ঋগ্বেদ ১০।১৩০

ঋগ্বেদ ১০।১৩০
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১৩০
প্রজাপতি দেবতা। যজ্ঞ ঋষি।

১। যজ্ঞস্বরূপ বস্ত্র চতুর্দিকে সূত্র বিস্তারের দ্বারা বয়নকরা হইয়াছে, দেবতা দিগের উদ্দেশে একশত, অর্থাৎ বহুসংখ্য অনুষ্ঠানের দ্বারা উহার বিস্তার সংঘটন হইয়াছে, যজ্ঞে যে পিতৃলোকগণ আসিয়াছেন, তাঁহারা বয়ন করিতেছেন। দীর্ঘতার দিকে বয়ন কর, বিস্তারের দিকে বয়ন কর, এই বাক্য উচ্চারণ করিতে করিতে তাহার এই বস্ত্র বয়নকার্য নির্বাহ করিতেছেন।

২। এক ব্যক্তি সেই বস্তুকে দীর্ঘীকৃত করিতেছে, অপর এক ব্যক্তি বিস্তারের জন্য প্রসারিত করিতেছে। ইহা ঐ স্বর্গ পৰ্য্যন্ত বিস্তারিত হইতেছে। ঐ সকল তেজঃপুঞ্জ দেবতা যজ্ঞগৃহে বসিয়াছেন। এই বস্ত্রবয়নব্যাপারে সামগুলিকে তসর অর্থাৎ পড়েন রূপে কল্পনা করা হইয়াছে(১)।

৩। যৎকালে তাবৎ দেবতা দেবপূজা করিলেন, তখন তাহাদিগের অনুষ্ঠিত যজ্ঞের পরিমাণ কি ছিল? দেব মূর্তিই বা কি ছিল? সংকল্প কি ছিল? ঘৃত ছিল কি? পরিধি অর্থাৎ যজ্ঞস্থানের চতুর্দিকের বৃত্তি স্বরূপ সীমা বন্ধনই বা কি হইয়াছিল? ছন্দ প্রয়োগ বা উকথ কি ছিল?

৪। গায়ত্রী নামক ছন্দ অগ্নির সহযোগিনী হইলেন। দেব সবিতা উষ্ণিক নামক ছন্দের সহিত মিলিত হইলেন। সোম অনুষ্ঠুভ, ছন্দের সহিত ও তেজোমূর্তি সূৰ্য্য উকথ ছন্দের সহিত মিলিত হইলেন। আর বৃহতী নামক ছন্দ বৃহস্পতির বাক্যকে আশ্রয় করিল।

৫। বিরাট নামক ছন্দ মিত্র ও বরুণ দেবকে আশ্রয় করিল। ত্রিষ্টুভ ছন্দ ইন্দ্রের ভাগে পড়িল এবং দিবা ভাগের যে সোম, তাহাও তাহার ভাগে পড়িল। জগতী নামক ছন্দ তাবৎ দেবতাকে আশ্রয় করিল(২)। এই রূপে ঋষিও মনুষ্যগণ যজ্ঞ সম্পাদন করিলেন।

৬। পুরাকালে যজ্ঞ উৎপন্ন হইলে পর, আমাদিগের পূর্বপুরুষ ঋষি ও মনুষ্যগণ উক্ত নিয়মে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করিলেন। প্রাচীন কালে যাহারা এই যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিলেন, আমার বোধ হইতেছে যেন আমি মনের চক্ষে তাহাদিগকে দেখিতে পাইতেছি।

৭। সাত জন দিব্য ঋষি স্তবসমুহ ও ছন্দ সংগ্রহপূর্বক পুনঃ পুনঃ অনুষ্ঠান করিলেন, যজ্ঞের পরিমাণ স্থির করিলেন। যেরূপ সারথিরা ঘোটকের রশ্মি হস্তে ধারণ করে, তদ্রুপ সেই বিদ্বান ঋষিগণ পূর্বপুরুষদিগের প্রথার প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া তদনুযায়ি যজ্ঞানুষ্ঠান সম্পন্ন করিলেন।

————

(১) এই দুইটী ঋকে যজ্ঞকে বস্ত্রের সহিত এবং মন্ত্রগুলিকে টানা ও পড়েনের সহিত তুলনা করা হইয়াছে। পিতৃলোকগণ যজ্ঞে উপস্থিত আছেন, তাহার উল্লেখ পাওয়া যায়।

(২) এই সুক্তটাও অপেক্ষাকৃত আধুনিক। এখানে আটটা ছন্দের নাম পাওয়া গেল, একটি একটি ছন্দকে এক এক দেবের সহিত মিলাইয়া দেওয়া কবির কল্পনা।