কাশীধাম : 1774 - প্ৰথম পৰ্ব
সোঞাই : 1742 - দ্বিতীয় পৰ্ব
নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর : 1742 - তৃতীয় পৰ্ব
তীর্থের পথে : 1742 - চতুর্থ পর্ব
1 of 2

নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর – ৪

—কোবরেজমশাই, এটটু ইদিকে আসুন দিনি?

রূপেন্দ্রের কর্ণকুহরে কথাটা প্রবেশ করে না। তিনি হীরামালিনীর জবানিতে বিদ্যার রূপবর্ণনায় তন্ময়—’বিনোনিয়া বিনোদিনী বেণীর শোভায়/সাপিনী তাপিনী তাপে বিবরে লুকায়।। কে বলে শারদশশী সে মুখের তুলা/পদনখে পড়ি তার আছে কতগুলা।। কি ছার মিছার কাম ধনু রাগে ফুলে/ভুরুর সমান কোথা ভুরুভঙ্গে ভুলে।’—এ বর্ণনা অতিশয় কৃত্রিম; কিন্তু অলঙ্কারমাত্রই তো কৃত্রিম! বাকসংযম ও বাকবিস্তারের পর্যায়ক্রমকেই তো বলে কাব্য! নাঃ! ভারতচন্দ্র বাস্তবসীমা লঙ্ঘন করলেও কাব্যসীমার স্বীকৃত সীমান্ত অতিক্রম করেননি!

—কোবরেজমশাই, শুন্তে পাচ্ছেন?

চমকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখেন, ভোলা প্রামাণিক দাঁড়িয়ে আছে দ্বারপ্রান্তে। ভারতচন্দ্রের গৃহে আশ্রয় নিয়েছেন। দু কামরার বাড়ি। পাশের ঘরে কবি বসে কাব্য রচনা করছেন। রূপেন্দ্র এঘরে একটি প্রদীপ জ্বেলে বিদ্যাসুন্দরের পাণ্ডুলিপি নিয়ে বসেছেন। ভোলা কবির গৃহভৃত্য। দীর্ঘদিন সঙ্গে সঙ্গে আছে। রূপেন্দ্র বলেন, আমাকে বলছ?

–ন্যাও ঠেলা! এখানে কি দশ-বিশজন কোবরেজমশাই হাজির?

–কী বলছ?

–এট্টু পাকঘরে আসেন দিনি। ভাতটা ফুটে গেছে। নাবায়ে ফ্যানটা গালেন।

—তুমিই সেটা কর না বাপু? ডাল পাকালে, ব্যঞ্জন পাকালে, আর ভাত পাকাতে পার না?

তা পারুক না পারুক, ভোলা অন্তত চোখ পাকাতে পারে। বললে, ন্যাও ঠেলা! জেতে যে নাপিত! ভাত যতক্ষণ ফোটেনি ততক্ষণ ভোলার ফুটুনি, ফুটলেই ভোলা- নাপতের ফাটা কপাল—ফটাশ্!

কবির দীর্ঘ সাহচর্যে ভোলা নাপিতের বাক- প্রয়োগেও কিছু বৈচিত্র্য।

রূপেন্দ্র বলেন, তাহলে তোমার বাবুকে বলছ না কেন?

—এখন? বর্গীরা বাড়িতে আগুন দিলেও এখন ডাকা বারণ। তাহলে গরম ভাতের হাঁড়ি আমার মাথায় ঢেলে দেবেনে। আপনিই বা কী রাজ কাজ করছেন? আসেন, আসেন।

রূপেন্দ্র বিব্রত। বলেন, আমি যে ভাতের ফ্যান গালতে জানি না।

—ন্যাও ঠেলা! নিজির হাতে খাতি জানেন তো? না রান্নাবান্না সেরে শ্যাষে খাওয়ায়ে দিতি হবে?

পাশের ঘরে বোধকরি ভারতচন্দ্রের তন্ময়তা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি উঠে এসে বলেন, রূপেনকে দিক্ করছিস কেন রে হতভাগা? ও পড়ছে পড়ুক। নে চল!

ভোলা কপাল চাপড়ে বলে, ন্যাও ঠেলা। অ্যাদ্দিন শুনি আলাম ‘নিখছে নিখুক’! এখন নোতুন করে শিখতি হবে ‘পড়ছে-পড়ুক’! আমারই পোড়া কপাল!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *