চেপে ধরে তুলে আনল পানি থেকে, কালো অবয়বটি ওর উদ্দেশে তেড়ে আসতেই টিনার দিকে ছুঁড়ে দিল ওটা। ওরা যুঝছে, টিনা ওদের ওপরে দাঁড়িয়ে মুখোশধারীকে লক্ষ্য করে গানটা তাক করল।

‘ওকে ছেড়ে দিন,’ চেঁচাল ও। ‘নইলে মরবেন।’

শক্তিশালী হাতজোড়া আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে উঠে যেতেই মুক্তি পেল কিশোর। ট্যাঙ্কের ওপাশে ঊর্ধ্বগতিতে ছুটে গিয়ে, দড়িটা চেপে ধরে সর্বশক্তিতে টানল। কয়েকটা পুলির ওপর রশিটা, ফলে মি. কুপারকে কেবল অল্প একটু উঁচু করতে পারল কিশোর। এবার…

গুড়ুম!!

ট্যাঙ্কটা ছত্রখান হয়ে যেতেই পানি উড়ল চারদিকে। মাটিতে পড়ে গেল কিশোর, কিন্তু দড়িটা ছাড়েনি। কোনমতে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে, মি. কুপারকে আরেকটু উঁচাল ও, ঠিক পরমুহূর্তেই সবেগে ভাঙাচোরা ট্যাঙ্কের ভেতরে আছড়ে পড়ল এক ক্ষুধার্ত হাঙর। ওটার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করল এক স্টিংরে, এবং একটু পরেই এক গ্রুপার দ্বিতীয় আক্রমণকারীর করুণ শিকারে পরিণত হলো।

ট্যাঙ্কের হাঙরগুলোর শয়তানী ভরা চোখের দিকে চেয়ে রইল কিশোর, জানে শীঘ্রি ওরা মি. কুপারকে ওপরে ঝুলতে দেখবে। এবার কালো পোশাকধারীর স্পিয়ারগানের তোয়াক্কা না করে ছুট দিতেই চিৎকার ছাড়ল টিনা।

‘আমি পারব না, কিশোর! ওকে গুলি করতে পারব না! সাবধান!’

ভাবনার জন্য মুহূর্তমাত্র পেল কিশোর, দড়ি ফেলে না দিয়ে নিজেকে কীভাবে বাঁচাবে? এবার দেয়ালে আঘাত করল একটি স্পিয়ার, পলকের জন্য কিশোর আর হামলাকারীর মধ্যে বাধা সৃষ্টি করল।

টিনা গান ফেলে মি. কুপারকে টেনে আরও ওপরে তুলতে ছুটে গেল। ঠিক এমনিসময় পানি থেকে বিস্ফোরণ ঘটাল হাঙরটা, ওটার ক্ষুরধার দাঁতগুলো এখন বিপজ্জনক দূরত্বে। ওরা টেনে চলেছে, মরিয়া চেষ্টা চালাল আরেকটা হাঙর, অল্পের জন্য রক্ষা পেল ভদ্রলোকের পায়ের পাতাজোড়া। মুখোশধারী স্পিয়ারের নিচ দিয়ে তীরবেগে ছুটল এবং প্রাণপণ চেষ্টা করল মি. কুপারের লাইফলাইন থেকে ওদেরকে ধাক্কা মেরে সরাতে, কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দার মতন দড়িটা আঁকড়ে ধরে রইল।

চোখের কোণে কিশোর দেখল কাছের এক মইয়ে একজোড়া পায়ের পাতা উদয় হয়েছে, ওপরে কোথাও যুক্ত হয়েছে মইটা। এবার বিদ্যুৎ গতিতে উর্দিধারী এক মহিলা পুলিস অস্ত্র হাতে নেমে এলেন মই বেয়ে।

‘নড়বেন না!’ কালো পোশাকধারীর উদ্দেশে বেড়াল পায়ে এগোলেন তিনি, নিষ্কম্প হাতে বাগিয়ে ধরেছেন পিস্তল। ‘পেছনে আমাদের লোক আছে।’

‘কিন্তু,’ টিনা বলল। ‘আপনারা এত তাড়াতাড়ি এখানে এলেন কীভাবে?’

‘ওয়াটারপার্কের বোমার ঘটনায় আমরা ইতিমধ্যেই মল-এ ছিলাম। সান্তা মারিয়া-র নিচে বোমা ফাটার শব্দ পেয়ে একজন আমাদেরকে জানায়।’ মই বেয়ে অন্যান্য অফিসাররা নেমে আসছেন, আক্রমণকারীর মুখ থেকে স্কুবা মাস্কটা টেনে খুললেন মহিলা পুলিস। এবং পরম বিস্ময়ে আঁতকে উঠল টিনা

‘এ কী! গর্ডন!’

.

এক ঘণ্টা পর। টিনার ঘোর তখনও কাটেনি। সান্তা মারিয়া-র ডেক-এ বসে রয়েছে ও, এক কামানের গায়ে হেলান দিয়ে। কিশোর কাছেই রয়েছে, গর্ডন ব্যাগলিকে করা পুলিসী জেরা শুনছে। সোনালীচুলো লোকটির হাতে হাতকড়া। নিচে জাহাজের হোল্ডে চলে গেছে সেই খোলা হ্যাচটির কাছে বসা সে, খুনে হাঙরগুলো আরেকটু হলেই যেখানটায় মি. কুপারের ভবলীলা সাঙ্গ করতে যাচ্ছিল।

পুলিস যথাসময়ে পৌঁছে সান্তা মারিয়া-র সামনের হোল্ডের বোমা থেকে রক্ষা করে লুইস প্যাটেনকে।

‘আবার বলুন, গর্ডনকে বললেন ইন্সপেক্টর উইন্টার ঈগল। ‘আপনি খালি পড়ে থাকা ফরোয়ার্ড হোল্ডে গোপন হেডকোয়ার্টার বানান, তাই তো? কিন্তু বোমা তৈরির মাল-মশলা ওখানে নিলেন কীভাবে?’

‘লিডিয়াকে মাছেদের খাবার দেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতাম। আমরা যখনই সান্তা মারিয়া-য় উঠতাম আমার সাথে প্রায়ই কোন না কোন প্যাকেজ থাকত, কিন্তু আমি যে ওটা রেখে নেমে যেতাম লিডিয়া তা খেয়াল করত না।’ শুকনো হাসল ও। ‘পরে ডাক্টের ভেতর দিয়ে দোকান থেকে সান্তা মারিয়া-য় গিয়ে ট্যাঙ্কের কাছ থেকে প্যাকেজগুলো তুলে নিতাম, যেখানে রেখে আসতাম সেখান থেকে আরকী।’

‘আপনি লিডিয়াকে ব্যবহার করেছেন,’ রাগতস্বরে বলল টিনা। ওর সাথে ভালবাসার অভিনয় করে পটিয়ে পাটিয়ে সান্তা মারিয়া-য় ঢোকার চোরাই পথ বের করেছেন। কী জঘন্য লোক!’

‘সব দোষ ওই কুপার গাধাটার। ধনী মহিলাটাকে আমার বিয়ে করার কথা সব ঠিকঠাক, কিন্তু কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল ব্যাটা। ওকে দামি-দামি গোলাপ আর ডিনারের দাওয়াত দিয়ে ভজিয়ে ফেলল, শেষে বেটি ভেগে গিয়ে ওকেই বিয়ে করল। এই হলো মেয়েমানুষ!’

‘আর আপনি হলেন আদর্শ পুরুষমানুষের নমুনা, তাই না?’

‘চুপ, বেয়াদব মেয়ে।’ হাতকড়া টানাটানি করে খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করল গর্ডন, আক্রোশে ফুঁসছে। ‘আমাকে ছ্যাঁক দিয়েছে সেই বেইমান মহিলাকে সম্মান করতে হবে আমার?’

‘আর এলিস?’ টিনা বলল। ‘ওকে কীভাবে ব্যবহার করেছেন আপনি?’

হেসে উঠল লোকটা।

‘বেচারী এলিস! বাপ ছুটল টাকার পেছনে, আর ও হয়ে পড়ল একা। বাপের মনোযোগ কাড়তে কতই না চেষ্টা করেছে, কিন্তু সে ফিরে তাকালে তো! ব্যাটা সারাক্ষণ এই মল নিয়ে পড়ে আছে। এখন হয়তো লোকটার মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে, যদিও সন্দেহ আছে আমার।’

‘মনে হচ্ছে,’ ইন্সপেক্টর উইন্টার ঈগল বললেন, ‘আপনি ওর দুঃখটা বুঝতেন। আপনার কারও প্রতি এধরনের অনুভূতি থাকতে পারে ভাবাই যায় না, তবে তাতে ওর বাবাকে খুন করার পরিকল্পনা করতে কোন দ্বিধা হয়নি আপনার।’

‘কেন হবে?! আমি কুপার আর তার ব্যবসার বারোটা বাজাতে চেয়েছিলাম, তাই এখানে উড়ে এসে টুর গাইডের কাজ নিই। মল-এর গোপন খুঁটিনাটি জানার ওটাই ছিল সবচেয়ে সহজ উপায়। রাতে অফিসে বসে মল-এর নকশা দেখতাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।’

‘তাই আপনার জানা ছিল এয়ার-কণ্ডিশনিং ডাক্ট দিয়ে সান্তা মারিয়া থেকে কীভাবে মল-এর যে কোনখানে যাওয়া যায়?’

‘হ্যাঁ। ডাক্ট দিয়ে ক্যাফে অর্লিন্সে প্রথম বোমাটা নিয়ে যাই আমি। ওটা ব্যালকনিতে রেখে, এয়ার-কণ্ডিশনিং ডাক্ট দিয়ে দোকানের স্টোরেজ রুমে ফিরে এসে বেনামী কল দিই।’

‘ফুল ফ্যাদম ডাউন-এ বোমা রাখলেন কেন?’

‘লুইস প্যাটেনকে ফাঁসাতে।’

‘আর ওয়াটারপার্কে?’

‘এই বিচ্ছুগুলো যদি ওটা খুঁজে না পেত, তাহলে ভলিবল কোর্টের বিস্ফোরণটা নিয়ে পুলিস ব্যস্ত থাকত, ওদিকে অন্য বোমাগুলো তখন একের পর এক ফাটতে থাকত।’

‘হাঙরের ট্যাঙ্ক আর সান্তা মারিয়া-য় যেগুলো জুড়ে রেখেছিলেন?’

‘হ্যাঁ। ওগুলো গতরাতে পেতেছি।’

‘হকি খেলা চলার সময় আপনি ইচ্ছে করেই কিশোর আর টিনার দৃষ্টি কাড়েন, ওরা যেন আপনার পিছু নিয়ে স্কেট বোমাটা উদ্ধার করে, তাই না?’

মাথা ঝাঁকাল লোকটা।

‘আমি চেয়েছিলাম আপনারা লুইস প্যাটেনকে সন্দেহ করুন। তাই স্কেটের ভেতরে এল. পি. আদ্যক্ষর বসাই। দোকান বন্ধ হতেই ওকে মেরে অজ্ঞান করে ডাক্টের ভেতর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে সান্তা মারিয়া-য় নিয়ে যাই। জানতাম পুলিস ওর বাসায় তল্লাশী চালাবে এবং সোফার গদির মধ্যে লুকানো তারটাও ঠিকই খুঁজে পাবে। সব কটা বোমায় ওই একই তার ব্যবহার করা হয়েছে, কাজেই সবাই লুইস প্যাটেনকেই অপরাধী ভাববে। আর বিশেষ করে তার যেহেতু জেল খাটার রেকর্ড আছে। তারপর হাঙরগুলো কুপারকে ছিঁড়ে কুটি কুটি করার পরে, প্যাটেনের ছিন্নভিন্ন দেহটা মিলবে, সবাই ভাববে তার গোপন বোমা কারখানায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে লোকটা। ব্যস, কেস ডিসমিস।’ ..

‘তা আপনি কোথায় থাকতেন?’

‘হাঙরেরা যখন মজা করে কুপারকে খেত, আমি তখন ডাক্ট দিয়ে গুড়ি মেরে সোজা আমার দোকানে। কে সন্দেহ করবে আমাকে? আমি ভালমানুষটি সেজে বসে থাকতাম। আমার অ্যালিবাই থাকত ঢালাই লোহার মতন শক্ত, ওদিকে ওই হতচ্ছাড়া লুইস প্যাটেন ছুঁচোটা বোমা বিস্ফোরণে মরে শেষ।’

নাক দিয়ে খোঁত জাতীয় শব্দ করল কিশোর।

‘আমি জানি আপনি লুইস প্যাটেনকে কেন ঘৃণা করতেন। দোকানে আপনার কথায় সে বারবার পুলিসের জেরার মুখোমুখি হতে না চাওয়ায় অপমানে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল আপনার। তার বেয়াড়াপনা সহ্য হয়নি, তাই পানির তলায় মিছে হামলার নাটক সাজিয়ে লোকটার ওপর দায় চাপাতে চান আপনি। ফলে নিজেই ওই এয়ার হোসটা কাটেন! খুবই নোংরা কাজ।’

এক পুলিস অফিসার গর্ডনের বাহু ধরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, আবারও হাতকড়া ঝাঁকাল লোকটা।

‘এসব জিনিস পছন্দ নয় আমার,’ খেঁকিয়ে উঠল। অফিসার হেসে উঠলেন।

‘বন্দিদশায় অভ্যস্ত হয়ে নিন, কাজে আসবে। জেলে দীর্ঘদিন থাকছেন আপনি।’

গর্ডন চলে গেলে, মল-এর চারপাশে চোখ বোলাল টিনা।

‘ওই কোড রেডের শব্দ ছাড়া একদম অন্যরকম লাগবে এ জায়গাটাকে।’

হাতের আঙুল ফোটাল কিশোর।

‘বিপদসঙ্কেত! নামটা কেমন?’

‘চলো দেখি উনি কী বলেন।’ সান্তা মারিয়া ছেড়ে, পুলিস লাইনের ওপাশে জড় হওয়া জনতার কাতারে মিশল কিশোর আর টিনা। ‘এক্সকিউজ মি,’ চশমাধারী এক ভদ্রলোক কী সব নোট নিচ্ছিলেন তাঁর উদ্দেশে বলল টিনা। ‘আপনার নতুন বইয়ের জন্যে কি কোন নাম ঠিক করেছেন?’

‘এখনও করিনি! কেন, তোমাদের কোন প্রস্তাব আছে নাকি?’ তিনি কিশোরের নামটা টুকলেন নোটবইতে, এবার শেষবারের মত ওদের একটা ছবি তুললেন। ‘ভাল থেকো,’ বলে হাত মেলালেন। ‘তোমাদের সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ!’

‘ইউ আর ভেরি ওয়েলকাম,’ জবাবে বলল কিশোর।

‘ঘটনাটা যেহেতু ইন্টারেস্টিং, বলল টিনা, ‘আপনার বইটা খুব চলবে।’

হেসে উঠলেন লেখক ভদ্রলোক।

‘তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক, বাছা।’