বিড়াল
এঘরটার অবস্থা শোচনীয়। মাঝে মাঝেই দেওয়াল থেকে পলেস্তারার চাপড়া খসে পড়ে। বর্ষার দিনে পশ্চিমের দেওয়াল জুড়ে ড্যাম্প, ভেজা ভেজা স্যাঁতসেঁতে সবসময়। শীতের দিনে রুখু উত্তরে বাতাস পাশের নতুন ওঠা মাল্টিস্টোরিড বাড়ি হয়ে গোঁত্তা মেরে ঢুকে পড়ে পশ্চিমের জানলা দিয়ে।
পঁচিশ বছর আগেও শোচনীয় ছিল। এখন অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এই ঘরেই ‘ঘোষ অ্যাণ্ড দাশগুপ্ত’ কোম্পানির ক্যাশিয়ার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, বিল ক্লার্ক ও টাইপিস্টদের বসার জায়গা। বছর পনেরো আগে এঘরে সিনিয়ার পার্টনার ঘোষ সাহেব বসতেন। পাশেই তাঁর বাথরুম ছিল।
তারপর সব বদলে গেছে, ঘর পালটাপালটি হয়েছে।
মেশিনে নতুন করে কার্বন চাপালেন খেয়ালবাবু। বড়োসাহেব হাতে লেখা ড্রাফট-এর ওপর ছোট্ট করে লিখে দিয়েছেন, ওয়ান প্লাস ফোর, অন লার্জ প্যাড।
কার্বনটা চাপাতে চাপাতে, আড়চোখে হাতঘড়িটা দেখলেন একবার উনি। সাড়ে সাতটা বাজে। আজ মনোর মাকে নিয়ে গায়নোকোলজিস্টের কাছে যাওয়ার কথা ছিল।
এমনসময় ছোকরা বিল ক্লার্ক সমীরণ একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, খেয়ালদা, আজ সাহেবদের কাছে একজন লোক এসেছিলেন। তাঁর কাছে শুনলাম আজকাল বিদেশে একরকম কাগজ বের হয়েছে তাতে কপি করার জন্যে কার্বন পেপারের আর দরকারই হচ্ছে না। নীচে রেখে টাইপ করলে এমনিতেই কপি হয়ে যাচ্ছে।
খেয়ালবাবু হাত থামিয়ে বললেন, বলো কী? সত্যি?
—সত্যি নয় তো মিথ্যা! তবে, তবুও টাইপিস্টদের দরকার হচ্ছে। কিন্তু ফোটোকপি বা জেরক্স মেশিনের এদেশে যদি তেমন চল হয় তবে টাইপিস্টরা তো সব না খেয়েই মরবে।
খেয়ালবাবুর বুকটা ধক করে উঠল। খেয়ালবাবু ম্যাট্রিক পাশ। জোতদার ছিলেন। দেশ ভাগের পর তাই টাইপ শিখে এই লতায়-পাতায় আত্মীয়ের অফিসে ঢুকেছিলেন। পুরোনো লতায় আর জোর নেই। ছিঁড়ে গেছে অনেক জায়গাতেই।
সমীরণকে ধমক দিয়ে বললেন, হ্যাঁ। সকলেই যেন জেরক্স আর ফোটোকপি বসাচ্ছে। তাহলে তো আর কথাই ছিল না। ওসব বিদেশেই চলে। যে দেশে এত লোক বেকার, সেদেশে চলবে না।
সমীরণ সিগারেটে বড়ো একটা টান দিয়ে বলল, তা কুকুর-বেড়ালের মতো মানুষ পয়দা হলে আর বেকারত্ব ঘুচবে কী করে?
সে যাই-ই হোক।
বলেই খেয়ালবাবু কথাটা ঘুরিয়ে নিলেন, কারণ সমীরণের এই জেনারেল স্টেটমেন্টে ওঁর প্রতি একটা কটাক্ষ ছিল। খেয়ালবাবুর ছেলে-মেয়ে ছয়। অবশ্য একটি নেই। আর বড়োমেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ছেলে চাকরি করছে। বাকি তিন জন।
বললেন, ওসব বসাতে পয়সাও তো লাগে। ওসব বড়ো কোম্পানিই বসাতে পারে। টাটা বিড়লারা। তোমার এই ছাতার ঘোষ অ্যাণ্ড দাশগুপ্তের এত টাকা কোথায়? মাসের দশ-বারো তারিখের আগে তো মায়নাই হয় না কোনোদিন, তার আবার ফোটোকপি!
উষ্মার সঙ্গেই বললেন কথাটা খেয়ালবাবু।
বলেই, ঘাবড়ে গেলেন।
ওই সমীরণ ছোকরা, দাশগুপ্ত সাহেবের কীরকম যেন আত্মীয় হয়। যদিও মাখামাখি নেই। রাজা-প্রজারই সম্পর্ক। কিন্তু তবুও ছোকরা কুচুটে আছে। যদি বলে দেয়?
তারপর আবার বললেন, বসায়ও যদি কোম্পানি, তাহলেও আমাদের জীবদ্দশায় বসাবে না।
সমীরণ অনেকক্ষণ একদৃষ্টে খেয়ালবাবুর দিকে চেয়ে রইল।
তারপর হেঁয়ালি করে, সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে বলল, কে বলতে পারে?
দুই
খেয়ালবাবুর ভালো নাম অদ্বিজা রায়। আদিবাড়ি বরেন্দ্রভূমি। পাবনা জেলায়। ছোটোখাটো জোতদারি ছিল একটা চলন বিলের কাছাকাছি। ছোটোবেলায় মাথায় কাঁসার জামবাটি উপুড় করে গামছা দিয়ে কষে বেঁধে নিয়ে হেলমেটের কাজ চালিয়ে কত চিতাবাঘ মেরেছেন। চলন বিলে পাখিশিকার। খাওয়াদাওয়া। দোল-দুর্গোৎসব। তখন একটা টইটম্বুর ভুঁড়িও ছিল। জমিদারি আছে এবং থাকবে এই শাশ্বত বিশ্বাসে ভুঁড়িটাকে বর্ধমান হতে বাধা দেননি। কিন্তু হঠাৎ দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ায় সর্বনাশ হয়েছিল।
জোতদারি চলে গেছিল; ভুঁড়িটা রয়ে গেছিল।
এই গল্প, খেয়ালদা সকলকে বেশ রসিয়ে করেন, মানে আগে করতেন। আজকাল রসের গল্প করার মতো মন বা শারীরিক অবস্থা আর তাঁর নেই। আগের তুলনায়, অনেক কষ্টে থাকেন এবং এই কষ্টতেই অভ্যস্ত হয়ে-যাওয়া সত্ত্বেও রসবোধ এবং রসিকতা করার ক্ষমতা তাঁর অনাবিল ছিল বহুদিন।
একসময় নামকরা খেয়ালি ছিলেন তিনি। তাঁর গলায় ধ্রুপদ-ধামারও যাঁরা শুনতেন, তাঁরাও মুগ্ধ হতেন। তবে খেয়ালেই তাঁর নাম বেশি ছিল। অফিসের সহকর্মীরা এবং অন্যান্য জানাশোনা অনেকেই বলতেন যে, খেয়ালদা গান ছেড়ে না দিলে কী হতেন আর কী হতেন না; তা বলা মুশকিল। বয়সে তিনি বড়ে গোলামের চেয়ে ছোটো এবং আমির খাঁর চেয়ে বড়ো ছিলেন। প্রাচুর্য, অবকাশ, ভাবনাবিহীন এবং ক্লেশহীন আয়ের জগৎ থেকে হঠাৎই নির্বাসিত হয়েছিলেন। এই ঘোষ অ্যাণ্ড দাশগুপ্তের টাইপিস্টের চাকরিটা পেয়ে মরতে মরতে বেঁচে গেছিলেন। সে কারণেই, এই পঁচিশ বছর কোনোক্রমে বেঁচে আছেন এখনও না মরে। অতিকষ্টে সংসার প্রতিপালনের গ্লানিতে ন্যুব্জ হয়ে না পড়লে খেয়ালদা গান-বাজনার জগতে সত্যিই হয়তো একজন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হতেন।
খেয়ালবাবু ঘড়িটা আর একবার দেখলেন, তারপর বেয়ারা হিতেনকে বললেন, ‘ছোটোসাহেবকে একবার জিজ্ঞেস করে আয় আর কোনো কাজ বাকি আছে কি না। এই, হিতেন!’
খেয়ালবাবু বাঙালত্ব প্রায় বিসর্জন দিয়েছেন কিন্তু এখনও উত্তরবঙ্গের, বিশেষ করে পাবনা জেলার এই চন্দ্রবিন্দুর প্রতি পক্ষপাতিত্বকে বিসর্জন দিতে পারেননি।
হিতেন একটু পরে ফিরে এসে বলল, আছে বাকি। আজ গদাধরবাবু আসেননি তো!
খেয়ালবাবু দাঁত কিড়মিড় করলেন।
হিতেনটা বহুদিনের লোক। সমানে ইয়ার্কি করে ওঁর সঙ্গে।
গদাধর এ অফিসের পার্টটাইম স্টেনোগ্রাফার। সরকারি অফিসে কাজ করে, সেখানে মাইনে, প্লাস ডি.এ., পি.এফ., গ্র্যাচুইটি; পেনশন। কাজের বেলা কিছু নয়। এদিকে সন্ধের পর এখানে ঘণ্টা দেড়-দুই ঘুরে গিয়েও মন্দ হয় না।
খেয়ালবাবু প্রায়ই ভাবেন যে, জীবনে একটা বেসিক মিস্টেক হয়ে গেছে। মাঝবয়সে চাকরিতেই যখন ঢুকতে হল তখন সরকারি চাকরির চেষ্টা করাই উচিত ছিল। কিন্তু ফর্মাল এডুকেশন যে তেমন ছিল না। তখন তো মধ্যবিত্তরাই বি.এ.—এম.এ. পাশ করত কেরানি হবার জন্যে। জমিদারের ছাওয়াল! কেডা আবার চাকরির জন্যে পড়াশুনো করত? যাই হোক, খেয়ালবাবু ভাবলেন যে, এদেশে সরকারি কেরানির মতো সুখের চাকরি বোধ হয় আর কোথাওই নেই!
ম্যাটারটা টাইপ করা শেষ করে সবে একটা বিড়ি ধরিয়েছেন। তাঁর রংচটা ‘সাইমা’ হাতঘড়িটাতে তখন পৌনে আটটা বেজে গেছে। এমন সময় হিতেন এসে বলল, ‘খেয়ালবাবু, তলব।’
আধফোঁকা বিড়িটা তাড়াতাড়ি অ্যাশট্রের ওপর ব্যালান্স করে রেখে তিনি দৌড়ে করিডর পেরিয়ে ওঘরে গেলেন। তারপর ঘর পেরিয়ে ছোটোসাহেবের চেম্বারে। দু-দুটো এয়ার কণ্ডিশনার চলছে দু-পাশে। ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার জোগাড়। ছোটোসাহেব সত্যিই সাহেব মানুষ।
ছোটোসাহেবের সামনে সুট পরা এক ভদ্রলোক বসেছিলেন।
খেয়ালবাবুকে ছোটোসাহেব হাত দেখিয়ে বসতে বললেন।
ভদ্রলোক ছোটো একটা পকেট-ক্যালকুলেটর বের করে কীসব অঙ্ক কষছিলেন। হঠাৎ মুখ তুলে বললেন, নো প্রবলেম।
নো প্রবলেম? ছোটোসাহেব উজ্জ্বলমুখে শুধোলেন ভদ্রলোককে।
আই সেইড সো। গো অ্যাহেড। ভদ্রলোক বললেন।
ছোটোসাহেব দাঁড়িয়ে উঠে ভদ্রলোকের সঙ্গে হ্যাণ্ডশেক করলেন।
বললেন, ইটস আ ডিল দেন।
ইয়া! ডিল! ভদ্রলোক বললেন।
তারপর দু-জনেই বেরিয়ে গেলেন। বোধ হয় ভদ্রলোককে লিফট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গেলেন ছোটোসাহেব।
খেয়ালবাবু ভাবছিলেন যে, এত ঠাণ্ডায় মানুষ বসে থাকে কী করে? হারেম-টারেম আছে বোধ হয় ছোটোসাহেবের, নয়তো রোজ আণ্ডেকা রোশান হালুয়া এবং বিরিয়ানি পোলাও খান। তাও তো ছোটোসাহেবের বয়স চল্লিশ-টল্লিশ হবে। কিন্তু বড়োসাহেব? বড়োসাহেব তো তাঁর নিজের চেয়েও অনেক বড়ো হবেন বয়সে। কিন্তু তাঁর ঘর যেন আরও ঠাণ্ডা। ষাট বছরের লোকের পক্ষে চেহারাটা যথেষ্ট ইয়াং রেখেছেন বলতে হবে। সিলভার-টনিকে জরা-ভরা আতুরেরাও নবীন হয়ে ওঠে বোধ হয়। খেয়ালবাবুও হতেন। জোতদারি থাকলে।
এমন সময় ছোটোসাহেব দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন।
খেয়ালবাবু উঠে দাঁড়ালেন। যেমন করে খেয়ালবাবুকে দেখে চরের মুসলমান প্রজারা, হিন্দু প্রজারা উঠে দাঁড়াত! আজকে দেশে জাতিভেদপ্রথা উঠে গেছে। শিডিউলড কাস্ট আর শিডিউলড ট্রাইবরা কত সুযোগসুবিধা পাচ্ছে। খুবই আনন্দের কথা। কিন্তু নতুন জাতিভেদ তৈরি হয়ে গেছে, যার শিকড় চলে গেছে অনেক গভীরে। যেখানে উঁচু-নীচু সব জাত একাসনে। ছোটোসাহেব বড়োসাহেব এখন ব্রাহ্মণ, এবং খেয়ালবাবু, সমীরণ, হিতেনরা সব ছোটোজাত। এক দলদের দেখে অন্যদের তখনও উঠে দাঁড়াতে হত; এখনও হয়। খেয়ালবাবু যে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন তো দাঁড়িয়েই রইলেন।
ছোটোসাহেব বড়ো অন্যমনস্ক। এই তো সেদিন হায়দরাবাদে বেলে-ভিস্তাতে দশহাজারি ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করে এলেন। তারপর থেকে অফিস মডার্নাইজেশন, খরচ কমানো, সিমপ্লিফিকেশন অফ অপারেশন্স, টাইম ম্যানেজমেন্ট, এসব নিয়ে বুঁদ হয়ে আছেন। মাথায় যে কতশত ক্রিয়েটিভ ভাবনা ঘুরছে, তা বলার নয়।
অনেকক্ষণ পর ছোটোসাহেবের খেয়াল হল। বললেন, বসুন বসুন। একটা ডিকটেশান নিন তো।
খেয়ালদা খাতাটা বাগিয়ে ধরলেন। তিনি তো আর স্টেনোগ্রাফার নন, তবু। পেনসিলটাও ঠিকঠাক করে নিলেন।
ছোটোসাহেব বললেন, দি এজেন্ট, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লি.। হাই কোর্ট ব্রাঞ্চ।
খেয়ালবাবু হাই কোর্টে এসে পেনসিল ভেঙে ফেললেন। পটাং করে আওয়াজ করে শিষটা তিন টুকরো হয়ে গেল।
সব বাঙালেরই হাই কোর্টের নামের হয়তো ভীতি থাকে।
ছোটোসাহেব বললেন, ওয়ার্থলেস।
খেয়ালবাবু বাঁ-হাতের তর্জনী দিয়ে বাঁ-চোখের অঞ্জনিটাকে একটু ঘষে নিলেন। কুটকুট করছে বড়ো।
ছোটোসাহেব বললেন, একদিনও কি একটু কাজটা চালিয়ে নিতে পারেন না? আপনারা সব আউট-ডেটেড, ইউসলেস হয়ে গেছেন। একেবারে ফসিল। যান, বাড়ি যান।
খেয়ালবাবু আগে আগে ছেলেমানুষ অবস্থায় উত্তেজিত হতেন। শনৈ: শনৈ: জেনেছেন যে, বেসরকারি অফিসে উত্তেজনা মানে ব্লাডপ্রেসার বৃদ্ধি, মালিকের কুদৃষ্টি এবং বরখাস্ত। যেসব সরকারি, আধা সরকারি ও ব্যাংক ইনসিওরেন্স ও বড়ো বড়ো মার্চেন্ট অফিসের কর্মচারীরা মিছিল করে লাল শালুর ওপর বক্তৃতা লিখে ডালহাউসি-চৌরঙ্গি গমগম করে ফেলে, তারা যা মাইনে ও সুযোগসুবিধা পায়, তা পেলেও খেয়ালবাবু বর্তে যেতেন। তার ওপর খেয়ালবাবু জানেন যে, তাদের চেয়ে কাজও চারগুণ বেশি করেন খেয়ালবাবু। ওইসব মিছিলকারী মানুষগুলো—মদনার, মানে খেয়ালবাবুর নকশাল ছেলের ভাষায় ছিল, পাতি বুর্জোয়া।
ছোটোসাহেবের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে খেয়ালবাবু ভাবছিলেন, ওই মদনারাই ওষুধ ছিল এদেশের। সব অসুখের ওষুধ। মদনার কথা মনে হল খেয়ালবাবুর। মদনাকে একটা রাজনৈতিক দলের ছেলেরা প্রায় তার বাড়ির ওপরেই কুড়ি-জন মিলে রেকটামে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মেরেছিল। আত্মীয়স্বজন, অফিসের প্রায় পনেরো-জন লোক রক্ত দিয়েও মদনাকে বাঁচাতে পারেননি। ওখানে স্টিচ থাকে না। রক্ত, সকলের রক্তই বেরিয়ে গেছিল। মাঝে মাঝে অফিসফেরত লাস্ট ট্রাম কী বাসের জানলায় হাত রেখে বসে, হাই তুলতে তুলতে শ্যামবাজারের দিকে যেতে যেতে হঠাৎ মদনার মুখটা ভেসে ওঠে। ওকে যখন মারে ওই ছেলেগুলো, তখন ওর বয়স ষোলো।
আটটা ষোলো। সমীরণ বলল।
খেয়ালবাবু তাড়াতাড়ি মেশিনটা গোছগাছ করে রাখলেন, ছাতাটা কোনা থেকে তুলে রবারের জুতোটা দেওয়ালে হেলান দিয়ে কসরত করে পরতে লাগলেন। জুতোটা একজন তাঁকে দান করেছে। এক সাইজ ছোটো। একটু কষ্ট করে পরতে খুলতে হয়। হলেও, এই বাজারে কুড়িটা টাকা বাঁচানো! চাট্টিখানি কথা নয়।
বেরিয়ে যেতে যেতেই কী মনে হওয়ায়, হিতেনকে বললেন, যা, বড়োসাহেব ছোটোসাহেব দু-জনকেই জিজ্ঞেস করে আয় বাড়ি যাব কি না।
হিতেন একদৌড়ে চলে গিয়েই ফিরে এল। বলল, যেতে পারেন। তবে কাল সকাল সকাল আসবেন।
—সকাল সকাল মানে, কখন?
হিতেন বলল, ন-টার মধ্যে!
আজ বিকেল থেকে নীচের ব্যস্ত পথের গাড়ি, বাস, ট্রামের যন্ত্রমর্মর ছাপিয়ে মেঘের গুড়গুড় শোনা যাচ্ছিল। কাগজে লিখেছিল, রাতের দিকে ঝড়-বৃষ্টি হবে।
‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলে খেয়ালবাবু সিঁড়ি দিয়ে তরতরিয়ে নামতে লাগলেন। লিফটের জন্যে অপেক্ষা করার তর তাঁর সইল না।
ট্রামের বাঁ-দিকে একটা জানলার পাশে বসার জায়গা পেয়ে বসতেই হঠাৎ খেয়ালবাবুর ছোটোসাহেবের মুখে শোনা ‘ফসিল’ কথাটা মনে পড়ল। ফসিল-এর মানে জানেন না খেয়ালবাবু। কথাটা তাঁকে ভাবিয়ে তুলল। বাড়ি গিয়েই তাঁর পার্ট-ওয়ান পড়া মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ও না জানলে, বাড়িতে বহুপুরোনো একটা ইংরেজি থেকে বাংলা ডিকশনারি আছে, সেটাকে খুঁজে বের করে দেখতে হবে।
এখনও বৃষ্টি নামেনি। তবে অদূরে কোথাও হচ্ছিল। হাওয়াটা বেশ ঠাণ্ডা। গা-শিরশিরে হাওয়ায় বসে ‘ফসিল’ কথাটার এবং ছোটোসাহেবের মুখ বিকৃতি করে সে কথা বলার ভঙ্গিটির কথাও হঠাৎ মনে পড়ে গিয়ে খেয়ালবাবুর শীত শীত করতে লাগল। এখনও তিনটে ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব। দুটি মেয়ের বিয়ে বাকি। নিজের শরীরেও আর দেয় না।
শ্যামবাজারের মোড় থেকেও অনেক দূরে মধ্যমগ্রামের মোড় থেকে যে রাস্তাটি বাদুর দিকে চলে গেছে সেই রাস্তায় খেয়ালবাবুর বাড়ি। অফিস থেকে লোন নিয়ে উনিশশো পঞ্চাশে টালির ছাদে ছাঁচা বাঁশের ওপর চুনবালির পলেস্তারা দিয়ে তিনখানি ঘর করে নিয়েছিলেন। একটা ছোটো পুকুর। মাঝে মাঝে গলায় দড়ি বেঁধে কাউঠা রাখেন তাতে। পালা-পার্বণে অতিথি কুটুম এলে দড়ি ধরে তুলে উপুড় করে কেটে খাওয়ান। একটা টিউবওয়েল, পেঁপে গাছ, নারকোল গাছ, একটা লিচু, দুটো আম এবং একটা কাঁঠাল। যজ্ঞিডুমুরও আছে একটা। রঙ্গনের ঝাড়, টগর আর হাসনুহানা।
মনোরমার ভারি গাছগাছালির শখ। বাড়ি-গাড়ি-গয়নার শখ তো এজন্মে মিটল না। তাই শুধু গাছের শখটা মিটিয়েছেন বছর বছর রথের মেলায় শেয়ালদার সামনে থেকে চারা কিনে এনে।
বাড়ি যখন ঢুকলেন খেয়ালবাবু, তখন রাত প্রায় সাড়ে ন-টা। লণ্ঠনের আলোতে ডুরে শাড়ি পরা মেয়ে রমা পড়াশুনা শেষ করে বালিশের ওয়াড় রিপু করছিল। ছোটোটা ঘুমিয়ে পড়েছে। মেজোছেলে আড্ডা মারতে বেরিয়েছে। ফেরেনি এখনও। বারাসাতের মোড়ের ‘করুণাময়ী’ মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়ে রোজ সন্ধেবেলা আড্ডা না মারলেই নয়। ইংরেজি তো দূরের কথা, বাংলাতেও একটা চিঠি লিখতে পারে না; অথচ জানে না এমন বিষয় নেই। জনতা সরকার কেন ভেঙে যাবেই, ইন্দিরার আসল দোষ কী, কেম্পেস কী করলে ওয়ার্ল্ড কাপে আরও গোল দিতে পারত, অথবা শত্রুঘ্ন সিনহার ক-ভাই বোন এ সমস্তই তার জানা।
পুকুরে ডুব দিতে দিতে খেয়ালবাবু বললেন, হারামজাদা! সব হারামজাদা! অকৃতজ্ঞর ঝাড়। বড়োছেলে খগেনের চাকরি বড়োসাহেবকে ধরে-করে তিনিই করে দিয়েছিলেন। এখন মাইনে পায় তাঁর দু-গুণ। কিন্তু পেলে কী হয়। হাতকাট্টি পেটকাট্টি ব্লাউজ পরা বউ নিয়ে সে আলাদা হয়ে গেছে। সংসারে আধলা দিয়েও সাহায্য করে না। মাঝে মাঝে খেলায়বাবুর সন্দেহ হয় যে, এরা সব তাঁর নিজেরই ছেলে কি না। মেয়েগুলোর তবু একটু টান আছে। বড়োমেয়েটির তো আছেই। কিন্তু এই বাজারে সকলেরই টানাটানি। টান থাকলেও দেখাতে পারে না।
কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি পেতে মাটির মেঝেতে খেতে দিলেন মনোরমা খেয়ালবাবুকে। মেয়ে রমা পাশে বসল হাতপাখা নিয়ে। পুকুরপাড়ে ব্যাং ডাকছে। জোনাকি জ্বলছে দূরের বাঁশঝাড়ে। লম্ফর শিখাটা মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে হাওয়ায়। ছায়া নাচছে দেওয়ালে। খেয়ালবাবুর সরু সরু হাত দুটোকে মোটা শক্ত সমর্থ মনে হচ্ছে ছায়াতে। খেয়ালবাবু ভাবলেন, সত্যি হাতদুটো এমন হলে, কী ভালোই-না হত!
মনোরমা স্বগতোক্তি করলেন, বৃষ্টির দেখা নেই। সন্ধ্যার দিকে দু-এক ফোঁটা চিড়বিড়িয়ে পড়েছিল। ব্যাস।
মুসুরির ডালে একটা কাঁচালংকা ডলে নিয়ে লাল লাল ভাত মাখলেন খেয়ালবাবু। দাঁতে কাঁকর লাগল একটা কট করে। কুমড়োর সঙ্গে বেগুনের ঘ্যাঁট, পাতাপুতা দিয়ে কাঁঠালের বিচির লোত লোত তরকারি একটা।
জল খেলেন কোঁৎকোঁৎ করে। রমা জল ভরে দিল ঘটি করে গ্লাসে। একটা তেলাপোকা উড়ে এল পাতের দিকে। মনোরমা ধরতে গেলেন। রমাও। তাড়াতাড়িতে রমার হাতে লেগে গ্লাসটা উলটে পাতে পড়ল। কুমড়োর ঘ্যাঁট, মুসুরির ডাল, পাতাপুতার তরকারি জলে ভেসে গেল।
মনোরমা ঠাস করে মেয়ের গালে চড় লাগালেন।
এমন সময় বেড়ার ধার থেকে কে যেন ডাকল, ‘রমা।’
খেয়ালবাবু উৎকর্ণ হলেন। মনোরমা ইশারায় মেয়েকে যেতে বললেন। রমা উঠে গেল।
মনোরমাও উঠে রান্নাঘরের কোনা থেকে একটা কাসুন্দির শিশি বার করে নিয়ে এলেন। নীচে একটু তলানি পড়েছিল। তাই দিলেন ঢেলে, খেয়ালবাবুর পাতে, ঝাঁকিয়ে নিয়ে। জলে ভেজা ভাতে-ডালে একটু স্বাদ হল।
খেয়ালবাবু নরম ভাত খেতে খেতে বললেন, ছেলেটাকে তুমিও তাহলে প্রশ্রয় দিচ্ছ?
প্রশ্রয়ের কী আছে? মেয়েকে কি তুমি ভালো বিয়ে দিতে পারবে? ওরা কী বড়োলোক! ঝন্টু বলেছে টালিগুলোর ওপরে টার-ফেল্ট না কী যেন বিছিয়ে দেবে। বর্ষা এসে গেছে। সারারাত তো সব ক-টা ঘরেই জল পড়ে। সমস্ত রাত তো ঘটি-বাটি পেতে আর খাট সরিয়ে সরিয়ে জেগেই কাটাতে হয়। তোমার কী? সারাদিন অফিসে থাকো। কাপের পর কাপ ভালো চা খাও আর মাঝরাতে এসে আমার ওপর মেজাজ করো।
‘হুঁ।’ খেয়ালবাবু বললেন।
তারপর বললেন, তুমি কী ভাবছ, ঝন্টু বিয়ে করবে? ওরা মজা লুটতে আসে। বিয়ে করার সময় ঝন্টু ঠিক জাত মিলিয়েই বিয়ে করবে! বিয়েতে কত কী দান পাবে। রেডিয়ো, টেলিভিশন, স্কুটার। তুমি কী বুঝবে ওসব শয়তান ছেলেদের কারবার।
মনোরমা ঠোঁটে আঙুল দেখিয়ে বললেন, চুপ। শুনতে পাবে।
এমন সময় রমা এসে রান্নাঘরে ঢুকল। রমার হাতে একটা বিরাট দেড় কেজি সাইজের ইলিশ। রুপোলি আঁশগুলো লম্ফর আলোয় চকচক করে উঠল।
খেয়ালবাবুর গলায় ভাত আটকে গেল। কাঁচা ইলিশের গন্ধটা যে কী মিষ্টি! কাঁচালংকা কালোজিরে দিয়ে ঝোল? না, না, সরষে বাটা দিয়ে। নাকি দই ইলিশ? ভাজা মাছ আর মাছভাজা তেল দিয়ে কাঁচালংকা পেঁয়াজ দিয়ে একথালা ভাত খেতে পারেন খেয়ালবাবু। ইলিশের মাথা দিয়ে কচুর শাক? সঙ্গে একটু ছোলা?
মনোরমা বললেন, কে দিল?
রমা গর্বের সঙ্গে বলল, ও।
গর্বে রমার নাকের পাটা ফুলে উঠল।
খেয়ালবাবু বললেন, ওরে, ডাক ঝন্টুকে। ওকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখলি কেন?
ঝন্টু হাসনুহানার ঝোপের পাশ দিয়ে এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়াল।
মনোরমা বললেন, এতবড়ো মাছ কোথায় পেলে বাবা?
ঝন্টু তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, গেছিলাম রানাঘাটে গুড় কিনতে মহাজনের গদিতে। সাড়ে তিনটের পর লালগোলা প্যাসেঞ্জার এল। নিয়ে এলাম লালগোলার ইলিশ। টাটকা মাছ। বরফ দেওয়া নয়।
খেয়ালবাবু বললেন, কত করে নিল বাবা?
আঠারো টাকা। ঝন্টু বলল।
আঠারো টাকা? এই মাছটা? আতঙ্কিত গলায় বললেন খেয়ালবাবু।
ঝন্টু হাসল। বলল, না মাছটার দাম ছাব্বিশ টাকা। আঠারো টাকা কেজি।
—ছাব্বিশ টাকা। উস। কইস কী রে তুই! ই তো চিন্তা করনও যায় না।
বলেই, স্তম্ভিত হয়ে গেলেন খেয়ালবাবু।
রমা বলল, মা আমি আসছি একটু।
মনোরমা বললেন, বেশি দেরি করিস না।
আচ্ছা! বলে, রমা চলে গেল ঝন্টুর সঙ্গে।
খেয়ালবাবু বুঝলেন এখন ওরা অন্ধকারে পুকুরধারে গিয়ে কাঁঠালতলার নীচের অন্ধকারে শান বাঁধানো জায়গাটাতে বসবে। তারপর…..
হঠাৎ ইলিশটার গা দিয়ে একটা বিজাতীয় অপমানকর গন্ধ বেরোল বলে মনে হল।
মনোরমা অস্ফুটে বললেন, তেল আছে একরত্তি? সাঁতলিয়ে যে রাখব, তারও উপায় নেই।
তারপর নিজেই গেলেন পাশের বাড়ির পরেশের মা-র কাছে একটু তেল ধার করতে।
খেয়ালবাবুর খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই ফিরে এলেন মনোরমা! বললেন, ছোটোলোক!
কে? খেয়ালবাবু শুধালেন।
—ওই যে! পরেশের মা।
কেন? খেয়ালবাবু ঘটির জল নিয়ে রান্নাঘরের পাশে আঁচাতে আঁচাতে শুধোলেন।
মনোরমা বললেন—বলল, আমার ঘরে অমন ডাগর মেয়ে থাকলে আমারও ইলিশ খাওয়ার ভাগ্য হত রে মনো রোজ রোজ।
খেয়ালবাবু চটে গেলেন ভীষণ। বললেন, তুমি কিছু বললে না? ছেড়ে দিলে?
মনোরমা অনেকক্ষণ খেয়ালবাবুর দিকে তাকিয়ে রইলেন। আঁচলটা খসে গেছিল মাথা থেকে। চোখের নীচে গভীর কালি। ক্লান্তি, বড়োই ক্লান্তি চোখে-মুখে, যেন কাজল পরিয়ে দিয়েছে কেউ কচি কলাপাতায় নতুন কাজল তুলে।
কী বলব?
খেয়ালবাবু একটুক্ষণ স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে থেকে, জবাব দিলেন না।
বললেন, মাছটা আগে কেটো না। মেজো-ছোটো ফিরে এসে দেখুক। এতবড়ো মাছ কত বছর চোখে দেখেনি। তারপর সুর টেনে বললেন, আ-ঠা-রো টাকা কেজি? কত বছর বড়ো মাছের দোকানে যাই না। কিন্তু ইলিশের দোকানে তো ভিড়ও কম থাকে না! আঠারো টাকা কেজির মাছ কেনার লোকও তো দেখি কম নেই।
মনোরমা ঠেস দিয়ে বললেন, থাকবে না কেন? সবাই তো আর তোমার মতো বড়োলোক নয়!
তারপর খেয়ালবাবুর হাতে আর এক গ্লাস জল এগিয়ে দিয়ে একটু মৌরি দিলেন।
জলটা খেয়ে নিয়ে মৌরি মুখে ফেলে খেয়ালবাবু বললেন, এখন এত রাতে এই এতবড়ো মাছটা কাটাকুটি করে সাঁতলানোও তো কম ঝামেলার নয়। রমাও তো সময় বুঝে চলে গেল।
মনোরমা জ্বলন্ত চোখে তাকালেন খেয়ালবাবুর দিকে।
খেয়ালবাবু বুঝলেন যে, যার কারণে এতবড়ো ইলিশ, তাকেই হেনস্থা করাটা ঠিক হল না।
ঘরে এসে খেয়ালবাবু খাটে শুয়ে পড়লেন। ঠিক শোয়া নয়, তাকিয়া হেলান দিয়ে আধশোয়া। শালকাঠের তক্তপোশ। পাশাপাশি দুটি। একটিতে উনি শোন, অন্যটিতে মেজো। মনোরমা রমাকে ও ছোটোকে নিয়ে পাশের ঘরে শোন। দেওয়ালে সাদা কাপড়ের ওপর লাল সুতোয় লেখা : ‘গড ইজ গুড’। ‘অনেস্টি ইজ দা বেস্ট পলিসি’। ঘরের কোণে একটা টেবিল কভার। বড়োমেয়ে বিয়ের আগে বুনেছিল। তার ওপর পরমহংসদেব এবং বড়ো মেয়ে-জামাইয়ের একটা ফোটো। বড়োছেলে ও বউমার ফোটোও ছিল। কিন্তু ওরা আলাদা হয়ে যাওয়ার পর মনোরমা টিনের ট্রাংকে ভরে ফেলেছেন ওদের ফোটো।
বাইরে একটা বিড়াল ডাকছিল। একটা হুলো। ব্যাংও ডাকছিল ক্রমাগত। এক বার মেঘগর্জন হল। বিদ্যুৎ চমকাল হঠাৎ। তারপরই ঝোড়ো হাওয়া দিল। নারকোল গাছের আর আম-কাঁঠালের পাতায় ঝরনার মতো ঝরঝর শব্দ উঠল। লাল-হলুদরঙা কাঁঠাল পাতা ঝরে পড়ল বাতাসে।
রান্নাঘর থেকে ইলিশ মাছের রক্তের গন্ধ আসছিল। বেড়ালটাও বোধ হয় গন্ধটা পেয়ে থাকবে। রান্নাঘরের আশপাশে ওঁয়াও-ওঁয়াও করে বেড়াচ্ছিল বেড়ালটা। টুপটাপ করে বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ হল। মনোরমা ডাকলেন ছোটোকে। বললেন, দ্যাখ তো রমা কোথায়? বৃষ্টিতে বাইরে কেন? ওদের এসে মধ্যের ঘরে বসতে বল-না কেন?
তারপর কী ভেবে বললেন, তোর এই অন্ধকারে কাঁঠালতলায় যাওয়ার দরকার নেই। প্রথম বৃষ্টি। সাপখোপ থাকবে। তুই নারকোল গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে দিদি বলে ডাক।
দূরের কোনো বাড়িতে ট্রানজিস্টর রেডিয়ো বাজছে। পাশের বাড়িতে কেউ টিউবওয়েলে কিচ কিচ করে জল তুলছে। ব্যাঙের ডাক। বৃষ্টির শব্দ।
ছোটো ডাকল, দিদি! অ্যাই দিদি—ই-ই-ই।
মনোরমা বললেন, পাড়া মাথায় করছিস কেন? বল, মা খেতে ডাকছে।
খেয়ালবাবুর হঠাৎ মনে হল রেডিয়োতে কে যেন মন্থরগতিতে আলাপ করছে। আরাম লাগল খেয়ালবাবুর। একটি বিড়ি ধরিয়ে ওই ভাসমান হয়ে ইলিশের গায়ের গন্ধে বুঁদ হয়ে খেয়ালবাবু আধো-ঘুমে, আধো-জাগরণে বড়ো সুখের মধ্যে ভাসতে ভাসতে কোন গন্ধর্বলোকের দিকে যেন এগোতে লাগলেন। কতক্ষণ এমন ঘোরের মধ্যে ছিলেন জানেন না, হঠাৎ গায়ক যেন দরবারি রাগের তারানা গেয়ে সমস্ত ঘুমন্ত গ্রামীণ রাতকে চমকে দিলেন।
হঠাৎ খেয়ালবাবু দেখতে পেলেন বেড়ালটাকে।
একটা কালো বেড়াল।
বাইরে ওঁয়াও ওঁয়াও করে ডাকছিল। কালো বেড়াল বড়ো অলুক্ষণে। বারাকপুরে ইছামতীর ধারে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ির উঠোনে কে যেন একটা কালো বেড়ালের হাড় পুঁতে দেওয়ায় তারা নির্বংশ হয়েছিল। একবার ভাবলেন, বেড়ালটাকে লাঠি মেরে তাড়ান। তারপর ভাবলেন, ইলিশ মাছ সাঁতলানোর গন্ধে তাঁরই এমন নেশা নেশা লাগছে, আর বেড়ালটার দোষ কী? বেড়াল তো শুধু কাঁটাই পাবে, তিনি তো মাছ খাবেন। গাদা-ভাজা, কোলের ঝোল। ডিম থাকলে, ডিমভাজা। ডিম না থাকলে মাছটায় কেমন তেল হবে ভাবছিলেন খেয়ালবাবু।
ততক্ষণে দরবারির তারানা জমে গেছিল। খেয়ালবাবু টিপটিপে বৃষ্টি আর মৃদু হাওয়ায় হাসনুহানার গন্ধে ঘুমিয়ে পড়লেন।
তিন
অফিসে এসেই দেখেন হিতেন এবং জমাদার তাঁদের ঘর ঝাড়পোঁছ করছে ভালো করে সকালে। সমীরণও আছে।
খেয়ালবাবু বললেন, কী ব্যাপার?
সমীরণ চুপ করে রইল। বলল, মেশিন বসবে এখানে কাল।
খেয়ালবাবুর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। বললেন, কী মেশিন?
ফোটোকপি। সমীরণ বলল।
ফোটোকপি? খেয়ালবাবু আস্তে আস্তে বললেন।
কাজ শেষ করে হিতেন টাইপ মেশিনটা বের করে দিল। খেয়ালবাবু সেদিন বিশেষই নরম গলায় বললেন, ছোটোসাহেব বা বড়োসাহেব এলেই খবর দিস।
ছোটোসাহেব এসে গেছিলেন আগেই। চেম্বারটা কাঠের। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। আছেন কী নেই! বড়োসাহেব এলেন। কিন্তু কোনো সাহেবই খেয়ালবাবুকে ডাকলেন না। খেয়ালবাবু কপির কাজ যা ছিল অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে করতে লাগলেন।
বিকেলের দিকে সমীরণকে একবার ছোটোসাহেব ডেকেছিলেন। তার ঘর থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর বেরোল সমীরণ। মুখটা গম্ভীর।
খেয়ালবাবু বললেন, হিতেন, এক কাপ চা খাওয়া বাবা।
চা-টা অফিসের ক্যান্টিনেই হয়। ফ্রি! এই চা-টা ভালো লাগে খেয়ালবাবুর। বাড়ির চা মুখে দিতে পারেন না।
সমীরণ হঠাৎ গায়ে পড়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, ভালো করে চা খাওয়া হিতেন, খেয়ালবাবুকে। তারপর বলল, ভেজিটেবল চপ খাবেন খেয়ালদা।
খেয়ালবাবু অবাক হলেন। সমীরণ গত তিন বছরে কখনো কিছু খাওয়ায়নি খেয়ালদাকে। যার ফেরত দেবার ক্ষমতা নেই কিছু, তাকে কে আর খাতির করে?
—কী ব্যাপার সমীরণ?
সমীরণ লজ্জা পেল। বলল, না, আমি আনতে দেব ভাবছিলাম, আপনি যদি খান, তাই-ই।
—না থাক। আজ আর খাব না। কাল খাব।
আজ বাড়িতে মনোরমা ভালো করে মাছ রান্না করবেন। সকালে শুধু ডাল আর বেগুনভাজা দিয়ে খেয়ে এসেছেন খেয়ালবাবু। আজ রাতের খাওয়াটা তিনি ভেজিটেবল চপ খেয়ে নষ্ট করতে রাজি নন। ক্যাশিয়ার মদনবাবু অন্যদিন কাজকর্মের ফাঁকে মালিকদের শ্রাদ্ধ করেন। তিনি ব্যাচেলার। একটা মেসে থাকেন। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। মালিকদের শ্রাদ্ধ না করলে তাঁর কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে। কিন্তু মদনবাবু আজ একেবারেই চুপচাপ। মাঝে মাঝে খেয়ালবাবুর দিকে তাকাচ্ছেন কিন্তু চোখে চোখ রাখতে পারছেন না।
অন্য টাইপিস্ট হরেন কী যেন একটা কনফিডেনশিয়াল চিঠি টাইপ করে সাহেবদের ঘরে নিয়ে গেল। খেয়ালবাবু অবাক হলেন। কারণ, কনফিডেনশিয়াল ম্যাটারস সাহেবরা ওঁকে ছাড়া কাউকেই দেন না সচরাচর।
সেদিন সন্ধে ছ-টা বাজতে-না-বাজতে হিতেন এসে বলল, খেয়ালদা, আর কোনো কাজ বাকি নেই। বড়োসাহেব আপনাকে চলে যেতে বললেন, আর যাওয়ার সময় ছোটোসাহেবের সঙ্গে দেখা করে যাবেন একবার।
খেয়ালবাবু অবাক হলেন হিতেনের ব্যবহারে।
খেয়ালবাবু জুতোটায় পা গলালেন দেয়ালে হেলান দিয়ে, কষ্ট করে। ছাতাটা এঘরেই রাখলেন। তারপর ছোটোসাহেবের ঘরে গেলেন।
ছোটোসাহেবের ঘরে কালকের ভদ্রলোক বসেছিলেন। আজ একটা অন্য টাই। টেবিলে ইণ্ডিয়া কিংস-এর প্যাকেট। মুখে গর্বিত ও কৃতী একটা ভাব।
ছোটোসাহেব বললেন, খেয়ালবাবু আপনিই এখানে একমাত্র সুপার অ্যানুয়েটেড। আমরা কাল একটা ফোটোকপি মেশিন বসাচ্ছি। অনেকই দাম। মেইনটেনান্স-এর খরচও অনেক। এই বাজারে আপনাকে রেখেও আপনার চেয়ে অনেক কমপিটেন্ট মেকানিক্যাল সাবস্টিটিউট মেইনটেন করা বেশ মুশকিল! আমরা জানি যে, আপনার দুই মেয়ের বিয়ে এখনও বাকি। যখন মেয়ের বিয়ের ঠিক হবে তখন জানাবেন। উই উইল সি, হোয়াট ক্যান উই ডু অ্যাবাউট ইট। তবে একজনের বিয়েই।
তারপর একটু থেমে বললেন, আপনি অনেকদিন এখানে কাজ করেছেন, এবং উই আর থ্যাঙ্কফুল টু ইউ। সেইজন্যেই হঠাৎ ‘না’ করার আগে আমরা একটু ভেবে দেখছি। আপনাকে আগে থাকতে বলে রাখা দরকার বলেই বলে রাখলাম।
তারপরে বললেন, এখন আপনি আসুন। মামা আজ তাড়াতাড়ি চলে গেছেন। পরে সময় করে একদিন ওঁর সঙ্গে দেখা করে নেবেন।
খেয়ালবাবু তাকিয়ে দেখলেন বড়োসাহেবের ঘরখানি।
খেয়ালবাবু নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে ও ঘরের সহকর্মীদের মুখে তাকাতেই বুঝতে পারলেন যে, ওঁরা আগেই খবরটা জানতেন। এবং জানতেন বলেই, সকলেই অস্বাভাবিক আজ। সকলেই গম্ভীর।
খেয়ালবাবু কথা বলতে পারলেন না প্রায় কারও সঙ্গেই। চোখটা বোধ হয় ভিজে এসেছিল। বললেন, চলি।
অন্য সকলেই, মদনবাবু, সমীরণ, হিতেন প্রায় সমস্বরে বলে উঠল, যাওয়া নেই আসুন। কাল থেকে আর অত সকালে আসবেন না! এগারোটা নাগাদই আসবেন।
মনে হল যেন ওরাই খেয়ালবাবুর মালিক।
খেয়ালবাবু যাওয়ার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে সমীরণকে শুধোলেন, আচ্ছা সমীরণ, সুপার অ্যানুয়েটেড কথাটার মানে কী?
সমীরণ বলল, যাদের রিটায়ারমেন্টের বয়স হয়ে গেছে। পঞ্চান্ন বছর বা আটান্ন বছর কোথাও কোথাও।
খেয়ালবাবু কী একটা বলতে যাচ্ছিলেন। মদনবাবু বললেন, চাকরি তো যায়নি রে এখনও বাবা! এখন থেকেই এত ভাবনা কীসের?
খেয়ালবাবু ভাবছিলেন যে, গত পঁচিশ বছর সকাল ন-টা থেকে রাত আটটা অবধি রোজ কাজ করেছেন তিনিও। কিন্তু তখন সময়ের দাম ছিল না কোনোই। এখন হঠাৎ বড়ো দামি হয়ে গেছে সময়।
মুখে কিছু বললেন না। বলবেনই-বা কাকে?
লিফটের সামনেই সেই টাইপরা ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা।
খেয়ালবাবু ভক্তিভরে তাঁকেই নমস্কার করলেন। বললেন, স্যার আপনি?
ভদ্রলোক বাঁ-হাতে টাইয়ের নটটা ঠিক করতে করতে বললেন, আমি ফোটো-কপি মেশিন নিয়েই ডিল করি।
খেয়ালবাবু বললেন, ব্যাপারটা কী যদি জানতাম স্যার। জিনিসটা কেমন দেখতে? আমিও তো টাইপিস্টই! ফোটোকপি মেশিনটা কী ব্যাপার, যার জন্যে বহুটাইপিস্টের চাকরি চলে যাবে? বড়ো জানতে ইচ্ছে করে।
ভদ্রলোক হাসলেন ইডিয়ট খেয়ালবাবুর কথা শুনে। এই ওল্ড আইডিয়াজ-এর লোকগুলোই দেশটাকে খেল। তারপর হাঁটুটা দেওয়ালে ঠেকিয়ে, তার ওপর ব্রিফকেসটা রেখে; এক কপি লিটারেচার খেয়ালবাবুর হাতে দিলেন।
সুন্দর ঝকঝকে ছাপা, চকচকে কাগজের পাতলা বইটা নিয়ে খেয়ালবাবু পাঞ্জাবির পকেটে রাখলেন।
বাড়ি যখন পৌঁছোলেন সেদিন, দেখলেন যে, তাঁর নিজের স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে কেউই তাঁকে ওই সময় বাড়িতে আশা করে না বলে তাঁর হঠাৎ না বলে-কয়ে সন্ধে লাগতে-না-লাগতে ফিরে আসাতে অনেকেরই বিলক্ষণ অসুবিধা হল। খেয়ালবাবু অপরাধী বোধ করলেন নিজেকে।
মনোরমা বললেন, কি? ইলিশ মাছের লোভেই এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে?
খেয়ালবাবু জবাব দিলেন না।
রমা সাজগোজ করে ঝন্টুর সঙ্গে বেরিয়ে গেল, বারাসতে নতুন সিনেমা হল হয়েছে ‘সরমা’, সেখানে সিনেমা দেখতে। সাইকেল-রিকশা করে গেল ওরা। পাশে পাশে ঝন্টুর দুই বন্ধু সাইকেল চালিয়ে গেল।
খেয়ালবাবু মুখ তুলে তাকাতে, মনোরমা বললেন, তোমার সুপুত্রর জন্যেই ঝন্টু সঙ্গে বডিগার্ড নিল। মেজো বলেছে, ও নাকি প্যাঁদাবে ঝন্টুকে। এমন প্যাঁদান প্যাঁদাবে যে, হাড়গোড় ভেঙে দেবে।
খেয়ালবাবু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।
বললেন, ঝন্টুর বডিগার্ডরা কী করবে খালিহাতে? একটা লাঠিও তো নেই।
মনোরমা হাসলেন। বললেন, তোমাদের যুগ চলে গেছে। লাঠি রাখে না ওরা কেউ আজকাল। কোমরের তলায় লুকানো পিস্তল-রিভলবার গোঁজা থাকে, চাইলে স্টেনগান-ব্রেনগানও পাবে। এখন গুণ্ডামি একটা মস্ত ব্যাবসা। টাকা দাও-না তুমি! কাকে খতম করে দিতে হবে তা জানলেই খেলা আরম্ভ হবে। এখন এসব ছেলেখেলা। নিজের হাতের জোর বা বুকের সাহসের দাম এখন এক আধলাও নয়।
জানি। খেয়ালবাবু বললেন, মানুষের দাম নেই, যন্ত্রের আছে।
মনোরমা ঠাট্টা করে বললেন, এখুনি কি খাবে?
খেয়ালবাবু লজ্জিত হলেন।
বললেন, না না। শরীরটা খারাপ তাই তাড়াতাড়ি এলাম।
তারপর দেখলেন ঘড়িতে সাতটা বেজেছে।
পুকুরে ডুব দিতে দিতে খেয়ালবাবু ভাবছিলেন তাঁর চাকরিটা এখনও যায়নি। চাকরি থাকতেই তাঁর যা সমাদর সংসারের সকলের কাছে, চাকরিটা না থাকলে কী যে হবে? তখন কি ঝন্টুর দেওয়া অসম্মানের ভাত-ডাল ও বউ-ছেলে-মেয়ের শীতল উপেক্ষার কাঁথায় নিজেকে মুড়ে রেখেই জীবনটা কাটবে?
বিড়ালটা ডাকল ওঁয়াও। খেয়ালবাবু গলাজলে দাঁড়িয়ে মুখ তুলে দেখলেন।
ঘাটের সিঁড়িতে বসে আছে কালো বেড়ালটা। অন্ধকারে বাঘের মতো জ্বলছে চোখ দুটো।
খেয়ালবাবু বললেন, শালা! বলেই দু-হাত দিয়ে জল ছিটোলেন। কালো বেড়ালটা কালো অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। নারকোল গাছের পাতা সমেত ডাল ঝরে পড়ল ঝুপ করে, জলের মধ্যে। সাঁতরে গিয়ে ডাঙায় তুললেন সেটাকে। শুকুলে ঝাঁটা হবে।
চান সেরে এসে লুঙ্গি পরে উদলা গায়ে খাটের ওপর উঠে লণ্ঠনটাকে কাছে নিয়ে বসলেন। ফোটোকপি মেশিনের সেই ঝকঝকে কাগজটা সন্তর্পণে খুললেন। বাসে আসার সময় সাহস করে খুলতে পারেননি। খুব সাবধানে পাতাটা উলটোলেন। পাতা উলটোতেই খেয়ালবাবুর হৃৎপিন্ড স্তব্ধ হয়ে গেল।
একটা বিড়াল।
কালো বিড়ালের ছবি। বিরাট মেশিনটার ওপরে বসে আছে কালো বিড়ালটা।
তাড়াতাড়ি বন্ধ করে ফেললেন কাগজটা। বিড়ালটা জানলার পাশেই ছিল। ডেকে উঠল। ম্যাঁও করে। তারপর জানলার দিয়ে উঁকি মারল ওঁর দিকে। খেয়ালবাবুর হাত-পা অবশ হয়ে গেল। বিড়ালটাকে যে তাড়াবেন তেমন গায়ের জোর ও গলার জোরও পেলেন না। আস্তে আস্তে কাগজটা রেখে শুয়ে পড়লেন। লণ্ঠনটা কমিয়ে রাখলেন।
আধো-অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে দু-হাতের আঙুলগুলোকে চোখের সামনে তুললেন উনি। এই আঙুলগুলোই টাইপ টিপে টিপে তাঁকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছে। তার ছেলেরা, বড়ো-মেজো-ছোটো, মেয়েরা সকলে এই আঙুলের রোজগারেই মানুষ। দিনের শেষে বড়ো ব্যথা করে আঙুলগুলো।মাঝে গরম জল করে সেঁক দিতেন। বাতের মতো হয়েছে ইদানীং।
মনোরমার কথা মনে পড়ল। আজকাল গায়ের জোর তামাদি হয়ে গেছে।
এখন যন্ত্রর জোরটাই জোর। এই আঙুলগুলোও বেকার হয়ে গেছে একেবারে!
বিড়ালটা আবার ডাকল, ওঁয়াও।
খেয়ালবাবু চোখ বুজলেন। বাইরে থেকে হাসনুহানার গন্ধ আসছিল। বৃষ্টির পর পুকুরপাড় থেকে সোঁদা গন্ধ।
কালো বিড়ালটা আবারও ডাকল। তারপর বিড়ালটা চারদিক থেকে ডাকতে ডাকতে এসে তাঁর মস্তিষ্কের কোষে কোষে সেই অলক্ষুণে ডাক ভরে দিল।
বিড়ালটা ক্রমান্বয়ে ডেকেই চলেছিল।