আমারে তুমি অশেষ করেছ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – পূজা পর্যায়ের গান

মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে

ও আমার দেশের মাটি

আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই

আমরা পথে পথে যাব

আজি তোমায় আবার চাই শুনাবারে

এবার আমায় ডাকলে দূরে

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে

আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে

এ ভারতে রাখো নিত্য

মনে রবে কি না রবে আমারে

আজি যত তারা তব আকাশে

তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে

বাংলার মাটি, বাংলার জল

রইল বলে রাখলে কারে

সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায়

কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা

জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো

এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে

জননীর দ্বারে আজি

দিন পরে যায় দিন

সুরের গুরু, দাও গো সুরের দীক্ষা

প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে

নিশিদিন ভরসা রাখিস

আমায় বোলো না গাহিতে

আজি এ ভারত লজ্জিত হে

তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে

বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার

আমি ভয় করব না

অয়ি ভুবনমনোমোহিনী, মা

চলো যাই, চলো, যাই চলো

তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী

আজ জ্যোত্‍‌স্নারাতে সবাই গেছে বনে

আপনি অবশ হলি, তবে

সার্থক জনম আমার

শুভ কর্মপথে ধর’ নির্ভয় গান

আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান

ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু

আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।

যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক

ওরে, নূতন যুগের ভোরে

তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে

প্রতিদিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর

আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে

যে তোরে পাগল বলে

ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা

তোমার বীণা আমার মনোমাঝে

যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি

সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান

ওরে, তোরা নেই বা কথা বললি

ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে

আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।

নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়

যদি তোর ভাবনা থাকে

বিধির বাঁধন কাটবে তুমি

জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে