বিয়াল্লিশ
ভানু বলে, মনের ভিতরে ছায়া পড়ল, সে কত হাজার বছর আগের কথা বলুন, কত জন্মের আগের কথা বলুন গিরিমশায়!
ঘাড় কাত করেন নগেন গিরি, হ্যাঁ, তা হিসাব করাই যাবেনি, আর জন্মান্তর দিয়া এর ব্যাখ্যা তো হবেনি, মু তো জন্মান্তর মানিনি।
তবে কী করে জানল সে, বড় গাছ, অন্ধকার হয়ে আছে বনের ভিতরটা, যেখেনে পশু চলে চলে রাস্তা, সেই রাস্তা দিয়ে কোনো রকমে বেরিয়ে এলো ঘোড়ার দল বনের বাইরে, নদীর ধার, ঘাসের জমিন, তা দেখে লাফ দিচ্ছে বুনো ঘোড়ার পাল আনন্দে, তখন শোনা গেল বাঘের ডাক, নাকে এলো বাঘ কিংবা মানুষের গন্ধ, মানুষও ফাঁস নিয়ে ঘুরছে ঘোড়া ধরবে বলে, তারা ছুটতে আরম্ভ করল ভয়ে—এই রকম মনে পড়ল কন্থকের? সে তো ছিল রাজপুত্রের ঘোড়া।
তা হোক, রাজার ঘরে আসার আগে তারা যে ছুটত একসঙ্গে তা মনে পড়ল।
সেই বন, নদীর পার, ঘাসের জমির ছায়া ভেসে এলো মনে?
হ্যাঁ তাই, বিপদের গন্ধ এলো নাকে, তখন মনে পড়তে লাগল সব।
কী করে মনে এলো গিরিমশাই?
নগেন গিরি আবার একটি চুরুট ধরান, সুখে ধোঁয়া টেনে বাতাসে উড়িয়ে দেন। গদিতে কাত হন, বিড়বিড় করেন, অনেক দিন বাদে প্রাণের সুখে কথা কইতে পারছি ভানুবাবু, কথা কহনের লকই নাই, এসব কথা কোন মানুষ শুনিবে কহ, বলছি মানুষ জন্মায় তো তার বাপ-মার গুণ লিয়ে, চেহারা লিয়ে, ঠিক কি না?
হাঁ, তাই তো হয়।
বাপ-মা যদি কালো হয়, ঠাকুরদা ধলা হয়, তো তুমি ধলা হই জন্মাইতে পারো, ঠিক কি না, মানুষ তার পূর্বপুরুষেরে লিয়ে জন্মায়।
হাঁ হাঁ, ইটা আর নোতন কথা কী?
মোর ঘোটন উয়ার মা আর তুমার কন্থকের মতন পেরায়, মানুষ যেমন তাহার পূর্বপুরুষের মতন হয়, অশ্বও তো তাই হয়, আর কিনা পূর্বপুরুষের গুণ মানে তো শুধু রূপের কথা কহি না…।
ভানু অবাক হয়ে শুনছিল। প্রাণী কি তার পূর্বপুরুষের স্মৃতি নিয়েও জন্মায়, এটাও কি তার উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া হয়ে যায় জন্মানোর সময়? সেই স্মৃতি ঘুমিয়ে থাকে মাথার ভিতরে, স্তরের পর স্তরে লুকিয়ে থাকে মনের অন্ধকারে! একটি দুটি করে স্তর যখন ভাঙে, তখন জেগে ওঠে পূর্বপুরুষের স্মৃতি। এর নাম জন্মান্তর নয়। এ হলো তিন পুরুষ আগের ব্যাধি জেগে ওঠার মতো, পাঁচ পুরুষ আগের স্বভাব জেগে ওঠার মতো ব্যাপার।
এসব কে বলেছে আপনাকে? ভানু জিজ্ঞেস করে।
কেহ না, মু একা একা ভাবি ইসব, সাগরকূলে চলি যাই ভানুবাবু সন্ধ্যাবেলায় একা একা, চাহি থাকি সাগরপানে, কেহ নাই কোনোখানে, কীরকম তখন ইঁই যাই, তখন বাতাসের সঙ্গে কথা হয়।
বাতাস, বাতাস কথা বলে?
বলে, সেই তো সব দ্যাখে, দ্যাখে কি না?
ভানু বলে, আপনি ঠিক আমার মতো!
ভানু অবাক হয়ে লোকটার দিকে চেয়ে থাকে। অদ্ভুত! আশ্চর্য সব কথা বলছে। শুনতে গায়ের রোঁয়া সিধে হয়ে যাচ্ছে, মাথার অন্ধকারে ঢেউ উঠছে! আহা, এই লোকের সঙ্গে আগে কেন এমন আলাপ হয়নি তার! আগের মোলাকাত তো শুধু দেয়া-নেয়ায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কন্থক তার ঘুড়ীকে গর্ভবতী করেছিল, সেই কৃতজ্ঞতায় আহ্লাদে লোকটা তাকে ডেকে খাইয়ে দিয়েছিল, হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়েছিল, কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে লোকটা অতি সহজ নয়। লোকটা যেন কেমন! কীসব বলছে! ঘোড়াটার মাথার ভিতরে তার আগে জন্মানো হাজার পুরুষের স্মৃতি জমা হয়ে ছিল যে। কন্থক সেই স্মৃতি সঙ্গে করে জন্মেছিল। সেই স্মৃতি মাথায় নিয়ে মরেই যেত হয়তো, কিন্তু ওই যে পোখরানে বালির নিচে সেই দিন, বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন বিকেলে পরপর তিনটি বোমা বিস্ফোরিত হয়ে ধরিত্রী-গর্ভ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিল। ধরিত্রী-গর্ভ থেকে তেজস্ক্রিয়তা উঠে বাতাসে কি ভাসেনি? ভেসেছিল। চাঁদের আলোয় কি মিশে যায়নি? গিয়েছিল। তা টের পেতেই ভয় পেল পক্ষিরাজ। তার রক্তের ভিতরে জেগে উঠতে লাগল সেই আদিম শিহরণ, যা বুনো ঘোড়ার দল পেয়েছিল কোনো এক দূর অতীতের প্রত্যুষে। চোখের সামনে জেগে উঠল শিহরণ জাগানো, মরণের ভয় জাগানো সেই স্মৃতি। তখন কি আর সে থাকতে পারে? বনের দিকে, শান্ত নদীর দিকে, খোলা পৃথিবীর দিকে, লক্ষ বছরের আগের প্রকৃতির দিকে দৌড়ল সে।
ভানু বলল, ও কি হিরোশিমার গন্ধ পেল, নাগাসাকির স্মৃতি জাগল নাকি আমার ঘোড়াটার ভিতরে?
হয়তো জাগল?
তা যে দেখেছিল, সে তো মরেছিল, যে দেখেছে সে কি আর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে ছিল গিরিমশায়, হিরোশিমার ঘোড়া কি এই ঘোড়ার পূর্বপুরুষ হতে পারে, তাহলে তো এও বাঁচত না, হিরোশিমার পূর্বপুরুষের দেহে যে বিষ ঢুকেছিল সেই বিষ তো এখনও রয়ে গেছে, বিষ নিয়ে বংশের সন্তান জন্মাচ্ছে।
গিরিমশায় বললেন, তুমি দেখছি সব জানো ভানুবাবু।
পক্ষিরাজ পলায়ে আমার চোখ খুলে দিয়েছে গিরিমশায়, আমর কথাটার জবাব কিন্তু হয় নাই।
নগেন গিরি বললেন, তা না হোক, সি বাতাস তো বহি আসছিলা, তুমি যে কহিলে জুছনায় পোখরানের খবর এলো, বাতাসে উড়ে এলো পোখরানের তাপ, তা থেকে সে যেমন টের পেল, তেমন হয়তো হিরোশিমার টায়েমে হইছিল।
বলছেন?
হাঁ, ইহার পেডিগ্রি কী, মানে বংশপরিচয় জানো, কুথায় বাড়ি?
ও তো কপিলাবস্তর রাজপুত্রকে ফেলে একা ফিরল নগরে, সঙ্গে আমি, এ জন্মে সাঁতরাপুর, মাইতিবাবুর বাড়ি ওখানেই।
হা হা করে হাসেন নগেন গিরি, কী যে কহ, সাঁতরাপুরের অশ্ব, ই কথা শুনলে অশ্বয় হাসি দিবে, দিবে কি না কহ, অশ্ব তো ই দেশে ছিলনি।
ভানু বলে, কন্থক, তার মা-বাপ সব এ দেশি, কটকি ঘোড়া, কটক থেকে দুটো ঘোড়া এনেছিলেন মাইতিবাবুর ঠাকুরদা, সাঁতরাপুরে চলেন, মাইতিবাবুর মা বেঁচে, জানা যাবে সব কথা।
আবার হাসলেন গিরিমশায়, কী যে কহ তুমি ভানুবাবু, অশ্ব ই দেশেরই লয়, অশ্ব ভিন দেশি প্রাণী, মু কহি এ ঘোড়ার অরিজিন কুথায়, কুন দেশের অশ্বর রক্ত উয়ার ভিতরে ছিল?
অশ্ব ভিন্ন দেশি! ভানু মাথা চুলকোয়, হ্যাঁ শুনেছে যেন কথাটা।
গিরিমশায় তখন ঘোড়ার ইতিহাস বর্ণনা করেন। শুনতে শুনতে ভানু বিস্মিত। কত কথা না জানেন মানুষটা! মধ্য এশিয়া, আরব দেশের ঘোড়া, না উত্তর আমেরিকার ঘোড়া, নাকি ইউরোপের ঘোড়া, নাকি বাহ্নিক, উরাল পর্বতমালার কোলের ঘোড়া ছিল এর পূর্বপুরুষ, তা কি জানে ভানু? ঘোড়া কারা আনল এ দেশে? আর্যরা ঘোড়ায় চেপে ঢুকল সিন্ধু নদ পার হয়ে, এলো তারা কৃষ্ণসাগর, কাস্পিয়ান সাগরের উত্তরের ভূমি থেকে, তবে না এ দেশের মানুষ ঘোড়ার টগবগ শুনল, যদি ভানু জানত কন্থকের পেডিগ্রি, তবে না ধরা যেত কোনদিকে পালাতে পারে, কোন অভিমুখে, কোন বনের ছায়া, কোন নদীর ছায়া, কোন তৃণভূমি, কোন পাহাড়ি উপত্যকা, কোন সবুজের ছায়া জেগে উঠেছিল তার মনের ভিতরে। কত হাজার বছরের পুরনো স্মৃতি ঘুম ভেঙে উঠে বেগবান করে তুলেছিল ঘোড়াটাকে? বলতে বলতে দুলতে লাগলেন গিরিমশায়।
ভানু দেখছিল বিকেল হয়ে এলো প্রায়। বেলা ছোট হয়ে এসেছে। তাকে তো এখনই বেরোতে হয়। না বেরোলে ফিরবে কী করে? সবে শুক্লপক্ষ গেছে, এখন চাঁদ ওঠে অনেক দেরিতে। আজ তৃতীয় কি চতুর্থী হবে। চাঁদের আলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে অনেক রাত্তির পর্যন্ত। চন্দনেশ্বর থেকে ভ্যান রিকশা পাবে কি না কে জানে? গিরিমশায় থামলে ভানু বলল, এবার উঠতে হয়, অনেক দূর তো যাব।
ইখন কেনে, ঘোটনকে লিয়ে সতীশ ফিরুক।
রাত হয়ে গেলে যাব কী করে?
না গেলে, কী রাজকার্য রহিছে তুমার দীর্ঘায়?
ভানু ভাবল তাই তো, গিয়ে কী করবে? গিয়ে তো গাঁজাড়ু মাইতিমশায়ের সামনে বসতে হবে, কোকিলা বধূর প্রতি তার বাসনার কথা শুনতে হবে। তার চেয়ে ঘোটনকে দেখতে সে থেকে যাক। গিরিমশায়ের কাছে ঘোড়ার কত কথা আছে। ভানু জানেই না যেসব। জানলেও শোক কিছুটা কমবে। এই যে এখন তার মাথায় ভাবনা ঢুকেছে ঘোড়াটা কোন দেশের ছিল। কোন দেশের, কোন বনের, কোন নদীর, কোন পাহাড়ের, কোন হ্রদের ছায়া জেগে উঠেছিল তার মনে? তা জানতে পারলে তো আর কিছুই জানার বাকি থাকে না। শুধু খুঁজে বের করতে হবে পক্ষিরাজকে। পক্ষিরাজের দেহে কোন দেশের ঘোড়ার রক্ত? ও কি আরবি ঘোড়া, নাকি গ্রিস দেশের ঘোড়া? আলেকজান্ডার ওর পূর্বপুরুষের পিঠে চেপে কি এ দেশে ঢুকেছিল সিন্ধু উপত্যকা দিয়ে?
চুপ করি গেলা কেনে? গিরিমশায় জিজ্ঞেস করলেন নিশ্চুপ ভানুকে।
আঁজ্ঞে বলছেন তো আপনি।
তুমি কিছু কহিবে না?
ভানু হাসে, বলে, উপায় কি আছে কোনো, বংশপরিচয়টা জানলে হতো।
কী করো জানবে?
আপনি কি জানবেন না আপনার ঘোটনের বংশপরিচয়, বাপ-মারে চেনেন, কিন্তু ওটি কোন দেশের ঘোড়ার বংশধর তা জানতে চেষ্টা করবেন না?
গিরিমশায় বললেন, হয় কৃষ্ণসাগরের কূলে কিংবা কাস্পিয়ান হ্রদ, উরাল হ্রদের কূলে, অক্সাস নদীর ধারে ওর পূর্বপুরুষের বাস ছিল।
সেসব কোথায়?
দূর বহুদূর, দূর উত্তর পশ্চিমে, ধরো গিয়ে এখনকার পেশোয়ার, ব্যাকট্রিয়া দিয়ে বোখারা, সমরখন্দ; বোখারা হলো অক্সাস নদীর ইধারে, ও নদীরে আমুদরিয়াও বলে। বিড়বিড় করছেন গিরিমশায়। ভানু অবাক হয়ে তাঁর দিকে চেয়ে আছে। অক্সাস নদী—আমুদরিয়া, সেটিও বেরিয়েছে উরাল হ্রদ থেকে। আর একটা নদী সিরদরিয়া, সেটিও বেরিয়েছে ওই হ্রদ থেকে, একটি দক্ষিণ থেকে, একটি উত্তর থেকে। ঘোড়াটি ওখানকার হতে পারে। ওই সব নদীর জলে নিজেদের ছায়া দেখত রূপবান মানুষ সব, তাদের সঙ্গে রূপবান অশ্ব, রূপবতী অশ্বা, যাত্রা করল তারা সিন্ধু উপত্যকার দিকে। আবার হতে পারে অন্য কোথাও। কৃষ্ণসাগর, কাস্পিয়ান সাগরের কূল থেকে দীর্ঘদেহী, কঠিন শ্বেতাঙ্গ মানুষগুলোকে বয়ে ঘোড়া ছুটল দক্ষিণ-পুবে। পথে কত পাহাড়, কত ছোট নদী, বড় নদী, ঝরনা, কত তৃণভূমি, অরণ্য মরুভূমি ফেলে রেখে গিরিপথে খুরের শব্দ তুলে তারা এসে গেল সিন্ধুতীরে।
ভানু অন্ধকারে ঘোড়ার ডাক শুনল, একটি নয়, শত শত ঘোড়া একসঙ্গে চিঁহি রব তুলেছে। তাদের ভিতর থেকে পক্ষিরাজকে বেশ চেনা যাচ্ছে। তার গলা আলাদা। আর্যরা এলো। তাদের দলপতির ঘোড়া ওটি।
গিরিমশায় হেসে উঠলেন, ওই এলো, ডাক শুনছ ভানুবাবু?
ভানু লাফ দিয়ে উঠে এলো, সেই ঘোড়া?
হাঁ, সেই অশ্ব।
কালো জল যে সাগরের তার কূলে থাকত?
তাই তো জানি।
আমুদরিয়া নদীর ধারে থাকত?
একবার কহিছি মনে করি রাখিছ?
এসব আপনারে কে বলেছে? কেনে ঘোটনের মা কহিত।
কী বলেন গিরিমশায়, এসব বিশ্বাস করতে হবে?
হবে, উরাল হ্রদের তীরের রূপবান এক অশ্বের বীজ ছিল তার দেহে, সেই বীজের সঙ্গে মিশি গিইছিলা তুর্কি অশ্বের বীজ, আরবি অশ্বের বীজ, কত রকম অশ্বের সহিত কত রকম অশ্ব মিশি গেলা, তারপর কী হলো শোনো।
ভানু শুনছে। ভানুর কানে এখনও চিঁহি চিঁহি ডাকটি লেগে আছে। ঘোড়া ঘরে ফিরে যেন আনন্দধ্বনি ছড়িয়ে দিচ্ছিল আকাশের অন্ধকারে। নাকে টেনে টের পেয়েছে কি ভানু দাসের গায়ের গন্ধ? ভানু এসেছে। কতদিন বাদে দেখা ভানুর সঙ্গে। সেই বুদ্ধ পূর্ণিমার পর, আকাশে বাতাসে বিষ ছড়াল, মনে মনে ছড়িয়ে পড়ল বিষ, তারপর। ভানু শুনছে গিরিমশায়ের কথা। গিরিমশায় যেন গিরিপর্বতের মতো হয়ে উঠছেন। এত জানেন, কই ভানু তো জানত না এসব! আজ মনে কী আনন্দই না হচ্ছে। জানতে পারলে এত আনন্দ! গিরিমশায় বলছেন, যেসব জায়গা থেকে অশ্ব এলো, সেসব জায়গা আর আমাদের সিন্ধুপারের দেশ তো এক রকম নয়। উরাল হ্রদের কূলের অত ঠাণ্ডা নেই এখেনে, কৃষ্ণসাগর, কাস্পিয়ান সাগরের বাতাস এখেনে আসে না। এখেনে আছে হিমালয়, এখেনে আছে মস্ত মস্ত সাগর, মস্ত মস্ত নদী, নদীর পর নদী, নরম রোদ, নরম জ্যোৎস্না, এর ভিতরে দৌড়ে, দাঁড়িয়ে, অশ্বের দল বদলে যেতে লাগল। আর যে মানুষগুলো এসেছিল এই ভূ- প্রকৃতির টানে, তারা এখেনে এসে কালো মানুষের সঙ্গে মিলে গেল, হয়ে গেল ভানু দাস, নগেন গিরি, সতীশ গিরি।
অন্ধকারে ভানু উঠল, ঘোটনবাবুরে দেখাবেন না?
গিরিমশায় উঠে ঘরের দেয়ালের সুইচবোর্ডে হাত দিয়ে আলো জ্বালান, বললেন এর ভিতরেও অনেক কথা রহিছে যা বলা হয় নাই।
ভানু বলল, দেখে আসি তেনারে, নিয়ে চলেন।
ভানু ঘর থেকে বেরোল নগেন গিরির সঙ্গে। উঠোনে হালকা অন্ধকার। ঘরের ভিতরে বসে যেমন মনে হচ্ছিল রাত হয়ে গেছে, আসলে তা হয়নি। গোধূলিবেলার মায়া জড়িয়ে আছে পৃথিবীর গায়ে। তার ভিতরে ভানু দেখল, উঠোনে দাঁড়িয়ে দুলছে যেন একটি প্রায় কঙ্কাল, সিড়িঙ্গে ভূত। চমকে উঠেছে সে। গিরিমশায় ডাকলেন সতীশ, ঘোটন কই?
এই সতীশ! এত রোগা মানুষ কি ভানু আগে দেখেছে? দাঁড়িয়ে আখ চিবোচ্ছে, বলল, গইলিতে।
খবদ্দার গইলি কহিবি না, ক অশ্বশালা।
সতীশ কথাটা কানেই নিল না, আখ চিবোতে লাগল উঠোনে দাঁড়িয়ে। বিড়বিড় করতে করতে নগেন গিরি এগোলেন। ভানু তাঁকে অনুসরণ করল। এগোতে এগোতে ভানুর মনে হলো তার দিকে অবাক চোখ মেলে আছে কেউ। সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তাই। সতীশ দেখছে। আবছা অন্ধকারে চোখের মণিদুটো ঝকঝক করছে।
ভানু এগোতে এগোতে আবার শুনল চিঁহি চিঁহি, নগেন গিরি আপ্লুত স্বরে বললেন, দেখলেন আমাকে টের পেয়েছে।
ভানু দেখল গোধূলি অন্ধকারে ঘাড় তুলে তার দিকে তাকিয়ে পা তুলল ঘোটনবাবু, না, না কন্থক ডাকল তাকে, ভাই ছন্দক, শেষ পর্যন্ত এলে?