৯
কলেজের হোস্টেলে থাকলে ইচ্ছেমতো থাকা যায় না, এমনিতেই হইহট্টগোল হয় বেশি। তার ওপর উজ্জয়িনী চিরকালই একটু একাকীত্ব ভালোবাসে। তাই চার বছর আগে প্রথমে হোস্টেলে এলেও মাসদুয়েকের মধ্যেই এই নিরিবিলি জায়গায় এক কামরার ফ্ল্যাটটা জোগাড় করে চলে এসেছিল ও। সঙ্গে আসা বাবার পাঠানো লোকেরাই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
দাঁত মাজতে মাজতে উজ্জয়িনী ভাবল, যে সময়টায় ওর জীবন রঙে ভরে ওঠার কথা, পড়াশোনায়, নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করতে পারার আনন্দে, খেলায় এই টিনএজটাকে মনেপ্রাণে অনুভব করার কথা, সেই সময়টার ও কী সাংঘাতিক একা! নিঃসঙ্গতা কুরে কুরে খায় ওকে।
হঠাৎই ওর নিজের প্রতি প্রচণ্ড রাগ হল। কেন ও আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের থেকে আলাদা? শুধু একটা নয়, দু-দুটো অস্বাভাবিকত্ব ওর মধ্যে কাজ করছে। সেই ছোট্ট থেকে ‘বিস্ময়শিশু’, ‘বিস্ময়বালিকা’ এইসব বিশেষণ শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ও, যত কাগজে, টিভিতে ওর নাম ছড়িয়েছে, তত ভেতরে ভেতরে ফোঁপরা হয়ে গেছে ও, নিজের ভেতরের আর বাইরের টানাপোড়েনে অসংখ্যবার ভেবেছে আত্মহত্যার কথা।
ওর এই পরিণতির পেছনে কি ওর বাবা মায়ের কোনো হাতই নেই?
বারো বছরে মাধ্যমিক পাশ করেছিল ও, চোদ্দোতে উচ্চমাধ্যমিক, তারপর সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষায় ওপরদিকে র্যাঙ্ক করে মেঘালয়ের এই প্রথম সারির সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মাত্র সাড়ে চোদ্দো বছরে ভরতি হয় ও, সরকারের থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে। এখন ওর ফাইনাল ইয়ার। তার সঙ্গে সমান্তরালভাবে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ওর সাঁতারের প্রতিভা। শর্ট ডিসট্যান্সের রাজ্যস্তরের ইভেন্টে দু-বার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে ও। একমাত্র জলই যেন ওকে শান্তি দেয়, ডুবসাঁতার দিয়ে জলের অতলে নিজেকে তলিয়ে দিয়েই যেন পরম শান্তি অনুভব করে ও। কিন্তু মেঘালয়ে আসা ইস্তক সেই সুযোগও আর তেমন নেই।
ছোটো থেকেই উজ্জয়িনী শুনতে শুনতে বড়ো হয়েছে ও, আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো নয়, ইংরেজিতে এদের বলা হয় প্রডিজি। প্রডিজি বাচ্চাদের ম্যাচিয়োরিটি অন্য শিশুদের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি আসে, তাই সমাজ এদের বিস্ময়শিশু নাম অভিহিত করে, কিন্তু অনেকেই বোঝে না, এদের ব্যক্তিগত জীবন কতটা কষ্টের হয়ে ওঠে। এরা কারুর সঙ্গে সহজে মিশতে পারে না, সুস্থ স্বাভাবিক শৈশব থেকে বঞ্চিত হয় এরা।
উজ্জয়িনীর ক্ষেত্রে সেটা একটু বেশিই কষ্টের। কারণ এই অকালপক্ক মস্তিষ্কের সঙ্গে ওকে পূর্বজন্মের একটা তিক্ত স্মৃতিও বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়।
প্রথমে এমনি স্বপ্ন ভাবলেও, দেশের সেরা প্রায় আট থেকে দশজন মনস্তত্ত্ববিদ ওর সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সহমত। ওর মস্তিষ্কের মধ্যে পূর্বজন্মের কিছু স্মৃতি এখনও রয়ে গেছে। যদিও আধুনিক বিজ্ঞান রি-ইনকারনেশন বা পুনর্জন্মকে স্বীকৃতি দেয় না, তবে সেই হ্যামলেটের হোরেশিওকে বলা কথাটা আজও সত্যি, বিজ্ঞান সব কিছুকে আজও ব্যাখ্যা করতে পারেনি।
ওর সাড়ে তিন-চার বছর বয়স থেকে উজ্জয়িনী ওই স্বপ্নটা দেখে আসছে। শুধু যে স্বপ্নটা ও ঘুমের মধ্যেই দেখে এমন নয়, মাঝে মাঝেই ওর মনে হয় ওকে কেউ বা কারা রে-রে করে তেড়ে আসছে, ও প্রাণপণে সাঁতার কাটতে চাইছে, পালাতে চাইছে তাদের হাত থেকে, কিন্তু হাঁপিয়ে উঠছে, পারছে না।
ডাক্তার প্রথমে বলেছিল কোনো কারণে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে হয়তো। উচ্চবিত্ত বাবা-মা-র ইগোর মাঝে পড়ে অবচেতন মনে কোনো ভয় কাজ করছে। ওর কাউন্সেলিং চলেছিল, সঙ্গে বাবা মায়েরও।
কিন্তু, না। তাতে কোনো কাজ হয়নি।
পরবর্তী পর্যায়ে এসেছে অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্ট ড্রাগ, মেন্টাল ডিজঅর্ডার কাটানোর ওষুধ। তারাও ফেল করেছে ডাহা।
অবশেষে চোদ্দো বছর বয়সে উজ্জয়িনী কলকাতার এক নামি সায়কিয়াট্রিস্টের কাছে গিয়ে কিছুটা দিশা পেয়েছিল।
উজ্জয়িনীর বাবা নাগেশ সিং দিল্লির প্রথম সারির বিত্তশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন, তার সঙ্গে এখন রাজনীতিতেও পা দিয়েছেন। এ ছাড়াও তাঁর আরও একটা পরিচয় আছে। তিনি জয় সিং-এর উত্তরপুরুষ। মুঘল আমলে যে কয়েকজন হাতে গোনা হিন্দু রাজা নিজেদের ক্ষমতাবলে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন জয়পুরের রাজা জয় সিং। তিনি ছিলেন শাজাহানের সমসাময়িক। শোনা যায় রাজা জয় সিং-এরই দেওয়া এক শূন্য উদ্যানে তাজমহল বানিয়েছিলেন সম্রাট শাজাহান।
তখনকার বেশিরভাগ হিন্দু রাজাদের আনুগত্যের কারণেই হোক, বা অন্য কোনো কূটনৈতিক কারণে বিয়ে হয়েছে মুঘল বা অন্যান্য সম্ভ্রান্ত কোনো মুসলিম পরিবারে। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যাবসা বা মসনদে উন্নতি ছিল অতি প্রচলিত কৌশল। রাজা জয় সিং-এরও বেশ কিছু ছেলেমেয়ে বিয়ে করেন মুসলিম পরিবারে। কিন্তু জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজা রাম সিং সেই মুষ্টিমেয় রাজাদের মধ্যে একজন যাঁর বংশধরেরা কেউই ধর্মান্তরিত হননি। তিনি ছিলেন তৎকালীন কাশ্মীরের সুবেদার এবং শিবাজির এক বিশ্বস্ত বন্ধু।
উজ্জয়িনীর বাবা সেই রাজা রাম সিং-এর একমাত্র জীবিত হিন্দু বংশধর।
উজ্জয়িনীর বাবা রাজপুত হলেও মা বাঙালি। কিন্তু কিছু মানুষের ভালোবাসাটা তাঁদের নিজেদের জীবনে একটা বড়ো ভুল তো বটেই, পারিপার্শ্বিক অন্য সমস্ত মানুষের স্থিতিও নষ্ট করে দেয়। উজ্জয়িনীর বাবা মা-ও তেমনই। দু-জনেই সমান শিক্ষিত, রুচিশীল, যৌবনে দু-জনে ভালোবেসে বিয়ে করলেও তাঁদের দু-জনের মধ্যে কোনো কম্প্যাটিবিলিটিই নেই। সারাক্ষণের ইগোর লড়াই, পারস্পরিক শীতল কাদা ছোড়াছুড়িতে, তার সঙ্গে উজ্জয়িনীর নিজস্ব এই অস্থিরতায় ওই চোদ্দো বছর বয়সেই যখন ও নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছে, তখন কলকাতার এক নামি মনস্তত্ত্ববিদ, যাঁর পাণ্ডিত্যও অগাধ, তিনিই প্রথম হ্যালুসিনেশনের ধারণা বাতিল করে মাকে বলেন, পুরোনা একটা ঘটনার সঙ্গে তিনি উজ্জয়িনীর এই স্বপ্নের ভীষণ মিল পাচ্ছেন এবং উনি সন্দেহ করছেন উজ্জয়িনীর পূর্বজন্মের কিছু স্মৃতি তার মস্তিষ্কের কোষগুলি এখনও ভোলেনি।
মাঝে মাঝে ভাবে উজ্জয়িনী, কেন ওর সঙ্গেই এইসব অতিলৌকিক ঘটনা জুড়ে গেল?
উজ্জয়িনী ঘড়ির দিকে তাকাল, তিনটে পঁয়ত্রিশ। এখনও কিছুটা সময় আছে তৈরি হতে। একটু আনমনা হয়ে ও ভাবতে থাকল ওই বয়স্ক সায়কিয়াট্রিস্টের বলা কথাগুলো।
ওর বেশ মনে পড়ে মা অবাক হয়ে বলেছিলেন ডাক্তারকে, ‘কী বলছেন! পূর্বজন্ম! মানে যাকে বলে জাতিস্মর! আপনাদের ডাক্তারি শাস্ত্র এসব মানে নাকি?’
ডাক্তারবাবু মাথা নেড়েছিলেন, ‘প্রচলিত ডাক্তারি শাস্ত্র হয়তো স্বীকার করে না, কিন্তু ব্রায়ান লেসলি ওয়েস নামে একজন আমেরিকান সায়কিয়াট্রিস্ট তাঁর বইয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে পুনর্জন্ম যে শুধু আছে, তাই নয়, এই জন্মের অনেক সমস্যা আগের জীবনের কথা জানতে পারলে ডাক্তারির মাধ্যমেই সারানো সম্ভব। এই নিয়ে ওঁর নিজস্ব একটা থেরাপিও আছে। তেমন হলে আমি না হয় যোগাযোগ করব ওঁর সঙ্গে। কিন্তু তা আগে,’ ভদ্রলোক সোজাসুজি উজ্জয়িনীর দিকে তাকিয়েছিলেন, ‘তোমার মনে হয়, তুমি সাঁতার কেটে পালাচ্ছ, আর ওরা পেছন থেকে এসে ধরে ফেলল, তাই তো?’
অন্য কোনো চোদ্দো বছরের মেয়ে এসব হয়তো কিছু বুঝতই না, কিন্তু উজ্জয়িনীর অকালপক্ব মস্তিষ্ক তো সবই বড্ড তাড়াতাড়ি বোঝে। ও ওপর নীচে ঘাড় নেড়েছিল।
বৃদ্ধ ডাক্তার বিড়বিড় করেছিলেন, ‘এই ঘটনাটার সঙ্গে একটা পুরোনো ঘটনার অদ্ভুত মিল পাচ্ছি আমি!’
উজ্জয়িনীর মা সুজাতা ভ্রূ কুঁচকে বলেছিলেন, ‘কী ঘটনা?’
ডাক্তার বলেছিলেন, ‘আমাদের ইতিহাসে ইংরেজ শাসনকে ভিলেনের মতো দেখানো হয়। ব্রিটিশরা আমাদের এক্সপ্লয়েট করেছিল ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটাও ঠিক, পাশ্চাত্য নবজাগরণের ছোঁয়া না লাগলে ধর্মের অপভ্রংশে আর অশিক্ষা, কুসংস্কারে ডুবে থাকা আমাদের দেশের লোকের যে কী অবস্থা হত! বিজ্ঞান বা যুক্তির কোনো অস্তিত্বই ছিল না বলতে গেলে। মেয়েদের জীবন সম্পর্কে তো আর কিছুই বলার নেই। সতীদাহ প্রথার নাম শুনেছ নিশ্চয়ই। হিন্দু ধর্মের একটা জঘন্য প্রথা যেখানে স্বামী মারা গেলে তার সঙ্গে স্ত্রীকেও মরতে হত?’
উজ্জয়িনী সায় দিয়েছিল। সতীদাহ প্রথা সম্পর্কে সে শুধু ইতিহাস বইয়ের সিলেবাসেই পড়েনি, বাইরের বইও পড়েছে। ইন ফ্যাক্ট ওর এই স্বপ্নটা যেকোনো সহমরণে যাওয়া সদ্যবিধবার, সেটা বুঝতে পারার পরেই আরও বেশি করে পড়েছে। তাই এটা ওর কাছে নতুন কিছু লাগল না। গম্ভীরমুখে ও জানিয়েছিল, ‘শুধু হিন্দুই নয়। প্রায় চব্বিশশো বছর আগেও এর প্রচলন ছিল। মেইনলি হিন্দুদের মধ্যে থাকলেও কাশ্মীরের কিছু মুসলিম সম্প্রদায়, ইন্দোনেশিয়ার কিছু উপজাতির মধ্যেও এটা ছিল।’
ডাক্তার চমৎকৃত হয়ে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, একদম ঠিক। ইংরেজদের আগে মুসলিম শাসকরা এই প্রথাটা পছন্দ না করলেও হিন্দু গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কিছু করে উঠতে পারেননি। এমনকী আকবর নিজেও চেষ্টা করেছিলেন এটা বন্ধ করতে। কিন্তু, পারেননি। ইংরেজরা আসার পর পাশ্চাত্য আধুনিক শিক্ষায় যখন একটা পরিবর্তনের স্রোত আসে ভারতে, তখন রামমোহন রায়ের মতো কিছু সংস্কারক চেষ্টা শুরু করলেন একদম আইনিভাবে যেন এটাকে বন্ধ করা হয়। তাতে রে রে করে উঠল কিছু প্রাচীনপন্থী মানুষ। একটা হিসেব দিই, ১৮১৫ থেকে ১৮১৮, এই তিন বছরের মধ্যেই শুধুমাত্র বাংলায় স্বামীর চিতায় জ্বলন্ত পুড়ে মরা সতীর সংখ্যা চারশো থেকে বেড়ে হয় প্রায় সাড়ে আটশো। তখন এমনিতেই একেকটা লোকের অনেকগুলো করে স্ত্রী থাকত, আর কুলীন ব্রাহ্মণ হলে তো কথাই নেই। বাচ্চা মেয়েগুলোকে জীবনের স্বাদ কী বোঝার আগেই আগুনে পুড়ে মরতে হত। মেয়েগুলোকে সিদ্ধি জাতীয় কিছু মাদক খাইয়ে অচেতন করে দেওয়া হত, চারপাশে এত ঢাকঢোল বাজত, প্রতিবাদ করার কোনো জায়গাই ছিল না। কিছুটা ছিল গোঁড়া ব্রাহ্মণদের মদত, আর তার সঙ্গে ছিল সম্পত্তির লোভ। অল্পবয়সের বিধবাকে মেরে ফেলতে পারলে পুরো সম্পত্তিই আত্মীয়দের, সেই লোভেও মেরে ফেলত ওরা।’
উজ্জয়িনী চুপচাপ শুনছিল। ডাক্তারবাবু যেটা বলছিলেন সেটার ও বহুবারের প্রত্যক্ষদর্শী।
‘১৮২৩ সালের অগাস্ট মাসে লর্ড আমহার্স্ট ভারতের গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন। তার ঠিক পরে পরেই ১৮২৫ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ কলকাতার কাছেই একটা সাংঘাতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। লর্ড আমহার্স্টের স্ত্রী লেডি আমহার্স্ট খুব ভালো লিখতেন। তিনি খুব মর্মস্পর্শীভাবে ঘটনাটা লিখেছিলেন, যেটা তোমার স্বপ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।’ উজ্জয়িনীর দিকে ইশারা করে বলেছিলেন বৃদ্ধ সায়কিয়াট্রিস্ট, ‘বাচ্চা মেয়েটা ঠিক তোমার স্বপ্নের মতোই পালিয়ে নদীর ওপারে গিয়ে জঙ্গলে লুকোতে গিয়েছিল। লোকজন উন্মত্ত পশুর মতো তাকে আবার নদীতে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করে। অবশেষে সে ডুবে মারা যায়।’
উজ্জয়িনী প্রশ্ন করেছিল, ‘তারপর?’
ডাক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন, ‘এই ঘটনাটার পর একদিকে ইংরেজরা, অন্যদিকে রামমোহন রায়ের মতো মানুষরা প্রচণ্ড বিক্ষোভ শুরু করলেন। তখন লর্ড আমহার্স্ট প্রথমে কয়েকটা নিয়ম চালু করলেন, যেমন বিধবাকে নিজে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে সহমরণে যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে, স্বামীর চিতা ছাড়া অন্য কোনোভাবে বিধবাকে মরতে দেওয়া যাবে না, বিধবার স্বামীর সম্পত্তি কোনো আত্মীয় পাবে না, সরকার বাজেয়াপ্ত করবে সব, যারা ওই কাজে হেল্প করবে তারা কেউ সরকারি চাকরি পাবে না, এইরকম।
তারও কিছুদিন পর ১৮২৯ সালে পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছিল এই প্রথা।’
উজ্জয়িনীর মা সুজাতা শুনছিলেন, কিন্তু উদবেগ মুখ-চোখ দিয়ে ফুটে বেরোচ্ছিল। বোধ হয় ভাবছিলেন একেই পড়াশুনো বা অন্য কিছুতে উজ্জয়িনী বয়সের অনুপাতে এতটা পিছিয়ে তার ওপর জাতিস্মরের ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়, মানসিক ট্রমাতেই তো মেয়েটা শেষ হয়ে যাবে!
দূরের প্রেসবাইটেরিয়ান গির্জায় ঢং ঢং করে চারটের ঘণ্টা বাজতেই উজ্জয়িনী চমকে উঠল। ভাবতে ভাবতে কোথায় চলে গিয়েছিল ও। পাশে-পড়ে-থাকা ফোনটা খুলল ও, কোনো নতুন মেসেজ কি এল?
নাহ, আর দেরি করা যাবে না, এবার রেডি হতেই হবে। এখান থেকে গাড়িতে গৌহাটি, সেখান থেকে প্লেনে দিল্লি। তারপর এই ক-মাসে ওর ভীষণ কাছের হয়ে ওঠা মানুষটাকে ও প্রথম দেখবে। হোক বাড়ির অমতে, কাছের সেই মানুষের সঙ্গে শুরু করবে নতুন জীবন।
রাজা জয়সিংহের উত্তর প্রজন্ম হওয়ার বংশমর্যাদা ও চায় না, চায় না বিলাসিতা, ঠুনকো আভিজাত্য, শুধু ওর ভালোবাসার মানুষটাকেই ও চায় এখন।