১৩
অঘোরেশ এবার উত্তেজিত হয়ে আর জাপটানোর দিকে গেলেন না, উঠে দাঁড়িয়ে সটান সুরঞ্জনকে কোলে তুলে নিলেন। গোটা প্রথম শ্রেণির কামরার মানুষজন থেকে শুরু করে হোস্টেসরা পর্যন্ত হাঁ করে এদিকে চেয়ে। উলটোদিকে পূরবী এতটাই অবাক হয়ে গেছেন কোনো কিছু অভিব্যক্ত করতেও সম্ভবত ভুলে গেছেন।
সুরঞ্জনের সাংঘাতিক অপ্রস্তুত লাগলেও তিনি বাধা দিলেন না। কারণ তিনি খুব ভালো করে জানেন এখন বাধা দিলে অঘোরেশ আরও মজা পেয়ে নামাবেই না, করেই যাবে এরকম। তার চেয়ে চুপচাপ থাকলে বরং নিজে থেকেই নামিয়ে দেবে।
ঠিক সেটাই হল। মিনিট দুয়েক বাদে সুরঞ্জন হাঁফ ছেড়ে নিজের সিটে বসতে পারলেন। তবে খারাপ তাঁর নিজেরও লাগছে না। দিল্লি থেকে আগ্রা যাওয়ার পথে চল্লিশ বছরের পুরোনো রুমমেটের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে কারুরই খারাপ লাগে না, বরং নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মন।
কলকাতা থেকে ইতিহাস নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করে যখন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সুরঞ্জন পড়তে গেছিলেন, মাস্টার্সের দুটো বছর অঘোরেশ ছিল ওঁর রুমমেট। সুরঞ্জনের হঠাৎ মনে পড়ে গেল প্রথম দিনের আলাপটা।
সুরঞ্জন বরাবরই মিতবাক, সেই প্রথম বাড়ি ছেড়ে অতদূর গিয়ে একা একা জীবন শুরু করা, স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশি চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু অঘোরেশ প্রথম সাত-আট দিনের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিছুটা ওর টকটকে ফর্সা রং, লম্বা চেহারা, যা ভিড়ের মধ্যেও আলাদা করে চোখে পড়বেই, আর বাকিটা ওর দিলখোলা মেজাজের জন্য।
প্রথম দিনেই আলাপ পরিচয় হওয়ার সময় অঘোরেশ হাসতে হাসতে জানিয়েছিল, ‘মেরা নাম অঘোরেশ ভাট। ইয়ে অঘোরেশ কা মতলব কেয়া হ্যায় পতা হ্যায় তুঝে…?’
কারুর সঙ্গে আলাপের প্রথম পর্বেই অঘোরেশ বেশ গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করত, শিবের এক অবতার যিনি নাকি কুচকুচে কালোরঙা শরীর নিয়ে ধ্যানরত ব্রহ্মাকে দেখা দিয়েছিলেন, তাঁকেই বলা হয় অঘোরশিব বা অঘোরেশ। আর এই নাম নিয়ে অঘোরেশের গর্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। গায়ের রং তার ধবধবে ফর্সা হলেও ওই নামকরণ সার্থক করার জন্য সে সবসময় কালো রঙের জামাকাপড় পরত।
যতদূর মনে পড়ছে, অঘোরেশ এসেছিল জম্মু কাশ্মীরের কোনো এক মফস্বল থেকে। তারও সাবজেক্ট ছিল ইতিহাস। খাঁটি কাশ্মীরি পণ্ডিত বংশের ছেলে ছিল সে। সুরঞ্জন বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতেন, সারাক্ষণ ওই নিয়েই মেতে থাকতেন বলে অঘোরেশ ওঁকে মজা করে ডাকত লিটল বুদ্ধা। তখন সারা ভারত ফুটবলার পেলের জ্বরে ভুগছে, অঘোরেশ নিজেও পেলের ভক্ত ছিল। তাই সারা কলেজ অঘোরেশের এই কালো প্রীতির জন্য পেলের নামে নাম দিয়েছিল, ব্ল্যাক পার্ল।
মাস্টার্সের দুটো বছর এক ছাদের তলায় কাটালেও তারপর আর বিশেষ যোগাযোগ ছিল না। সুরঞ্জন বাইরে চলে যান বৌদ্ধ ধর্মের ওপর পিএইচ ডি করতে। কিছু বছর বাদে কার কাছে বোধ হয় একবার শুনেছিলেন যে অঘোরেশ উত্তর ভারতেরই কোনো কলেজে পড়াতে ঢুকেছে। তখন তো এখনকার মতো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রাখার সুযোগ ছিল না। অঘোরেশ স্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় ধীরে ধীরে।
কিন্তু তলিয়ে গেলেও মনের কোথাও তো অঘোরেশ ছিলই, না হলে আজ এত কথা পরপর মনে পড়ে যাবেই-বা কীভাবে! সুরঞ্জন বর্তমানে ফিরে দেখলেন, অঘোরেশ তখনও খেয়ে চলেছে আর মিটিমিটি হেসে চলেছে।
সুরঞ্জন পূরবীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে উদ্যত হলেন, ‘অঘোরেশ। আমার জে এন ইউ-র রুমমেট। আমরা দু-বছর একসঙ্গে কাটিয়েছি।’
প্রাথমিক নমস্কার বিনিময় মিটে গেলে অঘোরেশ তাঁর দাড়িগোঁফের জঙ্গলের মধ্যিখানে হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘তারপর, লিটল বুদ্ধা? হঠাৎ এদিকে কী মনে করে?’
সুরঞ্জনের বেশ ভালো লাগছিল, কিন্তু এই প্রশ্নে একটু সিটিয়ে গেলেন। অঘোরেশের সঙ্গে চার দশক কোনো যোগাযোগ নেই, ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুরঞ্জনের জীবনের ভুটান এপিসোড ও জানে না। বলবেন কি নিজে থেকে? পরক্ষণেই ভাবলেন, নাহ! থাক। সময় এককালের রুমমেটকে এখন অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে, এসব বলে আর লাভ কী! এই তো ঘণ্টা দেড়েকের গল্পগুজব, তারপর যে যার পথে হাঁটা দেবেন আবার।
সুরঞ্জন অল্প হেসে বললেন, ‘আমি তো আর্কিয়োলজিকাল সার্ভেতে ছিলাম। অনেক বনের মোষ চরিয়ে সেসব পাট চুকিয়ে এখন ঘরের ছেলে ঘরেই। খাইদাই, বই পড়ি। আগ্রায় মেয়ের কাছে যাচ্ছি। মেয়ে ব্যাঙ্কে চাকরি করে, এখন ওখানে পোস্টিং। তুই?’
অঘোরেশ দু-হাত উলটে বললেন, ‘আমিও তো যে গোয়ালে ছিলাম সেই গোয়ালেই এখনও ঘাস খাচ্ছি।’
দশ পনেরো মিনিটের মধ্যেই আড্ডা বেশ জমে উঠল। অঘোরেশ একটু ছিটগ্রস্ত বরাবরই ছিলেন। সুরঞ্জনের যেখানে বিষয় ছিল বৌদ্ধ ধর্ম, সেখানে অঘোরেশ সারাক্ষণ মেডিয়েভাল ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি অর্থাৎ ভারতের মধ্যযুগের ইতিহাস নিয়েই পড়ে থাকতেন বেশি, সেটা সুরঞ্জনের এখনও মনে আছে। পরে ওই বিষয়েই এগিয়েছেন অঘোরেশ। এখন আগ্রা ইউনিভার্সিটিতে পড়ান। তবে হয়েই এল, আর দু-বছর বাদেই অবসর। আগ্রাতেই সেটল করে গেছেন, তবে মাঝেমধ্যেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন এদিক সেদিক হঠাৎ হঠাৎ। জামাকাপড়ের তোয়াক্কা কোনোদিনও করতেন না, এখন তো ছেড়েই দিয়েছেন।
সুরঞ্জন কফির কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোর শ্রীনগরের বাড়ির কী খবর? বাবা মা? তোর একটা ভাই ছিল না?’
অঘোরেশ একটু থেমে বললেন, ‘শ্রীনগরে তো আমাদের বাড়ি ছিল না। কুপওয়ারার লোলাব ভ্যালিতে থাকতাম আমরা। সেটা শ্রীনগর থেকে অনেকটা দূর।’
সুরঞ্জন বলল, ‘ওই হল। ওখানে কে কে আছেন এখন?’
অঘোরেশের মনে হয় খুব সর্দি হয়েছে। প্রায় বুক অবধি নেমে আসা দাড়ি গোঁফের মধ্যে মরুভূমির বুকে জেগে থাকা গাছের মতো বেরিয়ে থাকা নাক চেপে ধরে মাঝেমাঝেই হাঁচছেন। এখনও জোরে একবার নাক টেনে বললেন, ‘বাবা মারা গেছেন। মা, ভাই আছে। ভাই ওখানেই হোটেলের ব্যাবসা খুলেছে।’ তারপর একটু থেমে যোগ করলেন, ‘আসলে, আমি অনেকদিন হল ওদিককার খোঁজ নেওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এদিকের কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত, যাওয়াও হয়নি অনেকদিন। আগ্রায় আমি আর আমার বউ থাকি।’
সুরঞ্জন জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলেমেয়ে ক-টা তোর?’
অঘোরেশ হাঁচতে হাঁচতে ইশারায় হাতটা নাড়ালেন, ‘নেই।’
কথায় কথায় ট্রেন আগ্রা শহরে ঢুকে পড়েছে বেশ কিছুক্ষণ হল। উত্তর ভারতীয় অন্যান্য পুরোনো শহর, যেমন লখনৌ, বেনারসের মতো এখানেও অন্তত রেললাইনের আশপাশে ইতিহাসের কোনো ছিটেফোঁটা নেই, জানলা দিয়ে দেখতে দেখতে ভাবছিলেন পূরবী। সেই চওড়া চওড়া রাস্তা, মানুষজন হাঁটছে, দোকানপাট, একদমই নর্মাল। পরক্ষণেই ভাবলেন, মুঘল স্থাপত্যের শহর বলে কি এখানকার মানুষজন কাজকর্ম করবে না নাকি! না, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হবে না! নিজের ছেলেমানুষি চিন্তাভাবনায় নিজেরই হাসি এল পূরবীর।
অনেক দূরে তাকালে হয়তো মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে কিছু বাড়ি চোখে পড়ে, কিন্তু চারদিকেই এখন এত বিশ্বায়নের সৌজন্যে বিজ্ঞাপন, শপিং মলের ছড়াছড়ি যে আগ্রা মানেই যে ঐতিহাসিক ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার সঙ্গে কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না পূরবী। সুরঞ্জন আগে বহুবার এলেও তাঁর এই প্রথমবার। এমনিতেই আগ্রায় চলে আসা ইস্তক রুদ্র উইকএন্ড হলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে ক্যামেরা গলায়, ওর মুখ থেকে শুনে শুনে তাজমহল ছাড়াও আগ্রা কোর্ট, ফতেপুর সিক্রি, আকবরের সমাধি সিকান্দ্রা, সব মুখস্থ হয়ে গেছে পূরবীর। রুদ্রর অ্যাপার্টমেন্টটাও নাকি বেশ ভালো জায়গায়, সব কিছুই ওখান থেকে মোটামুটি কছে পিঠে।
পূরবী রুদ্রকে আরেকবার ফোনে চেষ্টা করলেন, কিন্তু বেজে বেজে কেটে গেল। তিনি সুরঞ্জনের দিকে তাকালেন। পুরোনো বন্ধু পেয়ে বেশ খুশি হয়ে পড়েছেন সুরঞ্জন, বোঝা যাচ্ছে। তবে কথায় আছে না, ঢেঁকি স্বর্গের গেলেও ধান ভানে, দুটো ইতিহাসের লোক যেই এক হয়েছেন, ঘুরেফিরে সেই নিজেদের রিসার্চের বিষয় নিয়েই মেতে উঠেছেন। এই অঘোরেশ ভদ্রলোককে ট্রেনে ওঠার সময় যতটা অদ্ভুত লেগেছিল এখন আর ততটা লাগছে না। তবে একটু বোহেমিয়ান টাইপ, সন্দেহ নেই।
চোখাচোখি হতে পূরবী হাসলেন, বললেন, ‘আগ্রায় আমরা বেশ কিছুদিন থাকব। আপনি আসবেন আমাদের বাড়িতে।’
অঘোরেশ আবার দরাজ গলায় হেসে বললেন, ‘সে আর বলতে! লিটল বুদ্ধা আমায় আপনার মেয়ের ঠিকানা দিয়ে দিয়েছে অলরেডি, দেখবেন কোনদিন হাজির হয়ে গেছি। তারপর এত জ্বালাব যে বিরক্ত হয়ে যাবেন। হা হা হা!’
ট্রেন গন্তব্যে ঢোকার পরে প্ল্যাটফর্ম আর ট্রেন, দুটোতেই একটা সাময়িক ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়, লোকজনের হইচই, লাগেজ নামানো, কুলিদের হাঁকডাক, সব মিলিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে জায়গাটা।
ওঁরা অবশ্য তাড়াহুড়ো করলেন না। ট্রেনের এটাই লাস্ট স্টপেজ। সুতরাং তাড়াতাড়ির কিছু নেই। মোটামুটি ভিড়টা একটু থিতিয়ে যেতে নিজেদের লাগেজগুলো ঠিকমতো গুছিয়ে ট্রেন থেকে নামলেন ওঁরা।
অঘোরেশ তাঁর সেই নোংরা রুকস্যাকটা পিঠে চাপিয়ে রাজেশ খান্নার সিনেমার আদলে সুর করে বললেন, ‘আচ্ছা! তো হাম চলতে হ্যায়!’
সুরঞ্জন হেসে বললেন, ‘খুব শিগগিরি দেখা করব কিন্তু! তোর রিসার্চের বিষয়টা দারুণ ইন্টারেস্টিং। অন্তত আমার তো মনে হয় না, শাজাহানের সময়ের পিনাল কোড নিয়ে তেমন ভালো কাজ কেউ করেছে। ইন ফ্যাক্ট, এটা একটা পুরোনো অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতের স্বর্ণযুগকে দেখা, তাই না!’
অঘোরেশের মুখে একটা ব্যঙ্গাত্মক হাসি ভেসে উঠল, ‘স্বর্ণযুগ! হুঁঃ! ওটা পুরোপুরি কিছু ওই সময়ের হিস্টোরিয়ানদের বিকৃত করে দেখানো একটা মিথ। পিটার মান্ডির নাম শুনেছিস?’
পূরবী একটু অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন, রুদ্রকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, খুঁজতে হবে। এদিকে এঁদের কথা আর শেষ হচ্ছে না। তিনি সুরঞ্জনের দিকে তাকিয়ে মৃদু একটা ইশারা করলেন চোখ দিয়ে।
সুরঞ্জন বুঝতে পেরে গল্পে ইতি টানার জন্য বললেন, ‘শোন না, মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। তুই চল না, আলাপ করিয়ে দেব’খন।’
অঘোরেশ ইঙ্গিতটাকে সম্ভবত বুঝতে পারলেন না, পকেট থেকে একটা নস্যি জাতীয় কিছু বের করে হাতের তেলোয় ডলতে ডলতে বললেন, ‘পিটার মান্ডি ছিল একটা ব্রিটিশ ব্যবসায়ী, শাজাহানের রাজত্বের সময় আগ্রায় এসে ও বছরখানেক ছিল, ইন ফ্যাক্ট মুমতাজ মারা যাওয়ার ঠিক এক বছর বাদেই। ওর একটা ভালো বই আছে ইটিনেরারিয়াম মান্ডি নামে, শাজাহানের মাইনে করা স্তাবকদের লেখার থেকে যেটা অনেকটাই আলাদা আর নিরপেক্ষ। ওটা পড়লে বুঝতে পারবি ওই সময় কী সাংঘাতিক দুর্ভিক্ষ আর মুদ্রাস্ফীতিতে ছেয়ে গিয়েছিল দেশ। জায়গায় জায়গায় বিদ্রোহ, লুঠপাট, এমনকী বাজারে খাসির জায়গায় কুকুরের মাংস পর্যন্ত মিশিয়ে…।’
পূরবী ভেতরে ভেতরে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিলেন, একে এতকাল মেয়েটাকে চোখের দেখা দেখেননি, আর এ কিছুতেই থামছে না।
এবার তিনি বলেই ফেললেন, ‘অঘোরেশজি, আমাদের মেয়ে ওয়েট করছে তো, আমরা একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি কোথায় ও দাঁড়িয়ে আছে। আপনি একদিন আসুন আমাদের বাড়িতে, তখন গল্প হবে না হয়, কেমন?’
অঘোরেশ কোথায় বোধ হয় হারিয়ে গেছিলেন, পূরবীর কথায় একটু থতোমতো খেয়ে গেলেন। ওদের দু-জনের মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হাতটা একটু নেড়ে সুরঞ্জনকে বললেন, ‘ফোন করব লিটল বুদ্ধা! একটা জরুরি ব্যাপারে আলোচনা আছে অ্যান্ড ইউ আর দ্য রাইট পার্সন ফর দ্যাট! আমার তোকে অনেক কিছু বলার আছে। ফোন করব শিগগিরি!’ তারপর আর কিছু শোনার অপেক্ষা না করেই উলটোদিকে হাঁটতে শুরু করলেন, একবার পেছন ফিরেও দেখলেন না। অদূরেই একটা ওভারব্রিজে উঠে পড়ার পর আর দেখা গেল না তাঁকে।
সুরঞ্জনেরও একটু বিরক্তি লাগছিল, প্রায় পনেরো মিনিট হয়ে গেল ট্রেন ঢুকে গেছে স্টেশনে, এখনও রুদ্রর মুখটা দেখেননি। তবু অঘোরেশের এরকম হঠাৎ চলে যাওয়াটায় কেমন খারাপ লাগল।
অবশ্য অঘোরেশ একটু অদ্ভুত চিরকালই। হোস্টেলে থাকার সময়েও হঠাৎ হঠাৎ উধাও হয়ে যেত কাউকে না বলে-কয়ে। প্রথমবার তো দু-রাত পেরিয়ে যাওয়ায় সুরঞ্জন রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়ে হোস্টেল ওয়ার্ডেনকে জানিয়ে ফেলেছিলেন। পরে জানা গেল ও নাকি বাজার করতে গিয়ে হঠাৎ কী খেয়াল চেপেছিল বাস ধরে সটান জয়পুর চলে গিয়েছিল, আম্বের ফোর্ট দেখবে বলে। তারপর থেকে দু-দিন তিনদিন না ফিরলেও সুরঞ্জন আর চাপ নিতেন না।
সুরঞ্জন মনে মনে ঠিক করলেন, এখন তো আছেন এখানে, ফোন করবেন দু-দিন বাদে বেটাকে।