1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ১

এক

হিমশীতল জানুয়ারি।

রাত সাড়ে নয়টা।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার খুব কাছে বরফে ছাওয়া প্রায় নির্জন এক এলাকায় প্রাসাদোপম ম্যানশন। তারই ভিতর এক পাথুরে নগ্ন করিডোরে তীব্র আতঙ্ক ও মানসিক যন্ত্রণায় থরথর করে কাঁপছে অ্যালেক বেকার। এইমাত্র ছিটকে বেরিয়ে এসেছে পাতাল মন্দির থেকে। স্বচক্ষে যা দেখেছে, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। পেট মুচড়ে বমি এলেও শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেছে ওর গলা!

মানুষের নজর এড়িয়ে বিশাল ম্যানশনের অভ্যন্তরে খুঁজে দেখতে গিয়ে যে বীভৎস দৃশ্য চাক্ষুষ করেছে, তারপর আর দেরি হয়নি প্যাচানো পাথরের সিঁড়ি বেয়ে ছুটে ওপরে উঠে আসতে। আরেক দৌড়ে ব্রিজ পেরিয়ে পৌঁছে গেছে দালানের মূল অংশে। ক্লাসিকাল আর্কিটেকচার অনুসরণ করে প্রকাণ্ড এই ম্যানশন তৈরি হলেও এখন অ্যালেক আছে রুক্ষ এক করিডোরে। এখান থেকেও শোনা যাচ্ছে পার্টিতে আসা অতিথিদের হাসি ও কলগুঞ্জন। বলরুমে স্ট্রিং-কোয়ার্টেট-এ বাজছে ওয়াল-এর সুর।

একটু পর নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ম্যানশনের মেইন ডোরওয়ের দিকে চলল অ্যালেক বেকার। ভিডিয়ো মোডে চালু অবস্থায় হাতে ধরা নোকিয়া ফোনটা অফ করে টুক্সেডোর পকেটে রাখল ও। দরজা খুলতেই ঘামে ভেজা কপালে লাগল বরফ-ঠাণ্ডা হাওয়া। কনকনে শীতে বুজে এল শ্বাস।

ম্যানশনের বাইরে সাদা তুষারের বিস্তৃত চাদর। আঁধার আকাশে নীলচে বিদ্যুৎশিখা ঝলসে উঠতেই মুহূর্তের জন্যে দিনের মত আলোকিত হলো ম্যানশনের আঠারো শতাব্দীর চেহারাটা। একটু দূরে চকচকে ক্যাডিলাক ও ল্যামবোরঘিনির ভিড়ে বেমানান দেখাচ্ছে ওর সবুজ রঙের টয়োটা ইয়ারিস হ্যাচব্যাক গাড়িটা। ওদিকে চলল অ্যালেক বেকার। কিন্তু কয়েক পা যেতেই পেছন থেকে এল কর্কশ নির্দেশ: ‘হল্ট!’

সিকিউরিটি গার্ডকে তোয়াক্কা না করে দরজা খুলে ইয়ারিস গাড়িতে উঠল অ্যালেক। ইঞ্জিন চালু করে গিয়ার ফেলে মেঝেতে চেপে ধরল অ্যাক্সেলারেটর। বরফ-শীতল কোবল পাথরে পিছলে গেল গাড়ির চার চাকা। দীর্ঘ ড্রাইভওয়ে ধরে দূরের মেইন গেট লক্ষ্য করে চলল অ্যালেক বেকার।

এ মুহূর্তে সামনের গেটহাউসে কানে রেডিয়ো তুলে কী যেন শুনছে আরেকজন গার্ড। অন্যহাতে রিমোট কন্ট্রোলের সুইচ টিপে দেয়ায় সরসর করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চওড়া রটআয়ার্নের গেট। যেদিকে যাচ্ছে ওটা, সেদিকেই গাড়ির নাক তাক করল অ্যালেক। মাত্র কয়েক মুহূর্ত পর ভীষণ হোঁচট খেল সে। প্রচণ্ড আঘাতে সামনের উইং মুচড়ে গেলেও গেট বাঁকা করে বেরিয়ে গেল ইয়ারিস হ্যাচব্যাক। পেছনে চেঁচিয়ে উঠেছে সিকিউরিটি গার্ড। বরফে ঢাকা পথে পড়ে গাড়ির গতি তুলল অ্যালেক। তবে একমিনিট পেরোবার আগেই রিয়ার ভিউ মিররে দেখল ঝলমলে সাদা দুটো হেডলাইট। দ্রুত পেছন থেকে আসছে গাড়িটা।

অ্যালেকের গাড়ির হলদেটে আলোয় দু’পাশে বিদ্যুদ্বেগে পিছিয়ে পড়ছে সফেদ তুষারে ছাওয়া ত্রিকোণ আকৃতির গাছগুলো। সামনের পথ পিচ্ছিল বরফে ছাওয়া, বিপজ্জনক। এখন আর কমাতে পারবে না সে গাড়ির গতি। দু’হাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরল অ্যালেক। পরক্ষণে হড়কে গেল ওর গাড়ি, তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল না। রিয়ার ভিউ মিররে দেখল, প্রচণ্ড গতিতে ধাওয়া করে কাঁচের মত মসৃণ বরফে পৌঁছেই পিছলে গেল পেছনের গাড়ি। তীরবেগে গুঁতো দিল পথের পাশে দাঁড়ানো মোটা এক গাছের গুঁড়িকে। পরক্ষণে এক গড়ান দিয়ে কাত হয়ে পড়ল গভীর খাদে।

বিশ মিনিট পর গেস্টহাউসে পৌঁছে গেল অ্যালেক বেকার। তুবড়ে যাওয়া গাড়ি পার্কিং লটে রেখে ছুটে গিয়ে ঢুকল দালানের পেছনদিকে নিজের রুমে। বাইরে শুরু হয়ে গেছে ঝড়। অ্যালেক শুনল, ছাতে অবিশ্রান্তভাবে তবলা বাজাচ্ছে অঝোর বৃষ্টি। ল্যাপটপ অন করতেই একবার নিভে আবারও জ্বলল টেবিল ল্যাম্প। অ্যালেকের মনে হলো, চিরকাল ধরে লোড হচ্ছে ওর ল্যাপটপ। অথচ, হাতে একদম সময় নেই!

‘জলদি চালু হ, কই, চালু হ,’ বিড়বিড় করল সে।

ই-মেইল অ্যাকাউন্টে লগ করে ব্যস্ত হয়ে খুঁজে নিল ইন- বক্সে বিশেষ একটি মেসেজ: দ্য মোযার্ট’স্ ডকুমেন্ট।

ওই চিঠি দিয়েছেন এক ইতালিয়ান প্রাক্তন প্রফেসর।

রিপ্লাই বাটনে ক্লিক দিয়ে ঝড়ের বেগে লিখতে লাগল অ্যালেক জরুরি চিঠি।

প্রফেসর,

মোযার্টের চিঠির বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। এটা খুবই জরুরি। পরে আপনাকে ফোন দেব। জেনেছি ভয়ঙ্কর এক সত্য। আমি আছি মস্তবড় বিপদে। শ্রদ্ধা-

অ্যালেক বেকার।

মেসেজ পাঠিয়ে পকেট থেকে স্মার্টফোন নিয়ে ওটার সঙ্গে ল্যাপটপের ইউএসবি কেই যুক্ত করল অ্যালেক। মনে মনে বলছে: ‘মাথা ঠাণ্ডা রাখো, অ্যালেক! নইলে স্রেফ…’

নোকিয়া থেকে ল্যাপটপের হার্ড-ড্রাইভে ভিডিয়ো ডাউনলোড করল সে। জানে, এখন ওটা সহ ধরা পড়লে খুন হয়ে যাবে।

এই ভিডিয়োটা এখন নিরাপদে থাকবে মাত্র একটা নোকিয়ায়। ওটা পাঠাতে হবে এমিলিয়ার ই-মেইলে। দুনিয়ার যেখানেই থাকুক, মেসেজ সহ ভিডিয়ো ঠিকই পাবে সে।

ই-মেইল লিখবে অ্যালেক, এমনসময় নিভে গেল ঘরের বাতি।

বিদ্যুৎ চলে গেছে!

স্ক্রিনের দিকে চেয়ে বুঝল, ফেইল করেছে ইন্টারনেট। বিড়বিড় করে কপালকে দোষ দিল অ্যালেক। ফোনটা পরীক্ষা করে দেখল, ওটাও ডেড।

বিদ্যুৎ-ঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছে ইন্টারনেট কানেকশন।

দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাবছে অ্যালেক।

নিজস্ব পাওয়ার আছে বলে চলছে ল্যাপটপ।

ব্রিফকেস খুলে ওটা থেকে নিল একটা সিডি-রম। সেটার ভেতরে আছে ওর রিসার্চের কাজে সংগ্রহ করা সমস্ত ফোটোগ্রাফ।

চট্ করে ল্যাপটপের ডিস্ক ড্রাইভে সিডি-রম ভরল অ্যালেক। সময় লাগল না ভিডিয়ো ফাইল কপি করতে। আঁধার হাতড়ে পেয়ে গেল মোযার্টের অপেরা দ্য ম্যাজিক ফুট-এর বক্স সেট। গতকাল ওটা ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠাবে বলে এনভেলপে ভরে স্ট্যাম্প সাঁটিয়ে ঠিকানা লিখেছিল, তারপর ব্যস্ততার কারণে আর পোস্ট করতে পারেনি

বক্স সেটের দিকে চেয়ে আনমনে মাথা দোলাল অ্যালেক।

এটাই একমাত্র উপায়!

এনভেলপ থেকে মোযার্টের ডিস্ক বক্স নিয়ে ভেতরের মিউযিক সিডি সরিয়ে, তার বদলে বাক্সে ভরল ওর নিজের তৈরি ভিডিয়ো সিডি। ওটার ওপর মার্কার পেন দিয়ে কয়েকটা শব্দ লিখল। তারপর ওই সিডির ওপর চাপিয়ে দিল মিউযিক সিডি। বক্স আটকে ভরল এনভেলপের ভেতর। মনেপ্রাণে প্রার্থনা করল: ওদের দেখা হওয়ার আগেই এমিলিয়া যেন না দেখে ওই ভিডিয়ো।

অ্যালেক জানে, সামনের রাস্তায় পোস্ট বক্স আছে। তুষার ঝড়ের ভেতর গেস্টহাউস থেকে বেরিয়ে ওদিকে চলল সে।

ইলেকট্রিসিটি এখনও আসেনি।

অন্ধকারে ডুবে আছে চারপাশ।

আকাশ ভেঙে নামছে তুষার ও তুমুল বৃষ্টি।

পোস্ট বক্সের কাছে যাওয়ার আগেই ভিজে চুপচুপে অ্যালেকের টুক্সেডো। রাত খুব গভীর নয়, তবে শুয়ে পড়েছে গ্রামের বাসিন্দারা। বাড়িগুলোর মাঝে সরু সব, গলিতে জমেছে তুষারের কাদাটে স্তূপ।

আশপাশে কোথাও কেউ নেই।

পোস্ট বক্সে প্যাকেজটা ফেলে গেস্টহাউসের দিকে ফিরে চলল অ্যালেক। চাপা আতঙ্ক আর শীতে কাঁপছে সে। ভাবছে, সব গুছিয়ে নিয়ে এবার পালিয়ে যেতে হবে ওকে।

আঁধার গেস্টহাউসের বিশ গজের ভেতর পৌঁছে যেতেই সামনের পথের বাঁক ঘুরে সরাসরি ছুটে এল একটা গাড়ি। ওটার উজ্জ্বল হেডলাইটের জোরালো আলো পড়ল ভীত অ্যালেকের ওপর। গাড়িটা আসছে খুব দ্রুতবেগে!

ঘুরে উল্টো দিকে ছুটল অ্যালেক। কিন্তু পিচ্ছিল বরফে পা হড়কে যেতেই ঠাস্ করে হাঁটু পড়ল পেভমেন্টের ওপর। তীব্র ব্যথায় কুঁচকে গেল ওর মুখ। তিন সেকেণ্ড পর ব্রেক কষে পাশেই থামল মার্সিডিয়। ভেতরে চারজন লোক। খুলে গেল পেছনের দুই দরজা। উঠে আবার ছুটে পালাবার চেষ্টা করল অ্যালেক। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে খপ্ করে ওর দু’বাহু ধরল শক্তপোক্ত গড়নের দুই লোক। তাদের চেহারা খুব গম্ভীর। হ্যাঁচকা টানে গাড়ির পাশে নিয়ে ময়দার বস্তার মত ওকে খোলা দরজা দিয়ে পেছনের সিটে ফেলল তারা। নিজেরাও উঠে বসল দু’পাশে। ধুপ্ করে বন্ধ হলো দুই দরজা। নীরব গ্রামের নির্জন পথ ধরে ঝোড়ো বেগে ছুটে চলল মার্সিডিয।

টু শব্দ করছে না চার কিডন্যাপার।

আঁধারে নিজের পায়ের দিকে চেয়ে বসে রইল অ্যালেক।

একসময় থামল গাড়ি। টান মেরে বের করা হলো ওকে।

গাড়ি থেমেছে একটা লেকের তীরে। থেমে গেছে ঝড়- তুফান, তুষার ও বৃষ্টিপাত। জমাট বাঁধা সাদা লেকের ওপর ফ্যাকাসে আলো ফেলেছে ঝাপসা চাঁদ। বহু দূরে আবছাভাবে টিমটিম করে জ্বলছে গ্রামের বাড়িগুলোর বৈদ্যুতিক হলদে আলো।

ধাক্কা দিয়ে অ্যালেককে গাড়ির গায়ে ফেলল দুই কিডন্যাপার। ডানদিকের লোকটা ওর ডানহাত মুচড়ে ধরে ঠেলে দিল পিঠের ওপর। ব্যথায় কাতরে উঠল অ্যালেক। তৃতীয়জন লাথি মেরে ফাঁক করল ওর পা-দুটো। দক্ষ হাতে সার্চ করছে লোকটা।

কোটের পকেটে নোকিয়া ফোন রয়ে গেছে মনে পড়তেই বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল অ্যালেকের। তাড়াহুড়োয় ডিলিট করা হয়নি ডিভাইসের ভেতরের ভিডিয়ো ক্লিপ!

কয়েক সেকেণ্ড পর ফোনটা পেল তৃতীয় কিডন্যাপার। হ্যাঁচকা টানে গাড়ি থেকে সরানো হলো অ্যালেককে। চাঁদের আবছা আলোয় বেচারা দেখল, কিডন্যাপারদের একজনের হাতে বেরিয়ে এসেছে পিস্তল। লোকটার উচ্চতা অন্তত ছয় ফুট চারইঞ্চি। ভারী গড়নের। চোখদুটো মরা মাছের চোখের মত নির্বিকার, নিরাসক্ত। মাথার চুল বালি রঙের। তার বামকানের লতি বোধহয় ছিঁড়ে নিয়েছে কেউ। ঠিক সময়ে সেলাই করা হয়নি বলে বিশ্রীভাবে মুচড়ে রয়েছে পুরনো ক্ষতটা।

তার দিকে চেয়ে কয়েক মুহূর্ত পর বলল অ্যালেক, ‘আমি আগেও তোমাকে দেখেছি কোথাও।’

‘হাঁটো!’ পিস্তলের নল দিয়ে লেক দেখাল লোকটা।

ছোট ছোট ঝোপ ডিঙিয়ে ঢাল বেয়ে নেমে জমাট বাঁধা লেকের শক্ত মেঝেতে পা রাখল অ্যালেক। যাতে পিছলে না যায়, তাই সাবধান।

দশ গজ… বারো… পনেরো গজ…

পায়ের নিচে পুরু বরফের মেঝে। ভীষণ ভয়ে স্নায়ু যেন ছিঁড়ে পড়ছে অ্যালেকের। গলার কাছে উঠে এসেছে অস্থির হৃৎপিণ্ড। খুঁজছে এই ফাঁদ থেকে বেরোবার উপায়।

কীভাবে যেন মনটা বুঝে গেছে, আজ রেহাই নেই ওর। হাঁটছে অ্যালেক। মসৃণ বরফে পিছলে যাচ্ছে পা। বৃষ্টি- ভেজা টুক্সেডো আবারও ভিজে গেছে কালঘামে।

লেকের তীর থেকে বিশ গজ মত সরে যাওয়ার পর গুলির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়াল অ্যালেক। নাক-মুখ কুঁচকে অপেক্ষা করল। কিন্তু গুলি লাগেনি গায়ে। কোনও ব্যথাও নেই। একের পর এক গুলি এসে লাগছে আশপাশের বরফে। জমাট বাঁধা লেকের মেঝেটা বুলেট লেগে থরথর করে কেঁপে উঠছে।

বুঝে গেল অ্যালেক, গুলি করে খুন করা হবে না ওকে। অসহায় চোখে তাকাল সাদা মেঝের দিকে। বুলেটের আঘাতে পায়ের কাছে মুটমুট শব্দে বরফ ভেঙে তৈরি হচ্ছে নীলচে ফাটল। ক্রমেই বাড়ছে ওগুলো। লেকের তীরে চোখ গেল অ্যালেকের। কার্টসি লাইটের আলোয় দেখল গাড়ি থেকে কী যেন বের করছে কিডন্যাপারদের একজন।

সাবমেশিন গান!

লম্বা লোকটার হাতে অস্ত্রটা তুলে দিল তার অনুচর

ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছে বলে অ্যালেক দেখল না, লম্বা কিডন্যাপারের মুখে নিষ্ঠুর হাসি। কোমরের কাছে সাবমেশিন গান ধরে সংক্ষিপ্ত একপশলা গুলি করল সে অ্যালেকের পায়ের কাছে।

নানাদিকে ছিটকে গেল বরফের খণ্ড। মাকড়সার জালের মত অ্যালেককে ঘিরে তৈরি হচ্ছে সরু সব ফাটল। কোথাও পালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই ওর! চারপাশেই পড়ছে গুলি।

পায়ের নিচে গুঙিয়ে উঠে কাত হয়ে একপাশে সরে গেল বরফের চাঁই। সড়াৎ করে হিমঠাণ্ডা পানিতে পড়তেই ভয়ঙ্কর শীতে শ্বাস আটকে গেল অ্যালেকের। খামচে ধরতে চাইল গর্তের এবড়োখেবড়ো বরফ। কিন্তু দু’হাত পিছলে যেতেই টুপ করে তলিয়ে গেল নিচে। নাক-মুখ দিয়ে ঢুকল কনকনে ঠাণ্ডা পানি। কানে কীসের এক জোরালো চাপ। চারপাশে ধুপ-ধুপ শব্দ। প্রাণপণে পা নেড়ে ভেসে উঠতে চাইলেও অ্যালেক বুঝে গেল, কীভাবে যেন সরে গেছে গর্তের নিচ থেকে। স্রোত? মাথার ওপর এখন পুরু বরফের ছাত। নাক- মুখ দিয়ে বেরিয়ে ওপরে উঠছে বুদ্বুদ। অ্যালেকের মতই আটকা পড়বে ওগুলো বরফের নিচে। এখন আর বাঁচার কোনও উপায় নেই ওর!

শ্বাস আটকে মাথার ওপরের বরফে দু’হাতে ধুপ-ধাপ ঘুষি বসাল অ্যালেক। তবে একটু পরেই নিস্তেজ হয়ে এল ঘুষি ও লাথি। অক্সিজেনের অভাবে শরীরে শুরু হলো ভীষণ খিঁচুনি। নাক-মুখ দিয়ে গলগল করে ঢুকে ফুসফুসে পৌঁছে গেল ঠাণ্ডা পানি।

মৃত্যুক্ষণে অ্যালেকের মনে হলো যেন খল-খল করে হাসছে ওর খুনি! কী যেন নাম ওর…?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *