পঁয়তিরিশ
বছর গড়ায়, অষ্টাশি সালে দু’মাসের জন্য প্যারিস থেকে ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিমন্ত্রণ। বসন্ত ঋতু, অতি সুন্দর সময়। বিশেষ করে অ্যালিস আমাদের জন্য এমন এক পল্লীতে, এমন এক রাস্তায় একটি ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিলেন, যা বিখ্যাত বেলজিয়ান লেখক জর্জ সিমেনঁর গোচারণভূমি। ওঁর লেখা অনেক খুনের কাহিনী এই অঞ্চলে ঘটেছে, এমন কি ওঁর স্থিতধী পুলিশ গোয়েন্দা মেইগ্রে এবং তস্য ততোধিক স্থিতধী ঘরোয়াত্বমদির গৃহিণীরও বাসস্থান এই অঞ্চলে। আমার আনন্দ ধরে না, ওই দু’মাস বড়ো রাস্তা-ঘোটো-রাস্তা-অলি-গলি ঘুরে বেড়িয়েছি সিমেনঁর বৈদেহী উপস্থিতির অন্বেষণে। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে যা এখন প্রচুর ঘটছে, আমার অনুজা মার্কিনবাসিনী, পক্ষকাল ক্যালিফোর্নিয়ায় তাদের ওখানেও কাটাতে হলো, ফেরার পথে কয়েকদিনের জন্য ওয়াশিংটনে পুরনো বন্ধুদের আকর্ষণে। দিন পাঁচেক বাদে নিউ ইয়র্ক থেকে রাতের বিমানে চড়ে ভোরবেলা ফ্রাঙ্কফুর্টে। পরিকল্পনা ছিল সেখান থেকে অন্য বিমান ধরে ভিয়েনা যাবো, আমাদের কাছের মানুষ, অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুড়ীর স্ত্রী, ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরতা, মধু ভাল্লার সঙ্গে দিনকয়েক কাটাবো।
ভিয়েনা যাওয়ার অন্য বড়ো কারণও ছিল। প্রায় এক যুগ খুরশীদের সঙ্গে দেখা হয় না, কিংবা দেখা হলেও মাত্র এক ঘণ্টা-দু’ঘণ্টার জন্য, হয়তো নিউ ইয়র্কের বিমান বন্দরে, অথবা লন্ডনের হোটেলঘরে। আটাত্তর সালে একটি বিদ্যাচর্চা বৈঠকে যোগ দিতে সে নতুন দিল্লি এসেছিল, দিল্লির বাইরে যাওয়ার অনুমতি পায়নি ভারত সরকারের কাছ থেকে, কলকাতা থেকে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে এলাম। সাক্ষাৎমাত্র ওর ঝরঝর কান্না: ‘জীবনটাকে আমি নিজেরই ভুলে তছনছ করেছি’। স্বামীর সঙ্গে মনের মিল হয়নি, ওর অধ্যাপিকা-জীবন স্বামীর অপছন্দ। খুরশীদ ফরেন সার্ভিসে ঢুকলে অপছন্দের মাত্রা বৃদ্ধি, অতঃপর বিবাহবিচ্ছেদ, ছেলেটি ভাগাভাগি করে বাবা-মার সঙ্গে। খুরশীদ কখনও নিউ ইয়র্কে কনসাল জেনারেল, কখনও হল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত, কখনও অন্যত্র। মাঝে-মাঝে চিঠি পাই, কর্মক্ষেত্রে কৃতী হয়েছে, কিন্তু জীবনে শান্তি নেই। ইতিমধ্যে সে কঠিন পীড়ায়ও আক্রান্ত, চিকিৎসার সুবিধার্থে পাকিস্তান সরকার তাকে ভিয়েনায় রাষ্ট্রদূত করে পাঠিয়েছে।
আমাদের দু’জনেরই খুরশীদকে দেখবার জন্য উৎকণ্ঠা, মধুর মারফৎ আগে থেকে তাকে খবর পাঠানো হয়েছে। মধু, আগেই উল্লেখ করেছি, অবাঙালি, কিন্তু দুরন্ত বাংলা জানে, বোঝেও। শাস্ত্রীয় সংগীতে পারদর্শিনী, ভারতীয় ফরেন সার্ভিসে দ্রুত উন্নতি করেছে, হিন্দি ভাষায় অগ্রগণ্যা গল্পলেখিকা। ওর ওখানে থাকবো, দু’বেলা খুরশীদকে দেখতে যাবো, মনে-মনে এমন ছক কাটা। কেলেঙ্কারি ঘটলো ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে। ভিয়েনাগামী বিমানের সময় হয়ে গেছে, এসকালেটরে চেপে উপরের তলায় উঠে বিশেষ কাউন্টার থেকে আমাদের জন্য অপেক্ষমাণ ভিয়েনার বিমানের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। আমার হাতে ধরা গড়গড়িয়া মাল-চাপানো গাড়ি, উপরের তলায় উঠে যে মুহূর্তে পা বাড়িয়েছি, অজ্ঞান হয়ে পতন, গাড়িটির হাত থেকে দূরে ছিটকে যাওয়া। আমার স্ত্রী কিংকর্তব্যবিমুঢ়। লোক জমলো, আমাকে বিমানবন্দরের প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে সূচ ফোঁড়ানো হলো, তারপর তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স করে শহরের হাসপাতালে। জরুরি অস্ত্রোপচার, তিন সপ্তাহ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাটানো, ভিয়েনা আর যাওয়া হলো না, খুরশীদকে দেখাও হলো না। যেদিন কেলেঙ্কারিটি ঘটলো, খবর পেয়ে মধু বিকেলের বিমানে ফ্রাঙ্কফুর্ট চলে এসে সমস্ত ব্যবস্থার দায়িত্ব গ্রহণ করলো, আমার স্ত্রী অকুলে কূল পেলেন। কয়েকদিন বাদে আমার অগ্রজ ও বউদিও এসে গেলেন কলকাতা থেকে।
প্রথম যৌবনে কার গদ্যকবিতায় যেন এই অমর পঙ্ক্তিটি পড়েছিলাম: ‘ভাল্লেগে না, ভাল্লেগে না, ভাল্লেগে না…’। পঙ্ক্তিটির সারমর্ম বুঝতে পারলাম ওই তিন সপ্তাহ হাসপাতালে পড়ে থেকে। তবে যত্নআত্তি-সেবার তুলনা ছিল না। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক টেলিফোন-টেলিগ্রাম-চিঠি, প্রবাসী ভারতীয়দের পক্ষ থেকে সর্বদা খোঁজখবর নেওয়া। এক পুরনো বন্ধু ও সহকর্মী জেনেভায় মস্ত উঁচু পদে তখন আসীন, দেশে ফিরে আরও সম্মাননীয়তর পদে বৃত হয়েছিলেন, খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, তিনিও একদিন জেনেভা থেকে এসে দেখে গিয়েছিলেন, খোঁজ নিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্যের প্রয়োজন কিনা। পৃথিবীটা এরকমই, কাছের মানুষ দুরে চলে যায়, কখনও-কখনও অবশ্য দূরের মানুষ কাছে আসে।
তবে রোগশয্যায় শায়িত অবস্থাতেও একটি মজাদার ঘটনা। হাসপাতালের বিছানায় আমাকে এলায়িত করা হয়েছে, নাড়ির স্পন্দন পঁচিশ থেকে শূন্যে নামছে, শূন্য থেকে পঁচিশে উঠছে। যখন শূন্যের দিকে অবতরণ করছে, একটি শান্ত, সমাহিত, পরম আরামদায়ক বেগুনি রঙের বিভা যেন চেতনা জুড়ে নামছে, আমার সুখ ধরে না! তবে ক্ষণিক সুখ, নাড়ি-স্পন্দন যেই শূন্য থেকে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে, শরীরময় অসহ্য যন্ত্রণার অনুভব। কষ্ট করে চোখ মেলে তাকিয়ে তার কারণ উপলব্ধি করার চেষ্টা করি: আমার শরীরের উপর ঝাঁপিয়ে চার-পাঁচজন চিকিৎসক-সেবিকা, অ্যাবাকাস গোছের একটা জিনিশ, তাতে সমান্তরাল কতিপয় সারণিতে ছোটো-ছোটো রবারের বল লাগানো, তা দিয়ে তাঁরা আমার বুকের উপর ধ্বস্তাধ্বস্তি-ডলাইমালাই করছেন, যন্ত্রণা সেই কারণে। পাশাপাশি অন্য এক বিচিত্র দৃশ্য। হাসপাতালটি আদিতে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা শুরু করা হয়েছিল, পরে সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরে হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু তখনও দোইয়ারকি, শাদা পোশাকের নানরাও আছেন,নীল উর্দি-পরা সেবক-সেবিকারাও। আমার শিয়রের পাশে এক প্রৌঢ়া যাজিকা উপবিষ্টা, বাইবেল খুলে বসে কানের কাছে অবিশ্রান্ত বলে চলেছেন: ‘তোমার শেষ ইচ্ছা উচ্চারণ করো, শেষ ইচ্ছা উচ্চারণ করো।’ ইহ ও পরলোকের এই যুদ্ধে আমি মধ্যবর্তী নিমিত্তমাত্র।
যা-ই হোক, সে যাত্রা টিকে গেলাম। কিন্তু বাইরের আকাশে তো ভয়ংকর ঘনঘটা। ইওরোপে থাকতেই টের পাচ্ছিলাম, পৃথিবী জুড়ে সাম্যবাদী আন্দোলন অভূতপূর্ব সংকটের মুখোমুখি। সোভিয়েট রাষ্ট্রে কয়েক বছর ধরে মিখাইল গোর্বাচভ হাল ধরে আছেন, খোলা হাওয়া ও আভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি জানিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু। প্রথম দিকে অনেকেরই ধোঁকা লাগছিল। বামপন্থীদের মধ্যেও একটি বড়ো অংশ ভেবে নিয়েছিলেন, ভালোই তো, কমিউনিস্ট চিন্তা ও প্রজ্ঞায়—মার্সই তো বলেছেন— কালিক দ্বান্দ্বিকতার বিবর্তন অত্যাবশক, সুতরাং গোর্বাচভ যা করতে চাইছেন তা থেকে শুভরই সম্ভাবনা। অচিরে ভুল ভাঙলো। প্যারিসে ফরাশি পার্টির অন্যতম সর্বোচ্চ নেতা, অর্থনৈতিক বিষয়ে দায়গ্রস্ত পলিট ব্যুরোর সদস্য, কমরেড অ্যার্জগের সঙ্গে একদিন অনেকক্ষণ আলাপ করেছিলাম। তাঁর সাক্ষাৎ অনুযোগ, শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সৌভ্রাত্রের আদর্শ থেকে সোভিয়েট পার্টি ক্রমশ সরে যাচ্ছে, গোর্বাচভের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান নিরস্ত্রীকরণ, সেই সঙ্গে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আপস করে চলা; পরিণামে ইওরোপে ও পৃথিবীর অন্যত্র সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কী হাল দাঁড়ায় তা নিয়ে তাঁর কোনও মাথাব্যথা নেই। সেরকম আশঙ্কাই অচিরে সত্য হলো। দু’বছরের মধ্যে স্বয়ং গোর্বাচভ সোভিয়েট পার্টিকেই অবৈধ ঘোষণা করলেন। যে ব্যক্তিবর্গ চিন্তায়-আচরণে কোনও দিনই কমিউনিস্ট ছিলেন না, অথচ পাকেচক্রে সোভিয়েট পার্টি দখল করে বসে ছিলেন, এবার তাঁরা স্বমূর্তি ধারণ করলেন। তাঁদের পেটোয়া মানুষজনই—রুমানিয়ার মতো একটি-দু’টি ব্যতিক্রম বাদ দিলে—পূর্ব ইওরোপের অন্যত্র সমস্ত তথাকথিত জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। সোভিয়েট ব্যবস্থার পতন, সঙ্গে-সঙ্গে, আশ্চর্য দ্রুততার সঙ্গে, গোটা পূর্ব ইওরোপেও ধনতন্ত্রের ধ্বজা, প্রায় অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে, নতুন করে উড়লো। কোথাও একটি কামান গর্জন করে উঠলো না, বোমারু বিমান আকাশ ছেয়ে হাজির হলো না, সৈন্যসামন্ত নিয়ে মার্কিনদের সর্বাত্মক আক্রমণে অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলো না পর্যন্ত, সত্তর বছর ধরে তিল-তিল করে গড়ে ওঠা সমাজতান্ত্রিক কাঠামো নিজে থেকেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো। সাম্যবাদ-বিরোধীরা বিজয় গর্বে স্ফীত হলেন, রঙ্গ করে পরস্পরকে ধাঁধা শুধোলন, ধনতন্ত্র থেকে ফের ধনতন্ত্রে পৌঁছুতে খাশা সত্তর বছরের সমাজতান্ত্রিক শর্ট-কাট।
যা চলিত অভিমত, ওসব দেশে সাধারণ মানুষ সাম্যবাদী ব্যবস্থা সম্পর্কে ক্রমশ তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছিলেন, এতদিন বাদে তারই প্রতিফলন ঘটলো: মানুষকে নাকি কিছুদিনের জন্য প্রতারণা করা যায়, কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়বেই, সোভিয়েট দেশে-পূর্ব ইওরোপে নড়লোও। অন্য যে-জোরালো মন্তব্য প্রচারের জায়গা জুড়ে রইলো, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আর্থিক পরিকল্পনার কাঠামোতে প্রচুর গলদ, যার ফলে মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে ব্যবধান একটু-একটু করে দুস্তর হয়ে উঠেছিল; এই আর্থিক অব্যবস্থাও সমাজতন্ত্রের ঘোর সর্বনাশের জন্য দায়ী।
ধনতন্ত্রের উল্লসিত প্রবক্তারা এমনধারা বলেন, সুবিধাবাদী কেউ-কেউ, যাঁরা একদা সাম্যবাদী শিবিরে ছিলেন, এখন যখন-যেমন-তখন-তেমন দর্শন-চিন্তায় ভেসে গিয়ে পুঁজিবাদীদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন, তাঁদেরও অনুরূপ অভিমত। সবিনয়ে বলি, তাঁদের যুক্তি তেমন তথ্যনির্ভর নয়। অর্থনীতিবিদরা পরিকল্পনার ছক কাটেন, উৎপাদিতব্য পণ্যাদির অগ্রাধিকার স্থির করেন, কিন্তু করেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে, সেই নির্দেশ তাঁরা অমান্য করতে পারেন না, কোনও দেশেই পারেন না, সোভিয়েট-প্রতিম দেশে তো নয়ই। বিপ্লব-পূর্ব পর্বে লেনিন যে-গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতানীতিনির্ভর সংগঠন তৈরি করে গিয়েছিলেন, এক বিশেষ পর্যায়ে সোভিয়েট রাষ্ট্রে তা এলোমেলো হয়ে আসে। এই নীতির মূল ভিত্তি পার্টির অভ্যন্তরে তর্ক-আলোচনা-মীমাংসা প্রক্রিয়ার উভয়মুখিতা: নিম্নতম স্তর থেকে ধাপে-ধাপে মতামত-প্রস্তাব ইত্যাদি সংশোধিত ও পরিশোধিত হতে-হতে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছুবে, সেখানে পুনর্বিবেচিত হয়ে ফের ধাপে-ধাপে একেবারে সর্বনিম্ন স্তরে অবরোহণ। চিন্তা-ভাবনার এ রকম ধোলাই-বাছাই কয়েক দফা হওয়ার পর পার্টি পাকা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে; সিদ্ধান্ত একবার গৃহীত হলে সর্ব স্তরে তা মানতে হবে, মানতেই হবে। অথচ, বিশেষ করে ষাটের দশকের শুরুতে এসে, সোভিয়েত দেশে যে-পরিস্থিতি দাঁড়ালো, নেতারা উপরে বসে সিদ্ধান্ত নেন, এবং তা গোটা পার্টির উপর চাপিয়ে দেন। এই ব্যবস্থাকে আর যা-ই হোক গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা নীতির প্রতিফলন কিছুতেই বলা চলে না, বলতে হয় ওই নীতির বিকৃতি। পরিকল্পনাবিদদের তাই কিছু করবার ছিল না। নেতৃত্বের মহলে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে তা-ই সর্বস্তরে সবাইকে মেনে নেওয়া নিয়ম হয়ে দাঁড়ালো। সাধারণ মানুষ কী ইচ্ছা-অনিচ্ছা ব্যক্ত করছেন, কী তাঁদের অভিযোগ-অভাব-আশা-আকাঙ্ক্ষা, তার খবর উপরের স্তরে যেহেতু পৌঁছুতো না, পার্টি নেতৃসর্বস্বতায় পর্যবসিত হলো! সব মিলিয়ে বলা চলে, সাম্যবাদী কাঠামোর ভণিতায় এমনকি প্রায় সামন্ততন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। অবশ্য দেশে-দেশে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের জন্য উপগ্রহবাহিত টেলিভিশনের মোহিনী মায়াও কম কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না। সাম্যবাদী মানুষ তৈরি করবার অঙ্গীকার সোভিয়েট রাষ্ট্র ও পূর্ব ইওরোপের অন্য দেশগুলিতে অসম্পূর্ণ থেকে গেছে, সুতরাং, যা হবার তাই হয়েছে, জড়োয়া গয়না গায়ে ভ্রান্তির গণিকা সহজেই জনগণকে রঙিন গলিতে টেনে নিয়ে যেতে পেরেছে।
আপাতত সাম্যবাদ-বিরোধীদের আনন্দ উপচে পড়ছে, তাঁরা ধরেই নিচ্ছেন যেহেতু সোভিয়েট ব্যবস্থার পতন ঘটেছে, পূর্ব ইওরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রেও সমাজতান্ত্রিক শপথ ধূল্যবলুণ্ঠিত, এখন থেকে তা হলে খোদ মার্কসবাদ-ই অচল। এ ধরনের আপাতজ্ঞানগর্ভ মন্তব্য, ফের নিবেদন করি, অনেকাংশেই যুক্তিরহিত। একটি বিশেষ প্রশাসনিক পরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার অর্থ এই নয় যে সেই পরীক্ষার আকর যে দর্শনচিন্তা থেকে উৎসারিত, তা-ও সমান মূল্যহীন। মার্কসবাদ এক সঙ্গে ইতিহাস, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, অর্থশাস্ত্র, নৃতত্ব প্রভৃতির সমাহার। যতদিন পৃথিবীতে শোষণ অব্যাহত থাকবে, শ্রেণীবিভাজন থাকবে, ততদিন ইতিহাসের জড়বাদী বিশ্লেষণ অপাঙ্ক্তেয় হবার নয়। মানতেই হয়, ভুবনজোড়া সাম্যবাদী আন্দোলন বিংশ শতকের শেষ পর্যায়ে মস্ত ঘা খেয়েছে। পরিণামে পূর্ব ইওরোপের জনসাধারণের যে-ক্ষতি হয়েছে, তার সমপরিমাণ কিংবা তারও বেশি অনিষ্ট ঘটেছে পৃথিবীর অন্য সর্বত্র সাম্যবাদী আন্দোলনের। যে-স্বপ্নকে সত্তর-আশি বছর আগে মাটির পৃথিবীতে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল, তা ধূমকেতুর মতো মিলিয়ে গেল, একটি মহৎ প্রেরণার সাময়িক অপমৃত্যু ঘটলো; অনেকের কাছেই, অস্তিত্বের ধ্রুবতারা খসে পড়লো যেন। আমাদের দেশ থেকে বেশ কয়েক হাজার মাইল দূরে রাশিয়া-পূর্ব ইওরোপের অবস্থান, সেখানকার দুর্বিপাকের হ্যাপা ভারতবর্ষের বামপন্থীদেরও সামলাতে হচ্ছে। তাঁদের অনেকেরই প্রোথিত বিশ্বাসের গোড়ায় যেন কুঠারাঘাত। এমন হওয়া উচিত ছিল না, আদর্শের প্রতি আস্থা চরম সংকটেও বিচলিত হতে না দেওয়াই তো সাম্যবাদীদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত। অথচ বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে খুব খারাপ লেগেছিল, যখন দেখলাম, জর্মানি থেকে এক দল ঘোর প্রতিক্রিয়াশীল সাংসদ কলকাতায় বেড়াতে এসে খোদ বামফ্রন্ট মন্ত্রীদের বেৰ্লিন দেওয়ালের গুঁড়ো-গুঁড়ো-হয়ে-যাওয়া টুকরো উপহার গিয়ে গেলেন, মন্ত্রীরা তা, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, নিঃশব্দে গ্রহণ করলেন।
বাইরে ডামাডোল, বামপন্থী মহলে আদর্শঘটিত সংকট। দেশে ফিরে টের পেলাম তা-ও ছাপিয়ে সমসাময়িক আভ্যন্তরীণ নানা ঘটনাবলী। কিছু-কিছু কানাঘুঁষো অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল: কেন্দ্রীয় সরকারে দুর্নীতি পরিব্যাপ্ততর। হঠাৎ বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে উত্তেজনার পর্দা চড়লো৷ বফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশ জুড়ে আলোড়ন, রাজীব গান্ধির দ্রুত জনপ্রিয়তা হারানো। রাষ্ট্রপতি জৈল সিংহের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের অনেক গল্পও বাজারে চালু। বেপরোয়া গতিতে মূল্যমান বৃদ্ধি, প্রধান মন্ত্রী ও তাঁর বড়োলোক-সমাচ্ছন্ন মন্ত্রিসভার উৎসাহে ঢালাও শৌখিন জিনিশপত্র আমদানির প্রকোপে বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডার দ্রুত হ্রাসপ্রাপ্ত। ঊননব্বুই সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজীব গান্ধি ও কংগ্রেস দলের পরাজয়, বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের নায়কত্বে জনতা দলের নতুন সরকার। বিশ্বনাথপ্রতাপ নিপাট ভালো মানুষ, জনতা দলের বিদ্ঘুটে অন্তর্কলহ সামলানোর সাধ্য তাঁর ছিল না। অন্তত পাঁচ-ছ’জন খলনায়ক লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে প্রধান মন্ত্রীর আসনের দিকে প্রথম থেকেই তাকিয়ে। ঘোষিত নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও মন্ত্রিসভার কেমন যেন নড়বড়ে আচরণ। নতুন অর্থমন্ত্রী মধু দণ্ডবতে চমৎকার মানুষ, কিন্তু নিজের মন্ত্রক চালাতে গিয়ে অথৈ জলে, ধড়িবাজ মার্কিন-ভক্ত আমলারা তাঁকে সমানে ল্যাজে খেলিয়ে গেলেন। বাইরে থেকে বামপন্থীরা যতই সমর্থন দিন না কেন, যা টুকরো-টুকরো হয়ে যাওয়ার তা টুকরো-টুকরো হবেই।
জনতা মন্ত্রিসভার এই স্বল্পায়ু মরশুমের একটি কৌতুক-উদ্রেককারী গল্প, যা জ্যোতিবাবুর মুখ থেকেই শুনেছিলাম। কংগ্রেস-বশংবদ রাজ্যপালদের পরিবর্তে বিভিন্ন রাজ্যে ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ ব্যক্তিদের বসাতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ইচ্ছা। বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ নাকি জ্যোতিবাবুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, অশোক মিত্রকে রাজ্যপাল নিয়োগ করলে কেমন হয়। লোমহর্ষক প্রস্তাব, যে-রাজ্যপাল পদ বিলোপের জন্য চেঁচিয়ে পাড়া মাত করছি, তাতে আসন গ্রহণ করার আহ্বান। জ্যোতিবাবু অবশ্য অতি চমৎকার উত্তর দিয়েছিলেন বিশ্বনাথপ্রতাপকে: ‘অশোক মিত্রকে আপনি কতটা চেনেন যে ওঁকে রাজ্যপাল করতে চান? অতিথি-অভ্যাগতরা দেখা করতে এলে এক পেয়ালা চা খাওয়াবার আগেই উনি তাঁদের তাড়িয়ে দেবেন।’ গল্পটি বাড়ির ভদ্রমহিলাকে বলায় তাঁর তেমন পছন্দ হলো না: আমি অবশ্যই পর্যাপ্ত রকম অভদ্র, কিন্তু চা না খাইয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার মতো অভদ্র নাকি নই।
মণ্ডল কমিশনের প্রতিবেদন পেশ, জাত-পাত নিয়ে ঘনায়মান বিসংবাদ, ভারতীয় জনতা দলের সমর্থন তুলে নেওয়া, বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের পদত্যাগ। এগারো বছর আগে সংঘটিত চরণ সিংহ নাটকের পুনরভিনয়, কুশীলব শুধু আলাদা। একদা মস্ত তরুণ তুর্কি, চন্দ্রশেখর, পনেরো-কুড়ি জন লোকসভা সদস্য বগলদাবা করে রাজীব গান্ধির সমর্থনে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলেন, রাজীবজননীর হাতে তিনি কত হেনস্থা হয়েছিলেন তা বেমালুম ভুলে গিয়ে: সুযোগ-সন্ধানীদের সম্ভবত বিস্মরণবিশারদ না হয়ে উপায় থাকে না। কংগ্রেসের সমর্থনে মাস তিন-চার চন্দ্রশেখর গদি জাঁকিয়ে রইলেন। অতঃপর ঊনআশি সালের কাহিনীর পুনরাবৃত্তি, কংগ্রেস দল হাস্যকর ওজর দেখিয়ে চন্দ্রশেখর মন্ত্রিসভার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল, ফের লোকসভা নির্বাচন। জ্যোতিবাবু স্থির করলেন একই সঙ্গে পশ্চিম বাংলার বিধানসভা নির্বাচনও সেরে ফেলবেন: যদিও আরও বেশ কয়েক মাস মেয়াদ শেষ হবার বাকি বিধানসভা ও রাজ্য মন্ত্রিসভা উভয়েরই, তা হোক, অর্থব্যয় ও কায়িক পরিশ্রম দুই-ই খানিকটা বাঁচবে।
আমি ঘোর সংকটের সম্মুখীন। পার্টি নেতৃত্ব থেকে বলা হলো, যদি বিধানসভার নির্বাচনে ফের দাঁড়াতে সম্মত হই, তাঁদের অনেক সমস্যার নিরসন হয়, আমার জন্য তাঁরা একটি নিরাপদ আসনও নাকি স্থির করে রেখেছেন। সবিনয়ে অসম্মতি জানালাম, মন্ত্রিসভায় গেলে হয়তো আমাকে আবার অর্থ দফতরের দায়িত্ব নিতে বলা হবে। পরিষ্কার জানালাম, যিনি সেই মুহূর্তে দায়িত্বে আছেন তিনি বরবাদ হবেন আর আমি তাঁর জায়গায় মন্ত্রী হবো, তা আমার ব্যাকরণে একেবারেই গ্রাহ্য নয়, পার্টির সমস্যা আমি হৃদয়ঙ্গম করতে পারছি, তা সত্ত্বেও।
বুঝতে পারছিলাম, দলের নেতৃত্ব একটু দুঃখিত হলেন, কারও-কারও মন্তব্যে ঈষৎ অভিমানের আবেশও। মাথায় হঠাৎ বুদ্ধি খেলে গেল। তাঁদের বললাম, আপনাদের তো চৌরঙ্গি কেন্দ্রে সিদ্ধার্থ রায়ের বিরুদ্ধে একজনকে বলির পাঁঠা হিশেবে দাঁড় করাতে হবে, আমি সেই বলির পাঁঠা হতে সানন্দে রাজি। নেতৃবৃন্দ একটু ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন, আমি ঠাট্টা করছি না কি গুরুত্বের সঙ্গেই প্রস্তাবটি উত্থাপন করছি, বুঝতে তাঁদের সামান্য সময় লাগলো। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই তাঁরা নিঃসংশয় হলেন, খুশিও হলেন সেই সঙ্গে। বিশেষ করে জ্যোতিবাবুর মহা উৎসাহ, বরাবরই কম কথার মানুষ, আমাকে একান্তে শুধু বললেন: ‘ওয়ান্ডারফুল’। উনি খুব সম্ভব বিশ্বাসও করেছিলেন, সিদ্ধার্থ রায়কে হারিয়ে দিতে পারবো। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হলো একানব্বুই সালের সেই নির্বাচন, কারণ দেখান হলো প্রশাসনিক জনবল তথা পুলিশ বাহিনীর অভাব। দুই পর্বের মধ্যবর্তী সময়ে রাজীব গান্ধি, তাঁর মায়ের মতোই, নৃশংসভাবে নিহত হলেন, তামিলনাড়ুতে নির্বাচন প্রচারে গিয়ে। নির্বাচনের সার্বিক ফলাফলে সেই হত্যার প্রতিফলন: প্রথম কিস্তির নির্বাচনে কংগ্রেস দলের ফল গোটা দেশেই যথেষ্ট খারাপ, কিন্তু দ্বিতীয় দফায় সেই পরিমাণ ভালো, পুনর্বার তথাকথিত সমবেদনা-ভোট। যদিও লোকসভায় ঠিক সংখ্যাধিক্য নেই, কংগ্রেস তা হলেও সর্ববৃহৎ দল, দলনেতা নরসিংহ রাও প্রধান মন্ত্রী হিশেবে শপথ গ্রহণ করলেন।
পশ্চিম বাংলায় বামফ্রন্ট হেসে খেলে জিতল, তবে সিদ্ধার্থ রায়ের কাছে আমি সম্যকরূপে পর্যদস্ত, কলকাতা শহর জুড়েই বামফ্রন্টের ফল খুব খারাপ। এই পরাজয়ের হেতু পরে বিশ্লেষণ করে দেখেছি। আমার প্রাথমিক হিশেব ছিল, যেহেতু আগের বছর কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে চৌরঙ্গি কেন্দ্রের আওতাভুক্ত সব ক’টি ওয়ার্ডের ফল যোগ করলে বামফ্রন্ট সাকুল্যে কংগ্রেসের চেয়ে খানিকটা এগিয়ে, যদিও অবধারিত হারবো, সিদ্ধার্থ রায়ের সঙ্গে লড়াইটা তবু তেমন খারাপ জমবে না। সেই হিশেব অবশ্যই খাটেনি, খাটেনি তার কারণ বেশ কয়েকটি। সবচেয়ে আগে যে-কথা বলা প্রয়োজন, দলের যুব সংগঠনের এক উঠতি নেতা কর্তৃক নব্বুই সালের অগস্ট মাসে পোটোপাড়ার মহিলাটিকে প্রহারকর্মের বহুব্যাপী বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমরা পুরোপুরি ভুলেইছিলাম; অন্তর্বর্তী সময়ে অন্য কোনও ভোট হয়নি, তাই ওই কুৎসিত ঘটনায় কলকাতার, বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতার, জনসাধারণ পার্টির উপর কতটা বিরক্ত, তা অনুমান করার কোনও সুযোগ পূর্বে ঘটেনি। অবশ্য পুরো ঘটনাটি এখন সাজানো সন্দেহ হয়। অপরাধী সেই যুবকৰ্মীটিকে দল থেকে তৎক্ষণাৎ তাড়িয়ে দেওয়া হয়, কিছুদিন বাদে সে ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা উক্ত মহিলার বিশ্বস্ততম অনুচররূপে নিজেদের জাহির করতে শুরু করে। আরও ধোঁকা লেগেছিল, বিশ্রী ব্যাপারটি ঘটবার মুহূর্তে কী করে এক নামজাদা দৈনিক পত্রিকার চিত্রগ্রাহক অকুস্থলে উপস্থিত ছিলেন, এবং ঝটপট অগুন্তি ছবি তুলে নিয়ে পরের দিন কাগজে ছাপিয়ে ছয়লাপ করে দিতে পেরেছিলেন, তা নিয়েও।
কিন্তু তাতে কী? যা ঘটলো তা তো কতগুলি জিনিশ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল: পার্টির কোনও-কোনও স্তরে কদর্যতা প্রবেশ করেছে, ঝাঁকে-ঝাঁকে সমাজবিরোধীও। কিছু-কিছু সংবাদপত্রে যে-বঙ্কিম কটাক্ষ করা হচ্ছিল— পূর্ববর্তী বছরে পুরসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের জয় বহুলাংশে পেশীবলনির্ভর— তা-ও অন্তত আংশিক সত্য না মেনে উপায় রইলো না। একানব্বুই সালের নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতার মানুষ, রাগ পুষে ছিলেন, ঝেঁটিয়ে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ভোট দিলেন; আমরা যে যেখানে যত প্রার্থী ছিলাম, সবাই হারলাম, জনগণ পার্টিকে শিক্ষা দিল।
নির্বাচনদ্বন্দ্বে আমার একটি বিশেষ অসুবিধার কথা কিন্তু উল্লেখ করতে হয়। সিদ্ধার্থ রায় সদ্য পঞ্জাবের রাজ্যপাল পদ ছেড়ে এসেছেন, তাঁকে পরিবৃত করে জেড পর্যায়ের দেহরক্ষী বাহিনী, লাল আলো-জ্বলা ভেঁপুর শীৎকারে আকাশবিদীর্ণ-করা গাড়ির পরে গাড়ির শোভাযাত্রা; অন্য দিকে আমি গো-বেচারা, ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত, চটিতে-পা-ঢুকোনো এলেবেলে ব্যক্তি। যে-রোমান্টিক ধারণা ঈষৎ মনে পোষা ছিল, সত্তর থেকে সাতাত্তর সালের মধ্যবর্তী সময়ের অকথ্য অত্যাচারের স্মৃতিতে দহিত হয়ে, মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় গোটা ভবানীপুরে সিদ্ধার্থ রায়ের বিরুদ্ধে ভোটের বাক্সে এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদ জানাবেন, তা-ও আদৌ যথার্থ ছিল না। অতীত দিনের স্মৃতি কেউ ভোলে না, কেউ ভোলে, এই সান্ত্বনাবাক্য ভুলে যাওয়া ভালো, প্রায় সবাই ভুলে যায় কয়েক বছরের মধ্যে।