তেরো
ভীমাপুরের অন্ধকার অনেক বেশি কালো। নিশ্ছিদ্র। এ অন্ধকারের গা থেকে কোনো আলো বেরোয় না, যেমন মীরগোদায়, প্রাচীন জাহাজঘাটার কোলে। ভানুর মনে হয় মীরগোদার অন্ধকার অনেক পুরনো, ভীমাপুরের অন্ধকার নবীন, তাই এর তেজ বেশি। এ অন্ধকারে নিজের হাত-পাও দেখা যায় না। আকাশ চেনা যায় না গ্রহ তারাদের চক্ষুতে। কেননা আকাশের প্রতিটি বিন্দু এখন ঘন মেঘে প্লাবিত I বারান্দায় বসে ভানু অন্ধকার দেখছিল। তার পাশে বসে আছে নায়েব রামচন্দ্র। বৃষ্টি থেমেছে। অন্ধকারে ব্যাঙের দল ডেকে যাচ্ছে অবিশ্রান্ত। দূরে, চাষজমি পার হয়ে আরও দূরে, ভীমাপুর পেরিয়ে দিগন্তের আকাশ আলো হয়ে আছে। মেঘ কতটা ভয়াল তা দেখানোর জন্যই যেন ওই আলো। ও আলোয় মাটি দেখা যায় না। নিজেকেও না। ওই হলো মহাপাত্রপুর, দে-পাল, কুসমাড়। ওখেনে এখন তারকাঁটা। মানুষের ঢোকার সাধ্য নেই। ওদিকের সমুদ্র সেনাবাহিনীর দখলে।
তোমরা সমুদ্দুরে যাও না?
এদিকি সমুদ্দুরি যাবার উপায়নি।
কেন?
পার বরাবর তারকাঁটা লাগাইছে মিলিটারি।
ওদিকে কী হয়?
রামচন্দ্র বলল, আজ ইত মেঘ, পানি, আজ হিবে কি না কে জানে, না হিলে আশমানগোলা দিখতে পেতি।
সে কী?
আশমানে আগুন।
বাবু এসব জানে?
কেনে জানিবে না।
বাবু এসব কহে না তো?
কী আর কহিবে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে রামচন্দ্র।
রামচন্দ্র তোমার ঘর কোথায়?
অলঙ্কারপুর।
কোন অলঙ্কারপুর?
দীঘা অলঙ্কারপুর।
ঘরে যাও না?
ভিটা তো নাই।
নাই কেন?
মাথা নাড়ে রামচন্দ্র, জানিনি, বাবুঘরে মানুষ হইছি।
মা-বাপ?
নাই। বিয়ে?
হয় নাই, বাবু কহিলে তো হিবে।
বাবু কহিলে হিবে। রামচন্দ্রের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় ভানুর মুখে, বিস্মিত ভানু জিজ্ঞেস করে, বাবু তাই কহিছে? ভানুর মুখে আবার রামচন্দ্রর ভাষা উচ্চারণ।
হাঁ বটে।
বাবু যদি না কহে?
কী আর হিবে! রামচন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রান্নাঘরটি কাছারিবাড়ির পশ্চিম ধারে। কাছারিবাড়ির বারান্দার পশ্চিম দিকেই বসে আছে রামচন্দ্র আর ভানু। কথা বলতে বলতে ভানু দেখছিল ত্রস্ত পায়ে মেয়েমানুষটি হারিকেন হাতে এক একবার বেরিয়ে আসছে রান্নাঘরের আড়াল থেকে। আচমকা ডাকল রামচন্দ্রকে, শুনিবা হে।
রামচন্দ্র বসেই সাড়া দেয়, কী কহো?
কুকড়াটি মারি দিবে তো।
দিব। বলে রামচন্দ্র উঠে দাঁড়ায়। বারান্দা থেকে নামে তার মস্ত আঁধারময় দেহখানি নিয়ে। অদৃশ্য হয়ে যায় অন্ধকারে। আর কোথাও কোনো সাড়া নেই। ব্যাঙের ডাক এই আঁধারময় প্রকৃতির অন্তর্গত হয়ে যাওয়ায়, কোনো শব্দই যেন আর কানে আসছে না। অনেকটা সময় বাদে ভানুর মনে পড়ল কন্থকের কথা। ঘোড়াটাই তাকে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে। ভানুর আর দীঘায় মন নেই। হোটেল, ট্যুরিস্টে মন নেই। ঘোড়াটি তাকে যেন কুহক করছে দূরে, আড়ালে কোথাও দাঁড়িয়ে। বাবু শ্রীপতি মাইতি এমনি দিলখোলা মানুষ, তার টাকা ঠাকুর খায়, ঠাকুরানি খায়। খায় হাসপাতালের নার্স ভারতী। যদি কোকিলা বধূ তাকে কুহক করে ডাকতে পারে, সেও লুটতে পারে বাবুর টাকা। কিন্তু কোকিলা-গৌরমোহন কি তেমন? বাবুকে ভারতী চৌধুরীর হাতের থেকে টেনে আনার জন্য বাবুর বউ যথেষ্ট নয়। গিন্নি শুধুই গিন্নি। ছেলেমেয়ে মানুষ, সংসার, গয়নাগাটিতে সন্তুষ্ট। বাবু তো অর্ধেক দিন বাড়িই যায় না, হোটেলের ঘরে কাটিয়ে দেয়। কিংবা সমস্ত দিন পড়ে থাকে ভারতী চৌধুরীর ঘরে, বাবুর বউ তাকে কুহক করতেই পারে না। বউটাকে কত সাবধান করেছে ভানু, কিন্তু বউয়ের সেই সাধ্যই নেই যে স্বামীকে নিজের কাছে টানে। শুধু মুখ চালালে হবে? অশ্রাব্য ভাষা বলে বাবুর সুন্দরী বউ।
অন্ধকারে যেন একবার মোরগের ‘কঁক’ আর্তনাদ শোনা গেল। তারপর সব চুপচাপ। কোনো কথাও শোনা যাচ্ছে না। মোরগ মেরে ছাড়িয়ে দিচ্ছে বোধহয় রামচন্দ্র। ভানু দূরের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন আবার মনে পড়ে পক্ষিরাজের কথা। কাল রামচন্দ্রর সঙ্গে গিয়ে খোঁজ করতে হবে সাইকেল দোকানি জলেশ্বর নিবাসী মহাপাত্র বাবুর। হতেও পারে চোরাই ঘোড়া কিনেছে সাইকেল দোকানি। ভানু পকেট থেকে বিড়ি বের করে ধরাবে তো দেশলাই নেই। দেশলাই কোথায়? ভানু অন্ধকারে তাকায়, যদি রামচন্দ্র আবির্ভূত হয়। যদি দে-পাল মহাপাত্রপুরের মেয়েমানুষটি হারিকেন হাতে বেরিয়ে আসে কাজে? কিন্তু তাদের তো কোনো সাড়াশব্দই নেই। ভানু গলা খাঁকারি দেয়, চাপা গলায় ডাকে, রামচন্দর।
এত আস্তে ডাকল যে নিজের ডাক নিজেই শুনতে পায় না ভানু। অনেক সময় তো গেছে রামচন্দ্র, একটা পাখি মারতে এত সময় লাগে! ভানু উঠে দাঁড়ায়। নেমে আসে উঠোনে নিঃশব্দ পায়ে।
রান্নাঘরে টেমি জ্বলছে। ধোঁয়াটে লাল আলো। কাঠের উনুনে ভাত চেপেছে বোধহয়! ভানু দাঁড়াল রান্নাঘরের ছোট, অপরিসর দরজায়, রামচন্দর হে।
জবাব নেই। জবাব নেই মানে কেউ নেই। ভানুর হাতে বিড়ি। ভানু গুড়ি মেরে ভিতরে ঢুকে গেল। বিড়িটা বাড়িয়ে ধরল টেমির ওপর। তারপর জ্বলন্ত বিড়ি হাতে গুড়ি মেরে বেরিয়ে এলো। জোরে ধোঁয়া টেনে অন্ধকারে উগরে দিল। মিহিদানার মতো এক এক বিন্দু বৃষ্টি যেন পড়ছে ওপর থেকে। এভাবে শিশির পড়ে। হিম পড়ে ভিজে যায় মাটি। কিন্তু সেই ঋতুর তো এখনও অনেক দেরি। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকল ভানু। কোথায় গেল ওরা দুজনে? ভানু ভাবল ঘরে ঢুকে ব্যাগ থেকে টর্চটা নিয়ে আসে। কিন্তু অন্ধকারে তার ভালোই অভ্যেস আছে। সে একটু একটু করে এগোয়। রান্নাঘরটা বেড় দিয়ে পিছন দিকে যেতেই চাপা হাসির শব্দ শুনতে পায়। বউটা হাসছে। আলো জ্বলছে চাতালের মতো জায়গায়। ওখানে টিউবওয়েল। পাখির পালক ছিঁড়ে জলে ধুচ্ছে রামচন্দ্র। ভানু অন্ধকারে দাঁড়িয়েই থাকে।
ভালো করি ধুয়া করো নায়েব। বউটি মিহিগলায় বলে।
আর কত ধুবো?
পালক রহেনি যেনে, ফিরে ধোও।
না, লক রহিছে একা।
থাউক না লক, মুর ডর লাগে, একা ইখানে রহিব?
কীসের ডর? নায়েব রামচন্দ্র উঠতে যায়।
উঠো কেনে, বসো নায়েব, কাম সারা হক।
আলো তো রহিছে।
বড্ড আন্ধার, তুমি রহ নায়েব।
লক একা কী ভাবে?
কী আর ভাবে? তুমি রহ।
ভানু পায়ে পায়ে সরে এলো। ধীরে ধীরে বারান্দায় উঠে এলো। এ জায়গায় মাটিতে খুব বালি। কাদার বংশ নেই, তবু পাটা ধুয়ে নিতে পারলে ভালো হতো। বারান্দার সিঁড়িতে বালতি ভরা জল আর ঘটি রয়েছে। আন্দাজে তার জায়গাও নিরূপণ করা যায়। ভানু চুপচাপ বসেই থাকল বারান্দার মাদুরে, শালখুঁটিতে হেলান দিয়ে। শূন্য লাগছে। কী শূন্য! অন্ধকারের মতো শূন্যতা! ভানু তাকিয়ে আছে অন্ধকারের সীমানায়, দূর মহাপাত্রপুর, কুসমাড়ের দিকে, আঁধার ছাওয়া আলোর দিকে, কিন্তু তার চোখেরও যেন কোনো সাড় নেই। রামচন্দ্র বিয়ে করবে কি করবে না, কবে করবে, কাকে করবে, সব নাকি বাবু শ্রীপতি মাইতি বলবে। আবার বাবু শ্রীপতির কত জমি, তার হিসেব তার নিজের চেয়ে রামচন্দ্র জানে ভালো। রামচন্দ্র এক নম্বরের নিরেট, নির্বোধ। বাবুর সব জমি মিলিটারি নিয়ে নিলে রামচন্দ্র করবে কী? কোথায় যাবে? তার এই মেয়েমানুষই বা যাবে কোথায়? কোন অন্ধকারে বসে ভয় পাবে আর রামচন্দ্রকে অনুনয় করবে থেকে যেতে?
এ কেমন মানুষ রামচন্দ্র? বিষ্ণু পাতরকে জমি তো ও নিজেই দিতে পারে। না দিবি যদি পালা। পালা এ নায়েবি ছেড়ে। জমির দাম বুঝে নিয়ে বাবু শ্রীপতি মাইতি দীঘার হোটেলে বসে পা নাচাবে, আর রামচন্দ্র তখন করবে কী? ওই তো আলো হাতে রামচন্দ্র। তার পাশে পাশে মেয়েমানুষটা, হাতে ধোয়া মাংসের থালা। ভানু চোখ বোজে। কানে উড়ে আসে রামচন্দ্রর কণ্ঠস্বর, বেশি ঝাল না দিব।
কেনে, কচি ছানা নাকি তুমি?
না, নতুন লক রহিছে, ঝাল খায় কি না খায়!
নতুন লক কী কহিছে?
কহে নাই, ঝাল না হয় না দিলা।
মেয়েমানুষটি খিলখিল করে হাসে, তুমি কোনঠে যাবা, আসো।
ওই বারাণ্ডায় বসি।
না এই বারাণ্ডায়, পাকশালের দোরে বসো।
নতুন লক, বাবু পাঠাইছে।
তো কী হলো, মোর যে ডর লাগে।
ডর লাগিলে হেঁকে লিবি।
এই যে মু হাঁকছি, আসো হে, ডর লাগিছে। মেয়েমানুষটা হি হি করে হাসে, বলে, তুমার নতুন লক নিদ গিইছে।
রামচন্দ্র মেয়েমানুষটার সঙ্গে রান্নাঘরের দাওয়ায় উঠে যায়। ভানু একা বসে থাকে। একা সময় কাটে না। এখন এক ছিলিম গাঁজা টেনে নিলে হতো, এই রামচন্দ্র কি কলকে সাজাতে পারে? কলকে, গাঁজার ছিলিম সবই আছে তার কাছে, আগুন তো লাগবে। আগুন নিয়ে বসে আছে মেয়েমানুষটা ওখানে। নেশাটা একটু একটু করে চাগাড় দিয়ে উঠছে। এক ছিলিম টেনে ব্যোম হয়ে বসে থাকত না হয় ভানু, তখন মেয়েমানুষটা ভয় পেত আর রামচন্দ্র তাকে পাহারা দিত, ভয় ভাঙাত। ডাকবে কি ভানু নায়েব রামচন্দ্রকে? বাবু শ্রীপতি মাইতির পোষ্য রামচন্দ্রকে, রামচন্দ্র হে…।
নিজের গলার স্বর ভানু নিজেই শুনতে পায় না। রান্নাশাল থেকে এক এক টুকরো কথা উড়ে আসছে এদিকে। ভানু আবার নেমে যায় অন্ধকারে। আগুন পেলেই হয়ে যাবে, এক টুকরো কাঠের আঙরা। সে নিজেই কলকেতে সব সাজিয়ে টেনে নিয়ে ঠাণ্ডা হবে। আগুন নিয়ে বসে আছে ওই যে রামচন্দ্র নায়েব আর মেয়েমানুষটি। মেয়েমানুষটি গুনগুন করছে, তা শুনছে বসে রামচন্দ্র। মেয়েমানুষটির রান্নায় সাহায্য করছে রামচন্দ্র। ভানুর চোখ বুজে যায়, সে নিরালম্ব হয়ে পড়ে। এই দৃশ্যটি তার অবিকল চেনা। খুব চেনা। কবে যেন দেখেছিল এমন! ফুলরানি তো তার বিয়ে করা বউ, ছেলের মা, এই মেয়েমানুষটা কে রামচন্দ্রর? কেউ না, কিন্তু অবিকল ফুলরানি আর ভানু হয়ে উঠেছে তারা। ভানু কঁকিয়ে উঠে অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে অন্ধকারকে অবলম্বন করে নিজের পতন রুদ্ধ করতে চায়। টলতে থাকে।
রামচন্দ্র ঝপ করে নেমে এসেছে উঠোনে, তুমি ভানুবাবু!
হাঁ, আগুন দিবি?
আগুন কী হিবে?
কী হবে! আগুন নাই, গাঁজার কলকে সাজাতে হবে তো।
রামচন্দ্র নিঃশব্দে রান্নাশালে উঠে গিয়ে দেশলাই নিয়ে ফেরে, বলল, হারিকেন দিব?
কলকেটা সাজাতে পারবে রামচন্দর?
হ্যাঁ, হাঁ।
তবে আসো। ভানু প্রায় টেনে আনল রামচন্দ্ৰকে।
গাঁজার কলকে সাজাতে রামচন্দ্র নিপুণ। বাবু এলে তো দিনে বার দুয়েক সাজাতে হয় তাকে। পারবে না কেন? আর ওই যে মেয়েমানুষটা রান্নাশালে, ও-ও খুব ভালো পারে। রামচন্দ্রেরও ওই অভ্যেস আছে কিনা। তাকে বাবুই তো ধরিয়েছে।
ভানু বলল, রামচন্দর, বাবুর জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কী হয় তোর?
আঁজ্ঞা কুছু না।
কিছু না কেন, শ’টাকা চা, বিষ্ণু পাতর দিয়ে দেবে।
আঁজ্ঞা তা অন্যায্য।
ভানু হি হি করে হাসে, রামচন্দর, মেয়েমানুষটা তোর কেডা?
আঁজ্ঞা কেউ না।
কেউ না তো এখেনে থাকে?
আঁজ্ঞা বড় দুখী, ওর ভাতার ওকে খেদাই দিইছে।
কেন খেদাল?
আঁজ্ঞা কাঁচা টঙ্কা পাইছে, দুবিঘা জমিন ছিল, ভিটা ছিল, সব তো মিলিটারি নিল, চালিশ হাজার টঙ্কা পেল, টঙ্কা ওর মাথা ঘুরাই দিইছে, টঙ্কা লিয়ে বালেশ্বর চলি গিঁইছে।
ভানু বলে, ওর ডর লাগবে না?
আঁজ্ঞা?
তুই এখানে বসে আছিস, ডর লাগবে না? আঁজ্ঞা?
আঁজ্ঞা, আঁজ্ঞা করিস কেন, ও তোরে ডাকে।
হাঁ, খুব ডরায়।
ডরায় কেন?
উয়ার সোয়ামি যদি ঘুরে আসে।
তা’লে তো ও সোয়ামি পাবে।
রামচন্দ্র মাথা নাড়ে, ও যাবে না।
কেন যাবে না?
ওর ডর লাগে। বলতে বলতে রামচন্দ্র উঠে পড়ে, মেয়াছেল্যাটা খুব ডর খায়, এমন মেঘের রাতি, আশমানে চন্দ্রমা নাই, ঘুটঘুট করে আন্ধার, মেয়াছেল্যাটার খুব ভূতের ভয়।
তুই যা রান্নাশালে।
রামচন্দ্র বলে ও খুব দুখী, এখন কুথাও ওর ঘর নাই।
ঘর নাই তো থাকে কুথায়?
রামচন্দ্র বলে, মোর ইখানে।
তুই মেয়েমানুষ রেখেছিস?
আঁজ্ঞা না, ও খুব ডরায়, মু যাই, একা একা রান্নাশালে আছে উ।
রামচন্দ্র চলে যায়। ভানু থমথমে হয়ে যায়। ভোজপুর জেলার ট্রেনের কথা মনে পড়ে কতদিন বাদে। খোকার হাতে ঝুমঝুমি দিল, ফুলরানির বড় বড় দুই চোখ ভরা জল। সেই জল নোনা। ফুলরানি কাঁদলে সে হাত চাপা দিত ওর চোখে। তবে না কান্না থামত। হাত ভিজে যেত নোনাজলে। ভানু দূরের অন্ধকারের ওপর ছাওয়া ফ্যাকাসে আলোর দিকে চেয়ে নিশ্চুপ। ফুলরানির চোখের জল আর থামছে না। ভানু স্পষ্ট দেখতে পায় দুচোখ সমুদ্র হয়ে যাচ্ছে যেন। সে দুচোখে হাত চাপা দেয়। হু হু করে জল গড়িয়ে আসছে বুকের ওপর। হায় কন্থক, শূন্য করে দিলে ভানুচরণকে! ছন্দক এখন কী নিয়ে থাকে?