সাতাশ
বালিমুণ্ডা থেকে ফেরার পর ভানু আর বেরোনর কথা ভাবছিল না। আর শ্রীপতি মাইতিও ঘোড়ার কথা বিশেষ বলেনি। শ্রীপতি বিব্রত ছিল তার প্রেমিকা ভারতী আর মধুমিতার দ্বন্দ্ব নিরসনে। জীবন অমধুর হয়ে পড়েছিল। তিক্ত, কষায়। কিন্তু শ্রীপতির এমন দশা যে ভারতীকে জবাব দিয়ে মধুমিতাকে যে বলবে, আর কোনো দিন হবে না, তাও তো হয় না। ভারতীর ওপর মায়া আছে, মমতা আছে, মধুমিতাকে মনে হয় নিদয়া। সে কি মধুমিতাকে ত্যাগ করে ভারতীর কাছে যাচ্ছে? ভারতী তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে, সে কি তার দোষ? ভারতী যে মনপ্রাণ সমর্পণ করেছে তার ওপর, তার জন্য তার কতটা দায়? এসব কে বোঝে, মধুমিতা! সে তার সব সম্পত্তির মালিক, দলিল মোতাবেক সম্পত্তির অংশ ভাগী হয়েছে, তবুও তো নিশ্চিন্ত হয় না। এক এক সময় শ্রীপতির মনে হয় তার হাড় মাংসও রেজিস্ট্রি কোবলা করে দিয়ে দেয় মধুমিতাকে। মেয়েমানুষের ক্রোধ কমে না। ভারতীকে সমুদ্রতীর ছাড়া করবে এই হলো মধুমিতার পণ।
এরই ভিতরে হারিয়ে যাচ্ছিল ঘোড়াটা। একদিন আচমকা মনে পড়ল মীরগোদার কুহকিনীর কথা। কোকিলার কথা। ওফ। সে যদি কোনো কুহকিনীর মায়ায় পড়ত, পড়ে বন্দি হতো, তাহলে বোধহয় শিক্ষা হতো মধুমিতার। শুধুই বা তার কেন, ভারতীরও। ভারতী নাকি জাদুকরী, ওই কথা বলে মধুমিতা, ভারতী নাকি ডাইনি, তুকতাক জানে, কুহক করেছে তাকে। কুহক! ভারতী যদি কুহকই করত, তবে কি মধুমিতা তাকে খুঁজে পেত? ভারতী তাকে উধাও করে দিত না কোকিলা সুন্দরীর মতো? মদরঞ্জিতে বন্দি করে ফেলত না! হায়রে কোকিলা! তুই যদি পক্ষিরাজকে না ডেকে সেই পূর্ণিমার রাতে, বৈশাখী চাঁদের আলোয় আমাকে টেনে নিতিস, তবে না আমি বাঁচতাম। কোথায় যে কার কুহকে ঘুরছে ঘোড়াটা। কোকিলা সুন্দরী তাকে কি হাওয়া করে দিল!
যেদিন মদনানির বাড়িতে সকাল সন্ধেয় ঝাঁপাল ভানু, তার পরের দিন শ্রীপতি তাকে ডেকে বলল, ঘোড়াটা কি পথের কুকুর?
কেন?
ও কি অনাথ?
তা কেন হবে?
ওর কি কেউ নাই, পথের কুকুরের মতো হেথা হোথা ঘোরে?
কী যে বলেন আপনি!
তবে কেন ওরে খুঁজা হচ্ছেনি?
কথা শোনা মাত্র ভানুর রক্ত চঞ্চল। তারও কদিনেই হাঁপ ধরে গিয়েছিল। টানছিল সেই গঙ্গাতীর। প্রেম মদনানিকে দেখে পেরুমল বাজাজ-সিন্ধির কথা, তার কথা থেকে জুট মিল, তার পরিবার, ফুলরানি, ফুলরানির বাপ-মা, ফুলরানির কোলেরটা! তার হাতে ঝুমঝুমি দিয়ে সেই যে ভোজপুরের ট্রেনে তুলে দিল, আর কি খবর জানে? জুট মিল খুলল হয়তো। হয়তো মিল বস্তিতে তার জন্য অপেক্ষা করছে ফুলরানি। দেশ থেকে ফিরে এসেছে বাপ-মার সঙ্গে। গঙ্গাতীর! তার যেমন গঙ্গানদী, পেরুমলের তেমনি সিন্ধু! গঙ্গার কূলে ইটভাটার চিমনি, পরপর ইটের ভাটা। বাজাজের ভাটা, জলধর দাসের ভাটা, নগেন ঘোষের ইটখোলা, তারপর চীনে সায়েবের মন্দির, নিঝুম চিনেম্যানতলা, তারপর বাসে কিংবা ভ্যান রিকশায় চেপে চলে যাও জুট মিল, তাও তো গঙ্গার কূলে।
ভানু বলল, তাহলে যাই?
কোন দিকে যাবি?
পুব দিক।
পুব দিক মানে?
পুব মানে পুব, হিজলি মসলন্দি, রসুলপুরের ঘাট, চণ্ডীপুর, নরঘাট, তার আগে বাজকুল, হেঁড়িয়া, কালীনগর।
নরঘাটের নদী পেরুবিনে।
কেন?
ঘোড়া কি নদী পেরুবে, ওই খরস্রোতা নদীতে কি নামবে?
হা হা করে হেসেছে ভানু, বলবেন না বাবু, ঘোড়ায়ও হাসবে, ঘোড়া কি নদী সাঁতরে পার হবে?
তবে কি লঞ্চে পার হবে, না নৌকোয়?
ভানু বলল, নরঘাটে কত বড় ব্রিজ, যেমন বাস পার হয়, তেমনি ঘোড়া পার হবে, নদী থাকবে তার ইয়ের নিচয়।
হাঁ, তাই তো, এটা তো মাথায় আসে না, টাকা নিয়ে যা ঠাকুরের কাছ থেকে।
ভানু গেল ঠাকুরের কাছে। ঠাকুর হোটেলের রাঁধুনি, তারপর ক্যাশিয়ার, তারপর বাজার সরকার, এ বাদে ঠাকুর মেয়েছেলে সাপ্লাই যে করে তা প্রেম মদনানির ঘরে কুন্তিকে পাঠানোতে জানতে পেরেছে ভানু। ঠাকুরের কাছে তিনশ টাকা চেয়ে বসে ভানু, দাও দেখি।
তিনশ চায়, দেব? পঞ্চম ঠাকুর হাঁক মেরেছিল।
দেও না, তোমার এক হাজার থেকে তো দেবে না।
ঠাকুর সিঁটিয়ে গিয়ে আর কথা বলেনি। তিনটে একশ টাকার নোট গম্ভীর মুখে ভানুর হাতে তুলে দিয়েছে। সেই টাকা নিতে নিতে ভানু বলেছে, প্রেম মদনানির টঙ্কা দিলে না তো ঠাকুরমশায়?
টাকা নিয়ে ভানু বেরোল। বেরোল মানে একেবারে বজবজ যাবে সেই মনে ব্যাগ কাঁধে নরঘাটের বাসে চাপল দীঘা থেকে। মনে মনে ডাকল পক্ষিরাজকে তারপর ঘুমিয়ে পড়ল। এমন ঘুম ঘুমাল যে কখন হেঁড়িয়া, কখন বাজকুল যাওয়ার রাস্তা, কখন কালীনগর, চণ্ডীপুর পার হয়ে নরঘাটের ব্রিজ পর্যন্ত চলে গেল তা টেরও পেল না। ঘুম ভাঙল মেচেদায়। ট্রেনে উঠে বসল। নামল ফুলেশ্বরে। গঙ্গার ওপারে বজবজ, ল্যাডলো জুট মিল, দক্ষিণের দিকটায় সার সার ইটভাটা। কতদিন বাদে যাচ্ছে সে।
কিন্তু নদীপারে এসে ওপারটা চেনা মনে হলো না। আর নদী পার হয়ে ভানু অবাক হয়ে দেখল আকাশের গা ছুঁয়েছে মস্ত এক চিমনি, কিন্তু ছোট ছোট চিমনিগুলো উধাও। সব ক’টা চিমনি মাথায় মাথায় বসিয়েও বোধহয় অত উঁচু হবে না, ভানু জিজ্ঞেস করে, ও কী?
কী তা জানো না? নৌকোর অন্য আরোহী অবাক।
না আঁজ্ঞে, কত বছর বাদে এলাম, আচ্ছা বন্ধ ফ্রি ইন্ডিয়া জুট মিল খুলেছে কি না জানেন, পেরুমল বাজাজ আছে?
নৌকা থেকে নেমে ভানু দেখল ইটাভাটা নেই। দশ মানুষ উঁচু প্রাচীর, এখেনে কি জেলখানা হলো? আলিপুরের জেলখানা উঠে এলো কি এখানে? ভানু নদীধারের বটতলায় চা-দোকানে বসে বলল, কী হয়েছে এসব, বাজাজের খোলা কই?
দোকানি অবাক হয়ে ভানুকে দেখল, চিনতে তো পারে না। ভানু ভাবে চিনবে কী করে, কম লেবার ছিল তার মিলে! কতজন উধাও হয়ে গেছে। সব মুখ কি মনে রাখা সম্ভব? কম দিন হলো না। চা-দোকানি বেশ বুড়ো হয়েছে। চোখে আবার চশমা নিয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করে, থাকা হয় কোথায়?
চাঁদবালি। ভানু বলল।
চাঁদবালি কোথায়?
ওড়িশা, সমুদ্র ধার, মিলিটারি জমি নে নেছে সব।
লোকটা বলল, জমি তো নিবার জন্য, এখেনেও তাই।
তাই মানে?
গাঁটাই দখল হুঁই গিছে, আলো কুম্পানি এলো। ওই পাঁচিল?
হাঁ।
পাঁচিল কত বড়?
রাস্তা ধরে যাও, শেষই হবে না, উত্তর দিক সবটা গেছে কাঁঠালবেড়ের।
ভানু তখন চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে, মিলটা, ফ্রি ইন্ডিয়া জুট মিল?
সে কবে বন্ধ হয়ে গেছে, আপনি কেডা?
ভানু বলল, ভানু দাস, জুট মিলে আমার আত্মীয় ছিল।
নাই। দোকানদার গেলাসে চামচ ঠুনঠুন করতে করতে বলে, মিলের যন্ত্রপাতিই আছে কি না কে জানে।
ভান নিঝুম হয়ে বসে থাকে। পাঁচিলটা বজবজ-কলকাতা রাস্তার ধারে। পাঁচিলের ভিতরে কী আছে তা তো জানার উপায় নেই, কিন্তু ধানখেত ছিল, গাঁ ছিল। একটা বটবৃক্ষ ছিল, তার গায়ে ভারা বাঁধত সবাই। বটবৃক্ষ মনস্কামনা পূরণ করত। মনে পড়ে ভানুর। সেই বটগাছে ফুলরানি ভারা বেঁধেছিল, হে ঠাকুর, মিল খুলুক। গাছটা কি আছে? কী সুন্দর জায়গা ছিল এদিকটা! শুধু বাস দাঁড়াত, আর গঙ্গা পেরিয়ে লোক আসত ওপার থেকে। ওপারেও যে জুট মিল, এপারেও তা। এখেন থেকে বাসে চেপে পনেরো-বিশ মিনিট গিয়ে মিল। ভানু আসত পেরুমল বাজাজের স্কুটারের পিছনে বসে। ইটখোলাও তো ওই পাঁচিলের ভিতরে চলে গেছে মনে হয়। শুধু এই চা-দোকানটা যায়নি।
পেরুমল বাজাজ!
খোলার মালিক পেরুমল?
ভানু বলল, খোলা তো নেই?
না, সব আলো কুম্পানির ভিতর।
বাজাজকে কোথায় পাওয়া যাবে?
বজবজে দোকান দিয়েছে কাপড়ের।
ইটের ব্যবসা করে না?
লোকটা মাথা নাড়ে, খোলা নিয়েই নিল, আবার করবে কোথায়?
ভানুর মনে পড়ল বাজাজের মুখখানি, হামার সিন্ধু এহি গঙ্গার ভিতরে আছে ভানু দাস, ভানু দাস, হামার খোলায় কাম করবে?
শ্বশুর কী করবে?
খোলায় হামি তোমাকে হিসাব দেখার কাম দিতে পারি, হিসাব জানো নিশ্চয়, খাতা লিখবে, সরকারি বাবুদের নজরানা দিবে, কাম এইটা, বেতন যা দিব তা মিলের মতন হোবে না, লেকিন হামি ঠকাব না।
ভানু কী করেছিল তা তো ভানুই জানে। যাবে নাকি বাজাজের কাছে? এ বাজাজ সায়েব, গঙ্গাধার ছেড়ে কাপড় দুকান বসালে, কত লেবার, সব কাঁহা গেল বাজাজ সায়েব, তুমার সিন্ধু নদী আবার ছাড়লে তুমি বাজাজ সায়েব!
ভানু বলল, বাজাজ আছে না এদিকে?
আপনি কেডা?
কেন?
বাজাজকেও চেনেন যে।
ভানু বলল, চাঁদবালি গিয়েছিল বাজাজ সাহেব, ওখেনে চিনা হলো।
ওহ্! বুড়ো প্রায় লোকটা মোটা কাচের ভিতর দিয়ে ভানুকে দেখে, কিন্তু ঠাহর করতে পারছে বলে মনে হয় না। সে বিড়বিড় করে বলল, আসবে বাজাজ।
আসবে?
হাঁ, তার দেখা যদি পেতে চান এখেনেই বসুন।
কখন আসবে?
এই আসবে, দুপুরে আসে, তখন তো ব্যবসা ঝিমায়, মানে দোকান ফাঁকা থাকে, ওই সময় আসে।
কেন আসে?
এমনি আসে, গল্পটল্প করে চলে যায়, বলছে আবার খোলা করবে।
কোথায় করবে?
নদীর ধারেই, চিনেম্যানতলার ওদিকে।
ভানু সিগারেট ধরাল, আবার একটা সিগারেট দেয় দোকানিকে। ঠিক দুপুর তো এখন। এ দোকানে তার কোনো লোক নেই। দোকানদার ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, যেমন ভেবেছিলাম তেমন হলো না।
কী হলো না?
ভেবেছিলাম আলো কুম্পানি এলো, থাম্মাল পাওয়ার প্রকল্প, বিক্রি বাড়বে, বাড়ল না, ইন্ডিয়া জুট মিল কতদিন বন্ধ! তারপর ওরিয়েন্টাল জুট মিল বন্ধ হলো, মিলের লেবাররা আসত তো কিছু ওপার থেকে, তারা আর আসে না, আর ওই ওপারের কানোরিয়া মিলেরও তো সেই দশা, আবার বন্ধ হয়েচে, দশ দিন খোলা থাকে তো পনেরো দিন বন্ধ হয়, লেবাররা এপার থেকে তো যেত, যায় না এখেন দিয়ে, ওই কাঁঠালবেড়ের কত জনা যেত, তারা সব উৎখাত হয়ে রঘুনাথপুরে চলে গেছে, এদিকটা খাঁ খাঁ করে, খদ্দের নেই, তারপর খোলা উঠে গেল ক’টা, আলো কুম্পানি নিয়ে নিল, কেউ আসে চা খেতে, আর লোকই নেই!
ভানু বলল, কত উঁচু চিমনি!
হাঁ, কাঁঠালবেড়ে পুড়তেছে।
আচ্ছা মশায়, সেই বটগাছটি, বটবৃক্ষ, ভারা বাঁধা হতো?
হতো তো, আমিই বেঁধেছিলাম।
কী জন্যে বেঁধেছিলেন?
কানোরিয়া চলুক, ফ্রি ইন্ডিয়া জুট মিল চলুক, বেঙ্গল মিল, ওরিয়েন্টাল চলুক।
কী হলো সেই গাছ?
ও তো ভিতরে, কেটে ফেলে দিয়েছে কুম্পানি, কুম্পানির কী!
সেকি, ও তো ভগবান ছিল। ভানু উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ায়।
কুম্পানির কাছে ওসব কিছু না, কত মানুষ কাঁথা মাদুর, থালাবাসন নিয়ে ভিটে ছেড়ে চলে গেল, জেলেপাড়া, কায়েতপাড়া কিছুই নেই।
ভানু বলল, ওই বটের কাছে যে এলাম।
আপনি কেডা?
কেন?
বটগাছের কথা জানলেন কী করে?
কেন, বাজাজ বলেছিল।
কী মনেতে এলেন?
অশ্ব! অশ্ব দেখেছেন?
অশ্ব মানে কি ঘোড়া?
হাঁ ঘোড়া, ঘোড়া হারিয়েছে, খুঁজতে খুঁজতে চলে এলাম।
লোকটা বলল, আপনি তো ওড়িশার লোক?
হাঁ, চাঁদবালি, বালিমুণ্ডা, দে-পাল, কুসমাড়, কোনো জায়গাটা নাই প্ৰায়, ভীমাপুরও থাকল না, সব মিলিটারির হাতে, আগুন ছুটছে, ছাই উড়ছে।
ভানুর কথায় লোকটা চশমা খুলে তার দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হলো। চশমার কাচ যখন অত মোটা, চোখ থেকে চশমা নামালে কি দেখতে পাবে? কিন্তু কী আশ্চর্য, ভাসা ভাসা ঘোলাটে চোখে যেন আলো ফোটে। ভানু টের পায় তার মিথ্যে ধরা পড়ে যাচ্ছে। লোকটার ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে, বলে, ওদিকের ঘোড়া কি এদিকে আসার কথা, ঘোড়া কি তাই বলেছিল?
না, মানে কোন দিকে যেতে পারে তার আর ঠিক কী!
তখন বৃষ্টি নামল আচমকা। গঙ্গার ওপরে যে ছোট মেঘটি ভাসছিল, তা কখন যে বিস্তৃত হয়েছিল কে জানে। কড়কড় করে মেঘ ডেকে উঠল। ঝমঝম করে নামল বৃষ্টি। চকচকে লম্বা লম্বা বৃষ্টির ধারা, দানাগুলো কত বড় বড়। যেন মুক্তো ঝরছে আকাশ থেকে। ভানু গঙ্গার দিকে তাকিয়ে থাকল। এই বৃষ্টি, আলো, মেঘ, নদী, বাতাস, আধবুড়ো চা-দোকানি, এসব ছেড়ে সে গেল কোথায়? বুক ভার হয়ে গেল ভানুর, বলল, বাজাজ আসবে তো?
তুমি বাপু এখেনের মানুষ।
কে বলল?
বটের কথা যখন জানো, চিনা মনে হয় তুমারে। সত্যি মনে হয়?
তাই-ই তো, চশমা খুলতে আরও চিনা মনে হচ্ছে।
ভানু বলল এরকম হয়।
কী হয়?
চেনা মনে হয়, আগের জন্মের মতো লাগে।
তার মানে?
ভানু বলে, কখনো কখনো কোনো মানুষকে চেনা মনে হয়, কোনো জায়গা দেখে মনে হয় বড় চেনা, তাই না?
হ্যাঁ, তা তো হয়ই।
সব আগের জন্মের চেনা, তা ঘোড়া কি দেখেছ এদিকে? সাদা ঘোড়া, সমুদ্র ছেড়ে পলাল বোশেখী পূর্ণিমার রাতে!
যেদিন বোমা পড়ল? চা-দোকানি আচমকা জিজ্ঞেস করতেই ভানু শিহরিত হয়, কী কহ, তুমি?