1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ৪৪

চুয়াল্লিশ

মগজে দপদপে ব্যথা। একটু একটু করে চেতনা ফিরছে রানার। খানিক পরে বুঝল, চলন্ত কোনও গাড়ির মালপত্র রাখার জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে ওকে। অন্ধকারে চোখ মেলে কিছুই দেখল না। অসুস্থ লাগছে, সেইসঙ্গে ভীষণ শীতে খটাখট বাড়ি খাচ্ছে দুই পাটি দাঁত। থরথর করে কাঁপছে সারা শরীর। একবার গুঙিয়ে উঠে ধীরে ধীরে উঠে বসল রানা। একটু বিশ্রাম নিতে হবে। বনবন করে ঘুরছে মাথা।

মনে এল আবছা কিছু স্মৃতি। খুনিদের এড়িয়ে আরেক পথে হেঁটে যাচ্ছিল। সামনেই ছিল লাল গাড়ি। তবে তার আগে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল লুদভিগ। এবার সবই মনে পড়ল রানার। হাত গেল ঘাড়ের পেছনে। ফুলে আছে মাংসের একাংশ। ডার্ট মেরে ট্র্যাঙ্কুলাইযার দিয়ে অজ্ঞান করেছে ওকে। মেয়েটা কী যেন বলেছিল ওকে… কাজটা করছে ইচ্ছের বিরুদ্ধে।

দেয়ালের পাশে রিইনফোর্সড ব্রেস হাতে ঠেকতেই ওটা ধরে উঠে দাঁড়াল রানা। এদিক-ওদিক দুলে ঝাঁকি খেতে খেতে চলেছে ট্রাক। স্থির হওয়া কঠিন। চারদিকে কোথাও কোন জানালা নেই। চট্ করে হাতঘড়ি দেখল রানা। এখন বাজে প্রায় ছয়টা। দেড়ঘণ্টার বেশি অজ্ঞান হয়ে ছিল ও। জানা নেই এরা কোথায় নিয়ে চলেছে ওকে।

আরও পনেরো মিনিট ঝাঁকুনি দেয়ার পর ট্রাক নেমে পড়ল আরও ভাঙা রাস্তায়। হঠাৎ জোরে ডানে বাঁক নিল। পড়তে গিয়েও দু’দিকের দেয়ালে হাত রেখে সামলে নিল রানা। তবে তখনই ব্রেক কষে থামল যন্ত্রদানবটা। ধুম আওয়াজে বন্ধ হলো ধাতব বড় কোনও দরজা। বাইরে অন্তত তিনজন লোকের গলার আওয়াজ। তুফান বেগে জার্মান ভাষায় কথা বলছে। ব্যাক গিয়ার দিয়ে পিছিয়ে গেল ট্রাক। চারপাশ থেকে এল ইঞ্জিনের ঘড়ঘড় শব্দের প্রতিধ্বনি। রানার মনে হলো, ওকে নিয়ে আসা হয়েছে খালি কোনও ওয়্যারহাউসের ভেতর। ট্রাক থামার কয়েক মুহূর্ত পর খুলে গেল পেছনের দরজা। ভেতরে ঢুকল অত্যন্ত জোরালো সাদা আলো। চোখ ধাঁধিয়ে গেছে রানার। শক্তিশালী কয়েকটা হাত খপ্ করে চেপে ধরল ওর দুই কাঁধ। তাল হারিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল রানা। পরক্ষণে ছেঁচড়ে টেনে ওকে নামানো হলো বরফের মত ঠাণ্ডা কংক্রিটের মেঝেতে। মুখ তুলে চোখ পিটপিট করে চারপাশে তাকাল রানা। ওকে ঘিরে রেখেছে অন্তত দশ-বারোজন লোক। হাতে পিস্তল বা হেকলার অ্যাণ্ড কক্ সাবমেশিন গান। এদেরকে মিলিটারির প্রাক্তন সদস্য বলে মনে হলো রানার। চেহারা পাথুরে। চোখের দৃষ্টি শীতল। হাত-পায়ের নড়াচড়া মাপা।

ধাতব এই ঘরটা বোধহয় একসময়ে ছিল কোনও এয়ার-বেসের হ্যাঙার। ক্যাথেড্রালের মত বহু ওপরে উঠেছে চারদিকের অ্যালিউমিনিয়ামের দেয়াল। কংক্রিটের মেঝে সবুজ রঙের। একটু দূরে আসবাবপত্র বলতে রয়েছে স্টিলের টিউব দিয়ে তৈরি একটা চেয়ার ও টেবিল। কাঁচ দিয়ে ঢাকা একটা চুলোয় জ্বলছে আগুন। ওটার একটু ওপরে দীর্ঘ চিমনি উঠে গেছে ছাত ফুঁড়ে।

বিশাল হ্যাঙারের মাঝখানে পিছন ফিরে চুলোয় হাত গরম করছে দীর্ঘদেহী এক লোক। পরনে কালো পোশাক। আর্মি কাট চুল ধূসর রঙের।

উজ্জ্বল আলোয় চোখ কুঁচকে তাকে দেখল রানা। মনে হলো চেনে ওকে। কিন্তু কোথায় দেখেছে স্মরণ নেই।

রানার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে অস্ত্র হাতে এক লোক। ঝুঁকি নিল রানা, লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েই ডানহাতের তালুর কিনারা দিয়ে প্রচণ্ড জোরে মেরে বসল লোকটার গলায়। শ্বাসনালী চুরমার হওয়ায় ধড়াস করে মেঝেতে পড়ল সে। অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে দু’হাতে চেপে ধরেছে কণ্ঠা। মেঝেতে ছটফট করছে আহত সাপের মত। হেকলার অ্যাণ্ড কক্ সাবমেশিন গান মেঝেতে পড়ার আগেই ধরে ফেলেছে রানা। অস্ত্রটা কক করা। মুহূর্তে অফ করল সেফটি ক্যাচ। রানার হাত চলছে বিদ্যুদ্গতিতে। এবার কয়েক দফায় ব্রাশ ফায়ার করে নিজেকে মুক্ত করবে ও, তারপর…

রানার হাত থেকে খটাং শব্দে মেঝেতে পড়ল অস্ত্রটা। সারা দেহে শক্তিশালী বিদ্যুতের তরঙ্গ বইছে, থরথর করে কাঁপছে শরীর। একটু দূরে ট্রাকের কাছে দাঁড়িয়ে হাসছে এক প্রহরী, হাতে ট্যোর গান। এইমাত্র রানার পিঠে ডার্ট গেঁথে দিয়েছে সে। হাত-পায়ের পেশি চলে গেছে রানার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

‘যথেষ্ট হয়েছে,’ এগিয়ে এল কালো পোশাকের লোকটা। অফ হলো টেযারের বিদ্যুৎ। ডাঙায় তোলা আধমরা মাছের মত হাঁ করে হাঁপাচ্ছে রানা। টের পায়নি কখন পড়ে গেছে মেঝেতে। ওর ক্যানভাসের ব্যাকপ্যাক এখন এক গার্ডের হাতে। ওটা নিয়ে কালো পোশাক পরা লম্বা লোকটার হাতে দিল সে। ধাতব টেবিলে উপুড় করা হলো ব্যাকপ্যাক। ছিটিয়ে পড়েছে ভেতরের সব জিনিস: রানার পোশাক, ফার্স্ট- এইড কিট, প্যারা-অর্ডন্যান্স .৪৫ ইত্যাদি।

কিন্তু ওগুলো নয়, কালো পোশাক পরা লোকটার নজর অ্যালেকের সেই বক্স ফাইলের দিকে। ঢাকনা খুলে নোটগুলো দেখছে। কয়েক মুহূর্ত পর মাথা দোলাল। হ্যাঁ, এটাই আসল ফাইল। এটার কথাই বলা হয়েছে তাকে।

চুলোর দরজা খুলে একটা একটা করে অ্যালেকের লেখা নোটগুলো আগুনে ফেলতে লাগল সে। দপ করে জ্বলে উঠছে হলদে শিখা। পুড়ে ছাই হচ্ছে রানার বন্ধুর এত সাধের নোট। অসহায় রানা দেখল, ভাসতে ভাসতে চিমনির দিকে চলেছে কালো ছাই।

এবার মুড়িয়ে রাখা মোযার্টের চিঠি নিল লোকটা। রিবনটা খুলে ছুঁড়ে ফেলল কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে। ভাঁজ খুলে চোখ বোলাল। চেহারায় ফুটে উঠেছে উপহাস।

রানার মনে হলো, এবার চিঠিটাও আগুনে ফেলবে সে। তবে তা না করে কাগজটা মুড়ে আবার কার্ডবোর্ডের টিউবে পুরল। ওটা টেবিলে রেখে ঘাঁটতে লাগল রানার জিনিসপত্র। তুলে নিল সিডির বাক্স। আনমনে মাথা দুলিয়ে পরীক্ষা করে দেখল ভেতরে সিডি আছে কি না। সন্তুষ্ট হয়ে বাক্সটা ঢোকাল ওর কমব্যাট ট্রাউযারের পকেটে। সন্তুষ্ট চিত্তে বলল, ‘এবার নিয়ে এসো এটাকে জায়গামত।’

দু’জন মিলে দু’হাত ধরে রানাকে মেঝের ওপর দিয়ে ছেঁচড়ে নিয়ে চলল কালো পোশাক পরা লোকটার পিছন পিছন। ওদিকেই ছাতের একটা বিম থেকে ঝুলছে ভারী শেকল, শেষ প্রান্তে একইঞ্চি পুরু লোহার হুক। ওটা ঝুলছে কংক্রিটের মেঝে থেকে অন্তত পৌনে আটফুট ওপরে। তৃতীয় গার্ড রানার মাথার পেছনে ঠেসে ধরল পিস্তলের মা। হ্যাঁচকা টানে ওপরে তোলা হলো ওর দুই হাত। মস্ত এক বডি বিল্ডার এগিয়ে এল হ্যাণ্ডকাফ নিয়ে। রানার দুই হাতের কবজিতে আটকে দেয়া হলো শীতল দুটো হ্যাণ্ডকাফের বেড়ি। আরেক টানে ওকে দাঁড় করিয়ে উপরের আঙটায় আটকে দেয়া হলো হ্যাণ্ডকাফ। রানার জুতোর আগাটা কোনমতে ছুঁয়ে আছে মেঝে। পিছিয়ে অর্ধচন্দ্র তৈরি করে দাঁড়াল এবার আটজন গার্ড।

রানার সামনে এসে থামল কালো পোশাক পরা দীর্ঘদেহী লোকটা। মাথা কাত করে দেখল রানাকে। মুখে ভীষণ নিষ্ঠুর এক চিলতে হাসি।

রানা বুঝে গেল, এবার কী ঘটতে চলেছে।

দৃঢ় পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল লোকটা। মুঠো করেছে ডানহাত। কাঁধ পিছিয়ে গায়ের জোরে ঘুষি মারল রানার পেটে। কী আসছে বুঝতে পেরে পেটের পেশি শক্ত করেছে রানা। তবে দুষিটা লোহার হাতুড়ির বাড়ির চেয়ে কম নয়। ভুস্ করে বুক থেকে বেরোল সব বাতাস। দুই হাঁটু ভাঁজ হয়ে যাওয়ায় শেকলে ঝুলে গেল রানা।

‘আবারও দেখা হলো। বড় ভাল লাগছে, রানা। আমার কথা মনে আছে তো তোমার? নাকি নতুন করে পরিচয় দিতে হবে আবার? মনে তো থাকার কথা, তাই না?’

ফুসফুসে বাতাস ঢুকতেই সামান্য শক্তি ফিরল রানার। অনেক কষ্টে চোখ তুলে তাকাল লোকটার চোখে।

পৃথিবীটা সত্যিই ছোট জায়গা। চিনতে পেরেছে রানা। এই লোক সেই মাইক বুচার। সাইকোপ্যাথ। এ লোকই কয়েক বছর আগে মেরে ফেলতে চেয়েছিল ওকে ব্রেক ন বিকনের পাহাড়ে চোরা-কাদায় ফেলে।

শ্বাস স্বাভাবিক হওয়ার আশায় শেকলে ঝুলছে রানা। ভাবতে চাইল, কী কারণে এখানে এই লোক?

দুষ্ট হাসি হাসল মাইক বুচার। ভুরু থেকে গালে পড়ল একফোঁটা ঘাম। গুটিয়ে নিল জ্যাকেটের আস্তিন। চাপা স্বরে বলল, ‘বহুদিন পর দেখা, তাই না, দোস্ত?’

তার দিকে চেয়ে রইল রানা। আগের চেয়েও তাগড়া হয়েছে বুচার। ট্রাইসেপ, বাইসেপ আর কাঁধ দেখেই বোঝা যায় সারা শরীরে কিলবিল করছে পেশি। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভারোত্তোলন করে। অনেক বদলে গেছে সে। ডানকানে শুকনো ক্ষত। আগুনের তাপে মোম যেভাবে গলে পড়ে, প্রায় সেইভাবেই খসে পড়েছে একটা কানের নিচের অংশ। মার খাওয়া দুর্বল শরীরে পরিস্থিতি বুঝতে চাইছে রানা। মগজ বলে দিল দুটো তথ্য: ওই ভিডিয়ো ক্লিপের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বুচারের। আর, সে-ই কিডন্যাপ করেছিল এমিলি কেইলম্যানকে।

‘কী এত ভাবছ, রানা?’ টিটকারির হাসি হাসল বুচার। ‘প্রেমিকার ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ নেবে? হ্যাঁ, বহু আগেই মরেছে সে। আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারো। আমি জানি।’ প্রচণ্ড ঘুষি মারল সে রানার বামপাঁজর লক্ষ্য করে।

শরীর মুচড়ে নিয়ে প্রাণপণে শক্ত করেছে রানা পেটের পেশি। কিডনির ওপর না পড়ে ঘুষি লাগল পেটের শক্ত পেশির ওপর। তবুও প্রচণ্ড ব্যথা লাগল। অসুস্থ বোধ করল ও। বুক থেকে বেরিয়ে গেল সব বাতাস। চোখের সামনে দেখছে অজস্র ঝলমলে আলোর বিন্দু।

এক পা পিছিয়ে হাতের মুঠো ডলছে বুচার। কর্কশ স্বরে বলল, ‘তোমাকে কোনকিছুর জবাব দিতে হবে না, রানা। এটা ইন্টারোগেশন নয়। নিশ্চয়ই বুঝছ এর মানে?’ প্যান্টের পকেটে রাখা সিডির বক্সে টোকা দিল। ‘তোমার কাছ থেকে সবই কেড়ে নিয়েছি। কাজেই তোমাকে আমাদের আর প্রয়োজন নেই। আমার কথা বুঝতে পারছ?’

একটা চিন্তা মাথায় আসতেই গলা শুকিয়ে গেল রানার।

লোকটা লিয়ার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইছে না কেন?

টেবিল থেকে ধাতব কী যেন নিল বুচার।

ওটা লোহার তৈরি ভারী নাকল ডাস্টার।

বামহাতে ওটা ধরে ডানহাতের আঙুলগুলো ভরল ভেতরে। রানার চোখে চোখ রেখে হাসল লোকটা। ‘তোমাকে বিদায় দেয়ার আগে যথেষ্ট সময় নেব। ধীরে ধীরে খেলব আমরা, কেমন? ঠিক তুলোর মত নরম করে নেব তোমাকে। তারপর…’ কথাটা অসমাপ্ত রেখে গার্ডদের দিকে তাকাল সে। চোখ স্থির হলো মোটা ও বেঁটে এক গার্ডের ওপর। লোকটার তেল দেয়া চুল পনিটেইল করা। ‘রানা এবার দেখবে কীভাবে মজা করতে হয়। সেই ব্যবস্থা করছি। চোখের ইশারায় বেঁটে গার্ড গেল এক হোল্ডঅলের পাশে। টান দিয়ে খুলল ওটার চেইন।

ব্যাগের ভেতর ছোট একটা চেইন স’। ওটা একহাতে নিয়ে ছোট্ট ট্যাঙ্কে অকটেন ভরল বেঁটে দানব। তারপর হ্যাঁচকা টান দিল স্টার্টিং কর্ড-এ। রাগী চাপা গুঞ্জন ছেড়ে চালু হলো চেইন স’। হ্যাঙারের দেয়াল থেকে ফিরল মোটরের প্রতিধ্বনি। থ্রটল দাবিয়ে মোটরের গতি বাড়াল বেঁটে-মোটা দানব।

তার দিকে মাথা কাত করল বুচার। অফ হলো করাতের মোটর। আবারও নীরবতা নেমেছে হ্যাঙারে। টেবিলে চেইন স’ নামিয়ে রাখল ‘গার্ড।

রানার দিকে ফিরল মাইক বুচার। ‘আগেই বলেছি, জিজ্ঞাসাবাদ করব না। আর সেজন্যে এখনই শুরু হবে মজার খেলা।’ ঠোঁট বাঁকা করে হাসল সে। ‘এক এক করে কেটে নামাব তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। প্রতিটা মুহূর্ত মনে হবে আছি স্বর্গে।’ রানার মুখের কাছে মুখটা নিল বুচার। ‘ঠিক যেমন লেগেছিল তোমার প্রিয় অ্যালেক বেকারকে খুন করার সময়। তবে এটা ঠিক, খুব সহজেই মরে গেছে ছোকরা। তোমার মৃত্যুটা অত সহজে হবে না।’

তা হলে তো সত্যিই খুন করা হয়েছে অ্যালেককে। খুনি হিসেবে দায় স্বীকার করেছে মাইক বুচার। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল রানা, এই গর্ত থেকে যদি বেরোতে পারে, জানোয়ারটাকে দেখে নেবে ও। তবে ওর নিজেরই বাঁচার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। শেকলে টান দিয়ে বুঝে নিয়েছে, খেপা হাতিও ছিঁড়তে পারবে না ওটা। তদুপরি ওর বুক বা মাথার দিকে চেয়ে আছে কয়েকটা আগ্নেয়াস্ত্রের লোলুপ দৃষ্টি।

বুচারকে পাশ কাটিয়ে চেইন স’-এর ওপর চোখ গেল রানার। একটু পর ধারালো করাত দিয়ে কেটে নামানো হবে ওর হাত-পা। সামান্য স্পর্শেই দেহে গাঁথবে ধারালো ফলা।

প্রথমে শরীরের কোন্ অংশ কাটবে লোকটা?

কাঁধ বা পেট নয়, কারণ প্রথমেই ভাইটাল অর্গানের ক্ষতি করবে না। কারণ যা-ই হোক, বুচার চাইছে ধীরে ধীরে কষ্ট দিয়ে ওকে মারতে।

সেক্ষেত্রে কাটবে পা থেকে। প্রচুর রক্তক্ষরণে চট্ করে মরে যাবে বলে বাদ রাখবে ঊরু। শুরু করবে গোড়ালি বা হাঁটু থেকে। ধীরে ধীরে মাংস কেটে করাতের দাঁত বসবে হাড়ে। একেকটা পা খসে পড়বে গাছ থেকে কাটা ডালের মত। বাঁচার উপায় নেই রানার। শেকল থেকে ঝুলবে, প্রচণ্ড ব্যথায় ঝটকা দিয়ে সরতে চাইবে এদিক-ওদিক। গলা চিরে বেরোবে মরণ চিৎকার। দেখতে পাবে কাটা জায়গা থেকে ঝরঝর করে মেঝেতে ঝরবে রক্ত। মাঝে মাঝেই ওর দিকে চেয়ে হাসবে বুচার। হাসি চাপতে পারবে না।

না, এমন হবে না, নিজেকে বোঝাতে গিয়ে কলজে শুকিয়ে গেল রানার। ছবির মত পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে: প্রথমে প্যান্টের কাপড় ছিঁড়ে ঢুকবে করাতের ব্লেড, তীব্র ব্যথা, তারপর হাঁটুর নিচের মাংস দুভাগ করে দিয়ে পৌঁছে যাবে হাড়ের কাছে; আওয়াজটা একটু অন্যরকম শোনাবে—চাপ সামান্য বাড়ালেই থপাস্ করে পড়বে পা-টা রক্তাক্ত মেঝেতে। চারদিকে ছুটবে রক্তের ছিটে।

আরেকবার ঝাঁকি দিয়ে দেখল শেকল।

মাথার ওপরে ফ্লুরেসেন্ট বাতির আলোয় চোখের কোণে দেখল রানা নাকল ডাস্টারের ঝিলিক। নাটকীয়ভাবে এদিক- ওদিক বাতাসে ঘুষি মেরে মক-ফাইট করল বুচার কিছুক্ষণ, লক্ষ করছে রানার চেহারার পরিবর্তন হয় কি না। দর্শকদের সবার মুখে কদর্য হাসি। পিছিয়ে গেল বুচার এক পা। দেখে নিচ্ছে রানার মুখের কোন অংশে মারবে, ভাঙবে ক’টা দাঁত।

শেকলে ঝুলতে ঝুলতে লোহার মুঠি দেখছে রানা। জানে, এখুনি নরক ভেঙে পড়বে ওর ওপর। প্রথম ঘুষিতে চুরমার হবে ওর নাক। গলা দিয়ে ঢুকবে বেশ কয়েকটা ভাঙা দাঁত। তারপর চলবে নানান ধরনের নির্যাতনের আনন্দ, আর ওর নিজের অজান্তেই গলা চিরে বেরিয়ে আসবে বুক-ফাটা আর্তনাদ। মনে মনে তৈরি হলো রানা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *