অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৫

উত্তর ভারতের চরমভাবাপন্ন শহর। গ্রীষ্মে যেমন গরম, শীতে তেমনই হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। বিকেল গড়াতে-না-গড়াতেই অন্ধকার জমাট বাঁধা কুয়াশার মতো ঝুপ করে নেমে আসে শহরের অলিতেগলিতে।

দূরের মসজিদের আজান থেমে গেছে। একে একে দূরের বাজার এলাকায় আলো জ্বলে উঠছে সান্ধ্য পসরার। অদূরেই একটা মুঘল আমলের প্রকাণ্ড বন্ধ দরজার দু-পাশে সেজে উঠেছে আগ্রার বিখ্যাত পেঠা বলে একধরনের মিষ্টির দোকান। কনকনে ঠান্ডাতেও সেখানে লোকজনের ভিড় এখান থেকেই চোখে পড়ছে।

রুদ্রর ঠিক উলটোদিকে পুলিশের দু-জন অফিসার শান্তভাবে বসে আছেন। তাঁদের কফি আর কিছু ভুজিয়া দেওয়া হয়েছে। ধীর লয়ে তাঁরা চুমুক দিচ্ছেন কফির কাপে, যেন বিন্দুমাত্র তাড়াহুড়ো নেই।

একটু পরেই অপেক্ষাকৃত তরুণ যে অফিসারটি, যিনি নিজের পরিচয় দিয়েছেন নাহুম খান নামে, তিনি মিটিমিটি হেসে ঝিলিকভরা চোখে পাক্কা আগ্রা টানের হিন্দিতে বলে উঠলেন, ‘ম্যাডাম, আমরা এসেছি কয়েকটা রুটিন এনক্যোয়ারিতে। কিন্তু আপনাকে এত টেন্সড লাগছে কেন?’

‘আপনাদের জন্য টেন্সড রয়েছি সেটা আপনাকে কে বলল!’ রুদ্র একটা শ্বাস ফেলে মাথার পেছনে হাত দুটোকে রেখে চেয়ারে হেলান দিল, ‘এই ব্যাপারের জন্য আমার হায়ার অথরিটি আমাকে একটু আগেই এক্সপ্ল্যানেশন কল করেছে, টেম্পোরারিলি সাসপেন্ডও করেছে।’

নাহুম খানের মুখ থেকে হাসিটা মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল, সোজা হয়ে বসলেন তিনি, ‘সাসপেন্ড? কেন?’

‘সেটা তো আপনারাই ভালো বলতে পারবেন মি খান। চিঠিতে যা বুঝলাম, আমার ব্রাঞ্চের একজন ছাপোষা কাস্টমারের অ্যাকাউন্টে কাল দেড় কোটি টাকা ঢুকেছে। হেড অফিসের বক্তব্য সেটা দেখেও আমি ভিজিল্যান্সে কেন ইমিডিয়েট জানাইনি।’

‘হ্যাঁ, কিন্তু সেইজন্য তো আপনাকে একটা সিম্পল চার্জশিট দিয়ে ছেড়ে দিতে পারত। সেই শো কজের আপনি উত্তর দিতেন। একদম সরাসরি সাসপেনশন অর্ডার কেন? মানে ওরা কি ধরেই নিয়েছে আপনি নিজে এর জন্য কিছু অন্যায় সুযোগ নিয়েছেন?’

রুদ্র বুঝতে পারল নাহুম খান ইচ্ছে করেই ‘ঘুস’ শব্দটা উচ্চারণ করলেন না।

একপাশে দাঁড়ানো অমিত বলল, ‘স্যার, হেড অফিসে আমার কিছু চেনাজানা আছে, ফোনও করেছিলাম এই ব্যাপারে জানতে। কিন্তু পুলিশ থেকে ব্যাপারটা জানানো হয়েছে ছাড়া আর কিছু জানতে পারলাম না।’

‘যাই হোক, ছাড়ুন!’ রুদ্র প্রিন্টার থেকে একে একে বেরোতে থাকা সব ডকুমেন্ট একজোট করতে লাগল।

পুলিশের কাছে নিজের দুঃখের কথা বলে সমবেদনা পাওয়ার চেষ্টা করে কী লাভ? আপাতত রুদ্রকে সাসপেন্ড করলেও হেড অফিস তিনদিনের মধ্যে ওর বক্তব্য লিখিতভাবে জানতে চেয়েছে, আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগ দিয়েছে, সেই ব্যাপারে বরং ওর ফোকাসড হওয়া উচিত। ও যে লোনের রিকভারিতে গিয়েছিল বলে রিপোর্টটা জেনারেট করতে পারেনি, এটা যে একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল সেটা ওকে ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতেই হবে।

এই পুলিশ অফিসারেরা যা জানতে চান, সব উত্তর দিয়ে এদের জলদি বিদায় করাই ভালো।

আগামী তিনদিন বাবা মা-র সঙ্গে কত ঘোরার প্ল্যান ছিল। সব বারোটা বাজল, রুদ্র আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

সবকটা ডকুমেন্ট ও সামনের দিকে এগিয়ে দিল, ‘এই নিন। অঘোরেশ ভাটের ডিটেইলস। প্যান কার্ড, ভোটার কার্ডের কপিও আছে। আর এইগুলো শেষ ছয় মাসের স্টেটমেন্ট।’

নাহুম খান ডকুমেন্টগুলো গুছিয়ে নিয়ে নিলেন, ‘ওকে ম্যাডাম, আমরা এখন চলে যাচ্ছি। থ্যাঙ্কস ফর দ্য কো-অপারেশন। পরে দরকার পড়লে আবার আসতে হতে পারে।’

রুদ্র মুখে এক চিলতে হাসি ঝুলিয়ে ওদের বিদায় করল। উত্তর ভারতের বেশিরভাগ মানুষই একটু মেজাজি ধরনের হয়, সেটা এই বছরখানেকের অভিজ্ঞতায় ও উপলব্ধি করেছে। পাবলিক সার্ভিসে যুক্ত লোকজন তো আরওই। সেইদিক থেকে এই পুলিশ অফিসার বেশ ব্যতিক্রমী। সাধারণ পুলিশ অবশ্য নন, স্পেশাল সেল না কোথা থেকে এসেছেন বললেন।

ও বেশি সময় নষ্ট করল না, ‘অমিত, তিনদিনের মধ্যে আমাকে এই অভিযোগের বিরুদ্ধে একটা ঠিকমতো উত্তর দিতে হবে, যেটার বেসিসে তদন্ত শুরু হবে। আমার এক্সপ্ল্যানেশনে উপরমহল সন্তুষ্ট হলে সাসপেনশন এখন উঠলেও উঠতে পারে, না হলে এনকোয়্যারি শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে।’ একটুক্ষণের জন্য ও ঠোঁট কামড়াল, ‘পরশু ছাব্বিশ তারিখ প্রজাতন্ত্র দিবসের ছুটি। হিসেবমতো তার মানে একদিন বেশি পাব উত্তর দেওয়ার জন্য।’

যে চেয়ার থেকে একটু আগে নাহুম খান উঠে গেলেন, সেখানেই বসে পড়ল অমিত, ‘তাহলে আপনি বলবেন, আমি টাইপ করব?’

‘এখনই না।’ মাথা নাড়ল রুদ্র, ‘আগে একটু সাজিয়ে নিই মনের মধ্যে। তুমি যাও, বাকি কাজ শেষ করো। আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাব। ভালো লাগছে না।’

অমিত চলে যেতে রুদ্র টেবিলের ওপর থেকে খবরের কাগজটা তুলে নিল। প্রতিদিন বিকেলের চা-টা খাওয়ার সময় ও সেদিনের কাগজটা পড়ে, আজকের তালেগোলে সেই সময় পায়নি। এর মধ্যে আরেক কাপ চা সুরেশ দিয়ে গেছে। রুদ্র চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কাগজ পড়তে লাগল। মনের মধ্যে যতই তোলপাড় হোক, চুপচাপ বসে থাকলে টেনশন আরও বাড়বে।

এটা আগ্রা শহরের স্থানীয় কাগজ, তাই প্রথম পাতাতেই বড়ো বড়ো করে রয়েছে, ‘২৭ জানুয়ারি আগ্রায় হতে চলেছে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন।’ রুদ্র বিশদ পড়ল না। আগ্রার মতো ছোটো শহরে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে চলেছে, এই নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ছোটোবড়ো সব মিডিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর পরিবেশন করে চলেছে। পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে তার বিবরণ। ক-টা দেশ আসছে, কোথায় সেই হেভিওয়েট প্রতিনিধিরা থাকবেন, কী করবেন, কোথায় কোথায় তাঁরা যাবেন, সেই এক খবর।

খবরের কাগজের প্রথম পাতা উলটে ভেতরের পাতায় যেতেই নীচের দিকের একটা খবর ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। কাগজটা ভাঁজ করে ভালো করে ও সেটা পড়তে লাগল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, কমলানগর, আগ্রা-

এক মাস কেটে গেলেও আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড নিজামুদ্দিন বেগ-এর নিজের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার কোনো কিনারা করতে পারল না পুলিশ। অথচ স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে খবর, প্রায়ই গভীর রাতে প্রফেসর বেগ-এর ফাঁকা বাড়িতে দুষ্কৃতিদের আনাগোনা চলছে। প্রফেসরের কোনো খোঁজ না থাকলেও কী উদ্দেশ্যে এই গোপন আনাগোনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রফেসর বেগ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর কিছুদিন সেই বাড়িতে পুলিশি প্রহরা থাকলেও পরে তা তুলে নেওয়া হয়। কমলানগর থানার ওসি মি জগদীশ পাণ্ডে ‘আগ্রা টাইমস’কে জানাচ্ছেন, তাঁরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এই ঘটনার পর পুলিশ প্রহরা সেখানে আবার মোতায়েন করা হবে।

প্রসঙ্গত, প্রফেসর নিজামুদ্দিন বেগ তাজমহল সম্পর্কে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করে কিছুদিন আগে মৌলবাদীদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তাঁর ‘মহাদেব শিব ঘুমোচ্ছেন তাজমহলের অন্দরে- মুসলিমদের চারশো বছরের মিথ্যে এবার উন্মোচিত হোক’ শীর্ষক ধারাবাহিক কলাম প্রকাশিত হচ্ছিল প্রথম সারির এক দৈনিকে, যেখানে তিনি তাঁর গবেষণার ফলে লব্ধ একের পর এক তথ্য দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে তাজমহল পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাজাহান তাঁর মৃতা মহিষীর উদ্দেশে বানাননি, এটা আদতে বহু পুরোনো এক হিন্দু শিব মন্দির, যার নাম ছিল তেজো মহালয়। তাঁর এই ধারাবাহিক প্রবন্ধ শুধু বিদগ্ধ ঐতিহাসিক মহলেই নয়, চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল মৌলবাদীদের মধ্যেও। সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেন এক ব্যক্তি। পশ্চিমে অবস্থিত মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাঁদের পবিত্র স্থানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কলুষিত করা হচ্ছে বলে তাজমহল প্রাঙ্গণেই বিক্ষোভ জানান। নিরুদ্দেশ হওয়ার ঠিক আগের সপ্তাহের কিস্তিতে প্রফেসর বেগ লিখেছিলেন, পরবর্তী সপ্তাহে সবচেয়ে বড়ো প্রমাণটি তিনি জনসমক্ষে আনবেন, প্রমাণ করে দেবেন তাজমহল লুকিয়ে আছে আসলে এক প্রাচীন বৈদিক অঙ্ক, যা এখনও জ্যান্ত। সেটা নিজেই নাকি প্রমাণ করে দেবে শিবমন্দিরের সত্যতা।

এই সংবাদ প্রকাশের পরেই বিক্ষোভ চরমে ওঠে এবং অধ্যাপকের কমলানগরের বাড়িতে হামলা এবং বিক্ষোভ শুরু হয়। একাধিক ইতিহাসবিদও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ড ব্রিজেশ মাথুর বলেন, ‘এইগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃত কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।’ ওই সংবাদপত্রের সম্পাদক লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানান, বিশেষ কারণে ওই ধারাবাহিকটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হামলাকারীরা অধ্যাপকের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে যেতে থাকে, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু এরপরেই প্রফেসর বেগ রহস্যজনকভাবে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। এখনও অবধি তাঁর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি। তাঁকে যে কিডন্যাপ করা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণও পুলিশ পায়নি। এই নিয়ে বিরোধী দল আজ বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখায়।

রুদ্র অন্য খবরে যেতে যেতে ভাবল, প্রফেসর নিরুদ্দেশ, তবু কেন দুষ্কৃতীরা বার বার হামলা চালাচ্ছে বাড়িতে? কীসের সন্ধানে?

ঘণ্টাখানেক বাদে রুদ্র স্কুটিতে করে বাড়ি ফিরছিল।

ঠান্ডা হাওয়া হেলমেট ভেদ করে ভেতরে ঢুকছে, এখানে সবাই গাড়ি চালানোর সময় ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে একধরনের মাস্ক পরে, রুদ্রও সেটাই পরেছিল শুধু চোখগুলো বেরিয়ে ছিল বাইরে।

ক্লান্ত দেহে, অবসাদে ডুবে থাকা মনে ও গাড়ি চালাচ্ছিল।

যে ব্রাঞ্চটাকে এই কয়েক মাস ধরে এত পরিশ্রম করে ও দাঁড় করাল, পুরোনো লোনগুলোর বেশিরভাগই রিকভার করে প্রফিট দেখাল হেড অফিসে, সেই ব্রাঞ্চ থেকেই ও সাসপেন্ড হয়ে গেল? তাও আবার কালো টাকা ঢোকায় মদত দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ, যাতে সত্যিই ওর কোনো দোষ নেই! কিন্তু দুর্নীতির কোনো দাগ একবার কেরিয়ারে লাগলে সেটা উল্কার মতো চারদিকে ছড়িয়ে যায়, অনেক সময় পরে নির্দোষ প্রমাণ হলেও সেটা কিন্তু অত বড়ো খবর হয় না। ইতিমধ্যেই অন্য ব্রাঞ্চে থাকা দু-জন বন্ধু ওকে মেসেজ করেছে খবরের সত্যতা জানতে।

বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোটো রাস্তা থেকে রুদ্র যমুনা নদীর ওপর ব্রিজে উঠল। কী করতে বাড়ি ছেড়ে, কাছের মানুষদের ছেড়ে ও এখানে পড়ে আছে? রোজকার অভ্যাসমতো ওপারের তাজমহলটার দিকে একবার তাকাল, যমুনা নদীর তীরে রাজেন্দ্রাণীর মতো অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে অস্পষ্ট ওপরের গম্বুজ আর চারপাশের মিনারগুলো।

ওর হঠাৎ মনে পড়ল কাগজের লাইনটা, তাজমহলে লুকিয়ে আছে একটা জ্যান্ত অঙ্ক।

এর মানে কী? অঙ্ক কী করে জ্যান্ত হয়?

অন্যদিন মুগ্ধ চোখে দেখে, আজ বিষণ্ণভরা মনে রুদ্র ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেল সামনের দিকে।

তাজমহলের একদম উলটোদিকে, অর্থাৎ যমুনা নদীর অন্য পাড়ের এক পরিত্যক্ত বাগানে তখন অন্ধকারের মধ্যে বিষম ব্যস্ততা। একদল শ্রমিক তখন চূড়ান্ত গোপনীয়তায় কিছু একটা কাজে ব্যস্ত। বাগান অবশ্য নামেই, শতাধিক বছরের না কাটা এলোমেলো গাছে এটা একটা ছোটোখাটো জঙ্গল হয়ে উঠেছে। বড়ো বড়ো আগাছার মধ্যে সবাই আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে কিছু। যেমনটা তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের হাতে শাবল, মাটি খোঁড়ার ছোটোবড়ো জিনিস। তাদের তদারক করছে কিছু মানুষ।

দূরে কয়েকজন রক্ষী, তারা নৈশপ্রহরার নামে পাহারা দিচ্ছে এই গোপন খনন।

শতাব্দীপ্রাচীন অঙ্কের ঘুম ভাঙতে মনে হয় আর বেশি দেরি নেই!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *