1 of 2

ফাঁকে পড়ল ফাঁকিবাজ। অ্যালবার্ট ক্যামপিয়ন

মার্গারি অ্যালিঙহ্যাম-এর গল্প নিয়ে গোয়েন্দা ধাঁধা
ফাঁকে পড়ল ফাঁকিবাজ। অ্যালবার্ট
ক্যামপিয়ন

কে বলেছে চেয়ারে বসে গোয়েন্দাগিরি হয় না? ঘরে বসে স্রেফ নকসা দেখেও খুনি ধরা

যায়। অ্যালবার্ট ক্যামপিয়ন সব পারেন।

ভদ্রলোক চশমাধারী। লিকপিকে ঠ্যাং। ঘরকুনো। কিন্তু মাথাটি সাফ। আপদে-বিপদে তাই ইন্সপেক্টর ওটস আসেন শলাপরামর্শ করতে।

সেদিন এলেন একটা ভারী সোজা কিন্তু ভারী কঠিন খুনের হেঁয়ালি নিয়ে। খবরের কাগজেও বেরিয়েছে খবরটা।

আগের রাতে খাস লন্ডন শহরেও গরম পড়েছিল। গুমোট গরম। জলের মাছ ডাঙায় উঠলে যেমন খাবি খায়, ঠান্ডার দেশের মানুষরা গরম পড়লে তেমনি হাঁসফাস করে। সাহেব মেমরা মাথা ঘুরে পড়েও যায়। তাই রাত একটার সময়ে লোকটাকে টলে পড়ে যেতে দেখে অবাক হল না বীটের কনস্টেবল। হেলতেদুলতে কাছে এসে আঁতকে উঠল কাঁধের ফুটো দেখে। পাকা হাত বটে। নীল ফুটোর মধ্যে দিয়ে ঢুকেছে বুলেট, ফুসফুস ফুটো করেছে, হার্ট ফুটো করেছে তারপর আটকে গেছে বুকের খাঁচায়।

গুলির আওয়াজ শোনা যায়নি।

তাই মনে হয় সাইলেন্সার ছিল বন্দুকে, না হয় খুব দূর থেকে গুলি করা হয়েছে।

কিন্তু কতদূর থেকে? কোনখান থেকে? ধাঁধা তো সেখানেই। গজগজ করতে লাগলেন ইন্সপেক্টর ওটু। একটা নকশাও এঁকে ফেললেন। নকশাটা এই :

বললেন, খুন হয়েছে জনি গিলকিক। জোসেফাইন বলে একটা চুঁড়িকে নিয়ে অনেকদিন থেকেই তার মনকষাকষি ছিল ডোনোভানয়ের সঙ্গে। ডোনোভান দারুণ বন্দুকবাজ। টিপ কখনও ফসকায় না। পঁয়ত্রিশ বছর বয়স। তার মধ্যে দশ বছর জেলে ছিল। লোকটা গভীর জলের মাছ। খুনি জালিয়াত নিয়ে কারবার করে।

ফাঁকে পড়ল ফাঁকিবাজ। অ্যালবার্ট ক্যামপিয়ন

তন্ময় হয়ে শুনতে লাগলেন ক্যামপিয়ন সাহেব।

ওটস্ বললে, ওর চোরাই মালের কারবারের গোপন ঘাঁটি হল কোল কোর্টয়ের এই কাফে। যদিও কফি পানের জায়গা ভালো আড্ডাখানাও বটে। চোর বাটপার খুনে গুন্ডারাও থাকে সে আড্ডায়।

দাঙ্গাবাজ ডোনোভান ওদের মাথা বললেও চলে। জোসেফাইন মেয়েটাকে অষ্টপ্রহর বসিয়ে রাখে কাউন্টারে রাস্তার খদ্দেরকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ভেতরে টেনে আনার জন্যে। এহেন জোসেফাইনের সঙ্গে সত্যি-সত্যিই পটে গেল গিলকিক। রেগে টং হল ডোনোভান। শাসিয়ে দিল সবার সামনেই, ফের যদি জোসেফাইনের ধারেকাছে দেখা যায় তো টুটি ছিঁড়ে ফেলবে।

তা সত্ত্বেও কাল রাতে বিরহী গিলকিক এসেছিল প্রেয়সীর কাছে। মরণকালেই লোকের বুদ্ধিনাশ ঘটে। জোসেফাইন ভয়েময়ে হাঁকিয়ে দিয়েছিল গিলকিক-কে। কিন্তু ডোনোভানের গুলি কখনও ফসকায় না।

অথচ জোসেফাইন নিজে থেকেই দৌড়তে-দৌড়তে থানায় এসে বলে গেল, ডোনোভান নাকি কাফে থেকে একদম বেরোয়নি। ওর গায়ে পড়ে সাফাই গাওয়া মোটেই ভালো চোখে দেখিনি আমি। কিন্তু আরও প্রমাণ পেলাম দুজন সাংবাদিকের কথা শুনে। জানেন তো ও অঞ্চলে দুটো খবরের কাগজের অফিস আছে। সারারাত কফি সাপ্লাই যায় সেখানে। রিপোর্টাররাও আড্ডা মারে ফঁক পেলেই। ডোনোভান যে কাফের বাইরে পা দেয়নি–তারাই হলফ করে বললে।

খুনটা তাহলে হল কী করে? কোলকোর্ট একটা গলির মধ্যে। দুপাশে দুটো গুদোমের কংক্রিট দেওয়াল–একটা ফুটোও নেই।

নকশা দেখুন। গিলকিক-য়ের লাশ পাওয়া গেছে বালির গাদার সামনে চৌকো চিহ্ন দেওয়া জায়গায়।

ডেকেসন স্ট্রিটের রাস্তার দুপাশে দুজন কনস্টেবল মোতায়েন ছিল। কোলকোর্টয়ের ডানদিকের গ্যাসপোস্ট পর্যন্ত দুজনের এখতিয়ার।

দুজনের কেউই গুলির আওয়াজ শোনেনি বন্দুকবাজকেও দেখেনি। কনস্টেবল ক স্বচক্ষে দেখেছে গিলকিক গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ছে। কনস্টেবল খ সেই সময়ে গুদোম টহল দিতে ভেতরে ঢুকেছিল।

কনস্টেবল ক তাকে ডেকে আনে। অ্যামবুলেন্স ডাকে।

ডাক্তার বলছেন, যে-ভাবে গুলি লেগেছে তাতে সঙ্গে-সঙ্গে মারা গেছে গিলকিক৷ ওই গুলি খেয়ে তিন পায়ের বেশি হাঁটা সম্ভব নয়। অর্থাৎ ডোনোভান রাস্তায় বেরিয়ে এসে গুলি করে ফের ঢুকে গেছিল গলিতে এবং কাফের ভেতরে।

অথচ কেউ তাকে বেরোতে দেখেনি।

মিস্টার ক্যামপিয়ন, বলুন দিকি একি রহস্য? ডোনোভান ছাড়া আর কেউ খুন করেনি– কিন্তু করল কেমন করে?

অ্যালবার্ট ক্যামপিয়ন, এতক্ষণে নড়ে উঠলেন চেয়ারে। বললেন, গিলকিক গুলি খেয়েছে চার দেওয়ালের মধ্যে। তার মধ্যে দুটো দেওয়াল হচ্ছে নিরেট কংক্রিটের বাকি দুটো দেওয়াল হচ্ছে রক্তমাংসের–কনস্টেবল ক আর খ।

ওটু, রক্তমাংসের দেওয়াল কি নির্ভরযোগ্য?

বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলেন ওটস্।

বিড়বিড় করে শুধু বললেন, ও মাই গড! পরক্ষণেই বাই-বাই করে ছুটলেন থানায়।

খবর এল যথাসময়ে। কনস্টেবল ক ছুটিতে গেছে আজ সকালেই। লাশটা পাচার করেছিল সে-ই–পাছে ছুটি নষ্ট হয়, এই ভয়ে।

কিছু বুঝলেন? লাশটা কোথায় পাচার হয়েছিল?

.

গোয়েন্দা ধাঁধার সমাধা

বালির গাদার সামনে থেকে ডানদিকের গ্যাসপোস্ট পর্যন্ত–যেখান থেকে শুরু হয়েছে কনস্টেবল খ-য়ের এখতিয়ার।

কাফের দোতলা থেকে ডোনোভান গুলি করেছিল গিলকিক-কে। গুলি খেয়ে গিলকিক টলতে-টলতে মুখ থুবড়ে পড়ল বালির গাদার সামনে। কনস্টেবল খ এসে দেখল, মহা মুশকিল। নিজের এলাকায় খুন হওয়া মানেই তদন্তে জড়িয়ে পড়া। ছুটি বাতিল হবেই।

কনস্টেবল খ সেই মুহূর্তে টহল দিতে ঢুকেছে ভেতরে। ফঁকিবাজ ক লাশটাকে তুলে এনে শুইয়ে দিল খ-য়ের এলাকায়। তারপর ছাড়ল পুলিশী হাঁক।

ক্লিয়ার?

* সাপ্তাহিক অমৃত পত্রিকায় প্রকাশিত। ৮ই ফাল্গুন, ১৩৮১।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *