বিপদসঙ্কেত – ২

দুই

ক’মুহূর্ত পরে, ক্যাফে অর্লিন্সে দৌড়ে ঢুকল ক’জন পুলিস অফিসার। বোমাসদৃশ প্যাকেজটা পরীক্ষা শেষে সটান উঠে দাঁড়ালেন মি. টার্নার, মুখে স্বস্তির হাসি। মনে হলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, তাই টিনা বুথ থেকে তীরবেগে ছুটে বেরিয়ে রেস্তোরাঁর সিঁড়ি ভেঙে উঠতে লাগল। এবার বাবাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরল।

‘তুমি ঠিক আছ তো, বাবা?’

‘টিনা, তুই এখানে…?’

‘পরে বলছি।’ পুলিস অফিসারদেরকে প্যাকেজটা নিরীখ করতে দেখল টিনা। ‘সিকিউরিটি গার্ডরা বোমার কথা জানল কীভাবে?’

‘ফোনে বেনামী কল এসেছিল।’

‘পুরুষ নাকি মহিলা?’

‘বলা অসম্ভব। কলার ইচ্ছে করেই গলা বিকৃত করেছে।’

‘প্যাকেজটার পাশে কোন চিরকুট রেখে যায়নি? মুক্তিপণ কিংবা অমন কোন কিছু দাবি করে?

‘না।’

‘জিনিসটাকে ব্যালকনিতে রেখে গেল কেন, বাবা? তোমার কী ধারণা?’

‘সাধারণত বোমা পরীক্ষার কাজে রোবট ব্যবহার করা হয়, কোন মানুষের যাতে বিপদ না হয়। এটা যে রেখেছে সে নিশ্চিত হতে চেয়েছে কোন রোবটকে যেন এ কাজে লাগানো না যায়।’

‘তারমানে এটা সত্যিকারের তাজা বোমা? নকল নয়?’

‘জিনিসটা নিঃসন্দেহে আসল, তবে একটা অস্বাভাবিকতা আছে এর মধ্যে। গুরুত্বপূর্ণ এক তার জোড়া দেয়া হয়নি এতে। তখনই বুঝেছিলাম কেউ একজন বোমাটা পেতে রেখে গুরুতর কোন বার্তা দিচ্ছে।’

‘তারমানে?’

‘বার্তাটা হচ্ছে: এই ব্যক্তি বোমা এক্সপার্ট, কারণ জিনিসটা অত্যাধুনিক। বোমাবাজ বুঝিয়েছে, সে এবারের মত কাউকে আহত করছে না। তবে আমাদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এধরনের আরও ঝামেলা করবে সে, ছোটখাট বিস্ফোরণ দিয়ে হয়তো আরম্ভ হবে ব্যাপারটা। বোমাবাজের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হয়তো বোমাবাজি না করেই মল-এর ক্ষতি করা, মানুষকে ভয় দেখানো। এগুলো সবই অবশ্য আমার অনুমান, তবে মনে হচ্ছে বিচিত্র এক চরিত্রের মোকাবেলা করতে যাচ্ছি আমরা।’

.

একটু পরেই, ক্রি ইণ্ডিয়ানদের মত চকচকে চোখ আর গালের উঁচু হনু নিয়ে এক মহিলার আবির্ভাব হলো। মি. টার্নার তাঁর সঙ্গে টিনার পরিচয় করিয়ে দিলে মৃদু হাসলেন তিনি।

‘শার্লি উইন্টার ঈগল, এ আমার মেয়ে টিনা।’

‘কেমন আছেন, ইন্সপেক্টর উইন্টার ঈগল?’ প্রশ্ন করল টিনা। ‘ইন্সপেক্টর? তোমার নজর এড়ায়নি দেখছি!’ মহিলা রীতিমত মুগ্ধ।

‘আপনার ইউনিফর্মেও বাবার মত একই সমান তারকাচিহ্ন রয়েছে।’

দুই অফিসার কেসটা নিয়ে আলোচনা করছেন, রেস্তোরাঁর ওপরতলায় চোখ বোলাল টিনা, বোমাটা সবার অগোচরে ব্যালকনিতে আনা হলো কীভাবে ভাবছে। গোটা ফ্লোর ফাঁকা, এবং বোমা যে পেতেছে তার ছায়ামাত্র নেই। মুহূর্তের জন্য দেয়ালের এক গ্রিলের দিকে চাইল ও, ওটা দিয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে গা জুড়িয়ে যাচ্ছে। ওটার ঠিক পাশেই এক দরজা, হাতল ঘুরিয়ে খুলতে গিয়ে দেখল বন্ধ।

নিচে নেমে এসে, বুরবো স্ট্রিট ত্যাগের পর বাবাকে ইতিকর্তব্য জিজ্ঞেস করল টিনা।

‘শার্লি পুলিস কম্পিউটার ব্যবহার করে মল-এর চাকরি হারানো কর্মচারীদের নাম খুঁজে দেখবেন, আর যেসব ঝামেলাবাজকে মল-এর আশপাশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদেরও।’ ইন্সপেক্টরের দিকে চাইলেন তিনি। ‘আপনার হাতে কি দু’-চার মিনিট সময় হবে? টিনার মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতাম।’

ঘটনাস্থলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিচ্ছেন সেই অফিসারদের দিকে চাইলেন শার্লি।

‘ওঁরা কিছুক্ষণ ব্যস্ত থাকবেন, কাজেই এই ফাঁকে পরিচয়টা সেরে নেয়া যায়।

ঘটনাটা নিয়ে তখনও আলাপ করছে, ওরা তিনজন সুবিশাল মল ভেদ করে, লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ওটার দূর প্রান্তের হোটেলটির উদ্দেশে চলল।

‘আমার রুমটা খুব সুন্দর,’ ইন্সপেক্টর শার্লিকে জানাল টিনা। ‘বাবা-মার সুইটে যাওয়ার আগে চলুন না একবার দেখে যাবেন।’

‘নিশ্চয়ই, চলো।’

এলিভেটর থামতেই দরজা খুলে গেল। গাঢ় রঙের আয়না আর লাল হলিউড সাইন নিয়ে এক করিডর, ওটায় পা রাখল ওরা। টিনার কামরায়, দেয়ালগুলোতে আবলুসের চাইতেও কালচে নিয়ন স্টার জ্বলছে এবং গাঢ় বেগুনী গালিচায় মিটমিট করছে ছোট-ছোট বাতি।

‘ওগুলো ফাইবার অপটিক,’ ব্যাখ্যা করল টিনা। ‘সুন্দর না?’

‘দারুণ!’

একটু পরে, আরেকটি ফ্লোরে প্রবেশ করল ওরা। এটি সার বাঁধা স্তম্ভ নিয়ে এক মর্মর পাথরের হলওয়ে। সোনালী হরফে দেয়ালে রোম লেখা এখানে, পটভূমিতে কোমল লাল আভা।

‘আমি এই হোটেলের থিম রুমগুলোর কথা শুনেছি, ‘ ইন্সপেক্টর শার্লি উইন্টার ঈগল টিনার উদ্দেশে বললেন, ‘তবে হলওয়েগুলোকেও যে কামরার সাথে মিলিয়ে থিম্‌ড্ করা হয়েছে তা জানতাম না।’

‘পলিনেশিয়ান ফ্লোরে, কামরাগুলোয় জাকুযি রয়েছে পাশে আগ্নেয়গিরি নিয়ে, এমনকী ধোঁয়াও বেরোয় ওগুলো থেকে!’

হলওয়ের শেষমাথার এক দরজা খুললেন মি. টার্নার।

‘সিকিউরিটির লোকেদের ট্রেনিং দেয়ার জন্যে, মল-এর অতিথি হিসেবে পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি আমি। আমার বন্ধুর ছেলে রাজন আর তাঁর ভাগ্নে কিশোরও এসেছে আমার সাথে।’

রক্তবর্ণ পুরু গালিচাটির দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ ইন্সপেক্টরের, ওপর থেকে খাড়া নেমে আসা, পর্দা ঘেরা গোলাকার বিছানাটিতে পাতা চাদরটিও লাল রঙের। কাছেই, মর্মরের অতিকায় এক টবের ওপরে ঝুলছে গাছের চারার অনেকগুলো পাত্র। ওটার পাশে এক রোমান দাসীর মূর্তি, তার হাতে ধরা সোনালী নলটি থেকে অবিরল ধারায় পানি ছিটকে বেরোয়, জলপাত্রটি যখনই ভরে ওঠে।

মিসেস টার্নার ডেস্কে বসে কাজ করছিলেন। দীর্ঘাঙ্গিনী মহিলার চোখের মণি নীলরঙের, আর মাথার চুল আগুনে লাল।

‘জোসেফের কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি, শার্লি, আজ দেখা হয়ে ভাল লাগছে, উষ্ণ হেসে ইন্সপেক্টরকে বললেন তিনি।

হঠাৎই হলওয়ের দরজাটা খুলে গেল এবং টিনা দেখল কিশোর আর রাজন উদয় হয়েছে। কিশোর টিনার চেয়ে দু’বছরের ছোট।

‘ওই যে-বিচ্ছু শিরোমণি রাজন এসে গেছে। ওর সাথে হাত মেলানোর সময় সাবধান, ইন্সপেক্টর, হ্যাণ্ড বাযার থাকতে পারে ওর কাছে।’

‘ওকে দেখে তো দিব্যি সুবোধ বালক মনে হচ্ছে।

‘চেহারা দেখলে অমনই মনে হয়, আসলে পাজির পা ঝাড়া।’

নিরীহ দৃষ্টিতে ওর দিকে চাইল রাজন। ভাবখানা এমন যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না।

খাট, গোলগাল ছেলেটির মাথার চুল আর চোখ বাদামি। ওকে দেখে মনে হলো কোন কিছু নিয়ে মহা উত্তেজিত, তাই সতর্কদৃষ্টিতে ওকে জরিপ করে চলল টিনা, ওদিকে মি. টার্নার গ্লাসে সবার জন্য পানীয় ঢালছেন। এবার বোমাবাজের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য নিয়ে কথোপকথন আরম্ভ হতেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল টিনা। অন্যরা নানারকমের সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করছে, টিনা পানীয়ে চুমুক দিয়ে রীতিমত আঁতকে উঠল-যখন দেখল ওর গ্লাসে একটা মরা মাছি ভাসছে। আর্তনাদ ছাড়ল ও এবং হাত থেকে খসে পড়ল গ্লাসটা, এসময় রাজন এক লাফে সামনে বাড়ল প্লাস্টিকের মাছিটাকে উদ্ধার করতে।

‘তাই তো বলি, খুদে শয়তানটা গেল কই?’

সবাই হেসে উঠল।

‘এই বিচ্ছুটা যদি আবার আমাদের সাথে ছুটিতে আসে,’ থমথমে গলায় বলল টিনা, ‘তবে আমি নেই।’

হাসিমুখে, হাতঘড়ি দেখলেন ইন্সপেক্টর শার্লি।

‘আমি যাই, দেখিগে বোমার তদন্ত কদ্দূর এগোল। প্রাথমিক কাজগুলো হয়ে যাবে-ছবি নেয়া, ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্যে ডাস্টিং-কাজেই তদন্ত শুরু করতে পারব আমি।’ তাঁর বেল্ট থেকে বিপের শব্দ হলো, তারপর পুলিস কোডে স্ট্যাটিকে ভরা এক কণ্ঠ। ‘মল-এর এক দোকানে ঝামেলা হয়েছে। বোমা পেতে রাখার সাথে সম্ভবত এর সম্পর্ক নেই, তবে আমার দেখা দরকার,’ বললেন ইন্সপেক্টর।

‘আমরা আসি?’ কিশোর প্রশ্ন করল।

‘এসো।’

শীঘ্রি রাজন বাদে আর সবাই এলিভেটরে চেপে নিচে নামতে লাগল।

‘চিন্তা করো,’ হেসে উঠল কিশোর। ‘পুলিসী তদন্ত না দেখে কিনা ঘরে বসে টিভি দেখে, কেমন আজব মানুষ! আস্ত একটা কুঁড়ের বাদশা।’ এবার এলিভেটরের দরজা খুলতেই লবিতে পা রাখতে গিয়ে আরও বলল, ‘তবে যা-ই বল, মজার মানুষ নিঃসন্দেহে।’

‘ও একটু অন্যরকম,’ বলল টিনা। ‘স্বীকার করতেই হবে।’ মল-এর ভেতরে, ইনডোর সাগরের সবুজ পানির ওপরে প্রতিফলিত হচ্ছে দোকানপাটের নিয়ন সাইনের আলো, পাথুরে উপকূল আর ঝলমলে দোকানগুলো দিয়ে ঘেরা, সাগরটাকে প্রায় দখল করে রেখেছে সান্তা মারিয়া-ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে নিউ ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যাওয়া জলযানটির রেপ্লিকা।

‘সান্তা মারিয়ায় কাউকে উঠতে দেয় না,’ বলল টিনা। ‘এটা কিন্তু ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় তৈরি সত্যিকারের জাহাজ, এখানে শিপে করে টুকরোগুলো এনে আবারও বানানো হয়েছে। কিন্তু ভেতরে ট্রপিকাল মাছের বিশাল এক ট্যাঙ্ক ছাড়া আর কিছু নেই।’

‘তুমি এতসব জানলে কীভাবে? উঠেছিলে নাকি?’

‘না, মল-এর কয়েকটা ছেলে-মেয়ের কাছে শুনেছি।’

‘কাউকে উঠতে না দিলে মাছের কী দরকার?’ প্রশ্ন করলেন মি. টার্নার।

‘সাবমেরিনগুলোর জন্যে। পানির ওপরে ভেসে ওঠা হলদে কনিং টাওয়ারটার দিকে তর্জনী দেখাল টিনা। পানি কেটে ধীরে- ধীরে এগনোর সময় ছোট-ছোট ঢেউ তুলছে ওটা। ‘ওগুলো আসল সাব, সাগরের কিনারা ঘিরে ট্রিপ দেয়, মানুষজন যাতে পোর্টহোল দিয়ে আণ্ডারওয়াটার ট্যাঙ্কের সব ধরনের ট্রপিকাল মাছ দেখতে পায়।’

‘সে সঙ্গে আটলান্টিসের হারানো সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ,’ বলল কিশোর। ‘পুরোটাই রিয়েলিস্টিক।

‘ওই সুড়ঙ্গটা দিয়ে কোথায় যায়?’ সাগর ঘেরাও করে রাখা পাথুরে দেয়ালের এক কালো গর্তের দিকে আঙুল তাক করলেন মি. টার্নার।

‘সাবগুলো ওভাবেই গতিপথ পাল্টায়,’ জবাবে বলল কিশোর। সুড়ঙ্গে ঢোকে, ঘুরে বেরিয়ে আসে নিচের ওই পোর্টালটা দিয়ে।’

‘টানেলের ভেতরটা দেখতে তর সইছে না আমার,’ বলল টিনা, ‘কিন্তু ওটা দর্শকদের নাগালের বাইরে।’ স্কুবা গিয়ার আর পায়ে ফ্লিপার পরা এক অবয়বকে ইনডোর সাগরের পানির তলদেশের গাছপালার ভেতর দিয়ে নিঃশব্দে সাঁতরাতে দেখল ও চোখ নামিয়ে। ‘দারুণ লাগত কিন্তু!’

‘জলদি চলো, ইন্সপেক্টর ইতিমধ্যেই আমাদের চোখের আড়ালে।’

ম্যাপটা বের করল টিনা।

‘উনি বলেছিলেন দোকানটার নাম ‘লাগেজ আনলিমিটেড’। মল-এর শেষমাথায় ওটা। বিশ্বাস করবে কিনা জানি না,

গাটা আট সিটি ব্লক দূরে।’

মুচকি হাসলেন মি. টার্নার।

‘ক্লান্ত কাস্টোমারদের মত একটা ইলেকট্রিক কার্ট ভাড়া নিলে কেমন হয়?’

‘কিংবা মল-এর একটা রিকশা! ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর কী অপূর্ব পদ্ধতি!’

লাগেজ আনলিমিটেডের বাইরে হলদে পুলিস টেপ লাগানো। তার বাইরে জমেছে উৎসুক জনতার ছোটখাট ভিড় ইন্সপেক্টর শার্লির সঙ্গে দোকানের ভেতরে ঢুকলেন মি. টার্নার, কিশোর আর টিনা। প্রথম নজরে দোকানটাকে দেখে স্বাভাবিকই লাগল। সযত্নে সুটকেসের ডিসপ্লে দেয়া হয়েছে, ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করার জন্য চমৎকারভাবে সাজানো অ্যাটাশি কেসগুলো, সুবিন্যস্ত সারিতে ঝোলানো চামড়ার পার্স। কিন্তু, খানিকটা পেছনে, এক আপার ডিসপ্লে এরিয়া লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে রীতিমত। ধারাল ছুরি দিয়ে পার্সগুলো চিরে ফালা ফালা করেছে, সুটকেসগুলো দোমড়ানো মোচড়ানো, দেয়াল থেকে ছবি ছিঁড়ে পিষেছে পায়ের তলায়। কিশোর আর টিনা দেখল পাজামা- পাঞ্জাবী পরা এক ভদ্রলোক আর শাড়ি পরা এক মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এক পুলিস কর্মকর্তা। এবার দেয়ালময় গ্রাফিতি স্প্রে-পেইণ্ট চোখে পড়ল ওদের।

পাকি, অভদ্র শব্দগুলো বলছে। ‘দূর হও, পাকি। আমরা তোমাদের চাই না। একেকটা পাকি ধরো সকাল-বিকাল নাস্তা করো!!’