1 of 2

অশ্বচরিত – ৭

সাত

ভানু এবার শ্রীপতিকে নিয়ে চলল মীরগোদা, জাহাজঘাটা। দুটি সাইকেলে দুজনে। সকালবেলায় জোর বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় পথের বালি বসেছে যেমন, দু-এক জায়গায় কাদাও হয়ে গেছে। সাইকেল তুলে পার করাতে হয় সেই জায়গায়। ভানুর দুই চাকা গড়ায় আগে, পিছনে তাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করছে শ্রীপতি। ভানু বকবক করেই চলেছে। শ্রীপতি হুঁ হাঁ করে যাচ্ছে। ভানুই তাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। কদিন ধরে দীঘার বাজারে ঘোড়া আঁকা মদরঞ্জি খুঁজেছে শ্রীপতি। যদি পেয়ে যায়, দেখবে সে কেমন ঘোড়া। পায়নি দেখে ভানু বলেছে, চলুন মীরগোদা, আমার কথাটা যাচাই করে নিন।

যেতে যেতে ভানু বলছে চোদ্দবেড়িয়ার সেই পুরনো অভিজ্ঞতার কথা। সেই যেবার প্রথম পালিয়েছিল পক্ষিরাজ। সেই চোদ্দবেড়িয়ার সবুজ ঘাস জমিতে মাদি ঘোড়ার পিছনে মদ্দা ঘোড়ার কেশর ফুলিয়ে দৌড়। দূরে সমুদ্র। নীল আকাশ সেই সমুদ্রে ডুবে গিয়ে আকাশ সমুদ্র একাকার।

শ্রীপতি বলর, সব তো হলো, এবার কোথায় গেল?

ভানু বলে, যেখানে গেলে ও যেতে পারে সেখানে যাচ্ছি তো বাবু।

যাচ্ছি তো বটে, কিন্তু এসব কি হতে পারে?

কী হতে পারে না বলুন দেখি?

তোর সেই কোকিলা বধূ মোদের অশ্বটারে টেনে নিয়ে গেল?

কেউ না কেউ তো টেনেছে। বলল ভানু।

তা হবে কেন, এমনি যেতে পারে না?

ভানু বলল, এমনি কি কিছু হয় বাবু, কিছু ঘটলে তবে তো কিছু হবে।

শ্রীপতি চুপ করে গেল। ভানুর শেষের কথাটা তার মাথায় ঝিলিক মেরেছে। অসত্য তো বলেনি ভানু। কিছু ঘটলে তবে না কিছু হয়। এই যে বোশেখ মাসে উধাও হলো পক্ষিরাজ, কী ঘটেছিল তাহলে? সে তো পালায় আশ্বিন মাসে। তখন তাকে চোদ্দবেড়িয়া ডাকে। ডাকে সব সুন্দরী ঘুড়ীর দল। ডাকে সবুজ ঘাস, ঘন নীল সমুদ্র। কিন্তু বোশেখ মাসে তো চর শূন্য। কিছুই নেই। চরের ডাকে সে যায়নি। তাহলে গেল কেন? এইটিই খুঁজে বের করা দরকার।

ভানু ঘাড় কাত করে, ঠিকই বলেচেন বাবু, ওইটি খুঁজে বের করতে পারলে সব হয়ে যাবে, আর আমি তো ওইটিই খুঁজে বেড়াচ্ছি।

কী?

কন্থক কেন পালাল তার সাথীকে ছেড়ে তা খুঁজে বের করতে পারলে কোথায় পালালো তা খুঁজে বের করা কোনো অসুবিধের ব্যাপার নয়, আর সেই জন্যিই না চলেছি জাহাজঘাটা।

শ্রীপতি আচমকা বলল, তুই খুব চালাক, খুব চালাক, আমি কিছু বুঝিনে ভাবছিস? কেন যাচ্ছিস মীরগোদা?

আঁজ্ঞে কোকিলা বধূরে দেখতি, আপনারে দেখাতি।

তার সঙ্গে মোর অশ্বের সম্পক্কো কী?

অশ্বটারে সে ডাক দিয়ে তার মদরঞ্জিতে এঁকে ফেলেছে। আপনি বিশ্বাস করেন না করেন ওটাই সত্যি, ঘোড়াটা যে হাওয়া হয়ে গেল তার কারণ এটা হওয়া খুবই সম্ভব।

দুজনে কথা বলতে বলতে প্যাডেল করছে। একই রেখায় দুটি সাইকেল চলেছে পরপর। রাস্তার দুপাশে কাজু বাদাম বন। খুব ঘন নয়, হালকা, মাটির দিকটা একেবারে পরিষ্কার, গাছে গাছে ফাঁক অনেক। গাছগুলোর সবুজতা নতুন বৃষ্টিতে বেড়েছে। সবুজের ওপর সবুজ পোঁচ পড়েছে যেন। পথের দুপাশে যেখানে কাজু গাছ প্রায় মিলিয়ে গেছে, সেখানে ঘন কেয়াবন। কেয়াগাছ আধ মানুষ উঁচু হয়ে তলোয়ারের মতো পাতাগুলো ছড়িয়ে দিয়েছে চারপাশে। কেয়াপাতার সবুজ আর কাজু পাতার সবুজে ফারাক আছে। কেয়া আর কাজু বন ব্যতীত দূরে দূরে ঝাউয়ের অন্ধকার, কোথাও নারকেল সারি, তাল। এছাড়া নিম আছে, জাম, জারুল আছে, কাল কাসুন্দের গম্ভীরতা আছে। অনেক দূরে একটি অশ্বত্থও দেখা যায় আচমকা। এই যে গাছগাছালি, এর ভিতরেই কত পাখি! পথ নির্জন। কোথাও কোনো শব্দ নেই। পাখির ডাক কোনো আছড়ে পড়া শব্দ নয়। নির্জনতা ভেঙে ফেলা শব্দ নয়। পাখির ডাক যেন নির্জনতারই অংশ। এই যে একটানা ঘুঘুর ডাক, কুবো পাখির কুব কুব, একটি কুবোর ডাকে সাড়া দেয়া আর একটি পাখির কুব কুব, চোখ গেল পাখির ডাক—সব যেন এই নির্জন পথেরই অংশ। এইসব পাখির ডাক শেষ হয় না। পার হয়ে যেতে যেতে আবার শোনা যায়। এই সব অদৃশ্য পাখির ডাকের সঙ্গে ঝলমলে নীল, ঝলমলে হলুদ, উজ্জ্বল শ্যামা পাখিরা এগাছ থেকে ওগাছে উড়াল দেয়। দূরে নারকেল গাছ থেকে সাড়া দেয় কাঠঠোকরা। ভিজে মাটিতে প্ৰাণ পেয়েছে ঘাসের বীজ। তার ভিতরে প্রাণ পেয়েছে পোকামাকড়। শূন্যতায় উড়ছে জঙ্গুলে মশা। পতঙ্গের দল। ফড়িং উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে, ডানা ফনফনিয়ে।

শ্রীপতি বলল, এসব কে বিশ্বাস করে, জলজ্যান্ত ঘোড়া বাতাস হয়ে যাবে?

ভানু বলে, লোকের বিশ্বাস অবিশ্বাসে কী যায় আসে?

তুই নিজে বিশ্বাস করিস?

চোখে তো দেখলাম বাবু।

চোখে কী দেখলি?

দেখলাম মদরঞ্জিতে অবিকল সেই ঘোড়া।

শ্রীপতি বলে, মদরঞ্জিতে কেন, কত জায়গায় ঘোড়ার ছবি আছে।

তা থাকুক, কিন্তু বোশেখী পুন্নিমে? যেদিন হারালো কন্থক সেদিন জোছনায় বসে আঁকা হলো যে।

শ্রীপতি চুপ করে যায়। এসবে পাগলও বিশ্বাস করবে না, কিন্তু ঘটনা যদি সত্যি হয় তবে তো তা বড় বিস্ময়ের। আর সেই বিস্ময়ই যে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মীরগোদা, জাহাজঘাটা, অচেনা এক কোকিলা বধূর কাছে।

ভানু বলল, মানুষকে পশু করে দেয় না জাদুকরী?

কে বলেছে?

একই কথা কানে শোনাচ্ছে ভানু কদিন ধরে। মাথাটা গেছে ওর। আরা- ভোজপুরে যাবে না, অথচ মাঝরাত্তিরে ঘুমের ভিতর গোঁ গোঁ করবে, সেদেশে পাঠানো ছেলে বউয়ের জন্য নাকি মন খারাপ হয় ঘুমের ভিতরে। কান্না আসে। শ্রীপতি বলল, ওসব বললে লোকে তোকে মারবে, তোর গায়ে ঢিল ছুড়ে থেঁতো করবে।

ভানু বলল, বশীকরণ, তন্ত্রমন্ত্রে আমিও বিশ্বাস করিনে বাবু, কিন্তু কোকিলারে যদি দেখেন, মনে হবে ঘোড়ারে যদি কেউ ডেকে থাকে, সে, সে ডাকলে কে না যায়?

দুজনে আবার চুপচাপ। সাইকেল চলছিল। ভানু অনেকক্ষণ বাদে বলল, বাবু ওই যে দেখতি পাচ্ছেন ঝাউবন, ওর ওপারে জাহাজঘাটা, মনে হচ্ছে না সমুদ্দুর ছিল, একেবারে দীঘার মতন লাগে। চোদ্দবেড়িয়ায়ও এমন ঝাউবন আছে।

সাইকেল থেকেই ঘাড় তুলে দেখল শ্রীপতি। ঝাউবনের মাথা অন্ধকার। যেন মেঘ জমে আছে ওই আকাশে। জাহাজঘাটা, মীরগোদার কথা শুনেছে অনেক, কিন্তু আসা হয়নি। অনেকটা আগে ভানুর দেখাদেখি শ্রীপতিও নেমে পড়ল সাইকেল থেকে। বালি বাড়ছে। পথ ডান দিকে ঘুরে গেছে। জাহাজঘাটার দিকে পথ নেই। মোটাদানার বালি। ছোট ছোট স্তূপ।

ভানু বলল, এখেনে এককালে সত্যি কি সমুদ্দুর ছিল?

হাসে শ্রীপতি, লোকে বলে, কিন্তু বালি আর বালিয়াড়ি মানে তো সমুদ্ৰ না।

তাহলে কী?

কিছুই না, হাওয়ায় বালি উড়ে উড়ে এসে এখেনে এমন হয়ে গেছে।

ভানু অসন্তুষ্ট হয়, আপনি যে কিছুই মানেন না বাবু, জাহাজঘাটা কি এমনি?

শ্রীপতি আর ভানু বালি ঠেলে ঠেলে ঝাউবনের কাছে গেল। আর তখনই ঝাউবন থেকে কে বেরিয়ে এল, কে? শ্রীপতির বুক থমথম করে। এল কোন অচিন সমুদ্রে, সাগর ফুরোন জাহাজঘাটায়, সেখানে ঝাউবনের ভিতর থেকে বেরোল কে? গলা তুলে দাঁড়িয়ে গেল শ্রীপতি, কপালকুণ্ডলে! শ্রীপতি বিড়বিড় করে, আমি হারাইনি, আমার ঘোড়াটা, কে, কে ও?

এ তো প্রায় রক্ত বসন। লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ, কপালে মস্ত সিঁদুরের টিপ, সিঁথিতে টানা সিঁদুর, কালো বরণ, যৌবনে ঝলোমলো, কে ও?

ভানু চাপা গলায় বলল, সেই কুহকিনী, লাল জাদুকরী, একা এই সমুদ্দুরে কী করছিল। এবার বিশ্বাস হলো তো বাবু, ঘোড়াটা কেন পালাল বোশেখ মাসে।

শ্রীপতিকে দেখছিল কোকিলা। ভানুর দিকে তাকাচ্ছিলই না। ঝাউবন থেকে বোরোতে দুটো মানুষ দেখে গৌরমোহন মদরঞ্জিওয়ালার বউ অবাকই হয়েছে। ওদের ভেতরে একজন তার চেনা।

ভানু বলল, ভালো আছ তো, তুমার মদরঞ্জি দেখতে এলো বাবু।

বাবু কে? শ্রীপতির দিকে তাকিয়ে ভানুকে জিজ্ঞেস করল সে।

ভানু পরিচয় দিল, বাবু হলো ভাগ্যহীন, ছিল এক পঙ্খিরাজ, সেই পঙ্খিরাজ যেটি তুমার মদরঞ্জিতে আঁকা হয়েছিল, যেটি আবার আমার সাথী জন্মজন্মান্তরের, কন্থক নাম।

ঠোঁট বাঁকায় কোকিলা, কিন্তু মদরঞ্জিওয়ালা তো নেই।

নেই! কেন আবার পালাল? ভানুর মুখ দিয়ে কথাটা বেরিয়ে এলো আচমকা।

কোকিলা চমকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়, তার মানে?

বলছি ঘরে কি গৌরমোহন নাই? জিজ্ঞেস করল ভানু ঢোক গিলে।

থাকার কি কথা ছিল?

না থেকে যাবে কুথায়?

কেনে তার কি যাওয়ার জায়গা নাই?

আছে বলে মনে হয় না তো।

খিলখিল করে হাসে কোকিলা। হাসির দমকে ভরা শরীর কাঁপে। বুকের আঁচল সরে যায়। ঘোর লাল ব্লাউজের নিচে ঢাকা পড়া পীনস্তন থরথর করে। আহা বুকের সুবাস যেন টের পাওয়া যায়। শ্রীপতির চোখে ঘোর লাগে। শরীরে যেন আগুন বয়ে যায়। আর তা টের পেয়েই বুকের আঁচল টেনে স্থির হলো কোকিলা। মাথা নামিয়ে ঈষৎ ধরা গলায় জিজ্ঞেস করে, কাম আছে তো মানুষটার।

সে তো হাটবাজার, মদরঞ্জি বেচা, রাতি তো ফেরে?

ফেরে, আবার ফেরেও না।

পরদিন তো ফেরে?

না ফিরে যাবে কুথায়? বলল কোকিলা বধূ। মুখ তুলে তাকায়। মুখে স্মিত হাসি। উজ্জ্বল চোখদুটিতে ঝলমল করছে আলো। তা দেখে ভানু উৎসাহিত, বলল, ওই কথাই তো বলছিলাম আমি, না ফিরে সে যাবে কুথায়, তুমি তারে আটক করেছ, তুমার কাছেই না ফেরবে, তুমার টানে না তুমার কাছে আছে।

হাসিতে ঝিলমিল করে কোকিলা, যেন ঝাউবনের আড়াল, আবডাল থেকে রোদের ছটা এসে পড়ছে ভানু আর শ্রীপতির গায়ে। কোকিলা হাসতে হাসতে বিস্ময় প্রকাশ করে, আমি তারে আটক করেচি, বেশ কথা তো তুমি বলো হে ভানুবাবু।

ভানু বলল, করো নাই?

কী করে করলাম?

তাহলে গৌরমোহন মদরঞ্জিওয়ালারে পেলে কী করে?

শ্রীপতি ভাবছিল এই সাগর হারানো জাহাজঘাটায় রোদ ঝিমঝিম বেলায় কথা না বলে ওর বাড়ি গেলে হতো। মেয়ে যখন এত সুন্দর, এমন পরিপাটি যৌবন যখন কোকিলা বধূর, তার ভিটে বাড়িটি পরিচ্ছন্ন হবে তো নিশ্চয়। সেখানে ছায়ায় বসে না হয় কথা হতো। কথাবার্তায় তো মাদকতা রয়েছে। এই যে বলছে কোকিলা, কী করে পেল মদরঞ্জিওয়ালারে তা তারে জিজ্ঞেস করে কেন ভানু দাস?

তার কি তা মনে আছে?

এর মধ্যে ভুলে যাবে?

ও কথা মনে কি থাকে!

বিড়বিড় করে ভানু। সে বলতে চায় যে কথা তা কি বুঝতে পারছে না কোকিলা বধূ। মদরঞ্জিওয়ালা গৌরমোহনের কি মনে থাকার কথা সেই সব কথা? যেন আগের জন্মের কথা সব। আশ্বিন মাস, সুবর্ণরেখা নদী পড়েছে সমুদ্রে যেখানে, সেই চোদ্দবেড়িয়ার চর, চরে সবুজ ঘাসের ভিতরে দশটা মাদি ঘোড়ার ভিতরে সে একমাত্র পুরুষ। তাকে ঘিরে থাকে ঘুড়ীগুলো। আকাশ কী নীল! সমুদ্র, নদী কত শান্ত! কত ভরন্ত! বাতাসে ঠাণ্ডা ভাব। কোথাও কোনো ধুলো ময়লা নেই, ইস! কী সব ভাবছে সে? কন্থক লাফ দিচ্ছে আশ্বিনের রাতে, চাঁদের আলোয়। সমস্ত রাত ঘুমোল না সে। কিন্তু তার সঙ্গে গৌরমোহনের কী সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে গৌরমোহন তা জানে না, জানে যেন এই কোকিলা। আহা দূরন্ত ঘোড়াকে শান্ত করে দিয়েছে এই বধূ। মদরঞ্জিতে এঁকে ফেলেছে তাকে। তাকে টেনে এনেছে সমুদ্রপাখি হোটেল থেকে সেই চাঁদনি রাতে। টেনে এনেছেই। না হলে অবিকল সেই অশ্ব কী করে আঁকা হয়ে যায় ওই দিনে? ভানু দুলছে বাতাসে, বিড়বিড় করছে নিজের মনে, তুমি তো জানো সব, জানো না?

ভানুর কথার জবাব দেয় না কোকিলা। সে ক্ষণে ক্ষণে অন্যমনস্ক হচ্ছে। কোথায় যে মন যায়। ভানু তার মনের কথা পড়তে পারছে। সে তো বর্ণহীন করে দিয়েছে পক্ষিরাজকে। না হলে ওই গৌরমোহন, সে এলো কোথা থেকে?

কোকিলা খিলখিল করে হাসে, এখেনে কথা হবে?

না, কিন্তু গৌরমোহন যখন নাই। বিড়বিড় করে মাঝখানে কথা থামিয়ে দেয় ভানু।

তার কাছে এয়েছিলে? ঠোঁট দিয়ে যেন অভিমান ঝরে পড়ে উড়ন্ত বালির মতো। বালি ঝরে যায় কোকিলার পলাশ লাল শাড়িতে। আঁচল নেড়ে বালি ঝরাতে থাকে মদরঞ্জিওয়ালার বউ। ভানুর চোখ আছে। ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছে। যেন জাহাজঘাটার জাহাজে করে এসে নেমেছিল সেই কবে, কোন কালে? শ্রীপতি ভাবে এত যৌবন সে আগে দেখেনি। মরা এক জাহাজঘাটা, বুড়ো হয়ে যাওয়া এক জাহাজঘাটায় এত যৌবন নিয়ে থাকে কী করে কোকিলা বধূ?

ভানু বলে, দুজনেরই কাছে এসেচি, তুমি হলেও হবে কোকিলা। বাবুর ঘোড়াটি সেই যে গেল ফিরল না, কী তেজ সেই ঘোড়ার! কুথায় যে হাঁরাই গেল! হায় রাজপুত্র! তুমি চলে গেলে, তারে নিয়ে ছিলাম আমি!

ভানুর কথায় কোকিলা হাসে। কী পুরু ঠোঁট জোড়া, গোলাপি ভাব সেই ঠোঁটে নাকে কী সুন্দর নথ! রুপোর হবে, ঝুটোও হতে পারে ওই নাকফুল, কিন্তু যাই হোক না কেন মানিয়েছে সুন্দর। পায়ে নূপুর, পুরু করে আলতা পরা। শ্রীপতি দেখছিল এমন যৌবন সচরাচর বড় চোখে পড়ে না। এমন রূপ বড় একটা দেখা যায় না। সবাইকে হারিয়ে দিয়ে বসে আছে। সাইকেল ঠেলে ঠেলে শ্রীপতি হাঁটছে, ভানুর সঙ্গে। কোকিলা যায় আগে আগে, একটু এগিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে। কতবার যে দেখল। তার ডাকে কে না আসে! এমনই ভাব ঠোঁটের হাসিতে। দুটো পুরুষ কেমন তেজ হারিয়ে তার নূপুরের রিনরিন অনুসরণ করছে!

কোকিলা বলে, কী যে কহো তুমি, কিছুই বুঝিনে, রাজপুত্তুরটা কে? কে কারে ছেড়ে গেল, কেন গেল? রাজপুত্তুর কি হেঁটে চলে গেল?

ভানু বলল, তাই-ই বটে, এবার ঘোড়া গেল, পড়ে থাকলাম আমি একা একা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *