1 of 2

অশ্বচরিত – ৯

নয়

ঠাকুর বলল, ভানুটা সেয়ানা, কন্থক সব মিথ্যে! আপনি ওর খপ্পরে পড়ে গেছেন বাবু?

শ্রীপতি ফিরেছে কাঁথি থেকে। মীরগোদায় গত রাত্তিরে ছিল, বিকেলের ঝড়ের পর সন্ধের সময় গৌরমোহন মদরঞ্জিওয়ালা ফিরেছিল একরাশ না বিক্রি হওয়া মাদুর নিয়ে। কিন্তু যার যেমন কপাল, সেই ঘোড়া আঁকা মাদুরটাই কিনে নিয়েছিল কাঁথির এক গেরস্ত। শুনে ভানুর যত দুঃখ, শ্রীপতির তার চেয়ে কম দুঃখ হয়নি। ঘোড়াটা তো তার। কিন্তু ভানু বলছে ঘোড়াটার ওপর এমন মায়া বসে গিয়েছিল যেন ঘোড়া আর তার নিজেতে কোনো তফাতই ছিল না। ভানু বলছে, ঘোড়া হারায়নি, যেন সে নিজেই হারিয়ে গেছে। কত জন্মের, কতকালের সাথী তার!

ঠাকুর বলল, ভানুর কথা রাখুন, ও আপনারে কুহক করেচে।

তার মানে? চমকে ওঠে শ্রীপতি।

মানে ও আপনারে জাদু করেচে বাবু, ঘোড়া হাঁরাইছে ঘোড়া পলাইছে, তার জন্য দশ দিক খুঁজি বেড়াতি হবে? ভানুরে তাড়ান।

পাওয়া যাবে কী করে?

ঠাকুর বলল, ও নিজেই ফিরে আসবে।

এ সময় তো পলায় না।

দ্যাখেন কেউ চুরি করল কি না।

কথাটা যে মনে হচ্ছে না শ্রীপতির তা নয়। চুরিও তো করতে পারে কেউ। চুরি করে বেচে দিয়েছে ওড়িশার ওদিকে। যাই হোক না, খুঁজতে তো হবে। থানায় একবার যাওয়া দরকার। ডায়েরি করা হয়েছিল প্রথম দিনই। থানা কি কোনো খোঁজ পায়নি?

ঠাকুর জিজ্ঞেস করল, কাল রাতে ছিলেন কোথা?

শ্রীপতি জবাব দিল।

সেখেনে কী?

ঠাকুর যেন জেরা করছে। শ্রীপতি বিরক্ত হলো। কিন্তু বিরক্ত হলে কী হবে, ঠাকুর তো ছিনে জোঁক। ধরেছে যখন ছাড়বে না। শ্রীপতি গায়ের জামা খুলে পাখার নিচে বসে হাওয়া খাচ্ছে, বলল, চা হবে?

হবে, কিন্তু আপনি হলেন মালিক। মালিক ওই খালভরাটার সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ওর কথায় উঠছে বসছে, বাবু, মোদের যে লাগে!

ঘোড়াটার খোঁজ করব না?

করবেন, কিন্তু তা বলে মীরগোদা গিয়ে থেকে গেলেন, পেলেন ঘোড়া?

শ্রীপতি বলল, চা-টা আনো দেখি, বকতে ভালো লাগছে না।

ঠাকুর বেরিয়ে গেল। ঠাকুর এই হোটেলের আয় থেকে কত যে সরায় তা তো শ্রীপতি জানে না। এই যে কাল রাতে ছিল না, ঘরখানা ভাড়া দিয়ে রোজগার করছে কি না কে জানে। কাল তো বলেই গিয়েছিল না ফিরতে পারে। ফিরলে সোজা বাড়ি চলে যাবে।

গৌরমোহন মদরঞ্জিওয়ালা লোকটা ভালো। তারা ফিরে আসতে চেয়েছিল রাত্রেই, লোকটা আসতে দেয়নি। আজ সকালে তাদের নিয়ে চলে গিয়েছিল কাঁথিতে। দুপুর দুপুর। গৌরমোহনের সঙ্গে সেই গেরস্তবাড়িতে পৌঁছল। শুনল মাদুর নেই। মাদুর তার ছেলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে কলকাতায়। আজ সকালের বাসেই চলে গেছে তার চেনা লোকের সঙ্গে।

গৌরমোহন বলেছিল, শ্রীপতিবাবু যদি বলেন তো আর একখানা অমন বুনে দিতে পারি, বাবুর কি চাই?

পারবে বুনতে? ভানুর কথায় সন্দেহের ভাব।

পারব না কেন, ঘোড়া শুধু! বাঘ, গোলাপ বাগান, তাজমহল, নদী, পাহাড়, সমুদ্দুর, সব মাদুরে এঁকে দিতে পারব।

ঘোড়াটা হবে কি? ভানু জিজ্ঞেস করেছিল।

খুব হবে।

ঘোড়াটা তো চলে গেল কলকাতায়।

গৌরমোহন হেসেছিল, আবার হবে, কোকিলা এঁকে দেবে।

কারে আঁকবে? ভানু বলেছিল।

কেন ঘোড়ারে।

কোন ঘোড়া?

আঁজ্ঞে হর্স ঘোড়া। গৌরমোহন বলেছিল, অশ্ব যাহারে কয়।

পক্ষিরাজ কি? শ্রীপতি জিজ্ঞেস করেছিল।

কন্থক কি, রাজপুত্রের ঘোড়া? ভানু জিজ্ঞেস করেছে।

যদি বলেন দুটো ডানা জুড়ে দেব।

ওফ্! না, বাবুর ঘোড়া! ভানু বলেছিল অসহিষ্ণু হয়ে, যে ঘোড়াটা পালিয়েছে, সেই ঘোড়া, খাঁটি অশ্ব, কন্থক যেন হয়, শূন্য পৃষ্ঠ ঘোড়া রাজধানীতে ফিরল।

ঘোড়ার অর্ডার দিয়ে ভানুকে নিয়ে শ্রীপতি ফিরে এসেছে দীঘায়। সমস্ত পথটা ভানুর বকবকানি শুনতে হয়েছে তাকে। ভানু এখন চোল ধরেছে যাবে কলকাতায়। কলকাতায় চালান হয়ে গেছে ঘোড়া। কুহকিনী তাকে বন্দি করেছিল। তারপর তা কলকাতায় বেচে দিয়েছে গৌরমোহন। কেন বেচবে না, কলকাতায় যে ঘোড়ার মাঠ আছে। সেই মাঠে কত ঘোড়া না দরকার হয়। রেসের মাঠেই বিক্রি হয়ে গেছে শ্রীপতির ঘোড়া, তার কন্থক।

ভানুর কথা কখনো সত্য মনে হয়, কখনো মনে হয় অলীক। গাঁজায় দম দিয়ে ভানু ওই সব বলছে যেন। গৌরমোহনকে নিয়ে তারা গেরস্তবাড়িতে হানা দিয়েছিল দুপুরবেলায়। গেরস্ত মানে এক বুড়ি। মস্ত এক পুরনো বাড়ি। সেই বাড়ির কত দরজা কত জানালা, সব বন্ধ। সদর দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিল সে বুড়ি, তার কি একশ, দেড়শ বছর বয়স, নাকি আরও বেশি? চামড়া থলথলে, কোমর বাঁকা, চোখে মোটা কাচের চশমা। বুড়ি হি হি করে হেসেছিল গৌরমোহনকে দেখে, আবার এয়েচো, এবার কী নিয়ে এলে ও মানষি, তুমার ঘুড়াটা খুব সোন্দর।

ভানু হামলে পড়েছিল, অশ্বটা কই?

কলকেতায়।

কলকেতায় গেল কী করে?

আজ সকালের বাসে চলে গেছে, ও জিনিস কেউ ঘরে রাখে?

রাখে না? অবাক হয়েছিল শ্রীপতি।

না, ডাকাতি হয়ে যেতে পারে, পারে না? বুড়ি ফোকলা গালে হেসে বলেছিল, দেখলেই মনে হচ্ছিল খাঁটি অশ্ব, আহা কেমন বুনেচে মদরঞ্জিওয়ালা, কাল রাতভর ঘোড়া দাপাইছে শানের মেঝেতে।

তবে! ভানু ঘুরে তাকিয়েছিল শ্রীপতির দিকে। শ্রীপতি অবাক হয়ে বুড়ির কথা শুনছিল। বুড়ি বলছে মদরঞ্জির ঘোড়ার কথা। একেবারে আরবি ঘোড়া, ও ঘোড়ায় চেপে জজ-ম্যাজিস্ট্রেট ঘুরত পথে পথে।

কবে? ভানু জিজ্ঞেস করেছিল।

এখন না, কতকাল আগে! বুড়ি উবু হয়ে বসে পড়েছিল ভাঙা বারান্দায়, বিড়বিড়িয়ে বলেছিল, আগের জন্মেও হতি পারে, মনে হয় তেমন!

ভানু বলেছিল, এখন তো জজ-ম্যাজিস্টর মোটরে চাপে।

কী জানি! বুড়ি মাথা নেড়েছিল, এমন সোন্দর ঘোড়া, এমন তার রূপ যে দেখলিই পছন্দ হবে, কীরম চিকন গতর, আহা ভালো জিনিসই বেচেছিল মদরঞ্জি-অলা।

ভানু বলেছিল, দেখুন বাবু কী বলে, ও তো রাজপুত্রের ঘোড়া, বিশ্বাস হলো বাবু? ও আসলে সেই ঘোড়া, কন্থক।

গৌরমোহন হেসেছিল, কোকিলার হাতের কাজ অমন, কিন্তু এসব নেবার লোক কই, বুড়ির কী খেয়াল হলো, নিল।

বুড়ি আবার উঠে দাঁড়িয়েছিল, মোর বেটা যখন চাপবে ওই ঘুড়ার উপর, বেটা যেন রাজপুত্তুর।

গৌরমোহন হে হে করে হেসে উঠেছিল, ভানুবাবু, তুমার মতন কথা বলে বুড়ি মা।

ভানু গম্ভীর হয়ে বলেছিল, যা বলেছে ঠিকই তো বলেছে, বুড়িমার ছেলের ঠিকানাটা দাও দেখি গৌরবাবু।

ঠিকানা কে দেবে? বুড়ির মাথায় কিছুই নেই। ছেলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে পাড়ার লোক ধরে। সে কলকাতায় পান ব্যবসা করে। আদায়ে যাচ্ছিল। কাজে, অকাজে বুড়ির ছেলের কাছে ওঠে। ঠিকানা যদি জানে, তবে সে। বুড়ি কিছুই জানে না।

ছেলে কী করে? ভানু জিজ্ঞেস করেছিল।

বুড়ি মাথা নেড়েছে, জানে না।

ছেলে কি রেসের মাঠে বাজি ধরে?

মাথা ঝাঁকিয়ে ছিল বুড়ি দেয়াল ধরে, কী জানি!

ছেলে কি ঘোড়া ছুটোয়?

কী জানি!

ছেলের নাম কী?

বুড়ি ফোকলা গালে হেসে বলেছিল, খোকা

খোকা মানে?

খোকা মানে খোকা। আহা খোকার কী রূপ, ঘোড়ায় চাপলি রাজপুত্তুর।

ভানুর তখন সন্দেহ হয়েছিল। মদরঞ্জিওয়ালাকে জিজ্ঞেস করেছে, সত্যি সত্যি ছেলে আছে তো?

আমি কী জানি!

বাহ্! ঘোড়াটা কার কাছে গেল, তা জানবে না গৌরবাবু?

গৌরমোহন বলেছিল, পয়সা পেয়েছি, হয়ে গেছে।

বাহ্ রে! অত সোন্দর ঘোড়াটা দিল তুমার কোকিলা বধূ, তারে কোথায় পাঠাচ্ছ, সে খোঁজ রাখবে না?

মাথা দুলিয়েছিল গৌরমোহন, দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল, নাহ্! অত মায়া রাখলি পরের কাজটা হবে না।

কিন্তু অমন একখানি আরবি ঘোড়ার মতন ঘোড়া! শ্ৰীপতি বলেছিল।

যাক, অমন কত হবে।

সত্যি হবে?

তাই বা কী করে বলি! গৌরমোহন বিনবিন করছিল।

বলা যায় না? ভানুর জেরার শেষ নেই।

না, কখন কে ধরা দেয় তা কি বলা যায়?

ভানু গা টিপেছিল শ্রীপতির, শুনছেন কথা?

শুনছি।

এবার বিশ্বাস হচ্ছে?

হচ্ছে। বলে গৌরমোহনের কথা শুনছিল শ্রীপতি। গৌরমোহন বলছিল, সবই কোকিলার মর্জি। কখন তার মন হবে আঁকার, তবে তো সে আঁকবে। কখন তার কাছে ধরা দেবে ঘোড়া, তবে তো সে তাকে এঁকে দেবে মদরঞ্জিতে। এ হলো এক খেলা, এ খেলা বলে বোঝাতে পারবে না গৌরমোহন।

বুড়ি ঢুকে গিয়েছিল বাড়ির ভিতরে। দরজা টেনে দিয়ে সেই নিঃঝুম পুরী থেকে বেরিয়ে এসেছিল তিনজন। বেরোতে বেরোতে ভানু জিজ্ঞেস করেছিল আবার, বুড়ির কোনো ছেলে আছে কি?

কী দরকার ওসব খোঁজে? গৌরমোহন বলেছিল।

ভানু বলেছিল, ঘোড়াটা কার কাছে পাঠাল, ও বুড়ি সহজ নয়। খোকা! নামটা পর্যন্ত বলল না, খুব সেয়ানা!

তারপর তো গৌরমোহনকে অর্ডার দিয়ে ফিরেছে তারা। ভানু বাসস্ট্যান্ড থেকে সমুদ্রের পারে চলে গেল। শ্রীপতি পাখার বাতাসে ঘাম শুকোচ্ছে, চায়ের গ্লাস নিয়ে ঢুকেছে ঠাকুর, বলল, বউদিমণি এয়েছিল।

হুঁ। শ্রীপতি চায়ে চুমুক দিল।

নার্স দিদিমণিও এয়েছিল।

হুঁ। শ্রীপতির কিছুই শুনতে ইচ্ছে করছে না। কাল দুপুরে মীরগোদার বালিয়াড়িতে দেখা কোকিলা বধূ, তারপর ঝড়ের ভিতরে মনে আঁকা কোকিলা বধূ, রাতের অন্ধকারে নিঃঝুম হয়ে থাকা কোকিলা বধূ তার মাথার ভিতরে মেঘের মতো ছেয়ে গেছে যেন। কী আশ্চর্য সেই সোনালি মেঘ!

ঠাকুর ডাকল, বাবু শুনছেন?

শুনছি।

ঠাকুর বলে, ভারতী দিদিমণি আর বউদিমণির মুখোমুখি দেখা এখেনে।

হুঁ। শ্ৰীপতি চোখ বুজে আছে। কাল থেকে ভানু ছিল তার পাশে ছায়ার মতো। ভানুর জ্বালায় কি একা হওয়ার উপায় ছিল? বাসেও সারাক্ষণ ভানু তার কানের কাছে বকবক করে গেছে। এখন শ্রীপতি যেন নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। ভাবছিল গৌরমোহনের কোকিলার কথা। কী তার হাতের গুণ। চাঁদের আলোয় বসে বন্দি করে ফেলল পক্ষিরাজকে। যাকে কোনো দিন সামনা সামনি দেখেনি, তাকে মনে মনে অবিকল এঁকে ফেলেছে মদরঞ্জিতে!

ঠাকুর ডাকল, বাবু কি ঘুমোলেন?

রাগ হয়ে গেল শ্রীপতির, একটু একা হওয়ার উপায় নেই!

ঠাকুর বলল, তুলকালাম হয়ে গেছে দুজনায়।

কী হয়েছে? ভ্রু কুঁচকে শ্রীপতি জিজ্ঞেস করে।

কী হয়নি তাই বলুন? মেয়েছেলে মেয়েছেলেয় মারামারি হতে যাচ্ছিল। হয়নি আমার জন্যে, লোক জমে গিয়েছিল, থাক ওসব কথা, আপনি বরং বিশ্রাম নিন, রাতে খাবেন তো?

কথা থাকবে তো বললে কেন?

না বললেও তো উপায় নেই বাবু। ঠাকুর চলে গেল। চলে গেল শ্রীপতির মাথা ভার করে। ভানুকে সমুদ্রের ধারে পাঠিয়ে একা হয়ে শ্রীপতি হিসেব কষছিল কীভাবে কোকিলা বধূ ঘোড়াটাকে এঁকে ফেলেছিল। মদরঞ্জির ঘোড়াটাকে সে নিজে না দেখলেও ভানুর কথায় বোঝা গেছে অবিকল পক্ষিরাজ! এখন তো ভানুর বদলে মাথায় ভারতী চৌধুরী আর মধুমিতা মাইতির কণ্ঠস্বর! ঠাকুর কথাটা কাল সকালেও বলতে পারত। মাথা ভার করতে বলে দিয়ে নিশ্চিত খি-খি করে হাসছে বাইরের অন্ধকারে বসে। শ্রীপতি ডাকল, ঠাকুর, ও ঠাকুরমশায়!

আঁজ্ঞে। ঠাকুর সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিল, দরজায় এসে দাঁড়াল।

ভারতী কী বলতে এসেছিল?

কিছু না, খোঁজ নিতে এয়েছিলেন আপনি কোথায়, বাবু বলে যাননি?

টায়েম পেলাম কই?

বাবু, আপনি ওই ভানুরে তাড়ান।

ও কী করল?

ওই তো আপনাকে ঘুরোয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, সাইকেল কই?

মীরগোদায়।

ভানুরটা?

মীরগোদায়, আমরা তো ওখেন থেকে কাঁথি গেলাম আজ সকালে।

এবারে সাইকেল কী করে পাবেন?

মদরঞ্জিওয়ালা ফেরত দিয়ে যাবে।

ঠাকুর বলল, যেখেনে যান ওই দুজনকে বলে যাবেন তো, গিন্নি ব্যস্ত হন, আবার উনিও তো পেরায় গিন্নির মতোই ব্যস্ত, দুজনে কেউ কাউরে সহ্য করতে পারেন না, আর পারার কথাও তো নয়।

শ্রীপতি চুপ করে থাকে। বলে যায় ঠাকুর। বলতে বলতে ঠাকুর দেখে শ্রীপতিবাবুর চোখ বোজা। ঘুমিয়ে পড়ল! ঠাকুর আলতো করে ডাকে, বাবু শুনছেন! সাড়া না পেয়ে ঠাকুর বেরিয়ে যায়। বাইরে অন্ধকারে এসে ভাবল গিয়ে খবর দেবে নাকি হাসপাতালের সিস্টার ভারতী দিদিমণিকে! উনি বাবুর বিয়েঅলা মেয়েমানুষ নন, কিন্তু বাবুর ওপরে ওঁর দাবি যেন সেই রকম, তার চেয়েও যেন বেশি। এতে বাবুর দুই ছেলেমেয়ের মা মধুমিতা মাইতির খুব রাগ। সেদিন ঝগড়ায় যা জানা গেছে তা হলো নার্স দিদিমণি ভারতী চৌধুরী নাকি অনাথ। বাপ-মায়ের খোঁজ নেই ওঁর। বাবুর বউ তো যা তা বলে কাঁদিয়ে দিল ভারতী চৌধুরীকে। মেদিনীপুরের অনাথ আশ্রমের মেয়ে সিস্টার দিদিমণির জন্মের ঠিক নেই!

ঠাকুর ডাকল, ঠাকরানি শুনছিস?

ঠাকুরানি রান্নাঘর থেকে সাড়া দেয়, কী?

আমি যাই দিদিমণিরে খপর দিই।

কীসের খপর?

ঠাকুর জবাব না দিয়ে অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ে। ঠাকুরের পক্ষপাত আছে নার্স দিদিমণিতে। বাবু শ্রীপতি মাইতির মা যখন হাসপাতালে গিয়ে মরো মরো, সেবা করেছিল ভারতী চৌধুরী। সেই থেকে আলাপ। প্রেম এখন গভীর, তাই তো জানে ঠাকুর, কিন্তু তা যদি হয় সব কথা শুনে বাবু চোখ বুজে পড়ে থাকল! ঠাকুর হাঁটছে অন্ধকারে। শ্রীপতি মাইতির মনের তল বোঝা ভার, নইলে ভানুকে কেউ ঘোড়া খুঁজতে পাঠায়? ভানুর সঙ্গে বেরোয় ঘোড়ার খোঁজে? ভানুর মতো আধ-পাগলার হাতে ঘোড়ার দেখভাল করতে দেয়?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *