বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি

প্রাণে গান নাই, মিছে তাই ফিরিনু যে

এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে

ভোর হল বিভাবরী, পথ হল অবসান

নূতন প্রাণ দাও, প্রাণসখা, আজি সুপ্রভাতে

মোর মরণে তোমার হবে জয়

এই করেছ ভালো নিঠুর

যা হারিয়ে যায় তা আগলে বসে

একমনে তোর একতারাতে একটি যে তার সেইটি বাজা

নিশার স্বপন ছুটল রে, এই ছুটল রে

শোনো তাঁর সুধাবাণী শুভমুহূর্তে শান্তপ্রাণে

হৃদয় আমার প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে

আরো আঘাত সইবে আমার

আনন্দ তুমি স্বামী, মঙ্গল তুমি

গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে, আর কোলাহল নাই

অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে

নিশিদিন চাহো রে তাঁর পানে

যখন তুমি বাঁধছিলে তার সে যে বিষম ব্যথা

আমি বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই

ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভূবনের ভার

ভুবন হইতে ভুবনবাসী এসো আপন হৃদয়ে

হে চিরনূতন, আজি এ দিনের প্রথম গানে

ওঠো ওঠো রে– বিফলে প্রভাত বহে যায় যে

এই-যে কালো মাটির বাসা শ্যামল সুখের ধরা

প্রচণ্ড গর্জনে আসিল একি দুর্দিন

ওই আলো যে যায় রে দেখা

জীবন যখন ছিল ফুলের মতো

প্রাণের প্রাণ জাগিছে তোমারি প্রাণে

ওদের কথায় ধাঁদা লাগে

এক হাতে ওর কৃপাণ আছে, আর-এক হাতে হার

বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা

তোমার দ্বারে কেন আসি ভুলেই যে যাই

বাধা দিলে বাধবে লড়াই, মরতে হবে

জাগো নির্মল নেত্রে রাত্রির পরপারে

জানি নাই গো সাধন তোমার বলে কারে

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে

আরো আরো প্রভু, আরো আরো

তুমি জানো, ওগো অন্তর্যামী

তুই কেবল থাকিস সরে সরে

স্বপন যদি ভাঙিলে রজনীপ্রভাতে

আমায় ভুলতে দিতে নাইকো তোমার ভয়

ওরে, কে রে এমন জাগায় তোকে

তোমার সোনার থালায় সাজাব আজ দুখের অশ্রুধার

তোমার দুয়ার খোলার ধ্বনি ওই গো বাজে হৃদয়মাঝে

দাঁড়াও মন, অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড-মাঝে আনন্দসভাভবনে আজ

বাজাও তুমি কবি, তোমার সঙ্গীত সুমধুর

আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে ফুল ফুটবে

আঘাত করে নিলে জিনে

দুখের বেশে এসেছ ব’লে তোমারে নাহি ডরিব হে

আমার যে আসে কাছে, যে যায় চলে দূরে

নদীপারের এই আষাঢ়ের প্রভাতখানি

মনোমোহন, গহন যামিনীশেষে

তাই তোমার আনন্দ আমার ‘পর

ওগো আমার প্রাণের ঠাকুর

তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি

হার-মানা হার পরাব তোমার গলে

শান্ত হ রে মম চিত্ত নিরাকুল

পান্থ, এখনো কেন অলসিত অঙ্গ

তব সিংহাসনের আসন হতে এলে তুমি নেমে

সুখে আমায় রাখবে কেন