কাশীধাম : 1774 - প্ৰথম পৰ্ব
সোঞাই : 1742 - দ্বিতীয় পৰ্ব
নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর : 1742 - তৃতীয় পৰ্ব
তীর্থের পথে : 1742 - চতুর্থ পর্ব
1 of 2

কাশীধাম – ৮

পর দিন সকালে দেখা করতে এল রমারঞ্জন। নিবেদন করল একটি বেদনাদায়ক সংবাদ। যা রুদ্ধদ্বারকক্ষ থেকে রূপমঞ্জরী টের পায়নি।

গুরুদেব শেষরাত্রে একাকী একবস্ত্রে গৃহত্যাগ করেছেন। উদ্দেশ্য : হরিদ্বারে অমৃত-কুম্ভযোগে স্নান। আগামী বৈশাখে, মেষরাশিস্থে ভাস্করে গঙ্গাদ্বারে পূর্ণকুন্তযোগ :

“পদ্মিনীনায়কে মেষে কুম্ভরাশিগতে গুরৌ।
গঙ্গাদ্বারে ভবেৎ যোগঃ কুম্ভনামা তদোত্তমঃ।।”

সূর্য যখন বিষুবসংক্রান্তিতে, আর দেব-পুরোহিত বৃহস্পতি ‘ঘট’-এ, অর্থাৎ কুম্ভরাশিতে, তখনই হরিদ্বারে এই অমৃতকুম্ভযোগ।

বোধকরি প্রিয়শিষ্যার কণ্ঠে উচ্চারিত ঐ ঘৃণিত বাক্যটি শ্রবণের পাপ—যা নাকি গোহত্যা-ব্রহ্মহত্যার সমতুল্য—তা থেকে স্খালনের এ ছাড়া গত্যন্তর নাই!

একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল বিদ্যালঙ্কারের। হাত দুটি জোড় করে উদ্দেশ্যে প্রণাম করলেন। এই ভাল হল! এই ভাল হল!

অপাপবিদ্ধ ঐ মহাজ্ঞানীটি মুক্তি পেয়েছেন। এক পক্ষকালের মধ্যেই অনিবার্যভাবে নেমে আসবে প্রলয়। এই পবিত্র গুরুকুল মহাবিদ্যালয়ের একটি বিদ্যার্থীকে ওরা ছিনিয়ে নিয়ে যাবে; পৈশাচিক উল্লাসে এ আশ্রমের উপর নিক্ষেপ করবে পূতিগন্ধময় ক্লেদাক্ত পুরীষ! উপায় নেই! সে মহামৃত্যু সহ্য করতে হবে হটী বিদ্যালঙ্কারকে! কাশীধামের সমগ্র পণ্ডিত সমাজ নতমস্তকে সহ্য করতে বাধ্য হবে এই নারকীয় অত্যাচার!

ঈশ্বর করুণাময়! তখন দ্বারকেশ্বর গঙ্গাদ্বারে অমৃতকুম্ভযোগে স্নানরত।

রমারঞ্জন ইতস্তত করল না। জানতে চাইল, দিদি! এ কথা কি সত্য যে, আপনি গুরুদেবকে বলেছেন বেদের অভ্রান্ততা বিষয়ে আপনার সংশয় আছে?

বিদ্যালঙ্কার ম্লান হেসে জবাবে বললেন, না ভাই, সে-কথা আমি বলিনি। আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম—বৈদিক অনুশাসনের যে রূপ আমরা আজ দেখতে পাই তার অভ্রান্ততা নিজ-নিজ বিবেকের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হবে।

—কেন? এ সংশয় কেন জাগল আপনার অন্তরে? বেদ যে অভ্রান্ত—এ তো স্বতঃসিদ্ধ!

—জবাব দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে আমার একটি প্রতিপ্রশ্নের জবাব দাও তো ভাই—তোমার-আমার গুরুদেব সজ্ঞানে মিথ্যাভাষণ করেন না, এটা তোমার কাছে একটা স্বতঃসিদ্ধান্ত!

—নিশ্চয়! তিনি কখনো অনৃতভাষণ করেন না। কিন্তু সে-কথা কেন?

—এবার আমাকে বুঝিয়ে বল দেখি, তা সত্ত্বেও তুমি কেন আমার কাছে ঐ প্রশ্নটা করলে?

রমারঞ্জন এত দুঃখেও হেসে ফেলে। বলে, দুটি স্বতঃসিদ্ধান্তের দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়েছিল যে, দিদি! আপনি বেদের অভ্রান্ততা বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন—এই তথ্যটাও যে মেনে নিতে পারছিলাম না।

—তবেই দেখ! প্রতিমুহূর্তে আমরা আমাদের পূর্বকৃত ধ্যানধারণার সত্যতা যাচাই করতে চাই। নিজের বুদ্ধি-বিবেচনায় বিচার করে দেখতে চাই। তারপর বিবেকের নির্দেশে সিদ্ধান্তে আসি। ধর্মের পথ যে ‘ক্ষুরস্য ধারা’! আত্মদীপের আলোক ব্যতিরেকে প্রতিটি পদক্ষেপে পদচ্যুতির আশঙ্কা। তুমি যে প্রশ্নটা করেছ তারও ঐ একই উত্তর। ভেবে দেখ, বেদ-এর মন্ত্রগুলি আমরা মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষির কণ্ঠে উচ্চারিত হতে শুনিনি। তার যে লিখিত রূপ দেখছি তার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে আছে অযুত-নিযুত অনুকারকের হস্তাক্ষর। তাঁরা মহাপণ্ডিত, কিন্তু অপৌরুষেয় নন, তাঁরা মরমানব। অনুকরণের সময় তালপাতার পুঁথিতে ভুলভ্রান্তি এসে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত অনেক বৈদিক শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। পরবর্তীকালের ভাষ্যকারেরা—এমনকি আদি শঙ্করাচার্য তার যে অর্থ বলেছেন তা স্বীকার করার পূর্বে যাচাই করতে হবে না? ধর একটা বাঙলা শব্দ : ‘অপর্যাপ্ত’। বৈয়াকরণিক হয়তো বললেন তার অর্থ ‘যা পর্যাপ্ত নয়’! অথচ ঠিক বিপরীত অর্থবোধকভাবে কি শব্দটির প্রয়োগ হয় না? অর্থাৎ যা ‘পর্যাপ্তের অতিরিক্ত’! কোন অর্থটা গ্রহণ করব? কে বলবে? তোমার-আমার বিবেক ভিন্ন? ‘বেদ অভ্রান্ত’ কি না এই প্রশ্নের সঙ্গে যে ঐ প্রশ্নটির সম্পৃক্ত—বেদ-এর কোন্ পাঠ, কোন্ ব্যাখ্যা, কোন্ ভাষ্য?

রমারঞ্জন সক্ষেদে বললে, গুরুদেব বোধহয় এসব কথা আপনার সঙ্গে আলোচনাই করেননি, তাই নয়?

—হ্যাঁ, তাই। আমরা সচরাচর সংস্কারের দ্বারা পরিচালিত হই। আমার মুখে ঐ কথাটা শ্রবণমাত্র তিনি এতদূর মর্মাহত হয়ে পড়লেন যে, তীর্থযাত্রার পূর্বে আমার প্রণামটাও নিয়ে গেলেন না। দুর্ভাগ্য আমার!

রমারঞ্জন প্রশ্ন করে, আপনি কি গুরুদেবকে এ-কথাও বলেছিলেন যে, হিন্দুধর্মে নারীর মর্যাদা স্বীকৃত হয়নি?

আবার হাসলেন বিদ্যালঙ্কার। বললেন, এই দেখ, কীভাবে শ্রুতিনির্ভর তথ্য বিকৃত হয়ে যায়। একটি রাত মাত্র কেটেছে, অথচ এর ভিতরেই আমার বক্তব্যটা বিকৃত হয়ে গেছে। আমি ওকথা আদৌ বলিনি। বলেছি, উপনিষদ্-উত্তর পুরাণ ও সংহিতার যুগ থেকে ব্রাহ্মণ্যধর্মে নারীর মর্যাদা ক্রমঅবক্ষয়ের পথে চলেছে। গৌতম বুদ্ধ—যিনি হিন্দুধর্মের একজন মহাপুরুষ, ব্রাহ্মণ্যধর্মের নয়—তিনি কীভাবে বারবনিতা মাতা আম্রপালীর মর্যাদা মিটিয়ে দিয়েছিলেন সে-কথাও আমি সবিস্তারে বলেছিলাম।

—কিন্তু আপনার কি মনে পড়ে না মহাভারতের সেই খণ্ড-কাহিনীটি? গৃহস্থবধূর কাছে একজন তত্ত্বজ্ঞানী সন্ন্যাসীর অপদস্থ হওয়ার কথা?

—নারীর কাছে পুরুষের পরাজয়? কোন খণ্ডকাহিনীর উল্লেখ করছ তুমি?

রমারঞ্জন কাহিনীটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে থাকে। একটু পরেই সে-কথা স্মরণ হল হটী বিদ্যালঙ্কারের। কিন্তু তিনি রমারঞ্জনের উচ্ছ্বাসকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন না। মহাভারতের সেই খণ্ড—কাহিনীটি এই রকম :

একজন সন্ন্যাসী দীর্ঘদিন এক নির্জন অরণ্যে তপস্যায় নিরত ছিলেন। তারপর একদিন একটি ক্রৌঞ্চবকের উপদ্রবে হঠাৎ তাঁর ধ্যানভঙ্গ হল। ওঁর মাথার উপর দিয়ে উড়বার সময় পাখিটি পুরীষত্যাগ করে এবং ঘটনাক্রমে তা পতিত হয় ধ্যানরত সন্ন্যাসীর মস্তকে। সন্ন্যাসী ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে ঊর্ধ্বে দৃকপাত করা-মাত্র পাখিটি ভস্ম হয়ে গেল। সন্ন্যাসী প্রণিধান করলেন—তিনি অলৌলিক বিভূতি লাভ করেছেন। অর্থাৎ কেউ তাঁর বিরক্তি উৎপাদন করলে দৃকপাতে তাকে ভস্ম করে দেবার ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন।! ঐ ঘটনার কিছুদিন পরে এক গৃহস্থ বাড়িতে যখন তিনি ভিক্ষা চেয়েছেন তখন গৃহস্বামিনীর আসতে কিছু দেরী হয়েছিল। ক্ষুদ্ধ সন্ন্যাসী সেই মহিলাটিকে বললেন, কী এমন রাজকার্য করছিলে যে, সন্ন্যাসীকে রুদ্ধদ্বারের সম্মুখে অপেক্ষা করতে হয়?

গৃহিণী শান্তস্বরে বললেন, রাজকার্য নয়, বাবা, আমি স্বামী-পুত্রকে আহার্য পরিবেশন করছিলাম।

সন্ন্যাসী বলেন, এতদূর স্পর্ধা তোমার! অভুক্তা সন্ন্যাসীর চেয়ে স্বামীপুত্ৰই বড় হল?

গৃহস্থ বধূটি শান্তস্বরে জবাব দিলেন, সন্ন্যাসীঠাকুর। আপনি আমার দিকে ওভাবে তাকাবেন না। আমি ক্রৌঞ্চবর নইঞ ভিক্ষা গ্রহণ করে নিজ পথে গমন করুন। আমার সংসারের অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে।

কাহিনীটি জানা ছিল। তবু ধৈর্য ধরে সবটা শুনলাম। তারপর বললেন, এই খণ্ডকাহিনীটি কিন্তু আমার যুক্তিকেই প্রতিষ্ঠা করছে। অর্থাৎ মহিলাটির মুক্তি—স্বামীপুত্রের সেবার মাধ্যমেই। সেখানে ঐ বেয়াড়া প্রশ্নটা পেশ না করে বসে : ‘যেনাহম্ নামৃতাস্যাম তেনাহম্ কিম কুর্যাম?’ কিন্তু ওটি তো খণ্ডকাহিনীমাত্র—মহাভারতের মূল কাহিনী অনুসারে নারী তার ভর্তার অস্থাবর সম্পত্তিমাত্র। স্বামী তাকে পণ রেখে পাশা খেলতে পারেন; পরাস্ত হলে সেই কুলনারীকে সর্বসমক্ষে বিবস্ত্রা করায়। কোন ধর্মীয় আপত্তি নেই। শুধু মহাভারত নয় রমা—সর্বত্র দেখতে পাবে নারীর পৃথক সত্তা, তার আত্মমর্যাদা উপেক্ষিত। সে পুরুষের খেলার পুতুলমাত্র! ধর বৈষ্ণব ভক্তমাল গ্রন্থ বিল্বমঙ্গল। কাহিনীর নায়ক নদীতটে অহল্যা নাম্নী একটি রূপবতী পুরললনাকে দেখে মুগ্ধ হলেন। স্নানান্তে ঐ মহিলা যখন স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করছেন তখন দেখা গেল কাহিনীর নায়ক তাকে অনুসরণ করছেন। তিনি দেখলেন সেই সধবা মহিলাটি একজন বণিকের ধর্মপত্নী। কাহিনী অনুসারে ঐ ঘটনার পূর্বেই নায়ক বিল্বমঙ্গল সোমগিরির নিকট দীক্ষা নিয়েছেন। সেই দীক্ষিত নায়ক বণিকগৃহে আতিথ্য গ্রহণ করলেন এবং বণিক পত্নীকে একরাত্রের জন্য প্রার্থনা করলেন। কিমাশ্চর্যমতঃপরম! স্ত্রীর প্রতি কর্তব্যের চেয়ে বড় হয়ে উঠল কামুক অতিথির প্রতি অতিথি-বৎসলতা! তিনি সে রাত্রে স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিলেন, বিল্বমঙ্গলের শয়নকক্ষে! বিচার করে দেখ রমা, কাহিনীকারের একমাত্র উদ্দেশ্য ভক্তির সঞ্চার করা—‘বিল্বমঙ্গল’ একান্ত ভাবে ভক্তিমূলক গ্রন্থ। অথচ কেউ কখনো সেই অহল্যা নামে মেয়েটির দৃষ্টিকোণ থেকে এ ঘটনাটা যাচাই করল না! রাত্রিপ্রভাতে ধর্ষিতা সতীসাধ্বী কী করেছিল? যে যদি আত্মঘাতিনী না হয়ে থাকে তাহলে দ্বিচারিণী হওয়ার অপরাধে বণিক কি তাকে ত্যাগ করেছিল? কাহিনীকার সে কথা বলতে ভুলেছেন। হিন্দুশাস্ত্রে—পুরাণে-সংহিতায়-কাব্যে ক্রমাগত এই একই দৃষ্টিভঙ্গি—পুনরুক্তি দোষে ক্লান্তিকর! পরশুরাম পিতৃআজ্ঞায় নির্দ্বিধায় কুঠারঘাতে জননীর শিরেশ্ছেদ করলেন! কী যুক্তি? তাঁর মাতা তো পিতার অস্থাবর সম্পত্তিমাত্র! এবং সেই পরশুরাম আমাদের দশাবতারের একজন। লক্ষহীরা ব্যধিগ্রস্ত স্বামীকে পিঠে করে বারবনিতার গৃহে পৌঁছে দিচ্ছে—কেন?’[১] সেটাই যে তার সতীত্ব ধর্মের পরিচয়। কেন ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হল সীতাকে? যদি তিনি রাবণকর্তৃক ধর্ষিতা হয়ে থাকেন, তাহলে সেটা কি তাঁর অপরাধ? আদিকবি সে প্রশ্ন আদৌ উত্থাপন করেননি। বরং দেখিয়েছেন, সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরেও শ্রীরামচন্দ্র সীতাকে বর্জন করছেন। কেন? না, তিনি প্রজানুরঞ্জন। শ্রীরামচন্দ্রের একবারও মনে হল না রাজা-প্রজার বন্ধনটা অচ্ছেদ্য নয়, স্বামীস্ত্রীর মতো। রাজ্য ত্যাগ করলে ভরত বা লক্ষ্মণ প্রজাদের দায়িত্ব নিতে পারত—কিন্তু সীতার একমাত্র আশ্রয় দ্বিধাবিভক্ত ধরণী।

[১. তোমাদের নিশ্চয় মনে আছে রবিঠাকুরের কলম বার করে মৃণাল তার স্বামীকে এই প্রসঙ্গে লিখেছিল “কুষ্ঠরোগীকে কোলে করে তার স্ত্রী বেশ্যার বাড়িতে নিজে পৌঁছে দিয়েছে, সতীসাধ্বীর সেই দৃষ্টান্ত তোমাদের মনে জাগছিল; জগতের মধ্যে অন্যতম কাপুরুষতার এই গল্পটা প্রচার করে আসতে তোমাদের পুরুষের মনে আজ পর্যন্ত একটুও সংকোচ বোধ হয়নি।” (স্ত্রীর পত্র)]

না রমারঞ্জন—আমার সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত : নারীজাতির প্রতি এই অশ্রদ্ধা, অপমানই হিন্দু-সমাজের, হিন্দুসংস্কৃতির এই অধঃপতনের হেতু। বারে বারে তাই সে পদানত হয়েছে বহিরাগত বিধর্মীদের কাছে।

রমারঞ্জন এ অভিযোগের জবাব খুঁজে পায়নি।

.

সেরাত্রে বড় অদ্ভুত একটা স্বপ্নাদেশ পেলেন হটী বিদ্যালঙ্কার।

স্বপ্ন? না। স্বপ্ন কেন হবে? তখন তো তিনি জাগ্রত, সমংকায়শিরোগ্রীব ভঙ্গিতে। পদ্মাসনে। পূজার ঘরে।

বিদ্যালঙ্কার প্রত্যহ রাত্রে ধ্যানে বসতেন। এ বিদ্যাও তাঁকে শিখিয়েছেন তাঁর পিতৃদেব। কৈশোর অতিক্রমণে। বিধবা হওয়ার পরে। সহমরণের চিতা থেকে ফিরে আসার পরে। শৈশবকাল থেকেই বাবামশাইকে দেখেছেন ধ্যান করতে। জননীকে হারিয়েছেন জন্মলগ্নে। বাবামশাই ছিলেন ওঁর বাবা ও মা। বাবার দেখাদেখি উনিও শৈশবে চুপচাপ বসে থাকতেন পিতৃদেবের অদূরে—আর একটি কুশাসনের উপর। একটু বড় হয়ে জানতে চেয়েছিলেন—ধ্যানে আপনি কার কথা চিন্তা করেন বাবা?

রূপেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, আমি মন্ত্র নিইনি রে হটী। আমার কোনও ইষ্ট দেবদেবী নাই। আমি ‘ভূমা’কে ধ্যান করি।

অর্থগ্রহণ হয়নি সে বয়সে। পরে, বাবামশাই ওঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সে আজ প্রায় দুই দশক আগের কথা। আজ তাঁরও কোনও ইষ্ট দেবদেবী নাই। বীজমন্ত্র পাননি। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পারেন, নঙর্থক ধ্যান কীভাবে ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে। ধ্যানে উনি ইন্দ্রিয়গ্রামকে সংযত করেন, সংহত করেন। জাগতিক যাবতীয় চিন্তাকে বিদূরিত করে নঙর্থক জগতে প্রবিষ্ট হবার চেষ্টা করেন। ‘না’-য়ের জগতে। এ ঘর নাই। এ দেহ নাই। এ জগৎ নাই—আছেন জগত-প্রপঞ্চের সেই আদিভূত কারণ!

প্রথমে দীপশিখার উপর মনঃসংযোগ করতেন। ইদানিং তাও করতে হয় না। চোখ বুজলে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দেহাতীত আত্মার স্বরূপ ভূমানন্দের স্বাদ পান।

সে রাত্রেও তাই করতে চেয়েছিলেন।

স্থির সিদ্ধান্তে এসেছেন—আর সপ্তাহখানেক তিনি আছেন এই ধরাধামে। চৈতালী পূর্ণিমা হচ্ছে চিহ্নিত তিথি। তার পূর্বেই তাঁকে বিদায় নিতে হবে এই রূপরসশব্দস্পর্শগন্ধময় পৃথিবী থেকে। ঘটাকাশ মিলিত হয়ে যাবে পটাকাশে।

মালোয়া রাজ্যের রূপোপজীবিনী রূপমতী ওঁর পথ প্রদর্শক। মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে কী ভাবে বাঁচা যায় তা সেই শিখিয়ে দিয়ে গেছে।

সে রাত্রেও উনি ধ্যানস্থ হয়েছেন। রাত্রি গভীর। চরাচর নিস্তব্ধ। সহসা ঘ্রাণে উপলব্ধি করলেন এক অপূর্ব পদ্মগন্ধ। ধীরে ধীরে চোখদুটি খুলে গেল তাঁর। দেখতে পেলেন কক্ষের ভিতর ঘনীভূত হয়েছে এক অলৌকিক আলোকচ্ছটা। সেই দীপ্তিময় আলোক-বৃত্তের কেন্দ্রস্থলে ক্রমে প্রস্ফুটিত হল একটি পরিচিত আলেখ্য। চিনতে অসুবিধা হল না—তাঁর স্বর্গত পরমপূজ্য পিতৃদেব—রূপেন্দ্রনাথ ভেষগাচার্য। তিনি এসেছেন মৃত্যুতীর্থে উপনীত হবার মুহূর্তে কন্যাকে আশীর্বাদ করতে। কিন্তু তাঁর এ কী ভঙ্গি? পদ্মাসনে বসে আছেন—যেন তৈলঙ্গ স্বামী।

ঠিক তখনই যেন অন্তরীক্ষ্য থেকে দৈববাণী হল : এখনো ‘রূপ’-এর মোহ? ‘সত্য’কে চিলি না?

স্তম্ভিত হয়ে গেলেন হটী বিদ্যালঙ্কার। অর্থগ্রহণ হল না তাঁর। বললেন, কী বলছেন, বাবা? কোথায় রূপের মোই? কখন প্রত্যাখ্যান করলাম সত্যকে?

—তবে ‘রূপমতী’ কেন রে হটী? কেন নয় ‘সত্যবতী’?

—সত্যবতী! সে কে?

কোনও প্রত্যুত্তর হল না। বিদ্যালঙ্কার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবার তাকিয়ে দেখলেন সেই অলৌকিক মূর্তির দিকে। না—উনি তৈলঙ্গ স্বামী নন, রূপেন্দ্রনাথও নন—উনি একজন রাজপুরুষ। হাতে রাজদণ্ড, মাথায় রত্নখচিত স্বর্ণমুকুট।

বিদ্যালঙ্কার আর্তকণ্ঠে বলে ওঠেন, কে? কে আপনি?

—চিনতে পারছিস না হটী? আমি তোর বাবা—রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কাপুর।

মূর্ছিত হয়ে ভূশয্যায় লুটিয়ে পড়লেন, হটী।

মূর্ছা ভাঙল অনেক অনেকক্ষণ পর। উঠে বসলেন। রাত তখন তৃতীয় যাম। শরীর দুর্বল। তা তো হতেই পারে। গুরুদেব গৃহত্যাগ করার পর থেকে বস্তুত তিনি অনাহারে আছেন। শরীর মানবে কেন?

আচ্ছন্নের মতো দেওয়ালে ঠেকা দিয়ে বসলেন। স্বপ্নের কথাগুলো মনে পড়ল একে একে। প্রতিটি দৃশ্য। প্রতিটি কথোপকথন। ধীরে ধীরে সমস্যাটার সমাধান হয়ে আসে। স্বপ্নাদেশের অর্থ প্রণিধান করতে অসুবিধা হল না আর। বর্ধমানের মেয়ে—রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের উপাখ্যান কি ভোলা যায়? প্রায় দেড়শত বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে—তবু আজও কৃষ্ণসাগরের নিস্তরঙ্গ জলে যেন প্রতিবিম্বিত হয় সেই অনিন্দ্যকান্তির মুখখানি : রাজকুমারী সত্যবতী!

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষপাদ। সুদূর লাহোর থেকে এক ক্ষত্রী কাপুর বংশের রাজপুরুষ এসে ছিলেন পুরীধামে তীর্থ করতে। সঙ্গম রায় কাপুর। তীর্থ সেরে প্রত্যাবর্তনের পথে বর্ধমান শহরের কাছাকাছি একটি গ্রাম—তার নাম বৈকুণ্ঠপুর—তাঁর মনে ধরে গেল। স্বদেশে আর ফিরে গেলেন না। ছায়া-সুনিবিড় ঐ গ্রামেই একটি ভদ্রাসন নির্মাণ করে বসবাস শুরু করলেন। শুরু করলেন ব্যবসা। এক পুরুষেই প্রচুর ধনসম্পত্তি সঞ্চয় করলেন তিনি। তাঁরই উত্তরাধিকারী কৃষ্ণ রায়। করিৎকর্মা পুরুষ। বাদশাহ্ আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে নিয়ে এলেন ফরমান। হয়ে বসলেন ঐ অঞ্চলের জমিদার। বর্ধমান রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। উপাধি পেলেন চৌধুরী। খেতাব পেলেন রাজা। নির্মিত হল বর্ধমান রাজবাটি। খনন করালেন এক বিরাট দীঘি—যা আজও কানায় কানায় টলমল : কৃষ্ণসায়র।

সপ্তদশ শতাব্দী শেষ হতে আর মাত্র চারটি বছর বাকি। সেই সময় চেতুয়া-বরদার জমিদার শোভা সিং আক্রমণ করল বর্ধমান রাজ্য। মুগল শাসনের বিরুদ্ধে রহিম খাঁ নামে এক বিদ্রোহী আফগান সর্দার যোগ দিল শোভা সিং এর সঙ্গে। এই যৌথ আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সেনাদলকে পরিচালনা করে স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে রওনা দিলেন রাজা কৃষ্ণরায়। সঙ্গে তাঁর যুবকপুত্র অম্বর রায়।

স্বামীর ও পুত্রের ললাটে রানী-মা এঁকে দিলেন রক্ত-তিলক। যাত্রার পূর্বমূহূর্তে রাজা কৃষ্ণরায় পুরললনাদের ডেকে বললেন, যুদ্ধে আমার এবং অম্বরের মৃত্যু হয়েছে সংবাদ পেলে বাবা বিশ্বনাথের এই প্রসাদ তোমরা মুখে দিও। ধর্মরক্ষা হবে!

রানী-মা বুঝলেন। তীব্র হলাহলটি চার ভাগ করে একটি রাখলেন নিজের জন্যে। এক ভাগ পুত্রবধূর, বাকি দুটি দুই কন্যার।

দিবসান্তে এল মর্মান্তিক দুঃসংবাদ। রাজা এবং রাজপুত্র উভয়েই সম্মুখযুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছেন। যে কোন মূহূর্তে বিজয়ী সৈন্যদল রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করতে পারে।

রানী-মা পূজা করছিলেন। পূজা অসমাপ্ত রেখে বার হয়ে এলেন মন্দির থেকে। দুই কন্যা আর পুত্রবধূ অপেক্ষা করছিল। তাদের বুকে টেনে নিলেন। বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ে মনটা হাল্কা করার সময় নেই। কেউ হারিয়েছে স্বামীকে, কেউ পিতাকে! হতভাগিনী বর্ধমান-মহিষী একই খণ্ডমূহূর্তে হারিয়েছেন স্বামী-পুত্র! কিন্তু কে কার চোখের জল মুছিয়ে দেবে? রাজ-প্রসাদের সিং-দরোজা ভেঙে পড়ার ভীমনাদ যে ভেসে এসেছে তার পূর্বেই। রানী-মা বললেন, নে মা! নিজের হাতে তোদের আগে খাইয়ে দিই। তোদের বাঁচাতে পেরেছি না জেনে গেলে যে মরেও আমি শান্তি পাব না।

ছেলেবেলায় যেমন করে ওদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে ‘কাগের দলা-বগের দলা’ খাইয়েছেন তেমনি করে দুই মেয়ের মুখে তুলে দিতে গেলেন তীব্র কালকূট!

পুত্রবধূ প্রসাদ মুখে দিয়ে লুটিয়ে পড়ল শাশুড়ীর পায়ের উপর। সদ্য-বিধবার সিঁথিতে জ্বলজ্বল করছে রাঙা-সিঁদূর।

বড় মেয়ে এগিয়ে এল : এবার আমাকে দাও মা!

রানী-মা তার কপালে একটি চুম্বন-চিহ্ন এঁকে দিয়ে বললেন, আয় মা! নে!

এর পর কনিষ্ঠা কন্যা। সত্যবতী। ষোড়শী রাজকন্যা। অপূর্ব সুন্দরী। বাবার নয়নের মণি। দাদার আদরের বোনটি।

মা ডাকলেন, আয়?—তাঁর দু চোখে শ্রাবণ ধারা। নিজে হাতে আজ মেয়েকে বিষ দিতে হচ্ছে।

মেয়ে এক-পা পিছিয়ে গেল। বললে, ন্‌-না!

—না? না কিরে? বাবা কী বলে গেল শুনিসনি?

—শুনেছি! বাবার কোন্ কথাটা কবে শুনেছি আমি? পারব না। আমি এখন মরতে পারব না।

সোপান বেয়ে ওদিকে উঠে আসছে শত্রু সৈন্য। আর একটি মাত্র রুদ্ধ কপাট। এঘরের। সময় নেই। মা জাপটে ধরল মেয়েকে। বললে, খেতেই হবে! নে! খা!

সত্যবতী ছিটকে সরে গেল। বললে, তুমি নিশ্চিন্ত মনে প্রসাদ মুখে দাও মা! আমি আসছি, এখনই আসছি। কিন্তু তার আগে আমাকে প্রতিশোধ নিতে দাও। যে শয়তান আমার দাদাকে, আমার বাবাকে……

হতভাগিনীর কথাটা শেষ হল না। মড়মড়িয়ে ভেঙে গেল অন্দরমহলের রুদ্ধ দরওয়াজা। দুর্বিনীতা কন্যা! কথা শোনেনা! কী করবেন? বাবা বিশ্বনাথের চরণে মনে মনে তাকে সমৰ্পণ করে রানী-মা তাঁর অংশের প্রসাদটুকু মুখে ফেলে দিলেন।

জীয়ন্তে ধরা দিল সত্যবতী।

তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল শোভা সিং। সে একা নয়। রহিম খাঁও! দুই সহযোগী মূহূর্তে হয়ে ওঠে দুজনের দ্বন্দ্বী। শোভা সিং বললে, খাঁ—সাহেব! গোটা রাজকোষ তোমার। আমাকে বখ্া দিতে হবে না। লেকিন এ ‘জহর’ আমার।

রহিম খাঁ মেনে নিল। বললে, খামোশ! মান্ লি!

মূর্খ শোভা সিং। সে চিনতে পারেনি। সে বুঝতে পারেনি। ‘জহর’ শব্দটার যে দুটো অর্থ আছে, তা ওর মনে পড়েনি!

সত্যবতী বন্দিনী হল স্বেচ্ছায়। কোন প্রতিবাদ করেনি সে। সুবেদার শোভা সিং- আদেশে মেয়েটিকে প্রহরীরা পৌঁছে দিল তার শয়নকক্ষে। তারা স্বপ্নেও ভাবেনি—মেয়েটি তার কঞ্চলিকার অন্তরালে বুকের উপত্যকায় লুকিয়ে রেখেছে একটি ক্ষুদ্র, কিন্তু তীক্ষ্ণ ছুরিকা। বাবার দেওয়া একটা শৌখিন উপহার।

মেয়েটিকে শোভা সিংয়ের শয়নকক্ষে পৌঁছে দিয়ে প্রহরীরা কুর্নিশ করে বার হয়ে গেল ঘর ছেড়ে। শোভা এগিয়ে এল। রুদ্ধ করে দিল কবাট! কোন সোহাগের কথা বলল না। সে জানে, মেয়েটি সেদিনই তার বাবাকে হারিয়েছে, ভাইকে হারিয়েছে—মহব্বতের মিঠে মিঠে বুলি এখন তার বরদাস্ত হবে না। রানী মহলের আর পাঁচটা মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ার আশঙ্কায় জান দিয়েছে। এ ছুকরি নিতান্ত ছেলেমানুষ—সাহস পায়নি আত্মহত্যা করতে। জান দেওয়ার বদলে ইজ্জৎ দেওয়াটাকে ও পসন্দ করেছে।

শোভা সিং এগিয়ে এল। পরুষ পেষণে নিষ্পেষিত করল সেই অনাঘ্রাতা যুবতীকে। তার বিম্বাধরে দেগে দিল এক হিংস্র চুম্বনচিহ্ন! ঠোঁটদুটো জ্বলে উঠল সত্যবতীর। কিন্তু সে ঠেলে সরিয়ে দিল না শোভা সিংকে।

ততক্ষণে পাশবসত্তা পূর্ণমাত্রায় জাগরিত। শোভা এক টানে খুলে নিল ওর ওর্না। আর এক টানে ছিঁড়ে ফেলল ওর ঘাঘরা। ভিতরে অধোবাস। দেহের সঙ্গে লেপটে থাকা চুড়িদার চুস্ত বা শেরওয়ানী-পাজামা। তা টেনে খোলা যায় না অথবা ছেঁড়া। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের এই বিচিত্র পোশাকে বঙ্গললনারা ততদিনে অভ্যস্তা। পূর্বযুগেই জীমূতবাহনের দায়ভাগ গ্রন্থে বর্ণনা আছে—”বঙ্গনারীরা, বিশেষ করে নর্তকীরা, পায়ের কণ্ঠা পর্যন্ত বিলম্বিত আঁটসাঁট পাজামা পরতেন।”[১] শোভা সিং সত্যবতীর নীবিবন্ধের ফাঁসটা খুঁজতে থাকে। কী বজ্র আঁটুনি গেরো! কামাবেগে পিশাচটার সন্দেহ হল না—এ জাতীয় গ্রন্থির অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। টানাটানি করে খুলতে না পেরে মেয়েটিকেই বললে, খুল্!

[১. ‘বাঙালীর ইতিহাস’—নীহাররঞ্জন রায়]

সত্যবতী পাথর-প্রতিমা।

টেনে এক চড় মারতে ইচ্ছা করছিল শোভা সিং এর। কিন্তু না, তাতে ছুকরির মেজাজটা খিঁচড়ে যাবে—জমবে না! দু-হাতে সে ঐ গিঁটটাকে খুলবার জন্য তৎপর হয়ে পড়ে।

এই মুহূর্তটির জন্যই এতক্ষণ দৈহিক নিগ্রহ সয়েছে কৃষ্ণ রায়ের আদরিণী আত্মজা। ধর্ষণকারী দুইহাতে গ্রন্থিমোচনে নিবিষ্ট হয়েছে দেখে অতি সন্তর্পণে সে তার ডান হাতখানা প্রবেশ করিয়ে দিল নিজ বুকের উপত্যকায়!

পরমুহূর্তেই রুদ্ধদ্বারের বাহিরে প্রহরীদ্বয় চমকে ওঠে। একটা গগনবিদারী আর্তনাদ! আর্তনাদ একটা প্রত্যাশিত—ঔরতের আর্তি! রমণ শীৎকার! কিন্তু এ যে পুরুষকণ্ঠ! এ যে শোভা সিং-এর আর্তনাদ!

রুদ্ধদ্বার ভেঙে ওরা যখন ধর্ষণকক্ষে প্রবেশ করল তখন সত্যবতীর দেহে প্রাণ নেই। আর বর্ধমান রাজপ্রাসাদজয়ী শোভা সিং চিৎ হয়ে পড়ে আছে ভূশয্যায়। তার কণ্ঠে আমূল বিদ্ধ হয়ে আছে একটি ক্ষুদ্র কিন্তু মারাত্মক ছুরিকা।

শৌখিন একটা অস্ত্র। বাবা নাকি জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল আদরের কন্যাকে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *