1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ২৩

তেইশ

সুনীল আকাশের নিচে টলমল করছে শান্ত সাগর। ফ্রান্সের তীরের দিকে চলেছে ইয়ট আইল্যাণ্ডার। এইমাত্র নিজেদের ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে ওপরের ডেকে উঠেছে রানা ও লিয়া। একমাইল দূরের নির্জন এক ছোট্ট উপসাগরের দিকে ইয়টের নাক তাক করেছে স্কিপার রাফায়েল। ওদিক দিয়ে তীরে উঠলে একটু দূরেই সেইণ্ট-ভাস্ট-লা-হিউগ। কিছুক্ষণ পর তীর থেকে দু’শ’ গজ ব্যবধানে ইয়ট থেমে যাওয়ায় ছোট্ট ডিঙি নৌকায় নিজেদের জিনিসপত্র তুলল রানা। একবার ঘুরে এল নিচ থেকে। আবার উঠে এসে হাত মিলিয়ে বিদায় নিল স্কিপার রাফায়েলের কাছ থেকে।

‘আপনার সঙ্গে মিস্টার গর্ডনের কী হয়েছে জানি না, তবে ভাল হোক আপনার, মিস্টার রানা,’ আন্তরিক স্বরে বলল বৃদ্ধ স্কিপার। মিষ্টি হাসল লিয়ার দিকে চেয়ে। ‘তোমারও ভাল হোক, লিয়া।’

‘পরে দেখা হবে, রাফায়েল,’ জবাবে বলল লিয়া। টুক করে ছোট্ট চুমু দিল বৃদ্ধের দাড়ি ভরা গালে।

ইয়টের পাশে ভাসছে ডিঙি নৌকা। ওটাতে নেমে পড়ল রানা। সাবধানে নামিয়ে নিল লিয়াকে। চালু করল আউট- বোর্ড মোটর। টিলার ধরে নৌকা সরাল ইয়টের গা থেকে। ছোট ছোট ঢেউয়ের মাথায় নাচতে নাচতে তীরের দিকে চলেছে ডিঙি। গলুইয়ে বসে আছে লিয়া। মৃদু বইছে ডিসেম্বরের শীতল হাওয়া। সোয়েড কোটের বোতাম আটকে নিল লিয়া। মাথার ওপরে আকাশে ভাসছে কিছু সি-গাল।

‘তোমার কি মনে হয় পুলিশে যোগাযোগ করবে গর্ডন?’ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জানতে চাইল লিয়া।

‘আমি জানব কী করে?’ উদাস সুরে বলল রানা। ‘তবে মনে হয় না ঝামেলা করবে।’

‘যদি করে?’

‘সেজন্যেই তো নিচে গিয়ে বলে এলাম, আবারও ঝামেলা করলে একগুলিতে উড়িয়ে দেব ওর মগজ।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভুরু কুঁচকে দূরের সাগর দেখল লিয়া।

কয়েক মিনিট পর নুড়িপাথরে ভরা সৈকতে ডিঙি নৌকা টেনে তুলল রানা। সামনে বালির ছোট কিছু ঢিবি। ওদিকে বাড়িঘরের ছাত ও চার্চের টাওয়ার। ব্যাগ কাঁধে তুলে লিয়ার বাহু ধরে গ্রামের দিকে চলল রানা। ‘একটু দূরেই সেইন্ট- ভাস্ট-লা-হিউগ।’

বালির ছোট কিছু ঢিবি পেরোবার পর সামনে পড়ল ঘাসের প্রান্তর। ওখান থেকেই শুরু গল্ফ কোর্স। আঁকাবাকা সরু পথে রানা ও লিয়া পৌঁছে গেল গ্রামের মাঝে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ছোট এক গ্যারাজ থেকে রানা কিনল কমদামি সেকেণ্ডহ্যাণ্ড একটা সিট্রোন গাড়ি। দেরি হলো না ওদের রওনা হতে।

বহুবার ফ্রান্সে এসেছে বলে ভাল করেই রাস্তাঘাট চেনে রানা। রোডের মানচিত্র লাগল না। পুলিশের লোক ওদেরকে খুঁজতে পারে বলে বড় রাস্তা এড়িয়ে গ্রাম্যপথে সিট্রোন নিয়ে এগোল ও।

বারোঘণ্টা পর ফ্রান্স পেছনে ফেলে ইতালিতে ঢুকল ওরা। মাঝে একবার গাড়ি চালাল লিয়া। তখন বিশ্রাম নিয়েছে রানা। ফিউয়েল নেয়া ও খাবারের দোকানে খেয়ে নেয়ার জন্যে থামাটুকু বাদ দিলে, পুরো সময়টা ড্রাইভ করল ওরা। ডিসেম্বরের কনকনে ঠাণ্ডা পরিবেশে সর্বক্ষণ চালু থাকল গাড়ির হিটার। একটানা চলে ক্লান্ত ওরা। নিজেদের ভেতর তেমন কোনও কথা হলো না।

ইতালির সীমান্ত পেরোবার পর চারপাশ আঁধার হয়ে এল ঘন ধূসর কুয়াশার চাদরে। পুরো মনোযোগ দিয়ে নীরবে ড্রাইভ করল রানা। পথ ধূসর সুড়ঙ্গের মত, তার মাঝ দিয়ে বেশি দূরে যাচ্ছে না দুই হেডলাইটের আলো।

হিটারের গরম হাওয়ায় ঘুম এল লিয়ার। কিন্তু জরুরি একটা কথা মনে পড়তেই জানতে চাইল, ‘এবার ফোনটা ফেরত দেবে, রানা?’

‘ওটা আছে অক্সফোর্ডশায়ারের একটা নর্দমায়,’ বলল রানা, ‘আমি তোমাকে আগেই বলেছি, ওটা ফেলে দিতে হবে।’

‘তা হলে তোমার ফোনটা দাও।’

‘কাকে কল দেবে?’

‘র‍্যাচেলকে।’

‘তোমার পিএ? কীজন্যে?’

‘দু’দিন হলো লুকিয়ে বেড়াচ্ছি। ও খুব দুশ্চিন্তায় পড়বে। একে-ওকে বলবে খারাপ কিছু হয়েছে আমার। তার চেয়ে বরং ফোন করে বলে দিই, আমি ভাল আছি।’

‘ঠিক আছে, তবে বোলো না আমরা কোথায় যাচ্ছি। কথা সংক্ষেপে সারবে।’ জ্যাকেটের পকেট থেকে নিয়ে লিয়ার হাতে নিজের ফোনটা দিল রানা।

একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়াল করল লিয়া। ওদিক থেকে মেয়েটা ফোন ধরতেই জানিয়ে দিল, ওর জন্যে যেন দুশ্চিন্তা না করে।

রানার ধারণা সঠিক। র‍্যাচেল জানতে চাইল, লিয়া এখন কোথায় আছে। ঘাবড়ে গেছে ওর এজেন্ট। ওরা মিস করেছে দুটো ইন্টারভিউ। এদিকে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ পর ইতালিতে শুরু হবে দ্য ম্যাজিক ফুটের অনুষ্ঠান। আগে থেকে রিহার্সেল জরুরি। অথচ, দু’দিন হয়ে গেল কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছে না গায়িকা।

‘আমাকে নিয়ে ভেবো না,’ বলল লিয়া।

‘আজ সন্ধ্যার দৈনিক পত্রিকায় আপনার ছবি ছেপেছে,’ বলল র‍্যাচেল, ‘আপনার সঙ্গে অক্সফোর্ডে বিদেশি এক লোক। দুটো হেডলাইন পড়ে শোনাচ্ছি:

‘“এমিলিয়া বেকারের সঙ্গে কে এই সুদর্শন যুবক?”
‘“সে কি জনপ্রিয় গায়িকা এমিলিয়ার নতুন প্রেম?’’

বিরক্ত হলো লিয়া। ‘এসব নিয়ে ভেবো না, র‍্যাচেল।’

‘দেখতে কিন্তু উনি দারুণ,’ বলল র‍্যাচেল। ‘আমি নিজে হলে…’

‘বাদ দাও তো, র‍্যাচেল।’

‘মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করো হচিন্সটন হলে সব ঠিক আছে কি না,’ বলল রানা।

মুখের কাছ থেকে ফোন সরাল লিয়া। ‘কেন?’

‘শুধু জিজ্ঞেস করো। তারপর ফোন রেখে দাও।’ হচিন্সটন হলের ব্যাপারে জানতে চাইল লিয়া।

ওখানে আজ নতুন করে মেরামতের কাজ ধরেছে মিস্ত্রিরা। এই মাসের ভেতরেই তৈরি হবে রিহার্সেল স্টুডিয়ো।

‘ওরা অস্বাভাবিক কিছু পায়নি?’ জানতে চাইল লিয়া।

‘না,’ অবাক স্বরে বলল র‍্যাচেল, ‘অস্বাভাবিক কী থাকবে? ও, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ফোন করেছিল এক লোক।’

‘সে কে? কথা সংক্ষেপ করো, র‍্যাচেল।’

সামান্য নীরবতার পর বলল মেয়েটা, ‘আপনার ভাই অ্যালেকের ব্যাপারে ফোন করেছিল লোকটা।’

চমকে গেল লিয়া। ‘কী বলেছে?’

কুয়াশা ভরা রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে ওকে দেখল রানা।

‘ডিটেকটিভ। ভিয়েনা থেকে। নিজের নাম জানিয়ে বলেছেন, আপনি যেন যোগাযোগ করেন। ….একমিনিট! তাঁর নাম ডিটেকটিভ সার্জেন্ট লুদভিগ কেইলম্যান। বুঝলাম না হঠাৎ আপনাকে কেন…’

‘আর কিছু বলেছেন তিনি, র‍্যাচেল?’

‘আমার সঙ্গে কথাই বলতে চাননি। মনে হলো ব্যাপারটা খুব জরুরি। নিজের ফোন নম্বর দিয়েছেন। …লিয়া, আপনি কি কোন ঝামেলায় পড়ে গেছেন?’

‘ফোন নম্বর দাও, র‍্যাচেল।’

জোরে জোরে সংখ্যা পড়ল পিএ। ব্যাগ থেকে প্যাড ও কলম নিয়ে ফোন নম্বর লিখল লিয়া। নিজে একবার পড়ে শোনাল র‍্যাচেলকে। সংখ্যাগুলো ঠিক আছে বুঝে নিয়ে কল কেটে দিল। পেরিয়ে গেল পুরো একমিনিট। ভাবছে লিয়া তারপর বিড়বিড় করে বলল, ‘ব্যাপারটা কী!’

ওর দিকে তাকাল রানা। ‘কী বলল মেয়েটা?’

‘কেউ একজন শেলডোনিয়ান-এ ছবি তুলে ওটা বিক্রি করেছে দৈনিক পত্রিকাগুলোর কাছে,’ বলল লিয়া।

‘একেই বলে খ্যাতির বিড়ম্বনা।’

‘হয়তো বিপদে পড়তে পারি।’

‘সেজন্যেই আয়ারল্যাণ্ডে রেখে আসতে চেয়েছিলাম, অনেক নিরাপদে থাকতে।’ স্টিয়ারিং হুইলে তবলা বাজাল রানা। কয়েক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে জানাল, ‘এখন ভেবে লাভ হবে না। অ্যালেকের ব্যাপারে কী জানলে ওর কাছ থেকে?’

ডিটেকটিভ সার্জেন্ট লুদভিগ কেইলম্যান কী বলেছে, রানাকে জানাল লিয়া। এরপর বলল, ‘তোমার কী ধারণা, লোকটা কী চায়?’

‘জানি না।’

‘র‍্যাভেনায় না গিয়ে আমাদের বোধহয় উচিত অস্ট্রিয়ায় যাওয়া। তা হলে জানতে পারব, কী বলতে চায় লোকটা হয়তো জরুরি কিছু।’

‘অথবা, ওটা আরেকটা ফাঁদ।’

‘কিন্তু আমি তো আর সর্বক্ষণ পুলিশের লোককে এড়াতে পারব না, তাই না, রানা? শেষে তো তাদের কাছে যেতেই হবে। কেউ অ্যালেককে খুন করে থাকলে…

‘তোমার কথা বুঝতে পেরেছি। তুমি চাও ন্যায় বিচার।’

‘হ্যাঁ। বিচার হোক আমার ভাইয়ের খুনির। তুমিও তো সেটাই চাও, তাই না?’

‘আমি প্রতিশোধ নিতে চাই বন্ধু-হত্যার।’

‘সেটা করবে কীভাবে? তুমি তো নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারবে না।’

‘আইন-শৃঙ্খলা বিভাগের ওপর সবসময় ভরসা রাখা যায় না, লিয়া। হয়তো নিজেই পালন করব বিচারকের দায়িত্ব।’

‘তা দেখেছি ইংল্যাণ্ডে, বিড়বিড় করল লিয়া। ‘তবে কারও মাথায় বুলেট গেঁথে দেয়া সুস্থ মস্তিকের মানুষের কাজ নয়।’

‘আমারও যে ভাল লাগবে খুন করতে, তা নয়, লিয়া,’ বলল রানা। ‘তবে কখনও কখনও ওটাই একমাত্র উপায়। নইলে নিজেই খুন হব।’

‘কিন্তু তুমি তো আর সত্যিকারের বিচারক নও,’ বলল লিয়া।

১৬০

জবাব দিল না রানা।

অস্বস্তিকর নীরবতা নামল ওদের মাঝে। কুয়াশা ভরা পথে চেয়ে ওয়াইপারের ছন্দবদ্ধ শব্দ শুনছে লিয়া। গত কয়েক দিনে এলোমেলো হয়ে গেছে সব। পরিচিত জগৎ‍ এখন বহু দূরের। মাত্র ক’দিন আগেও এক অপেরা হাউস থেকে অন্য অপেরা হাউসে ছুটে বেড়িয়েছে। নিয়মিত রিহার্সেল করেছে, আর পারফর্মেন্স। জীবনটা ভীষণ ব্যস্ত হলেও সেটা ছিল একদম নিরাপদ। অথচ, এখন নিরাপদ জগৎটা হারিয়ে বসেছে ও। জানা নেই এরপর কী ঘটবে। মাথার পেছনে দু’হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিয়া।

‘এক ঢোক উইস্কি?’ ব্যাগ থেকে সবুজ বোতল নিয়ে লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিল রানা। ‘দুশ্চিন্তা কমবে।’

মৃদু মাথা দোলাল লিয়া। বোতলের ছিপি খুলে গলায় ঢালল শিভাস রিগাল। আরও দুই ঢোক গিলে বোতলটা ফেরত দিল রানার হাতে। মুখ বিকৃত করে বলল, ‘আশা করি ঘুমের ওষুধের মত কাজ করবে।’

ব্যাকপ্যাকে বোতল রাখল রানা। ‘ডিটেকটিভ সার্জেন্ট সম্বন্ধে বলো।’

‘বলার তো কিছুই নেই,’ বলল লিয়া। ‘ফোন করলে হয়তো কিছু জানা যেতে পারে।’

‘সে চাইলে পরে দেখা করব আমরা,’ বলল রানা। ‘তবে আগে যাব প্রফেসর ডিয়ানোর ওখানে। তিনি হয়তো গোটা বিষয়টা ব্যাখ্যা করে বলতে পারবেন।’

.

রাত দশটায় র‍্যাভেনায় পৌঁছল ওরা। মিস্টার অ্যাণ্ড মিসেস রিড হিসেবে শহরের বাইরে ছোট এক হোটেলে উঠল কাগজপত্র দেখতে চাইল না কর্তৃপক্ষ। নগদ টাকা পেয়ে খুশি। বাড়ির মালকিন ওদেরকে নিয়ে গেল দোতলায়। একটা দরজা খুলে ধরিয়ে দিল তালার চাবি। মহিলা বিদায় নেয়ার পর ওদেরকে বিরক্ত করতে এল না কেউ।

সবুজ রঙের ছোট্ট ঘর। আসবাবপত্র নেই বললেই চলে।

‘মাত্র একটা বেড, রানার দিকে তাকাল লিয়া। যদিও ডাবল-বেড, ঘরের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে নিয়েছে ওটা।

‘ঘর নেয়ার সময় ভাবিনি ডাবল-বেড দেবে,’ আর্মচেয়ারে ব্যাকপ্যাক রাখল রানা। ওয়ারড্রোব খুলতেই গুঙিয়ে উঠল ওটা। ভেতরে চারটে ব্ল্যাঙ্কেট। ওগুলো বের করে মেঝেতে ফেলল ও। ‘বাধ্য হয়ে একই রুমে আমাকে থাকতে হবে, লিয়া। দরজার বাইরে সারারাত করিডোরে থাকলে কালকে কোনও কাজে আর মন দিতে পারব না।’

‘মেঝেতে শুতে হবে না, বলল লিয়া। ‘আমরা বিছানা শেয়ার করতে পারি।’

‘ফ্র্যাঙ্ক গর্ডন যদি রেগে যায়?’ হাসিমুখে বলল রানা অস্ফুট কণ্ঠে।

কিন্তু শুনে ফেলেছে লিয়া। ভুরু কুঁচকে তাকাল রানার দিকে। তর্ক করতে গিয়েও রানার হাসি দেখে হেসে ফেলল নিজেও। ‘রাগলে তোমার ওপর রাগবে, আমার কী?’

‘কিছুই না,’ জানাল রানা, ‘তাই তো মেঝেতেই বিছানা করে নেব। এরচেয়ে ঢের খারাপ জায়গায় শোয়ার অভ্যেস আছে আমার।’

‘গর্ডনের ব্যাপারে তোমার কি কিছু জানার আছে, রানা?’

‘না, বিন্দুমাত্র নেই।’

‘ইয়টে যা ঘটেছে, সেসব নিয়েই ভাবছিলে, তাই না? বলো তো, আসলে কী দেখেছ তুমি?’

‘গর্ডন আর তোমার ভেতর যা-ই ঘটুক, সেসব তোমাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’

‘আমাদের ভেতরে কিছুই ঘটেনি, রানা।’

‘তা হলে তো চুকেই গেল। কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানো আমি পছন্দ করি না।’

‘ও আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, ব্যস, রেগে গিয়ে বলল লিয়া, ‘তুমি কিচ্ছু শুনতে চাইছ না, রানা। বহু আগেই স্পষ্ট মানা করে দিয়েছি। ও আমার একজন ভক্ত ও বন্ধু ব্যস, আর কিছুই নয়।’

‘আমি কিন্তু কোনও ব্যাখ্যা চাইনি, লিয়া।’ ব্যাকপ্যাক থেকে উইস্কির বোতল নিল রানা। ‘নেবে আরেকটু?’

এবার রেগে মাথা নাড়ল লিয়া। ‘ইচ্ছে হলে গলা পর্যন্ত গিলে ঘুমোও। আমি কাউকে কোনও ব্যাপারেই কৈফিয়ত দিচ্ছি না।’ জুতো খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ল লিয়া। ‘কী দরকার আমার কিছু বলার?’

বেডসাইড টেবিল থেকে নিয়ে ফুঁ মেরে ধুলো উড়িয়ে গ্লাসে উইস্কি ঢালল রানা। সোনালি তরল শেষ করে টেবিলে ঠক্ করে রাখল গ্লাস। মেঝে থেকে তুলে বিছানায় লিয়ার পায়ের ওপর চাপাল দুটো ব্ল্যাঙ্কেট। নিজের কম্বলের একটা মেঝেতে পেতে অন্যটা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল। কেন যেন নিজেকে ওর মনে হচ্ছে হিংসুটে প্রেমিক-প্রবর। মহাবিরক্ত হয়ে পড়ে থাকল ও চোখ বুজে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *