কাশীধাম : 1774 - প্ৰথম পৰ্ব
সোঞাই : 1742 - দ্বিতীয় পৰ্ব
নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর : 1742 - তৃতীয় পৰ্ব
তীর্থের পথে : 1742 - চতুর্থ পর্ব
1 of 2

সোঞাই – ১৪

১৪

—বস, বাবা রূপেন্দ্র। তুমিও বস তারাপ্রসন্ন। তোমাদের সঙ্গে একটি অত্যন্ত গোপন এবং অত্যন্ত জরুরী আলোচনা আছে। শুনেছ বোধহয়, কাল প্রত্যুষে আমি কাটোয়া যাচ্ছি?

কথা হচ্ছিল ব্রজেন্দ্রনারায়ণের বৈঠকখানায়। ওঁরা দুজনেই আদিষ্ট হয়ে আসন গ্রহণ করেন। রূপেন্দ্র বলেন, হ্যাঁ, তারাদার কাছে এইমাত্র শুনলাম। পক্ষকালের জন্য আপনি কাটোয়া যাচ্ছেন। মহালয়ার তর্পণ সেরে ফিরে আসবেন।

—হ্যাঁ। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য দুটি। ঐ অবকাশে আমি দাঁইহাটিতে পণ্ডিত ভাস্কররাম পন্থের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে আসব। তোমরা তাঁর নাম শুনেছ?

রূপেন্দ্র বলেন, শুনেছি। মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ। গত বৎসর তিনি যখন ঐ দাইহাটিতেই অকালবোধন করছিলেন তখন নবাব আলিবর্দী মহাষ্টমীর দিন তাঁকে অতর্কিতে আক্রমণ করেন। অষ্টমীতে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে ভাস্কর পণ্ডিত নাকি কোনক্রমে আত্মরক্ষা করে মহারাষ্ট্রে ফিরে যান।

—ঠিকই শুনেছ। কিন্তু পন্থজীর উদ্দেশ্য কী, কেন তিনি পুনর্বার ফিরে এসেছেন জান?

—আন্দাজ করতে পারি। যবনের উপর প্রতিশোধ নিতে।

—সেটা তো আপাত উদ্দেশ্য। মূল লক্ষ্যটা? কী নিয়ে বিরোধ? কী হতে পারে এর পরিণাম?

—না, সে বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। তুমি কিছু জান, তারাদা?

তারাপ্রসন্ন নেতিবাচক গ্রীবাভঙ্গি করেন।

ব্রজেন্দ্র জানালেন পূর্বদিন তিনি বর্ধমানরাজ তিলকচাঁদের কাছ থেকে একটি গোপন নির্দেশ পেয়েছেন। বস্তুত রাজাদেশেই তিনি কাটোয়া যাচ্ছেন। দাঁইহাটি তার কাছেই। সেখানে বর্তমানে অধিষ্ঠান করছেন ঐ মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ। ব্রজেন্দ্র বর্ধমানরাজের দূত হিসাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন। জানতে—এ রাজ্য থেকে যবন-শাসন নির্মূল করতে যদি বর্ধমানরাজ তাঁর হস্তপ্রসারিত করে দেন তাহলে বিনিময়ে কী প্রতিশ্রুতি তাঁকে দেওয়া হবে।

রূপেন্দ্র প্রশ্ন করেন, আপনার কি ধারণা পন্থজী যবন শাসনের অবসান ঘটিয়ে বঙ্গদেশে হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন?

ব্রজেন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমার ধারণা, ভাস্কর পণ্ডিতের উদ্দেশ্য তা আদৌ নয়। কী জবাব দেব? সে দিগ্বিজয়ী নয়, একজন লুটেরা, ডাকাত। অত্যন্ত কূটবুদ্ধি—কিন্তু লোভী ও নির্মম! রঘুজী ভোঁসলেও তাই।

—তিনি কে?

—সর্বাগ্রে ঐতিহাসিক পটভূমিকাটুকু জেনে নাও।

মহারাষ্ট্রীয় অভ্যুত্থান ও তার তদানীন্তন স্বরূপ সম্বন্ধে ব্রজেন্দ্রনাথ একটি চুম্বকসার শোনালেন!

শিবাজী মহারাজের ছিল সেই উদ্দেশ্য—হিন্দুরাজ্যের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু সেই মহানায়কের দেহাবসানের পর মারাঠা বাহিনী ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গেল। তারা ক্ষমতাদৰ্শী, স্বার্থপর, অর্থলোলুপ। চতুর্বর্গের শুধু মাঝের দুটির দিকেই তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ। পরস্পরের প্রতি প্রচণ্ড বিদ্বেষ। এদেরই একটির দলপতি হচ্ছেন নাগপুর অঞ্চলের মারাঠা দস্যু-সর্দার রঘুজী ভোঁসলে। আর তাঁর প্রধানমন্ত্রী ঐ কূটবুদ্ধি ব্রাহ্মণ : ভাস্কররাম পন্থা

রঘুজী নবাব আলিবর্দীর কাছে ‘চৌথ’ দাবী করে দূত পাঠালেন। ‘চৌথ’ হচ্ছে রাজ্যের সম্পূর্ণ রাজস্বের চারভাগের এক ভাগ।

শিবাজীর জীবিতকালেই দিল্লীর বাদশাহ্ স্বীকার করে নিয়েছিলেন এই চৌথ সংগ্রহের অধিকার মারাঠাদের আছে। ভাস্কর পণ্ডিত রঘুজীর তরফে তাই নবাব আলিবর্দীর কাছে চৌথ চেয়ে পাঠালেন। অস্বীকার করলেন আলিবর্দী—না চৌথ, না সরদেশ মুখ।

সেটা অষ্টাদশ শতাব্দীর চতুর্থ দশক—অর্থাৎ আমাদের কাহিনীর কাল। নাগপুরের পাহাড়- পর্বত ডিঙিয়ে অশ্বারোহী বর্গী সৈন্য নিয়ে ভাস্করপণ্ডিত রওনা হলেন বংগাল-মুল্‌ক্। তখন বাঙলা বলতে রিহার ও উড়িষ্যার অনেকখানি সমেত। বীরভূম-বিষ্ণুপুরের শালবন ডিঙিয়ে ছোট ছোট টাট্টু ঘোড়ায় চেপে এসে হাজির হল লুঠেরার দল। তাদের পিঠে ঢাল, মাথায় উষ্ণীষ, কোমরে তলোয়ার, হাতে বল্লম! বেশ কিছু বন্দুকধারীও।

ভাস্কর পণ্ডিত ইতিপূর্বেও একবার এসেছেন বঙ্গদেশে, সর্দার রঘুজীর তরফে চৌথ সংগ্রহ করতে। গত বৎসর দুর্গা পূজার মরশুমে। সেবার বর্গীরা খুব কিছু অত্যাচার করেনি। ওঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভয় দেখিয়ে চৌথ সংগ্রহ করে যাওয়া। অজয় নদ যেখানে গঙ্গায় মিশেছে সেই কাটোয়া-ঘাটের কাছাকাছি ঘাঁটি গেড়েছিলেন। তখন শারদীয়া দুর্গাপূজা আসন্ন। হিন্দুদের সহানুভূতি পাবেন আশা করে ভাস্কর সাড়ম্বরে দুর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন। তখন বঙ্গদেশে শাক্তরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভাস্করপণ্ডিত নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজকে সামাজিক বিদায় পাঠিয়ে খুশি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি পূজা সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। মহাষ্টমীর দিন বৃদ্ধ আলিবর্দী খাঁ তাঁকে সসৈন্য আক্রমণ করে বিধ্বস্ত করেছিলেন। প্রতিমা ফেলে ভাস্কর কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! সে সময় অনেক হিন্দু বর্ধিষ্ণু জমিদার মনে-প্রাণে চেয়েছিলেন ভাস্কর পণ্ডিত পরের বছর ফিরে আসুন। অসমাপ্ত পূজা সাঙ্গ করুন। আর ঐ আলিবর্দী নামক মহিষাসুরটার শিরশ্ছেদ করুন।

ভাস্কর ফিরে এলেন, কিন্তু এবার নিজমূর্তি ধরে। লুটেরার মূর্তিতে। এবার তাঁর যাত্রা পথে যেসব গ্রাম পড়ল—হিন্দু অথবা মুসলমান গ্রাম—সেখানে অকথ্য অত্যাচার করতে করতে। সে অমানুষিক অত্যাচারের বর্ণনা সবার জানা। পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। যাঁরা ভাস্করকে হিন্দুধর্মের ধ্বজাধারী ভেবেছিলেন তাঁরা অধোবদন হলেন।

নিয়তির সেটাই চূড়ান্ত পরিহাস নয়। কিছু সম্ভ্রান্ত মুসলমান আমীর ওমরাও ঐ কাফের পণ্ডিতকে গোপনে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন! তাঁরা সবাই সরফরাজ খাঁর আত্মীয়রঙ্কু ও অনুগ্রহভাক্

সরফরাজ খাঁ প্রাশ্বর্তী বাঙলার নবাব। মুর্শিদকুলী খাঁর দৌহিত্র। মাত্র তের মাস তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন বাঙলার মসনদে। মুর্শিদাবাদের অনতিদূরে গিরিয়ার ময়দানে তাঁর নবাবী ফুরালো। আলিবর্দীর হাতে। সেটা 1740 খ্রীষ্টাব্দ।

সরফরাজ খাঁর আত্মীয়বন্ধুদের আরও একটি যুক্তি ছিল—আলিবর্দী যে শুধু বাঙালী নন তাই নয়, তিনি আদৌ হিন্দুস্থানী মুসলমান ছিলেন না। তাঁর বাপ আরবী, মা তুর্কিদেশের মেয়ে। তা সে যাই হোক, ভাস্কর পণ্ডিত বঙ্গদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন—বলা যায়—হিন্দু- মুসলমানের যৌথ আমন্ত্রণে! নিয়তির পরিহাস ওটাই : আতিথ্য ধর্ম পালনের সময় ভাস্কর পণ্ডিত সমদর্শী! হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনও ফারাক রাখেননি। যে গ্রাম জ্বালিয়েছেন, যে নরনারীর শিরশ্ছেদ করেছেন, যে সমস্ত রমণীকে তাঁর সৈন্যদল যৌথ বলাৎকারে জীবস্মৃত করেছে—তারা কাফের এবং যবন। সে অত্যাচারের বীভৎসতা দুশ বছর পরেও মিলিয়ে যায়নি। আজও বাঙলার গ্রামে মায়েরা শিশুদের ঘুমপাড়ায় সেই একই সুরে—

‘খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এল দেশে।’

সে-খোকা রামও হতে পারে, রহিমও হতে পারে।

সে আমলে দেশের একপ্রান্তের সংবাদ অপরপ্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগতো। তাছাড়া অতিরঞ্জনের ভারে অধিকাংশ খবরই ভারাক্রান্ত। বর্ধমানরাজ তিলকচাদের তাই তখনো স্বপ্নভঙ্গ হয়নি। মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ পণ্ডিতটির ভিতর তিনি তখনও শিবাজী মহারাজের ভাগোয়া-ঝাণ্ডার পতাকাধারীকে খুঁজতে ব্যস্ত। তিনি আশা করে আছেন—ভাস্কর পণ্ডিত তাঁর বর্গী সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করবেন মুর্শিদাবাদ; বিধর্মীকে গদিচ্যুত করে প্রতিষ্ঠা করবেন হিন্দু রাজ্য। যার তিনটি স্তম্ভ—নাটোরের রানী ভবানী, নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র এবং বর্ধমানের তিলকচাঁদ।

ব্রজেন্দ্রনারায়ণ ইমানদার লোক, তাই তাঁকে দূতরূপে প্রেরণ করতে চাইলেন দাঁইহাটি। ব্রজেন্দ্রনারায়ণ বললেন, আমার কিন্তু মোহভঙ্গ হয়ে গেছে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি—ঐ ভাস্কর আর তার বর্গী সৈন্য এসেছে বাঙলাকে লুট করতে। চৌথ আদায় হোক আর না হোক ওরা নাগপুরে ফিরে যাবার পথে একইভাবে গ্রামের পর গ্রাম লুট করতে করতে যাবে। তাই আমাদের অবিলম্বে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

তারাপ্রসন্ন বলেন, কিন্তু কী নিয়ে লড়ব আমরা? আমাদের না আছে ঢাল-তলোয়ার, গোলাবারুদ, না শিক্ষিত সৈন্যদল। ফাঁকা মাঠে অশ্বারোহী সৈন্যদলকে আমরা রুখব কী করে?

ব্রজেন্দ্র বললেন, শোন বলি। দুটি যুক্তি আমাদের তরফে। দুটি বিষয়ে আমাদের স্থান বর্গীদলের উপরে। এক : সংখ্যাগরিষ্ঠতা; দুই: মরণপণ লড়াই করার প্রবণতা। বিচার করে দেখ—ওদের আছে বন্দুক। আমার লড়ব তীরধনুক দিয়ে। কিন্তু প্রতিটি বন্দুকধারীর মহড়া নিতে যদি হাজির থাকে পঞ্চাশজন মরণপণ তীরন্দাজ, তাহলে লড়াইয়ের ফল অন্যরকম হতে পারে। ওরা আসছে লুট করতে, মেয়েদের ইজ্জত বাঁচাতে নয়। তাই বাধা পেলেই তারা ভিন্ন পথে অগ্রসর হয়ে যাবে।

সমস্ত পরিকল্পনাটি ব্যক্ত করলেন তিনি।

গ্রামবাসীর বন্দুক নেই, অসিচালনা বা অশ্বারোহণ তারা জানে না—যারাও বা জানে তাদের না আছে অসি, না অশ্ব। প্রতিরোধ করতে হবে তীরধনুকে। বর্গী আক্রমণের সূচনামাত্র গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে প্রচারিত করতে হবে সেই বিপদবার্তা। হিন্দুগ্রামে শঙ্খধ্বনি—শঙ্খ প্রতিটি ঘরেই আছে। মুসলমান গ্রামে প্রস্তুত রাখতে হবে দামামা। তাছাড়া তৈরী করতে হবে ধনুক ও তীর। শত শত, সহস্র সহস্র। তীরধনুকের ব্যবহার শিখতে সময় লাগে না। বিপদসঙ্কেত শ্রবণমাত্র হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে জওয়ানরা উঠে বসবে পথপার্শ্বের অযুত-নিযুত বৃক্ষচূড়ায় অশ্বারোহী বাহিনী নিকটবর্তী হলেই মুষলধারে বর্ষণ করতে হবে তীর।

বন্দুকধারীরা পরাজিত হবে না, মুখ ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। তারা খুঁজে নিতে চাইবে অরক্ষিত গ্রাম। কিন্তু এই সোঞাই গ্রামের আদর্শে যদি রাঢ়খণ্ডের প্রতিটি জনপদ একইভাবে মরণপণ প্রতিরোধের আয়োজন গড়ে তোলে তাহলে বর্গীর দল এ রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র সরে যাবে, সহজ শিকারের সন্ধানে।

দীর্ঘ আলোচনা হল। ব্রজেন্দ্র বললেন, সব কিছুই এখন করতে হবে গোপনে। বর্ধমান-রাজ যেন অসন্তুষ্ট না হন। সংবাদটা জানাতে হবে আশপাশের গ্রামেও—হিন্দু-মুসলমান এবং অন্ত্যজ পল্লীতে। রূপেন্দ্র এবং তারাপ্রসন্ন সেইসব গ্রামের মাতব্বরদের যেন একইভাবে সতর্ক করে আসেন। সঙ্গোপনে প্রতিরোধ ব্যবস্থার উদ্যোগ করেন। বললেন, আমি খাজাঞ্চিকে বলেছি এক সহস্র মুদ্রা আপাতত তোমাদের হাতে দেবে। তোমরা লোহা সংগ্রহ কর। কামারদের নিয়োজিত করে তীরের ফলা বানানোর কাজ এখনই শুরু করে দাও। বাঁশ ঝাড় কেটে ধনুক বানাও।

প্রথম প্রহর সমাপ্তির যাম ঘোষণা হল। ব্রজেন্দ্র উঠে দাড়ালেন। বললেন আজ এই পর্যন্তই। তোমাদের কোন প্রশ্ন আছে?

রূপেন্দ্রও উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। বলেন, আজ্ঞে হ্যাঁ। ঐ মেয়েটি, যাকে রূপনগরের মোহন্তবাবাজী—

ব্রজেন্দ্র একটি হাত তুলে ওঁকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। বললেন, এ অঞ্চলে ঐ একটি মাত্র কেল্লা; মোহন্ত মহারাজের। তাঁর নিজস্ব সৈন্যদল আছে। বাদবাকি গোটা রাঢ়খণ্ড উন্মুক্ত প্রান্তর—যেখানে অশ্বারোহী সৈন্যদলকে রোখা যায় না। এমনকি, অজয়ের তীরে ইছাই ঘোষের পরিত্যক্ত শ্যামরূপার গড়টাকেও কেউ সংস্কার করা প্রয়োজন বোধ করেনি। না রূপেন্দ্র—বর্গী বিপর্যয়ের এই সন্ধিক্ষণে আমারা কিছুতেই রূপনগরের মোহন্ত মহারাজের বিরক্তি উৎপাদন করতে পারি না।

রূপেন্দ্র নতনেত্রে কিছুক্ষণ নীরবে অপেক্ষা করলেন। তারপর বললেন, আপনি এখনই বলছিলেন, মা-বোনের ইজ্জৎ বাঁচাতে আমাদের মরণপণ লড়াই করতে হবে, কিন্তু যে হতভাগিনীর বিলকুল কেউ নেই….

কেমন যেন বেদনার্ত হয়ে ওঠে ব্রজেন্দ্রর মুখ

বললেন, উপায় নেই! সেই হোক প্রথম শহীদ!

—শহীদ! এ তো শুধু বুকের রক্ত দেওয়া নয়, জেঠামশাই! এ যে ইজ্জং-কা-সওয়াল! ব্রজেন্দ্র কক্ষান্তরে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছিলেন। এ কথায় ঘুরে দাড়ান। বলেন, তুমি তার চিকিৎসক রূপেন্দ্র—

—কিন্তু আপনি তার অভিভাবক, জেঠামশাই! আমাকে মোহন্ত মহারাজ চিঠি লিখেছেন তার চিকিৎসার জন্য, আপনাকে তার নিরাপত্তার জন্য—

ব্রজেন্দ্রনাথের একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। বলেন, তোমার আয়ুর্বেদশাস্ত্রে যদি নিষেধ না থাকে তাহলে ফেরত পাঠানোর সময় সেই হতভাগিনীর আঁচলে এক পুরিয়া বিষ বেঁধে দিও। যাতে ইজ্জতের বদলে জান দিয়ে সে দেশ-মাতৃকার সেবা করতে পারে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *