পদচিহ্নের উপাখ্যান – ৪

চার

বিজলীর পিঠে চেপে ঝড়োগতিতে আড়াআড়ি র‍্যাঞ্চ পেরোল কিশোর। চলছে তো চলছেই, শেষমেশ তারের বেড়া ভেঙেছে সেই প্রকাণ্ড ডালটার দেখা পেল।

‘হোয়া, বয়,’ বলে, রাশ টানল কিশোর। এবার নেমে পড়ে, বিজলীকে এক গাছের সঙ্গে বেঁধে সরেজমিনে দেখতে গেল। ভারী ডালটা দুটো খুঁটি উপড়ে বেড়ার তার ছিঁড়ে দিয়েছে। মাটিতে ছড়িয়ে রয়েছে ছোট-ছোট বাদামি পাতা আর ডালটার লম্বা-লম্বা বাদামি বীজকোষ।

এসময় ঝাঁ চকচকে নতুন এক গাড়ি এসে থামল ভাঙা বেড়াটার কাছে। পশু চিকিৎসক শাপ গাড়ি চালাচ্ছে, জানালার কাঁচ নামিয়ে হাত নেড়ে ডাকল কিশোরকে।

‘ব্যাপার কী?’ প্রশ্ন করতেই, তার কণ্ঠা ওঠা-নামা করল।

‘ডাল পড়ে বেড়া ছিঁড়ে গেছে,’ জানাল কিশোর।

মাথা ঝাঁকাল শার্প।

‘ও, তারমানে হানি আর বানি এখান দিয়েই পালিয়েছে যাক, চুরি হয়নি জেনে ভাল লাগছে। আচ্ছা, আমি ঘোড়ার ওষুধ কিনতে যাচ্ছি। পরে দেখা হবে।’

কিশোর ডালটা টেনে সরাতে চাইল, কিন্তু ওটা অনেক ভারী আর বড়। এসময় ছোট এক ট্রাক্টর চালিয়ে হ্যারি এল। ওটার পেছনে ইয়াবড় এক টুলবক্স, দড়ি, খানিকটা তার আর এক পোস্ট ডিগার।

‘ডালটা নিশ্চয়ই রাতের বেলায় পড়েছে,’ বলল হ্যারি। রশিটা তুলে নিয়ে এক প্রান্ত ছুঁড়ল কিশোরের উদ্দেশে। ‘এটাকে ডালে ভালমত পেঁচাও, আমি ট্রাক্টর দিয়ে টেনে সরিয়ে নেব।’

ডালটায় দড়ি বাঁধছে কিশোর। রুক্ষ বাকলে ছড়ে গেল বাহুজোড়া, ছোট-ছোট শাখা-প্রশাখা আঁচড় কাটছে মুখে। চোখা পল্লব খোঁচাচ্ছে কাপড়চোপড়ে। পায়ের তলে পিছলে যাচ্ছে লম্বা, বাদামি বীজকোষ। কঠোর পরিশ্রম করে চলল ও, কষে পেঁচাচ্ছে দড়িটা।

‘রেডি’ বলল।

বোঁ বোঁ। চালু হয়েছে ট্রাক্টরটা, বেড়ার কাছ থেকে ধীরে- ধীরে সরিয়ে নিচ্ছে পেল্লায় ডালটা, ঝরে পড়ছে মরা পাতা আর শুঁটি।

‘এটাকে বার্নিং পিটে নিয়ে গেলাম,’ বলল হ্যারি। ‘ঝোপ- ঝাড়, ডাল-পাতা ওখানেই পুড়াই আমরা। ফিরে এসে বেড়াটা সারাই করব।’ ডালটাকে পেছনে টেনে নিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে চলে গেল লোকটা।

গাছের গায়ে হেলান দিয়ে হ্যারির জন্য অপেক্ষা করছে, বিজলীর গায়ে হাত বোলাল কিশোর। গাছের বাকলে কে যেন একটা হৃদয় এঁকেছে। ভেতরে __ এ + এস এল খোদাই করা। বহু বছরের হাড় কাঁপানো শাত আর অসহ্য গরমের দাপটে হৃদয়টা কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে। খোদাই করা হৃদয়টির নিচে, বাকলে একটা গর্ত। এটা কোন কাঠঠোকরার কাজ নয়। ফুটোটা কিশোরের তর্জনীর সমান বড় আর নিখুঁত গোল। কেউ ড্রিল করে ছিদ্রটা করেছে। কিন্তু কেন?

গাছটার ওপাশে হেঁটে গিয়ে আরও দুটো ফুটো পেল কিশোর। একটা গর্ত থেকে বেরিয়ে রয়েছে এক টুকরো কাগজ। কে যেন লিখেছে: গ্রে অ্যারাবিয়ান। বাদামি ফুটকিওয়ালা টাট্টু ঘোড়া। এভাবেই হয়তো র‍্যাঞ্চকর্মীরা একে অন্যের জন্য বার্তা রেখে যায়, ভাবল কিশোর।

আবারও চিহিহি করে ডেকে উঠল বিজলী।

‘আস্তে, আস্তে, বলল কিশোর, কাগজটা গুঁজে দিল জায়গামত। হ্যারি ফিরলে চিরকুট আর গাছের গায়ে খোদাই করা হৃদয়টার কথা জিজ্ঞেস করবে ও।

.

‘ধরে থাকো!’ চেঁচিয়ে বলল রবিন।

‘চেষ্টা করছি তো।’ করালে, এক সাদা ঘোড়ার লাগাম চেপে ধরে রয়েছে মুসা এবং ওটা নাক দিয়ে বারবার গুঁতোচ্ছে ওকে।

রবিন ক্যামেরা তাক করে ছবি নেয়ার চেষ্টা করল।

‘ও তো সারাক্ষণই ছটফট করছে,’ বলল।

‘হ্যাঁ, পুরো আপেলটাই চায়।’ পকেটে হাত ভরে আরেক টুকরো আপেল বের করল মুসা। ‘রেডি হও,’ বলে, ঘোড়াটার নাকের নিচে মুঠো পাকিয়ে ধরল আপেলের টুকরোটা।

রবিন ক্যামেরা ধরে রইল, যতক্ষণ অবধি ঘোড়াটার নাক থেকে লেজ এবং কান থেকে খুর দেখতে না পেল।

‘রেডি!’

মুসা ধীরেসুস্থে মুঠো খুলল।

‘এবার!’

ঘোড়াটা যেই টুকরো আপেলটা গিলল অমনি ছবি তুলে নিল রবিন।

‘হয়েছে!’ বলল।

মেলানি নানু দুটো বড়-বড় গ্লাসে লেমোনেড নিয়ে এলেন ওদের জন্য।

‘কাজটা কিন্তু কঠিনই,’ বললেন।

‘মাত্র অর্ধেকটা হয়েছে,’ বলল মুসা। ‘ডেয়ার টু ড্রিমে তো অনেক ঘোড়া।’

হেসে উঠলেন মেলানি নানু।

‘এ তো কিছুই নয়। ছোটবেলায় এই র‍্যাঞ্চে দুশো ঘোড়া দেখেছি। গরু ছিল, মুরগি ছিল আরও কত কী! অনেক লোক কাজ করত তখন। আমাদের পুরো পরিবার বাস করত এখানে। তোমরা যে বাঙ্কহাউসটায় থাকছ সেখানে আমার প্রিয় বন্ধু টিম থাকত।’ চোখজোড়া ঝিক করে উঠল তাঁর। ‘ওরা টেক্সাসে নিজেদের র‍্যাঞ্চ শুরু করার জন্যে যখন চলে গেল, আমার কী অবস্থা! ছ’বছরের ছোট্ট হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল।’ দু’মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে গেলেন। ‘সেই কবেকার কথা। আমার মত বুড়ো মহিলার পক্ষে বড় র‍্যাঞ্চ চালানো খুব কঠিন কাজ। এখন স্রেফ অল্প কটা ঘোড়া রাখি মানুষের রাইডিঙের জন্যে।’

‘ভাগ্যিস রাখেন,’ বলল নথি। নইলে তো আমাদের আসা হত না।

‘এখন উদ্ধার করা অসহায় ঘোড়াদের দেখাশোনার কাজটাও চালু করেছি,’ জানালেন মেলানি নানু।

‘অমন একটা ঘোড়ার কি অনেক দাম?’ প্রশ্ন মুসার।

মেলানি নানুকে বিস্মিত দেখাল।

‘আমরা তো ঘোড়া বেচি না, মুসা। ভাল ঘর দেখে বিনে পয়সায় দিয়ে দিই। যারা ঘোড়া পালতে চায় তাদেরকে সবসময়ই স্বাগত জানাই।’

‘আমরা একাজে সাহায্য করতে পারি!’ সোৎসাহে বলে উঠল রবিন। ‘রেসকিউ ঘোড়াদের ছবি দিতে পারি ইন্টারনেটে। তাহলে সারা দেশের মানুষ ওদেরকে দেখতে পাবে।’

মেলানি নানু অপ্রস্তুত বোধ করলেন।

‘আমার আসলে অনেক আগেই কাজটা করা উচিত ছিল। এখানে শাপই একমাত্র কম্পিউটার বোঝে। অনলাইন থেকে প্রায়ই ঘোড়ার ওষুধপত্র জোগাড় করে ও। আমি কম্পিউটার ভাল বুঝি না।’

‘আমরা বুঝি,’ বলল রবিন। আপনাকে শিখিয়ে দেব, নানু।’

.

‘গোল্ডফিশ?’ তৃণভূমিতে রাখা পেল্লায়, পুরানো বাথটাবটার ওপরে ঝুঁকল ডন। ঘোড়াদের খাবার পানির ভেতরে, কয়েকটা রঙিন গোল্ডফিশ ঘুরছে।

‘হ্যাঁ,’ বলল শর্টি। পালকখচিত হ্যাটটা খুলে ঘাম মুছল কপাল থেকে। ‘ঘোড়ারা পানি খাওয়ার সময় নোংরা করে, ওদের মুখ থেকে সবসময়ই ঘাস কিংবা খড়ের টুকরো খসে পড়ে। আর মশারা পানিতে ডিম পাড়ে। এই গোল্ডফিশগুলো মশাদের ডিম খেতে খুব ভালবাসে। ওদের কারণে খাওয়ার পানি পরিষ্কার থাকে আর মশাও জন্মাতে পারে না।’

ডনের চোখ ছানাবড়া।

‘কিন্তু…কিন্তু ঘোড়ারা মাছগুলোকে গিলে ফেলে না?’

‘না,’ জানাল শর্টি। ‘ওই দেখো।’ এক অশ্বশাবক মার সঙ্গে হেঁটে এল পানি পান করতে। ওরা বাথটাবে নাক ডোবাতেই, সব কটা মাছ ওপাশে সাঁতরে গিয়ে ওপরদিকে ভেসে রইল। ঘোড়াদের পানি পান শেষে, টাবে সাঁতরে ফিরল গোল্ডফিশগুলো। ‘কৌশলটা দারুণ না?’ বলল শর্টি।

‘আমাদের পোষা কুকুর বাঘাও অনেক ট্রিক জানে,’ বলল ডন। ‘তবে গোল্ডফিশদের ট্রেনিং দেয়া যায় কিনা জানি না।’ হোসটা তুলে নিয়ে তাজা পানি ঢালল বাথটাবে।

‘বাহ, খুব ভাল সাবাস!’ ডনের কাজের প্রশংসা করে বলল শর্টি। হোসের নিচে নিজের হাতজোড়া রাখল এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিল। এরপর কোথায়?’

নকশাটা ৱিছিয়ে ‘X’ চিহ্নগুলো পরখ করল ডন। বেশির ভাগ পানির পাত্র আর বাকেট ভরে ফেলেছে ও ইতোমধ্যেই। তবে করালে পৌঁছনোর আগে আরও কটা জায়গায় যেতে হবে।

‘এখানে,’ আঙুল চেপে ধরে বলল।

‘ঠিক,’ বলল শর্টি। ‘বাকিটুকু তুমি একাই পারবে। খাবারের নতুন চালান এসেছে, ওগুলো নামাতে হবে আমার। লাঞ্চে দেখা হচ্ছে।’

নিজেকে কেমন বড়-বড় লাগছে ডনের। ওকে একাকী গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ সারতে হবে। ও পানি না দিলে ঘোড়াগুলো তেষ্টায় কষ্ট পাবে। অসুস্থ হয়ে পড়বে পানির অভাবে। ডন কি তা হতে দিতে পারে?

‘কাল দেখা হবে, ভাল থাকিস, গোল্ডফিশগুলোকে বিদায় জানিয়ে ম্যাপের পরের ‘X’ চিহ্নিত জায়গাটির উদ্দেশে ছুট লাগাল।

বেড়া ঘেরা কাঠের ছোট্ট এক শেড ‘X’ দাগ দেয়া। এক তৃণভূমিতে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে ওটা। ডন বেড়ার আংটা থেকে পানির বালতিটা নামাতেই, শেডের ভেতর থেকে উঁকি দিল এক টাট্টু ঘোড়া। বাদামি জানোয়ারটার গায়ে একটাও সাদা-কালো ফোঁটা নেই। দু’কানের মাঝখানের কেশর খাড়া হয়ে আছে, মিসেস ম্যাকলিনের স্ক্রাব ব্রাশের মতন।

‘হাই, বাদামি,’ বলল ডন। বাদামি টাট্টু ঘোড়াটা ঘাড় কাত করে বেরিয়ে এল স্টল ছেড়ে। ডনকে বালতি ধুয়ে পানি ভরতে দেখছে।

ডন ঘটনাচক্রে পানি ছিটিয়ে ফেলল ঘোড়াটার গায়ে।

‘সরি, বাদামি।

ঘোড়াটা খোঁত করে উঠল।

হেসে ফেলল ডন।

‘কী, পানির ছিটে লাগায় খুব ভাল লেগেছে, তাই না?’

এসময় চারণভূমির রাস্তা দিয়ে গাঢ় নীল এক পিকআপ ট্রাক গোঁ-গোঁ শব্দ তুলে এদিকেই এল। ছোট রুপোলী এক ট্রেইলারে দুটো ঘোড়াকে বইছে ওটা। ট্রেইলারটার গায়ে খুদে খুদে ডাইনোসর স্টিকার ঠাসা। অশ্বারোহী এক কাউবয়ের ছবি সামনের লাইসেন্স প্লেটে, লক্ষ করল ডন। স্টেটের নামটা উচ্চারণের চেষ্টা করল ও। ‘ডব্লিউ’ দিয়ে শুরু এবং একটা ‘ওয়াই’ আছে ওটার।

‘অ্যাই, ছেলে,’ হাঁকল চালক। একমাথা উজ্জ্বল লাল চুলওয়ালা লোকটি শীর্ণকায়। কাউবয় হ্যাট নয়, উল্টো করে সাদা বেসবল ক্যাপ পরেছে সে। তার কণ্ঠা শার্পের মতই ওঠা- নামা করল কথা বলার সময়। ‘মেইন হাউসটা কোন্ দিকে?’

ডন নকশাটা খুলে মাটিতে বিছাল। বোঝার চেষ্টা করছে এখান থেকে মেইন হাউসে কীভাবে যাবে।

‘তাড়াতাড়ি করো,’ বলে উঠল লোকটা, ‘এতক্ষণ লাগে নাকি?

ডন তর্জনী দেখাল।

‘আমার… আমার ধারণা ওদিকে। ধন্যবাদ জানানোরও প্রয়োজন বোধ করল না লোকটা, গাড়ি হাঁকাল।

বাদামি টাট্টুটা আবারও খোঁত শব্দ করল। গরম লাগছে হয়তো অবলা জীবটার। ডন আকাশের দিকে উঁচিয়ে ধরল হোসটা। বৃষ্টির মতন ঝরল জল। টাট্টু ঘোড়াটা ডেকে উঠে পানির ফোয়ারার দিকে নাক বাড়াল। এবার সোজা এগোল পানি ভেদ করে। তারপর আবারও।

‘জ্যাক নানার স্প্রিঙ্কলারের ভেতর দিয়ে দৌড়ে ভীষণ মজা পাবি তুই,’ বলল ডন। ঘোড়াটার গা বেয়ে পানি ঝরে পড়ল মাটিতে। ডনের পায়ের কাছে জমল ছোট্ট এক ডোবার মতন। ভাগ্যিস শর্টির দেয়া রবারের হলদে ওয়র্ক বুট ছিল ওর পায়ে। এবার ঘোড়াটার জন্য বালতি ভরে দিল ও পানি দিয়ে।

‘কাল দেখা হবে, ভাল থাকিস, বাদামি টাট্টুটাকে উদ্দেশ্য করে বলল ডন।

বাতাসে রান্নার মনকাড়া সুগন্ধ ভেসে আসছে। জিভে জল এল ডনের। শীঘ্রি কাজ শেষ করতে হবে, তড়িঘড়ি পা চালাল। আর অল্প কটা মাত্র বালতি সাফ-সুতরো করে পানি ভরা, তারপরই মেলানি নানুর সুস্বাদু রান্নার স্বাদ নেয়া।

চারণভূমিতে কিশোর ভাঙা বেড়া বরাবর পায়চারী করছে। হ্যারি ট্রাক্টর নিয়ে কখন ফিরবে? কোন কাজ নেই, খামোকা অপেক্ষা করতে বিরক্তি লাগছে ওর। বেড়ার ফাঁকটার কাছে হেঁটে গেল ও। সাবধানে পাতা, পল্লব আর বেড়ার ছেঁড়া তার টপকে ওপাশে গেল। বেড়া আর রাস্তার মাঝখান দিয়ে এক ধূলিধূসরিত পথ চলে গেছে। কিশোর ঘোড়ার খুরের ছাপ দেখল, তৃণভূমি থেকে মেটে পথ ধরে দাগ রেখে গেছে। দেখে তো মনে হচ্ছে হ্যারির কথাই ঠিক-হানি আর বানি স্রেফ হেঁটে বেরিয়ে গেছে।

ডেবোরা এসময় ঘোড়ায় চেপে এল।

‘কিছু জানা গেল?’ প্রশ্ন করল র‍্যাংলার। কিশোর ওকে ঘোড়ার পদচিহ্ন দেখাল। স্বস্তির হাসি ফুটল মেয়েটির ঠোঁটে। ‘যাক, তারমানে চুরি যায়নি ওরা।’

‘চোরে ঘোড়া চুরি করে কেন? কিশোর জানতে চাইল।

‘বিক্রি অথবা বিনে পয়সায় ব্যবহারের জন্যে,’ জানাল ডেবোরা। ‘ভাবিনি এখানে এমন কাণ্ড ঘটবে, কেননা আমরা মানুষজনকে খুঁজে আনা ঘোড়া এমনি-এমনিই দিয়ে দিই। মাগনা পাওয়া যায় যখন লোকে চুরি করবে কেন?’ লাল হ্যাটটা মাথা থেকে খুলে ওর ঘোড়ার কানের কাছ থেকে মাছি তাড়াতে নাড়তে লাগল। ‘কিন্তু হানি আর বানি যখন উধাও হলো এবং ওই মহিলা তার চুরি যাওয়া ঘোড়ার জন্যে ফ্লায়ার নিয়ে এল…’ ঘোড়াটাকে ঘোরাল ডেবোরা। ‘ধন্যবাদ, কিশোর। হানি আর বানি বেশিদূর যায়নি। খুঁজে পাওয়া যাবে।’ এবার ঘোড়া চালিয়ে চলে গেল।

কিশোর আরেকটু এগোল, রাস্তার পাশ বরাবর ঘোড়ার পদচিহ্ন অনুসরণ করছে। হঠাৎই দাগ মুছে গেল। ঘোড়াগুলো কি রাস্তায় উঠে হাঁটা দিয়েছিল? চাইল কিশোর, কিন্তু একটা ছাপও দেখল না। হাঁটু গেড়ে বসল ও। ঘোড়ার খুরের ছাপ যেখানটায় শেষ হয়েছে, সেখান থেকেই চাকার দাগ শুরু।

ঘাড়ের কাছে কেমন কাঁটা দিয়ে উঠল কিশোরের। দুরু দুরু বুকে অনুসরণ করল টায়ারের চিহ্ন। হানি আর বানি স্বেচ্ছায় হেঁটে চলে যায়নি! ট্রাকে তুলে চুরি করে নিয়ে গেছে কেউ। এক দৌড়ে ফিরে এসে গাছ থেকে বিজলীর বাঁধন খুলল কিশোর। তারপর সবেগে ঘোড়া ছোটাল হ্যারিকে কথাটা জানাতে।