ঊনচল্লিশ
ঝরঝর অবিরাম ঝরছে বরফের কুচি মেশানো শীতল বৃষ্টি। অ্যামস্টেটেন রেলস্টেশন থেকে আঁকাবাঁকা এক পথে দশ মিনিট হেঁটে টেরেসওয়ালা বাড়িটা খুঁজে নিল রানা। দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে এল কুকুরের গর্জন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কেউ খুলছে না দেখে আবারও জোরে নক করল রানা। এবার শোনা গেল এগিয়ে আসছে পদশব্দ। ভেতরের কমদামি অস্বচ্ছ কাঁচের দরজা খুলে বাইরের কপাট মেলল ভারী দেহের লোকটা। ঘোলাটে তার চোখ। গাল ফোলা। এলোমেলো মাথার চুল। হলওয়ে থেকে এল সাদামাটা খাবার ও ভেজা কুকুরের গায়ের বাজে গন্ধ।
‘হের গ্রাফহসলার?’ জানতে চাইল রানা।
‘হ্যাঁ, আপনি কে?’ সন্দেহের চোখে ওকে দেখলেন প্রৌঢ়।
লুদভিগের কাছ থেকে মেরে দেয়া পুলিশ আইডি দেখাল রানা। বুড়ো আঙুল দিয়ে ঢেকে রেখেছে ডেটা। পলকের জন্যে কার্ডটা দেখিয়ে ভাবগম্ভীর চেহারায় বলল, ‘ডিটেকটিভ সার্জেন্ট লুদভিগ কেইলম্যান।’
মৃদু মাথা দোলালেন গ্রাফহসলার। একটু সরু হলো দুই চোখ। ‘আপনি তো অস্ট্রিয়ান নন।’
‘আমি এসেছি জার্মানি থেকে।’
‘জানতে পারি, কী কারণে আমার কাছে এসেছেন?’
‘আপনার ছেলে জোসেফের বিষয়ে।’
ও মারা গেছে, মনমরা সুরে বললেন হের গ্রাফহসলার।
‘তা জানি,’ বলল রানা। ‘আপনাকে বিরক্ত করতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত। শুধু কয়েকটা প্রশ্ন করব।’
‘প্রায় একবছর হয়েছে মারা গেছে। নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। আপনারা আর নতুন কী জানতে চান?’
‘বেশিক্ষণ সময় নেব না। আমি কি ভেতরে আসতে পারি?’
জবাব দিলেন না গ্রাফহসলার। হলওয়ের আরেক প্রান্তে খুলে গেছে একটা দরজা। কাকতাড়ুয়ার মত এলোমেলো পোশাকে বেরিয়ে এসেছেন বয়স্কা এক মহিলা। তাঁর চোখে দুশ্চিন্তা দেখল রানা। ‘কী ব্যাপার?’
‘পোলেইযি,’ কাঁধের ওপর দিয়ে বললেন গ্রাফহসলার। ‘আমি কি ভেতরে আসতে পারি?’ আবারও জানতে চাইল রানা।
‘কী ধরনের তদন্ত?’ জানতে চাইলেন হের গ্রাফহসলার। ‘আমাদের ছেলে কোনও অপরাধ করেছিল?’
‘না, তা করেনি,’ বলল রানা।
‘তা হলে আপনাকে বসতে দিতে হবে না আমার।’
‘তা ঠিক। তবে বসে আলাপ করলে খুশি হতাম।’
‘আর একটা কথাও শুনতে চাই না!’ তারস্বরে জানালেন মহিলা। ‘আপনাদের জন্যে কম ভুগিনি আমরা!’
‘চলে যান, আমরা আর জোসেফের ব্যাপারে কথা বলতে চাই না,’ বললেন হের গ্রাফহসলার। ‘আমাদের ছেলে মারা গেছে। আমাদেরকে এবার একটু শান্তি দিন।’
মাথা দোলাল রানা। ‘বুঝেছি। আপনাদেরকে বিরক্ত করেছি বলে দুঃখিত।’ ঘুরে আবারও বৃষ্টিতে বেরিয়ে এল। মুহূর্তে ভিজে গেল মাথাটা। ভাবছে, সেই দুই টিকেটের কথা। একটা জোসেফের হলে অন্যটা কার জন্যে? অ্যালেক? মনে হয় না। তা হলে জোসেফকে দুটো টিকেট দিল কেন ও? ওর তো নিজের কাছে একটা টিকেট রেখে দেয়ার কথা। দু’জন পুরুষমানুষ একইসঙ্গে অপেরা দেখতে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক। আর যাই হোক, অ্যালেক গে ছিল না। সুন্দরী দেখে কোনও মেয়েকে পটিয়ে অপেরায় যেতে পারত। জোসেফ সম্পর্কে যা শুনেছে রানা, সে ছিল সাধারণ ছেলে। তা হলে ওই দ্বিতীয় টিকেট কার জন্যে?
নিচের সিঁড়িতে থেমে আবারও দরজার দিকে তাকাল রানা। দরজা অর্ধেক বন্ধ করেছেন গ্রাফহসলার। গম্ভীর চেহারায় দেখছেন ওকে।
‘মাত্র একটা প্রশ্ন,’ বলল রানা। ‘এরপর আর বিরক্ত করব না। দয়া করে জবাবটা দেবেন?’
দরজা একইঞ্চি ফাঁক রেখে জানতে চাইলেন হের গ্রাফহসলার, ‘কী প্রশ্ন?’
‘জোসেফের বান্ধবী ছিল, তাই না?’
‘তাকে আবার এসবে টেনে আনছেন কেন?’ জানতে চাইলেন প্রৌঢ়। ‘সে কোনও অপরাধ করেছে?’
কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল রানা, ‘তা নয়। তবে আপনি সাহায্য না করলে বিপদে পড়তে পারে।’ নিজের শেষ তীর ছুঁড়ে দিয়েছে। এখন গ্রাফহসলার দরজা বন্ধ করে দিলে আর কোনও সূত্র থাকবে না।
ঘোলাটে চোখে রানাকে দেখলেন প্রৌঢ়। নীরবে পেরিয়ে গেল অন্তত আধমিনিট। অপেক্ষায় থাকল রানা। ঘাড় বেয়ে নামছে বরফের মত ঠাণ্ডা জলধারা।
‘বহুদিন হলো মেয়েটার সঙ্গে যোগাযোগ নেই,’ বললেন গ্রাফহসলার।
‘বলতে পারেন তাকে কোথায় পাব?’
.
একটু পর মেয়েটা যেখানে চাকরি করে, ট্যাক্সি নিয়ে সেখানে পৌছে গেল রানা। নীরব এক সাইবার ক্যাফে। লোকজন নেই বললেই চলে। মেয়েটা বসে আছে স্টেইনলেস স্টিলের কাউন্টারের ওপাশে। কাছেই কফি ও কোক মেশিন। কাঁচের শো-কেসে সারি দিয়ে রাখা হয়েছে ডোনাট ও কেক। জায়গাটা পরিচ্ছন্ন। দেয়ালে দেয়ালে সিনেমার পোস্টার। ঘরের পেছনে কমপিউটার সামনে নিয়ে নিচু গলায় আলাপ করছে দুই তরুণ-তরুণী। মৃদু বাজছে ক্লাসিকাল মিউযিক
কাউন্টারের ভেতর টুলে বসে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে যুবতী। রানা গিয়ে সামনে দাঁড়াতে বই রেখে মুখ তুলে তাকাল। একটু ভারী ধাঁচের হলেও সুন্দরী। ছোট একটা সাদা ক্যাপের ভেতর গুঁজে রেখেছে কালো চুল। মিষ্টি হেসে জার্মান ভাষায় জানতে চাইল, রানার জন্যে কী করতে পারে।
ওকে পুলিশের আইডি না দেখিয়ে নরম সুরে বলল রানা, ‘আমি ফিয়োনা যানকে খুঁজছি।’
ভুরু উঁচু করে ওকে দেখল মেয়েটা। ‘আমিই ফিয়োনা। আপনার জন্যে কী করতে পারি?’
‘আমি অ্যালেক বেকারের বন্ধু,’ ফিয়োনার চোখে তাকাল রানা।
বিষাদময় স্মৃতি মনে পড়তেই চোখ নামাল মেয়েটা। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হলো রানার।
‘আপনার এখানে আসার সঙ্গে জোসেফের কোনও সম্পর্ক আছে?’
মৃদু মাথা দোলাল রানা। ‘তা আছে। আমরা কি একটু আলাপ করতে পারি?’
‘পারেন। তবে জানি না, কী নিয়ে কথা বলতে চান।’
‘কফি নিতে পারি?’
কাগজের কাপে মেশিন থেকে এক্সপ্রেসো কফি ঢেলে এগিয়ে দিল ফিয়োনা যার্ন। নিজেও নিল এক কাপ। নিচু
গলায় জানতে চাইল, ‘তা হলে বলুন? আপনার নাম কী?’
‘রানা।’
‘কী জানতে চান, রানা?’
‘জোসেফ আর অ্যালেক কি বন্ধু ছিল?’
‘ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে আপনার, তা-ই না?’ কফিতে চুমুক দিল রানা। ফিয়োনাকে বুদ্ধিমতী বলেই মনে হয়েছে, তাই চট করে সিদ্ধান্ত নিল: ওকে মিথ্যা বলবে না। ‘আমার ধারণা, গোটা ব্যাপারটার ভেতর অস্বাভাবিক কিছু ছিল।’
বড় করে শ্বাস নিল ফিয়োনা। মুখে ফুটল একইসঙ্গে স্বস্তি ও তিক্ততার ছাপ। আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল, ‘আমারও তাই মনে হয়েছে। ভেবেছিলাম, আমিই একমাত্র মানুষ, যার এমনটা মনে হচ্ছে।’
‘আপনি একা নন,’ বলল রানা, ‘যদিও সব বলতে পারছি না। একদিন হয়তো জানাব। আপনার সাহায্য চাই আমি। মাত্র দশটা মিনিট দেবেন, তারপর আর বিরক্ত করব না।’
মাথা দোলাল ফিয়োনা। ‘বেশ। সবই বলব। ওরা আসলে বন্ধু ছিল না। মাত্র কয়েকবার দেখা হয়েছিল ওদের।’
‘প্রথমবার দেখা হয়েছিল একটা পার্টিতে?’
‘হ্যাঁ। ছাত্রদের এক পার্টিতে। আমি ওখানে ছিলাম না। পরে জোসেফ বলেছিল মজার এক ব্রিটিশ লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে ওর। সে পিয়ানিস্ট। জোসেফ নিজেও তা-ই ছিল।’
‘তা-ই জেনেছি,’ বলল রানা।
‘মিউযিশিয়ানরা নিজেদের ভেতর আলাপ করে,’ বলল ফিয়োনা। ‘অন্তর থেকে মিউয়িক ভালবাসত জোসেফ। ওটাই ছিল ওর মনের ভাষা। আমাকে বলেছিল, ওর পিয়ানো বাজানো শুনে খুব নাকি উৎসাহ দিয়েছিল অ্যালেক।’
‘তারপর?’
‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করেছে। ফলে মাত্র দু’এক দিনে খাতির হয়ে যায়।’
‘সেসময়ে জোসেফের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন আপনি?’ জানতে চাইল রানা।
মাথা নাড়ল যুবতী। ‘না, আমি ম্যানেজার, ফুল-টাইম কাজ করি এই সাইবার ক্যাফেতে। জোসেফ ভিয়েনায় সস্তা একটা ঘর নিয়ে থাকত। ওর গ্র্যাজুয়েশন হয়ে যাওয়ার পর বিয়ে করব বলে পয়সা জমাচ্ছিলাম আমরা।’
‘দুঃখিত, অনিচ্ছাসত্ত্বেও আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম, ‘ আন্তরিক স্বরে বলল রানা।
চোখের জল ঠেকাতে গিয়ে নাক টানল মেয়েটা। ‘না, ঠিক আছে। আরও খারাপ কিছু ঘটে থাকলে সেটা সবার জানা উচিত। আমি জানতে চাই কেন মারা গেল জোসেফ।’
‘অপেরার টিকেট সম্পর্কে কিছু জানেন?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘ওই দুই টিকেট ছিল ম্যাকবেথের। ওগুলো আপনার আর জোসেফের জন্যে ছিল, তাই না?’
‘হ্যাঁ। জোসেফ খুব খুশি হয়েছিল। ওর বা আমার সাধ্য ছিল না ওই টিকেট কিনব। শো দেখার জন্যে অধীর ছিল জোসেফ। ভার্ডি খুব ভালবাসত।’ দূরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল মেয়েটার চোখ। কালো হয়েছে মুখ। ‘আমি বিশ্বাস করি না ও আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমার কথা শুনতে চাইল না কেউ। সবার ধারণা, বেশিরভাগ মেয়ের মত জোসেফের সঙ্গে সারাক্ষণ ঝগড়া করতাম। তাই আত্মহত্যা করেছে। আমার কারণেই মরেছে সেই একই ধারণা হয়েছে জোসেফের বাবা- মার। এ ছাড়া আর কী-ই বা ভাবতে পারতেন তাঁরা?’
‘বেশিরভাগ মানুষ সহজ কিছু ভাবতে চায়,’ বলল রানা। ‘কেউ আত্মহত্যা করলেই ধরে নেয়, কারও না কারও কারণে মানুষটা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। সহজে মনে আসে না যে মানুষটা খুনও হতে পারে।’
‘আপনি কি কোনও খুনিকে খুঁজছেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাকে পেলে কী করবেন?’
জবাব দিল না রানা। ‘তা হলে জোসেফকে ওই টিকেট দুটো অ্যালেকই দিয়েছিল?’
মৃদু মাথা দোলাল ফিয়োনা।
‘একটু খুলে বলুন,’ বলল রানা।
‘বিস্তারিত জানি না,’ জবাব দিল মেয়েটা। ‘বাড়তি কিছু পয়সার জন্যে এখানে-ওখানে পিয়ানো বাজাত জোসেফ। পিয়ানো আছে এমন বার বা রেস্টুরেন্টে পারফর্ম করত। এ ছাড়া, ক্লাসিকাল রিসাইটাল করত ছোট এক দলের সঙ্গে মিলে। ভাল বাজাত, তাই চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল সুনাম। একদিন ডাক এল প্রাইভেট এক পার্টিতে বাজাবার জন্যে। বেশকিছু টাকা দেবে তারা। শহরের বাইরে সেই বাড়িতেই হবে জমকালো, অভিজাত পার্টি। সেখানে যেতে হবে টুক্সেডো পরে। যাই হোক, ওই পার্টি হওয়ার এক সপ্তাহ আগে অ্যালেকের সঙ্গে দেখা হলো জোসেফের। পার্টির কথা বলেছিল অ্যালেককে। হিংসুটে মানুষ না হলে একজন শিল্পী যেভাবে উৎসাহ দেয় অন্যজনকে, সেভাবে কংগ্র্যাচুলেশন্স বা গুড লাক ধরনের কথা ছাড়া আর কিছুই বলেননি আপনার বন্ধু।’ চুপ হয়ে গেল ফিয়োনা যার্ন। একটু পর বলল, ‘কিন্তু সেরাতে অ্যালেকের কাছ থেকে ফোন পেল জোসেফ। অ্যালেক বললেন, একটা ব্যাপারে ভাবছেন তিনি।’
চুপ করে আছে রানা।
‘অ্যালেক ওই বাড়ির ব্যাপারে সবকিছু জানতে চান, ‘ বলল ফিয়োনা। ‘এটাও বলেন, জোসেফের বদলে নিজেই পিয়ানো বাজাতে যেতে চান সেই পার্টিতে। তবে পয়সা নেবেন না। সবই দিয়ে দেবেন জোসেফকে।’
কেন সেখানে যেতে চাইল অ্যালেক?’
‘জানি না। তবে জোসেফ বলল, ওটা বড়লোকদের পার্টি। যাবেন বড় মাপের রাজনীতিকরা। কাজেই চারপাশে থাকবে কঠোর সিকিউরিটি। চাইলেও অনুমতি-পত্র জোগাড় করতে পারবে না ও।’
‘জানি না কেন ওখানে গেছে অ্যালেক,’ বলল রানা। ‘গায়ে পড়ে এখানে ওখানে যাওয়ার মত মানুষ ছিল না ও।’
‘জোসেফের কথা থেকে মনে হয়েছে, ওই পার্টির ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিলেন অ্যালেক। তাঁর মূল আকর্ষণ ছিল বাড়িটার ব্যাপারে। অনেক প্রশ্ন করেছিলেন জোসেফকে।’
‘বাড়ির ব্যাপারে কী ধরনের প্রশ্ন করেছে অ্যালেক?’
‘আমার জানা নেই,’ বলল ফিয়োনা, ‘বারবার বলেছিলেন তাঁর রিসার্চের কথা।’
‘আর কিছু বলেনি?’
‘নিশ্চয়ই বলেছে। তবে জোসেফ আমাকে বলেনি।’
‘ঠিক আছে,’ বলল হতাশ রানা। ‘আপনি বলে যান।’
‘সেরাতে অদ্ভুত প্রস্তাব দেন অ্যালেক। জোসেফের বদলে ওই বাড়িতে গেলে জুটিয়ে দেবেন ভিয়েনার স্টেট অপেরার প্রাইভেট বক্সের টিকেট। ওখানে ম্যাকবেথ নাটকে পারফর্ম করবেন তাঁর বোন এমিলিয়া বেকার। ওটা ছিল শেষ বক্সের শেষ টিকেট। কিনতে হলে লাগবে বহু টাকা। তবে অ্যালেক একটা শর্ত দেন।’
বুঝে গেল রানা। ‘জোসেফের ছদ্ম পরিচয়ে নিজে ওখানে পিয়ানিস্ট হিসেবে যেতে চাইল অ্যালেক।’
মাথা দোলাল ফিয়োনা
‘আর তাতে রাজি হয়ে গেল জোসেফ।’
‘গোটা ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগলেও জোসেফ বুঝল, ঠাট্টা করছেন না অ্যালেক। এদিকে টাকার অভাবে আমার গত জন্মদিনে কিছু দিতে পারেনি, তাই সুযোগ পেয়ে অপেরার টিকেটের লোভ জোসেফ ছাড়তে পারল না। অ্যালেককে বলল, ‘জানি আপনি ভাল পিয়ানো বাজান, তবে কোথাও ভুল হলে একেবারে ডুবে যাব। সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’’
‘এরপর জোসেফের বদলে পার্টিতে গেল অ্যালেক।’
‘কাগজ অনুযায়ী অ্যালেক ছিলেন জোসেফ গ্রাফহসলার,’ বলল মেয়েটা। ‘পরে শুনলাম, ওই পার্টিতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে তলিয়ে যান লেকে।’
‘অর্থাৎ ওই পার্টির রাতে মারা গেল অ্যালেক ও জোসেফ,’ আনমনে বলল রানা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফিয়োনা যার্ন। ‘তা-ই আসলে।’
‘কোথায় হয়েছিল ওই পার্টি?’
‘জানা নেই বাড়িটা কোথায়,’ বলল মেয়েটা, ‘তবে ভিয়েনা থেকে দূরে নয়। বিশাল বাড়ি। বলতে পারেন প্রাসাদ। ওটার মালিক ভিয়েনার অভিজাত এক ভদ্রলোক। শত শত বছর ধরে তাঁর পরিবার বিশাল বিত্তশালী।’
‘আপনার মনে আছে সেই অভিজাত মানুষটির নাম?’
মলিন চেহারায় রানাকে দেখল ফিয়োনা। ‘তাঁর নাম লুকা ব্রুনার। তাঁর পূর্বপুরুষদের মত তাঁকেও আড়ালে অনেকে ডাকেন কাউন্ট কোবরা বলে।’