অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২১

২১

অঘোরেশ, রুদ্র আর সুরঞ্জন ঘরের মাঝখানে বসে ছিলেন। রুদ্র চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখছিল। অঘোরেশ ভাট যে একটু অস্বাভাবিক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, চোখের একটু অপ্রকৃতিস্থ দৃষ্টি, বেশভূষা, বাড়ির অবস্থা, ঘরের হতশ্রী অবস্থা দেখলেই আন্দাজ করা যায়। অথচ বাড়িটা এককালে বেশ যত্ন নিয়ে করা হয়েছিল। একতলা হলেও অনেকটা লম্বা জায়গা নিয়ে তৈরি করা, বাগান করার জন্য দু-পাশে অনেকটা করে ফাঁকা জায়গা। এই ডাইনিংটাও বেশ বড়ো। কিন্তু বহুদিনের অযত্নে গোটা পরিবেশটাই যেন কেমন ভূতুড়ে আকার ধারণ করেছে।

আচ্ছা অঘোরেশবাবুর স্ত্রী? তিনিও কি ঘরের একটু যত্ন নিতে পারেন না? নাকি তিনি ভীষণ অসুস্থ, একেবারে শয্যাশায়ী!

যা-ই হয়ে থাকুক, অঘোরেশ এখন কথার ফ্লো-তে আছেন, তাঁকে বাধা না দেওয়াই ভালো।

রুদ্রর মনে হঠাৎ একটা প্রশ্নের উদয় হল, বলল, ‘কিন্তু আমরা যদি আর্কিটেকচার দেখি, তাজমহলের ডিজাইন তো পুরো মুঘল ঘরানারই, হিন্দু মন্দির বা প্রাসাদের মতো তো নয়! মাঝখানে মূল সৌধ, চারপাশে চারটে মিনার।’

‘কে বলছে তোমায় মুঘল ঘরানার?’ অঘোরেশ যেন তেড়েফুঁড়ে উঠলেন, ‘সত্যনারায়ণ পুজোর সময়ে পূজার বেদির চারপাশে চারটে কলাগাছের স্তম্ভ রাখা হয় না? বিয়ের বেদিতেও তো একই স্তম্ভ বানানো হয়। তাহলে এটা মুসলিম রীতি হল কীভাবে?’

রুদ্র বলল, ‘কিন্তু ভেতরটা…!’

‘তাজমহলের ভেতরে যে বড়ো ঘরটা রয়েছে, তাতে মোট আটটা কোণ। আটটা কোণ, তার সঙ্গে আকাশ আর পাতাল মিলিয়ে মোট দশ দিক, এটা হিন্দু কনসেপ্ট নিশ্চয়ই জানো। প্রাচীন শহর অযোধ্যাও আটকোণের ছিল। এই আটকোণের আর্কিটেকচারকে প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে বলা হত হেমকূট শৈলী।’

বিস্ময়ে রুদ্রর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। সুরঞ্জন বললেন, ‘কিন্তু, দিল্লিতে হুমায়ুনের কবরের চারপাশেও তো চারটে স্তম্ভ!’

‘হ্যাঁ তার কারণ মুঘল আমলের বেশিরভাগ স্থাপত্যই জোর করে অধিকৃত রাজপুত প্রাসাদ অথবা মন্দির। এগুলো তার জলজ্যান্ত যুক্তি আর প্রমাণ। ইতিহাসও তো এভাবেই লেখা হয়। তাজমহলের মেঝের টালির নকশাটা খেয়াল করেছ? প্রতিটা ষড়কোণীয় নক্ষত্র, নক্ষত্র শিব এবং শক্তির মিলনকে বোঝায়।’

রুদ্রর মুখ দিয়ে কথা সরছিল না। তাজমহল মুঘল স্থাপত্য হোক, বা হিন্দু মন্দির, এই ভদ্রলোক তো প্রচুর গবেষণা করেছেন ব্যাপারটা নিয়ে! কিন্তু তাই বলে সরাসরি নাশকতার দিকে চলে যাবেন?

ও আর দেরি করতে চাইল না, পরিষ্কার বলল, ‘মি ভাট, আপনি আমার কয়েকটা কথার জবাব দেবেন? যদি ঠিকমতো উত্তর দেন, আপনারই লাভ।’

‘কী?’ ইতিহাসচর্চায় বাধা পড়ায় অঘোরেশ বেশ বিরক্ত।

‘আপনি কি এমন কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত যারা আগামীকাল তাজমহল উড়িয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছে?’ ও সোজা অঘোরেশের চোখের দিকে তাকাল।

‘তাজমহল উড়িয়ে দেওয়া!’ অঘোরেশ অবাক, ‘মানে?’

রুদ্র আর দেরি করল না। ওর মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জাগছে। এই আপাতভোলা ইতিহাসপ্রিয় খ্যাপাটে মানুষটার সব কথা আগে ভালো করে শোনা দরকার, সেটা পুলিশি ঝঞ্ঝাট এলে সম্ভব নয়। ও পুলিশ দপ্তরে উড়ো ফোন, ব্যাঙ্কে অঘোরেশের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা, সবশেষে আগ্রা শহরে ছেয়ে যাওয়া পোস্টার, সব একে একে খুলে বলল অঘোরেশকে।

‘আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!’ অঘোরেশের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল না তিনি মিথ্যা বলছেন, ‘আমি চাই যে তাজমহলের সত্যিটা উন্মোচন হোক, কিন্তু আমি তো কোনো পোস্টার বা প্ল্যান কিছু…!’

রুদ্র বাধা দিল, সময় এখন খুব কম, ‘আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এত টাকা এল, আপনি জানেন না?’

‘না তো!’

‘আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাঙ্ক ডিটেইলস সম্প্রতি কাউকে দিয়েছিলেন?’

অঘোরেশ এবার একটু আমতা আমতা করতে থাকলেন, ‘মাসখানেক আগে এই বিষয়ে একটা আর্টিকল লেখার কথা ছিল বিদেশি একটা জার্নালে। নিজামুদ্দিন লেখার পর খুব ঝামেলা হল। তাই বিদেশে পাঠাব ভেবেছিলাম। তারপরেই…।’

‘এই যে বললেন আপনি নিজামুদ্দিন বেগকে চেনেন না?’ রুদ্র তীক্ষ্ন গলায় বলল।

অঘোরেশ একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘ওকে চিনি বললে আমার ওপরেও হামলা হতে পারে, আমারও তো রিসার্চের বিষয় একই! তাই…।’

অঘোরেশের কথার মাঝেই একটা ঝুপ করে কিছু ফেলার শব্দ হল, বাড়ির পেছনদিকে, সঙ্গেসঙ্গেই রুদ্রর মনে হল একটা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে যেন বেরিয়ে গেল। ও বলল, ‘একটা কোনো শব্দ পেলেন?’

সুরঞ্জন বলল, ‘হ্যাঁ, আমি পেয়েছি। ছাদে কেউ কিছু ফেলল কি?’

‘না!’ রুদ্র অঘোরেশের দিকে তাকাল, ‘বাড়ির পেছনদিক দিয়ে কি কোনোভাবে ঢোকা যায় বাড়িতে?’

‘হ্যাঁ।’ অঘোরেশ বললেন, ‘কিন্তু সেই দরজা তো বন্ধ! তবে পেছনদিকে বারান্দা আছে, সেটার অর্ধেক গ্রিল দেওয়া।’

রুদ্র এগোতে উদ্যত হল, ‘আমি একবার গিয়ে দেখছি।’ ও ভেতরে ঢুকতে যেতেই অঘোরেশ হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘সোজা যাবে, সোজা গিয়ে ডান দিকে বারান্দা। ঘরের দরজা বন্ধ আছে, খুলবে না।’ সামান্য থেমে বললেন, ‘আমার স্ত্রী ঘুমোচ্ছে, ওকে বিরক্ত কোরো না।’

রুদ্র ততক্ষণে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেছে, লম্বা করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় দুটো বন্ধ ঘরের দরজা পরপর পেরিয়ে গেল ও, পুরো বাড়িটাতেই একটা বিশ্রী বোটকা গন্ধ। অঘোরেশের স্ত্রী যদি এতই অসুস্থ হন, এত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে তো ওঁর শরীর আরও খারাপ হয়ে যাবে।

রুদ্র সোজা গিয়ে ডান দিকে বেঁকতেই ধুলোয় ভরা বারান্দায় গিয়ে পড়ল। পায়ে এত কিচকিচে ধুলো লাগছে, মনে হচ্ছে যেন একবছর কেউ এই বারান্দায় পা দেয়নি। সাবধানে এগিয়ে এসে টিমটিমে রাস্তার আলোয় মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালল।

এই জায়গাটা এতটাই ফাঁকা, যে ঘন জঙ্গলের মতো কালো হয়ে রয়েছে। সামনের একটা অসমাপ্ত বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে কঙ্কালের মতো, তার গা দিয়ে মোটা গাছ বেরিয়েছে এদিক-ওদিক।

বারান্দার সামনে বুক অবধি গ্রিল দেওয়া, বাকিটা ফাঁকা, সামনে আগাছায় ভরা বাগান, তারপর পাঁচিল। রুদ্র ধুলোর মোটা আস্তরণ পড়ে যাওয়া রেলিং বেয়ে ঝুঁকে পড়ল, বাগানে কিচ্ছু নেই, অযত্নের গাছগুলো বেড়ে বিশ্রী রূপ দিয়েছে, সাপখোপ থাকাও বিচিত্র নয়। আরেকটু সরে দেখতে যেতেই পায়ে কিছু একটা ঠেকল। মোবাইল তাক করে দেখে, একটা বস্তা।

ওর ভ্রূ কুঁচকে গেল, মোবাইলের জোরালো ফ্ল্যাশে দেখতে লাগল, বস্তাটা ধুলোপড়া মেঝেতে পড়ে মেঝের ধুলোর আস্তরণটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে, অথচ বস্তার গায়ে কোনো ধুলো নেই। ও নিঃসন্দেহে হল কিছুক্ষণ আগেও এই বস্তাটা এখানে ছিল না।

একটু ইতস্তত করে রুদ্র ভাবল ওর কি হাত দেওয়া উচিত হবে, না, পুলিশ আসা অবধি অপেক্ষা করবে? অপেক্ষা করাই উচিত, কিন্তু বস্তায় কী আছে জানার এক অদম্য কৌতূহল ওকে পেয়ে বসছে। আলগোছে ও বস্তার গায়ে হাত দিল, শক্ত কোনো জিনিস ওর হাতে ঠেকল।

ও আর দেরি করল না, বস্তাটাকে দু-হাতে চেপে ধরে বাইরের ঘরে নিয়ে এল। বেশ ভারী, বইপত্রের রাশের সামনে বস্তাটাকে ফেলে ও হাঁপাতে লাগল।

‘কী এটা?’ অঘোরেশ এবার ওঁর দিকে তাকালেন।

‘এখুনি বাইরের বারান্দায় এটা কেউ ফেলে গেছে।’ রুদ্র বস্তার শক্ত গিঁটটা খুলতে চেষ্টা করছিল।

‘কী আছে না জেনেই খুলছিস?’ সুরঞ্জন বলে উঠলেন।

‘কিছু করার নেই।’ রুদ্র ঝড়ের গতিতে বস্তাটা খুলে ফেলে হাত ঢুকিয়েই আঁতকে উঠল, ‘পিস্তল!’

‘মানে?’ অঘোরেশ বলে উঠলেন।

রুদ্র মুখে কিছু না বলে যে জিনিসটা বস্তা থেকে বের করে আনল, সেটা দেখে সুরঞ্জন আঁতকে উঠে অঘোরেশের দিকে তাকালেন। একটা কালো পিস্তল। একটা বাচ্চা ছেলেও দেখে বুঝতে পারবে আর যা-ই হোক ওটা খেলনা নয়।

একটা নয়, পুরো বস্তাটাই ভরা রাশি রাশি পিস্তল আর ছোটো ছোটো এক ধরনের বোতল আকারের জিনিসে ভরা।

‘বন্দুক কে রেখে গেল?’ অঘোরেশ উঠে দাঁড়ালেন, এবার তাঁর গলায় সত্যিই ভয়ের ছাপ।

রুদ্র একঝলক অঘোরেশের দিকে তাকাল, তারপর তাকাল সুরঞ্জনের দিকে। তারপরেই উঠে দাঁড়াল, ‘আঙ্কল, আপনাকে এক্ষুনি আমাদের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে হবে। আপনি বুঝতেও পারছেন না, কত বড়ো বিপদ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য!’

‘মানে! কোথায় যাব? এটা আমার বাড়ি!’ অঘোরেশ যেন কথা খুঁজে পাচ্ছেন না।

‘আপনি বুঝতে পারছেন না, যেকোনো মুহূর্তে আপনার ওপর হামলা হতে পারে। তা ছাড়া শুধু আগ্রা নয়, দিল্লি থেকে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির এজেন্ট চলে এসেছে আপনাকে ধরতে।’ রুদ্র বোঝাবার চেষ্টা করল।

‘কেন? কী করেছি আমি!’ অঘোরেশ অস্ফুটে বললেন।

রুদ্র এক মুহূর্ত চিন্তা করল, ‘আপনি এক কাজ করুন, আমাদের বাড়িতে চলুন।’

‘কিন্তু পুলিশ যদি জানতে পারে আমরা ওকে লুকিয়েছি, তখন তো আমাদেরও সন্দেহ করবে!’ সুরঞ্জন বললেন।

রুদ্র বাধা দিল, ‘সেটা পরের কথা। আপাতত অঘোরেশজিকে লুকিয়ে ফেলা খুব জরুরি।’

অঘোরেশ বিমূঢ় মুখে সামনের দরজার দিকে এগোচ্ছিলেন, রুদ্র হাঁ হাঁ করে উঠল, ‘ওদিকে না। বারান্দার পাশে যে খিড়কির দরজা, সেটা দিয়ে বেরিয়ে চলুন। সামনের দিকে যাবেন না।’

অঘোরেশ বাদশাহনামার পাণ্ডুলিপিটা একটা ঝোলায় পুরে ফেললেন, তারপর খিড়কির দিকে চলে গেলেন। বেরোনোর আগে ভেতরের ঘরের দিকে তাকালেন, ‘আ-আমার স্ত্রী…!’

‘কিছু ভাববেন না। আমি দেখছি। আপনি সোজা গিয়ে বড়োরাস্তার মোড়ে দাঁড়ান, আমি আসছি।’ রুদ্র বলতে গেল, কিন্তু অবাক হয়ে দেখল, ওর উত্তরের অপেক্ষা না করেই অঘোরেশ খিড়কি দিয়ে বেরিয়ে জঙ্গুলে বাগানের মধ্য দিয়ে গিয়ে ছোটো পাঁচিলের গেট খুলে বেরিয়ে গেলেন। সামনের রাস্তাটা একেবারে নির্জন, তবে আরেকটু হেঁটে নিশ্চয়ই অটো বা রিকশা জাতীয় কিছু পাওয়া যাবে।

রুদ্র ছুটে চলে এল ডাইনিং-এ, এসে দেখল সুরঞ্জন বেশ রাগত মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন, ‘তুই এটা কী করলি?’

‘কেন?’ রুদ্র বস্তার গিঁটটা ভালো করে বাঁধছিল।

‘তুই নিজেই বলছিস পুলিশ অঘোরেশকে খুঁজছে। তাজমহল উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছক যে করেছে, যার বাড়ি থেকে এতগুলো আর্মস পাওয়া যাচ্ছে, তাকে আশ্রয় দেওয়ার ফল কী হতে পারে ভেবে দেখেছিস? আর এরকম একটা ক্রিমিনালকে আশ্রয় দেবই-বা কেন? এটা তো অন্যায়!’ সুরঞ্জন রীতিমতো রেগে গেলেন।

‘আমি পরে তোমায় সব বলছি।’ রুদ্র কথাটা শেষ করতে পারল না, তার আগেই বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ পেল। ও এক হাতে বস্তাটা নিল, অন্য হাতে বাবাকে টানল, ‘শিগগিরি চলো, পেছন দিক দিয়ে বেরোতে হবে!’

‘এভাবে পেছন দিক দিয়ে, তুই কী করছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!’ হতবাক সুরঞ্জন দেখলেন রুদ্র বস্তাটা বারান্দার ধুলোর মধ্যে ফেলে দিল, তারপর বস্তাটাকে এদিক-ওদিক করে ধুলো মাখিয়ে ফেলল। তারপর সুরঞ্জনকে নিয়ে বেরিয়ে এল বাইরে, ‘সাবধানে এসো, পায়ে কিছু ফুটে না যায়।’

প্রায় দশ মিনিট পরে রুদ্র আর সুরঞ্জন যখন বড়োরাস্তার মোড়ে পৌঁছোলেন, তখন অঘোরেশ একটা লস্যির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ওদের দেখে এগিয়ে এলেন।

পাশে একটা অটো দাঁড়িয়ে ছিল, রুদ্র ছুটে গেল সেদিকে, ‘ভাইয়া, ফতেহাবাদ যানা হ্যায়!’

অটোওয়ালা ঘুমন্ত চোখে হাত নাড়ল, ‘নেহি যায়গা! অফ ডিউটি হুঁ।’

রুদ্র বিব্রত মুখে পেছনদিকে তাকাল, অঘোরেশের বাড়ির দিকটা এত অন্ধকার, কেউ আসছে কি না বোঝার উপায় নেই! ‘ভাইয়া, প্লিজ চলিয়ে না।’ তারপর একটু থেমে বলল, ‘বহত জলদি হ্যায়!’

‘পাঁচশো টাকা লাগবে।’ অটোওয়ালা জড়ানো হিন্দিতে সাফ জানিয়ে দিল, ‘মিটার অন করতে পারব না।’

রুদ্র দাঁতে দাঁত চিপল। এই হল আগ্রার অটো, সত্তর টাকা হওয়ার কথা নয়, হাঁকছে পাঁচশো। কিন্তু আর কোনো উপায়ও নেই। কাছেপিঠে অন্য কোনো গাড়ি দেখা যাচ্ছে না, ও সুরঞ্জন আর অঘোরেশকে ডেকে অটোতে উঠিয়ে দিল, ‘চারশো দেঙ্গে, ঠিক হ্যায়? চলিয়ে!’

নিঝুম অন্ধকারে আর্মি ক্যান্টনমেন্টের পাশের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে একটা বিকট শব্দ করে স্টার্ট নিয়ে অটোটা চলতে শুরু করল।

বাড়ির সামনের দিকের লোকটা ততক্ষণে মুহুর্মুহু কলিং বেল বাজিয়েও কোনো সাড়া পেয়ে কাউকে একটা ফোন করতে লাগল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *