1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ১৭

সতেরো

তিনবার ট্যাক্সি ও চারবার বাস পাল্টে সেইণ্ট ইশাম গ্রাম থেকে লাল এক ডাবল-ডেকার বাসে চেপে আবার অক্সফোর্ড-শায়ারের দিকে চলেছে রানা ও লিয়া।

রানা এখন শিওর, পিছু নিচ্ছে না কেউ।

ঘনিয়ে এসেছে সন্ধ্যা। একটু পর ডুবে যাবে সূর্য।

এই মুহূর্তে ডাবল-ডেকার বাসের ওপরতলায় ওরা ছাড়া আর কেউ নেই। শেষ সিটে বসে পেছনে চোখ রেখেছে রানা।

‘এবার, রানা?’ জানতে চাইল লিয়া।

‘আমরা জানি, অ্যালেকের মৃত্যু সাধারণ কোন দুর্ঘটনা নয়,’ বলল রানা। ওর চোখে চেয়ে আছে লিয়া। ‘এবার ভেবে বের করতে হবে কী করা যায়।’

মৃদু মাথা দোলাল লিয়া। ‘আসলে কী করছিল অ্যালেক? কী ঘটেছিল ওর জীবনে? ও তো কেবল সাধারণ একটা বই লিখবে বলে রিসার্চ করছিল!’

‘করোনার কি মৃত্যুর ঠিক সময় জানিয়ে দিয়েছিল?’ জানতে চাইল রানা।

ওর মৃত্যু হয়েছে রাত দশটা আটত্রিশ মিনিটে। কেন?’

‘করোনার এত নিশ্চিত হলো কীভাবে?’ বলল রানা, ‘এত নিখুঁতভাবে জানাতে পারার কথা নয়। আসলে উপায় নেই।’

ওর হাতে ছিল পুরনো ঘড়ি,’ বদল লিয়া। ‘বাবাকে মনে রাখতে সবসময় ওটা পরত অ্যালেক। থেমে গিয়েছিল… পানিতে পড়ার পর…’ বুক ভেঙে যাচ্ছে বলে ঢোক গিলল লিয়া। চোখের কোলে দেখা দিয়েছে একফোঁটা অশ্রু। হাত দিয়ে ওটা মুছে ফেলল।

‘বুঝলাম, এসব নিয়ে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তোমার,’ বলল রানা।

‘অথচ, না বলে উপায়ও তো নেই,’ বলল লিয়া।

‘গোটা বিষয়টা আমি কীভাবে দেখছি, বলছি তোমাকে,’ বলল রানা। ‘অ্যালেক অস্বাভাবিক একটা মৃত্যু দেখতে পায়। কোথায় ওটা ঘটেছে, জানা নেই। তবে এটা জানি, ওটা ছিল কোনও আনুষ্ঠানিক মৃত্যু। ওই মন্দিরে কেউ না কেউ দেখে ফেলে অ্যালেককে। ধাওয়া করা হয় ওকে। ও পালিয়ে যাওয়ার পর ওকে ধরতে গিয়ে একঘণ্টার বেশি সময় নিয়েছে তারা। এরপর ওকে মেরে ফেলা হয়।

নীরবে মাথা দোলাল লিয়া। টিশ্য দিয়ে মুছল দুই চোখ। ‘স্মার্টফোন দিয়ে ভিডিয়ো ক্লিপ তোলে অ্যালেক,’ বলল রানা। ‘ধরা পড়ার সময় ওই স্মার্টফোনে ভিডিয়ো ক্লিপটা ছিল। খুনিদের ধারণা হয়েছিল, সবধরনের প্রমাণ তারা নিশ্চিহ্ন করতে পেরেছে।’

‘আর তারপর দেখল আমার টিভি ইন্টারভিউ,’ তিক্ত স্বরে বলল লিয়া।

মৃদু মাথা দোলাল রানা। ‘মাসের পর মাস পেরিয়ে গেছে, ওরা ভেবেছিল আড়াল করতে পেরেছে অপরাধের সব চিহ্ন। কিন্তু তারপর জানল, তোমার কাছে আছে অ্যালেকের নোট ও অন্যান্য প্রমাণ। হত্যাকাণ্ডের ভিডিয়ো তোমার কাছে থাকলে যখন তখন বিপদে পড়বে, এটা বুঝতে পেরেই তোমার পিছনে লেগেছে তারা।’

নীরবে কাঁদছে লিয়া।

‘দুঃখিত,’ নিচু গলায় বলল রানা। ‘গোটা ব্যাপারটা হয়ে উঠেছে খুব বিপজ্জনক।’

‘জানতে চাই আমার ভাইয়ের আসলে কী হয়েছিল, ‘ কান্না চেপে বলল লিয়া। ‘কিন্তু জানার তো কোনও উপায় নেই। তার ওপর আমরা এখন পুলিশের কাছেও যেতে পারব না।’

‘গোটা বিষয়টা ভীষণ বিপজ্জনক,’ বলল রানা। ‘এবার গোটা ইউরোপ জুড়ে তোমাকে খুঁজবে খুনির দল। তাই নিরাপদ কোথাও তোমাকে রেখে তারপর বের করার চেষ্টা করব এসব কী ঘটছে। কেনই বা।

‘প্রথমে কোথায় যাবে ভাবছ?’

‘এখনও স্থির করিনি। তবে আগে তোমাকে সরিয়ে দেব নিরাপদ কোথাও। গাড়ি ভাড়া করে যাব স্কটল্যাণ্ডে। এরপর স্ট্র্যানরায়েতে ফেরি ধরে পৌঁছে যাব গ্যালওয়ের সীমান্তে। সেক্ষেত্রে পাসপোর্টের ঝামেলা থাকবে না। কেউ জানবে না তুমি ওখানে আছ।’

শুকিয়ে গেছে লিয়ার অশ্রু। চোখে-মুখে-ফুটল প্রতিবাদ। ‘তার মানে তুমি প্লেনে উঠে একা যেতে চাও খোঁজ নিতে?’

‘সেটাই ভাল।’

ঘন ঘন মাথা নাড়ল লিয়া। ‘আমি রাজি নই, রানা। অ্যালেকের ব্যাপারে জানতে গিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে তুমি, আর ওদিকে নির্জন কোনও সৈকতে বসে আমি ডিমে তা দেব, সেটি হবে না। তুমি ভুলে যাচ্ছ, অ্যালেক আমার আপন ভাই।’

‘তুমি আমার সঙ্গে গেলে মহাবিপদে পড়বে। আজ যা ঘটল, নিজের চোখেই দেখলে। তোমাকে সহজেই চিনে ফেলে মানুষ। অথচ আমি একা কোথাও গেলে কেউ সন্দেহ করবে না। আর সেটা বিপজ্জনকও হয়ে উঠবে না তোমার জন্যে।’

‘একটা স্কার্ফ আর সানগ্লাস পরলেই কেউ বুঝবে না আমি কে। কারও সামনে কথাও বলব না। তা হলেই তো হলো?’

‘তোমার পাসপোর্ট ব্যবহার করে কোথাও যাওয়া যাবে না, গেলেই টের পেয়ে যাবে পুলিশের লোক। হয়তো সে-ই খবর পৌঁছে দেবে খুনিদের কাছে। ইউরোপের যেখানেই যাও, একঘণ্টার ভেতর তারা জানবে তুমি কোথায় আছ।’

‘পুলিশের সঙ্গে আমাদের কী, রানা?’

‘তা এখনও জানি না,’ বলল রানা।

চুপ করে কী যেন ভাবছে লিয়া, চোখ বহু দূরে।

জানালার পাশ দিয়ে সাঁই-সাঁই করে পিছিয়ে চলেছে দুই সারি গাছ। দুলতে দুলতে ভাঙাচোরা রাস্তায় এগিয়ে চলেছে ডাবল-ডেকার বাস। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই বলল লিয়া, ‘অন্য উপায়ে পাসপোর্ট ছাড়াও ফ্রান্সে যেতে পারব। আর তারপর তো খুলে যাবে ইউরোপের সব পথ। কী বলো?’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *