1 of 2

অশ্বচরিত – ১০

দশ

ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে শ্রীপতি উঠে বসে। ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকারে নিশ্চুপ বসে থাকে। তার সমস্ত শরীরে দুদিনের জমা ক্লান্তি। গত রাতে তো প্রায় ঘুম হয়নি মীরগোদায় গৌরমোহনের ভিটেতে। দাওয়ার এক ধারে ভানু অন্য ধারে সে শুয়েছিল, কিন্তু তাতে কী হলো? উঠোনে তো বসেছিল দুজনে। মদরঞ্জিওয়ালা আর তার বউ কোকিলা। তারা দুজনে কত রাত পর্যন্ত উঠোনে বসে বিন বিন করছিল। অমন মেয়েমানুষ কাছেপিঠে থাকলে কি ঘুম হয়? অথচ তার মনে যে কুভাব জেগেছিল তাও তো নয়। সে অবাক হয়ে দেখেছিল আধো জ্যোৎস্নায় জাদুকরী কুহকিনী বসে আঁক কাটছে উঠোনের ধুলোতে। গৌরমোহন উবু হয়ে বসে তা দেখছে। তারা কখন যে ঘরে গিয়েছিল তা জানে না শ্রীপতি। তবে রাত দেড়টা পর্যন্ত তার নিজেরই সাড় ছিল তো। হাতের রেডিয়াম ডায়াল সে দেখছিল বারে বারে।

ঠাকুরানি দরজায়, খাবেন তো বাবু?

না।

খেয়ে আসা হয়েচে?

হ্যাঁ।

এ কীরকম কথা, গেরস্তর অকল্যাণ হবে।

হেসে ফেলল শ্রীপতি, গেরস্ত তো আমি নিজে।

রানছি তো আমরা।

রানছ বলে গেরস্ত হলে?

হ্যাঁ হলাম। ঠাকুরানি সরে যায় বিড়বিড় করতে করতে, না খাবে তো রাতে থাকা কেন, বাড়ি ফিরলেই পারতে, বউদিমণি খুশি থাকত।

শ্রীপতি শুয়ে পড়ে। জানালা খোলা। জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকত তার পক্ষিরাজ। আশ্চর্য! চোখ বুজলেই মনে হচ্ছে যেন আছে। এই ঘরটা তার নিজের। খুব চাপ না থাকলে এই ঘর ভাড়া দেয়া হয় না। সেই পঁচিশে ডিসেম্বরের সময়ে বা পয়লা বৈশাখের সময়ে খুব চাপ পড়ে, পুজোর সময়ও। কত রকম মানুষ, কত রকম জোড় তাদের! শ্রীপতির মনে হয় সেও যেন জোড়ে এসে ওঠে এই হোটেলে। কীরকম লাগাব তখন? কিন্তু জোড়ের আর একজন কে? ভারতী, না মধুমিতা। নাকি? শ্রীপতি চোখের ওপরে আড়াআড়ি তার হাতটা ফেলে দেয়। অন্ধকারের ভিতরে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ কানে আসে তার। চমকে ওঠে। ঠিক যেন পক্ষিরাজ। জানালা দিয়ে মুখ বাড়াচ্ছে ঘোড়াটা। কী অদ্ভুত জীব! কতদিন মধ্যরাতে জেগে উঠে শ্রীপতি দেখেছে ঘোড়াটা পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার নিঃশ্বাসের শব্দ কানে আসছে। আবার এক-একদিন দেখেছে ঘোড়াটা তাকিয়ে আছে আকাশে। আশ্চর্য! ঘোড়ারা রাত জাগে! এক-একদিন দেখেছে ঘোড়ার মুখ তার খোলা জানালায়। জানালা দিয়ে ঘরের অন্ধকারে তাকিয়ে আছে পক্ষিরাজ। এখন তন্দ্রার ঘোরে শ্রীপতির মনে হচ্ছে ঘোড়া আছে জানালার ওপারেই। ঘোড়া না থাক তার ছায়া আছে। বর্ণহীন ছায়া। নাকি বর্ণহীন অশ্ব? বর্ণহীন অশ্ব কি দেখা যায়? জলের মতো ঘোড়া? পক্ষিরাজ জলের মতো হয়ে গেছে! বাতাসের মতো? ভানুর কথা যদি সত্যি হয় তবে তার পক্ষিরাজ এখন কলকাতা শহরে। ভানুর কথা যদি সত্যি হয় তবে ঘোড়াটা এখন রেসকোর্সের জকিদের আস্তাবলে। আর না যদি সত্যি হয় তবে ঘোড়াটা কি সত্যিই বর্ণহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার জানালার পাশে? চোখ থেকে হাত সরায় শ্রীপতি। দেখল জানালা থেকে একফালি জ্যোৎস্না এসে পড়েছে খাটের ওপরে। বিছানার বাকি অংশে গ্রিলের নকশা আঁকা হয়ে গেছে। জানালার ওপারে কে যেন দাঁড়িয়ে। কে? কে হতে পারে? হতে পারে তো পক্ষিরাজই। ওই জায়গা পক্ষিরাজের। পক্ষিরাজ হারিয়ে জায়গাটা শূন্য হয়ে পড়ে আছে। মাটি কি একা থাকে? সে মাটিতে হয় গাছ থাকে, না হয় ফসলের খেত থাকে। মানুষ হেঁটে বেড়ায়। পাখিরা খুঁটে খেতে নামে। কিছু না হলে পোকামাকড়, লতাগুল্ম তো থাকে। ভিতরে ইঁদুর থাকে, সাপ থাকে, ব্যাঙ থাকে। ওপর দিয়ে হাওয়া বয়ে যায়। রাতে জ্যোৎস্না পড়ে ভরা মাটিতে। এখন শূন্য ভূঁইয়ের জ্যোৎস্না যেন ডাকছে তাকে। শ্রীপতি দেখছে জানালার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল।

কে? ডাকল শ্রীপতি, পক্ষিরাজ?

আমি।

কোথায় গিছিলি রে? শ্রীপতি জিজ্ঞেস করল ভাঙা গলায়।

আমি!

কে? শ্রীপতির মনে হলো ঘোড়াটা নয়। হারানো ঘোড়া কি এত সহজে ফিরবে? তাহলে কে? গৌরমোহন? নাকি কোকিলা? শ্রীপতি ডাকল, কোকিলা!

আমি?

তুমি কি ঘোড়াটারে নিয়ে গেলে কুহক করে?

শ্রীপতি শুনল, আমি মাইতিবাবু।

শ্রীপতি বলল, কী করে কুহক করলে? তারে কি নিশীথে ডেকে নিয়ে গেলে উঠোনে আঁক কষে? ও কোকিলা!

কোকিলা কে? জানালার অন্ধকার ডাকল তাকে, ও মাইতিবাবু!

শ্রীপতি এবার তার রেডিয়াম ঘড়িতে সময় দেখল সাড়ে বারোটা। গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে জেগে উঠল, নাকি এ তার স্বপ্ন? জানালার ওপারে শূন্য ভুঁই আর শূন্য থাকল না। ভরে উঠল কতদিন বাদে!

অন্ধকার থেকে চাপা স্বর উড়ে এলো, আমি ভারতী।

ভারতী! উঠে বসল শ্রীপতি, ভারতী চৌধুরী তার জানালায় দাঁড়িয়ে ডাকছে, মাইতিবাবু, ও মাইতিবাবু, কোকিলা কে?

শ্রীপতি মাইতি খাট থেকে নেমে অন্ধকারে গায়ে শার্ট গলিয়ে দরজা খুলল নিঃশব্দে। অন্ধকারে দরজায় তালা লাগাল। চাবিটা শার্টের পকেটে রেখে বেরিয়ে এলো সমুদ্রপাখি হোটেল থেকে। ঠাকুর ঠাকুরানির জেগে থাকার কথা নয় এই সময়। সমস্ত দিন এত খাটে যে শুলে মড়ার মতো ঘুমোয় দুজনে।

রাস্তায় চলে এসেছে ভারতী, কখন থেকে ডাকছি।

ভাবলাম, ঘোড়াটা বোধহয় ফিরে এলো।

তুমি ফিরেছ তা ঠাকুর বলে গেল, এলে না তো।

শ্রীপতি বলল, কাল সকালে যেতাম।

কোকিলা কে?

যে কুহক করে।

কে কুহক করে?

শ্রীপতি বলল, কোকিলা বধূ, চলো তোমাকে ঘরে দিয়ে আসি, এত রাতে একা বেরোন কি ঠিক হয়েছে তোমার?

তোমার বউও তো ওই কথা বলল।

কী বলল, সে কোথায়?

সে তোমার সংসারে, বাড়িতে।

তো বলল কখন?

তুমি শোনোনি? ঠাকুর তোমাকে বলেনি?

বলেছে।

আমি নাকি কুহকিনী, আমি কি তোমাকে কুহক করে ডাকি?

শ্রীপতি হেসে ফেলল। মধুমিতা কি কথাটা ভানুর কাছে শুনেছে? হোটেলের পঞ্চম ঠাকুর যেমন এই নার্স দিদিমণির পক্ষে, ভানু তেমন মধুমিতার পক্ষে। তার দুই শাগরেদ দুই পক্ষ নিয়েছে, মনে হয় শ্রীপতির। কিন্তু ভানু যে কুহকিনীর কথা মধুমিতাকে বলবে তা ভাবতে পারেনি সে।

তোমার বউ আমার মাথা হেঁট করে দিয়েছে।

রাগ কোরো না। শ্রীপতি বলল, তুমি তো জানো ও তোমাকে সহ্য করতে পারে না।

কেন পারে না? আমি কি তোমার সম্পত্তির ভাগীদার হচ্ছি?

আহা তা কেন, ভাগীদার তো হয়েছ।

আমি কি কুহক করতে পারি, কীভাবে কুহক করে? সেই সন্ধে থেকে বসে আছি তোমার জন্য, মনে মনে কত টান না টানছি, ভেবেছিলাম ফিরলেই ঠাকুরের কাছে সব শুনে তুমি আসবে, এলে না তো?

দরজা খোলে ভারতী। শ্রীপতি ভাবল এবার চলে যায়। কিন্তু ছাড়বে কেন ভারতী, তার জামা টেনে ধরল পিছন থেকে, যাচ্ছ!

গলার স্বরে এমন মায়া যে বুকে ধক করে লাগে। ওই মায়ায় না সে ভারতী চৌধুরীর টানে পড়েছে সেই কতদিন থেকে! মা ছিল হাসপাতালে, ভারতী ছিল মায়ের সিস্টার। তখন ভারতী আর মধুমিতার কী ভাব! যেন দুই বোন। দুই সখী। মা সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরলে সখীর কাছে আসতে লাগল ভারতী। তারপর সমুদ্রপাখি হোটেলে শ্রীপতির খোঁজে। কবে যে শ্রীপতির দিকে তার মন পড়ল তা শ্রীপতিও জানে না। আর শ্রীপতিরই বা কবে মন গেল তার দিকে তা কি সে নিজে জানে? মধুমিতার সখী, সই হয়ে গেল শ্রীপতির সখী! শ্ৰীপতি বলল, কাল সকালে না হয় কথা সব শুনব।

না, থেকে যাও।

তোমার এখেনে থাকা কি ভালো দেখায়?

তুমি কি থাকনি আগে?

ভোরবেলায় উঠে গেছি

আজও না হয় তাই যেও।

শ্রীপতি বলল, না আজ যাই।

না থেকে যাও, তুমি গেলে আমি ঘরে থাকব না, অসহ্য! ঘরটাকে যেন সেই জেলখানা মনে হচ্ছে কাল থেকে। বেরোতে পারছিনে, তোমার বউ আমাকে বেজন্মা বলে গালি দিল, আমি নাকি কুহকিনী!

ওসব ভানু বলেছে মধুমিতাকে।

ভানু!

হ্যা ভানু। শ্রীপতি ঢুকে পড়েছে ভারতীর ওয়ান রুম কোয়ার্টারে। বসেছে সিঙ্গেল বেড খাটটিতে। ভারতী বসেছে মেঝেয় তার পায়ের কাছে, আচমকা সে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, তুমি শুনেও এলে না!

আমার মন ভালো নেই।

কেন, কী হলো?

ঘোড়াটা।

আবার একটা কেনো না হয়।

মাথা নাড়ে শ্রীপতি, টাকায় সব হয়? কিনলে হবে? ওই ঘোড়াটা পাব?

ঘোড়া তো পাবে।

যা হয় পেলেই হলো, তাহলে তুমি এত রাত্তিরে গেলে কেন আমাকে ডাকতে?

মন টানছিল। বিড়বিড়িয়ে বলে ভারতী।

মন আমারও টানছে, বলল শ্রীপতি, ঘোড়াটা বোধহয় কলকাতায় চালান হয়ে গেছে।

কে বলল?

শুনছি তাই, ভানু বলছিল, অদ্ভুত সব কথা বলে ও, বলে কিনা ও হলো ছন্দক…।

ভারতী বলল, ভানুর কথা বাদ দাও, কোথায় গিয়েছিলে ওর সঙ্গে, ঘোড়া খুঁজতে?

শ্রীপতি বলল, ঘোড়াটারে কুহকে টেনে নিয়ে গেছে।

কে?

সে একজন। শ্রীপতি বিছানায় কাত হলো, তুমি কোথায় ঘুমোবে?

ঘুমোব না।

জেগে থাকবে?

কথা বলব। ভারতী দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসেছে, তোমার বউয়ের মুখ এত খারাপ, কী নোংরা, অমন মেয়েছেলেরে সহ্য করো কী করে?

শ্রীপতি কথা বলে না। সাড়া না পেয়ে ভারতী তার কথা থামায় না, বলে, আমার না হয় বাপ-মা ছিল না, আমি আকাশ থেকে নামলাম, না আস্তাকুঁড়ে জন্মালাম সে আমার ব্যাপার, বাপ-মার কোলে না জন্মেও অমন ভাষা তো মুখে আসে না আমার।

থাক। শ্রীপতি হাত তোলে।

থাকুক, আমারও বলতে ঘেন্না হয়, কত আশায় নিজের দুঃখের কথা বলেছিলাম ওকে।

কী আশা, ও তোমার দুঃখে কাতর হবে?

না, তবে দুঃখটা বুঝবে।

বুঝে কী করবে, স্বামীকে দিয়ে দেবে তোমার হাতে?

বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে ভারতী, মাথা নাড়ছে, তা কেন, তবে ও যে দশজনের সামনে পথে দাঁড়িয়ে সবাইকে শোনাবে আমার আশ্রমের কথা তা কি আমি জানতাম? আশ্রমে কি সুখে ছিলাম আমি?

শ্রীপতি দেয়ালে তাকাল। অনাথ আশ্রমের ছবি। কে যেন এঁকে দিয়েছিল ভারতীকে। সে কে? ভারতী তা বলেই না। তবে স্কেচ পেনে আঁকা কালো রেখায় টানা আশ্রম বাড়িটা দেখলে শ্রীপতির চোখের সামনে সব পরিষ্কার হয়ে ওঠে। মেদিনীপুর শহরের পশ্চিম প্রান্তে, কংসাবতী নদীকে বাঁ দিকে ফেলে রেখে সেই ফুলপাহাড়ির গায়ে জেলখানার মতো উঁচু প্রাচীরে ঘেরা অরফ্যান হোম। হোমে চুলোচুলি করতে করতে, ঝগড়া করতে করতে বড় হয়েছে ভারতী। কিন্তু এখন সে একেবারে শান্ত। কীরকম জামা ধরে টানল তাকে পেছন থেকে, অবোধ প্রাণী যেন।

প্রাচীরের আড়ালে অনাথ মেয়েরা আর তাদের গার্জেন, সুপারিনটেনডেন্ট সুলতা দত্ত, মোটাসোটা কালো চেহারা, চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। দিদি একদম হাসতে জানত না। দিদি কড়া শাসনে রাখত আমাদের। পান থেকে চুন খসার উপায় ছিল না। কত রকম শান্তি ছিল আমাদের, তা কি জানো তুমি মাইতিবাবু? ভাত তো বন্ধ হলোই, আরও কত রকম। একটা মেয়ে বছর পনেরো হবে বোধহয়, সে হোমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখত ফুলপাহাড়ির টিলার ওপর বসে একটা ছেলে ছবি আঁকছে। ছবি আঁকতে আঁকতে ছেলেটা একদিন তাকে দেখতে পেল। ওই দ্যাখো, ওই যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি, দূর থেকে চেনা যেত না তো, তাই কেমন অন্ধকার অন্ধকার লাগছে। ছেলেটা নেচার স্টাডি করত। ওদিকটা তো খুব সুন্দর ছিল, শালবন, ইউক্যালিপ্টাসের সার, টিলা, লালমাটি, আর বাঁশি বাজানো সাঁওতাল ছেলে, বাগাল ছেলে, গরু মোষের পাল। তো কী হলো জানো মাইতিবাবু, ছেলেটা দেখত একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়, কতদূরে! মুখই চেনা যায় না। আর সেই মেয়েটাও দেখত ছবি আঁকছে একজন। তাকে সে চিনতে পারত না। বোঝা যেত একটি পুরুষ। তারপর সেই পুরুষ একদিন ফুলপাহাড়ির ইরিগেশন বাঁধে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিল। তার কাঁধ ছুঁয়েছে বাবরি চুল, পাজামার সঙ্গে নীল রঙের পাঞ্জাবি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। মেয়ে সাড়া দিল হাত তুলে। তারপর একদিন দুপুরে পাঁচিল টপকে সে পালাল। বিকেলের প্রেয়ারের সময় ধরা পড়ে গেল সে নেই।

কী নাম ছিল?

ধরো মীনাক্ষী, সুলতা দত্তের ছিল শকুনের চোখ, ধরে ধরে সব মেয়েকে জেরা করতে লাগল। কেউ কেউ তো জানত। সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল। সুলতা দত্ত তখন পুলিশে গেল। সারা রাত কোনো মেয়ের ঘুম নেই। তারা সবাই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে লাগল। মীনাক্ষী যেন না ফেরে। ওকে যেন পুলিশ না পায়। কিন্তু পরদিন পুলিশ পেল ওকে। পুলিশের গাড়ি ফেরত দিয়ে যায় মীনাক্ষীকে। সঙ্গে একরাশ ছবি। সব সেই ছেলেটার আঁকা। ছেলেটাকে হাজতে ভরে ছবিগুলো কেড়ে নিয়েছিল পুলিশ—ওই যে সেই ছবি।

সুলতা দত্ত সব মেয়েকে ডাকল পরদিন। সবার সামনে দাঁড়িয়ে কত কথা! মীনাক্ষীর মাথা কিন্তু একটুও নিচু হয়নি। সিঁথির সিঁদুরও তোলেনি সে। সুলতা বোঝাচ্ছিল, এর ফল কী হতে পারে। আর একটা অনাথ শিশু আসবে জগতে। অনাথ আশ্রমের মানুষ বাড়বে। তাহলে কোনো দিন কোনো অনাথ আশ্রম বন্ধ করা যাবে না, পাঁচিল ভাঙা যাবে না অনাথ আশ্রমের?

তারপর?

সুলতাদি বলত, যত তাড়াতাড়ি অ্যাবোলিশ হয়ে যায় অনাথ আশ্রমগুলো তত ভালো।

তারপর কী হলো?

বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছিল ভারতী। যতবার এই ঘরে ঢোকে শ্ৰীপতি, অনাথ আশ্রমের ছবিটা দেখে মনে পড়ে যায় ভারতীর দেয়া বিবরণ। এখন দেয়ালে পিঠ দিয়ে ভারতী চোখ বুজে আছে, শ্রীপতি ডাকল, ঘুমোলে?

জবাব পায় না শ্রীপতি। এখন সে চলে যেতে পারে, কিন্তু বাড়িটা যে খালি থাকবে, দোর খোলা থাকবে। সে জানালার ধারে বসে সিগারেট বের করে পকেট থেকে। তখন ভারতী জেগে ওঠে তন্দ্রা ভেঙে, সে চোখ মেলেই জিজ্ঞেস করল, কোকিলা বধূ কে, তুমি যে বলছিলে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *