1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ২০

বিশ

আজ বোধহয় আরও ভারী তুষারপাত হবে ভিয়েনায়। ঘনিয়ে এসেছে সন্ধ্যা। নিজের ফ্ল্যাটের লিভিংরুমে বন্দি বাঘের মত পায়চারি করছে ডিটেকটিভ সার্জেন্ট লুদভিগ কেইলম্যান। থরথর করে কাঁপছে দু’হাত। কী যেন পাক খাচ্ছে পেটের ভেতর। যে-কোনও সময়ে বমি করে দেবে।

অসুস্থ বোধ করলেও মনে ঘুরছে একটা চিন্তা: এমিলি কোথায়? কোথায় নিয়ে গেছে ওকে? কারা কিডন্যাপ করল ওর মেয়েকে? কেন?

গত দু’চার মাসে ক’জন বড় ধরনের অপরাধীকে জেলে পুরেছে লুদভিগ। মনে পড়ছে কিছু চেহারা ও নাম। তাদের দলের লোক এমিলির ক্ষতি করবে ভাবতে গিয়ে বুক কাঁপছে এখন। নিষ্ঠুর অপরাধীরা অসহায় বাচ্চাদেরকে কী ধরনের নির্যাতন করে, ভাল করেই জানে সে। প্রথমেই দল বেঁধে রেপ করবে। তারপর মেরে ফেলবে খুব কষ্ট দিয়ে। তবে ওর মেয়ের কোন ক্ষতি করলে একে একে প্রত্যেককে খুঁজে বের করে নিজ হাতে খুন করবে সে। হুঁ!

আর ভাবতে পারছে না লুদভিগ। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে ধপ করে বসল আর্মচেয়ারে। নিজেও জানে না, কখন টপটপ করে চিবুকে নেমেছে অশ্রু। সে একজন অসহায় বাবা, তা বুঝে খেপে উঠল নিজের ওপর। ঘুষির পর ঘুষি চালাল দেয়ালে। একটু পর রক্তাক্ত হয়ে গেল দুই মুঠো। ঘরের কোণে নিজের আরামদায়ক বিছানা থেকে উদ্বিগ্ন চোখে মনিবকে দেখছে মস্তবড় রটওয়েইলার কুকুরটা।

হঠাৎ ফোন বাজতেই লাফিয়ে গিয়ে টেবিল থেকে রিসিভার নিয়ে কানে ঠেকাল লুদভিগ। বুঝে গেছে, এবার চাওয়া হবে মুক্তিপণ।

ওদিক থেকে বলল এক সেলসম্যান, ‘আপনি ছাতের ফাটা বন্ধ করতে চাইলে আমাদের…’

‘মর, হারামজাদা শালা! বায়েন…!’ ঠাস করে ক্রেডলে রিসিভার রাখল লুদভিগ।

বাইরে কর্কশ আওয়াজে রওনা হলো একটা গাড়ি। ক’মুহূর্ত পর বেজে উঠল দরজার বেল। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল লুদভিগ। মুহূর্তের জন্যে দেখল রাস্তার বাঁক ঘুরে চলে গেল কালো এক মার্সিডিস গাড়ি। এত কম সময়ে ওটার লাইসেন্স প্লেট পড়তে পারল না লুদভিগ।

দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে মিষ্টি হাসছে এমিলি। ‘হাই, বাবা! হাই, জো!’ বিছানা থেকে উঠে এক দৌড়ে ওর সামনে পৌছল বিরাট কুকুরটা। জিভ দিয়ে চেটে দিল প্রিয় বন্ধুর গাল। ভীষণ বেগে নাড়ছে খাটো লেজ। লালায় ভরা মুখ মুছতে মুছতে বাড়ির ভেতর ঢুকল এমিলি।

জোকে ঠেলে সরিয়ে দু’হাতে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরল লুদভিগ।

‘তুমি আমাকে পিষে চ্যাপ্টা করে দিচ্ছ, বাবা, জোর করে পিছিয়ে গিয়ে অবাক চোখে লুদভিগের দিকে তাকাল এমিলি। ‘কী হয়েছে, বাবা?’

‘কোথায় ছিলে তুমি?’ আর কিছু বলতে পারল না লুদভিগ। প্রায় তুলে নিয়ে মেয়েকে বসিয়ে দিল চেয়ারে। প্রথম থেকে জেনে নিল কী ঘটেছে।

এমিলি জানে না, বাবা কেন এত উদ্বিগ্ন। কোথাও তো কোনও সমস্যা নেই। খুব ভাল আচরণ করেছে লুকাস। হবেই তো, বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু যখন! বাবাই বলেছে ওকে শহর ঘুরিয়ে দেখাতে। দারুণ সুন্দর এক ক্যাফেতে ঢুকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছে। হাসিতে পেট ফাটিয়ে দেয়ার মত মজার কত কথা বলল! …না তো, ক্যাফেতে ঢোকার সময় ছাড়া ওর হাত ধরেনি লুকাস। …না, মনে নেই ক্যাফের নাম। এটাও জানা নেই রাস্তাটা কোথায়। বাবা এত চিন্তিত কেন, বুঝে পাচ্ছে না এমিলি।

সব শোনার পর বুকের কাছে নেমে গেল লুদভিগের মাথা। নরম সুরে জানতে চাইল, ‘লুকাস দেখতে কেমন?’ চেপে রেখেছে প্রচণ্ড রাগ।

বারাকে বোকার মত প্রশ্ন করতে শুনে মাথা নাড়ল এমিলি। ‘কেন, তোমার মতই বিরাট বড়। তবে এত মোটা নয়।’ খিলখিল করে হেসে ফেলল ও।

‘ঠাট্টা নয়, এমিলি, ব্যাপারটা জানা খুব জরুরি।’

কপাল থেকে ধূসর চুল সরাল এমিলি। ‘কেন, অনেক বয়স। ত্রিশ তো হবেই। বেশিও হতে পারে।’

‘আর কিছু মনে পড়ছে তার ব্যাপারে?’

‘একটা কান অদ্ভুত। হাসি পায়।’

‘কেন হাসি পায়?’

গম্ভীর হয়ে গেল এমিলি। ‘একটু ভয়ও লেগেছে। মনে হয়েছে কেউ চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে চেয়েছে ওর কানের লতি।’

‘ক্ষত-বিক্ষত?’

‘জিজ্ঞেস করেছি কীভাবে এমন হলো। আমাকে বলল, একদিন বড় একটা টিয়া পাখি কাঁধে বসে ওর কানের লতি ছিঁড়ল। অভিনয় করে দেখিয়েছে। তার পর থেকে টিয়া পাখি দেখলেই ভীষণ ভয় লাগে ওর। কথা বলার ভঙ্গি দেখে খুব হাসি পেয়েছিল। সত্যিকারের মজার মানুষ।’

রাগ আরও বাড়ল লুদভিগের। ‘আর কখনও কারও কথা শুনে কোথাও যাবে না, এমিলি। এরপর হয় উঠবে আমার গাড়িতে, নইলে ব্রিজিটারটায়। আমার কথা বুঝতে পেরেছ?’

মাথা নিচু করে নিল এমিলি। চোখে জমেছে অশ্রু। ‘ঠিক আছে, বাবা।’

আবারও বেজে উঠল টেলিফোন।

দ্বিতীয় রিঙে রিসিভার কানে ঠেকাল লুদভিগ।

‘হের কেইলম্যান?’

‘কে বলছেন?’

‘মন নিয়ে শুনুন।’

‘আমি শুনছি।’

‘প্রথম এবং শেষবারের মত সাবধান করছি। এরপর ভুলেও বেকারের কেস নিয়ে নাড়াচাড়া করতে যাবেন না।’

‘আপনি কে?’

‘পরেরবার কিন্তু আপনার লক্ষ্মী মেয়েটা হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরবে না।’

দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে ফেলল লুদভিগ।

খুট্ আওয়াজে কেটে গেল লাইন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *