উনত্রিশে জুন এবং সন্তোষ

উনত্রিশে জুন এবং সন্তোষ

এটা কী গাছ জানিস?

—গাছ গাছই। অত নামধাম জেনে দরকার কী?

—তবু, এতবড়ো গাছটা মাঠজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্রহ্মদৈত্যর মতো, তার নামটাও জানতে ইচ্ছে করে না?

—গাছের নাম জানলে কি পেট ভরবে আমার? ওইসব বিলাসিতা আপনাদের মতো বাবুদেরই মানায়। গাছ গাছই, পাখি পাখিই, এর চেয়ে বেশি জানার দরকার কী?

—তুই সত্যি সত্যিই একটা গন্ডমূর্খ সন্তোষ। নিজের নামটাও সই করতে পারিস না।

নিজের পেটের ডান দিকে হাতটা ঠেকিয়েই বলল, এই মরেছে! আবার ব্যথাটা চাগার দিল গো। বেশ ছিলাম ক-টা দিন।

—তুই তো সিউড়িতে গেছিলি।

—সিউড়িতে তো যাইনি। কী য্যান জায়গার নাম? সিয়ান নাকি সউনো।

—পল্টুবাবুটি কে?

—সি কী? আপনারে তো দেশ থিকি বার করি দিবে। পিসিডেন্টের নামটি পর্যন্ত জানোনি?

—কীসের পিসিডেন্ট?

—আরে! ভারতের রাষ্ট্রপতি। দিল্লিতে থাকে গো। রাইসিনা পাহাড়ে। মদনবাবুর বাড়িতে টিভিতে দেখেছিলাম।

—কী দেখেছিলি?

—সে মেলা লোক! ব্যাটাছেলে মেয়েছেলে সব হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে পল্টুবাবুর বাড়ির দিকে যাচ্ছিল যে গো? তবে পিসিডেন্টের বাড়ি বলে কথা। যাব বললিই কি যাওয়া যায়? পুলিশ আইটকে দিল।

—তুই বড়ো আজেবাজে কথা বলিস। হচ্ছিল তোর পেটব্যথার কথা সিয়ানের হাসপাতালে গেছিলি, তা দিলি সব গোলমাল করে।

—আ আ বাবুগো ইবারে মরেই যাব।

—তা সিয়ানের ডাক্তার কী বলল?

বলল, সিউড়ি যেতে। সেথায় গিয়ে বড়ো ডাক্তার দেকাতে, পেটের ছবি তুলতে, আরও কীসব পরীক্ষানিরীক্ষা করতে সে। সব অনেক টাকার ব্যাপার বাবু। সিউড়ি যাতায়াতের বাসভাড়াই জোটাতে প্রাণ যায় তার ওপর আবার অতসব হ্যাপা।

তা টেস্ট না করালে চিকিৎসাটা হবে কী করে। ডাক্তার যদি বুঝতেই না পারে আসলে কী হয়েছে তবে চিকিৎসাটা করবে কী করে।

—তার আমি কী করব।

—তাহলে পেটে হাত দিয়ে শুয়ে থাক। আর কী করবি।

—তোমার কাছ থেকে তো বার বার চাওয়া যায় না। গতবারও দিছিলে এক কাঁড়ি টাকা। চিঠিও নিকে দেছিলে ডাক্তারকে তা সিউড়ি যাওয়া-আসাই সার হল। ডাক্তার বললে পঁচিশ হাজার খরচ আছে। পেট অপারেশন করতে হবে। তা অত টাকা তো তুমি দিলে না। আমিই-বা পাই কোত্থেকে। পেটের মদ্দি যা আছে তা থাক। শুধু ব্যথাটা উঠলে আর সহ্য করতে পারি না। মনে হয় বাসের নীচে লাফিয়ে পড়ি। কিন্তু বউটার কী হবে? আর ছোটোছেলেটার? ছোটোটার যে মাত্র আট-ন বছর বয়স।

বড়োটা কি এখনও তোর শালার কাছে ছুতোরের কাজ শিখছে? আসে তো মাঝেমধ্যে?

—তা আসে।

—রোজগার কেমন করে?

এখনও তো মামার জোগানদার। অ্যাপেনটিসি করতেছে। নিজে একা কাজ করতে শুরু করেনি এখনও। কবে পারবে তা তো জানি না। তবে মামার বাড়িতেই থাকে, দু-বেলা খেতেও পায়। তার পেটটা ভরে এইটাই শান্তি।

—পেটের ব্যথা নিয়ে সাইকেলটা টেনে নিয়ে যেতে তোর কষ্ট হলে আমাকে দে। আমিই নিয়ে যাচ্ছি।

—না। একটু পরেই বিশ্বভারতীর গেটের বাইরে গিয়ে সাইকেলে চড়ে বসব।

—আজ আমার ওখানে খাবি না?

—না। বাপিদা যে বলল, আজকে আমার ভাতের চাল নেয়নি। আপনি নাকি বলেননি। কাল থেকে নেবে বলেছে।

আমি চুপ করে রইলাম। কথাটায় যাদের মন ছোটো হয় তারা সবাই ছোটোলোক। সে গরিবই হোক কী বড়োলোক। নইলে মালিকের পয়সাতে খাওয়াবে একটি গরিব মানুষকে, তাও একবেলা, তাতেও এত কার্পণ্য?

মনটা খারাপ হয়ে গেল।

বিশ্বভারতীর কম্পাউণ্ড থেকে বেরোতে সন্তোষকে বললাম, গাছটার দিকে আর এক বার তাকিয়ে দ্যাখ। এই গাছও না চিনলে তোকে শান্তিনিকেতনে থাকতে দেবে না।

—কে?

—বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষ।

—ফু:। ছাড়ুন তো ওনাদের কথা! এত বছর ধরে নদীর প্রায় ওপরেই মাটির ঘর বানিয়ে আছি। প্রতিবছরই ঘর পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়, তা ছাড়া এবারে যা বৃষ্টি তা এতদিন পরে ওরা জরিপ করে বার করলেন যে, ওই জমিও, মানে খোয়াইও ওঁদেরই সম্পত্তি। আমাদের তাড়িয়ে দেবেন বলছেন।

—গাছটার নাম ছাতিম। ওই গাছের নীচেই রবিঠাকুরের দাদু পালকি থামিয়েছিলেন এক গরমের দুপুরে। সেই গাছের জন্যেই শান্তিনিকেতনের জন্ম বুঝলি!

—বুঝলাম না, তবে জানতি পেলাম।

—গাছ চিনতে হয় গাছের পাতা দেখে।

—অ। আর মানুষ কী করে চিনতে হয়? মানুষ চেনার ওরকম কোনো সোজা উপায় আছে?

আমি হেসে বললাম, না। তবে মানুষের রকম মাত্র দুই।

—কীরকম?

—ভালো মানুষ আর খারাপ মানুষ।

—বা:। এই কথাটি বেশ বলেছেন বাবু।

দুই

বাইরে বেরিয়ে আমি বললাম, কাল ভোরে আসবি তো?

—আসব বই কী। বাপিদা তো আগেই দরজা খুলে রাখে। আপনার পা টেপা শুরু করে দেব। বাপিদা চা দেবে আপনাকে পরে। আপনার চা খাওয়ার পর আমরাও চা খাব।

—কাল চায়ের সঙ্গে কী খাবি?

—ওই।

—ওই মানে কী?

—ওই মানে মুড়ি। বাপিদা তো চায়ের সঙ্গে ওই দেয়।

—না। কাল জিলিপি আর শিঙাড়া খাস।

—কেন?

—কালকে আমার জন্মদিন।

—তাই? তাহলে আপনার জন্যে তাল নিয়ে আসব দুটি। বাপিদাকে বলব তালের বড়া ভেজে দেবে।

—তুইও খাবি তো?

—খাব বই কী। আপনি তো উপলক্ষ্য। ইকানে খাইদ্য খাদকের বড়োই অভাব। একটা উপলক্ষ্য হলেই ভালো-মন্দ কিছু খাওয়া যায়।

—কাল তো আবার মাসের চোদ্দো তারিখ। তাহলে আপনার জন্মদিন চোদ্দোই আষাঢ়?

—হ্যাঁ। তাই তো জানি। ইংরেজিতে উনত্রিশে জুন।

—বড়ো বড়ো বাবুদের জন্মদিনে যে অনেক মানুষ আসে। খাওয়াদাওয়া, ফুলমালার পাহাড় জমে যায়, তা আপনার জন্মদিনে ওইসব কিছু হবেনি?

—না। আমার জন্মদিনে বাপি, তার বউ আলো, বাচ্চা মেয়েটা আর তুই খাবি আমার সঙ্গে। কী খাবি তাই বল।

—সকালে তো বললেন জিলিপি-শিঙাড়া খাব। আবার কী খাব?

—মাংস খাবি?

—মাংস। কত বছর হয়ে গেছে চোখেই দেখিনি। তিন বছর আগে আমার বড়োশালার বড়োমেয়ের বিয়েতে খাইয়েছিল। আহা! স্বাদ এখনও লেগে আছে মুখে। ডুমো ডুমো করে আলু কেটে ভালো করে ঝাল ঝাল করে রেঁধেছিল মিনু বউদি। আধসের চালের ভাত আমি একাই খেয়েছিলাম।

—কাল তোর জন্যে কতখানি চাল নেবে তা বাপিকে বলে দিস আগে থেকে।

—বাপি রান্নাটা খুব ভালো করে। এখন মাংসর কেজি কত করে?

—ঠিক জানি না। কলকাতাতে আমি তো বাজারে যাই না। এখানে এলেই বরং যাই মাঝে মাঝে। শ্যামবাটীর বাজার থেকে ছোটোমাছ কিনি, কখনো-সখনো মাছের মুড়ো, মুড়িঘণ্ট খাবার জন্যে। ওলকচু। কচুর শাক। এইসব যা কলকাতাতে খেতে পাই না।

আমরা তো মাত্র এই ক-জন লোক খাব। কত মাংস আনবি?

—যত বলবেন। কোথা থেকে আনব? উৎপলের দোকান থেকে?

তারপরই বলল, আমি আনব কেন? বাপিদা আনবে না?

—না। তুই-ই আনবি।

তারপর বললাম, বাপি খুবই কাজের ছেলে। কিন্তু হলে কী হয়?

—কী হয়?

—চোর। এই দেশের অফিসার, কেরানি, যারাই কাজের লোক তারা অধিকাংশ চোর।

—চোর?

—হ্যাঁ। মন্ত্রী-সান্ত্রিরাও চোর। কেউ কোটি কোটি টাকা চুরি করে মন্ত্রীদের মতো, আর কেউ বাপির মতো দশ-কুড়ি টাকা। গুণী অথচ চোর নয়, এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাবি এখানে। চোরেদের রাজত্ব না থাকলে এ দেশ সোনার দেশ হয়ে যেতে পারত।

—আমি তাইলে যাই বাবু। বউটা বসে থাকবে না-খেয়ে। ছোটোছেলেটার আবার মিরগি রোগ। বাড়ি থেকে বাইরে গেলেই ভয় হয়। পথে-ঘাটে কখন যে তাকে মিরগিতে পায়। চিন্তা হয়।

—তাহলে আমি এগোলাম।

—হেঁটেই যাবেন, একটা রিকশা নিয়ে নেন না কেন?

—কলকাতাতে গাড়ি চড়ে চড়েই তো শরীরটার সর্বনাশ হয়েছে! এখানে এলেই যা হাঁটাহাঁটি হয়। তুই এগো। আমিও যাই।

তিন

সন্তোষটা বড়োই গরিব। আমাদের মধ্যে অনেকেই, বিশেষ করে শহরে মানুষেরা গরিবির কিছু জানি না। ‘গরিবি হঠাও’ কথাটা রাজা-রানির বৈভবে দিন কাটানো এ দেশীয় অনেক নেতার মুখে ভোট বাগাবার মন্ত্র হিসেবে উচ্চারিত হতে শুনি। মোটরকেড নিয়ে তাদের ভেঁপু বাজানো যাতায়াত শুনতে পাই। ভন্ডামির পরম পরাকাষ্ঠা দেখি চতুর্দিকে, কিন্তু এ দেশের গরিবদের কথা নির্বাচনের আগে ছাড়া কোনো নেতাই বিশেষ ভাবেন না। গুণীজ্ঞানীরা তাঁদের খেতাব, পুরস্কার ইত্যাদি বাগাবার জন্যে নিরন্তর হরকত করে যান, চোখের সামনে দেখতে পাই। সব নেতারাই বলেন যে, ‘আইন আইনের পথে চলবে’। কিন্তু আইন যে কোন পথে চলছে তা আমরা প্রতিদিনই নানা মিডিয়াতে চোখ রাখলেই দেখতে পাই। ওঁরা বোধ হয় ‘বন্দেমাতরম’-এর প্রণেতা বঙ্কিমচন্দ্রের সেই উক্তির কথা জানেন না। অনেকেই পড়েনওনি। আজকালকার নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে পড়াশোনার বিশেষ সম্পর্ক নেই। অতিসামান্যজনই যা পড়া করেছেন অথবা করেন। ডিগ্রি আর শিক্ষা এককথা নয়। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমবাবু লিখেছিলেন, ‘‘আইন! সে তো তামাশামাত্র। বড়োলোকেরাই পয়সা খরচ করিয়া সে তামাশা দেখিতে পারে।’’ বঙ্কিমবাবুর সময়ে এই বাক্যটি যতখানি সত্যি ছিল, আজকের দিনে তা, তার চেয়েও বেশি সত্যি। তবু সেই সময়ে ডাক্তার বা অধ্যাপকেরা অন্যরকম ছিলেন। আজকে যেদিকে দু-চোখ যায় সবদিকেই একই ছবি। দেশ ও কাল নিয়ে যত কম ভাবা যায় ততই ভালো বোধ হয়।

রাতে বাপি কলাইয়ের ডাল, ঝিঙে পোস্ত এবং নারকোলের বড়া রেঁধেছিল। রাতে কলকাতাতে সাধারণত একটা সুপ আর দুটি টোস্ট খাই। এইরকম খাওয়াতে অভ্যস্ত নই। খাওয়ার পরিমাণও বেশি হয়ে গেছে। তাই ঘুম আসছিল না। বাগানের দিকে চেয়ে জানলার সামনে বসে আছি। অমরকণ্টকের পথের অচানকমারের জঙ্গল থেকে লি বাঁশের চারা এনে লাগিয়েছিলাম বাগানের দেওয়াল ঘেঁষে। কয়েক বছরের মধ্যেই গাছগুলো বেড়ে যেন একটি ঝাড়ের আকার ধারণ করেছে। বাতাবি লেবু ও গন্ধরাজ লেবুর ফুলের গন্ধ ভাসছে হাওয়াতে। ব্যাং ডাকছে অবিরাম। রাতে আরও বৃষ্টি হবে। বসন্তি গাছের ডালে ডালে জোনাকির ঝাঁক। ভারি সুন্দর এক আবহ যা শুধু আমার দেশেই সম্ভব। মোহাবিষ্ট হয়ে বসে আছি, যতই বয়স বাড়ছে ততই গাছ-পাতা ও পাখপাখালির প্রতি ভালোবাসাটা গভীরতর হচ্ছে। এলোমেলো হাওয়াতে বৃষ্টির গন্ধ আকুল করছে।

এমন সময়ে হঠাৎই সন্তোষের বাড়ির কথা মনে হল। আরও বৃষ্টি হলে ওর মাটির বাড়ি ধসে যেতে পারে। ভাবনাটা মনে আসতেই আবেশ ছিঁড়ে গেল। গত বছর ওর বাড়ি মেরামতের জন্য কিছু টাকা দিয়েছিলাম। এই বর্ষাতে এবং শীতেও চাটাই-এর ওপরে শোয়। বউকে নিয়ে তাই সোনাঝুরি কাঠের একটি খাট ওকে বানিয়ে দিয়েছিলাম। সোনাঝুরির ফুলের শোভা দেখি আমরা কিন্তু সোনাঝুরি কাঠও যে খুব কাজের জানা ছিল না। সন্তোষের পেটের ব্যথার চিকিৎসার জন্যে যতটুকু পারি করেছিলাম। কিন্তু তাতে তার ব্যামোর নিরসন হয়নি। যতটুকু করেছিলাম তারজন্যে কোনো শ্লাঘা নেই, আমার বরং লজ্জা আছে আরও কিছু করতে পারিনি বলে। সবসময়েই লজ্জিত থাকি। সন্তোষের দায় আমার একার নয় যে, তা আমি জানি। তবুও আমি যতটুকু করতে পারি ততটুকু করি এবং আরও করতে চাই।

চার

একসময়ে ভোর হল। আজ আমার জন্মদিন। মোবাইলে আমার মেয়ে ফোন করে আমাকে বলল, মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস বাবা। স্ত্রী চলে গেছেন প্রায় দু-বছর, তিনি আর কোনোদিন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন না।

একদিন বাড়িতে ডিমের ঝোল রান্না করেছিল বাপি। সন্তোষ সকালে একটু বাগানের কাজ করে খেয়ে চলে যায়। একদিন সুবর্ণরেখাতে গেছিলাম—বাড়ি ফিরছি, পথে সন্তোষের সঙ্গে দেখা। সাইকেলের হ্যাণ্ডেলে পলিথিনের প্যাকেটে একটা রান্না করা ডিম আর একটু ডিমের ঝোল নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে শুনলাম যে, ওর ছোটোছেলে ডিম খেতে খুব ভালোবাসে। তাই সন্তোষ নিজের ভাগের ডিমটি না খেয়ে ওটা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে ছোটোছেলের জন্যে। গরিব বাবা ছেলেকে ডিম কিনে দিতে না পারার দুঃখটা ভোলার জন্য নিজের ভাগের ডিমটি নিয়ে গিয়ে তাকে খাওয়াবে।

সকাল হয়ে গেছে অনেকক্ষণ, অথচ আজ সন্তোষ এল না। কী ব্যাপার! ও তো জানে আজ আমার জন্মদিন। সকালে শিঙাড়া-জিলিপি খাবে, তারপরে দুপুরে মাংস-ভাত। কোনোদিন এত দেরি করে না। আজ কী হল তার?

বাপি চা করেছিল। বিস্কিট দিয়েই চা খেলাম। সন্তোষ না আসতে শিঙারা-জিলিপি আর আনলাম না। বাপি পরোটা আর ঝাল ঝাল আলুর চচ্চড়ি করে দিল আমার জন্যে। বেলা দশটা নাগাদ সন্তোষ এল। একেবারে পাথর।

বললাম, কী রে? কেমন আক্কেল তোর?

—কচুর শাক তুলতে দেরি হয়ে গেল বাবু।

তারপর বলল, ছেলেটা বাড়ির লাগোয়া ডোবাতে ছিপ দিয়ে আপনার জন্মদিনের জন্যে পুঁটিমাছ ধরছিল। আমি গেছি কচুর শাক তুলতে, বউ গেছে গাঙ্গুলি বাড়িতে কাজে, আর ছেলেটা মিরগির অ্যাটাকে জলের মধ্যে পড়ে গেছিল। আমি যখন শাক নিয়ে ফিরলাম, দেখি ডোবার তলায় পড়ে আছে। জল খেয়ে পেট ঢোল।

তারপরই একটা আর্ত চিৎকারের সঙ্গে বলল, আপনাকে পুঁটিমাছ খাওয়াতে পারলাম না বাবু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *