সাঁইত্রিশ
অটোবান ধরে ঝড়ের বেগে ছুটে চলেছে মার্সিডিয গাড়িটা। দক্ষিণের গ্র্যায পার করে উলফবার্গ পেছনে ফেলে পৌঁছে গেল ক্ল্যাগেনফুর্ট-এ। সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকল স্লোভেনিয়ায়। পুলিশ আইডির গুণে কাগজপত্র না দেখেই ছেড়ে দেয়া হলো রানা, লিয়া ও লুদভিগ কেইলম্যানকে।
একসময় কাছে চলে এল ব্লেড লেক। ততক্ষণে নেমে গেছে রাতের আঁধার। শুরু হয়েছে তুমুল তুষারপাত। ঘন অরণ্যে ভূতের মত দেখাল সাদা ত্রিকোণ গাছগুলো। মাঝে মাঝে ডাল থেকে ঝুপ করে পড়ছে তুষার। ক্রমেই আরও সরু হলো পথ। ড্রাইভ করতে গিয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হলো কেইলম্যানকে। কাঁচের ওপাশে নাকের কাছে এদিক-ওদিক সরছে ওয়াইপার। চেয়ে থাকলে কেমন যেন ঘোর আসে মনে। পেছনের সিটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে লিয়া। নীরবে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলেছে লুদভিগ। সেই প্রথম থেকে সবকিছু তাকে খুলে বলছে রানা।
‘দি অর্ডার অভ রা,’ নাক দিয়ে ঘোঁৎ আওয়াজ তুলল লুদভিগ। ‘এসব গাঁজাও বিশ্বাস করতে হবে?’
‘এক আফ্রিকান স্বৈরশাসককে চিনতাম,’ বলল রানা, ‘মাথার ওপর টিনের মুকুট চাপিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল, সে আসলে দেবতা। তার কথা শুনে সবার হাসি পেত। কিন্তু ওই লোক যখন মানুষের হাত-পা কেটে খেতে বাধ্য করল তাদেরকেই, শুকিয়ে গেল সবার হাসি।’
‘বলো কী!’ চমকে গেছে লুদভিগ।
‘এরা নিজেদেরকে কী বলে, তা নিয়ে আমার মাথা-ব্যথা নেই। যা করছে, তাতে অত্যন্ত বিপজ্জনক পশু বলেই তাদের মনে হয়েছে আমার।’
পুরো একমিনিট চুপ থাকল লুদভিগ, তারপর জানতে চাইল, ‘ওই টিনের মুকুট পরা স্বৈরশাসকের কী হলো?’
হাসল রানা। ‘একদিন সুযোগ পেয়ে তাকে ধরে ফেলল কয়েকজন মিলে। তারপর মেরে পুড়িয়ে খেয়ে নিল।’
ওদের গন্তব্য জুলিয়ান আল্পসের গভীরে তুষারে ছাওয়া পাহাড়ি এক উপত্যকা। আঁকাবাঁকা, এবড়োখেবড়ো সরু পথ। তার ওপর চলছে তুমুল তুষারপাত। দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ি থামিয়ে চাকার সঙ্গে লোহার শেকল বেঁধে নিল ওরা। বেশ কিছুক্ষণ পর বহুদূরে ছোট কিছু আলো দেখাল লুদভিগ। ‘ওই যে সেই কনভেণ্ট।‘
পৌঁছুতে পৌঁছুতে অন্ধকারের কালো চাদরে ডুবে গেল আশ্রম। ভাঙা দেয়ালে হুমড়ি খেয়ে পড়ল মার্সিডিযের উজ্জ্বল সাদা আলো। পরের মিনিটে ওরা ঢুকল খিলান দেয়া চওড়া এক গেট দিয়ে ভেতরের ছোট্ট উঠানে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু পুরনো দালান। রানার ধারণা হলো, ওগুলোর বয়স অন্তত পাঁচ শ’ বছর তো হবেই। বয়সের ভারে কালো হয়েছে ওক কাঠের প্রধান দরজাটা। ওটা আরও পোক্ত করতে বুকে গেঁথে দেয়া হয়েছে লোহার গজাল। দু’পাশ থেকে খিলানে উঠেছে আইভি লতা।
মার্সিডিয থেমে যেতেই খিলান দেয়া এক জানালায় দেখা দিল নরম আলো। ক্র্যাচ-ক্র্যাচ আওয়াজে খুলে গেল সামনের দালানের দরজা। লাফ দিয়ে বেরিয়ে গাড়িটার দিকে ছুটে এল পিচ্চি এমিলি। দরজার চৌকাঠে এসে দাঁড়ালেন নানদের পোশাক পরনে দীর্ঘকায়া এক মহিলা, হাতে তেলের লণ্ঠন অন্তত সত্তর বছর হবে তাঁর বয়স। তবে এখনও তিনি ঋজু। দৃঢ় পায়ে এলেন গাড়ির দিকে।
ইঞ্জিন বন্ধ করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল লুদভিগ, রানা ও লিয়া। লম্বা জার্নি করে আড়ষ্ট হয়েছে ওদের দেহের পেশি। আড়মোড়া ভেঙে স্বাভাবিক হতে চাইল। তবে সে- সুযোগ নেই লুদভিগের। ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এমিলি 1 দালান থেকে ছুটে এল বিশাল এক রটওয়েইলার কুকুর। হামলে পড়ল সার্জেন্টের ওপর। দুই পা মনিবের কাঁধে তুলে আচ্ছামত চেটে দিল সারা মুখ।
লণ্ঠন হাতে কাছে এসে থামলেন বয়স্কা নান। নরম সুরে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাল লুদভিগ। পরিচয় করিয়ে দিল রানা ও লিয়ার সঙ্গে। ‘ইনিই আমার বান্ধবী মাদার বোমেইস্টার।’
দু’চার কথার পর অতিথিদেরকে লণ্ঠনের আলোয় পথ দেখালেন মাদার সুপিরিয়র। উঠান পেরিয়ে ওরা চলে এল আরেকটা খিলানযুক্ত দরজার কাছে। রানা ও লিয়ার পেছনে আসছে লুদভিগ ও এমিলি। মহাব্যস্ত হয়ে ওদেরকে ঘিরে ছোটাছুটি করছে মস্তবড় কুকুরটা।
একপাশে গোয়াল। ওখান থেকে এল গরুর মলত্যাগের মশমশে আওয়াজ। রাতের শীতল বাতাসে নতুন খড় ও গোবরের গন্ধ। আশ্রমের পেছনে দেয়াল-ঘেরা ছোট একটা খামারবাড়ি। খিলানযুক্ত দরজা পেরিয়ে সবাইকে নিয়ে ওখানে গিয়ে থামলেন মাদার বোমেইস্টার। লিয়াকে বললেন, ‘তুমি এখানেই থাকবে, বাছা।’
তাঁকে ধন্যবাদ জানাবার পর জিজ্ঞেস করল লিয়া, ‘আপনাদের কোন সমস্যা হবে না তো?’
‘বহু বছর এখানে থেকেছে কেয়ারটেকার বার্নার্ড, মৃদু হাসলেন মাদার বোমেইস্টার। ‘কিন্তু এতই বুড়ো হয়ে গেল, অবসর নিয়ে ফিরল ব্লেডে নিজের বাড়িতে। তারপর পেরিয়ে গেছে কয়েক বছর, পড়ে আছে বাড়িটা। তুমি এখানে থাকলে আমাদের কোনও সমস্যা হবে না। তবে সবাই সহ্য করতে পারে না এত সাদামাটা জীবন।’
‘ভয় পাচ্ছি, আপনাদেরকে না বিরক্ত করি,’ বলল লিয়া।
ওর বাহুতে হাত রাখলেন মাদার সুপিরিয়র। ‘লুদভিগের কোনও বন্ধুর কারণে আমরা কখনও বিরক্ত হব না।’
সবাইকে নিয়ে ছোট্ট বাড়িটার ভেতর পা রাখলেন তিনি। আরামদায়ক পরিবেশ। চুলায় পট-পট শব্দে পুড়ছে চ্যালা কাঠ। ‘তোমাদের জন্যে আগুন জ্বেলেছি বটে, তবে আগামীকাল সকালে ছেলেদেরকে আরও কিছু জ্বালানি কাঠ চিরে দিয়ে যেতে হবে।’ ছোট কাবার্ডের দরজা দেখালেন মাদার সুপিরিয়র। ‘ওটার ভেতর পাবে রাবারের বুট আর শীতের জন্যে ভারী জ্যাকেট।’
চুলার ওপরে কাঁচা লোহার গামলা থেকে আসছে খাসির মাংসের স্ট্যুর লোভনীয় সুগন্ধ। কাঠের টেবিলের ওপর রাখা হয়েছে মাটির তৈরি কিছু প্লেট ও কাপ।
কোমল চোখে সবাইকে দেখছেন বৃদ্ধা নান। ভাল করেই বুঝে গেছেন, এরা আছে বড় কোনও বিপদে। তবে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। ‘ঠিক আছে, এবার বিশ্রাম নাও। এমিলি, চাইলে একঘণ্টা এখানে থাকতে পারো। তবে এরপর এসে সোজা শুয়ে পড়বে বিছানায়।’
ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ছে রানা, লিয়া ও লুদভিগ। ডিনার সেরে নেয়ার সময় বুকের সমস্ত কথা উগরে দিল এমিলি। বেশিক্ষণ লাগল না মাংসের স্ট্যু ফুরিয়ে যেতে। আশ্রমের নানদের তৈরি ড্যাণ্ডেলিয়ন ওয়াইন পেয়ে একগ্লাস করে সাবড়ে দিল রানা ও লুদভিগ। একঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ায় একটা লণ্ঠন জ্বেলে নিয়ে ছুটে গিয়ে আশ্রমে ঢুকল এমিলি। প্রাণের চেয়েও প্রিয় মনিবকে ছেড়ে যেতে আপত্তি আছে রটওয়েইল কুকুর জো-র।
‘চিলেকোঠায় তোমার সঙ্গে রাত কাটাতে চাইলে কোনও আপত্তি আছে?’ রানার কাছে জানতে চাইল লুদভিগ।
লালা ঝরা বিশাল কুকুরটাকে দেখল রানা। ‘আমার বাঙ্কে উঠে বুকে চেপে না বসলেই হলো।’
‘শরীর ভেঙে পড়ছে,’ হাই তুলল লুদভিগ। সোজা রওনা হলো কাঠের সিঁড়ির দিকে। ওর পায়ে পায়ে ঘুরছে কুকুরটা।
ঘরে একা হয়ে গেছে রানা ও লিয়া। নিচু গলায় বলল মেয়েটা, ‘একটু হাঁটাহাঁটি করব। তুমি আমার সঙ্গে আসবে?’
দু’জোড়া রাবারের বুট পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ওরা। সাদা তুষারে পড়ে সন্ধ্যার মত আবছা আলো বিলিয়ে চলেছে রুপালি জ্যোৎস্না। থমথম করছে চারপাশ। দৃশ্যটা অতিপ্রাকৃত। গত কয়েক দিনের তুলনায় এখন অনেক শান্ত হয়েছে লিয়ার মন। রানার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘আমি এখানে আসতে চাইনি।’ বুটের চাপে মুটমুট করে ভাঙছে শক্ত তুষার। ‘তবে জোর করে নিয়ে এলে বলে এখন ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে আমি এখানে নিরাপদ।’
মাথা দোলাল রানা। ভাল জায়গা খুঁজে বের করেছে লুদভিগ। কারও সাধ্য নেই এখানে এসে খুঁজে নেবে লিয়া বা এমিলিকে। রানার জেনে ভাল লাগছে যে, এখানে খারাপ লাগছে না লিয়ার। আগামীকাল সোজা ফিরবে ভিয়েনায়। লিয়ার বিপদ হবে না জেনে পরিষ্কার মাথা নিয়ে নেমে পড়বে কাজে।
বেশ কিছুক্ষণ পাশাপাশি হাঁটল ওরা। দু’হাত জড় করে নিচু গলায় বলল লিয়া, ‘গ্লাভ্স্ পেলে ভাল হতো। বরফ হয়ে যাচ্ছে হাত।’
‘চলো, ফিরে যাই।’
‘না, আরেকটু থাকি। ভাল লাগছে তুমি পাশে আছ। কেউ গুলিও করছে না আমাদেরকে।
দাঁড়িয়ে পড়ে লিয়ার হাতদুটো নিজের হাতে নিল রানা। ‘কী গরম তোমার হাত,’ অবাক হয়ে বলল লিয়া। ‘কী করে এমন করো?’
চোখে চোখ রাখল ওরা। হঠাৎ করেই লিয়া বুঝল, ওরা দাঁড়িয়ে আছে হাতে হাত রেখে মুখোমুখি। চাঁদের আলোয় মৃদু হাসছে রানা। লজ্জা পেয়ে হাত টেনে নিয়ে পিছিয়ে গেল লিয়া। হাতদুটো পকেটে পুরে বিড়বিড় করল, ‘চলো, এবার বরং ফিরে যাই।’
.
পরদিন ভোর ছয়টায় কাজে নামলেন নানরা। প্রথমেই খাবার দিলেন পশু-পাখিগুলোকে। এরপর শুরু হলো সমবেত প্রার্থনা সঙ্গীত। ওটার শেষে দেয়া হলো নাস্তা। ওই সময়ে আশ্ৰম থেকে ছুটে এসে খামারবাড়ির দরজায় থাবা বসাল এমিলি।
আগেই ঘুম থেকে উঠে চুলো জ্বেলেছে রানা। বাচ্চা মেয়েটা দরজায় থাবা দেয়ায় খুলে দিল কপাট। এমিলি ঢুকতেই ওকে বলল, ‘তোমার বাবা এখনও ঘুমাচ্ছেন।’
এমিলির পরনে ওঅটরপ্রুফ অনোরাক ও উলের ভারী প্যান্ট। ‘বাবা তো সুযোগ পেলেই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে,’ হাসতে হাসতে অনোরাকটা খুলে চেয়ারের পিঠে ঝুলিয়ে দিল ও। চেয়ারে বসে দোলাতে লাগল দুই পা।
‘তাই তুমি ভেবেছ সূর্য ওঠার আগেই ডেকে তুলবে বাবাকে?’
খিলখিল করে হাসল এমিলি। ‘আমি ভাবছিলাম বাবাকে দেখাব কীভাবে শুয়োরছানাগুলোকে খাবার দেন সিস্টার বার্য। ওগুলো দেখতে এত সুন্দর না!’
‘না হয় পরেই দেখল তোমার আব্বু? মানুষটা খুব ক্লান্ত।’
‘আমি কি তোমার সঙ্গে বসে থাকতে পারি?’
‘নিশ্চয়ই! নাস্তা তৈরি করে দেব?’
‘মাদার বোমেইস্টার কাবার্ডে কিছু ডিম রেখে গেছেন, ‘ কাবার্ড দেখাল এমিলি। ‘শত শত মুরগি তো, তাই ডিমের অন্ত নেই। প্রতিদিন ওগুলো কুড়িয়ে নিতে হয়।
‘তা হলে ডিমের অভাব হবে না,’ মাথা দোলাল রানা।
‘আমার আধসেদ্ধ ডিম খেতে ভাল লাগে, সঙ্গে টোস্ট করা পাউরুটি। তুমি নাস্তা তৈরি করতে পারবে, আঙ্কেল?’
সসপ্যানে পানি ঢেলে জানতে চাইল রানা, ‘এত সুন্দর ইংরেজি তুমি কোথা থেকে শিখলে?’
‘আমি তো লেখাপড়ি করি সেইণ্ট মেরি’য কলেজে, তাই না?’
‘ওটা বুঝি খুব অভিজাত স্কুল?’
ঘন ঘন মাথা দোলাল এমিলি। ‘ওখানে বেশিরভাগ লেখাপড়া চলে ইংরেজিতে। বাবা বলে, ওই ভাষা জেনে নেয়া নাকি খুব বেশি জরুরি।’
‘তবে তোমার যখন বিশ বছর বয়স হবে, সেসময়ের ছেলেমেয়েরা হয়তো শিখবে চাইনি,’ বলল রানা।
টেবিলের ওপর ছোট্ট দুটো কনুই রেখে জানতে চাইল এমিলি, ‘সেটা কেন করবে, বলো তো?’
‘কারণ, ক্রমেই বদলে যাচ্ছে দুনিয়া,’ ব্যাখ্যা দিল রানা। ‘তবে ওগুলো বড়দের ব্যাপার। এখন ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।’
‘তোমার বান্ধবী কি চাইনিয় গান গাইতে পারেন? চিনাদের দেশে তো চাইনিয অপেরা আছে, তাই না? আমি টিভিতে দেখেছি।’
হাসল রানা। ‘তবে ওগুলো একটু অন্যরকম।’
‘আমি তাঁকে টিভিতে দেখেছি। ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ আর জার্মান গানও গাইতে পারেন। খুবই সুন্দর!’
‘তবে তো বুঝতেই পারছ, ওর কত বুদ্ধি!’
‘গতবছর ক্রিসমাসে তাঁর একটা অ্যালবাম কিনেছিল বাবা,’ বলল এমিলি, ‘ওটাতে লেখা ছিল: ক্লাসিকাল ক্রিসমাস উইথ এমিলিয়া বেকার।’ মিষ্টি হাসল পিচ্চি। ‘উনি আসলে কোন্ দেশের মানুষ?’
‘ওয়েল্স-এর।’
‘ওই জায়গা তো ইংল্যাণ্ডে, তাই না?’
‘ওর সামনে ভুলেও এ কথা বোলো না, ভীষণ রেগে যাবে।’
‘কেন?’
‘নিজেদেরকে ইংল্যাণ্ডের অংশ হিসেবে ভাবতে পছন্দ করে না ওয়েস্-এর মানুষ।’
‘কেন?’
‘আগে ওটা আস্ত একটা রাজ্য ছিল।’
লাজুক হাসি নিয়ে মাথা দোলাল এমিলি। জানতে চাইল, ‘এমিলিয়া কি তোমার বান্ধবী?’ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে বেচারির গাল।
ঘুরে ওকে দেখল রানা। ‘তোমার মনে অনেক প্রশ্ন, তাই না, এমিলি?’
‘না হলে সব জানব কী করে?’
‘তা তো ঠিকই! তবে সব এখনই জেনে নিতে হবে, এমনও নয়।
‘আমি জানি উনি তোমার বান্ধবী,’ গম্ভীর স্বরে বলল,এমিলি। ‘উনি তোমাকে খুব ভালবাসেন।’
‘তাই? কিন্তু তুমি জানলে কী করে?’
‘গতকাল রাতে যখন তোমার দিকে চেয়েছিলেন। আমি ঠিকই বুঝেছি।’
অপ্রস্তুত হয়ে হাসল রানা। ‘কী দেখলে সেই সবুজ চোখে? আর আমিই বা কেন কিছু দেখতে পেলাম না?’
‘তোমার সঙ্গে কথা বলার সময় মাথার চুলে হাত দেন তিনি,’ নিজের চুল ধরে সন্তুষ্ট সুরে বলল এমিলি। ‘এভাবে। তাতে বোঝা যায় যে মেয়েটা ওই মানুষটাকে ভালবাসে।’
ঢোক গিলে গম্ভীর হয়ে গেল রানা।
‘বলো, আমি কি মিথ্যা বলেছি?’
‘না, ঠিকও হতে পারে,’ বলল রানা। ‘পরে তোমার কাছ থেকে এসব শিখে নেব। তা হলে আর ভুল হবে না। এবার বলো তো, এত কিছু তুমি জানলে কী করে?’
‘আমি বইয়ে পড়েছি।’
‘মাদার বোমেইস্টারের কোনও বইয়ে নয় বোধহয়?’ খিলখিল করে হাসল এমিলি। ‘না। ব্রিজিটা যে পত্রিকা রাখেন, সেটা থেকে।‘
‘ব্রিজিটা কে?’
‘উনি আমার দেখভাল করেন। আমার মনে হয় বাবাও ব্রিজিটাকে পছন্দ করে।
আধসেদ্ধ হয়ে গেছে ডিম। ওখান থেকে একটা নিয়ে ডিমের কাপে রেখে এগিয়ে দিল রানা। কাঠের প্লেটে তুলে পাউরুটি রাখল এমিলির সামনে। মৃদু হেসে বলল, ‘তুমি দেখি বহুৎ ভাবো, বুড়ি-খুকি! এবার চুপচাপ নাস্তা সেরে নাও দেখি।’
‘বাবাও ওই কথাই বলে,’ ডিমের খোসা ভাঙতে ভাঙতে বলল এমিলি।