দশ
থমথম করছে ভিয়েনার ধূসর পরিবেশ। যে-কোনও সময়ে শুরু হবে ভারী তুষারপাত। প্রায় ছুটতে ছুটতে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকল ক্রিস্টা। দরজা বন্ধ করে পৌঁছে গেল বেডরুমে। ভীষণ ভয় পেয়েছে সে। চট করে আটকে দিল বেডরুমের দরজা। কিছুক্ষণের জন্যে বুজে ফেলল দু’চোখ। ভাবছে: কতক্ষণ ধরে পিছু নিয়েছিল ওই পুলিশ অফিসার? কী যেন নাম তার? চট্ করেই মনে পড়ল: কেইলম্যান। ডিটেকটিভ সার্জেন্ট লুদভিগ কেইলম্যান!
পর পর বড় দুটো ভুল করেছে ক্রিস্টা, জানলে খুব নাখোশ হবে ওরা। প্রথম কথা: ওই ক্যাফেতে পুলিশ অফিসারকে চেনার সঙ্গে সঙ্গে ওর উচিত ছিল ওখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া। ধীরেসুস্থে গিয়ে উঠতে পারত কোনও খালি ট্যাক্সিতে। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা ছিল, পিছু নিত না সার্জেন্ট।
আর দ্বিতীয় ভুলের জন্যে হয়তো ওকে খুঁজে বের করবে লোকটা। হাতে নগদ টাকা থাকা খুব জরুরি বলে সবসময় ব্যাগে যথেষ্ট পরিমাণে রাখে। কিন্তু এতই ভয় পেয়েছিল, তাড়াহুড়ো করে বেরোতে গিয়ে ব্যবহার করেছে জেনিসা ব্রোসেটের ক্রেডিট কার্ড। এরপর থেকে আর কখনও ব্যবহার করতে পারবে না ওই পরিচয়। জেনিসা ব্রোসেট নামের ব্যাপারে খোঁজ নিলেই পুলিশ অফিসার বুঝবে, ও ঘুরছিল নকল পরিচয়ে। তাতে আরও সন্দেহপ্রবণ হবে সে। এবার কপাল ভাল বলে ধরা না পড়ে পালিয়ে আসতে পেরেছে ও। কিন্তু সত্যি যদি কেইলম্যান ওকে সন্দেহ করে থাকে, গন্ধ শুঁকে ঠিকই হাজির হবে এই বাড়িতে।
ভীষণ আতঙ্কে ঘাড় ও কাঁধের পেশি ব্যথা করছে ক্রিস্টার। শুকিয়ে গেছে জিভ ও গলা।
কেন পিছু নিল লোকটা?
আবারও কি অ্যালেক বেকারের কেসের ব্যাপারে ছোঁক-ছোঁক শুরু করেছে সে?
কিন্তু তেমনটা করবে কেন?
এরপর তো পেরিয়ে গেছে মাসের পর মাস!
ওই কেস চাপা দিয়েছে পুলিশেরই লোক।
মাত্র কয়েকজন জানে, সেরাতে আসলে কী ঘটেছিল। হ্যাণ্ডব্যাগ খুলে ছোট্ট স্টেইনলেস স্টিলের ব্ল্যাক উইডো ম্যাগনাম রিভলভারটা নিল ক্রিস্টা। ওটা .২২ ক্যালিবারের। কিছুক্ষণ চেয়ে রইল অস্ত্রটার দিকে। ওটার ওজন মাত্র আট আউন্স। দৈর্ঘ্যে ছয়ইঞ্চি। তবে যে-কারও মগজ উড়িয়ে দেবে সিলিণ্ডারের পাঁচটা বুলেট। আগে কখনও কোনও মানুষকে খুন না করলেও ক্রিস্টা জানে কীভাবে গুলি করতে হয়।
জীবিত কারও দিকে রিভলভার তাক করে ট্রিগার টিপলে কেমন লাগবে, ভাবতে চাইল ক্রিস্টা। বাধ্য হলে সেই কাজই. করতে হবে ওকে। পড়ে গেছে মস্ত ঝামেলায়। একবার পুলিশের খপ্পরে পড়লে বাঁচার উপায় নেই।
হয়তো লুদভিগ কেইলম্যানকে পিছু নিতে দিলেই ভাল হতো, ভাবল ক্রিস্টা। ঈশ্বর অঢেল রূপ দিয়েছেন ওকে। শরীরের লোভ দেখিয়ে নির্জন কোথাও নিয়ে সহজেই খুন করতে পারত সার্জেন্টকে।
অ্যালেক বেকারের কথা মনে পড়ল ক্রিস্টার। কবে লোকটার বোনকে হাতের মুঠোয় পাবে ভয়ঙ্কর লোকগুলো, জানা নেই। তবে এদের হাত থেকে রক্ষা নেই কারও।
ছোট্ট রিভলভার হাতে বিছানার পাশে থামল ক্রিস্টা। দেখতে পেল বালিশের ওপর লাল ভেলভেটের জুয়েলারি কেস। ওটার ঢাকনি খুলে চোখ বোলাল ভেতরে। সপ্তাহখানেক আগে ভিয়েনার নাম করা এক অ্যান্টিক শপে দেখেছিল ল্যোলিখাত নিভেউ ফ্রঁচটা। প্রশংসা করেছিল ওটার। দারুণ সুন্দর গহনা। সোনার তৈরি। তাতে নিখুঁত- ভাবে বসিয়ে দেয়া হয়েছে ডায়মণ্ড ও স্যাফায়ার। লাল বাক্সের ভেতর ছোট একটা নোট। ওটা খুলে পড়ল ক্রিস্টা।
চিঠি ওই ভয়ঙ্কর দলের নেতার!
সংক্ষেপে লিখেছে: আজ রাতে ওটা পরবে।
গহনার কেস বন্ধ করে বিছানার আরেকদিকে ছুঁড়ে ফেলল ক্রিস্টা। শুয়ে পড়ল আরামদায়ক বেডে। কিন্তু ওর মনে হলো, চারপাশ থেকে যেন ঘিরে ধরছে ওকে ঘন কালো আঁধার।
ব্ল্যাক উইডো রিভলভার কপালের পাশে জুলফিতে ঠেকাল ক্রিস্টা। মাল্টা ভীষণ ঠাণ্ডা। চোখ বুজে আস্তে করে ছোট্ট হ্যামার তুলতেই ক্লিক-ক্ল্যাক আওয়াজ তুলল ওটা। একটিবার সাহস করে ট্রিগার টিপে দিলেই চিরকালের জন্যে মুক্তি পাবে ও।
শক্ত হাতে রিভলভারের বাঁট ধরে বড় করে শ্বাস ফেলল ক্রিস্টা।
কয়েক মুহূর্ত পর বুঝল, সাহস করে কাজটা করতে পারবে না। কোথাও পালাবার উপায়ও নেই ওর!