ঋগ্বেদ ০৯।১১৩

ঋগ্বেদ ০৯।১১৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ১১৩
পবমান সোম দেবতা। কশ্যপ ঋষি।

১। শর্য্যনাবৎ নামক সরোবর মধ্যে যে সোম আছেন, তাহা বৃত্রসংহারকারী ইন্দ্র পান করুন। তাহাতে তাহার বলাধান হইবে, তিনি অদ্ভুত বীরত্ব প্রকাশ করিবেন। হে সোম! ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও (১)।

২। হে রসসেচনকারী সোম! হে সকল দিকের অধীশ্বর! আর্জীক (২) নামক দেশ হইতে আসিয়া ক্ষরিত হও। পবিত্র ও সত্য বচনসহকারে এবং শ্রদ্ধা ও পুণ্যকর্মের সহিত তোমাকে প্রস্তুত করা হইয়াছে। ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

৩। সোম পর্জন্যদ্বারা বর্ধিত হইয়াছেন, সূর্যের দুহিতা (৩) সোমকে স্বর্গ হইতে আহরণ করিয়াছে, গন্ধৰ্ব্বেরা তাঁহাকে সমাদরপূর্বক গ্রহণ করিলেন এবং তাহাতে রস আধান করিলেন। হে সোম! তুমি ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

৪। হে সোম! তোমার বলই যথার্থ, তুমিই মহৎ; তোমার ধারাগুলি ক্ষরিতেছে। তুমি রসশালী; তোমার রসসমস্ত যাইতেছে। হে হরিতবর্ণধারি! মন্ত্রের দ্বারা পূত হইয়া ইন্দ্রের জন্য ক্ষতি হও।

৫। হে ক্ষরণশীল! যে স্থানে ব্ৰহ্মা নামক পুরোহিত ছন্দোময়বাক্য উচ্চারণ করিতে করিতে প্রস্তরের দ্বারা সোমকে প্রস্তুত করিয়া সেই সোমের দ্বারা আনন্দ উৎপন করেন এবং সকলের নিকট পূজিত হয়েন, সেই স্থানে তুমি ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

৬। যে ভুবনে (৪) সৰ্ব্বদা অলোক, যে স্থানে স্বর্গলোক সংস্থাপিত আছে; হে ক্ষরণশীল! সেই অমৃত ও অক্ষয় ধামে আমাকে লইয়া চল। ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

৭। যে স্থানে বৈবস্বত রাজা আছেন, যে স্থানে স্বর্গের দ্বার আছে, যে স্থানে এই সমস্ত প্রকাণ্ড নদী আছে, তথায় আমাকে লইয়া গিয়া অমর কর । ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

৮। সেই যে তৃতীয় নাগলোক, তৃতীয় দিব্যলোক, যাহা নভোমণ্ডলের উর্দ্ধে আছে, যথায় ইচ্ছানুসারে বিচরণ করা যায়, যে স্থান সর্বদা আলোকময়, তথায় আমাকে অমর কর। ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

৯। যথায় সকল কামনা নিঃশেষে পূর্ণ হয়, যথায় প্রধ্ননামক দেবতার ধাম আছে, যথায় যথেষ্ট আহার ও তৃপ্তি লাভ হয়, তথায় আমাকে অমর কর । ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

১০। যথায় বিবিধ প্রকার আমোদ, আহ্লাদ, আনন্দ বিরাজ করিতেছে, যথায় অভিলাষী ব্যক্তির তাবৎ কামনা পূর্ণ হয়, তথায় আমাকে অমর কর। ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও।

————

(১) শর্য্যনাবৎ নামে সরোবর কুরুক্ষেত্রের নিম্নভাগে। সায়ণ।

(২) আর্জীকীয়া নদীর আধুনিক নাম বেয়া। তাহারই নিকটবর্তী প্রদেশ।

(৩) সূর্য্যদুহিতা সম্বন্ধে ১।১১৬।১৭ ঋকের টীকা দেখ। পর্জন্য বৃষ্টিদেবতা, সোমলতা বৃষ্টিদ্বারা বর্ধিত। গন্ধর্বের আদি অর্থ যদি সূর্য্যরশ্মি হয়, তবে গন্ধর্ব দ্বারা সোমলতার রস আধানের অর্থ আমরা বুঝিতে পারি।  

(৪) এই স্থান হইতে পাঁচটি ঋকে স্বর্গধামের বিস্তীর্ণ বর্ণনা আছে, ইহার পূর্বে স্থানে স্থানে স্বর্গের সংক্ষিপ্ত উল্লেখ আছে, বর্ণনা কোথাও নাই। নবম মন্ডলের শেষে প্রথম স্বর্গ বর্ণনা পাইলাম। দশম মন্ডলে এই রূপ বর্ণনা আরও দেখিতে পাইব।