1 of 2

অশ্বচরিত – ৪১

একচল্লিশ

চন্দনেশ্বর হিনাড়ি গাঁয়ের নগেন গিরির ঘুড়ীটা শ্রীপতি মাইতির ঘোড়ার সঙ্গে মিলে গর্ভবতী হয়েছিল বছর চারেক আগে। ভানু দেখেছিল ঘুড়ীটার পাশাপাশি ঘুরছে পক্ষিরাজ। হাত ধরাধরি করে যেন। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে একসঙ্গে ঘাস খাচ্ছিল তারা চোদ্দবেড়িয়ার চরে। ভানু আনতে গিয়েছিল ঘোড়াকে। তখন কার্তিকের আরম্ভ। তো সেই সময়ে আলাপ নগেন গিরির সঙ্গে। তিনি বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ঘুড়ীর ব্যবস্থা হয়ে গেছে বলে। মাইতিবাবুর ঘোড়ার জাত খুব ভালো, ওর বীজ পেটে নিয়ে ঘুড়ীটা ভালোই বাচ্চা দেবে মনে হয়, বলেছিলেন গিরিমশায়। ভানু যাবে নগেন গিরির কাছে। মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। কালীপুজো শেষ। রোদ, বৃষ্টি, মেঘ পার করে প্রকৃতি এবার থিতু হচ্ছে। আর কদিন বাদেই তো পক্ষিরাজ ফেরে চোদ্দবেড়িয়া থেকে। অন্যবারে। এবার পথ শূন্য, চোদ্দবেড়িয়াতে যায়নি।

কালীপুজো, দীপাবলির দিন পাঁচেক বাদে ভানু রওনা হলো চোদ্দবেড়িয়ার দিকে। পরে যদি এসে থাকে ওখানে? আশ্বিনে চোদ্দবেড়িয়া যাওয়া তো ওর অভ্যেস, যদি গিয়ে থাকে? ঘুরতে ঘুরতে আবার চোদ্দবেড়ে গিয়ে দেখল গোটা ছয়েক ঘোড়া, ঘুড়ী রয়েছে, সাদা নয় বাদামি, দুটো খচ্চোরও আছে। মন খারাপ করে সে গিরিমশায়ের বাড়ি গেল, মশায় আছেন?

নগেন গিরি সম্পন্ন গৃহস্থ। তাঁর একটি ঘুড়ী বাদে আরও তিনটে ছিল। একটি তাঁর, একটি তাঁর ছেলে সতীশের। আর একটি অতিরিক্ত হয়ে পড়ে ছিল। ঘুড়ীর বাচ্চা হলে তার দোসর হবে। জমিতে লাঙল তো টানতে পারবে। কপালের ফের, ঘর এখন প্রায় শূন্য, পড়ে আছে একটা। চন্দনেশ্বর বাজারে গিরিমশায়ের ধান চালের কারবার, হিনাড়িতে কাজুবাদামের চাষ। পয়সাওয়ালা লোক। নাহলে কি এই যুগেও ঘোড়ায় চেপে ঘুরে বেড়ান। পায়ে শুঁড় তোলা নাগরাই, মাথায় নীল পাগড়ি।

গিরিমশায় ভানুকে দেখে বললেন, এসো ছন্দকমশায়, এসো, আর একজন কই?

কে? চমকে উঠল ভানু।

কেনে মোর জামাই।

জামাই! ভানু ভ্যাবলা মেরে গেল।

গিরিমশায় বললেন. কেনে ঘোটনের বাপ?

ঘোটন কে?

হা হা করে হাসলেন ছফুট লম্বা গিরিমশায়, এসো ভানুবাবু বলছি, এখনও কি তাঁর নেশা কাটেনি, নাকি যাওনি তুমি চোদ্দবেড়ে?

আঁজ্ঞে তারে তো পাইনি।

পাওনি মানে?

বলে গিয়েছিলাম না বোশেখী পুন্নিমের পর, ওই দিন পলায়েছে আমার কন্থক।

তুমি তাহলে কন্থক হারানো ছন্দক! সে তো অনেক দিনের কথা, এটা কার্তিক মাস।

ভানু কপালের ঘাম মোছে, কিন্তু গরম আর যাচ্ছে না, সেই বুদ্ধ পূর্ণিমায় দিনের বেলায় বোমা ফাটল, সেদিন রাত্তিরেই তো গেল!

দুফরে না বিষ্টি হইছিলা? ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেন নগেন গিরি।

হ্যাঁ, হয়েছিল তো।

বোমার কথাটি তখন তো কহনি ভানুবাবু

ভানু মাথা দোলায়, খেয়ালই ছিল না।

উটা তাহলে ভাবতে হবে, দিনটা মোদের ইন্ডিয়ার পক্ষে শুভ ছিলা কি? ভানু চুপ করে থাকে। গিরিমশায়ের ডাকে তাঁর বৈঠকখানার ঘরে পাতা গদিতে বসে। এই বাড়িতে এই আধা জমিদারি ব্যবস্থা। গিরিরা হিনাড়ির সাতকেলে বাসিন্দা। জমি কম ছিল না। তার অধিকাংশ বেচে দিয়েছে, সরকারি খাসেও গেছে কিছুটা। গিরিদের জমিতে লাঙল টানত ঘোড়ায়। সেসব আজকের কথা নয়, এখন তো ট্রাক্টর আছে। ট্রাক্টর ভাড়াও দেন তিনি।

ভানু বলল, বোমার দিন ঘোড়াটা গেল, অ্যাটম বোমা তো?

কী কহিতে চাও, স্পষ্ট করে কহ দেখি।

ভানু তার আন্দাজ বলল। অ্যাটম বোমার খবর টের পেয়ে কি পলাতক হলো ঘোড়াটা? তা শুনে হা হা করে হাসেন গিরিবাবু, মানুষ পলাচ্ছে না অশ্ব পলাবে, ইটা কীরকম কথা হলো?

আঁজ্ঞে ওরা বোঝে আগে।

কুথায় বোমা ফাটল, বোমায় মোদের শক্তি দিখানো হলো, আর তাতে ইদিকের জন্তু পলাবে, পোখরান তো অনেক দূর!

ভানু বলল, আনন্দ হয় নাই আপনার?

হাঁ, খুব বাজি ফাটানো হলো পরদিন, সবাই দিওয়ালি করে দিল খবরটা পেয়ে, মিঠাই বিলি হলো; কত বড় খবর বলো, জাপানে দুইটা শহরে দুইটা ছোট পড়িছিলা কতকাল আগে, মোরা পাঁচটা ফাটাই দিলাম অনেক বড় বড়, বুঝছ, উয়াতে ই জগৎ ধুলা হঁই যাবে।

ভানু বলল সেই পুরনো কথা, পোখরান দূরে হলে কী হবে, এখেনের মানুষ তো মনে মনে পোখরানে রয়েছে, আনন্দটা সমান। এক দেশ। পোখরানে তো ইন্ডিয়ার টাকাই চলে, ইন্ডিয়ার ফ্ল্যাগ ওড়ে।

গিরিমশায় বললেন, উসব বাদ দাও ভানুবাবু, তুমি ভুল কথা কহিছ, বোমার জন্য সে পলায় নাই, বোমার কথা কহিতে মোর ভয় করে।

তবে! ভানু চিন্তিত হলো। পোখরানের সূত্রে সে নিশ্চিন্ত হয়ে ওই পথে খুঁজতে আরম্ভ করেছে তাকে। কিন্তু গিরিমশায় বলছেন অন্য কথা। ভানুর তত্ত্বকে তিনি হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন। বলছেন, ঘোড়াটা পালিয়েছে তার পুরাতন স্বভাবে।

আঁজ্ঞে, এটা কী বললেন?

ঠিকই কহিছি, অশ্ব অতি পুরাতন প্রাণী, ইটা জানো?

আঁজ্ঞে তা কি আর জানি না, ভগবান বুদ্ধ কত হাজার বছর আগের!

অশ্বর বয়স কত তা তুমি জানো ছন্দক?

মাথা নাড়ে ভানু, না তো।

তার আগে কহ, অশ্ব যে পাও নাই তা মোরে কহি যাও নাই কেনে?

আঁজ্ঞে মনে ছিল না, ঘোড়াটাকে সেই থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

নগেন গিরি বলেন, কন্থক তো কন্থকের বংশ বটে, আবার ঘোটনের বাবা বটে, বাবা পলাতক মা বাঁচি নাই, হায়! নগেন গিয়ে রুমালে চোখের কোণ মোছে।

ভানু আহত হয়, সে ঘুড়ীটা গেল কোথায়!

উপরে। নগেন গিরি হাত তোলেন সিলিংয়ের দিকে, বিড়বিড়িয়ে বলেন, ঘুরে এলো, শুয়ে পড়ল, উঠলনি, থাক উ কথা। গলা ভার করে আসে গিরিমশায়ের।

কোন মাসে?

আষাঢ়ে, এক ফোঁটাও বিষ্টি ছিলনি, কী রোদ!

ঘোটন ঘোড়াটা কোথায়?

মোর বেটা নিয়ে গেছে, বেশ তাগড়াই হয়েছে, সাদা লেজ, সাদা কেশর, গাটা বাদামি, ওর মা-বাপ, দুটোই যেন ফুটি উঠিছে ওর ভিতরে।

ভানু চঞ্চল হয়ে পড়ে এ কথা শুনে, জিজ্ঞেস করল, খুব তেজি?

হ্যাঁ, তেজি তো বটে, ঘাড় যখন তোলে, ধরা যাবে রাজার ঘোড়া রাজার বেটা, বড় বড় দুটা চোখ, লম্বা গলা, যাহারে গ্রীবা কহে, তুমার অশ্বের রং চিনিনি, ইটার সব রং চিনা মনে হয়, কীরকম পুষ্ট দেহ, সাড়ে তিন বছর বয়স, যখন দৌড়য় সে, প্রাণভরে তাকায়ে দিখার মতো।

অত ছোট, ওর ওপরে আপনার বেটা চাপল!

বেটা তো তালপাতার সিপাই, সতীশরে তুমি দ্যাখোনি?

ভানু মাথা নাড়ে, বলে, তবু তো অ্যাডাল্ট মানুষ।

অ্যাডাল্ট কহ, আরে তার বয়স একুশ, ওজন পঁয়তাল্লিশ কেজি, এর ভিতরে উনি দুবার জন্ডিস হাঁকাইছেন, ভীষণ লোভা, বড় জিভ, শুধু খায়, কী করি বলো, একটাই তো বেটা, নগেন গিরির চোখ ছলছল করে ওঠে, পাঁচ মেয়্যার পর বেটা হলো, তাহার পরও আবার মেয়্যা হলো, ইটা মেয়্যা হতে হতে ভুল করে বেটা ইঁই গিছে, কী করি বেটা তো বটে, গুণের মধ্যে শুধু অশ্বে চাপে ভালো, অশ্বে উয়ার খুব নেশা।

ভানু বলল, পরে ঠিক হয়ে যাবে।

হবে না, ও যে কার বেটা, মোরই বটে, ওর মা জননী সাক্ষাৎ জননী, মোর ইস্তিরির কথা কহি, কিন্তু তিনিও তো পলকা, দুটার জন্ম দিয়ার পর একেবারে শয্যাশায়ী, তাঁর যে ভাইটা আছে, আমার শালাবাবু সে ঠিক সতীশের মতো ডিগডিগে, মাথায় যত কুবুদ্ধি, শয়তানি, সতীশ হইছে উয়ার মামার মতো, তার মামার বয়স তো পঞ্চাশ, গ্যাসটিক-ম্যাসটিক আঠারোখানা রোগ লিয়ে ঘুরি বেড়ান তিনি, হাওয়া খেলিও অ্যাসিড হয়।

ভানু প্রসঙ্গটি বদলায়, আপনি না বলছিলেন অশ্ব অতি প্রাচীন প্ৰাণী।

প্রাচীনই তো, পুরাতন, কত পুরাতন শুনবে, এই ধরো পাঁচ-সাত কোটি বছরেরও আগে, ফসিল যে মিলছে অশ্বের, তাতে ধরা যায় পুরাতন প্রস্তর যুগ জানো ইসব? মানুষ পাথর দিয়ে মেরে ঘোড়ার মাংস খেত, আর ঘোড়ারা সব বুনো, দল বেঁধে ছুটি বেড়াত!

সে তো জানি।

এই যে চোদ্দবেড়েতে সবাই একসঙ্গে আসে, ইটা সেই পুরাতন অভ্যাস কি না কহ।

ভানু বলে, ইটা তো সব প্রাণীই করে, মানুষও।

মানুষ কি বনে যায়?

বনে গেল কবে?

বন না হোক, নদীর চড়া, ওর’মই তো হয়, হতো বুনো ঘোড়া—বন্য অশ্ব দল বেঁধে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেত তৃণভূমি মানে ঘাস জমিন সন্ধান করতে করতে, ই অশ্বগুলান সেই অভ্যেসে চোদ্দবেড়েতে পলাত কি না কহ, নদীর ধারে বুনো ঘোড়ারা দল বেঁধে ঘাস খেয়ে বেড়াত, বেড়াত কি না কহ, এক জায়গায় ঘাস ফুরালে আর এক জায়গায় ছুটি যেত, বনজঙ্গল, পাহাড় টপকে চলে যেত কতদূর, অশ্বের ছুটা অভ্যেস ঠিক কহিছি তো?

ভানু দাস ঘাড় কাত করে, হাঁ, ঘোড়া মানেই তো তাই।

তুমার কন্থক হয়তো সেই কারণেই ত্যাগ করিছে তুমাদের, বনের ডাক শুনিছে।

মাথা নাড়ে ভানু, সে তো আশ্বিন মাসে যায়, বোশাখ মাসে যাবে কেন?

ওইটাই হলো গোলমাল। মাথায় হাত বুলিয়ে নগেন গিরি চুরুট ধরালেন। খুব কড়া তামাক। গন্ধ পাকিয়ে পাকিয়ে ঘরের ভিতর ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিড়বিড় করেন নগেন গিরি, তাহলে কি তুমার কথা ঠিক? তুমার ঘোড়া ভালো জাতের অশ্ব ছিলা, উয়ার সেনস ভালো ছিলা হয়তো, টের পেয়েছিল বোমা ফাটানি।

ভানু বলল, ঠিক ধরা যাচ্ছে না, মনে হচ্ছে।

কিন্তু তা হবে কী করে, মোরা টের পাইনি, অশ্ব জানতে পারল, আশ্চর্য!

ভানু চুপ করে আছে। নগেন গিরি তার যুক্তিকে মেনে নিয়েছে বলে ধরা যাচ্ছে না। আবার ফেলতেও পারছে না। আর সেও গিরিমশায়ের বুনো ঘোড়ার কথা উড়িয়ে দিতে পারছে না, কিন্তু বিশ্বাসও করতে চাইছে না। ভানু পকেট থেকে বিড়ি বের করে ধরায়, বিড়বিড় করে, আপনার যুক্তিটা কিন্তু ফেলনা নয় গিরিমশায়, মানুষ এমন কাজ করে যা দেখে ধরা যায় বুনোই ছিল মানুষের পূর্বপুরুষ, তেমনি ঘোড়াও তো।

কিন্তু তোমার কথাই বা মিথ্যে বলি কী করে?

না, না আপনারটা সত্যি

উঁহু, বোমা ফাটানোর খবরে পরদিন আনন্দ মিছিল হিলা চন্দনেশ্বরে, এক বেটা, রানীসাই গাঁর মিশ্রবাবুর বড় ছেলে চা দুকানে গলা ফাটাচ্ছিল অ্যাটম বোমা কী সব্বোনেশে বস্তু, তা শুনে দশজনে তাকে ধোলাই দিয়ে হাসপাতালে পাঠাই দিলা, যেন বোমা তাহাদের বাপে ফাটাইছে।

ভাবু বলে, কিন্তু পলাল ওই জন্য, আপনার কথামতো।

মোর কথামতো, তাহার মানে কী হিলা?

মানে বুনো ঘোড়ার অভ্যাস, দুটা কথাই তাহলে সত্য হয়।

দুটো কী করে সত্য হবে? গিরিমশায়ের কণ্ঠে বিস্ময়।

হবে, বুনো ঘোড়া যদি বিপদের গন্ধ পায়, কী হবে?

পলাবে, ছুটে পলাবে।

যদি বোঝে মরণ অতি নিকটে?

দিকহারা হঁই পলাবে।

তেমন তো হতো, সামনে মাঠ, জঙ্গল, তা পার হয়ে গেল ঘোড়ার পাল, সেই জন্যও তো পলাত, বুনো জন্তুর তাড়ায় পলাত, ফাঁস নিয়ে মানুষ ঘুরছে তা দেখে পলাত, বনের পর বন পার হয়ে যেত, ঘোড়া তো নাকে বাতাস টেনেই ধরতে পারে বাতাসে কোন গন্ধ, যে শব্দ আর কেউ শোনে না, ঘোড়া টের পায়, বহুদূরে বিপদ থাকলেও নাকি ধরতে পারে?

পারে, খুব পারে। বললেন গিরিমশায়।

তবে তো আমার কথা, আপনার কথা দুটোই সত্য হলো, আমার কন্থক ভয় পেল, বাতাসে, জ্যোৎস্নায় মরণের গন্ধ টের পেল, তা যতদূরই থাকুক না কেন মরণ, তখন তাকে পলাতে হবে, কোথায় পলাবে নাহলে, তার মনের ভিতরে বনের ছায়া ফুটে উঠল। বলতে বলতে ভানু চমকে ওঠে। সে ভানু দাস, শ্ৰীপতি মাইতির হোটেলের দালাল ব্যতীত কিছু নয়, আর ঘোড়াটার পালক মাত্র। সে এত কথা জানবে কী করে? মনের ভিতরে বনের ছায়া যে ফুটে উঠল তাই বা জানল কী করে ভানু দাস? তাহলে কি সত্যিই ছন্দক, রাজপুত্রের ঘোড়ার পালক? কবে যেন একদিন কথাটা বলেছিল, সেই থেকে গিরিমশায় তো ওই নামে ডাকে! তার ঘোড়া কি বন দেখেছে, নাকি ভানু নিজে দেখেছে? ঘোড়া মানুষের পোষ মেনেছে কম দিন নয়। কত হাজার বছর হবে ও গিরিমশায়, বুনো ঘোড়া পোষ মানল কবে?

গিরিমশায় বলল, তা ধরো অনেক হাজার বছর হবে, এদিক-ওদিক হতিই পারে, হিসাব তো আন্দাজে, হাজার দশ।

তাহলে ঘোড়া বন চিনত তার আগে, কী বলেন?

হাঁ, তাই তো হওয়ার কথা।

সেই সময়, যখন ঘোড়ারা দল বেঁধে বনের পর বন পার হয়ে যেত, তখনই তো বন চিনত, পরে সে মানুষের তাঁবে এল, মানুষ তাকে বন থেকে বের করে আনল, তা কন্থক ভয় পাওয়ার পর তার মনে কি সেই অনেক হাজার বছর আগের বন জেগে উঠেছিল, সে তখন দলছাড়া, ভয় পেয়ে সাথীদের খুঁজতে বেরোল হাজার বছর আগের পুরনো পৃথিবীর দিকে?

হাঁ, একটাই হলো অভ্যাস, এইটা হলে দুজনার কথা থাকে।

কিন্তু সেই পৃথিবী পাবে কোথায়?

পাবে না, কিন্তু যখন সে ছুটল, তার মনে হাজার হাজার বছর আগের স্মৃতি ফুটে উঠল, উঠল কি না?

এরকম হতে পারে?

গিরিমশায় বললেন, পারে।

কী করে পারে, হাজার হাজার বছর আগের কথা মনে থাকবে কী করে, সে তো দ্যাখেনি, ধন্দটা আমার এইখানে, খোলসা করে দেবেন গিরিমশায়?

নগেন গিরি বললেন, দেব, মন দিয়ে বোঝো দেখি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *