অপয়া ক্যামেরা – ১৮

আঠারো

পরদিন সকালে, মি. লয়েড আমাকে ফোন করে অভিনন্দন জানালেন। বললেন ফটো প্রতিযোগিতায় রয়কে হারিয়ে জয়ী হয়েছি আমি। হাই ডাইভিং বোর্ড থেকে বর্ষপঞ্জির সেই বড় ছবিটা আমিই তুলব :

শুনে গেলাম শুধু। কোনমতে আওড়ালাম, ‘ধন্যবাদ,’ এবং রিসিভার রেখে দিলাম।

ফারিহাকে নিয়ে ভয়ানক দুশ্চিন্তায় আছি। বাবা-মা ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সারা রাতভর ওর নানান টেস্ট করা হয়েছে। অবশেষে মা ফোন করল।

‘কী খবর?’ বলে উঠলাম। ‘ফারিহা কেমন আছে?’

‘ডাক্তাররা অবাক হয়ে গেছে,’ মা জানাল। কণ্ঠস্বর খসখসে আর খুব ক্লান্ত শোনাল। ‘কিছু খাওয়ার কারণে সম্ভবত অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হয়েছে। কিন্তু ফারিহা ডাক্তারদেরকে একটা ক্যামেরার উদ্ভট গল্প বলে যাচ্ছে শুধু।’

যাক, অন্তত ভ্রমরের গুঞ্জনধ্বনির বদলে কথা ফুটেছে ওর মুখে! ভাবলাম।

‘বুঝলি?’ মা বলল। ‘তোদের ক্লাসের ওই মেয়ে দুটো-ববি আর এমা, ওদেরকেও পাশের রুমে পরীক্ষা করেছে। চর্মরোগ জাতীয় কিছু একটা হয়েছে। ঠিক তোর বলা সেই গল্পটার মতন। অদ্ভুত না?’

মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম। ফোনটা এতটাই জোরে কানে চেপে ধরেছি, মাথা ব্যথা করছে রীতিমত।

লম্বা, গভীর শ্বাস নিলাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না তাতে।

‘আর কিছু জানতে পারলে তোকে জানাব,’ বলে মা ফোন কাটল।

ফারিহার কী সমস্যা জানি আমি। ববি আর এমারটাও। সবকিছুর মূলে ওই অপয়া, অলক্ষণে, ভুতুড়ে ক্যামেরাটা।

কিন্তু কে বিশ্বাস করবে আমার কথা? মার এখনও ধারণা ওটা আমার পেট বানানো গল্প!

আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম যেন ফারিহা, ববি আর এমা শীঘ্রি সুস্থ হয়ে যায়।

আমার ক্লজিটের ভেতরদিকে লুকিয়ে রেখেছি ক্যামেরাটা। সারা রাত জেগে থেকে ভেবেছি ওটার কথা।

শেষমেশ, রাত তিনটের দিকে, একটা বুদ্ধি খেলে যায় মাথায়। ক্যামেরাটা ধ্বংস করার এক মরিয়া পরিকল্পনা। আর ওটা যেসব অশুভ কাজ করেছে ওগুলো উল্টে দেয়া। সে সঙ্গে নিজের জীবনটাও বাঁচানোর চেষ্টা করা।

উদ্ভট আশা, একরকম পাগলামিই বলা যায়। কিন্তু এ ছাড়া আর কোন কিছু তো মনে আসছে না।

.

ম্যান্টেলের ওপরে রাখা ঘড়িটা দেখলাম। এখন স্কুলে গিয়ে বর্ষপঞ্জির বিশেষ সেই ছবিটা নেয়ার পালা।

‘তুমি বিজয়ী, মুসা,’ নিজেকে শোনালাম মৃদুকণ্ঠে। তেতো মন নিয়ে চোখ ঘোরালাম। ‘হ্যাঁ। নিঃসন্দেহে। বিগ উইনার।’

ফারিহার তোলা আমার ছবিটার কথা ফুটিয়ে তুললাম মনের পর্দায়।

দেখতে পেলাম পড়ে যাচ্ছি আমি… মাথা নিচের দিকে দিয়ে…আর্তচিৎকার করছি প্রাণভয়ে।

জবুথুবু হয়ে শিহরনটা তাড়াতে চাইলাম।

ছবিটা কি সত্যি হতে চলেছে? উঁচু ওই ডাইভিং বোর্ডটা থেকে কি সত্যি-সত্যিই পড়ে যাব আমি?

নাকি যে পরিকল্পনা করেছি তাতে আমার প্রাণটা রক্ষা পাবে এ যাত্রা?