1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ৪৬

ছেচল্লিশ

ভিয়েনা থেকে কয়েক মাইল দূরে লুকা ব্রুনারের সেই বিশাল ম্যানশন। চারদিকে বাগান। সুউচ্চ প্রাচীরের ওদিকে তুষারে ছাওয়া পাইনের জঙ্গল, উপত্যকা, খাড়া পাহাড় ও গভীর হ্রদ।

এই মুহূর্তে প্রকাণ্ড ম্যানশনে নিজের ঘরে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিস্টা গুন্থার। আজ মন ভাল বলে ওকে একগাদা দামি পোশাক ও গয়না কিনে দিয়েছে লুকা ব্রুনার। উলঙ্গ হয়ে কালো এক লো-কাট ড্রেস পরছে ক্রিস্টা। স্পিকারে আসছে নরম অনুরোধের সুরে কাউন্টের নির্দেশ। ক্রিস্টাকে এবার পোশাক পরে যেতে হবে ওপরতলায়। তবে এবার আয়নাওয়ালা সেই ঘরে নয়। ওর গন্তব্য অন্যখানে। সেখানে গত একবছরে যায়নি। আজ নিজের বেডরুমে ফুর্তি করতে তলব করেছে লোকটা।

পোশাক পরে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠল ক্রিস্টা। কাঁটা হয়ে আছে ভয়ে। হয়তো বরাবরের মত খুব অস্বাভাবিক কিছু চাইবে পিশাচটা। প্রথমবার ভোগের পর থেকে আর কখনোই দৈহিকভাবে ওকে চায়নি লোকটা। নরকের ওই কীটের ধারেকাছে গেলেই আতঙ্কে শিরশির করে ওর বুক। কোনও ঘরে অনেক সাপ ছেড়ে দিলে যেমন লাগবে অসহায় বন্দির, কাউন্ট কোবরাকে দেখে সেই একই অনুভূতি হয় ক্রিস্টার।

চওড়া করিডোর পেরিয়ে পৌঁছুল ডাবল ডোরের সামনে। ঘর থেকে এল গলার আওয়াজ। কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে লোকটা।

চুপ করে কান পাতল ক্রিস্টা।

‘এবারও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছে কমিটির সবাই,’ বলল কাউণ্ট কোবরা, ‘সব ঠিক থাকলে ওই রাতেই ঝামেলা চুকিয়ে দেব।’ চুপ করে ওদিকের লোকটার কথা শুনল। কিছুক্ষণ পর বলল, ‘অবশ্যই, জানিয়ে দেব।’ আবারও কিছু শোনার পর জানাল, ‘ঠিক, আগামী দু’দিন পর। দেখা হবে। গুড নাইট!’

ঘরে এখন নীরবতা।

মন শক্ত করে দরজায় টোকা দিল ক্রিস্টা।

বিশাল বেডরুমে ওর জন্যে অপেক্ষা করছে লুকা ব্রুনার। জ্বলন্ত ফায়ারপ্লেসের ধারে বসেছে রাজকীয় উইং চেয়ারে। চওড়া বেডের পাশে টেবিলে বরফে ভরা বাকেটের ভেতর হাবুডুবু খাচ্ছে দামি শ্যাম্পেনের বোতল। কাউন্টের পরনে সিল্কের রুপালি রোব। মুখে আন্তরিক হাসি নিয়ে ক্রিস্টাকে দেখল সে। ‘শ্যাম্পেন চলবে?’

‘কীসের সেলিব্রেশন?’ জানতে চাইল ক্রিস্টা।

বোতল থেকে গ্লাসে শ্যাম্পেন ঢেলে ওর দিকে এগিয়ে দিল ব্রুনার। গ্লাস নিয়ে সোনালি তরলে চুমুক দিল ক্রিস্টা।

‘বহু দিন ধরেই বড় এক সমস্যায় ভুগছিলাম, এবার ওটা বিদায় নেবে আমার জীবন থেকে,’ বলল লুকা ব্রুনার। তবে ওসব বলে তোমাকে বিরক্ত করব না, ডার্লিং।’ চেয়ার ছেড়ে ক্রিস্টার পেছনে চলে গেল সে।

দীর্ঘশ্বাস চেপে চোখ বুজল যুবতী। ওর নগ্ন কাঁধে হাড়- সর্বস্ব ঠাণ্ডা আঙুল বুলিয়ে নরম সুরে বলল ব্রুনার, ‘তুমি কোনও কারণে বেশ উত্তেজিত।’

বেশ জোরে ক্রিস্টার ত্বক ডলছে পশুটা। সাপের মত অস্বস্তিকর খসখসে ছোঁয়ায় বমি পেল ওর। ঠোঁট থেকে গ্লাস নামিয়ে সামান্য সরে গেল।

‘বলো তো, কেন এত ঘৃণা করো আমাকে?’ আদরমাখা স্বরে বলল লুকা ব্রুনার।

জবাবে আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল ক্রিস্টা, ‘তোমাকে ঘৃণা করি না, ব্রুনার।’

‘আমাকে দেখলেই ঘাবড়ে যাও,’ বলল কাউন্ট কোবরা। ‘ভাবো কিছুই টের পাই না? আমার নজর সবদিকেই থাকে।’ সুন্দরী মেয়েটাকে দেখছে সে। ‘কেন যেন হঠাৎ করেই অনেক বদলে গেছ তুমি। আজ যেন নতুন কিছু দেখছি তোমার ভেতর।’

চোখ মেঝের দিকে সরাল ক্রিস্টা। ‘তোমার কথা বুঝতে পারিনি।’

কী যেন ভাবছে কাউন্ট কোবরা। ডানহাতে থুতনি ডলতে ডলতে বাজপাখির চোখে দেখছে মেয়েটাকে। ‘মাত্র একদিনে বদলে গেছ। গোপন ক্যামেরায় তোমাকে দেখেছি। আমার অফিসে গিয়ে মাসুদ রানার ফাইল পড়ছিলে। আসলেই কি প্রেমে পড়ে গেলে ওর?’

কাটা-কাটা শব্দে বলল ক্রিস্টা, ‘তাকে খুবই বিপজ্জনক বলে মনে হয়েছে আমার। এমন কী তোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর।’

‘সত্যিই খুব বিপজ্জনক,’ সায় দিল ব্রুনার। ‘তবে আমার ধারণা, তাকে অপছন্দ করো না তুমি।’

‘অপছন্দ করার সুযোগ তো আমি পাইনি।’

‘রানার ওই ছবি অনেকক্ষণ দেখেছ। লোকটা সত্যিই সুদর্শন। যদিও কাজ শেষ হলেই বিদায় দেব পৃথিবী থেকে।’

ধক্ করে উঠেছে ক্রিস্টার বুক। শান্ত স্বরে বলল, ‘তার কী হবে তাতে আমার কী!’ বুঝে গেছে, বেঁচে আছে মাসুদ রানা!

‘মনে হচ্ছে তার ব্যাপারে একটু বেশিই আগ্রহ রয়েছে তোমার, ক্রিস্টা।’ শীতল কণ্ঠে বলল লুকা ব্রুনার। ‘একটা কথা মনে রেখো, মাত্র একটা ফোন কলেই তুমিও বিদায় নেবে পৃথিবী থেকে।’

‘আমি তো সরকারী ফাইলে বহু আগেই মারা গেছি,’ মনের তিক্ততা ঢেকে নরম সুরে বলল ক্রিস্টা।

‘তিনবছর আগে যাবজ্জীবন জেল হলে হয়তো তোমার জন্যে ভালই হতো, তাই না?’ বলল লুকা ব্রুনার।

কথা শুনে সবই মনে পড়ল ক্রিস্টার। তখন ওর বয়স মাত্র বাইশ বছর। নিজের একটা পরিচয় ছিল। মাতাল বাবা- মার নির্যাতন থেকে বাঁচতে হামবুর্গ শহর ছেড়ে পালিয়ে এসেছিল ভিয়েনায়। অপূর্ব সুন্দর চেহারা ও লোভনীয় শরীরের জন্যে চারপাশে ভিড়ে গেল মধুলোভী একদল যুবক। বেশিদিন লাগেনি লাখ লাখ ইউরো রোজগার করতে। তা ছাড়া, সাধারণ পতিতার তুলনায় অনেক বুদ্ধিমতী ছিল ও। কোটিপতি ক্লায়েন্টদের জন্যে এমন কিছু কৌশল শিখে নিয়েছিল, যাতে ওর পা ধরতেও রাজি হতো ওরা। বডিগার্ডদের বাইরে রেখে ক্রিস্টার অ্যাপার্টমেন্টে পা রাখত তারা নিয়মিত।

সেসময়ে একবার ক্রিস্টার ক্লায়েন্ট হলো লুকা ব্রুনার। ওই যৌনমিলন ছিল চরমভাবে ব্যর্থ। এরপর ক্রিস্টার সঙ্গে তাগড়া সব যুবকের মিলন আড়াল থেকে দেখেছে সে। একবারও উত্তেজিত হয়ে হাঁফ লাগেনি তার।

অথচ, মাংস ভরা প্লেটের ওপর হামলে পড়া কুকুরের মতই ছিল ওই মোটা রাশান। নোংরা যৌন মিলনে উদ্‌গ্রীব। পুরো রাতের জন্যে ক্রিস্টাকে ভাড়া নিয়েছিল। অ্যাপার্টমেন্টের দরজার বাইরে ছিল দুই বডিগার্ড। তাদের কাছে ছিল উযি সাবমেশিন গান। বাইরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ শুনছিল মনিবের অদ্ভুত সব শীৎকার।

ভোরের আগেই ঘুমিয়ে পড়ল লোকটা। তার আনা ভদকা খেয়ে নিজেও মাতাল হয়েছে ক্রিস্টা। ফলে সময় লাগেনি ঘুমিয়ে পড়তে।

সকালে বিছানা থেকে নেমেই টের পেল, জড়িয়ে গেছে মস্ত গোলমালে। রাতে মদের সঙ্গে ড্রাগ দেয়া হয়েছে ওকে। কার্পেটে পা দিতেই চটচট করে উঠল আঠার মত কী যেন। নিচে চোখ যেতেই ক্রিস্টা দেখল, গোটা ঘরের মেঝে হয়ে গেছে লাল রক্তের সাগর। অন্তত পঞ্চাশবার ছোরা চালানো হয়েছে মোটা রাশানের বুকে-পেটে। লাশটা পড়ে আছে বিছানার পাশে। বাইরের করিডোর থেকে উধাও হয়েছে লোকটার দুই বডিগার্ড।

কী করবে ভেবে পেল না ক্রিস্টা। ঘরে ফিরে ধপ করে বসল বেড়ে। আর তখনই ঘরে ঢুকল কালো কোট পরা কয়েকজন লোক। তাদের একজনকে চিনল ক্রিস্টা। ওই লোক লুকা ব্রুনার। সে যে আইডি দেখাল, তা থেকে কিছুই বুঝল না ক্রিস্টা।

লুকা ব্রুনার জানাল, তারা সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট। ড্রাগের প্রভাবে ও ভয়ে একেবারে বোবা হয়ে গিয়েছিল ক্রিস্টা। লোকগুলো কালো এক গাড়িতে তুলল ওকে। নিয়ে গিয়ে আটকে রাখল জানালাহীন এক ঘরে। তখনই সিক্রেট সার্ভিসের লোক জানাল, ওর কপাল ভাল, তাদের বদলে পুলিশ ওই অ্যাপার্টমেন্টে আগে পৌঁছুলে সর্বনাশ হতো তার।

সহমর্মিতা ছিল লোকগুলোর কণ্ঠে। বারবার বলল, তারা বুঝতে পেরেছে আসলে কোনও দোষ নেই ক্রিস্টার। কিন্তু কপাল মন্দ, কেউ বিশ্বাস করবে না ওর কথা। ওই ছোরায় জায়গায় জায়গায় আছে আঙুলের ছাপ। রাশান ওই ক্লায়েন্ট ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পলিটিশিয়ান। কাজেই আদালতে মামলা হলে জীবনেও আর জেল থেকে বেরোতে পারবে না ক্রিস্টা।

তা ছাড়া, পাবলো স্যাঙ্কোভিচের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রাশান মাফিয়ার। তারা যদি জানে ক্রিস্টাই তাদের বন্ধুর খুনি, সময় লাগবে না ওর খুন হতে। এমন কী জেলে থাকলেও বাঁচবে না। তবে সিক্রেট সার্ভিসের সঙ্গে একটা চুক্তিতে এলে তারা রক্ষা করবে ওকে।

ক্রিস্টা এতই ভয় পেল, কিছুই না ভেবে রাজি হলো লুকা ব্রুনারের প্রস্তাবে। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে এমনভাবেই বাঁচতে চায়। সেদিন ব্রুনারের হাত ধরে অনুরোধ করেছিল: ‘বাঁচতে চাই। প্লিয, আমাকে বাঁচান।’

এরপর আদালত বা কোনও জেলে যেতে হয়নি ক্রিস্টার। ওকে নিয়ে যাওয়া হলো বিশাল এক কম্পাউণ্ডে। আসলে কী হচ্ছে, জানতে চায়নি ও। পরের দু’মাসে মনে ছিল অদ্ভুত এক স্বস্তি: বেঁচে তো আছি, এটা কম কথা নয়। ওকে দেয়া হলো আরামদায়ক ছোট এক অ্যাপার্টমেন্ট। চুপচাপ কেটে গেল ক’দিন। দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও ক্রিস্টা মেনে নিল বন্দিত্ব। প্রতি সপ্তাহে একবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে আসত লুকা ব্রুনার। দেখে যেত ও ভাল আছে কি না। সে একবারও বলেনি কী ঘটেছে স্যাঙ্কোভিচের মামলার। ক্রিস্টা ভেবেছিল, ওর সঙ্গে যৌন মিলনে আগ্রহী হবে ব্রুনার। তবে দ্বিতীয়বার কখনও ওই বিষয়ে কথা বলেনি লোকটা।

এরপর ক্রিস্টা জানল, সরকারীভাবে প্রচার হয়েছে, ভয়ঙ্কর গাড়ি-দুর্ঘটনায় একইসঙ্গে মারা গেছে রাজনৈতিক নেতা পাবলো স্যাঙ্কোভিচ ও ক্রিস্টা গুন্থার। তখন থেকে ক্রিস্টা হয়ে গেল জেনিসা ব্রোসেট। এমন একজন, যার কোনও বাস্তব অস্তিত্ব নেই। ক্রিস্টা জানতেও চায়নি, কে খুন করল রাশান লোকটাকে। বা ওর বদলে যে মহিলার মৃতদেহ পাওয়া গেছে, তার নাম আসলে কী। বা কোথা থেকে এল লাশটা। আসলে অতীতের ওই ভয়ানক স্মৃতি বারবার ভুলতে চেয়েছে ক্রিস্টা। তবে সবকিছুর একটা মূল্য শেষ পর্যন্ত শোধ করতেই হয়।

ছয় মাস পর নতুন নাক ও মুখ নিয়ে সেই বিশাল বাড়ি থেকে বেরোল ক্রিস্টা। ওকে নিয়ে আসা হলো রাজকীয় এই ম্যানশনে। তখন থেকে হয়ে গেল লুকা ব্রুনারের ব্যক্তিগত রক্ষিতা। অভাব থাকল না গহনা ও দামি পোশাকের। বুড়ো লোকটা ধৈর্যের সঙ্গে ওকে শেখাল অভিজাত সমাজে কীভাবে কথা বলতে হবে, কীভাবে হাঁটতে হবে বা কীভাবে পোশাক পরতে হবে। নিজের ভেতর অভিনয়-দক্ষতা টের পেয়ে নিজেই অবাক হলো ক্রিস্টা।

তবে যতই যত্নের সঙ্গে অভিজাত হিসেবে গড়ে তোলা হোক, স্বাভাবিক জীবনের তুলনায় ওসব কিছু নয়। ধীরে ধীরে ক্রিস্টা বুঝল, ব্রুনার আসলে নরকের ভয়ঙ্কর কোনও কিলবিলে সাপ। নিজের সঙ্গে ওকেও তলিয়ে নিয়ে গেছে ভীষণ গভীর কালো এক গহ্বরে। তার চাই জরুরি তথ্য। সেজন্যে প্রয়োজনে করবে নানান কারসাজি। ক্ষমতার অভাব নেই, তবু চাই আরও। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বেছে নিচ্ছে সমাজের উঁচু পর্যায়ের লোকগুলোকে। টোপ ফেলছে ক্রিস্টাকে ব্যবহার করে। কারও সাধ্য নেই এড়িয়ে যাবে এই মধুর টোপ।

একদিন স্টাডিরুমে ক্রিস্টাকে নিয়ে গেল ব্রুনার। সিন্দুক খুলে বলল উঁকি দিতে। ক্রিস্টা দেখল প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা আছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তে ভরা সেই ছোরা। ওটা দিয়েই খুন করা হয় স্যাঙ্কোভিচকে। হাতল ও ফলায় ক্রিস্টার আঙুলের ছাপ। একটা কথাও বলেনি লুকা ব্রুনার। আর কিছু বলতেও হয়নি, যা বোঝার বুঝে গেছে ক্রিস্টা।

এরপর আরও ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িয়ে নেয়া হলো ওকে। নিজে করেনি এমন কিছু অপরাধের জন্যে ওর বিরুদ্ধে রাখা হলো নানান প্রমাণ। পালিয়ে গেলেও কাউকে বিশ্বাস করাতে পারবে না, আসলে ওর দোষ নেই। তার চেয়েও বড় কথা, জেল পর্যন্ত যাওয়ার আগেই খুন হবে ব্রুনারের লোকের হাতে।

চেয়ারে বসে জ্বলন্ত ফায়ারপ্লেসের দিকে চেয়ে আছে লুকা ব্রুনার। তার দিকে তাকাল ক্রিস্টা। নিচু গলায় বলল, ‘তুমি ঠিকই বলেছ, ব্রুনার। তিন বছর আগে যাবজ্জীবন জেল হলেই হয়তো খুশি হতাম।’

গাল কুঁচকে হাসল কালসাপ। বেরিয়ে পড়েছে হলদেটে একরাশ ইঁদুরে দাঁত। ‘তাতে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এখন বড় দেরি হয়ে গেছে। আমার কাছ থেকে আর মুক্তি নেই তোমার।’

‘হ্যাঁ, সত্যিই হয়তো নেই।’

‘তাতে মনে কোনও সন্দেহ রেখো না,’ বলল ব্রুনার।

‘আরেকটা কথা, তোমার জন্যে নতুন একটা কাজ রেখেছি।‘

তিক্ত হয়ে গেল ক্রিস্টার মন।

এবার কী করতে হবে?

আরও খুন?

‘তোমার হয়তো ভালই লাগবে,’ বলল ব্রুনার। ‘তুমি তো বোধহয় মা হতে চাও? কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়। তবে দুধের স্বাদ মেটাতে পারবে ঘোলে। ক’দিনের জন্য আমাদের সঙ্গে থাকবে এমিলি কেইলম্যান। পিচ্চির দেখভাল করবে তুমি। ঝামেলা যেন না করে। দরকারে দৈহিক তৃপ্তি দেবে।’

আগে কোনও বাচ্চার ওপর চড়াও হয়নি ক্রিস্টা। লোকটার নোংরা কথায় তীব্র ঘৃণা এল ওর মনে। নিজেকে সামলে জানতে চাইল, ‘ওকে কত দিন আটকে রাখবে?’

হাসল লুকা ব্রুনার। ‘বেশি নয়, শুধু যে ক’দিন বাঁচবে।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *