1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ২১

একুশ

কানের পেছনে ও কবজির ওপর স্প্রে করল দামি পারফিউম, তারপর আয়নায় নিজেকে দেখল ক্রিস্টা গুন্থার। আজ মাথায় পরেছে বড় এক সোনালি উইগ। একটু নেড়েচেড়ে ঠিকভাবে বসিয়ে নিল ওটা। নিখুঁত সাজে কোথাও কোনও ত্রুটি নেই। সিল্কের লাল প্যান্টি পরেই বেরিয়ে গেল বাথরুম থেকে। ঢুকল ওয়াক-ইন ওয়ারড্রোবে। র‍্যাকে র‍্যাকে ঝুলছে ওর জন্যে তৈরি দামি সব অপূর্ব সুন্দর ড্রেস।

কোথা থেকে যেন এল নিয়ন্ত্রিত শুকনো কণ্ঠ, ‘কালো ড্রেসটা নাও।’

ক্রিস্টা জানে, ঘরের ভেতর আছে কয়েকটা স্পিকার। আর আছে ক্যামেরা-নির্নিমেষে দেখছে ওকে সারাক্ষণ।

র‍্যাক থেকে ভেলভেট কাপড়ের ড্রেসটা নামালেও মন থেকে ওটাকে ঘৃণা করে ক্রিস্টা। আসলে প্রতিটা ড্রেসের প্রতি তার আছে তীব্র বিতৃষ্ণা। প্রায় উলঙ্গ শরীরে বুকের কাছে ড্রেসটা ধরল ক্রিস্টা।

‘না,’ এল শুকনো কণ্ঠস্বর। ‘স্যাটিনের পোশাকটা নাও।’

র‍্যাকের আরেকদিকে সরে হ্যাঙার থেকে লো-কাট স্যাটিনের ড্রেস নামাল ক্রিস্টা। মাত্র ক’দিন আগে উপহার দেয়া হয়েছে ওটা।

‘হ্যাঁ, এটা পরো,’ আবারও এল আবেগহীন কণ্ঠ।

নির্দেশ পালন করল ক্রিস্টা।

‘এবার পরবে মুক্তার সেট।’

ওয়ারড্রোব থেকে সরে উল্টো দিকের দেয়ালে অ্যান্টিক গ্লাস দিয়ে ঢাকা ক্যাবিনেটের সামনে থামল ক্রিস্টা। ডিসপ্লেতে সারি সারি ঢাকনি খোলা গহনার বাক্স। ঝিকমিক করছে সোনার হরেক ডিযাইনের চেইন ও হীরার নেকলেস। একটু সরে ক্যাবিনেটের ডালা খুলে বড় একটা মুক্তার মালা নিয়ে মাথার ওপর উঁচু করে ধরল। দুই স্তনের মাঝে নেমে এল ওটার শেষপ্রান্ত। উষ্ণ ত্বকে শীতল লাগছে ওটা।

ওরকম দুটো পরো,’ জানাল শুকনো কণ্ঠ। ‘ম্যাচ করে পরবে মুক্তার দুল।’

যান্ত্রিক ভঙ্গিতে নির্দেশ পালন করল ক্রিস্টা গুন্থার।

বাড়ির অন্যপ্রান্তে নিজের অফিসে আরামকেদারায় বসে কোলে হাতদুটো রাখল বিলিয়নেয়ার লুকা ব্রুনার। বরাবরের মতই গলা থেকে ঝুলছে নিভাঁজ, নিখুঁত টাই। রঙিন ফ্ল্যাট- স্ক্রিনে দেখছে ক্রিস্টাকে। ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেকে মেলে ধরেছে যুবতী। ভাল করেই জানে, এমন করে তাকে দেখতে ভালবাসে মনিব। প্রশংসা নিয়ে মাথা দোলাল লুকা ব্রুনার। মাইক্রোফোনে বলল, ‘ঠিক আছে। গুড। এবার যাও ওই ঘরে।’ সামনের কন্সোলে টিপ দিল একটা বাটনে। বদলে গেল ক্যামেরা। বেডরুম থেকে ক্রিস্টাকে বেরোতে দেখল বিলিয়নেয়ার। মেয়েটা হেঁটে চলেছে দীর্ঘ করিডোর ধরে। একটু পর সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল।

আগেও তাকে যেতে হয়েছে ভয়ঙ্কর নোংরা সব কাজে। বারবার ভেবেছে, লোকটা আসলে কী চায় তার কাছে? প্রতিবার একটু একটু করে বেড়েছে আপত্তিকর নির্দেশ। ক্রমেই তা হয়েছে আরও কষ্টকর। ভারী দরজার সোনার হাতল মুচড়ে ঘরে ঢুকল ক্রিস্টা। চমৎকারভাবে সাজানো ঘর। অনেক ওপরে ছাত। দেয়ালে দেয়ালে সিল্কের পর্দা থেকে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে ছায়া। অত্যন্ত দামি ও শৌখিন কিছু আসবাব ছাড়া ঘরে বাড়তি কিছু নেই। পুরু কার্পেটে ডুবে গেল ক্রিস্টার গোড়ালি।

ঘরের মাঝে পৌঁছে চারপাশে তাকাল। ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে সে। মেঝে থেকে শুরু করে ছাতে গিয়ে উঠেছে চওড়া এক আয়না। ওটাতে নিজেকে দেখেই চট করে চোখ সরিয়ে নিল ক্রিস্টা

ঘরের কোণে গুঙিয়ে উঠা কেউ। আওয়াজ লক্ষ্য করে ঘুরল সে। চওড়া বিছানায় শুয়ে আছে এক মেয়ে। বয়স ষোলো কি সতেরো। প্রায় চেতনাহীন। পরনে সংক্ষিপ্ত পোশাক। বেডের চার পায়ার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে তার চার হাত-পা।

ঘরের কোনা থেকে এল গোপন স্পিকারে শুকনো কন্ঠস্বর। ক্রিস্টার মনে হলো ওই আওয়াজ আসছে চারপাশ থেকে। ‘এবার তোমার পোশাক খোলো… খুব ধীরে ধীরে।’

ক’মুহূর্ত দ্বিধা করে পোশাক খুলতে লাগল ক্রিস্টা।

‘আরও ধীরে,’ সতর্ক করল লুকা ব্রুনার।

নির্দেশ শুনে কাঁধ থেকে স্ট্র্যাপদুটো খসাল ক্রিস্টা। পিছলে শরীর থেকে নেমে মেঝেতে স্তূপ তৈরি করল দামি ড্রেস। ওটা টপকে এগোল ক্রিস্টা।

‘গুড,’ বলল শুকনো গলা। ‘এবার গিয়ে খোলো টেবিলের ওপর রাখা ব্রিফকেসটা।’

নির্দেশ পালন করল ক্রিস্টা। চকচকে টেবিলের দিকে পা বাড়িয়ে অবশ হয়ে এল শরীর। নরম চামড়ার ব্রিফকেসের ডালা খুলে পিছিয়ে এল এক পা। ভেতরে যা দেখেছে, শ্বাস আটকে গেছে তার।

আয়নার দিকে চেয়ে আস্তে করে মাথা নাড়ল ক্রিস্টা। কাঁপা গলায় বলল, ‘প্লিয, আমাকে একাজ করতে বাধ্য কোরো না। আমি মাফ চাই।’

টু-ওয়ে আয়নার ওদিকে আছে লোকটা, বুঝতে পারছে ক্রিস্টা। প্রায় কেঁদে ফেলল। ‘আমি এটা পারব না। মেয়েটা বেঁচে থাকলে বাকি জীবন নরকে বাস করবে।’

ভেসে এল লুকা ব্রুনারের শীতল কণ্ঠস্বর। জানিয়ে দিল, নির্দেশ না মেনে উপায় নেই ক্রিস্টার।

কথা না শুনলে কী হবে শোনার পর বুকের কাছে ঝুলে গেল যুবতীর মাথা। বুজে ফেলেছে দুই চোখ।

তবে লুকা ব্রুনারের কথা শেষ হলে ব্রিফকেস থেকে ধীরে ধীরে বের করে নিল ছোরার চেয়েও ধারালো এক স্ক্যাল্পেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *