চব্বিশ
পুরো পরিবারটিই কাজ খুঁজতে বেরিয়েছিল। অনন্ত, তার মেয়ে কুন্তি, অনন্তর বউ সরস্বতী। কাজ খুঁজতে বেরিয়ে এ হোটেল ও হোটেল করে ক্লান্ত পরিবার যখন বাসস্ট্যান্ডের শেডের নিচে বসে ঝিমোচ্ছে, অনন্ত শেষ চেষ্টায় বেরিয়ে পথে পেয়ে গেল ভানু দাসকে। অশ্ব খোঁজার টাকা ভানু আবার জোগাড় করে দিতে পারবে। তাহলে চাল তেল কিনে বাড়ি ফিরতে পারবে অনন্ত। সে ভানুকে বলছিল, খুঁজা বন্ধ রাখা ঠিক লয়, না খুঁজলি সেও তো আর না ফিরতে পারে।
ভানু মাথা দুলিয়ে সমর্থন করছিল অনন্তকে, আর মিটিমিটি হাসছিল। এর আগে পঞ্চাশ টাকা নিয়েছিল, কোথায় খুঁজল, কী খবর হলো? অনন্ত না পেরে ভানু দাসের কাছেই হাত কচলাচ্ছিল, তখন হন্তদন্ত হয়ে ঠাকুর হেঁটে এলো, এই যে অন্তা, তোর মেয়েডা কই?
মেয়ে কেনে?
কাজ করাবি, ভালো পার্টি, জাহাজের মালিক, এয়েচে।
জাহাজের মালিক! ভানু দাসের চোখও অনন্তর সঙ্গে স্ফীত হয়ে ওঠে
হ্যাঁ, নিউ দীঘায় উঠেছে, ওর ডেরাইভার এসে ডাকা করল মোকে।
বিত্তান্তটা কী? ভানু মাথা গলায় দুজনের কথোপকথনে।
তুই থাম দেখি ভানুবাবু, ই তুমার ফোরটুয়েন্টি ঘুড়ার কেস লয়, শুন অনন্ত, মদনানি সায়েব বর্ষায় আসে বর্ষা দিখতে, কী, বুঝলি কিছু?
মাথা নাড়ে অনন্ত, না।
সেরেফ মেঘ দিখতে আসে, ভারী দিলদরিয়া লোক, ইবার কাজের মেয়েছেলে আনে নাই, দিন পনেরো থাকবে, মেয়েটারে লাগায়ে দে, নগদা দুহাজার।
দুহাজার! অনন্ত থই পায় না ঠাকুরের কথায়।
ঠাকুর বলে, হ্যাঁ দুহাজার দিবে, কত টাকার মালিক জানিস? এই যে আমি গিয়ে দেখা করলাম, নগদ একশ টাকা বকশিশ।
ভানু দাস আবার মাথা গলায় দুজনের বাক্যালাপে, বলে, বউ করুক।
ঠাকুর রেগে যায়, ফের কথা বলছিস ভানুবাবু!
অনন্ত বলে, মু করি, মু তো সবই পারি।
ঠাকুর মাথা নাড়ে, আমি তা’লে অন্য লোক দেখি।
কেনে? অনন্ত ভয় পায়, তা কেনে, কাম তো করবই, বলছি বউ করুক।
তোর মেয়েডারে বাক্সর মধ্যে পুরি রেখি দে, বের করিসনে। ঠাকুর রেগে যায়, ফালতু পার্টি, যা, যা, ভিখ মাগগে যা।
অনন্ত ঝপ করে ঠাকুরের হাত ধরে ফেলে, না, না রাগ করছ কেন, উনি কেডা, জাহাজের মালিক কীর’ম?
কীর’ম তা গিয়ে দেখবি। ঠাকুর বিড়বিড় করে, মেয়েরে ডাক।
অনন্ত ছুটতেই ভানু জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার কহ দেখি।
তুমারে কহিব কেনে?
জাহাজের মালিক, সে জাহাজ চলে কুথায়?
জলে। ঠাকুর গরগর করে।
লোকটার নাম কী?
ঠাকুর বলে, সব ব্যাপারে মাথা দিয়া ঠিক না ভানুবাবু, প্রেম মদনানিরে তুমি চেনো? সেরেফ মেঘ দেখতে এই সময় আসে।
না, অন্য টায়েমেও আসে।
আসে, তবে এই সময় থাকে অনেক দিন।
লঞ্চের মালিক?
না, জাহাজ। ঠাকুর শক্ত হয়।
অনন্ত পুরো পরিবার নিয়ে চলে আসে। ভানু দেখে বউটা তো চিমসে মেরে গেছে। মেয়ে কুন্তির গায়ে বর্ষার জল পড়েছে সবে। ভানু ঠাকুরের দিকে তাকায়, ঠাকুর অনন্তকে বলে, তুমি কথা বলে যাচাই করে লও, বুড়া মানুষ, মাথার সব চুল সাদা, সিন্ধি লোক, সিন্ধি কারা জানিস অন্তা?
অনন্ত মাথা নাড়ে।
ঠাকুর বলে, সিন্ধিদের জাহাজ ভর্তি টাকা, আবার জাহাজের মতোই দিল, দিন পনেরো মন দিয়ে কাজ করুক কুন্তি, আখেরে লাভ হবে।
মেয়েটা মায়ের গা ঘেঁষে ছিল। ঠাকুরের সঙ্গে দুপা হেঁটেই ভ্যান রিকশায় উঠে পড়ে ওরা সবাই। ভানু রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল, ছুটে গিয়ে সেও চেপে বসে বলল, বুড়ারে দেখে আসি।
ঠাকুর গরগর করে ওঠে, তুমি কেনে ভানুবাবু?
ভানু বলল, জাহাজের মালিক দেখি নাই।
জাহাজ দেখিছ?
হাঁ, বজবজের গঙ্গায় জাহাজ ঢুকত।
এখেনে দ্যাখো নাই?
ভানু বলে, এখেনে জাহাজের মালিক আসে, জাহাজ না।
আকাশে মেঘ ধীরগামিনী। বাতাসে ঠাণ্ডা ভাব। এখন বৃষ্টি নেই বটে, কিন্তু নেমে এলো বলে সহস্র ধারা। ভ্যান রিকশা থেকে নেমে সমুদ্রমুখী দোতলা বাড়িটার দিকে এগিয়ে যায় সবাই। এখন বর্ষায় সমুদ্র ব্যতীত সব নিথর। লোকজন নেই। এই বাড়িটা কোনো এক কোম্পানির হলিডে হোম, সব ফাঁকা। ঠাকুরের সঙ্গে সবাই দেখল দোতলার ডেকচেয়ারে বসে আছে ফরসা টুকটুকে একটা মানুষ। মাথার রেশমি চুল সাদা ধবধবে। দৃষ্টি সমুদ্রে। সমুদ্র গর্জন করছে। বর্ষায় কালো জল ফুলছে। ঝাউবনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে।
ঠাকুর বলে, দেখলে তো, ইবার পথে দাঁড়াও, আমি ওরে লিয়ে যাই।
মেয়ের মা সরস্বতী বলে, আমি যাব না সাথে?
না, পথে দাঁড়াও।
ভানু বলে, মা-বাপ কথা বলবে না সায়েবের সাথে?
কথা তো আমি বলব।
কেনে, ওর বাপ বলুক।
ঠাকুর চাপা গলায় গর্জে ওঠে, না, তা’লে ফিরে চ, আমি অন্য লোক দেখি, আমারে বিশ্বাস হচ্ছে না?
টাকা?
আমি আগাম আনছি।
কী অদ্ভুত! বিড়বিড় করে কুন্তি, আমি একা যেতি পারব মা।
সরস্বতী বলে, ডর লাগবে না তো, ডরের কী আছে বুড়া মানুষ!
কুন্তি মুখ টিপে হাসে, আহা, দ্যাখো মা, ওই যেন ছিপতিবাবুর অশ্ব।
চমকে ওঠে ভানু, কী বলিস?
হাঁ, সাদা ঘুড়া। ফিসফিস করে কুন্তি, ঘুড়াটার কথা খুব মনে পড়ে, তুমরা দশদিক খুঁজি মরহ, সে ইখেনে আসি বসে আছে।
কী কহিস? অনন্ত মেয়ের পিঠে হাত দেয়।
হাঁ বাপ, দেখো, ঠিক যেন সেই ঘুড়া, ঘুড়াটা যেমন তাকায়ে থাকত সাগরে।
সরস্বতী এবার হাসল, থাম দেখি, কী বলিস?
কুন্তি খিলখিল করে হাসে, বাব্বা! জাহাজঅলা, জাহাজবুড়া, মা, জাহাজের মতন লাগে না উয়ারে?
যাহ্! চুপ কর।
জাহাজ কেমন মা?
বাতাসটা নরম হয়ে গেল। চারপাশের আগল খুলে গেল যেন। মেয়ে বুদ্ধিমতী। সবাই পথের ধারে উবু হয়ে বসে থাকল, ঠাকুর গেল কুন্তিকে নিয়ে। ভানু শুধু উসখুস করছিল। ভানুর মনে হচ্ছিল উঠে যায়। ঠাকুর মোটা দাঁও মারবে। দুহাজার যদি অনন্ত পায়, ঠাকুর তো পাঁচশ মারবেই। এত টাকা কেন? বুকটা ধক করে ওঠে ভানুর। এত টাকা বলেই মনের মেঘ সরছে না। ভানু ঘুরে তাকায়। অনন্ত আর তার বউ উদ্বেগ নিয়ে বসে আছে। একটু আগে নিরুদ্বিগ্ন হয়ে গিয়েছিল, এখন আবার তা ফিরে এসেছে। আকাশ তো। মন তো আকাশই বটে। কখন মেঘ এসে পড়ে কে জানে। আহা! মেয়েটা কত সুন্দর। ভানু জিজ্ঞেস করে, কত বয়স হলো মেয়ের?
চোদ্দ। সরস্বতী জবাব দেয়।
কচিই বটে, বিড়বিড় করে ভানু, মেয়েটা তুমার বেশ ভালো।
হাঁ, উয়ার আগে একটা ছিল, বাঁচে নাই, পরেও দুটা হলো, বাঁচে নাই, পড়ে আছে উ। বিড়বিড় করে সরস্বতী। গলাটা ভার।
অনন্ত সার বলে, তুমাদের ঘুড়াটা পলানোর পর কুন্তিই দেখেছিল।
সত্যি দেখেছিল?
হাঁ, লায়কানখাসে দেখেছিল।
শুনেচি, কথাটা কি সত্যি?
সত্যি, না হলে বলবে কেনে কুন্তি, ঘুড়াটা আস্তে আস্তে বাতাস ইঁই গেল।
কী বলো!
অমনই তো বলেছিল কুন্তি।
ভানু হাঁ করে দোতলা বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে। শীতের সময়, সিজিনে এই এলাকায় কত মানুষ। পথ গমগম করে, কোনো ঘর, কোনো বাড়ি ফাঁকা থাকে না। আর এখন? কী নিঝুম! বাড়িটায় কোনো মানুষ আছে কি না ধরা যায় না। কেউ নেই যেন। মেয়েটাকে নিয়ে ঠাকুর ঢুকে গেল শূন্য পুরীতে। ভানু উঠে পড়ে। হাঁটতে থাকে নির্জন পথ ধরে চন্দনেশ্বরের দিকে। পথের ধারে মানুষ প্রমাণ কেয়াবন। কেয়াফুলের ঝাড় ফুটেছে। লতানে গাছে নয়নতারা দুলছে। বাতাসে কেয়াফুলের গন্ধ আসছে। বাতাসে জলের গন্ধ! মেঘের গন্ধ! ভানু নাক টানতে টানতে হাঁটে। এই পথেই পক্ষিরাজ যায়। প্রতি বছর আশ্বিনে এই পথেই ক্ষুর ঠুকতে ঠুকতে সে যায় চোদ্দবেড়িয়ার দিকে। ক্ষুরে ক্ষুরে পিচরাস্তা দাপিয়ে, ভিজে বালিয়াড়ি ভেঙে, বালিতে ক্ষুরের চিহ্ন রেখে চন্দনেশ্বর মন্দির ফেলে দূরে, আরও দূরে, চোদ্দবেড়িয়ার চরে, সেখানে রয়েছে রূপবতী, গিরিমশায়ের ঘুড়ী। ভানু আকাশে তাকায়, ঘোর, আরও ঘোর করে আসছে মেঘ। ঘুরে তাকায় সে। মেঘের নিচে সাদারঙের বাড়িটা স্তব্ধ। থমথম করছে সব। ওই বাড়ির ভিতরে মেয়েটাকে নিয়ে ঢুকল ঠাকুর। ভানুর বুকটা আবার কেঁপে ওঠে। সে হনহন করে হাঁটতে থাকে। কী যেন মনে হচ্ছিল তার। কদিনের জন্য দুহাজার দেবে, তাঁর মানে আরও বেশিও দিতে পারে। দুহাজার হলে চার হাজারও দিতে পারে। কেন দেবে? ভানু গিয়ে বসে সমুদ্রের ধারে, নারকেল বনের গোড়ায়! বাতাসে জল ভাসছে। আকাশ থেকে এক, দুই ফোঁটা। ভানুর ঠোঁটের ডগায় পড়ল। জিভ দিয়ে জলবিন্দু টেনে নিতে নিতে ভানু নোনা স্বাদটি টের পেল।
সমুদ্র ফুঁসছে। জোয়ারের জল ক্রমে এগিয়ে আসছে। কালো জল আছড়ে পড়ছে সৈকতে। সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে ভানু চোখ বোজে। বুজে আসে চোখ। তারপরই দেখতে পায় ঘোড়াটিকে! জল থেকে মুখ তুলছে। তুলে আছে মুখ। কালো জল নিথর। ভানু স্পষ্ট দেখতে পায় পক্ষিরাজের চোখে জল। ঘোড়াটা কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে ডুবে যায়। জলের ভিতরে ডুবেও কাঁদে। চোখের জল গড়িয়ে সাপের মতো হয়ে যায়। চোখের জল গড়িয়ে গড়িয়ে কতদূর চলে যায়।
আচমকা ঘুমের চটকা ভেঙে যেতে ভানু দেখল সমুদ্র সত্যি স্থির। সমুদ্রের ধারে বসে সমুদ্রের স্বপ্ন মানে, স্বপ্ন নয় সত্যি। যা দেখেছে সে তা সত্যি। ওই অকূল গাঙে সে ভেসে গেছে! ভানু উঠে পড়ে। হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দেখে বাড়িটার সামনে কেউ নেই। চলে গেছে অনন্ত আর তার বউ। ভানু ঢুকে পড়ে ভিতরে। দেখল বারান্দায় কেউ নেই। সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা বন্ধ। দরজাটা ঠেলতে থাকে ভানু। খুলে যায়। নিঃশব্দে ওপরে উঠে আসে সে। দেখল কেউ কোথাও নেই। কোথাও কোনো শব্দ নেই। মানুষের কণ্ঠস্বর নেই। ভানু চাপা গলায় ডাকে, কুন্তি, ও কুন্তি! সাড়া পায় না। ভানু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বাঁ দিকে ঘর। ঘরের দরজা ভেজানো। ডান দিকে মস্ত বড় ব্যালকনি। ব্যালকনির দরজাটিও ভেজানো।
ভানু ডাকল, সায়েব আছেন নাকি?
কে? হালকা স্বর উড়ে এলো।
ভানু বলল, সায়েব, আমি ভানু। নাক টানল ভানু। ধুনোর গন্ধ পেল।
নীল স্লিপিং গাউন পরা মানুষটি বেরিয়ে আসে দরজা ঠেলে। ভানুর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এত জ্বলজ্বলে নীল! লোকটার বয়স ঠাকুরের বর্ণনামতো সত্তর, কিন্তু ভানুর মনে হয় আরও বেশি। আশি, নব্বই, একশ, নাকি আরও আরও অনেক। মুখখানি, চোখের দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে দুশ বছরের পুরাতন মানুষ, পাঁচশ, হাজার বছরের প্রাচীন কেউ। কেমন ভাবলেশহীন চোখমুখ, ভানুর দিকে তাকিয়ে আছে কত যুগ আগে থেকে যেন।
ভানু বলল, সায়েব,
ভানু কৌন?
আমি ভানু।
ভানু ভানুই সায়েব, কামটাম কিছু হবে?
কী কাম?
জাহাজ হায় তো সাহেব।
লোকটা বলে, তোমাকে কে পাঠাল?
ভানু বলে, নিজে এলাম।
বুড়ো ব্যালকনির দরজা খোলে। ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। খোলা বারান্দা। মেঘই যেন বারান্দার ছাদ। ডেক চেয়ারটি ভিজে ভিজে। বুড়ো তার ওপর বসে ভানুকে বলে, জাহাজের কথা কে বলল?
ঠাকুর।
পঞ্চম ঠাকুর, পঞ্চম ঠাকুরের মেয়েটাকে চেনো?
কুন্তি!
ইয়াস, ডটার অব পঞ্চম?
নো স্যার, পঞ্চমের মেয়ে নয়।
সায়েব বলর, কতদিন সে ঘুমোয়নি, শি ইজ স্লিপিং।
এই অবেলায়?
তুমি সিন্ধু চেনো, ডু য়্যু নো দি রিভার সিন্ধু?
না সায়েব।
সিন্ধু নদী, জিলা সকখের, ডিস্ট্রিক্ট সকখের?
নো স্যার।
মোন জো দারো, দ্য হিপ অব ডেড পার্সন, মৃতদের স্তূপ?
না সায়েব।
সিন্ধুদেশ চেনো?
না স্যার।
ঘোড়াটা, দ্য লস্ট হর্স, ওদিকে যেতে পারে।
চমকে ওঠে ভানু, কে বলল ঘোড়ার কথা?
কুন্তি, নাইস গার্ল, ভারী সুন্দর, বালিকা নয় রমণী, বোঝো তা?
ভানু চুপ করে যায়। বুড়ো বলছিল ঘোড়ার কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছে কুন্তি। তারপর থেকে মদনানি সায়েব বসে আছে কখন ওর ঘুম ভাঙবে। কী সুন্দর মেয়েটি! আহা! ফ্রেশ ফ্রম দ্য হেভেন। স্বর্গ থেকে নেমে আসা বালিকা, রমণী! ভানু, বলল, ওরা খুব দুঃখী সায়েব।
হোয়াট?
খুব গরিব স্যার, পুয়োর ম্যান ওর বাবা।
আমি জানি, তুমি ঘোড়াটাকে দেখেছিলে?
হ্যাঁ সায়েব, সে তো আমার কন্থক, কপিলাবস্তু ওর দেশ ছিল।
ওর কোনো রং ছিল না, কালারলেস?
তার মানে?
মানে, জলের মতো ছিল, বর্ণহীন 1
জল তো কালো সায়েব, কালো নীল!
নো, আমি যা বলছি জবাব দাও।
ভানু মাথা নাড়তে থাকে সায়েবের পিছনে দাঁড়িয়ে, সায়েব চাপা গলায় বলছে, তুমি জানো না, মেয়েটা চেনে, দ্যাট নাইস গার্ল ফ্রম দ্য হেভেন।
কী স্যার, কী বলছেন?
বলছি ঘোড়াটা বাতাস হয়ে গেল, মেয়েটা বলল।
নো স্যার। ভানু যেন কেঁদে ওঠে। সামনে মস্ত দরজা। দরজাটা এমনভাবে বন্ধ যেন দেয়াল। নিঃঝুম। ভানুর চারপাশ কেমন ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। সে সরে আসে। আস্তে আস্তে ফিরে আসতে থাকে।