অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১২

১২

দিল্লিতে থাকলে নাগেশ সিং মোটামুটি ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়েন, তারপর অল্প একটু এক্সারসাইজ করে ব্রেকফাস্ট সেরে শুরু হয় তাঁর দিন। কিন্তু এটা নতুন জায়গা, তার ওপর আজ বেরোনোর তাড়া, তাই আরও সকালে ঘুমটা ভেঙে গেল।

এমনিতেই কয়েকদিন হাজারো মিটিং, সময়ের পার্থক্যের কারণে ঘুম বা বিশ্রাম ঠিকমতো হচ্ছিল না, তার ওপর আজ শোয়ার মাত্র ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় মাথায় একপাশটা দপদপ করছে।

তবে একটু পরে জানলার কাচ দিয়ে সদ্য সকাল হওয়া শহরটা দেখে তাঁর মনটা ভালো হয়ে গেল। এমনিতেই উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ছোট্ট বেলফাস্ট শহরটা ওঁর ভীষণ প্রিয়, তার ওপর ওঁর এই ফার্মহাউসটা এমন জায়গায় যেখান থেকে কেভহিল পর্বত আর অন্যদিকে ল্যাগান নদী দুটোই বেশ কাছে।

ইচ্ছে করেই শহর থেকে অনেকটা দূরে এমন ছিমছাম জায়গায় বছর কয়েক আগে এই বাংলোটা কিনেছিলেন তিনি, যাতে ব্যাবসার কাজে এসে ব্যস্ততার মাঝে এখানে কয়েকদিন বিশ্রাম নেওয়া যায়।

নাগেশ বেশি তাড়াহুড়ো করলেন না, হালকা ফ্রেশ হয়ে বাড়ির বাইরের একফালি বাগানে এসে দাঁড়ালেন। ব্যাবসার যে ডিলের জন্য এবার এসেছিলেন সেটা সফল হয়েছে, প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ডের সাপ্লাই পেয়েছেন তিনি। আপাতত এখানকার কাজ শেষ, এবার দিল্লি ফিরেই তাঁর ব্রেনচাইল্ড আগ্রার আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ঝাঁপাতে হবে। স্বয়ং প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই ব্যাপারে ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন। অবশ্য আসার আগে সব কো-অর্ডিনেশন তিনি করেই এসেছেন, তবু তিনি হলেন শান্তির দূত। আহ্বায়ক হিসেবে একজনও কেউ তাঁর খুঁত ধরতে পারুক, তিনি তো মোটেই চান না।

এটা তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের সবচেয়ে বড়ো মাইলস্টোন হতে চলেছে!

ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে পূর্বদিকের উদীয়মান সূর্যের দিকে করজোড়ে তাকালেন তিনি,

ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্,

ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্!

হৃষ্টচিত্তে তিনি বাগানের এক কোণে পড়ে থাকা খুরপি নিয়ে ছোট্ট একটা চারার গোরার দিকটা অল্প খুঁড়তে লাগলেন। গাছপালার শখ তাঁর বরাবরের, দিল্লি বা জয়পুরের বাংলোর মতো তাই এই বেলফাস্টের বাংলোতেও মালি রেখে বাগান করার কথা তিনি দু-বার চিন্তা করেননি। তাঁর এই শখ মেয়ে উজ্জয়িনীও পেয়েছে, দিল্লিতে থাকার সময় ওইটুকু বয়সেই ছোটো ছোটো চারা লাগাত বাগানে, শিলং-এর ফ্ল্যাটের বারান্দাতেও পাহাড়ি ফুলগাছের টব লাগিয়েছে, আগের বছরই গিয়ে নাগেশ দেখে এসেছেন।

কাল রাতের হালকা বৃষ্টির কারণে মাটি এমনিতেই নরম হয়ে রয়েছে, অল্প খুঁড়তেই নীচ থেকে কিছু কাঁকর বেরিয়ে এল। নাগেশ হাত দিয়ে সেগুলোকে একটা একটা করে বেছে কাছেই রাখা ডাস্টবিনে ফেলতে লাগলেন।

দূরে কারুর পায়ের শব্দ পেয়ে মুখ তুলে তাকাতেই দেখলেন কস্তুরী ঘুম ভেঙে উঠে এসেছে। গায়ে বিস্রস্ত রাতপোশাক, পায়ে স্লিপার। ঘুম আলগোছে লেগে রয়েছে ওর গালে, চুলে। গতরাতের হালকা কাজল এখনও চোখের নীচে অস্পষ্ট হয়ে বসে রয়েছে।

চোখাচোখি হতেই কস্তুরী হাসল, ‘গুড মর্নিং!’

নাগেশ মৃদু হেসে কাজে মন দিলেন, ‘মর্নিং। উঠে যখন পড়েইছ, তোমার লাগেজগুলো লাস্ট মিনিটে দেখে নাও একটু। ব্রেকফাস্ট করেই বেড়িয়ে পড়ব মরা।’

কস্তুরী আড়মোড়া ভেঙে বাচ্চা মেয়ের মতো অনুযোগের সুরে বলল, ‘এই তো এলাম! আর দু-দিন থাকলে হয় না?’

নাগেশ দু-পাশে মাথা নাড়লেন, ‘গিয়ে আমার অনেক কাজ আছে। ওই সম্মেলনটা রয়েছে। কনভেনার হিসেবে শেষ মুহূর্তে সব ঠিকঠাক অর্গানাইজ করা হয়েছে কি না, গিয়ে দেখতে হবে আমায়।’

কস্তুরী মুখটা সামান্য বেঁকিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল বাগানের বাঁ-দিকে। যতদূর দেখা যায়, চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজ উপত্যকা, মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দেওয়া ছোটো ছোটো টিলা। এই বাড়িটার কাছেপিঠে তেমন কোনো বাড়ি না থাকলেও একটু দূরের পরিষ্কার সরু রাস্তাটা গোটা উপত্যকাটার বুক দু-ভাগে চিরে এঁকেবেঁকে চলে গেছে শহরের দিকে। কিছুদূর গেলেই বাসস্ট্যান্ড, সেখান থেকে বেশ ঘন ঘন বাস পাওয়া যায় অফিসটাইমে। এ ছাড়াও আয়ারল্যান্ডের পাহাড় কেটে টানেল তৈরি করা রেলপথের ট্রেন তো জগদবিখ্যাত, সেই সরু গেজের রেললাইনও রয়েছে অদূরেই।

ওসব মিলিয়ে একটা পারফেক্ট নৈসর্গিক দৃশ্য, পুরো ক্যালেন্ডারের ছবির মতো!

কস্তুরী কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল দূরের কেভহিল পাহাড়ের দিকে, তারপর হঠাৎ বলল, ‘আচ্ছা, আপনার এখানকার অফিস তো একদম শহরের মধ্যে, এতদূরে এই বাড়িটা কিনেছিলেন কেন?’

‘প্রথমদিকে যখন আসতে হত, বেলফাস্ট শহরের প্রাণকেন্দ্রেই ছিলাম, ভিক্টোরিয়া স্কোয়ারের কাছে। একটা ছোট্ট খুপরির মতো ফ্ল্যাটে থাকতে হত। তাতে যেন দমবন্ধ হয়ে আসত। তখন সবে বাপঠাকুরদার জামাকাপড়ের বিজনেসটাকে বিদেশেও নিয়ে আসব ভাবছি, দিনের পর দিন এখানে বড়ো বাংলোয় থাকার মতো পয়সার জোর নেই। তারপর আস্তে আস্তে এখানকার কানেকশনটা স্ট্রং হতে এই বাংলোটা কিনেছিলাম।’ নাগেশ কথা বলতে বলতে মাটি চাঁছার খুরপিটা রেখে একটু জল দিতে উদ্যত হলেন।

নাগেশ সিং নিজে স্বল্পভাষী, কিন্তু তিনি একাই যে সিং গারমেন্টসকে সারা পৃথিবীতে একটা বিখ্যাত ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচয় করানোর প্রধান পুরোধা, সেই ব্যাপারে আপত্তি করবে না কেউই। প্রায় একশো বছরের ঐতিহ্য সিং পরিবারের এই ব্যাবসার, কিন্তু আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত আইরিশ লিনেন দিয়ে বানানো ভারতীয় কারিগরের শার্ট, প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের এই সংমিশ্রণ হওয়ার পর ব্যাবসা ফুলেফেঁপে বেড়েছে বহুগুণ। কোটিপতি ব্যবসায়ী হিসেবে পরে তিনি পা রেখেছেন রাজনীতির আঙিনায়, সেখানেও ইতিমধ্যেই সাফল্য আসতে শুরু করেছে। দিল্লির মসনদে নাগেশ সিং এখন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটা নাম। বংশমর্যাদার চেয়েও এখন যে নাগেশের অ্যাচিভমেন্ট বেশি গুরুত্ব পায় এটা ভেবেই ভালো লাগে।

‘সত্যিই! কী যে সুন্দর জায়গাটা! মনে হয় এখানেই থেকে যাই সারাজীবন!’ কস্তুরী মুগ্ধচোখে দূরের পাহাড়ের দিকে আঙুল তুলল, ‘পাহাড়টা দ্যাখো, মনে হচ্ছে কালো একটা মেঘের মতো যেন আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।’

‘গালিভার্স ট্রাভেলস’ পড়েছ ছোটোবেলায়? জোনাথন সুইফট এই কেভহিল পর্বতকে দেখেই গালিভার্স ট্রাভেলস লিখেছিলেন। উনি তো এখানেই থাকতেন, সেখান থেকে কেভহিলকে নাকি একটা বিশাল দৈত্যের মতো লাগত। সত্যি লেখকের কল্পনা কতদূর হতে পারে ভাবো!’ বলতে বলতেই নাগেশ দেখলেন, দূরের আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে হঠাৎ বাঁ-দিকের পাহাড়ের টানেল থেকে বেরিয়ে আসছে একটা লাল টুকটুকে বাস, এই বাড়ির সমান্তরালে এগিয়ে যাচ্ছে ডান দিকে, এখান থেকে মনে হচ্ছে যেন খেলনা একটা!

কস্তুরী বাচ্চার মতো হাততালি দিয়ে উঠল, ‘কী দারুণ বাসটা! ইস, এই তিনদিন আমরা সারাদিন অফিসেই কাটিয়ে দিলাম, তাও গেলাম গাড়িতে চড়ে। এই বাসটা কেরে গেলেও তো হত!’ আফশোসের ভঙ্গিতে ও তাকাল নাগেশের দিকে।

নাগেশ হাসলেন, ‘এই বাসটা আমাদের অফিসের দিকে যাচ্ছে না কস্তুরী, এটা সোজা চলে যায় হারল্যান্ড অ্যান্ড উলফ ফ্যাক্টরির দিকে। সেই বিশ্ববিখ্যাত জাহাজ কারখানা যারা টাইটানিক তৈরি করেছিল। আমাদের অফিসের টেরাস থেকে ওদের বড়ো বড়ো ক্রেনগুলো দূরে দেখা যায়, খেয়াল করোনি?’

কস্তুরী অবাক চোখে তাকাল, ‘হ্যাঁ দেখেছি তো, হলুদ হলুদ ক্রেন। ওরাই টাইটানিক তৈরি করেছিল?’

এখানে যে কেয়ারটেকারকে রাখা আছে, তাঁকে বলা আছে তিনি যেন মাসে দু-দিন কোনো মালিকে ডেকে বাগানটা পরিষ্কার করিয়ে রাখেন, তবু নাগেশের চোখে পড়ল, গেটের পাশেই ব্ল্যাকথর্ন গাছের একটা ঝোপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তিনি এগিয়ে টান মেরে উপড়ে দিলেন সেটা, ‘হ্যাঁ। বহু পুরোনো ঐতিহাসিক কারখানা, ১৯১২ সালে ওরাই টাইটানিক তৈরি করে।’

কস্তুরী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল একটু আগে চলে যাওয়া বাসটার গতিপথের দিকে, তারপর হঠাৎ নাগেশের দিকে এগিয়ে এসে ঠোঁট ফোলাল, ‘আমি আজ কিছুতেই এখান থেকে যাব না। আরও দু-দিন থাকুন, প্লিজ! আমি কাল ওই ফ্যাক্টরি দেখতে যাব, নিয়ে চলুন না!’

নাগেশ মাথা নাড়লেন, ‘এবারে আর হবে না। আজ যেতেই হবে।’

‘না না, আমি আজ কিছুতেই যাব না।’ কস্তুরী জোরে জোরে পা ঠুকল বাগানের নরম মাটিতে।

নাগেশ এবার কস্তুরীর দিকে তাকালেন।

মাঝে মাঝে যখন একেবারে একা কোনো বিজনেস ট্রিপ করেন, প্লেনে জানলার পাশে বসে ফেলে আসা এতগুলো বছরের চাওয়াপাওয়ার হিসেব কষেন, তখন আরও একবার জীবনের এই এপিসোডটাকে মূল্যবোধের দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখার চেষ্টা করেন। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেন, আদৌ কি এটার কোনো প্রয়োজন ছিল? মধ্য চল্লিশ, সম্ভ্রান্ত রাজপরিবারের বংশধর, চূড়ান্ত সফল ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদ তিনি, এক কন্যাসন্তানের পিতা। বাড়িতে স্ত্রী রয়েছে।

তবু তিনি অফিসের এই তরুণী মেয়েটির সঙ্গে কেন জড়িয়ে পড়লেন? তাও আবার মাত্র কয়েক মাসে? তিনি কামুক প্রকৃতির পুরুষ নন, দুমদাম কোনো নারীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়া তাঁর স্বভাবে নেই, স্ত্রী সুজাতাকে বিয়ে করেছিলেন ভালোবেসে। তবু জীবনের মধ্যভাগে এসে হঠাৎই যেন ওলটপালট হয়ে গেল সব, সুজাতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা ইগো, কলহ, উজ্জয়িনীকে নিয়ে চিন্তার মাঝে মাস দুয়েক আগে একরাশ ঠান্ডা বাতাসের মতো জীবনে এসে পড়ল কস্তুরী, সাময়িক মোহে যাকে আর তিনি ফেরাতে পারেননি। কস্তুরী ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস আর পলিটিক্যাল সায়েন্সের ভালো ছাত্রী ছিল, নাগেশের সাংসদ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে সেই ব্যাপারেই সেক্রেটারি হিসেবে ওকে নেওয়া। তারপর যে কী হয়ে গেল! মাত্র এই কয়েকদিনে ও অনেকটা কাছে চলে এল।

শুধুই যে শারীরিক আকর্ষণ তা নয়, জীবনে বেড়ে চলা ব্যস্ততা, চাপের মাঝে কস্তুরীর ছেলেমানুষি, সারল্য যেন তাঁকে স্বস্তি দিয়েছিল, ওর সঙ্গে প্রতিদিনের কাজ-পরিকল্পনা আলোচনা করতে ভালো লাগত। আর রাতারাতি আগুনের মতো বেড়েছিল সুজাতার সঙ্গে দূরত্ব। এমনিতেই দু-জনের ইগো সম্পর্কটাকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল, তার মধ্যে এই কস্তুরী অধ্যায় যেন তাতে শেষ পেরেক পোঁতার দায়িত্ব নিল। নাগেকশ বোঝেন সবই, কিন্তু কিছু করতে পারেন কই!

নাগেশ ছোটো একটা নিশ্বাস ফেলে হাসলেন, ‘মাঝে মাঝে তুমি এমন বাচ্চাদের মতো করো! বললাম না, কাজ আছে।’

‘কাজ থাক।’ কস্তুরী মাথা ঝাঁকাল, ‘একদিন পরে গেলে এমন কিচ্ছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। আমি এই প্রথম এখানে এলাম আর কিছু না দেখেই…? আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা কাল যাব, কেমন? আজ ফ্যাক্টরিটা দেখে আসি?’ কথাটা বলেই কস্তুরী বাড়ির দিকে পা বাড়াল, ‘আমি এখনই অফিসে ফোন করে বলছি ফ্লাইট রিশিডিউল করতে।’

‘না!’ নাগেশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে ধমকে উঠলেন, ‘তুমি কাউকে ফোন করবে না। আমরা আজই ফিরব।’

নাগেশের স্বরে এমন কিছু ছিল, কস্তুরী ঘুরে তাকাল।

চোখেমুখে স্পষ্ট অভিমান গাঢ় হয়ে উঠছে দ্রুত, লালচে হয়ে উঠছে নাকের পাটা।

নাগেশ গুরুত্ব দিলেন না। দ্রুত হাতে আবার মাটিচাঁছার খুরপিটা তুলে নিতে নিতে মৃদু অথচ স্পষ্ট গলায় বললেন, ‘আজ উজ্জয়িনী বাড়ি আসছে। কাল ওর জন্মদিন।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *