ঋগ্বেদ ১০।১১১

ঋগ্বেদ ১০।১১১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১১১
ইন্দ্র দেবতা। অষ্টাদংষ্ট্র ঋষি।

১। হে বিপ্রগণ! মনুষ্যদিগের যেমন যেমন বুদ্ধির উদয় হয়, তদনুরূপ স্তব পাঠ কর। সৎকর্ম অনুষ্ঠানপূর্বক ইন্দ্রকে আনয়ন করা যাউক। কারণ সেই বীর ইন্দ্ৰ স্তব জানিতে পারিলে স্তবকারীদিগকে স্নেহ করেন।

২। জলের আধার যিনি ধারণ করেন, তিনি জাজ্বল্যমান হইলেন। অল্পবয়স্ক গাভীর গর্ভজাত বৃষ যেন গাভীদিগের সহিত মিলিত হয়, তদ্রুপ ইন্দ্র সর্বব্যাপী হইলেন। বিলক্ষণ কোলাহলের সহিত তিনি উদয়হইলেন। বৃহৎ বৃহং জলরাশি তিনি সৃষ্টি করিলেন।

৩। ইন্দ্রই কেবল এই স্তব শুনিতে জানেন, তিনি জয়শীল, তিনি সুর্য্যের পথ নির্মাণ করিয়া দিয়াছেন। অবিচলিত ইন্দ্র সেনাকে আবির্ভূত করিলেন। তিনি গাভীর স্বত্বাধিকারী ও স্বর্গের প্রভু হইলেন। তিনি চিরস্থায়ী, তাঁহার বিপক্ষে কেহ গমন করিতে পারে না।

৪। অঙ্গিরার সন্তানেরা যখন স্তব করিলেন, তখন ইন্দ্র নিজ মহিমাদ্বারা প্রকান্ড সমুদ্রের অর্থাৎ মেঘের কাৰ্য সকল নষ্ট করিলেন। তিনি প্রচুর পরিমাণ জল সৃষ্টি করিলেন, তিনি সত্যস্বরূপ দ্যুলোকে বলধারণ করিলেন।

৫। ইন্দ্র এক দিকে, আর পৃথিবী ও আকাশ এক দিকে, অর্থাৎ তিনি একাকী হইয়া সমবেত ঐ উভয়ের তুল্য। তিনি সকল সোমযাগের সংবাদ রাখেন, তাপ নষ্ট করেন। তিনি সূৰ্য্যদ্বারা প্রকাণ্ড আকাশকে সজ্জিত করিয়া ছেন, তিনি ধারণ করতে পটু, তিনি যেন স্তম্ভের দ্বারা আকাশকে উন্নত করিয়া রাখিয়াছেন।

৬। হে ইন্দ্র! তুমি বৃত্রনিধনকারী, বজ্রদ্বারা বৃত্রকে বধ করিয়াছ, দেববিরোধী সেই বৃত্ৰ যখন বৃদ্ধি পাইতেছিল, তখন দুর্ধর্ষ তুমি বজ্রদ্বারা তাহার সকল মায়া নষ্ট করিলে। হে ধনশালী! তৎপরে তুমি বাহুবলে বলী হইলে।

৭। যখন উষাদেবীগণ সুর্যের সহিত মিলিত হইলেন, তখন সূর্যের রশ্মিগুলি নানা বর্ণের শোভা ধারণ করিল। পরে যখন আকাশের নক্ষত্র সৃষ্টি হইল, তখন কেহই আর গমনকারী সূর্যের কিছুই দেখিতে পাইল না।

৮। ইন্দ্রের আজ্ঞায় যে সকল জল চলিত হইল, সেই সৰ্ব্ব প্রথম জলগুলি অতি দূরে গিয়াছিল, সেই জলদিগের অগ্রভাগই বা কোথায়? মন্তকই বা কোথায়? হে জলগণ! তোমাদিগের মধ্যস্থান, বা চরম সীমা কোথায়?।

৯। হে ইন্দ্র! বৃত্র যখন জলদিগকে গ্রাস করিতেছিল, তুমি তাহাদিগকে মোচন করিয়া দিলে। তখনই জলগুলি সর্বত্র বেগে ধাবিত হইল। ইন্দ্র ইচ্ছাপূর্বক যখন জল মোচন করিয়া দিলেন, তখন সেই পরিশুদ্ধ জল সকল আর স্থির থাকিতে পারিল না।

১০। জলগণ যেন কামাতুর হইয়া একত্র মিলনপূর্বক সমুদ্রে চলিল, শত্রুপুরধবংসকারী এবং শত্ৰুজৰ্জরকারী ইন্দ্র চিরকালই এই সকল জলের প্রভু হইয়া আছেন। হে ইন্দ্র! আমাদিগের পৃথিবীস্থিত নানা যজ্ঞসামগ্রী এবং চিরাভ্যন্ত নানা প্রীতিকর স্তব তোমার নিকটে গমন করুক।