ঋগ্বেদ ১০।১২১

ঋগ্বেদ ১০।১২১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১২১
“ক” এই নামধারী প্রজাপতি দেবতা। হিরিণ্যগর্ভ ঋষি(১)।

১। সর্ব প্রথমে কেবল হিরণ্যগর্ভই বিদ্যমান ছিলেন। তিনি জাত মাত্ৰই সৰ্ব্বভূতের অদ্বিতীয় অধীশ্বর হইলেন। তিনি এই পৃথিবী ও আকাশকে স্বস্থানে স্থাপিত করিলেন। কোন্ দেবতাকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

২। যিনি জীবাত্মা দিয়াছেন, বল দিয়াছেন, যাহার আজ্ঞা সকল দেবতারা মান্য করে, যাহার ছায়া অমৃতস্বরূপ, মৃত্যু যাহার বশতাপন্ন। কোন্ দেবতাকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

৩। যিনি নিজ মহিমাদ্বারা যাবতীয় দর্শনেন্দ্রিয়সম্পন্ন গতিশক্তিযুক্ত জীবদিগের অদ্বিতীয় রাজা হইয়াছেন, যিনি এই সকল দ্বিপদ চতুষ্পদের প্রভু। কোন্ দেবতাকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

৪। যাহার মহিমাদ্বারা এই সকল হিমাচ্ছন্ন পৰ্বত উৎপন্ন হইয়াছে(২), সসাগরা ধরা যাহারই সৃষ্টি বলিয়া উল্লিখিত হয়, এই সকল দিক বিদিক যাহার বাহুস্বরূপ। কোন্ দেবতাকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

৫। এই সমুন্নত আকাশ ও এই পৃথিবীকে যিনি স্বস্থানে দৃঢ়রূপে স্থাপন করিয়াছেন, যিনি স্বর্গলোক ও নাগলোককে স্তম্ভিত করিয়া রাখিয়াছেন, যিনি অন্তরিক্ষলোক পরিমাণ করিয়াছেন। কোন্ দেবকে হব্যদ্বারা পূজা করব?

৬। দ্যাবাপৃথিবী সশব্দে যাহাকর্তৃক স্তম্ভিত ও উল্লাসিত হইয়াছিল, এবং সেই দীপ্তিশীল দ্যাবাপৃথিবী যাহাকে মনে মনে মহিমান্বিত বলিয়া বুঝিতে পারিল, যাঁহাকে আশ্রয় করিয়া সূৰ্য্য উদয় ও দীপ্তিমুক্ত হয়েন! কোন্ দেবকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

৭। ভূরি পরিমাণ জল সমস্ত বিশ্বভুবন আচ্ছন্ন করিয়াছিল, তাহারা গর্ভ ধারণপূর্বক অগ্নিকে উৎপন্ন করিল; তাহা হইতে, দেবতাদিগের এক মাত্রপ্রাণস্বরূপ যিনি, তিনি আবির্ভূত হইলেন। কোন্ দেবতাকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

৮। যখন জলগণ বল ধারণপূর্বক অগ্নিকে উৎপন্ন করিল, তখন যিনি নিজ মহিমাদ্বারা সেই জলের উপরে সর্বভাগে নিরীক্ষণ করিয়াছিলেন, যিনি দেবতাদিগের উপরে অদ্বিতীয় দেবতা হইলেন। কোন্ দেবকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

৯। যিনি পৃথিবীর জন্মদাতা, যাঁহার ধারণক্ষমতা যথার্থ, অর্থাৎ অপ্রতি হত, যিনি আকাশকে জন্ম দিলেন, যিনি আনন্দবর্ধনকারী ভূরি পরিমাণ জল সৃষ্টি করিয়াছেন তিনি যেন আমাদিগকে হিংসা না করেন। কোন্ দেবকে হব্যদ্বারা পূজা করিব?

১০। হে প্রজাপতি! তুমি ব্যতীত অন্য আর কেহ এই সমস্ত উৎপন্ন বস্তুকে আয়ত্ত করিয়া রাখিতে পারে নাই। যে কামনাতে আমরা তোমার হোম করিতেছি, তাহা যেন আমাদিগের সিদ্ধ হয়, আমরা যেন ধনের অধিপতি হই।

————

(১) এই “ক” অক্ষরটা প্রকৃতপক্ষে প্রজাপতির নাম নহে। কোন দেবকে (কস্মৈ দেবায় ) পুজা দিতে হইবে, তাহাই ঋগ্বেদের ঋষি জিজ্ঞাসা করিয়াছেন এবং যতদূর পারিয়াছেন তাহার উত্তর দিতে চেষ্টা করিয়াছেন। ঋগ্বেদের অনেক পরের সময়ের উপাসকগণ এই “ক” অক্ষয়টাকেই দেব বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন। ঋগ্বেদের অনেক সরল বাক্যের এইরূপ বিকৃত অর্থ করিয়া বেদের ব্রাহ্মণ, প্রভৃতি পুস্তকগুলি পূর্ণ করা হইয়াছে। (See preface to Max Muller’s edition of the Rig Veda Sanhita 1856), vol. III, part VIII.) এই ১২১ সূক্তটীতে প্রজাপতি সা হিরণ্যগর্ভ নামে এক সৃষ্টিকর্তার অনুভব প্রকাশিত হইতেছে। এ সূক্তটা অপেক্ষাকৃতত আধুনিক।

(২) মূলে “হিমবস্তুঃ” আছে।–- “Snowy Mountains.”—Max Muller.

(৩) মূলে “স্বঃ” এবং “নাম” এই শব্দ আছে। “He through whom the heaven was established,-say, the highest heaven.”—Max Muller.