1 of 2

অশ্বচরিত – ৩৭

সাঁইত্রিশ

কাল সারারাত বৃষ্টির দাপট ছিল। সমুদ্রের গর্জন ছিল, পাহাড়ের মতো ঢেউ ছিল, সেই সঙ্গে বাতাসও। সকাল হতে না হতেই খবরটা বিদ্যুদ্‌বেগে চারদিকে ছুটে যায়। রাতেই খবরটা ছিল, কিন্তু খুব গোপন, কান্না ভয় আর্তনাদের ভিতর জড়িয়ে ছিল। সারা রাত বৃষ্টির ভিতরে ছায়ার মতো মানুষ সমুদ্রে ছুটে গেছে। তীরভূমি ধরে চিৎকার করতে করতে দৌড়েছে। নিষ্ফল আর্তনাদে ছটফট করেছে।

এখন আলো ফোটায়, সকাল হওয়ায় খবরটা পৌঁছে যাচ্ছে সর্বত্র। পৌঁছে দিচ্ছে জেলেপাড়ার সকলে! পৌঁছে দিচ্ছে নিষ্কর্মা জেলের দল, যারা কাল সমুদ্রে যায়নি। আকাশটা এখনও থম মেরে আছে। ঘন ধোঁয়ার মতো মেঘ উড়ে আসছে সমুদ্র থেকে মাটিতে।

শ্রীপতিকে খবরটা দিয়েছে কে যেন, লঞ্চ ডুবি হয়েছে।

সি-ভিউ হোটেল ছাড়িয়ে ঝাউবন ধরে ব্যারিস্টার কলোনির পাশ দিয়ে শ্রীপতি তখন ছুটে গেছে। জেলেবস্তিতে পৌঁছতে সোরগোল কানে গেল। দেখল বেঙার বউ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে মাটিতে। তাকে ঘিরে আছে কালো কালো মানুষগুলো। জেলেবস্তির লোক এখানে ওখানে ঝাঁক বেঁধে। হাত-পা নেড়ে কথা বলছে সবাই। ভয়, উত্তেজনা দুই-ই মিশে আছে কথার ভিতরে।

দুটো লোক সেই ডুবন্ত লঞ্চ থেকে বেঁচে ফিরেছে উত্তাল সমুদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে। বেঙাও লাফ দিয়েছিল জলে, সাঁতরাচ্ছিল। তারপর একটা মস্ত উঁচু ঢেউ ওকে আড়াল করে দেয়।

সরকারবাবু কলকাতা গেছেন। তাঁর কাছে খবর নিয়ে গেছে একজন। বেঙা বেঁচে থাকবে কি না সন্দেহ আছে। লাখ সাতেক টাকা দামের লঞ্চের ইনসিওরেন্স আছে। কিন্তু কাল তো সমুদ্রে যাওয়া বারণ ছিল। জেলেবস্তিতে কার ঘরে ট্রানজিস্টার নেই? ট্রানজিস্টার বারবার সতর্কবাণী প্রচার করেছে। বীমা কোম্পানি কি ধরবে না এসব?

একজন বলল, লঞ্চ তো বেরিয়েছিল পরশু।

পরশুও তো আকাশ খারাপ ছিল।

তোর কী রে, তুই কি বীমা কোম্পানির দালাল? একটি লোক রুখে গেল আর একজনের দিকে

যারা বেঁচে ফিরেছে তাদের কাছে পুলিশ এসেছে। দুজনে হাঁ করে বসে আছে। এখনও ভীতিটা কাটেনি।

কেউ কেউ বলছে লঞ্চের গিয়ার বক্স খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আর সমুদ্রও ছিল বুনো ঘোড়ার মতো ক্ষিপ্ত, তেজীয়ান। বেশি দূর যেতে পারেনি।

শ্রীপতি সায়েবকে কোথাও দেখে না। জিজ্ঞেসও করতে পারে না। শুধু আস্তে আস্তে বলল, বেঙা কোথাও গিয়ে উঠেছে নিশ্চয়, বেলা হোক ফিরে আসবে, ডুবে যাবে কেন?

কে একজন বলল, ভোর রাতে নাকি একজন উঠে এসেছিল পারে, তারপর তীর ধরে পুব দিকে পালিয়ে গেছে, বেঙাই বোধহয়, মরেনি ঠিক।

কিন্তু পালাবে কেন? জবাব দিতে পারে না কেউ।

শ্রীপতি সায়েবকে খুঁজছিল। সায়েবের খোঁজেই সে ছুটে এসেছে। কাকে জিজ্ঞেস করবে? সবাই যে খুব উত্তেজিত হয়ে গেছে। ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কী করবে, উত্তেজনা প্রকাশ করবে কোথায়? কিছু লোক গরগর করছে রাগে, কিন্তু সূত্র খুঁজে পাচ্ছে না, বীমা কোম্পানি নিয়ে আলোচনায় যেমন একজন আর একজনের দিকে রুখে গেল—এমনি সবাই ফোঁস ফোঁস করছে।

ভানুকে দেখতে পায় শ্রীপতি। এক জায়গায় কিছু লোক চাক বেঁধেছিল, তাদের ভিতরে ভানু বসে আছে উঁচু হয়ে। শ্রীপতিকে দেখে উঠে দাঁড়ায় ভানু, বাবু কী হবে?

কী হবে? শ্রীপতি অবাক।

ভানু বলল, বেঙার খোঁজ নেই, লঞ্চ নাকি কালাপানিতে গিয়ে পড়েছিল।

কে বলল?

জেলেরা।

এরা জানল কী করে?

শোনা যাচ্ছে বাবু।

কী করে শোনা যাচ্ছে?

জানিনে বাবু, আমিও তো শুনলুম, কথাটা এই রকম রটেছে।

ভানুকে নিয়ে সরে আসে শ্রীপতি। চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে, সায়েব কই?

দেখিনি তো! চমকে ওঠে ভানু।

সায়েবের কথা কেউ বলছে না?

না তো।

নিশ্চিন্ত হয় শ্রীপতি। তার ভয় হয়েছিল রোষটা সায়েবের ওপর না পড়ে। এই সময় লোক খুব ক্ষেপে থাকে। যাদের সংসারের লোক যায় তারা তো ক্ষেপেই থাকে, তাদের প্রতিবেশীরাও। কী আশ্চর্য! সায়েবের কথা সবাই ভুলে গেল, ভানু ডাকল এক বুড়ো জেলেকে, চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে, সায়েব?

শ্রীপতি বুঝতে পারে ভানু গোলমাল পাকিয়ে দিল। সায়েব! সত্যি তো সায়েব কই? কোথায় গেল লোকটা? বেঙা ডুবেছে, না বেঁচেছে তার খবরও নিল না লোকটা! গুঞ্জন উঠতে লাগল। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়তে লাগল পুরো জেলেবস্তিতে। এক বুড়ো এসে শ্রীপতিকেই ধরল, সায়েব কুথায় মাইতিবাবু?

শ্রীপতি বলল, তোমরা জানবে।

: তারে তো দেখিনি।

: সায়েবরে কালাপানিতে নিয়ে গেল নাকি?

: না, না, সায়েব কাল সন্ধেতেও ছিল।

: ছিল তো গেল কুথায়, বেঙার ঘরে থাকে, তার বেপদে সায়েব গেল কুথায়?

: সায়েব তাহলে কালাপানিতে গিঁইছে।

: না, সায়েব যায় নাই।

: যায় নাই তো গেল কুথায়?

একজন আচমকা বলল, পালিয়েছে।

পালিয়েছে, পালিয়েছে! সায়েব পালিয়েছে। কথাটা ছড়িয়ে পড়তে লাগল। জেলেবস্তির যেসব মানুষজন, মেয়ে পুরুষ কুঁকড়ে, দুমড়ে বসে ছিল, কান্নায় ঝিমঝিমে হয়ে দুলছিল, তারা সবাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যেন। সায়েব পালিয়েছে! কথাটা কে বলল? না, শ্রীপতি মাইতি হোটেলওয়ালা। একজন বলল, সায়েব বাসে উঠে দীঘা ছেড়ে চলে গেছে খুব ভোরে। কথা গুনগুন করে আকাশে উঠতে লাগল।

: সায়েব ভোরের বাসে উঠে গেছে।

: কলকাতার বাস?

: না, মেদিনীপুরের বাস।

: না, কলকাতার বাস।

: না, বালিমুণ্ডার বাস ধরবে বলে কাঁথিতে গিয়েছিল সায়েব।

: বালিমুণ্ডা কেনে যাবে?

: পুরী যাবে সায়েব।

: না, না সায়েব আছে, যায় নাই।

: কে বলল?

: এই তো সকালেও ছিল!

: কে বলল?

: কে যেন বলল, সাগরের ধার ধরে হাঁটছিল।

: কোন দিক হাঁটছিল?

: পুব দিকে।

: না, না পচ্চিমে।

: সায়েব কি তাহলে ওই দিকে পালাল?

: কোন দিকে?

: ওই পুব দিকে, বা পচ্চিমে?

: দুদিকেই গেল নাকি?

: কেউ বলছে পুবে, কেউ বলছে পশ্চিমে।

: একা গেল?

: না, আর একজন ছিল।

কে ছিল আর একজন তা নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। শ্রীপতি বসে ছিল একটি দড়ির খাটিয়ায়। খাটিয়াটি একটি নবীন ঝাউগাছের গায়ে লাগানো ছিল। ঝাউপাতা কাঁপছিল আলাপে আলাপে। শ্রীপতি শুনছিল সেই আলাপ। ভানু এসে খাটিয়ার আর এক প্রান্তে বসে।

ভানু বলে, আর একজন ছিল নাকি মাইতিবাবু?

: কী করে জানব?

: বলছে বেঙা ছিল।

: বেঙা উঠে এসেছিল জল থেকে?

: তাই তো শুনা যাচ্ছে।

ভানু উঠে গেছে। শ্রীপতিও। ভানু ঘুরছে লোকজনের ভিতরে, জেলেদের ভিতরে। শ্রীপতিও মিশে গেছে তাদের ভিতরে। বেঙা বেঁচে আছে এই কথাটা কানে আসতে শ্রীপতি চঞ্চল হয়ে উঠেছে। বেঙা তার নেওটা। বেঙার ওপর তার মায়া আছে। বেঙা তার নেশারও সঙ্গী। বেঙাই লঞ্চ নিয়ে কালাপানি চলে গিয়েছিল। আবার বেঙাই কিনা সমুদ্র থেকে উঠে এসেছে। উঠে সায়েবকে নিয়ে উধাও। বেঁচে থেকে উধাও হবে কেন বেঙা?

: ঝড় জলে লঞ্চ নিয়ে বেরিয়েছিল কেন, তাই।

: সে তো একা বেরোয়নি।

: সে তো লঞ্চের ডেরাইভার না; তার ইচ্ছে অনিচ্ছেয় ফিশিং হয়?

: বেঙা তাহলে মরেনি?

: মরবে কেনে, আহা রে বেঙাটা কত ভালো! সায়েব উয়ার ঘর দখল করে নিয়েছিল, বেঙা পথে পথে, গাঙের ধারে ঘুরি বেড়াত।

: বেঙার সঙ্গে দেখা হইছিল পরশু দুফরে।

: বেঙা কহিছিলা উ লঞ্চ কালাপানিতে নিয়ে ফেইলবে।

: কবে কহিছিলা?

: একদিন সাঁঝের সময়, মনে নাই কবে।

: কেনে কহিলা?

: সায়েব উয়ারে লিশা ধরাইছিল, শুকনা লিশা। 1

: শুকনো লিশা কে না করে!

: তা বটে, কিন্তু বেঙার কিছু একটা হইছিলা।

: কী হইছিলা?

: জানা নাই, কিন্তু বেঙা মরে নাই, সায়েবের সঙ্গে পলাইছে।

: কোন দিকে পলাল?

: হয় পুব, না হয় পচ্চিম।

: উত্তরও হতি পারে।

: আহা রে বেঙার বউ পরী জ্ঞানহারা ইঁই গেছে, মুচ্ছো যাচ্ছে বেঙাটা ডুবে মরল, না মরল তো পলাল কেনে?

শ্রীপতি আর ভানু ধীরে ধীরে জেলেবস্তি থেকে ঝাউবন, ঝাউবন থেকে সমুদ্রের ধারে চলে আসে। রোদ নেই, আকাশে এখনও মেঘের আবরণ। তার নিচে শান্ত সমুদ্র। একেবারে নিশ্চল, নিঝুম, মগ্ন সমুদ্র। একে দেখে চেনাই যায় না কাল খ্যাপা জন্তুর মতো তছনছ করেছিল চারপাশ। ভয় দেখিয়েছিল ভীষণ। এখন কী শান্ত! ধীর স্থির, শান্ত ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে যেন তৃণভূমিতে। ঘাড় তুলে তাকাচ্ছেও না। শান্ত সমুদ্রের দিকে চেয়ে ভানু আর শ্রীপতি দুজনেরই মনে পড়ল পক্ষিরাজের কথা। ঘোড়াটি কতদিন চলে গেছে। ভাদ্র শেষ হয়ে এলো। আশ্বিন এলো প্রায়। এখন দূরে চোদ্দবেড়িয়ার চর সবুজ ঘাসে ভর্তি হয়ে গেছে, কাশফুলে ভর্তি হয়ে গেছে জমির ধার, নদীর ধার, সে নদী, সে জমি যেখানেই থাকুক। চোদ্দবেড়িয়ার চরে এইবার আসবে হিনাড়ি, চাঁদবালির ঘুড়ী। সে অপেক্ষা করবে দীঘার পক্ষিরাজের জন্য। আসবে আরও কত ঘোড়া, ঘুড়ীর দল। এখন চাঁদ ছোট হচ্ছে। এরপর সেই চাঁদ মিলিয়ে গিয়ে আবার ফুটে উঠতে থাকবে। একটু একটু করে, কলায় কলায় বড় হবে। সমুদ্র শান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়বে সৈকতভূমিতে। আহা! কী সুন্দর তা! ভানু স্তব্ধ হয়ে সমুদ্রকে দেখছিল।

শ্রীপতি বলে, মীরগোদা যাবি?

কেন?

মদরঞ্জিটা হলো কি না দেখতে।

হয়ে গেলে ওরা নিয়ে আসবে।

কোকিলা বধূরে দেখে আসতাম! শ্ৰীপতি শ্বাস নিতে নিতে বলে।

বাবু, কোকিলা বধূর মায়া ত্যাগ করুন।

কেন?

ভানু বলল, কেন তা জানিনে, তবে কোকিলার কথা না ভাবা ভালো।

শ্রীপতি দেখছিল পশ্চিম দিক থেকে একটি লোক ছুটতে ছুটতে সি-বিচ ধরে আসছে। ভানু ডাকল, কী হলো রে দুখে, হে-হই দুখে, কী হলো?

দুখে দাঁড়াল, জবাব দিল, ভোলা, ভোলারে পাওয়া গেল।

কোথায়?

হু ই ই পশ্চিমে, নোতন দীঘার বাঁক যেখেনে, বোল্ডারে বডি আটকে আছে, বডির কী অবস্থা বাবু, বডি খুবলে খেই নিইছে, আমি যাই, খপর দিই। লোকটা উঠে এসে ঝাউবনের ভিতরে ঢুকে গেল।

শ্রীপতি বলল, মদরঞ্জিওয়ালার কাছে থাকবে কেন?

কার কথা বলছেন?

কোকিলা।

ভানু বলে, বাবু ভোলারে চিনতেন?

বেটা ভ্যান টানত না?

হ্যাঁ, সে গিয়েছিল লঞ্চে?

যখন যেমন কাজ পায়, বলছি কোকিলারে বশ করতে পারবিনে?

ও কি বশ হবার মতন, আপনার তো একটা মেয়েমানুষ আছে একস্ট্রা।

ওরে বদলি করে দেব এখেন থেকে।

পারবেন?

শ্রীপতি বলল, পারব না কেন, ট্রান্সফার ডিউ হয়ে গেছে ওর, ওর নামে ফলস পিটিশন পাঠালেই হয়ে যাবে, মেয়েমানুষ, কত রকম অ্যালিগেশন আনা যায়।

ভানু চুপ করে আছে। ভানুর মাথায় ভোলা ভাসছিল। কে ভোলা ঠিক শনাক্ত করতে পারছে না ভানু। সে বলল, বাবু, আপনি যান, আমি লাশটা দেখতে যাব।

আমিও যাই, তোকে কিন্তু করতেই হবে ওটা।

সে যদি না রাজি হয়?

রাজি করাবি, লোভ দেখাবি, মদরঞ্জিওয়ালার বউ তো, কীরকম গরিব তো দেখেই এলাম, মদরঞ্জিওয়ালার কাছে কোন সুখে থাকবে?

ভানু বলল, মদরঞ্জিওয়ালা ওরে আঁকা শিখিয়েছে।

আঁকা কেউ শিখাতে পারে?

মদরঞ্জিওয়ালা ওর গুরু।

রাখ ওসব, পারবিনে তুই কাজটা করতে?

ভানু বলল, ঠিক আছে যাব, কিন্তু কন্তুক যদি না ফেরে যাই কী করে?

পাগলামি করিসনে ভানুবাবু।

ঘোড়াটা ফিরুক, তখন সব হবে।

শ্রীপতি বলল, কদিন ধরে কোকিলা আমারে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, ঘুমোতে দিচ্ছে না, আমি শুধু তোর জন্য বসে ছিলাম।

কথা বলতে বলতে দুজনে এগিয়ে যাচ্ছিল পশ্চিমে, যেদিকে হাঙরে, মাছে খুবলে খাওয়া একটি লাশ এসে আটকে আছে বোল্ডারের খাঁজে। ভানুরা ভিড় দেখতে পায়। তাদের পাশ দিয়ে দুটো লোক ছুটে যায় সামনে।

শ্রীপতি বলল, আজ যাবি?

আজই?

হ্যাঁ, খেয়েদেয়ে রওনা হ, টাকা নিয়ে যা।

আজ কেন, ছটা লোক নিখোঁজ হয়েছে।

শ্রীপতি বলল, বডি ফিরে আসবে, সমুদ্র নেয় না।

বেঙাটার জন্য মন খারাপ হচ্ছে বাবু।

সমুদ্র অনেক দিন নেয়নি, নিয়েছে।

বেঙা যদি বেঁচে থাকে?

কী করে বাঁচবে, হাঙরে খেয়ে নেবে ওকে।

না, না যে কথা বলছিল সবাই।

গাঁজাড়ুদের কথা রাখ, তুই যা কোকিলার কাছে।

মনটা খারাপ, সেই ফিরলাম, সে আর আমি, ও মাইতিমশায় মনে পড়ে?

ওখেনে গেলে মন ভালো হয়ে যাবে।

ভানু বলল, ও কিন্তু কুহকিনী বাবু।

খ্যাখ্যা করে হাসে শ্রীপতি, জব্বর মেয়েমানুষ, ওকে নিয়ে গিয়ে ভীমাপুরের চাষবাড়িতে রেখে দেব।

সে জমি তো গরমেন্ট নিয়ে নেবে।

গরমেন্টের আঠারো মাসে বছর, আগে তো কোকিলারে রাখি।

আজ বাদ দিন বাবু, কী কাণ্ডটা হলো, ভোলারে আমি চিনতে পারছি এবার, ফসসামতো ছেলেটা তো, শুধু গান গেয়ে গেয়ে ভ্যান টানত।

শ্রীপতি জবাব দেয় না। দুজনে লাশকে ঘিরে থাকা ভিড়ের গায়ে এসে দাঁড়ায়। ভানু উঁকি মারছিল। উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না। পিঠের কতখানি মাংস খেয়ে নিয়েছে জলের জন্তুতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *