1 of 2

অশ্বচরিত – ৩১

একত্রিশ

ভানু এবার বলছে পোখরানের কথা। দোরগোড়া থেকে মুখ বাড়িয়ে ঘরের অন্ধকারে পোখরানের কথা জানিয়ে দিচ্ছে কোকিলাকে। কোকিলা তার ঘরে আঁতিপাতি করে খুঁজছে পুরনো খবরের কাগজটি। খবরের কাগজ তো কেনে না গৌরমোহন, ওই সময় কিনেছিল কয়েক দিন। তখন হাটে বাজারে কী হল্লা। যেন ভিটের উঠোনে অ্যাটম বোমা ফেটেছে। বলতে বলতে কোকিলা ঘরের অন্ধকারে হামাগুড়ি দিচ্ছে। চৌকির নিচ ঢুকে পড়েছে প্রায়।

ভানু বলে, তুমি জানো ওই বোমাটা কী?

কোকিলা বলে কুছু কুছু শুনেছি।

কে বলেছে?

কেনে তুমার দাদা, খবরের কাগজ পড়ে শোনাত, মরুভূমির তলে ফাটানো হইছিল, আচ্ছা, মরুভূমির সব তো বালি?

হ্যাঁ, জল নাই।

মরুভূমি কী করে হয়?

সাগর শুকায়ে।

তাহলে মরুভূমির তলে সাগর আছে? কোকিলা অন্ধকারে বসে পুরনো খবরের কাগজ কটি কোলের কাছে নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

ছিল।

ইখন নাই?

কী করে জানব?

সাগর কি একেবারে মরতে পারে?

কী জানি!

অবাক লাগে, মোর মীরগোদাটা কি মরুভূমি?

তা কেন হবে, জল তো আছে মাটির নিচে।

আছে?

না থাকলে এত গাছপালা, এত বন, সবুজ!

মরুভূমির নিচে তাহলে সাগর নাই? থাকতেও পারে।

যদি থাকে সেই সাগর মরি যাবে এই বোমায়?

চমকে ওঠে ভানু দাস, তুমি জানো সব!

যা বলিছিল তুমার দাদা, সব মনে আছে।

তুমি জানো অই বোমায় কী হয়?

অন্ধকার থেকে কোকিলা জবাব দেয়, মানুষ মরে, অনেক অনেক মানুষ।

আর?

গাছপালা মরে, জীবজন্তু মরে, পোকামাকড় মরে।

আর কী মরে?

মরণ, সবই মরণ, মাটি মরে যায়।

মাটির মরণ কী করে হয়?

সি মাটিতে নাকি আর ফসল হয় না।

আর কী হয়?

বাতাস মরে, বাতাসে মরণ ঘোরে।

তুমি তো সব জানো।

যেটুকুন কহিছিল তুমার দাদা, সে নাকি অনেককাল ধরে মরে।

হ্যাঁ, ঠিকই জানো।

অনেক অনেক বছর ধরে মরণ ঘুরে বেড়ায়?

তাই-ই তো।

ধিকি ধিকি মরে।

ঠিকই শুনেছ! ভানু দাস বলে, ওই দিন মোর ঘোড়াটা রাত্তিরে পালাল, ওই বোমার সঙ্গে তার কি যোগ আছে কোকিলা?

কোকিলা বুকের কাছে কাগজ ধরে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। মাথার চুলে ঝুলকালি, ময়লা লেগেছে। কাগজে এক পরত ময়লা। দাওয়ায় ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আঁচল ঝাড়তে লাগল। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, কী কাণ্ড, তুমি এলে, না তুমারে খেতে বললাম, না দিলাম জল, ভানুদাদা ভাত খাও।

না, খেয়ে এসেছি।

খেয়ে এলে কেনে, সে লক কি তুমারে খেয়ে আসতে কহিছিল?

তা কেন, খবর না দিয়ে তো আসা।

কোকিলা দাওয়া থেকে উঠোনে নেমে গেছে। চক্কর মারছে ঘোলাটে মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে। মাথার চুল খুলে দিয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে দাওয়ার সামনে এসে বলে, জল খাবে?

দাও।

সেই মর্কটটার খুব সাহস।

শিবরামের কথা বলছ?

হ্যাঁ, মোর মান রাখলনি তুমার নিকট।

ভানু বলল, এক এক সময় অমন হয়, মানুষ পারে না।

অনেক দিন ধরে ও ঝুল দিচ্ছে, ও কেমন লক?

আমি কী জানি?

ও তুমার নিকট বলল, তুমি যদি মদরঞ্জিওয়ালারে কহি দাও?

তা কেন বলব?

তুমারে কি ভালো চিনত ও?

না।

হায়! কোকিলা উঠোনে বসে উবু হয়ে, ও আর কারে কারে কহিছে কেডা জানে, যত বলি তুমি ইসব ছাড়ো, শুনেনি কথা, সব্বোনাশ হুঁই যাবে ভানুদাদা।

কেনে?

ও লকের বুন, মোর ননদরে দিখলে?

দেখলাম।

কেমন দিখলে?

বুঝতে পারিনি।

ওই শিবরাম, ও লক নাকি ঘুমের ঘোরে কথা কয়।

সে কী। আঁতকে ওঠে যেন ভানু দাস, তাহলে ওর বউ সব জানে?

জানে বুধহয়, সে কি মদরঞ্জিওয়ালারে সব কহি দিবে?

ভানু দেখে চঞ্চল পাখি যেমন খাঁচার ভিতরে ঝটপট করে, সেই রকম উদ্বিগ্ন হয়ে এলোমেলো ঘুরছে কোকিলা বধূ। মন খুব চঞ্চল হয়েছে। দুই ডানা দিয়ে ঝাপটা মারছে খাঁচার গায়ে।

ভানু বলে, কে বলল শিবরাম ঘুমের ঘোরে কথা কয়?

ওর বউ, মোর ননদিনী ঊষা।

হঠাৎ ও কথা বলেছিল কেন?

মোরে শুনাতে, সাবধান করে দিল যেন। বলতে বলতে কোকিলা দ্রুত পায়ে রান্নাশালের দিকে যায়। শিকল খুলে ভিতরে ঢুকে যায়। এই সময়টুকুতে উঠোন শূন্য। ভানু দাসের চোখে কেমন ধাঁধা লাগে যেন। ভানু দুচোখ বোজে। আরাম পায়। আবার খোলে চোখদুটি। এখনও উঠোন শূন্য। কোকিলা কি রাঁধতে বসল? ভানু খবরের কাগজে চোখ মেলে। মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ভানুর চোখ অন্ধকার হয়ে যায়। ধোঁয়া উঠে আসছিল কাগজের ওপর থেকে। এই ছবি কি হিরোশিমার? ভানুর দম আটকে আসছিল। পোখরানেও কি এমন কালো ধোঁয়া আকাশ ছেয়ে ফেলেছিল? তেজস্ক্রিয় বাতাস তার নাকের ভিতর দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করছিল। তার চোখের মণিতে ছত্রাক জন্মাচ্ছিল। ভানুর দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে। ভানু আর দেখতে পাচ্ছিল না। ভানুর গলা শুকিয়ে এসেছিল। কত যুগ সে জল পায়নি! এত বছর শরীরে যে জল জমা হয়েছিল, সব বাষ্প হয়ে উঠে গেছে আকাশে। তৃষ্ণায় কণ্ঠনালি দুমড়ে যাচ্ছিল। ভানু দুটি হাত তুলে আকাশের কাছে জল চায় যেন। এই আকাশ তাকে জল দিলে সে জল পায়। সূর্য তাকে আলো দিলে সে আলো পায়, বাতাস তাকে বিশ্রাম দেয়। সব তেজস্ক্রিয় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ভানু আকাশ দেখতে পায় না জল প্রার্থনার জন্য।

তখন কোকিলা বধূ এলো। কাঁসার গ্লাস ভর্তি জল আর হাতের মুঠিতে ক’টি বাতাসা এনে ভানুর সামনে হাঁটু মুড়ে বসেছে কোকিলা বধূ, ও ভানুদাদা, নাও, জল নাও, খুব তেষ্টা পেয়েছে তো?

ভানু চোখ মেলল। দেখল শীতল, স্নিগ্ধ কোকিলার রূপ। সে হাত বাড়িয়ে বাতাসা দুটি গ্রহণ করতে করতে বলে, কীরকম যেন লাগছিল শরীর!

কী হলো? কোকিলা উদ্বিগ্ন হয়।

না। ভানু হাসে, বাতাসা মুখে নিয়ে দাঁতে ভাঙতে থাকে। চিবোয়। গুঁড়ো গুঁড়ো মিষ্টি দানা গালের ভিতর ছড়িয়ে পড়ে। ঠাণ্ডা জল সেই মিঠে ভাবটি গাঢ় করে। বুক ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শীতলতা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। জল খেয়ে শ্বাস নিতে থাকে ভানু। আকাশ দেখে। আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে। চারদিকে নিঝুমতা, নিস্তব্ধতা, শাস্ত সমাহিত ভাব। কোকিলা তার সামনে বসে আছে, বলল, তুমি কী করতে এলে কহ দেখি?

ঘোড়াটারে নিতে, ওরে ছাড়া দিন যায় না, ওর খাওয়া, ওর স্নান এসব না হলে আমার দিন কাটে না।

সে তো মরুভূমি চলি গিঁইছে।

চমকে ওঠে ভানু, কে বলল?

কোকিলা জবাব না দিয়ে বলে, শিবরাম যে কতজনারে কহিছে উ কথা, মোর সমুখে এসে কিন্তু কহিতে পারেনি, মোর মান ধুলায় লুটায়।

আর কাকে বলেছে?

হাটের এক ব্যাপারীরে পর্যন্ত।

তারা কি তোমাকে এসে বলেছে?

হ্যাঁ। কোকিলা মাথা নামায়, কী জানি মদরঞ্জিওয়ালা জানে কি না, আর ঘুমের ঘোরে উয়ার বউরে শুনাইছে কি না তাই বা কে জানে।

ভানু বলল, থাক।

কোকিলা চুপ করে থাকে। অন্যদিকে ফিরে আছে। ঘনকালো মেঘের মতো রং এ মেয়ের। এ মেয়ে যেন বর্ষার সেই মেঘই, না হলে এত তৃষ্ণার ভিতর জলটি এনে তার মুখের সামনে ধরে! ভানু দেখছিল রূপখানি। যে রূপে উগ্রতা দেখেছে আগে সেই রূপ কত শান্ত, নিঃশব্দ! ভানু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কী ভালোই না লাগছে মদরঞ্জিওয়ালার বউটাকে। একে কিনা কামনা করে শিবরাম, কেন শ্রীপতি মাইতিও। কামনা করে নিজে নিজেই পুড়ে মরছে শিবরাম।

ভানু বলে, তুমি খুব সুন্দর কোকিলা।

কেন? কোকিলা ঘুরে তাকায়।

মনে হলো।

আর তো কেউ কহেনি।

কেউ না?

না।

শিবরামও না?

না, উ তো লুকায়ে দ্যাখে মোরে।

মদরঞ্জিওয়ালা?

কোকিলা বলে, সে তো ইভাবে বলে না ভানুদাদা।

কোকিলা দুই ঊরু পেতে পায়ের গোড়ালির ওপর ভর দিয়ে ভানুর মুখোমুখি। ভানু খবরের কাগজ মেলে ধরতে থাকে। খবরের কাগজ জুড়ে উৎকট উল্লাসের কথা। উল্লাসের বিবরণ দিয়েছে কাগজ। কোকিলা ঝুঁকে পড়েছে কাগজের অক্ষরের দিকে। পারমাণবিক বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তায় যেন অক্ষরগুলো জ্বলন্ত হয়ে উঠেছে। ভীষণ তপ্ত, ভীষণ দপদপে। সেদিকে তাকিয়ে কোকিলা বিড়বিড় করে, কখনো মনে হয় তার কপাল খারাপ, খাঁচা খুলে দিঁইছে, পাখি উড়ছেনি।

এ কথা বলছ কেন?

কখনো মনে হয় যে, কিন্তু পাখি যে ভুলে গিছে উড়তে, তা মদরঞ্জিওয়ালা জানেনি, জানলে মোরে ফেলে উখেনে গিয়ে পড়ি থাকে!

তোমার পরে তার মন নাই?

আছে, আবার নাই, আবার আছেও।

ভানু চুপ করে থাকে। আর কী শুনবে সে? সে তো এসেছে ঘোড়ার খোঁজে। ঘোড়াটি যেন আছে এই কোকিলা বধূর কাছে। ভানু প্রসঙ্গ বদলায়, কই, এবার দেখাও দেখি, আঁকা কতটা হলো।

কোকিলার মুখখানি অন্ধকার, হয় নাই।

কেন হয়নি?

জানিনি ঘুড়াওয়ালা, আমি তারে বাইরে আনতে পারছিনি।

তার মানে?

মনে তারে ধরতে পারছিনি সম্পূর্ণ করে।

সে কী! তুমিই না এঁকেছিলে তারে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে?

হ্যাঁ, তখন তো বন্দি করা হলো ভানুদাদা, এখন তো তারে আবার ছেড়ে দিতে হবে, সেই মন্তরটাই ধরতি পারছিনে, আমি তারে বাইরে আনতি পারছিনে।

ভানু ভাবে এ কীরকম কথা! একবার যে আঁকল পক্ষিরাজকে, আর একবারও তা আঁকবে। কিন্তু পারছে না। বলছে তখন তো জানত না পক্ষিরাজের কথা। তখন তো জানতই না সে যাকে আঁকছে, সেই ঘোড়াটা ওই দিনে ওই সময়ে চাঁদের আলোর ভিতরে ছুটে আসে খোলা পৃথিবীর এদিকে, মীরগোদার ফুরিয়ে যাওয়া সমুদ্রের বুকে, বালিতে বালিতে। সে জানত না সে নিজের অলক্ষে কী করে ফেলছিল তখন। জানত না কোকিলা বধূ, যে সে-ই ডেকে এনেছিল ঘোড়াটাকে। তার কুহকেই ছুটে এসেছিল ঘোড়াটা। জানল যখন, নিজের ক্ষমতা যেন নিজেই টের পেল। একটা ঘোড়ার কথা মনে মনে ভেবেছিল, সেই ঘোড়াটা যে জীবন্ত তা জেনে শিহরিত হলো। নিজের অজান্তেই জীবন্ত ঘোড়াটাকে তার মনের ভিতরে বন্দি করে, তাকে এঁকে ফেলল মদরঞ্জির বুকে। এসব জানার পর এখন আঁকতে গিয়ে মনে হচ্ছে মনের গহনে বন্দি হয়ে থাকা ঘোড়াটাকে মুক্তি দিতে হবে। ঘোড়াটাকে মুক্তি দিতে পারলেই না তাকে আঁকতে পারবে আবার।

ভানু বলল, চেষ্টা করো।

করছি, আঁকি ফেলব ঘুড়াওয়ালা, তুমার ভাবনা নাই।

কবে হবে?

কী জানি, তুমি বরং আমারে সেই দিনটার কথা শুনাও।

বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনের কথা?

হ্যাঁ, তারও আগে কোনো এক দেশে মানুষ মারা হলো, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ মরল, সেই মরণের কথাগুলো শুনাও।

শুনতে পারবে?

জানব, মদরঞ্জিওয়ালা একটু কহিছে, বাকিটা কহে নাই, মুখ আঁধার করে বসি থেকিছে, কহিছে ইসব শুনায় মোর লাভ নাই।

সে দেশের নাম জানো?

জাপান কহিছিলা।

সেই শহর?

কী জানি।

ভানু দাস তখন হিরোশিমার কথা বলে। হিরোশিমায় শ্রাবণ ছিল, আমাদের এখেনে বুদ্ধ পূর্ণিমা। হিরোশিমার কথা শুনবে, নাগাসাকির কথা শুনবে, না পোখরানের কথা শুনবে কোকিলা বধূ? হিরোশিমা মানে মরণের সেই কৃষ্ণগহ্বর, কালো বৃষ্টি নেমে আসছে মরণ হয়ে। সেই মরণ থামে না, বছরের পর বছর চলে। সে যেন ছিল মরণের কালো মেঘ, সেই মেঘ ছেয়ে যায় শুধু, ছেয়েই যায়। সেই মেঘ শেষ হয় না। তার আয়ু ফুরোয় না। পূর্ব দিগন্ত থেকে পশ্চিম দিগন্ত শুধু মৃত্যুর ছায়া দেখে হিরোশিমা। সেই মরণ থেকে কেউ বেঁচে ফেরে না।

কোকিলা বধূ অস্ফুট আর্তনাদ করে ওঠে, কী কহ ভানুদাদা?

যা হয়েছিল তাই বলছি।

ভানু বলে যায়। বলতে বলতে আচমকা থামে, থেমে যেতে তার কণ্ঠ হতে জেগে ওঠে অন্য আর এক স্বর। আসলে কন্থক তো জানত মৃত্যুকে জয় করতে বেরিয়েছেন কুমার, রাজপুত্র মৃত্যুকে নিঃশেষ করতে তাঁর অশ্বটিকে শূন্যপৃষ্ঠ করে রেখে গিয়েছিলেন, এখন মরণের ছায়া দেখে সে কি কুমারের সন্ধানে গেল, তা না হলে গেল কোথায়, এই মরণে কি কুমারেরও নিস্তার নেই?

কী কহ তুমি ভানুদাদা, ধরতে পারছিনি।

আমার কন্থককে তুমি আঁকো।

আঁকতে তো চাই।

শূন্য হৃদয় ভানু দাস ঘাড় হেঁট করে বসে আছে। ঘোড়া ব্যতীত তার অস্তিত্ব কোথায়? কন্তুক ছাড়া ছন্দককে কে চিনত বলো কোকিলা?

কোকিলা মাথা নাড়ে, কুছুই বুঝিনি ভানুদাদা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *