ঋগ্বেদ ০৭।০৮৬

ঋগ্বেদ ০৭।০৮৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৭ম মণ্ডল  সূক্ত ০৮৬
বরুণ দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

১। এই বরুণের জন্ম মহিমাপ্রযুক্ত স্থির হইয়াছে। ইনি বিস্তীর্ণ দ্যাবাপৃথিবীকে স্তম্ভিত করিয়াছেন, ইনি বৃহৎ আকাশ ও দর্শনীয় নক্ষত্রকে দ্বিধা প্রেরণ করেন। ইনি ভূমিকেও বিস্তীর্ণ করিয়াছেন।

২। আমি কি স্বীয় শরীরের সহিত বরুণের স্তুতি করিব? কখন বরুণদেবের সন্নিকট থাকিব? বরুণ কি ক্রোধরহিত হইয়া আমার হব্য সেবা সেবন করিবেন? আমি সুমনা হইয়া কখন সুখপ্রদ বরুণকে দেখিতে পাইব?

৩। হে বরুণ! আমি দিদৃক্ষূ হইয়া সেই পাপের কথা তোমায় জিজ্ঞাসা করিতেছি। আমি বিবিধ প্রশ্নের জন্য বিদ্বানজনের নিকট গিয়াছি। কবিরা সকলেই আমাকে একরূপ বলিয়াছেন যে “এই বরুণ তোমার প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়াছেন।“

৪। হে বরুণ! আমি এমন কি করিয়াছি, যে তুমি মিত্রভূত স্তোতাকে হনন করিতে ইছা কর। হে দুদ্ধর্ষ তেজস্বিন, আমাকে তাহা বল যাহাতে আমি ত্বরমান হইয়া নমস্কারের সহিত তোমার নিকট গমন করি।

৫। হে বরুণ! আমাদিগের পিতৃক্রমাগত দ্রোহ বিশ্লিষ্ট কর। আমরা নিজ শরী দ্বারা যাহা করিয়াছি, তাহাও বিশ্লিষ্ট কর। হে রাজা! পশুখাদক চৌরের ন্যায়(১), রজ্জুবদ্ধ গো বৎসের ন্যায়, আমাকে পাপ হইতে বিশ্লিষ্ট কর।

৬। হে বরুণ! সেই পাপ নিজের দোষে নহে। ইহা ভ্রম, বা সুর, বা মন্যু, বা দ্যূতক্রীড়া, বা অবিবেক বশতঃ ঘটিয়াছে। কনিষ্ঠকে জ্যেষ্ঠও বিপথে লইয়া যায়, স্বপ্নেও পাপ উৎপন্ন হয়।

৭। অভীষ্টবর্ষী, পোষক বরুণের উদ্দেশে পাপরহিত হইয়া আমি দাসের ন্যায় পর্যাপ্তরূপে পরিচর্যা করিব। আমরা অজ্ঞান, আর্য্যদেব আমাদিগকে জ্ঞান দান করুন। প্রাজ্ঞতরদেব স্তোত্রাকে ধনার্থ প্রেরণ করুণ।

৮। হে অন্নবান বরুণ! তোমার উদ্দেশে রচিত এই স্তোত্র তোমার হৃদয়ে সুনিহিত হউক। লাভ আমাদের মঙ্গল হউক, ক্ষোম আমাদের মঙ্গল হউক। তোমরা সর্বদা আমাদিগকে স্বস্তিদ্বারা পামন কর (২)।

————-
(১) মূলে “পশু তৃপং ন তাযুং” আছে। কেহ চৌর্য্য অপরাধে অপরাধী হইলে তাহাকে প্রায়শ্চিত্তের অন্তে যাসাদির দ্বারা পশুদিগকে তৃপ্ত করিতে হয়, সায়ণ এই অর্থ করিয়াছেন। “Like a thief who has feasted on stolen oxen.”— Max Muller.

(২) বসিষ্ঠরচিত এই সপ্তম মন্ডলে মিত্র ও বরুণ সম্বন্ধে সূক্তগুলি অতিশয় পবিত্র এবং এইগুলিতে পাপের অনুশোচনা ও পূণ্যলাভের আকাঙ্খা বিশেষরূপ লক্ষিত হয়। বিশেষ ৮৬ ও ৮৯ সূক্ত অতিশয় হৃদয়গ্রাহী।