ঋগ্বেদ ১০।১১৩

ঋগ্বেদ ১০।১১৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১১৩
ইন্দ্র দেবতা। প্রভেদন ঋষি।

১। আর আর দেবতাদিগের সহিত দ্যাবাপৃথিবী মনোযোগী হইয়া ইন্দ্রের বল রক্ষা করুন। যখন তিনি বীরত্ব করিতে করিতে আপনার উপযুক্ত মহিমা প্রাপ্ত হইলেন, তখন সোমপানপূর্বক নানা কাৰ্য্য সম্পাদন করিয়া বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইলেন।

২। বিষ্ণু মধুযুক্ত লতাখণ্ড অর্থাৎ সোমলতা প্রেরণপূর্বক ইন্দ্রের সেই মহিমা উৎসাহের সহিত ঘোষণা করেন। ধনশালী ইন্দ্র সহযায়ী দেবতাদিগের সহিত একত্র হইয়া বৃত্রকে নিধনপূর্বক সর্বশ্রেষ্ঠ হইলেন।

৩। হে উগ্রতেজা ইন্দ্র! যখন তুমি স্তবের বাসনাতে অস্ত্রশস্ত্র ধারণপুর্বক দুর্ধর্ষ বৃত্রের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য অগ্রসর হইলে, তখন সমস্ত মরুতগণ তোমার মহিমা বাড়াইয়া দিলেন, নিজেও তাহারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইলেন।

৪। ইন্দ্র জন্মমাত্র শত্রু দমন করিয়াছিলেন। তিনি যুদ্ধের অভিসন্ধি করিয়া আপনার পুরুষকার বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিলেন। তিনি বৃত্রকে ছেদন করিলেন, জলসমূহ মোচন করিয়া দিলেন, উত্তম উদ্যোগ করিয়াবিস্তীর্ণ স্বর্গলোককে যুক্ত করিলেন, অর্থাৎ উন্নতভাবে সংস্থাপিত রাখিলেন।

৫। প্রকাণ্ড প্রকান্ড শত্রুসেনার দিকে ইন্দ্র একেবারেই ধাবিত হইলেন। বিশিষ্ট মহিমাদ্বারা দ্যাবাপৃথিবীকে বশীভূত করিলেন। যে বস্ত্র দানশীল বরুণ ও মিত্রদেবের সুখের উৎপাদক হয়, তিনি সেই লৌহময় বজ্র দুর্ধর্ষভাবে ধারণ করিলেন।

৬। ইন্দ্র নানা শব্দ করতেছিলেন, শত্রুদিগকে নিধন করিতেছিলেন, তাঁহার বলৰিক্রম ঘোষণা করিবার জন্য জল সকল নির্গত হইল। বৃত্র অন্ধকারে পরিবেষ্টিত হইয়া জল ধারণ করিয়া রাখিয়াছিল, তীক্ষ্ণতেজা ইন্দ্র বলপূর্বক সেই বৃত্রকে ছেদন করিলেন।

৭। ইন্দ্র ও বৃত্র পরস্পর স্পৰ্ধাপূর্বক প্রথমে নানা বীরত্ব করিতে লাগিলেন এবং মহারধে যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। বৃত্র নিধন হইলে গাঢ় অন্ধকার নষ্ট হইল। ইন্দ্রের মহিমা এপ্রকার যে, বীরদিগের নামোল্লেখ কালে সর্বাগ্রে ইহার নাম হয়।

৮। হে ইন্দ্র! সোমরস ও স্তবের দ্বারা তাবৎ দেবতা তোমার বল বিক্রমের সংবর্ধনা করিলেন। ইন্দ্ৰ দুৰ্ধর্ষ বৃত্রকে বধ করিলেন, তাহাতে শীঘ্রই লোকের অন্ন লাভ হইল। যেরূপ অগ্নি শিখাদ্বারা দাহ্য বস্তু ভক্ষণ করেন, তদ্রূপ লোকে দন্তদ্বারা অন্ন চর্বন করিতে লাগিল।

৯। হে স্তবকর্তাগণ! ইন্দ্র যে সকল বন্ধুত্বের কাৰ্য্য করিয়াছেন, তাহা উত্তম উত্তম নানা বাক্য এবং বন্ধুজনোচিত নানা ছন্দের দ্বারা বর্ণনা কর, ইন্দ্র ধুনি ও চুমুরিকে বধ করিয়াছেন, এবং আস্থাযুক্ত চিত্তে দভীতি রাজার প্রার্থনাতে কর্ণপাত করিয়াছেন।

১০। আমি স্তব উচ্চারণ কালে যাহা অভিলাষ করিয়াছিলাম, হে ইন্দ্র! সেই সমস্ত প্রভূত পরিমাণ সম্পত্তি এবং উত্তম উত্তম ঘোটক বিতরণ কর। তাবৎ পাপ যেন অতিক্রম করি এবং কল্যাণ লাভ করি। আমরা যে স্তব রচনা করিতেছি, যত্নপূর্বক তাহাতে মনোযোগ প্রদান কর।