1 of 2

অশ্বচরিত – ৮

আট

কোকিলা বলল, সে দশ দিকে ঘোরে, সে বলতে পারে ওসব কথা, খোঁজ নিতে পারে হারানো ঘোড়ার, আমি তো ঘরেই থাকি, কী করে বলি?

তিনি কখন ফিরবেন?

মাথা নাড়ে কোকিলা। জানে না সে। মদরঞ্জি নিয়ে গৌরমোহন কাঁথিতে গেছে ভোরবেলা, দুয়ারে দুয়ারে ফেরি করে বেড়াবে। ফিরতে রাত হতে পারে, আবার এমনও হয় ফেরেই না গৌরমোহন। মদরঞ্জি কাঁধে কতদূর চলে যায়। হয়তো কী খেয়াল হলো এগরা চলে গেল খড়্গপুরের পথে। না হলে হয় চলে গেল নরঘাট হয়ে তমলুক শহরে। যতদূর যাবে মদরঞ্জি নিয়ে তত কদর ওই বস্তুর। গৌরমোহন মাঝেমধ্যে বলে কলকাতা চলে যাবে। কোকিলা না করেছে। কলকাতা শহরের কিছুই চেনে না সে। জানে না কেমন ওই শহর, তারা কেউ কোনো দিন কলকাতা যায়নি। শেষে ওদিকে গিয়ে কোনো বিপদে না পড়ে গৌরমোহন। ধীরে ধীরে বলছিল কোকিলা বধূ। স্তিমিত গলার স্বর। চোখ ঢুলে আসছে যেন। ঠিক দুপুরটি এখানে বড় নিঝুম। কোথাও কোনো সাড়া নেই। শ্রীপতির মনে হচ্ছিল মরা জাহাজঘাটা তো, জাহাজ যেন ছেড়ে গেছে লোকলস্কর নিয়ে। তারপর গভীর নৈঃশব্দ্য আচ্ছন্ন করেছে মীরগোদার এই গৃহটিকে। যেন জাহাজে করে গৌরমোহন তার মদরঞ্জি নিয়ে জাভা, সুমাত্রা, বালিদ্বীপে বাণিজ্য করতে গেছে। প্রোষিতভর্তৃকা বধূ জাহাজঘাটায় দাঁড়িয়ে চোখের জল যখন মুছে ফেলেছে তখনই হাজির হয়েছিল ভানু আর শ্রীপতি। ভানু এখন পেটপুরে ভাত আর ইলিশ মাছের টক খেয়ে তালপাতার চাটাইয়ে পড়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে দাওয়ার ওপ্রান্তে। এ ধারে পুরনো, রং ওঠা এক মদরঞ্জিতে শ্রীপতি বসে আছে, তার কয়েক হাত দূরে কোকিলা। শ্রীপতি ভাবছিল কেমন মানুষ গৌরমোহন, এমন বউ ঘরে রেখে মদরঞ্জি নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, রাতে ফেরে না। আশ্চর্য তো!

কোকিলা বলল, দরকার নেই, মীরগোদার হাট, অলঙ্কারপুরের হাটে তো আসে ব্যাপারির দল, তারা কিনে নিয়ে যায়, কখানা মদরঞ্জিই বা পড়ে থাকে যে ঘরে ঘরে ঘুরতে হবে ফেরিওয়ালা হয়ে।

শ্রীপতি বিষণ্ণতা টের পায়। শ্রীপতি দেখল পান খাওয়া লাল ঠোঁট, মাথার এলো খোঁপা, আঁচলের আড়াল সরে যাওয়া স্তনের আভাস, কোমর থেকে ভারী নিম্নদেশ, সব নিয়ে গৌরমোহন মদরঞ্জিওয়ালার বউ একেবারে একা। যে কথাগুলো বলছে, তাও একা একাই। এখানে শ্রীপতি যে বসে আছে তাও যেন ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছে সে।

শ্রীপতির কী মনে হলো, জিজ্ঞেস করল, কী করে পেয়েছিলে গৌরমোহনকে?

তার দিকে ফিরেও তাকায় না কোকিলা, আকাশে তাকিয়ে আছে, কথাটার জবাব দেবে না মনে হলো। শ্রীপতি সিগারেট ধরায়, কড়া তামাকের গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কোকিলা ফিরে তাকায়, বলল, মদরঞ্জিওয়ালা যে কীর’ম মানুষ তা বুঝা হলো না এখনও, ও কিন্তু আমারে শিখায়েছে এ কাজ, ও না শিখালে আমি কি পারতাম তুমার পঙ্খিরাজকে মদরঞ্জিতে ধরি ফেলতে!

চমকে ওঠে শ্রীপতি। কেমন কেঁপে ওঠে ভিতরে ভিতরে। তার মনে হলো কোকিলা বধূর কথায় মাটিও যেন কাঁপল। তাহলে ভানুর কথা সত্যি? এই কোকিলা বধূ লাল জাদুকরী? কুহকিনী? কী অদ্ভুত! ঘোড়াটাকে মাদুরে বেঁধে ফেলল? জলজ্যান্ত ঘোড়াটাকে ছবি করে দিল? মাদুরে বন্দি করে রেখেছিল তার পঙ্খিরাজকে? এ যে এক আশ্চর্য ঘটনা! ও কোকিলা, তুমি যা বলছ তা সত্যি?

কোকিলা নেমে যায় উঠোনে। কোথা থেকে একখণ্ড মেঘ আকাশে এসে পড়েছিল, তা ঢেকে দিয়েছে রোদ। ছায়ায় আলোয় কোকিলা বধূ পায়চারি করছে উঠোনে। আঁচল দিয়ে ঠোঁট মুছল। সিঁথিটা ডগডগ করছে সিঁদুরের রেখায়। কত চুল তার মাথায়! একটি হাত পিছনে ঘুরিয়ে এলো খোঁপা ভেঙে ঘনকালো মেঘের মতো চুলের রাশ পিঠে ছড়িয়ে দেয়। ঘুরে ঘুরে আড়চোখে দেখে শ্রীপতিকে। শ্রীপতি আবার বলল, সত্যি কথা বলছ?

মনে হচ্ছে যেন তাই।

সত্যি কি না জানো না?

মাথা নাড়ে কোকিলা, কী থেকে কী হয়েছে টের পাইনি, কীভাবে যে হয়ে গেল সব! মাটিতে, ধুলোয় আঁকলাম…।

আমার পঙ্খিরাজকে আগে কখনো দেখেছিলে?

মনে হয় দেখেছিলাম।

কোথায় দেখেছিলে?

কোকিলা বলল, মনে মনে, না যদি দেখব তবে তারে আঁকলাম কেন?

শ্রীপতি উঠে গেল উঠোনে। কোকিলা দাঁড়িয়েছে। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। বুকের আঁচল উড়ে যেতে চাইছে। কোমরে আঁচল গুঁজে সে কদমগাছের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল, হেসে বলল, তুমার পঙ্খিরাজ আমার নিকট বাঁধা পড়ে গেছে গো মাইতিবাবু।

এ তো ভানু বলেছে।

যা কহিছে ঠিক কহিছে। ভানু কি তোমাকে বলেছিল?

জানি না, মনে নেই।

তুমি কি জাদু জানো?

খিলখিল করে হাসে কোকিলা, জাদু তো জানিই।

কে শিখাল, গৌরমোহন?

তা জেনে তুমি কী করবে, জাদু কাউরে শিখাতে হয় না।

তবে?

ওসব নিজে নিজে জানতে হয়। বলতে বলতে কদমতলের নিচে দাঁড়িয়ে মাথার পিছনে ভেসে থাকা চুলের রাশ ধরল সে দুই হাতে দুই মুদ্রা ফুটিয়ে, বলল, জাদু আমরা সবাই জানি, আমার মা ছেল বড় জাদুকরী, আকাশের জল নামাতে পারত।

সত্যি বলছ?

তার মা, আমার দিদিমার ক্ষমতা ছিল আরও বেশি, সে যদি চাইত সাগরের জল শুকায়ে দিতে পারত।

শ্রীপতি বলল, তাই কি মীরগোদায় সমুদ্র নেই, জাহাজঘাটা রয়েছে?

পানরাঙা ঠোঁটে হাসল কুহকিনী, জাদুকরী কোকিলা, বলল, সে গাছ হাঁটাতে পারত, তার কথায় পাথর গড়াত আপনা আপনি।

সত্যি বলছ?

মিথ্যে কেন কহিব, ইসব নিয়ে মিথ্যে বললে আমার বিদ্যে চলে যাবে, সেই কুহকিনী তো বাতাসে ঘুরে বেড়ায়।

তুমি গাছ হাঁটাতে শেখোনি?

হাসে কোকিলা, না শিখিনি, কিন্তু শিখতে কতক্ষণ!

কে শেখাবে?

মা দিদিমা।

তারা কি বেঁচে আছে?

কুহকিনীর মরণ নাই, বাতাস হয়ে আছে গো, বন্নহীন হয়ে ঘুরি বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক, যদি ডাকি এসে যাবে।

তুমি আকাশের জল নামাতে পারো?

পারি। হাঁটতে লাগল কোকিলা। ঘুরে ভিটের পিছন দিকে চলে যায়। একটু ওপারে ঝাউবন। ঝাউবনের ধারে গিয়ে দাঁড়ায়, বলে পারি। আমার মা দিদিমা এত পারত আমি পারব না?

দিমিাকে শিখিয়েছিল কে?

দিদিমার দিদিমা আরব দেশ থেকে জাহাজে চেপে এসেছিল এই মীরগোদায়, তিনি ছেল আরবি জাদুকরী।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্ৰীপতি, সমুদ্র তো অনেককাল নেই।

আমি তো অনেক কালের কথাই বলছি মাইতিবাবু। এগিয়ে এলো কোকিলা। কোকিলা নয়, এ যেন মেঘের ছায়া। নাকি মেঘ? মেঘ না হলে গায়ের রং এমন মেঘের মতন হয়! বাতাসে চুল উড়ছে। এমন উড়ছে যেন কোকিলাকে নিয়ে ওই চুল আকাশে উড়ে যাবে। শ্রীপতির মনে হলো কোকিলা বধূ, গৌরমোহনের বউ আর যেন মাটিতে থাকবে না। ঝড় উঠছে নাকি? তাই তো? ঝাউবনের ওধারে দক্ষিণ-পশ্চিমে মেঘ উঠেছে সমুদ্র থেকে। সূর্য ঢেকে দিয়েছে মেঘ। ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে। কোকিলার আঁচল পড়ে গেছে গা থেকে। ঠাণ্ডা বাতাস সেই আঁচল ওড়াচ্ছে চুলের সঙ্গে। এবার সে যদি হাত তোলে আকাশে, আকাশ কি তাকে না টেনে পারবে? উড়তে থাকবে গৌরমোহনের বউ। শ্রীপতি ডাকল, ঘরে চলো, ঝড় আসছে।

খিলখিল করে হাসে কোকিলা, আমি বাতাস খেতে এয়েচি।

শ্রীপতি দেখল দপদপ করছে স্তনযুগল। গাঢ় লাল ব্লাউজ যেন পটপট করে ছিঁড়ে যাচ্ছে। সেলাইয়ের জোড় ফেটে যাচ্ছে, সামনের হুক, বোতাম যা থাকুক খুলে যাচ্ছে আপনা আপনি। দুহাতে একটি নবীন তরুকে ধরে আছে কোকিলা বধূ। অদৃশ্য, বর্ণহীন কোনো পুরুষের হাত তাকে উন্মুক্ত করছে ধীরে ধীরে। গাঢ়, গভীর নিঃশ্বাস ফেলছে, গাঢ়, গভীর শ্বাস নিচ্ছে গৌরমোহনের যাদুকরী বউ, ভানুর লাল জাদুকরী। আশ্চর্য! এমন তো দেখেনি কোনো দিন শ্রীপতি। গৌরমোহনের বউ দুহাতে বেড় দিয়ে গাছটিকে বুকে টানল। দুই ঊরুতে বাঁধল বৃক্ষটিকে। তলপেটে, তার নিচে, ঊরুসন্ধিতে বৃক্ষের কাণ্ড যেন পুরুষ হয়ে উঠল।

শ্রীপতি নিশ্চল। সে এলো কখন? জাদুকরীর পিছনে পিছনে তাকে অনুসরণ করে? নাকি তার সঙ্গে, কথা বলতে বলতে। তার মা, দিদিমার কথা শুনতে শুনতে। কথাগুলো কি শ্রীপতি তার ঘুমের ঘোরে শুনেছিল? ভাতঘুম তো এসেছিল। বাইরে তখন ঘোর রৌদ্র। তারপর কখন যে আলোর দুপুরে মেঘ এলো। জাদুকরী ঘর থেকে বেরোল। তার নূপুরের শব্দে ঘুমের চটকা ভেঙে গেল শ্রীপতির। সে দেখল মাথায় মেঘ নিয়ে গৌরমোহনের বউ যাচ্ছে। সেই মেঘের প্রান্তে সোনালি রেখা, মেঘ ফেটে বেরুতে চাইছে যেন রংটি। সে পায়ে পায়ে এলো তার আড়ালে আড়ালে। কিন্তু যে কথাগুলো শুনেছে সে দুপুর থেকে তা কি স্বপ্নের ভিতরে হয়েছে? ঘুমের ভিতরে শোনা? নাকি মনে মনে জেনেছে শ্রীপতি? জাদুকরী না হলে পুরুষমানুষকে গাছ করে রেখে দেয়? তারপর সেই গাছ হাঁটিয়ে ঘরে নিয়ে আসে, তারপর সেই গাছ মানুষ হয়? ওই দেখো জাদুকরী তার কালো মেঘের মতো শরীর মেলে ধরেছে গাছের সামনে। যে বয়সে যৌবন সবচেয়ে মোহময় হয়, সবচেয়ে সুন্দর হয়, সেই বয়সই তো জাদুকরীর। এখন কী করে গৌরমোহন তাকে ফেলে গঞ্জে গঞ্জে মদরঞ্জি হেঁকে বেড়ায়? মদরঞ্জিতে ঘোড়াটা বন্দি হলো, সেই ঘোড়া নিয়ে চলে গেল গৌরমোহন। বন্দি করেছিল কে? সেই কোকিলা।

বাতাস উঠেছে খুব। বাতাসে বালি উড়ছে। বাতাসে গাছ তার মাথা দোলাচ্ছে। গাছ দুলছে, পুরুষ যেমন দোলে নারী সংলগ্ন হলে। কোকিলা যেন গাছের মাথা ধরে দোলাচ্ছে তার সব শরীর। মেঘ ছেয়ে ফেলছে সমস্ত আকাশ। মেঘের গা থেকে সোনালি মেঘের আলো পড়েছে কোকিলার মুখে। ঝাউ, আমলকী, হরিতকী, আম, কাঁঠালের বন, যুবতীর নবীন শরীর পেয়ে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে যেন। কোকিলা বধূ হয়ে উঠেছে ঝড়ের মতো প্রবল। গাছ আঁকড়ে ঝড়ের সঙ্গে দুলছে।

আর দাঁড়ায় না শ্রীপতি। আড়াল থেকে সরে চলে আসে ভিটেয়। ভানু উঠে বসে আছে। শ্রীপতির মাথা ভর্তি বালি, জামাকাপড়ে কাঠকুটো, শুকনো পাতার কুচি। ভানু তাকে দেখে হাসল, বাবু কি কোকিলার সহিত অরণ্যে গমন করেছিলেন?

ভানু এমন। কখন যে সাধু হয়ে সাধু ভাষায় কথা বলতে আরম্ভ করবে তা শ্রীপতিও জানে না। ভানু তার কথার জবাব না পেয়ে বলল, অরণ্যে অশ্ব খুঁজা হলো? কন্থক অরণ্যে নাই?

শ্রীপতি হাঁপাচ্ছে, বলল, ও জাদুকরী।

কে, কার কথা বলছেন বাবু?

তুই যার কথা বলেছিলি, কোকিলা বধূ।

কেন আপনারে কি জাদু করল?

শ্রীপতি বলল, দেখতে পেলে জঙ্গলের গাছ করে রেখে দিত, ঘোড়াটার তাই হয়েছে।

সত্যি!

হ্যাঁ, বাতাসও করে দিতে পারে।

পারেই তো, অনন্ত সারের মেয়েটা বন্নহীন অশ্বর কথা বলেছিল।

শ্রীপতি বলল, এখন কী উপায়?

ঝড় উঠল। ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে। বাতাসে উন্মত্ত হয়েছে গাছগাছালি, বনবাদাড়, আকাশ। বালি উড়ছে। বাতাসে ভিজেমাটির গন্ধ। গন্ধটা ঘিরে ধরছে ক্রমশ। আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। উঠোনের কদমগাছটি আছাড়িপিছাড়ি করছে। ভানু আচমকা উঠে দাঁড়ায়, বাবু, সে বাইরে রয়েছে, এই ঝড়ে বাইরে থাকা কি ঠিক!

শ্রীপতি বলল, সে জাদুকরী, সেই-ই ঝড় তোলে, আকাশের জল নামায়। গাছের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তোর কোকিলা, বনের ভিতরে আছে, কী আশ্চর্য মেঘ তার মাথায়! সোনালি মেঘ!

সোনালি মেঘ! কী বলেন বাবু?

হ্যাঁ স্পষ্ট দেখলাম।

বাবু, সে ঝড়ে বাইরে থাকবে—? লাফ দিয়ে ভানু উঠোনে নামে। শ্রীপতি আর কী করে বসে থাকে? সেও নেমে এলো। বেগবান বাতাস তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে যেন। ভানু ডাকতে ডাকতে ছুটল, কোকিলা, ও কোকিলা!

ছুটে আসছিল গৌরমোহনের বউ। বুকের কাছে কাঠকুটোর পাহাড়, মাথার চুল ঝাপটা মারছে পিঠে। শাড়ি আলুথালু, বাতাসে বসন এলোমেলো। সে ভয়তরাশে ছুটে আসছিল, কী ঝড় উঠল গো, সেদিনের মতো! বলতে বলতে তার যেন খেয়াল হয়, ছুটে দাওয়ায় উঠে গেল। কুটোর বোঝা রাখল দাওয়ার এক ধারে। তারপর উঠোনে নামতে নামতে শাড়িতে গা ঢাকতে লাগল। শ্রীপতির নজরে এসেছে, ব্লাউজটা খুব ছেঁড়া। লাল শাড়িটিও। আঁচল টানতে টানতে বিড়বিড় করল কোকিলা, ফেঁসে গেল।

শ্রীপতি দেখল ছেঁড়া শাড়ি দিয়ে ব্লাউজ ঢাকতে পারছে না গৌরমোহনের বউ। এ কী দশা! বিড়বিড় করল কোকিলা, বনে গেলে কাপড় ফাঁসেই, কী করব, উপায় নেই। কুটো ছাড়া রান্না হবেনি। না আছে কেরাচিন, না আছে কয়লা, ঘরে অতিথ!

আমরা চলে যাব। ভানু বলল।

কুথায় যাবে, সে আসুক। বলতে বলতে সে উঠে যায় দাওয়ায়। ঘরের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বলে, মদরঞ্জির যা খাটনি, দাম মেলে না। ওর চেয়ে যদি কাপড় বুনত সে লোক, বাঁচা যেত, বনে ঢুকলেই পুরনো কাপড় ফেঁসে যায়।

শ্রীপতি চুপ করে আছে। ভানু বিড়বিড় করে, মাদুর না বুনলে মোদের অশ্বটিরে বন্দি করতে পারতে কি? বাবু, ওসব জাদুকরীর ছল!

শ্রীপতি মাথা নামিয়েই থাকে। চুপচাপ। বৃষ্টি এলো যেন। ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগল শ্রীপতির গায়ে! বেশ ধারালো ভাব সেই বাতাসে। আকাশ থেকে এক ফোঁটা জলও পড়ল শূন্য উঠোনে, জাদুকরীর দেশে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *