1 of 2

অশ্বচরিত – ১৪

চোদ্দো

মেয়েমানুষটার নাম সুভদ্রা। সুভদ্রা বলেই তাকে ডাকছিল রামচন্দ্র। পরিপাটি করে খেতে দিল ভানুকে। একেবারে গেরস্ত ঘরের রান্না। এ রান্নার স্বাদ দীঘার হোটেলে মেলে না। আবার এমন রান্না কোকিলা বধূও করেনি। কোকিলা বধূর হাতে রান্না এমন ধোঁয়াটে মাংস তো জোটেনি তাদের। ওদের অভাবের সংসার। ভাতে, তরকারিতে অভাবের ছায়া। আর মন না দেয়ার চিহ্নও তো পেয়েছিল ভানু। রান্নাবান্না হলেই হয়, আসল হলো মদরঞ্জি। মদরঞ্জি যে কত রকমে সুন্দর করা যায় তাই নিয়েই ভেবে মরে কোকিলা।

ভাত দিল। ভাত খাওয়ার পর হাত ধোয়ার জল দিল। পান দিল। ভানু বসে বসে সিগারেট টানতে লাগল। সিগারেট বেরোল রামচন্দ্রের হাত থেকে। রামচন্দ্র তাকে সিগারেট দিয়ে গেল রান্নাশালের দাওয়ায়, মেয়েমানুষটা খাবে, ডর লাগলে খাবে কী করে?

তারপর একসময় সুভদ্রার খাওয়া হলে রামচন্দ্র ফিরে এলো, বসল ভানুর পাশে, জিজ্ঞেস করল, ভানুবাবু তুমি এলা কেনে?

ভানু বলল, আমার কন্থককে খুঁজতে, আমাকে ছাড়া সে তো থাকতে পারে না।

আর?

আর কী?

অশ্ব যে মিলিবেনি তা কি জানোনি ভানুবাবু?

যদি মিলে যায়?

রামচন্দ্র বলল, বাবুরে কহিবা?

কী?

সুভদ্রার কথা।

কী, তুই তারে সাহস দিস, তাই?

হাঁ বটে। ভানুকে অবাক করে রামচন্দ্র সেই কথাই বলল, মেয়্যামানুষটা খুব ডরায়, উয়ার পাশে তো থাকতা হিবে।

ভানু বলল, থাক না, কে তোরে বারণ করে?

বাবুরে কহিবা?

কী কহিব?

রামচন্দ্র বলে, ই মেয়্যাছেল্যাটার কথা।

কী?

রামচন্দ্র বিড়বিড় করে, কীভাবেই বা কহিবা, আচ্ছা থাক, বাবুরে কহিতে হিবেনি, বাবু কবে আসিবে?

বাবু আর আসবে না, আমি রিপোর্ট নিয়ে যাব।

তুমি কহো বাবুর আসা দরকার।

কেন?

লুটিশ পড়ছে, কোন জমির চাষা হিবে কোনজন তা যদি বাবু কহি দেয় উয়াদের সুবিধে হয়।

সে তো দেরি আছে।

হাঁ, ধান উঠার পর তো হবে, ই চাষটা হই যাবে।

তখন বাবু আসবে।

না, না ইখন আসা দরকার, লিস্টি হিবে তো, নাম সব মোর নিকট রহিছে।

ভানু বলল, চাষারা তাদের নাম লিখাবে, বাবুর কী?

বাবু তো টঙ্কা লিবে।

টঙ্কা লিবে! অবাক হয়ে গেল ভানু। মিলিটারি জমি নেবে, সেই জমির দাম বাবুকে দেবে। আর চাষা পাবে ফসলের দাম। তার সঙ্গে বাবুর পাওনার কোনো সম্পর্ক নেই। বাবুর টাকা থেকে কেটে তো তাদের দেবে না। কিন্তু রামচন্দ্র নায়েব বলছে অন্য কথা, সরকারি লোক বলে, যদি বাবু চাষার নাম না বলে তবে তারা চাষার ফসলের দাম দেবে না, কিন্তু টাকা তো ধরা আছে। দশটা ফসলের দাম ঠিক হয়েছিল মহাপাত্রপুর, দে-পাল, কুসমাড় মৌজার অধিগ্রহণের সময়। পাঁচ বছর, দশ ফসল। দেড়শ বিঘের দেড়শ চাষি হোক আর এক চাষিই হোক, ফসলের দাম তো মোটা। সরকারি লোক বলে গেছে বাবু চাইলে তারা ওই টাকার অর্ধেক বাবুকে দিয়ে বাকি অর্ধেক নিজেরা নিয়ে নেবে। শুধু বাবুকে সই করে দিতে হবে লিস্টিতে। লিস্টি তারা আনবে। সব ভুয়ো নাম। রামচন্দ্র নায়েবও সই করবে লিস্ট আরও পাকা করতে।

ভানু বলল, উত্তম প্রস্তাব।

হাঁ, বাবুকে আসিতে হিবে, বাবু এলা মু বাবুর সহিত ভুবনেশ্বর যাবা, ভুবনেশ্বরে গিয়া সার্ভিয়ার নায়েব বাবুর সহিত কথা কহিতে হিবে, কম টঙ্কা তো লয়, লাখো টঙ্কা হই যাবে, বাবুর পঁচাশ হাজার, নায়েব বাবু পঁচাশ হাজার নিবে, সব উয়াদের বেপার।

ভানু বলল, তোর কী হবে?

কী আবার হিবে?

তুই কত পাবি?

মু পাবা কেনে?

বাহ্, দালালি করছিস, পাবি না?

রামচন্দ্র মাথা নাড়ে, বাবু যা দিবে বাবুর নিমক খাওয়া মানুষ মু, যাই মেয়্যাছেল্যাটা একা রহিছে।

থাক না একা।

উ ডর খায়, একা থাকিবে কী করি?

তাহলে ও সোয়ামির কাছে ঘুরে যাক। সোয়ামি নেয় না।

ফের বিয়া করুক।

তা কি হয়?

হয় না?

কী জানি! উঠে পড়ে রামচন্দ্র, হয় কিনা বাবু কহিবে, বাবুর নিকট ই কথাটা কহিবে?

কহিব।

মু কহি কী, বিষ্ণু পাতর ঘুরছে দশটা ফসলের দাম লিবে তাই।

চাষা তো।

কোন জমির চাষা তার কি ঠিক আছে?

ভানু বলল, তুই যা।

হাঁ যাব, সুভদ্রা ডর খায়, একা রহিতে পারেনি, কথাটা যদি না কহিতে পারো বাবুরে ভীমাপুর আসিতে কহো, জমি চলি যাবে, বাবুর তো সব জানা দরকার।

ভানু দেখল, অন্ধকার বারান্দার অপর ধারে স্ত্রীলোকটি বসে আছে। লম্বা কাছারিবাড়ি, পরপর ঘর। শেষ ঘরটির দরজার কাছে বসে স্ত্রীলোকটি চেয়ে আছে এদিকে। অন্ধকারে তার চক্ষুদুটি টের পাওয়া যায়। দৃষ্টির আলো অনুভব করা যায়। আবার ঝিপঝিপ করে বৃষ্টি এলো। সুভদ্রা তাদের কথা শুনছে। তাদের দুজনের কারও গলাই নরম নয়। ভানু মনে মনে ভাবে তাকে খুব বড় মুরুব্বি ভেবেছে দুজনে, তাই মাংস রেঁধে খাইয়ে জপাচ্ছে রামচন্দ্র। আকারে ইঙ্গিতে মনোবাসনা প্রকাশ করছে। আর ভানুকে তো ভালো করে সন্তুষ্ট করতেই হবে, ভানু যদি দীঘায় ফিরে বাবুর কাছে সাতকাহন করে তো রামচন্দ্রর কপালে দুঃখ আছে। কাছারিঘর তো ফুর্তির জন্য নয়। ভানু চাপা গলায় বলল, যতই ডরাক উ মেয়েমানুষ, বাবু এরকম দেখলে রেগে যাবে।

কেনে?

কেনে তা বোঝো না?

ও বড় দুখী।

দুখী হোক, মেয়েমানুষ তো, তারপর স্বামী ত্যাগ দেয়া।

কেনে সে মেয়্যামানুষ কি মেয়্যামানুষ লয়? আচমকা যেন ক্ষেপে যায় রামচন্দ্র, দুখী, অনাথ, উয়ার কি সাধ আহ্লাদ নাই?

আছে তো কী হবে?

কী হবে মানে? রামচন্দ্ৰ ফুঁসে ওঠে।

ভানু হাসে মনে মনে, বলে, কাছারিঘরে রেখো না।

তবে যাবে কুথায়?

তাতে তুমার কী?

দুখী যে।

হোক দুখী।

ইটা তুমি কী কহো ভানুবাবু? রামচন্দ্র যেন নাচার হয়ে জিজ্ঞেস করে।

আমি কি কহি, বাবু কহিবে এই রকম।

কহিছে কুছু? রামচন্দ্র সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে।

বাবু কি জানে?

ওই পাতর হারামিটা ইসব কহে নাই তো?

না-ই মনে হয়।

উয়ারে কুছুতেই জমিন দিব না। রামচন্দ্র গরগর করতে থাকে।

ভানু বোঝে উলটো বিপদ। রামচন্দ্র তার রাগ ঝাড়ছে বিষ্ণু পাতরের ওপর। সে বলল, ও কী করবে, বাবু যদি আসে তো দেখবে।

তখন না হয় সুভদ্রা অন্য কুথাও রহিবে।

সে এখনই থাকুক না কেন। ভানু বলে।

ইটা তুমি কী কহো ভানুবাবু, উ বড় দুখী, ডরায় খুব, একা কুথাও রহিতে পারে না, উদিকে ঠিকেদার, পুলিশ, মিলিটারি, লেবার, তারা যদি উয়াকে ধরে? তারা মেয়্যামানুষ খুঁজে সর্বক্ষণ।

ভানু দেখল মেয়েমানুষটি যেন গুটিয়ে গেছে। কী অদ্ভুত ভঙ্গি! যেন হাত-পা শরীরের ভিতর ঢুকিয়ে বসে আছে স্তূপ হয়ে। সে রামচন্দ্রকে দেখল। মোষের মতো পুরুষমানুষটা নিঃশ্বাস ফেলছে জোরে জোরে। খুব রেগে গেছে শ্রীপতি মাইতির পোষা পুরুষটি। ভানু তার গায়ে হাত দিতেই ঝটকা মারে রামচন্দ্র, বলে, গাঁ তো লিবে, সেই সঙ্গে সব লিবে ইটি কি জানো ভানুবাবু?

ভানু দেখল সুভদ্রা উঠে ঘরে গেল। ভানু আর রামচন্দ্রর কথা বোধহয় তার সহ্য হচ্ছে না। ভানু তার গলার স্বর খাটো করে আনে, চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছিল?

কী হয় নাই কহো।

বাবু কি জানে?

বাবু কেনে জানিবে, উ তো বাবুর কহেনি।

কী হয়েছিল?

বলছি তো ঠিকেদার, পুলিশ, লেবার, মিলিটারি সবু মেয়্যামানুষ খুঁজে, আর কী কহিব ভানুবাবু, ইখনও ডরায়।

ভানু নিশ্চুপ হয়ে গেল। বহুদূরে আকাশের গায়ের আলো যেন সার্চলাইট। সার্চলাইট দিয়ে মেয়েমানুষ খোঁজা কি দেখেনি ভানু? মন ভার হয়ে গেল। কিন্তু কৌতূহল তবু যায় না, জিজ্ঞেস করে, বিচার হয় নাই?

কে বিচার করিবে?

থানায় যায় নাই?

থানা তো ফের ধরিবে, উয়ার সোয়ামি টঙ্কা লিয়ে মুলুক পার হয়ে বালেশ্বরে চলি গিইছে, ভুবনেশ্বর, কটকও চলি যেতি পারে। কে উয়ার পিছে দাঁড়াই দুটা কথা কহিবে, কাঁচা টঙ্কার লোভ, সোয়ামিই উয়াকে ঠিকাদারের হাতে বিচে দিয়া চলি গিইছিল কি না কে কহিবে?

ভানু বলল, ডাকবি ওকে।

আসিবেনি, ডরায়।

আমাকে ডরাবে কেন? ভাত তো দিল।

ডাকিব কেনে?

একবার দেখব, বাবুকে তো কহিতে হবে।

কহিবে? রামচন্দ্র আশান্বিত হয়ে ওঠে।

হাঁ কহিব, কিন্তু আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি বাবু কিছুই জানে না!

না, বাবুর তো ইটা জানার বেপারনি

না, না, জমি যে চলে যাবে।

শুনিছে বাবু, বাবু তো জমিনের হিসাবই জানেনি।

ভানু বলল, তবে আর বাবুর কথা ভাবিস কেন?

রামচন্দ্র মাথা দোলায়, বাবু তো, মহাজন, মালিক হইছে। মোর সব ভার বাবুর, না কহিলে হিবে কেনে, বাবু কহিলেই তো উ ইখানে রহিতে পারে, বাবু না কহিলে উর তো থান নাই ই কাছারিঘরে।

বাবু যদি না কহে? জিজ্ঞেস করে ভানু।

না কহিবে কেনে?

দশ হাত ঘোরা মেয়েমানুষ।

দশ হাত! গরগর করে ওঠে রামচন্দ্র, ঠিকেদার, লেবার, পুলিশ মেয়্যামানুষ খুঁজে, উয়াদের থাবায় পড়ি গিইছিল, আর যতন নায়েকের মেয়্যা, হরিহর দঁড়পাটের মেয়্যা, আকুল পয়ড়ার বিধবা বুন, সব বালেশ্বরে গিয়া লাইনে দাঁড়াই গিছে, ইয়া ছাড়া উপায় নি, গলায় দড়ি দিয়া মরিছে সুফল দাশের বউ, ইসব তো বাবুর জানা উচিত।

জেনে বাবুর কী হবে?

জমিন চলি গিলে, গাঁ চলি গিলে ইমন হয়, ইটা বাবুর জানা উচিত।

ভানুর মনে পড়ল শ্রীপতি মাইতির মুখখানি। কী সুখী কী তৃপ্ত! এই দেড়শ বিঘের এক ছটাকও শ্রীপতি মাইতির হাতে করা নয়। সব ঠাকুরদা, তার বাবার আমলের। পাহাড়ি জমিদারের আমলের মধ্যস্বত্ব। ভানুর ওদিকে হলে কবে এসব জমি দখল হয়ে যেত, খাস হয়ে যেত। এখেনে তা হবার নয়। ওসব আইন এদিকে নেই। কত জমি না ছিল! জমি বেচেই তো হোটেল হলো দীর্ঘায়। জমির আয়েই তো চলে। ধান চাল বেচা টাকা কম নিয়ে যায় এদিক থেকে শ্রীপতিবাবু! জমিন নিয়ে নেমেছে জগতে, সুতরাং জমিন থাকলে কী হয়, জমিন চলে গেলে কী হয় তা জানবে কী করে শ্রীপতি? জেনেই বা করবে কী? কম টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে? তাতে কোন মেয়েমানুষ ধর্ষিত হলো, লাইনে গেল, গলায় দড়ি দিয়ে ম’লো সে খোঁজ রাখবে কেন সে? ভানু বলল, বাবুর তো কাছারি, ভেবে দ্যাখো, বাবু যদি রেগে যায়।

রামচন্দ্র বলে, একই কথা কহো কেনে বারে বারে. উ কাছারিতে রহিবে।

কাছারি তো বাবুর।

তবু রহিবে, কোনঠে যাইবে, শুনো ভানুবাবু, তুমি বাবুরি বুঝাও, কাছারিঘর, জমিদারি, মা’জনি যদি সব উঠি যায় তো বাবুর কী রহিবে?

চমকে ওঠে ভানু, তার মানে?

মাহাজনবাবু, জমিদারবাবুর যদি জমিদারি না রহে তো কী রহে?

কেন টঙ্কা, বদলে তো টঙ্কা মিলবে।

তা মিলিবে, কিন্তু টঙ্কা তো কত লকের অছি।

বাবুর থাকবে।

টঙ্কায় কী হবে, জমিন, ভুঁই না থাকিলে তো চাষা থাকেনি, চাষা না থাকিলে কী থাকে বাবুর? কাছারিও তো রহিবেনি।

কাছারি না থাকলে তোরা কোথায় যাবি?

যাব, কিন্তু ভুঁই যাতে না যায় বাবুরে সে ব্যবস্থা করিতে কহো।

কী করে হবে?

হিবে, যদি সবটা না নেয় তো হিবে

সবটা নেবে না?

কী জানি! মোর মাথার ঠিক নাই। মাথা ঝাঁকাতে থাকে রামচন্দ্র, তারপর বলে, ভুঁই না রহিলে মু তো নায়েব রহিব না।

না।

ভানুবাবু, তুমি বাবুরে কহো রামচন্দর আর সুভদরা কাছারিবাড়িতে রহিছে, উপায় নি সুভদরার, জমিন চলি গিলে ইসব হয়, ভুঁই ঠিকেদার, পুলিশ, মিলিটারির নিকট গিইলে ইমন হয়, তখন কাছারিঘর থাকেনি, চাষাও থাকেনি, চাষাবউ ডরায়, বাবুর ইটা জানা দরকার।

ভানু শুনছিল। শুনতে শুনতে টের পাচ্ছিল রামচন্দ্র সরে যাচ্ছে তার কাছ থেকে। এই রামচন্দ্রকে সে গত বছরও দেখেছে। তখন মুখ দিয়ে কথা বেরোত না। এখন কিনা বাবুর বাধ্য রামচন্দ্র একটা জলজ্যান্ত মেয়েমানুষ নিয়ে কাছারিঘরে বাস করছে। আর তার বসবাসের পক্ষে যুক্তি খাড়া করছে। মহাপাত্রপুর, দে-পাল, কুসমাড় গ্রামের দিকের জ্বলন্ত আকাশ বদলে দিয়েছে রামচন্দ্রকে। অবাক হয়ে দেখল ভানু, ওদিকের আকাশের অন্ধকারে আগুনের গোলা উঠে যাচ্ছে। ঝলসে যাচ্ছে মেঘ। ভানু একা বসে আছে। দেখতে পাচ্ছে সমুদ্রের অন্ধকারে গিয়ে পড়ছে আগুনের গোলা, রকেট উঠছে। দেখছে পোড়া আকাশ থেকে ছাই ঝরছে। ভানুর বুক হিম হয়ে গেল। এমন জ্বলন্ত আকাশের নিচে তার কন্থক কি বাঁচবে? ভানু দেখল আকাশ দিয়ে যুদ্ধবিমান যাচ্ছে। আষাঢ়ের মেঘ পুড়ে যাচ্ছে। সার্চলাইট নিচে পড়ছে। ভানু ঢুকে গেল ঘরে। জানালা দিয়ে দেখতে লাগল। সার্চলাইটে ঘোড়াটাকে খুঁজছে নাকি? ভানু খোঁজে এক কারণে, তারা খোঁজে অন্য কারণে। ভানু গুঙিয়ে ওঠে, কন্থক হে! পুড়ে যাবি, ফিরে আয়, আকাশ তোরে কুহক করেছে, ফিরে আয়।

ভানুর চোখ দিয়ে আচমকা জল গড়াতে থাকে। মনে পড়ে শাক্য সিংহ অবতরণ করলেন অশ্ব থেকে। শাক্য সিংহ তাদের বিসর্জন দিয়ে প্রবেশ করলেন বনমধ্যে। শূন্যপৃষ্ঠ কন্থকের চোখে জল। ছন্দকের চোখে জল। ভালোবাসার বড় টান! তুই আমার কেউ না, তবু তুই-ই আমার সব। আয়, ফিরে আয় কন্থক। রাজপুত্র তো রেখে গেছে আমাদের। যত দিন, যত যুগ, যত সহস্র বছর যায় যাক, আমি তোকে নিয়ে থাকব, তুই আমাকে নিয়ে থাকবি। ঘোড়া না থাকলে ঘোড়াওয়ালা ভানু দাস কে? ঘোড়ার দেখাশুনোই যখন হবে না, এ পৃথিবীতে ছন্দকের কাজটা কী?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *