অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩১

৩১

উজ্জয়িনীর চোখ ফেটে জল আসছিল। খিদেয় পেটের অন্তঃস্থল থেকে একটা বিকট স্রোত পাক দিতে দিতে ওপরদিকে উঠছে, এরকম কষ্টকর অনুভূতি এর আগে কখনো ওর হয়নি।

জেগে ওঠার পর প্রায় দু-ঘণ্টা হয়ে গেল ও একইভাবে আধশোয়া হয়ে রয়েছে। ভীষণ ঘুম ঘুম পাচ্ছে, তন্দ্রাচ্ছন্ন একটা ঘোর কাজ করছে ওর মধ্যে, মনে হচ্ছে যেন ঘুমিয়েই থাকে।

হাত-পায়ে বাঁধা দড়িগুলো এতটাই তীক্ষ্ন, চামড়া জ্বলতে শুরু করেছে। মুখে শক্ত করে সাঁটা টেপের বিকট গন্ধে মাথা ঘুরছে।

এটা একটা ছোট্ট ঘর, ঘর না বলে ইটের অস্থায়ী ডেরা বলাই ভালো। ইটগুলো এতটাই অবিন্যস্ত বা তাড়াহুড়ো করে একের পর এক সাজানো হয়েছে যে তার ওপাশের রাতের কালো অন্ধকার আলাদাভাবে উজ্জয়িনীর চোখে পড়ছে। সর্বসাকুল্যে সাত ফুট বাই সাত ফুটের বাঁকাচোরা একটা ঘর, একপাশে বাঁশের দরমা। সেটা বাইরের হাওয়ায় মাঝে মাঝেই নড়ে উঠছে, সেই আশায় উজ্জয়িনী অনেকবার চেঁচাতে গিয়েও একফোঁটা স্বর গলা থেকে বেরোয়নি, উলটে গলা চিরে গেছে।

অনেকক্ষণ অন্ধকারে থাকতে থাকতে তার মধ্যেও চোখ ঠিক আলো খুঁজে নেয়। উজ্জয়িনীর বমি পাচ্ছিল, মাথার একপাশ যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছিল, মনে একরাশ স্মৃতি বুদবুদের মতো উজিয়ে উঠছিল, ছোটোবেলায় দিল্লির বাড়িতে বাবার সঙ্গে খেলা, কিংবা জয়পুরের বাংলোয় গিয়ে ঠাকুরদার সঙ্গে এস্টেটের জিপগাড়িতে করে ঘুরে বেড়ানো, সব ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মতো ভিড় করে আসছিল মনে।

আর পাঁচজনের চেয়ে ওর অনুভূতি বা স্মরণশক্তি অনেকটাই বেশি, এই অবচেতনে থাকা এই ভয়ের মধ্যেও ও খুব মনোযোগ দিয়ে কান পাতল ইটের প্রান্তে, নিস্তব্ধতার মাঝেও কোথাও যেন কুলকুল একটা মৃদু শব্দ হয়ে চলেছে একটানা। ও এখনও পর্যন্ত কোথায় রয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না, তবুও সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মন দিয়ে একটানা শব্দটা শুনতে লাগল।

একটা সময় মনে হল ও আবার সেই স্বপ্নটা দেখছে না তো? সেই জলের মধ্যে ডুবতে ডুবতে হয়ে চলা শব্দ আর এই আওয়াজটার যেন অনেকটাই মিল।

পাকা সাঁতারু উজ্জয়িনীর হঠাৎ মনে হল কাছেপিঠে কি কোনো পুকুর রয়েছে?

ও ধড়মড় করে উঠে বসতে গেল, কিন্তু পারলো না। উলটে হাত-পায়ে চেপে বসে থাকা দড়িগুলো চামড়া কেটে বসতে লাগল মাংসের ওপর।

ওর এবার কান্না পেয়ে গেল।

আচ্ছা এমন কি হতে পারে, গাড়িটা মাঝপথে কেউ বা কারা আক্রমণ করেছিল? কবীর, ওর বন্ধু আর উজ্জয়িনীকে কিডন্যাপ করেছে? কবীরের কোনো ক্ষতি হয়নি তো?

ওর আকাশপাতাল ভাবনার মধ্যেই বাঁশের দরমাটা আচমকা খুলে গেল। এত আকস্মিকভাবে খুলল যে উজ্জয়িনী কেঁপে উঠল। আড়চোখে দেখল, কেউ একজন ঢুকেছে ঘরে।

প্রবল বিপদের মধ্যেও যে বিরল প্রজাতির মানুষ মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে, তাদের মধ্যে উজ্জয়িনী একজন। চট করে ও ভাবল, দরজা খুলে যে বা যারা ঢুকছে, তারা বন্ধু না শত্রু ও জানে না। জানার আগে অবধি নিজের সক্রিয় অস্তিত্ব জানানা না দেওয়াই ভালো।

ও টানটান হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে মড়ার মতো পড়ে রইল।

প্রথমে যে ছায়ামূর্তি ঢুকল, সে কিছুক্ষণ কী করল চোখ বন্ধ করে উজ্জয়িনী বুঝতে পারল না। একটু পরেই অবশ্য সে এসে উজ্জয়িনীর দিকে টর্চের আলো ফেলল। ঘুমোনোর ভান করে থাকলেও উজ্জয়িনী বুঝতে পারছিল ছায়ামূর্তি খুঁটিয়ে দেখতে ওকে।

কুড়ি-পঁচিশ সেকেন্ডের পর ছায়ামূর্তি সম্ভবত উজ্জয়িনীর ঘুম সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হল। উজ্জয়িনীর কাছ থেকে সরে গিয়ে দরমার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কাউকে ডাকল, ‘কোনো গণ্ডগোল নেই। এদিকে এসো।’

উজ্জয়িনী নিজের অজান্তেই কেমন চমকে উঠল। না, কণ্ঠস্বরটা কোনো একজন নারীর বলে নয়। গলাটা ওর ভীষণ চেনা। ও একবার কারুর কণ্ঠস্বর শুনলে চট করে ভোলে না।

কোথায় যেন শুনেছে!

ওর প্রচণ্ড কৌতূহল হচ্ছিল চোখ খুলে দেখতে, কিন্তু অতিকষ্টে নিজেকে ও সংবরণ করতে লাগল। কিছু একটা ক্লু চাই, এই বিপদের মাঝে কোনো একটা হদিশ চাই, যা দিয়ে ও উদ্ধার করতে পারবে ওর কবীরকে। অজানা আশঙ্কায় শারীরিক সমস্ত যন্ত্ররা উপেক্ষা করা সত্ত্বেও ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করার মাঝেই ও প্রার্থনা করতে লাগল, ‘ঠাকুর, আমার কবীরের যেন কিছু না হয়, দেখো তুমি!’

ঠাকুর আগেই দেখেছিলেন। দ্বিতীয় ছায়ামূর্তি এসে ঢোকার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উজ্জয়িনী অনুভব করল, ওর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিচ্ছে একটা বলিষ্ঠ হাত।

‘এ কী!’ নারীমূর্তির অনুচ্চ আর্তনাদ শোনা গেল, ‘দড়িগুলো খুলে দিচ্ছ কেন!’

‘কড়া ঘুমের ওষুধ দেওয়া আছে, কোনো চাপ নেই।’ উজ্জয়িনীর হৃৎস্পন্দন কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে দিয়ে একটা পুরুষকণ্ঠ শোনা গেল, ‘ডেলিভারির সময় হাত-পায়ে দড়ির দাগ দেখলে আমি মুশকিলে পড়ে যাব। কোনো টর্চারের অর্ডার নেই। আর তা ছাড়া… এখান থেকে পালাবে কোথায়! পুরোটাই ঘেরা, আর পেছনে নদী।’

দুই ছায়ামূর্তি ওই অন্ধকারে বুঝতেও পারল না, ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলেও উজ্জয়িনী জ্বোরোরুগির মতো কাঁপতে শুরু করেছে।

এই পুরুষকণ্ঠটা যে তার বড্ড চেনা!

এই মায়াভরা কণ্ঠের সঙ্গেই তো শিলং এর সেই ঘর থেকে ও দিনরাত কথা বলত। এই কণ্ঠের সঙ্গেই ও সব মোহমায়া ছেড়ে একটা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল, গাছের শীতল ছায়ার মতো শান্ত একটা আশ্রয় পেতে চেয়েছিল।

উজ্জয়িনীর চোখের দু-পাশ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

.

‘গুরুজি মানে?’ নাগেশ সিং-এর রাজপুত ভ্রূ একবার কুঁচকেই আবার সোজা হয়ে গেল।

‘আপনিই তো হিন্দু সন্তান দলের গুরুজি, যার নেতৃত্বে গত এক বছরে প্রায় পঞ্চাশজন মুসলিম হিন্দুধর্ম নিয়েছেন।’ রুদ্র নাগেশ সিং-এর চোখে চোখ রেখে বলল, ‘আর লুকোছাপা করে কোনো লাভ নেই, ‘আপনার দলের একটা ছেলে আজ সব স্বীকার করেছে এন আই এ-র ইনস্পেকটর মনোজ বশিষ্ঠের কাছে। মনোজ বশিষ্ঠ দিল্লি থেকে সেটা জানিয়েছেন ভগতবীর সিংকে।’

‘লুকোছাপা করব কেন?’ নাগেশ সিং বললেন, ‘আমরা কি জোরজবরদস্তি করে ধর্ম চেঞ্জ করিয়েছি নাকি। প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছে ঘরে।’

রুদ্র হাসল, ‘সেই! গরিব মানুষকে কাঁচা টাকার লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তর করানোটা তো আর জোরজবরদস্তি নয়! যাই হোক, প্রফেসর বেগকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন বলুন।’

সবার দিকে আলতো চোখ বুলিয়ে নাগেশ সিং ধীরেসুস্থে সামনের চেয়ারে বসলেন, তারপর একবার জোরে নিশ্বাস নিয়ে শান্তগলায় বললেন, ‘লুকিয়ে রেখেছি এটা যখন জেনেই গেছেন, কোথায় লুকিয়ে রেখেছি আপনিই বলুন।’

রুদ্র বলল, ‘নিজের দিল্লি বা জয়পুরের বাড়ি বা অন্য কোনো জায়গায় রাখার ঝুঁকি নেবেন না, কারণ প্রফেসর বেগের গবেষণা নিয়ে যখন প্রবল বিতর্ক চলছিল, ওঁর বাড়িতে হামলা চলছিল, তখন আপনি প্রকাশ্যে ওঁকে সমর্থন করে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন বারংবার। কাজেই আপনার বাড়িতে শত্রুপক্ষ নজর রাখছিল।’

‘সমর্থন করে স্টেটমেন্ট দেব না কেন?’ নাগেশ সিং যেন রেগে উঠলেন, ‘চারশো বছর ধরে একটা জলজ্যান্ত মিথ্যে দিয়ে আমাদের প্রতারণা করা হচ্ছে, দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, সেখানে কেউ যদি মুসলিম হয়েও যুক্তি দিয়ে সেটা ভুল প্রমাণ করে আসল জিনিস আবিষ্কারের চেষ্টা করেন, সত্যের স্বার্থে তাঁকে সমর্থন করব না?’

‘সমর্থন করা মানে কি এটা যে নিজের সাম্প্রদায়িক দলের সুযোগ নিয়ে উসকে মানুষকে খেপিয়ে তোলা?’ রুদ্রও নাগেশ সিং-এর চোখে চোখ রেখে বলতে লাগল, ‘আগ্রা শহরে দলের কর্মীদের দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে মানুষকে আপনি খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেননি?’

নাগেশ এবার একটু ইতস্তত করে বললেন, ‘হ্যাঁ, করেছি। কারণ প্রফেসর বেগের গবেষণা প্রায় শেষ হয়েছে। তিনি জনসমক্ষে শেষ প্রমাণটা করতে চাইছিলেন। কাল এই শহরে বিশ্বসম্মেলনও রয়েছে, এই সময় এটা ডিসকভার হলে গোটা বিশ্বেই একটা আলাদা মাত্রা পাওয়া যেত, সেইজন্য…।’

‘সেইজন্য মানটোলার গুল মহম্মদ নামে যে গুন্ডাটা পার্টির হয়ে প্রফেসর বেগের বাড়িতে হামলা করছিল, তাকেও খুন করালেন?’

নাগেশ সিং এবার থেমে গেলেন, কিছুক্ষণ পরে বললেন, ‘ওটা আমাদের দলের একটা মাথাগরম ছেলের কাজ। ওই ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না, বিশ্বাস করুন। আমার কোনো হাত নেই ওই খুনের পেছনে।’

‘হাত আছে। আপনি ওই মাথাগরম ছেলেদের উসকেছেন, খেপিয়েছেন, সেটাও যথেষ্ট বড়ো হাত।’

নাগেশ সিং চুপ করে রইলেন। গোটা ঘরটায় থমথম করতে লাগল এক অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা।

একটু বাদে নাগেশ মুখ খুললেন, ‘গুল মহম্মদ প্রকাশ্যে হিন্দুধর্মকে নিয়ে কদর্য কথা বলত, সেটা আমার ছেলেরা নিতে পারেনি। সম্প্রতি আমাদের পবিত্র শব্দ ”ওঁ” নিয়ে অশ্লীল ছড়া বেঁধেছিল, অথচ বোকাগুলো জানেনা, ওঁ থেকেই ওদের ৭৮৬-র মত পবিত্র সংখ্যা এসেছে।’

‘ওঁ থেকে ৭৮৬ এসেছে মানে?’ নাহুম খান এবার অবাক হলেন, ‘৭৮৬ আমরা যেকোনো শুভ কাজে একদম ওপরে লিখি, ঠিক যেমন আপনারা ওঁ বা কৃষ্ণের নাম লেখেন!’

‘৭৮৬ সংখ্যাটার তাৎপর্য কী?’ এই ব্যস্ত সময়ে প্রিয়ম কিছুতেই নিজের কৌতূহল নিবৃত্ত করতে পারল না, অনেকদিন ধরে সে এই প্রশ্নটা কোনো মুসলিম বন্ধুকে করবে ভেবেছে, কিন্তু জিজ্ঞাসা করা হয়ে ওঠেনি।

‘যেমন ডেসিমেল বা বাইনারি, তেমনই আরবি সংখ্যা গোনার পদ্ধতিকে বলে আবজাদ। আবজাদ পদ্ধতিতে প্রতিটা অক্ষরকে এক থেকে শুরু করে হাজার পর্যন্ত একটা করে সংখ্যা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরানের প্রথম আয়াত হল বিসমিল্লা আল-রহমান আল-রহিম, আর এই শব্দের সমস্ত অক্ষরগুলো যে সংখ্যাগুলোকে রিপ্রেজেন্ট করছে, সেই সবকটা সংখ্যার যোগফল হল ৭৮৬। এটা ইসলামের খুব পবিত্র শব্দ, যেমন আপনাদের ১০৮। কিন্তু এর সঙ্গে ”ওঁ” বা ”ওম”-এর মতো সংস্কৃত শব্দের সম্পর্ক কী?’ নাহুম খান প্রিয়মের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শেষ বাক্যটা নাগেশ সিং-এর উদ্দেশে বললেন।

‘ওম শব্দের প্রভাব শুধু ইসলাম নয়, খ্রিস্টান ধর্মেও আছে। ইংরেজি Omni কথাটার অর্থ সবকিছুর থেকে সেরা বা ক্ষমতাশালী, Omnipotent মানে অসীম শক্তিমান, Omnivorus মানে সবকিছুকে যে গিলে ফেলতে পারে, এইসব শব্দের শুরুতেই ওম আছে। মুসলিমদের আমেন শব্দটাও এসেছে ওম থেকেই।’ নাগেশ বলে যেতে লাগলেন।

‘নাও! দ্বিতীয় অঘোরেশ এলেন, জোর করে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা!’ নাহুম খান বিড়বিড় করলেন, ‘কিন্তু ৭৮৬?’

‘বলছি। আধুনিক যুগে ০ থেকে ৯ অবধি যে অঙ্কগুলো রয়েছে সেগুলো নাকি এসেছে আরবিক অঙ্ক থেকে। কিন্তু বৈদিক পণ্ডিতরা প্রমাণ করে দিতে পারেন, আরবি অঙ্ক এসেছিল হিন্দু বৈদিক অঙ্ক থেকেই। ভারত থেকেই এই অঙ্কগুলো আরবে গিয়েছিল। এই ৭, ৮ আর ৬-কে যদি হিন্দু দেবনাগরী হরফে, মানে হিন্দিতে লিখি, কেমন লাগবে?’ নাগেশ সিং অনুমতির অপেক্ষা না করেই সামনের একটা খবরের কাগজ টেনে নিলেন, পকেট থেকে দামি পেন বের করে ফাঁকা অংশে খস খস করে লিখতে লাগলেন।

অক্ষরগুলোকে একসঙ্গে লিখলে কেমন দেখায়।

‘এইবার দেখুন এই অক্ষরগুলোকে একসঙ্গে লিখলে কেমন দেখায়।’ নাগেশ সিং লিখতে লাগলেন।

অক্ষরগুলোকে একসঙ্গে লিখলে কেমন দেখায়।

‘এটা হল ”ওম” শব্দের দর্পণ প্রতিবিম্ব, অর্থাৎ মিরর ইমেজ। মিরর সিমেট্রি বৈদিক প্রথার একটা প্রচলিত ধারণা ছিল।’

মিরর সিমেট্রি কথাটা শুনে প্রিয়ম আড়চোখে রুদ্রর দিকে তাকাল। কিন্তু রুদ্র ভাবলেশহীন।

‘এই দেখুন, এটাকে উলটে দিলেই ওম হয়ে যাচ্ছে।’ নাগেশ পাশে আরেকটা ছবি আঁকলেন।

অক্ষরগুলোকে একসঙ্গে লিখলে কেমন দেখায়।

নাহুম খান কী-একটা বলতে গিয়েও বললেন না, একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন ‘ওম’ শব্দটার দিকে।

‘মি সিং!’ রুদ্র এবার বলল, ‘এইসব জোর করে এর ঘাড়ে ওকে বসিয়ে ভুলভাল ইন্টারপ্রিটেশন না করে প্রফেসর বেগকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন বলবেন কি?’

নাগেশ সিং চুপ করে গেলেন।

‘আপনি যদি না বলেন তাহলে সত্যিই আপনার মেয়েকে ফিরে পাওয়ার কোনো আশা নেই মি সিং!’ নাহুম খান বললেন, ‘আপনি কি এখনও বুঝতে পারছেন না যে যারা আপনার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে তারা প্রফেসর বেগ বা তাঁর আবিষ্কারটাকে চাইছে?’

নাগেশ সিং এবার সামান্য চঞ্চল হয়ে উঠলেন। ঘরের প্রতিটা মানুষ ওঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। নাগেশ কিছুটা ছটফটিয়ে উঠে বললেন, ‘রাজা পরমাদ্রিদেবের বানানো বিষ্ণু মন্দির, তার পেছনে একটা বাড়িতে।’

‘মানে ইতমদ-উদ-দৌলার কবরে। ওটাকেই এঁরা চান্দেলা রাজা পরমাদ্রিদেবের বিষ্ণুমন্দির হিসেবে মনে করেন।’ রুদ্র নাহুম খানের দিকে তাকাল, ‘আমার মনে হয় আপনাদের এখুনি প্রফেসর বেগকে ওখান থেকে নিয়ে তাজমহলে যাওয়া উচিত। না হলে নাগেশ সিংহের মেয়েকেও উদ্ধার করা যাবে না, তাজমহলেও নাশকতামূলক কাজ রোখা যাবে না।’

নাগেশ উদ্ভ্রান্ত মুখে তাকালেন। সামান্য ইতস্তত করে বললেন, ‘প্লিজ, আমার মেয়েকে বাঁচানা। ওর খুব বিপদ!’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *