অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৫

১৫

রুদ্র ইচ্ছে করেই স্টেশনে ঢোকেনি, আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনটায় এমনিই এর আগে খুব বেশি আসেনি ও। অমিতের হাতে আসার সময় চাবিটা দিয়ে এসেছে, আপাতত অফিশিয়াল ডিউটি থেকে ওর ছুটি। কিন্তু ওর ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিল। ভেতরে ভেতরে ওর মনটা বৈপরীত্যে মোড়া দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেছে এখন। একদিকে বাবা-মা-র সঙ্গে এতদিন পর দেখা হওয়ার আনন্দ, অন্যদিকে নাহুম খানের বলা কথাগুলো, অফিসের টেনশন। ভদ্রলোক ঠিকই অনুমান করেছিলেন, পুরোনো মর্টগেজ থাকা দলিলের ফটোকপিতে যে বাড়ি তৈরির জন্য লোন নেওয়া হয়েছিল, সেটার ঠিকানা পাওয়া গেছে। নাহুম খান আর ওই পাঞ্জাবি অফিসার সেখানেই যাওয়ার আগে ওকে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন ওই খুনের জায়গায়।

ওদিকে একদিন কেটে গেল, অফিসের চিঠির কোনো উত্তরও লেখা হল না।

ওর হঠাৎ মেজাজটা খিঁচড়ে গেল। ভালোভাবে জীবন কাটানোর জন্য চাকরি করা, কিন্তু সেই চাকরিই যখন জীবনের কাছের মানুষগুলোর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, আর তারপর সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে কোনো দোষে অভিযুক্ত করে মানসিক স্থায়িত্বটাকে তছনছ করে দেয়, তার চেয়ে দুঃখের আর কিছুই হতে পারে না।

তাও বাবা-মা ওর কাছে আসছেন, হঠাৎ কোনো প্রয়োজন হলে ও নিজেও কলকাতা যেতে পারবে, কিন্তু প্রিয়ম?

ফোনটা বের করে আবার কিছুক্ষণ চেষ্টা করল, কিন্তু প্রিয়মের ফোন সেই নট রিচেবল। রাগে ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হল ওর। মেসেজের পর মেসেজ করে যাচ্ছে সকাল থেকে, একটাও ডেলিভার্ড হচ্ছে না।

চোখটা হঠাৎ ছলছল করে উঠল রুদ্রর। কতদিন হয়ে গেল প্রিয়মকে দেখেনি! বিয়ের পরে তো বটেই বিয়ের আগেও কখনো এতদিন দু-জন দু-জনকে ছেড়ে থাকেনি। আগে অফিসে সামান্য কোনো সমস্যায় পড়লেই প্রিয়মকে না বলা পর্যন্ত ওর পেটের ভাত যেন হজম হত না, আর এখন এত বড়ো বিপদেও প্রিয়ম টেনশন করবে ভেবে ও কিছুই বলে উঠতে পারেনি।

ইউরোপ থেকে ছুটি কাটিয়ে ফিরে ওর যখন হঠাৎ আগ্রায় ট্রান্সফার অর্ডার এল, কিচ্ছু ভালো লাগত না। একদম প্রথমদিককার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল ওর। প্রথম কিছুদিনের জন্য ব্যাঙ্কের গেস্টহাউসে উঠেছিল। অফিসের সময়টুকু বাদে বাকি সময়টা একটা ভালো ফ্ল্যাট খুঁজতে হত। তারপর সন্ধের পর দালালদের সঙ্গে সেইসব আস্তানা দেখতে যেতে হত। একটা রান্নার লোক ঠিক করা, গ্যাসের লাইন, জলের লাইন, সবজির বাজারে গিয়ে দেখে দেখে বাজার করা, এইসব হাজারো ঝামেলা নিয়ে একা জীবন শুরু করতে করতে অসহ্য লাগত ওর!

কতবার একা ঘরে রাগের বশে ওর পুরোনো অভ্যেসমতো জলের গ্লাস ছুড়ে ফেলেছে মাটিতে, রাতের বেলা অফিস থেকে ফিরে সকালে রাঁধুনির করে যাওয়া ঠান্ডা খাবার উলটে দিয়েছে টেবিলে। কিন্তু কাকে রাগ দেখাবে এখানে? কে আছে ওর মাথা ঠান্ডা করার জন্য, মান ভাঙানোর জন্য? রাগ করে না খেয়ে ঘুমিয়েছে, জল ভরতি মেঝে থই থই করেছে সারাদিন, পড়ে থাকা খাবারে মাছি ভনভন করেছে। তারপর একসময় বাধ্য হয়ে নিজেই পরিষ্কার করেছে।

মাঝে মাঝে মনে হত একছুটে সব ছেড়েছুড়ে চলে যায়। এসব কোনোদিনও ও করেছে? ওদের কলকাতার ফ্ল্যাটের যাবতীয় দেখভাল প্রিয়মই করত, কাজের লোকদের চালনা থেকে শুরু করে রুদ্রকে সামলানোও। আর এখন? তার চেয়েও বড়ো কথা, আর ক-টা দিনই বাঁচবে? এই সেদিনই একটা আর্টিকলে পড়ছিল পৃথিবীর মানুষের গড় আয়ু এখন একাত্তর বছর। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বড়োজোর আর চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর বাঁচবে ও। আগে জীবনের অতগুলো বছর কাটল বাবাকে ছাড়া, আর এখন সব পেয়েও আবার ও একা।

তবে একদিক থেকে দেখতে গেলে এই নির্বাসিত জীবন রুদ্রকে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত অনেক কিছু শেখাচ্ছে। আগের থেকে এখন অনেক ম্যাচিয়োর্ড হয়েছে ও। আগে যেমন তুচ্ছ কারণে অকারণে প্রিয়মের সঙ্গে ঝগড়া করত ও, এখন রুদ্র সারাক্ষণ অনুভব করে, জীবনে যে ক-টা দিন ভালোভাবে সুস্থভাবে একসঙ্গে থাকা যায়, সেটা কখনো নষ্ট করতে নেই। এই যে এখন রুদ্র আর প্রিয়মের মধ্যে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান, রুদ্র যখন রাতে আটটার সময় অফিস থেকে ফেরে, তখন প্রিয়মের ওখানে সবে দুপুর আড়াইটে। প্রিয়ম ব্যস্ত গলায় কিছুক্ষণ কথা বলেই রেখে দেয়, অফিসের কাজের মাঝে। ওদিকে রুদ্ররও তখন অবসন্ন দেহে মনে হয় একটু বিশ্রাম নিয়ে নেয়।

দু-জনের একটু সময় করে কথা বলার জন্য এখন কত প্ল্যান করতে হয়। অথচ আগে যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন সে-সুযোগ পাওয়া যেত, তখন কত সামান্য কারণে ঝগড়া, তর্কবিতর্ক করে হেলায় সময়গুলো হেলায় নষ্ট করেছে রুদ্র।

তাই এখন ও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে, আবার যখন ওরা দু-জনেই কলকাতার বাড়িতে ফিরবে, আবার যখন ওদের ছোট্ট সুন্দর ফ্ল্যাটটায় ওরা একসঙ্গে থাকবে, কখনো শুধু শুধু আর ঝগড়া করবে না।

হেলান দিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে কোথায় চলে গিয়েছিল রুদ্র, হুঁশ ফিরল ফোনের আওয়াজে, স্ক্রিনে বাবার ছবি দেখে তড়িঘড়ি রিসিভ করল ও, এরা এত দেরি কেন করছে, কখন তো বলল নেমে গেছে!

সুরঞ্জনের সহাস্য কণ্ঠস্বর শোনা গেল ওপাশে, ‘কী রে, কোথায় তুই?’

রুদ্র ফোন কানে একটু এগিয়ে গেল স্টেশনের গেটের দিকে, ‘আমি তো গেটের বাইরেই। তোমরা কোথায় বলো তো? কখন ট্রেন ঢুকে গেছে, আর তোমরা এখনও বেরোতে পারলে না?’

রুদ্রর পাশ থেকে সুরঞ্জন বলে উঠলেন, ‘কী করব বল, মেয়ে এক বছর বাইরে থেকে যদি নিজের বাপ-মাকে চিনতে না পারে, পাশ দিয়ে হেঁটে হনহন করে এগিয়ে যায়, তবে আর বেরিয়ে লাভ কী! ভাবছি ফিরতি ট্রেন ধরে কলকাতা ফিরে যাই!’

সুরঞ্জনের ছদ্ম দুঃখের গলা শুনে রুদ্র চমকে বাঁ-দিকে তাকিয়ে দেখল, সুরঞ্জন আর পূরবী কখন এদিকে চলে এসেছেন ও খেয়ালই করেনি।

আনন্দে ওর বুকটা নেচে উঠল, খুশিতে চিকচিক করে উঠল চোখ, এগিয়ে গিয়ে ও জড়িয়ে ধরল বাবাকে।

অনেক দিন বাদে সন্তানকে দেখলে সব বাবামায়েরই মন স্নেহে দ্রবীভূত হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হল। সুরঞ্জন মেয়েকে ভালো করে দেখলেন, পূরবী বলতে থাকলেন ‘ল্যাপটপে ঠিকই দেখেছিলাম, রোগা হয়ে গেছিস অনেক। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছিস না!’

রুদ্র অল্প হেসে সামনের একটা ট্যাক্সি ডাকল, ওদের লাগেজগুলো গাড়ির পেছনের ডিকিতে তুলতে তুলতে বলল, ‘সে তো হবই! রান্নার যা ছিরি! তুমি এসে গেছ, এবার ক-দিন একটু ভালমন্দ খেতে পাব! চলো ওঠো।’

পূরবী বললেন, ‘অফিস ছুটি নিয়েছিস তো?’

রুদ্র কিছু বলতে গিয়েও বলল না। যদিও ও ঠিক করেছে পুরো ব্যাপারটা বাবা মাকে খুলে বলবে। দু-জনেই সরকারি চাকরি করতেন, এই ধরনের চিঠির উত্তর কীভাবে দেওয়া উচিত, সে-ব্যাপারে ভালো গাইড করতে পারবেন, তবু এখনই ও খোলসা করল না কিছু।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে মল রোড দিয়ে সোজা এগিয়ে গাড়ি মহাত্মা গান্ধী রোডে পড়তেই সুরঞ্জনের মনটা স্মৃতিমেদুরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। স্নাতকোত্তর সময়ে তো বটেই, পরেও আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় কাজের সূত্রে কতবার এসেছেন এই ঐতিহাসিক শহরে! কাজের সূত্রে এলে এই জায়গাতেই একটা হোটেলে উঠতেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে আসা সহযাত্রীদের কথা মনে করতে করতে সুরঞ্জন যেন তাঁর কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরে যাচ্ছিলেন। মুখের মধ্যে অজান্তেই নানারকম হাসি খেলা করছিল।

রুদ্র সামনে বসলেও মা-মেয়ের কথা চলছিল নিরন্তর। পূরবী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইছিলেন কী খেয়ে অফিস বেরোয় রুদ্র, রান্নার লোকটা কেমন, দরজা ঠিকমতো বন্ধ করে শোয় কি না রাতে এইসব। এসব প্রশ্ন এর আগে ফোনে অন্তত দু-শোবার করা হয়ে গেছে, তবু আরও একবার একই উত্তর শুনে পূরবী শান্তি পান, কোনো বিচ্যুতি শুনলে একইরকম উষ্মা প্রকাশ করেন। এরই ফাঁকে বেশ রসিয়ে রসিয়ে ট্রেনে দেখা হওয়া সুরঞ্জনের পুরোনো বন্ধুর কীর্তিকলাপ বলতেও ভুললেন না।

তার মধ্যেই পূরবী সুরঞ্জনের মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হল তোমার, নিজের মনেই হাসছ কেন?’

সুরঞ্জন এবার সত্যিই হেসে ফেললেন, ‘বড্ড নস্টালজিক হয়ে পড়ছি। কত বার তো আসিনি আগে আগ্রায়! সেই দিল্লিতে পড়ার সময় থেকে। কত কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে।’

রুদ্র এবার একটু হাসল, ‘লোকে গোয়ায় গেলে শুনেছি এইসব হয় আর তুমি কিনা এই ঘিঞ্জি শহরে এসে নস্টালজিক হয়ে পড়ছ! কেসটা কী বাবা? যতদূর জানি মায়ের সঙ্গে তোমার রিলেশন তো তোমার জে এন ইউ-তে যাওয়ার আগে থেকেই ছিল? তবে?’ তারপর পেছনে ফিরে মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল, ‘কী বুঝছ মা?’

পূরবী হাত নেড়ে কপট রাগের ভঙ্গিতে বললেন, ‘আমি আর কী বুঝব বল! তখন তো আর তোদের মতো হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক এসব ছিল না যে সারাক্ষণ খোঁজ রাখতে পারব কোথায় যাচ্ছে, কী করছে। আমি সরলমনে বিশ্বাস করতাম।’

সুরঞ্জন রসিকতাটা ধরতে না পেরে একটু বিব্রত হয়ে বললেন, ‘ধুৎ! আমি কি ওইসব মিন করেছি নাকি! তোরাও পারিস বটে।’ তারপর একটু থেমে যোগ করলেন, ‘ওই যে ট্রেনে দেখা হল, আমার ওই বন্ধুর সঙ্গেই প্রথমবার এসেছিলাম। তারপরও অনেকবার এসেছি। সেসবই মনে পড়ছে আর কি!’

রুদ্র এবার একটু কৌতূহলী হয়ে বলল, ‘তোমার তো প্রথম থেকেই স্পেশালাইজেশন ছিল বৌদ্ধ কালচারের ওপরে। আগ্রা কেন আসতে হত তোমায়? এটা তো মুঘল আর্কিটেকচারের শহর!’

সুরঞ্জন বললেন, ‘মাস্টার্স করার সময় শুধু স্পেশালাইজেশন নয়, অন্য সাবজেক্টগুলোও থাকে। আর অফিসেও অনেকরকম ফিল্ডের কাজ থাকত।’ তারপর সোজা হয়ে বসে ভ্রূ কুঁচকে বললেন, ‘এটা তোকে কে বলল যে আগ্রা শুধু মুঘল শহর? এটা খুব ভুল কথা। আগ্রা শহরের নাম মহাভারতেও মেনশন করা আছে এটা জানিস কি?’

রুদ্র এবার বেশ অবাক হয়ে বলল, ‘মহাভারতে? আমি তো জানতাম ওই ইব্রাহিম লোদি প্রথম দিল্লি থেকে আগ্রায় রাজধানী ট্রান্সফার করে আগ্রা শহর তৈরি করেছিল, সেটা তো সুলতানেট পিরিয়ড, মানে মুঘলদের ঠিক আগেই।’

সুরঞ্জন মেয়ের এমন অজ্ঞতায় বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ছোটো থেকে এত ইতিহাস বই পড়তিস, আর কী সব বলছিস! দিল্লি থেকে আগ্রায় রাজধানী নিয়ে এসেছিল সিকন্দর লোদি, ইব্রাহিম লোদির বাবা। আর সে তো অনেক পরের ব্যাপার!’ গাড়ির বাইরে দিয়ে হুস করে বেরিয়ে যাওয়া একটা ভাঙাচোরা স্থাপত্য দেখতে দেখতে সুরঞ্জন বললেন, ‘মহাভারতে আগ্রার নাম লেখা আছে অগ্রেবন, যার মানে হল অরণ্যের সীমারেখা। আর লোদির যে ব্যাপারটা বলছিস, ও তো শুধুমাত্র ওর ক্যাপিটাল দিল্লি থেকে এখানে ট্রান্সফার করেছিল, সেটা সম্ভবত ১৫০৬ সাল হবে। তারও প্রায় ত্রিশ বছর আগে এই শহর তৈরি করেছিলেন বাদল সিং নামে এক হিন্দু রাজা। তাঁর তৈরি বাদলফোর্ট তো এখনও আছে, একদিন নিয়ে যাব তোকে। লোদি সেই রাজার কাছ থেকে এই শহরটা দখল করে।’

রুদ্র বলল, ‘ওহ! আর তারপর সুলতানেট পিরিয়ড শেষ হবার পর মুঘল সাম্রাজ্য শুরু হতেই এটা ওদেরও ক্যাপিটাল হয়ে গেল, তাই তো!’

সুরঞ্জন অঘোরেশের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মুঘল ইতিহাসে যেন আরও ডুবেছিলেন, মাথা নেড়ে বললেন, ‘সব মুঘল সম্রাটের আমলে নয়। সম্রাট আকবর, জাহাঙ্গির আর শাজাহান এটাকে রাজধানী রেখেছিলেন। তখন এই শহরের নাম ছিল আকবরাবাদ। মাঝে শাজাহান তাঁর শাসনকালের শেষের দিকে রাজধানী দিল্লিতে শাহজাহানাবাদে ট্রান্সফার করলেও পরে ঔরঙ্গজেব আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এখানেই। পরে অবশ্য ঔরঙ্গজেবই আবার সাউথের ঔরঙ্গাবাদে সরিয়ে নিয়ে যান রাজধানী।’

‘হ্যাঁ রে, প্রিয়মের সঙ্গে কথা হয়েছে আজ?’ পূরবী মাঝে বলে উঠলেন।

‘না, সকাল থেকে ফোনে ওকে পাচ্ছি না কেন জানি না!’ রুদ্র আরও একবার চেষ্টা করতে উদ্যত হল।

মা যে একটু বিরক্ত হচ্ছেন তা পেছনে না তাকিয়েও রুদ্র বিলক্ষণ বুঝতে পারছিল। এতদিন বাদে দেখা হয়ে ইতিহাসের কথা শুনতে প্রথমে রুদ্র ভেবেছিল ওর নিজেরও ভালো লাগবে না, কিন্তু শুনতে শুনতে ও যেন ওর ছোটোবেলায় ফিরে যাচ্ছিল, যখন বাবা ওকে দেশ-বিদেশের ইতিহাস, কতরকম রুদ্ধশ্বাস ঘটনা গল্পের মতো করে শোনাতেন। এক মুহূর্তের জন্য ও যেন নিজের জীবনের এই তীব্র সংকটটা ভুলে গেল।

মনটা হঠাৎ করে ওর দারুণ ভালো হয়ে উঠল।

ধুর, যা হবে দেখা যাবে, আপাতত এই সান্নিধ্যটা ও প্রাণপণে উপভোগ করুক! আর দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই ও প্রিয়মের অফিসে ফোন করবে।

ও বলল, ‘জানো বাবা, তাজমহল নিয়ে এখানে এখন বেশ গণ্ডগোল চলছে।’

সুরঞ্জন হালকাভাবে বললেন, ‘এ আর নতুন কী! তাজমহল নিয়ে বিতর্ক, ঝামেলা, এসব তো বরাবরই চলছে। জানিস লর্ড বেন্টিঙ্ক যখন ভারতের বড়োলাট ছিলেন তখন তাজমহলকে নিলামে চড়িয়েছিলেন? পুরো তাজমহলকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে পাথরগুলো বেচে ইংরেজ সরকারের আয় বাড়াতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রায় করেই ফেলেছিলেন, একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছিল সেদিন।’

‘অ্যাঁ? তাজমহল ভেঙে পাথর বিক্রি?’ রুদ্র অবাক, ‘কোন বেন্টিঙ্ক? যিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিলেন?’

‘ইয়েস!’ সুরঞ্জন মিটিমিটি হাসলেন, ‘বেন্টিঙ্ক সমাজসংস্কারমূলক কাজ অনেক করেছিলেন বলে আমাদের কাছে খুব ভালো, কিন্তু ওই একটা মানুষের জন্যই শুধু তাজমহল নয়, তখনকার সবকটা ঐতিহাসিক স্থাপত্য ধ্বংস হতে বসেছিল।’

ছোটোবেলায় রুদ্রকে এভাবেই বাবা গল্পচ্ছলে ইতিহাসের অজানা কাহিনিগুলো শোনাতেন, রুদ্র বলল, ‘বলো বলো, পুরো ঘটনাটা শুনি একটু।’

সুরঞ্জন বললেন, ‘তখন উচ্চবিত্ত ব্রিটিশ পরিবারের লোকেরা ভারতে ঘুরতে আসত। তারা দিল্লি, আগ্রায় অজস্র মুঘল স্থাপত্য দেখত, আর নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার সময় স্মৃতিচিহ্ন বাবদ এগুলোর দামি পাথর খুঁড়ে সঙ্গে নিয়ে যেত। ফতেপুর সিক্রিতে গেলে দেখবি, শিসমহলের ভেতরের পুরোটাই খোবলানো, সব পাথর নিয়ে গিয়েছিল ইংরেজরা। তাজমহলে অনেক ধরনের মূল্যবান পাথর লাগানো ছিল। রাজস্থানের মাকরানা থেকে আনা বিখ্যাত সাদা মার্বল, পাঞ্জাবের জাস্পার পাথর, চীন থেকে আনা জেড আর ক্রিস্টাল পাথর, তিব্বতের নীলকান্তমণি, আফগানিস্তানের লাপিস লাজুলি, আরবের কার্নেলিয়ান পাথর, আরও কতরকম পাথর যে ব্যবহার করা হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। ওইসময়ে রাজকোষের খুব শোচনীয় অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। তাই বেন্টিঙ্ক ভাবলেন তাজমহলকে ভেঙে ওইসব পাথরগুলো তিনি বিক্রি করে রাজকোষ ভরতি করে তুলবেন। তার আগে অবশ্য একবার অলরেডি তাজমহলকে মথুরার লক্ষ্মীচাঁদ নামে এক শেঠকে বিক্রি করা হয়ে গিয়েছিল, তাও মাত্র দেড়লক্ষ টাকায়। কিন্তু লক্ষ্মীচাঁদ যখন তাজমহল দখল করতে এলেন, স্থানীয় লোকেদের প্রচণ্ড বিক্ষোভে আর ভেতরে ঢুকতে পারেননি।

‘বেন্টিঙ্ক তাই ওসব রিস্কই নিলেন না। সব আটঘাট বেঁধে তিনি কলকাতার একটা কাগজে বড়ো করে তাজমহল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে দিলেন। অনেক লোক সেই নিলামে বিড করল, যখন নিলাম একদম শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তখন হঠাৎ জাহাজে করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে জরুরি অর্ডার এল নিলাম বন্ধ করার জন্য। শোনা যায় ব্রিটিশ আর্মিরই কোনো সৈন্য বেন্টিঙ্কের ওই কাণ্ডকারখানার কথা বিলেতে রিপোর্ট করে দিয়েছিল। কে সেই সৈন্য তা জানা যায়নি, তবে সে ওই কাজটা না করলে,’ সুরঞ্জন থামলেন, ‘তাজমহল আজ আর কেউ দেখতে পেত না।’

‘কী সাংঘাতিক!’ রুদ্র মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল, ‘জানতামই না এটা!’

‘আর শুধু বেন্টিঙ্ককেই-বা দোষ দেব কেন।’ সুরঞ্জন বললেন, ‘লর্ড হেস্টিংসও অনেক দামি পাথর খুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তাজমহল থেকে। লর্ড কার্জনও অনেক পাথরকে নিলামে চড়িয়েছিলেন। সেই নিলামের কপি আজও আমাদের আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হেড অফিসে রাখা আছে।’

গল্পে গল্পে প্রায় মিনিট দশেক পরে ওঁদের গাড়িটা যখন রুদ্রর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে পৌঁছোল, তখন বেশ চড়া রোদ উঠে গেছে, ঘড়ির কাঁটা যদিও এগারোটা ছোঁয়নি এখনও।

এতদিন হয়ে গেল রুদ্র এখানে এসেছে, তবু, এখানকার জলবায়ুর সঙ্গে ও পুরোপুরি মিশ খাওয়াতে পারেনি, অফিস যাওয়ার সময় প্রায়ই তাড়াহুড়োতে মুখ-চোখ-গলা স্কার্ফে জড়িয়ে বেরোতে ভুলে যায়, আর কিছুক্ষণ স্কুটি চালানোর পরেই ওর যেন মনে হয় মুখ, গলা, হাতের অনাবৃত অংশগুলো পুরো জ্বলছে লু-র মতো এক গনগনে হাওয়ায়। শীতকালেও প্রায় একই অবস্থা।

কমপ্লেক্সের আশপাশ দেখে সুরঞ্জন আর পূরবী, দু-জনেরই বেশ পছন্দ হল। বেশ বড়ো এরিয়া নিয়ে তৈরি, ভেতরে মন্দির, কমিউনিটি হল থেকে শুরু করে একটা জিমও রয়েছে। বর্গক্ষেত্রের চার কোণের মতো চারটে কোনায় আকাশছোঁয়া চারটে ফ্ল্যাট, প্রতিটাই বারোতলা করে, মাঝের জায়গাটায় বাচ্চাদের ছোটো একটা খেলার মাঠ।

তবে রুদ্রর অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে বাইরের আর ভেতরের মধ্যে কোনো মিল পাওয়া গেল না। চারদিক ছত্রাকার, অগোছালো, গোটা ফ্ল্যাটটার যেখানে সেখানে জামাকাপড়ের স্তূপ।

দেখেশুনে পূরবী সেই আগের ডায়ালগ শুরু করলেন, ‘ভাবলাম একা থাকতে শুরু করেছিস, একটু অন্তত নিজেরটা করতে শিখবি, একইরকম রয়েছিস? কী করে পারিস এরকম নোংরার মধ্যে থাকতে?’

রুদ্র মায়ের গজগজানিকে বিশেষ পাত্তা দিল না, একটু অস্থিরভাবে বলল, ‘তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও তো, আমি কফি বানাচ্ছি, রতন ভাই এক্ষুনি এসে পড়বে, ও আলুর পরোটাটা হেব্বি বানায়!’

পূরবী আর কিছু না বলে বিরক্তির একটা ভঙ্গি করলেন। তিনি নিজেও সারাজীবন কলেজে পড়িয়েছেন, সঙ্গে সংসারও করেছেন, ঘরের রান্না বাইরের লোককে দিয়ে করানো তাঁর ঘোরতর অপছন্দ। অন্য কিছুর জন্য নয়, ওদের হাতে তেলমশলার কোনো ঠিক থাকে না। দিনের পর দিন ওই তেল ঝাল মশলা খেলে পেটের আর কিছু থাকবে না। পরিচ্ছন্নতাও একটা ফ্যাক্টর। রুদ্রকে তিনি প্রথমেই বলেছিলেন তেমন হলে মশলা বাটা, কুটনো কুটে দেওয়ার জন্য লোক রাখুক, কিন্তু রান্নাটা অন্তত নিজেই করুক, তাতে শরীরটা ভালো থাকবে। প্রিয়মের মা-ও সেটাই বলেছিলেন। এই তো প্রিয়ম কী সুন্দর নিজে রান্না করে খায়।

কিন্তু রুদ্র শোনে তো নি-ই, উলটে একটা ছেলেকে রেখেছে। একা থাকে, তার মধ্যে একটা ছেলেকে রান্নার জন্য রাখার কোনো মানে হয়? কিন্তু রুদ্র পাত্তাই দেয়নি, ঠোঁট উলটে জানিয়েছিল ছেলেটা খুব ভালো, আর এতই প্যাংলা, ফুঁ দিলে উড়ে যাবে। আর এখানে নাকি রান্নার লোক তেমন পাওয়া যায় না, একে অনেক কষ্টে পেয়েছে।

পূরবী মনে মনে ঠিক করলেন, যে ক-টা দিন এখানে আছেন, ওই রতনবেটাকে রান্নার খুন্তিও ধরতে দেবেন না, বড়োজোর সবজিগুলো কেটেকুটে দিতে বলবেন। আর কম তেল মশলা দিয়ে ভালো করে রান্নাটাও শিখিয়ে দিয়ে যাবেন। সুরঞ্জনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ফোন নিয়ে কী করছেন সুরঞ্জন। পূরবী বললেন, ‘কী করছ? তোমার জামা বের করে দিচ্ছি, গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নাও।’

সুরঞ্জন অন্যমনস্কভাবে বললেন, ‘হুঁ, যাচ্ছি। অঘোরেশ বার বার ফোন করছে জানো, কিন্তু ধরার আগেই কেটে দিচ্ছে। প্রায় পাঁচ-ছ-বার করল। আর এখন আমি রিং ব্যাক করছি, ধরছে না।’

পূরবী এবার বেশ রেগে গেলেন, ‘কোথায় এতদিন বাদে মেয়ের কাছে এলে, ফ্ল্যাটটা ঘুরে ঘুরে দেখবে, গল্প করবে, তা নয়, সেই পাগলাটে লোকটাকে নিয়ে পড়ে আছ?’

সুরঞ্জন বললেন, ‘আরে তা নয়, কোনো দরকারও তো হতে পারে। দেখলে না, যাওয়ার আগে বলে গেল আমাকে খুব ইম্পর্ট্যান্ট কী বলার আছে ওর?’

রুদ্র কফি নিয়ে আসতে পূরবী কাপে কফি ঢালতে ঢালতে বললেন, ‘থামো তো! তোমার সঙ্গে এতকাল কোনো যোগাযোগই ছিল না, আর এখন এত জরুরি দরকার হয়ে গেল? যতসব ছিটগ্রস্ত কার্যকলাপ। আচ্ছা, তোমাদের লাইনের কি কোনো লোকই পুরোপুরি সুস্থ নয়? মানে ইতিহাস নিয়ে থাকতে থাকতে তারা সবাই অপ্রকৃতিস্থ টাইপ হয়ে গেছে?’

সুরঞ্জন এবার বেশ বিব্রতভাবে তাকালেন, একটু সন্দিগ্ধ গলায় বললেন, ‘মানে? সবাই মানে তুমি কাকে মিন করছ?’

পূরবী মোটেই দমলেন না, ‘তুমি নিজেই সেদিন বললে একই গাইডের আন্ডারে তোমার সঙ্গে পিএইচ ডি করেছিল একটা মেয়ে, পাগল হয়ে গেছে। তোমার ওই স্কটিশের স্যারেরও শেষের দিকে একটু মাথার গণ্ডগোল দেখা দিয়েছিল, আর তোমার এই বন্ধুটির তো তুলনাই নেই!’ পূরবী কফির মাগ হাতে রুদ্রর দিকে ঘুরলেন, ‘এমন জোরে জোরে গান গাইছে যে হেসে মরি, জানিস! আর দাড়ির মধ্যে উকুন ঘুরছে! ইস!’

সুরঞ্জন এবার প্রতিবাদ করলেন, ‘যাহ! নোংরা ছিল মানছি, কিন্তু দাড়িতে উকুন ছিল না মোটেও!’

পূরবী চোখ পাকিয়ে বললেন, ‘আলবাত ছিল। আমি তো ওর একদম উলটোদিকে বসেছিলাম, আমি স্পষ্ট দেখেছি। তুমি পাশে বসে কী করে দেখবে। বরং আমি শিয়োর, তোমার মাথায় ওর থেকে উকুন চলে এসেছে গোটাকতক। যেরকম জাপটে ধরেছিল তোমায়!’

সুরঞ্জন এবার বেশ ঘাবড়ে গেলেন, তিনি পরিষ্কার পরিপাটি মানুষ, মাথায় উকুন রয়েছে, এটা কল্পনা করতেই তাঁর গা ঘিনঘিন করে উঠল। রুদ্রর দিকে অসহায়ভাবে চাইলেন তিনি, ‘কী হবে রে? উকুন সত্যিই চলে এসেছে? যে ক-টা চুল আছে সে-কটাও তো উঠে যাবে তাহলে! তার ওপর চুলকোবে, ডিম পাড়বে, বাচ্চা হবে, সে তো একেবারে বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড! উকুন কী করে তাড়াতে হয়, বল না!’

রুদ্রর খুব মজা লাগছিল, তার মধ্যেও ও খেয়াল করল, ভুটানের সেই নির্বাসন থেকে বাবা ফিরে আসার পর মা আর আগের মতো গম্ভীর নেই, অনেক প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছেন। কথায় কথায় মজা করেন, বাবার পেছনে লাগেন। অন্তত এই মাকে বাবা ফিরে আসার আগে পর্যন্ত ও চিনত না। মা ছিলেন একটু রাশভারী প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু এখন যেন ঠিক তার বিপরীত!

জীবনের ওই ক-টা অভিশপ্ত বছরের একা কাটানো সময়গুলো সুদে-আসলে পূরবী এখন পুষিয়ে নিতে চান হয়তো!

চোখটা ফেরাতেই ও জানলা দিয়ে বাইরের ল্যাম্পপোস্টে সকালের সেই পোস্টারগুলো একদম কাছ থেকে দেখতে পেয়ে গেল। হলদেটে হ্যান্ডবিল কাগজের ওপর ধ্যাবড়া কালো কালিতে ছাপা কয়েকটা অদ্ভুত বাক্য। এগিয়ে গিয়ে জুম করে মোবাইলে ছবিটা তুলে নিয়েই রুদ্র দেখল, বাবা তখনও ওর দিকে কাতর দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন।

ও অভয় দিল, ‘তুমি চিন্তা কোরো না, বাবা। আমি দেখে নেব। মা যেরকম ঘন দাড়ির জঙ্গল বলল, মনে হয় না ওরা ওইটুকু সময়ের মধ্যে সেই অরণ্য ভেদ করে অতটা পথ উড়ে তোমার চুল পর্যন্ত পৌঁছোতে পেরেছে। তবু যদি এক আধটা কলম্বাস উকুন থেকে থাকে, চাপ নিয়ো না, আমি ওষুধ কিনে আনছি, ভালো করে লাগিয়ে দেব মাথায়।’ তারপর ও হঠাৎ বলে উঠল, ‘আচ্ছা বাবা, তুমি ড নিজামুদ্দিন বেগ বলে কাউকে চেনো?’

সুরঞ্জন একটু ভ্রূ কুঁচকে বললেন, ‘ঠিক মনে করতে পারছি না। কে বল তো?’

রুদ্র বলল, ‘আগ্রার এক কলেজের প্রফেসর। এক মাস ধরে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওঁকে, এখানকার সব কাগজেই বেরিয়েছিল খবরটা। একা লোক, প্রথমে কেউ বুঝতেও পারেনি, তাই ভাবলাম, তুমি চেনো কি না!’

সুরঞ্জন একটু অবাক হয়ে বললেন, ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? ভদ্রলোক সুস্থ তো?’

পূরবী মুখ টিপে চোখের ইশারা করলেন রুদ্রর দিকে চেয়ে, ভাবখানা এমন, দেখ আমি বলেছিলাম ইতিহাসের লোক মানেই পাগল টাইপ!

সুরঞ্জন সেটা ধরতে পেরে সঙ্গেসঙ্গে বললেন, ‘না না, আমি বলতে চাইছি, ভদ্রলোকের শরীর-টরীর ঠিক ছিল তো? বয়সের ভারে কোথাও পড়ে গিয়ে চোট-টোট লাগে যদি!’

রুদ্র মাথা নাড়ল, ‘অসুস্থ বলে তো তেমন কিছু লেখেনি। আর বয়সও খুব বেশি নয়, পঞ্চান্ন না কত। সম্প্রতি কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, তারপরই এই ব্যাপার। কী যে সব দিনকাল পড়েছে! তোমাকে পরে সব ডিটেইলে বলছি।’

এরপর রুদ্রর রান্নার ছেলেটা এসে পড়তে আড্ডা ভেঙে গেল। পূরবী ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ছেলেটার সঙ্গে রান্নাঘরে গিয়ে লেগে পড়লেন তদারকিতে। রুদ্র যতই ওর রান্নার দরজা সার্টিফিকেট দিক, পূরবী ভালো করে হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে খুঁটিনাটি শেখাতে লাগলেন তাকে।

সুরঞ্জন আরও দু-একবার চেষ্টা করলেন অঘোরেশের ফোনে, কিন্তু পেলেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *