দাঁত থাকতে
শুকনো মুখে অনিতা জানলা দিয়ে চেয়ে রইল আকাশের দিকে। মুখ দেখে কে বলবে মাত্র বারো ঘণ্টা আগে ময়দানের অন্ধকারে নরপশুদের শিকার হতে হয়েছিল তাকে।
অনিতার বাবা রোটারিয়ান শশাঙ্ক সান্যাল পাকা গোঁফে তা দিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন, ইন্দ্রনাথবাবু, আমি সেকেলে হলে কী হবে, মেয়ে বড় হচ্ছে পারমিসিভ সোসাইটির হাওয়ায়। ছেলেমেয়ের মধ্যে মেলামেশা আমিও দোষের মধ্যে দেখি না। কালকে ও অজিতকে নিয়ে গিয়েছিল বেড়াতে। ভিক্টোরিয়ার উলটোদিকে প্যারেড গ্রাউন্ডে সি এম ডি এ যেখানে পাতালরেলের কাজ চালাচ্ছে সেইদিকে। তারপর কী হয়েছে অনিতার মুখেই বরং শুনুন। আমি বাইরে যাচ্ছি।
জুতো মসমঁসিয়ে বেরিয়ে গেলেন বৃদ্ধ শশাঙ্ক সান্যাল। লম্বা, রোগা, খানদানি চেহারা। এই বয়সেও আদ্দির পাঞ্জাবি গিলে করে পরেন, ধুতি চুনোট করেন, হাতে মালাক্কা বেতের ছড়ি নিয়ে হাঁটেন। বারান্দায় দেশলাই ঘষার আওয়াজ হল। চুরুটের গন্ধ পেলাম।
অনিতা জানলা দিয়ে ঠায় তাকিয়ে ছিল বাইরে। বাবা বাইরে গেলেন। ঘরে আমরা দুজন সদ্য পরিচিত পুরুষ–অথচ একবার ফিরেও তাকাল না কাল রাতের ভয়াবহ ওই অভিজ্ঞতায় স্নায়ু চোট খেয়েছে নিশ্চয়–বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না।
নরম গলায় ইন্দ্র বললে, অনিতা।
অনিতা ফিরে তাকাল। অষ্টাদশী সুন্দরী, লাবণ্যময়ী। ধারাল মুখ। ঠোঁঠে শুষ্ক হাসি টেনে এনে বলল, বলুন।
তুমি বলছি বলে রাগ করছ না তো?
না, না।
অজিত কে অনিতা?
স্মার্ট মেয়ে বটে। একটু দ্বিধা না করে বললে, কলেজ ফ্রেন্ডলাইফ পার্টনার করব ভাবছি। কিন্তু এই কাণ্ডটা হয়ে যাওয়ার পর–
কী হয়েছিল, খুলে বলবে?
চোখ ফিরিয়ে ফের জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল অনিতা।
মাত্র আঠারো বছর বয়স, কিন্তু তিনগুণ বয়সের পুরুষকেও আকর্ষণ করার মতো উপাদান শরীরে জড়ো হয়েছে। সোনা-সোনা রঙের ঘাড়-ছাঁটা এক মাথা চুল, ঠোঁটের ভঙ্গিমায় আদুরে-আদুরে ভাব, বুটিদার হলুদ ঢিলেহাতা পাঞ্জাবি আর বেগুনি স্ন্যাকসের দৌলতে অষ্টাদশী সৌন্দর্য বেশ প্রকট।
একটু ধার-ঘষা গলায় বললে, নিউ এম্পায়ারে ইভিনিং শো-তে এক্সরসিস্ট দেখে আমি আর অজিত গিয়েছিলাম ময়দানে–আমার স্কুটারে।
তুমি স্কুটার চালাও?
হ্যাঁ। অজিত অসভ্য রকমের লম্বা বলে ও-ই চালিয়ে নিয়ে গেল।
কত লম্বা?
চোখ ফিরিয়ে তাকাল অনিতা। এই প্রথম ওর ক্লান্ত চোখে দুষ্ট ঝিলিক লক্ষ করলাম, বললে বিশ্বাস করবেন না। সাত ফুট দুইঞ্চি।
সাত ফুট দুইঞ্চি!
লং মেন্স ক্লাবের ও ফাউন্ডার সেক্রেটারি।
কী ক্লাব বললে?
এবার হেসে বলল অনিতা।
বললে–লং মেন্স ক্লাব–লম্বা লোকদের ক্লাব। কলকাতায় এই প্রথম। অজিত নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে।
হাঁ করে শুনছিল ইন্দ্রনাথ, ঠিকানাটা দিও তো। দেখব আমার ঠাঁই হয় কি না।
ওর তালঢ্যাঙা চেহারার পানে তাকিয়ে অনিতা বললে, তা হবে। সাত বাই তিন, কৈলাশ মুখুজ্যে স্ট্রিট, কলকাতা সাত।
ঠিকানাটা লিখে নিল ইন্দ্রনাথ। আবহাওয়া বেশ লঘু হয়ে এসেছে লম্বা লোকদের ক্লাব প্রসঙ্গে আসায়। মুচকি হেসে বললে, তোমার লম্বা হবু লাইফ পার্টনার স্কুটার চালিয়ে গেল ময়দানে। তারপর?
আবার চোখ ফিরিয়ে নিল অনিতা। চঞ্চল হল আঙুলগুলো।
সেকেন্ড কয়েক চুপ করে থেকে বলল, মাটি কেটে পাহাড়ের মতো যেখানে ঢেলে রাখা হয়েছে, তার আড়ালে বসেছিলাম ঘণ্টাদেড়েক। ওদিকে আলো নেই। কয়েকটা গাছের ঘুপসি জটলা। হঠাৎ কথা আটকে গেল অনিতার।
নরম গলায় ইন্দ্র বললে, লজ্জা করো না, বল আমার শোনা দরকার।
হঠাৎ অজিত ভীষণ চেঁচিয়ে উঠল, কে? কে? সঙ্গে-সঙ্গে কারা যেন মাটির ঢিবি বেয়ে হুড়মুড় করে লাফিয়ে পড়ল আমাদের ওপর। দমাস করে একটা আওয়াজ শুনলাম–অজিত ককিয়ে উঠল। আমাকে কয়েকজন চক্ষের নিমেষে ধরে মুখ, চোখ, হাত, পা বেঁধে ফেলল। চেঁচাতেও পারলাম না। তারপর–দু-চোখ বন্ধ করল অনিতা। আর কথা বলতে পারছে না। ঠোঁট দুটো কেবল থরথর করে কঁপছে।
ইন্দ্রনাথ বললে, যাক আর বলতে হবে না। কাউকে দেখোনি?
তারার আলোয় দেখেছিলাম, কিন্তু কিছু মনে পড়ছে না। চোখ বেঁধে ফেলার আগে কিন্তু কাউকে দেখিনি।
তবে কখন দেখেছিলে?
অনেকক্ষণ পরে…গোঙাচ্ছিলাম…চোখের বাঁধন খুলে দিল…অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে একজন আমাকে…কিন্তু কিছুতেই তার মুখটা মনে করতে পারছি না।
তুমি তাকে দেখেছিলে? ঝুঁকে পড়ল ইন্দ্রনাথ। দুই চোখ খরখরে।
হ্যাঁ। কিন্তু আমি তখন..আমি তখন…তারপর আর কিছু মনে নেই।
ঠোঁট কামড়ে মাথা নীচু করে রইল ইন্দ্রনাথ। শক্ত হয়ে উঠল চোয়ালের হাড়।
বললে, তারপর?
চলন্ত ট্যাক্সির পেছনে জ্ঞান ফিরল। অজিতের কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম।
অজিত জখম হয়েছিল?
গাল কেটে রক্ত পড়ছিল। রুমাল দিয়ে চেপেছিল। একা বলে অতজনের সঙ্গে পারেনি।
মৃগ, শশাঙ্কবাবুকে ডাক।
উঠে গিয়ে ডেকে নিয়ে এলাম শশাঙ্ক সান্যালকে। চুরুট কামড়ে ধরে স্বভাবতী কণ্ঠে বললেন, স্কাউন্ডেলদের কি ধরা যাবে না, ইন্দ্রনাথবাবু?
সম্ভব নয়। অনিতা তো কাউকেই মনে করতে পারছে না। অজিত কি কাউকে দেখেছে?
না। ওরও চোখ, হাত, পা, মুখ বাঁধা ছিল।
একটা উপায় আছে–শেষ চেষ্টা করতে পারি।
বলুন।
বলল ইন্দ্রনাথ। চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল শশাঙ্ক সান্যালের, এও কি সম্ভব?
খুবই সম্ভব।
বেশ ব্যবস্থা করুন।
.
সম্মোহন চিকিৎসক হিমাংশু দলুইয়ের চেম্বারে পৌঁছলাম সন্ধেবেলা।
উনি পথ চেয়ে বসেছিলেন। অনিতাকে একটা ইজিচেয়ারে আড় করে শুইয়ে দিলেন। ঘরে নরম আলো জ্বেলে দিলেন। তারপর ময়দানের কাহিনি আর একবার শুনলেন।
চেনে ঝোলানো চকচকে একটা চাকতি বার করে বললেন, সম্মোহন এবার শুরু হবে। আপনারা দয়া করে–
উঠে পড়লাম আমি, ইন্দ্রনাথ আর শশাঙ্কবাবু। বসলাম বাইরের ঘরে।
ঘণ্টাখানেক পরে ডাক পড়ল আমাদের। অনিতা আড় হয়ে শুয়ে। এইমাত্র সম্মোহিত হয়েছে বলে মনেই হয় না।
ডাক্তার বললেন, পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগেছে ওকে হিপনোটাইজ করতে। এত সময় কখনও লাগে না। যে হিপনোটাইজড় হবে, সে যদি সহজ হতে না পারে, দেরি হবেই।
অনিতার আর দোষ কী বলুন, সহানুভূতির স্বরে বললে ইন্দ্রনাথ। শেষ যাকে দেখেছিল, তার চেহারা কি মনে করতে পেরেছে?
তা পেরেছে।
উৎসুক হল অনিতা নিজেও। আমরা তো বটেই।
ডাক্তার একটা সাদা কাগজ টেবিল থেকে নিয়ে চার ভাঁজ করে ইন্দ্রনাথের হাতে দিলেন।
ভাঁজ খুলে পড়ল ইন্দ্রনাথ। ফের ভাঁজ করে পকেটে রেখে বলল, চল মৃগ, অজিতকে জিগ্যেস করে আসি তার আবার কাউকে মনে পড়ে কি না।
.
লং মেন্স ক্লাবেই পাওয়া গেল অজিত সামুইকে।
আখাম্বা লম্বা বটে চেহারাখানা। গায়ে সে অনুপাতে মাংস বা চর্বি খুব কম। দড়ির মতো পাকানো হাত আর পা। চোয়ালের হাড় আর গালের হনু ঠেলে বেরিয়ে আসছে। ঘরের একটিমাত্র টেবিলে বসে ঘাড় হেঁট করে কী লিখছিল, আমি আর ইন্দ্রনাথ ঢুকতেই প্রথমে চোখ তুলল–তারপরেই সটান উঠে দাঁড়াল। লক্ষ করলাম বাঁ-গালে একটা স্টিকিং প্লাস্টার লাগানো।
আপনারা?
পেশায় আমি ডিটেকটিভ, নাম ইন্দ্রনাথ রুদ্র। আর ইনি হলেন আমার ডক্টর ওয়াটসন। মৃগাঙ্ক রায়, বলে তক্তপেপাশে বসতে-বসতে বললে ইন্দ্র, আপনার কাছে কেন এসেছি বুঝতেই পারছেন। অনিতা কাউকেই মনে করতে পারছে না। আপনি কি পারবেন?
অসম্ভব। ওই অন্ধকারে আচমকা ঘাড়ে এসে না পড়লে বাছাধনদের টের পাইয়ে দিতাম।
আপনাকেও বেঁধে ফেলেছিল শুনলাম।
আষ্টেপৃষ্ঠে।
মার খাওয়ার পর?
মেরেছি আমিও, গালের স্টিকিং প্লাস্টারে হাত বুলিয়ে নিল অজিত। প্রথম ঘুসিটা সামলাতে পারিনি।
গাল থেকে রক্ত ঝরছিল কেন?
কামড়ে দিয়েছিল যে।
কামড়ে দিয়েছিল! বলেন কী?
একজনকে জাপটে ধরেছিলাম। এমন কামড়ে ধরল যে—
ছেড়ে দিলেন। কে কামড়েছিল দেখেননি?
বললাম তো ওই অন্ধকারে–
এক কাজ করুন। আমার সঙ্গে স্পেশ্যালিস্টের কাছে চলুন। কামড়ের দাগ দেখে দাঁতের চেহারা তিনি বার করে ফেলবেন। কিছুটা সাহায্য তাতে হবে। দাগি ক্রিমিন্যাল হলে ধরা যাবে।
চোখ কুঁচকে তাকাল অজিত, কামড়ের দাগ থেকে দাঁতের চেহারা বার করা যায়?
নিশ্চয় যায় অজিতবাবু। বিজ্ঞানে সব হয়। ফোরেনসিক ওড়োনটোলজির নাম শোনেননি বোধ হয়?
না।
ক্যালকাটায় ওজােনটোলজিস্ট একজনই আছেন। ডাক্তার বিমল ভটচাজ। আমার বিশেষ বন্ধু। আসবেন?
চলুন।
দাঁতের কামড়ের বিশেষজ্ঞ শেষ পর্যন্ত কী রিপোর্ট দিয়েছিলেন ইন্দ্রনাথকে, আমার তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এ-কেসে যে শেষ পর্যন্ত বন্ধুবরকে মুখে চুনকালি মাখতে হবে, তা বুঝে আমিও আর খুঁচিয়ে কিছু জিগ্যেস করিনি। দিন কয়েক পরে সস্ত্রীক বসে কফি পান করছি, এমন সময় ঘরে ঢুকল ইন্দ্রনাথ, পেছনে শশাঙ্ক সান্যাল।
নমস্কার-টমস্কার শেষ হওয়ার পর শশাঙ্কবাবু বললেন, মৃগাঙ্কবাবু, মিসেস রায়, আপনারা দুজনেই এগারোই আষাঢ় আমার পর্ণ কুটিরে পায়ের ধুলো দেবেন। এই রইল পত্র।
বলে একখানা ভারী হ্যান্ডমেড পেপারের হলুদ রঙের খাম রাখলেন টেবিলে। খামের ওপরে বাহারি ছাঁদে লেখা শুভবিবাহ।
কার বিয়ে? নিরীহ কণ্ঠে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল কবিতা।
আমার মেয়ের।
অনিতার? আমি হতভম্ব। পাত্র কে?
অজিত।
অজিত!
উঠে পড়লেন শশাঙ্কবাবু, বড় ভালো ছেলে। চলি আজ। আসবেন কিন্তু।
ইন্দ্রনাথ দরজা পর্যন্ত শশাঙ্কবাবুকে এগিয়ে দিয়ে এসে বসল কবিতার পাশে। ধীরে-সুস্থে একটা কচি ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বললে, কফিটা কি না চাইলে দেবে না?
কবিতা শুনেছিল অনিতা কাহিনি। তাই হাঁ করে চেয়েছিল ইন্দ্রনাথের পানে। এখন ঘোর সন্দেহ দেখা দিল চাহনির মধ্যে। সন্দেহ আমারও হল। ইন্দ্রনাথ জানে এই হঠাৎ বিয়ের রহস্য।
শক্ত গলায় বললে কবিতা, কফি পরে। আগে বল সব জেনেশুনে অনিতাকে অজিত বিয়ে করছে কেন? ভালোবেসে?
তা তো বটেই। ঘটকালিটা অবশ্য আমাকেই করতে হয়েছে। একটা কথা বলতেই রাজি হয়ে গেল অজিত।
কী কথা?
বললাম অজিতবাবু, আমি সব জানি। শশাঙ্কবাবু বা অনিতা কোনওদিন জানতে পারবে না। যদি আপনি অনিতাকে বিয়ে করেন সামনের লগ্নেই।
চোখ বড় বড় করে কবিতা বললে, ঠাকুরপো, তুমি কি বলতে চাও অজিত—
আরে হ্যাঁ। বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্ল্যান করেছিল। বিকৃতি আর কাকে বলে?
কী বলছ তুমি।
ঠিকই বলছি বউদি। একলকাতায় এরকম অসম্ভব কাণ্ড নিত্য ঘটছে, কে তার খবর রাখে। অনিতা-অজিতের প্রেমে খাদ নেই। কিন্তু অজিত অন্য রসের সন্ধানে এই প্ল্যান করেছিল। যাকগে সেসব নোংরা ব্যাপার। যখনি শুনলাম, হিপনোটাইজড় হতে অনিতা পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় নিয়েছে, তখনি বুঝলাম ওর অবচেতন মনে পুরুষটার চেহারা চাপা পড়ে রয়েছে এবং অবচেতন মনের কারসাজিতেই সম্মোহিত হয়ে তাকে সে ধরিয়ে দিতে চাইছে না। ভেতর থেকে ইচ্ছা না থাকলে, কখনওই সম্মোহিত হওয়া যায় না। অবচেতন মনের কারচুপির খবর সজ্ঞান মন পর্যন্ত পোঁছয় না বলেই অনিতা সজ্ঞানে চেষ্টা করেও অজিতের চেহারা মনে করতে পারেনি।
কিন্তু সম্মোহিত হয়ে সে বললে, ভীষণ লম্বা একটা লোক, অনেকটা অজিতের মতো চেহারা, তাকে চেপে ধরেছিল। তখন সে তার গলা কামড়ে দেয়।
ক্লু পেয়ে গেলাম। অজিতকে নিয়ে ওজােনটোলজিস্টের কাছে গেলাম। কামড়ের ক্ষতচিহ্নে দাঁতের যে ছাপ পাওয়া গেল, তার সঙ্গে হুবহু মিলে গেল অনিতার দাঁতের ছাপ। হিপনোটাইজ করিয়ে যা আঁচ করেছিলাম ওডোনটোলজিস্ট দিয়ে তা প্রমাণ করলাম। কিন্তু কোর্টে গেলাম না।
কেন গেলে না? ওই রকম একটা জানোয়ারকে তেড়ে উঠল কবিতা।
বউদি, বিয়ে ভাঙা সহজ, দেওয়া কঠিন। তাছাড়া আমরা চোর-ডাকাত ধরি সংসারকে সুন্দর করার জন্যে, মানুষকে সুখী করার জন্যে। তাই নয় কি? অনিতা বা শশাঙ্কবাবু কেউই কোনওদিন জানবে না অজিত প্রথমে পৈশাচ বিয়ের পর ব্রাহ্ম বিয়ে করেছে অনিতাকে।
পৈশাচ বিয়ে? ভুরু তোলে কবিতা।
তা ছাড়া আর কী? নিউ এম্পায়ার থেকে বেরোনোর আগে দুজনেই যে একটু সুরাপান করেছিল। পারমিসিভ সোসাইটি তো-অনিতা পরে স্বীকার করেছিল আমার কাছে।
গল্পের শেষে আপনাদের একটা খবর জানিয়ে রাখি। ভারতে এই প্রথম সম্মোহন আর দাঁতের ছাপ দিয়ে অপরাধী সনাক্ত করল ইন্দ্রনাথ রুদ্র।
* দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত (শারদীয় সংখ্যা, ১৩৮৫)