ত্রয়ী উপন্যাস -প্ৰথম পৰ্ব
ত্রয়ী উপন্যাস - দ্বিতীয় পৰ্ব
ত্রয়ী উপন্যাস - তৃতীয় পৰ্ব

দক্ষিণায়নের দিন – ১৬

ষোলো

জীবন বড় মোহিনী, বড় ছলনা তার। দিনের পর দিন নানান সাধ, নানান স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছে। কতবার করে যে হাত বাড়াতে হয়, কতবার করে যে শূন্য হাত ফিরিয়ে নিতে হয়, তার হিশেব রাখা মুশকিল। যখন লোভ দেখায়, যখন সুখের আশ্বাস দিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকে, তখন মনেই হয় না তার পেছনে রয়েছে কোনো ক্রূর বিষাক্ত নিষ্ঠুর ছোবল- যে ছোবলের চেহারা দেখলেই ভয়ে বুকের ভেতরটা হিম হয়ে আসে। তবু সেই ছোবলের মুখোমুখি হতে হয় অনিবার্যভাবে। একেক সময় মনে হয়, এই বুঝি শেষ বিপর্যয়। ছোবলের ঐ চেহারা দেখাটাই বোধহয় শেষ সীমানা। কিন্তু দেখা যায়, সেখানেই শেষ নয়। হিংস্র ছোবল অনিবার্যভাবে নেমে আসে, নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করে। তখন মনে হয়, জীবন বুঝি শেষ হয়ে গেল, বেঁচে উঠবার আর কোনো ভরসা নেই।

কিন্তু জীবনের অশেষ বিস্তার- লোভ, অবিশ্বাস, ক্রূর ছলনা সব এসময় সহ্য হয়ে যায়। সবকিছু একাকার হয়ে মিশে যায় জীবনের সঙ্গে। যে আঘাতের পর বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনে হয়েছিল, টেরই পাওয়া যায় না কখন সেই আঘাতটাও জীবনের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছে।

আসলে মানিয়ে যায় সবকিছু- ঘৃণা, ক্রোধ, অপমান, হতাশা সবকিছু একাকার হয়ে যায় মোহিনী জীবনের হাতে। জাদুকরি যেন। মুহূর্তের ব্যবধানে সামনে এনে দিচ্ছে ক্ষোভ আর বেদনা, আনন্দ আর উল্লাস, হতাশা আর নিঃসঙ্গতা।

একদিন দুদিন হঠাৎ করে নয়। সেই প্রথমে, যখন হাসান প্রথম ঘুসের টাকায় তার জন্যে বেনারসি শাড়ি কিনে এনেছিল, সেদিনই মনে হয়েছিল কী যেন একটা সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে কোথায়। হাসানের ওপর রাগ হয়েছিল। ঝগড়া করতে ইচ্ছে করেছিল।

শাড়িটা হাত দিয়ে ছুঁতে পর্যন্ত ইতস্তত হচ্ছিল। রাতে বিছানায় শুয়ে স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল বুলু। কেঁদে কেঁদে বলেছিল, আমি তো তোমার কাছে শাড়ি গয়না চাইনি, কেন তুমি ঘুস নেবে? আমাদের তো অভাব নেই কোথাও।

হাসান সেদিনই বিরক্ত হয়েছিল। ক্ষুব্ধস্বরে বলেছিল, এরকম ছেলেমানুষির কোনো মানে হয় না বুলু। সামান্য একটা ব্যাপার, এত বড় করে দেখছ কেন? তাছাড়। আমি যদি কিছু বাড়তি পয়সা আনি, সে তো সংসারেরই জন্যে। ভবিষ্যতে যেন দারিদ্র্য কখনো ছুঁতে না পারে, জীবন যেন সুখের হয়, নিশ্চিত হয়, সেজন্যেই তো টাকাপয়সা নিয়ে আসা। ব্যাপারটাকে সহজভাবে না নিতে পারলে চলবে কেন। কে ঘুস নেয় না বলো? হাসান .বোঝাতে চেয়েছে, আমি যদি ঘুস না নিই তো আমার ওপরঅলা নেবে।।

আমার কাছ থেকে ওপরঅলা যদি বাধা পায়, তাহলে কি আর আমার চাকরি করা সম্ভব হবে? বলো, তখন কী করব?

বুলু তর্ক করেনি। তর্ক করতে ইচ্ছে করে না তার— শুধু কেঁদেছিল। স্বামীকে বলেছিল, এ চাকরি ছেড়ে দাও, অন্য কাজ দ্যাখো।

অন্য আর কী করব, বলো? হাসান শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করেছিল। বুলু সেকথার কোনো জবাব দিতে পারেনি, কারণ সেকথার জবাব তার জানা নেই।

সেই শুরু। এক ধাপ থেকে আরেক ধাপ। মৈমনসিং গেল ট্যুরে- সেখানে রাস্তা তৈরি হচ্ছে— কোনো কন্ট্রাক্টরের বিল আটকে গেছে, ইন্সপেকশন রিপোর্ট যেন ভালো হয়। জড়োয়া নেকলেস নিয়ে এল সায়ীদ চৌধুরী। জমজমাট পার্টি হল সন্ধ্যাবেলা। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হল বুলুর নামে, ঢাকা ফিরে এসে। প্রথম জমা হল পাঁচ হাজার টাকা।

কুমিল্লার ট্যুর থেকে ফিরে আসার পরদিন ঐ পাঁচ হাজারের অঙ্কটা এক লাফে পনেরো হাজারে পৌঁছল।

তারপর একের পর এক। হাসানের সময় নেই আর। বসবার ঘরে সর্বক্ষণ দুচারজন মানুষ বসে থাকে। একটু একটু করে হাসান জড়িয়ে পড়তে লাগল। শেষে একদিন শোনা গেল, চাকরি ছেড়ে দেবে, নিজের ফার্ম খুলবে।

বুলু বোঝে না, কী আছে ঐ টাকার নেশার পেছনে। কী দুরন্ত এই লোভ- মানুষটাকে সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। স্বামীর কাজের প্রতিবাদ করতে যায়নি। জানত, প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই। শুধু দূর থেকে তাকিয়ে দেখেছে। মনে-মনে লোভ থেকে, নেশা থেকে সর্বনাশ থেকে হাসানকে টেনে আনতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি।

হাসানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে চেষ্টা করেছে বুলু। মন না-চাইলেও শোনার ভান করেছে! আর থেকে-থেকে মৃদু অনুযোগ করেছে, দরকার নেই সানি, আমরা বেশ আছি— অত পরিশ্রমে কাজ কী, বলো?

হাসান প্রশ্রয়ের হাসি হেসেছে তখন। বুলু যেন কিছুই বোঝে না, যেন ছেলেমানুষ। বোঝাতে চেয়েছে— দ্যাখো না আমার ফার্ম কীরকম দাঁড়িয়ে যায়। কিছু টাকা হাতে এলেই আমি ইন্ডাস্ট্রিতে যাব— জুট-এ, কেমিক্যাল- এ, তারপর সুবিধেমতো মওকা পেলে আরও হেভিয়ার কিছুতে হাত দেব। কোথাকার কে সব আজেবাজে লোক লাল হয়ে যাচ্ছে আর আমার মতো মানুষ কেন পিছিয়ে পড়ে থাকবে বলো? বলো কোনো যুক্তি আছে?

না, কিছু বলার ছিল না বুলুর। শুধু কান্না ছাড়া বুলুর মনের ভেতরের অন্যকিছু ছিল না। যখন সত্যি চাকরিটা হাসান ছাড়ল তখন বুলু একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে গেল। জীবনের কোনো একটা বাঁধন থেকে যেন আলগা হয়ে গেল কোথায়। তখন মনে হয়েছিল, আর সে নিজেকে বোধহয় হাসানের সঙ্গে মেলাতে পারবে না। হাসান নিজের জন্যে আলাদা জগৎ তৈরি করছে। সেখানে বুলুর মিলবার সুযোগ কোথায়?

তাই বুলু সরে গেল। ঠাকুরগাঁও থেকে ফিরে আসবার পর সেই রাত্রে মুখোমুখি দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। তারপর থেকে সে ভাবে না। হাসানের কাজের কথা, সুখের কথা, ভবিষ্যতের কথা- কিছুই ভাবে না সে। সবকিছু সে ভুলতে চেয়েছে তারপর থেকে। নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে আর ধরে নিয়েছে হাসান তার গতানুগতিক অস্তিত্বের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মাত্র। এমন এক অংশ যার মধ্যে নতুন প্রাণস্পন্দনের বৈচিত্র্য কেউ কখনো আশা করে না। তার হাসি-কান্না অথবা সুখ কিংবা কষ্টের সঙ্গে যে অস্তিত্বের কোনো যোগাযোগ নেই। শুধু দৈনন্দিনতার রুটিনের পরস্পরের সঙ্গে দেখা হওয়া, পরস্পরের কুশল নেওয়া, চায়ের টেবিলে বসা, ধোয়া জামাকাপড় বার করে রাখা, রাতের খাওয়ার সময় পাতে দুটি বেশি ভাত তুলে দেওয়া আর রাতে একই বিছানায় শুয়ে দুটি একটি কথার জবাব এবং সেইসঙ্গে শারীরিক কিছু উত্তেজনায় একাকার হওয়া।

আর কিছু নয়। আর কিছু চাওয়ার নেই, পাওয়ার নেই। বুলু ভেবেছে তখন দিনের পর দিন। সেই প্রথম থেকে- ভাবতে ভাবতে একেক দিন তার ভীষণ নিঃসঙ্গতা বোধ হত। বড় ভয় করত।

ভয় আর কাউকে নয়- ভয় নিজেকেই। কী হতে যাচ্ছে- এমন হয়ে যাচ্ছে কেন?

একদা হাসানের জন্যে জীবন পণ করেছিল। মনে হয়েছিল, হাসানের হাতে তার হাত ধরা রয়েছে— গোটা পৃথিবী যদি বিরুদ্ধে যায়, তবু তার ভয় নেই। শুধু হাসান, আর অন্য কোনো বিবেচনা ছিল না তার। আব্বার কথা, রাখীর কথা, সংসারের কথা— কিছুই মনে ছিল না তখন। কিন্তু তারপর? তারপর শেষে কী হল?

বুলু নিজের কাছেই প্রশ্ন করে। নিজেকেই বলে, এমন হবে তাতো আমি চাইনি।

একদিন হাসান জানিয়েছিল, আমরা আর কতদিন এ বাড়িতে থাকব? এখন আমাদের নিজেদের আলাদা বাসায় থাকা উচিত।

এখন নয়, সেই যখন বুলু নিজেকে আলাদা ভাবতে শুরু করেছে সেই তখনকার কথা। স্ত্রীর কুঞ্চিত ভ্রূ দেখে হাসান বিরক্ত হয়েছিল সম্ভবত। বলেছিল, আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো, কিন্তু আমারও নিজের বলে কি কিছু থাকা উচিত নয়?

নিজের কিছু থাকার সঙ্গে এক বাড়িতে বাস না-করার কী সম্পর্ক, বুলু বুঝে উঠতে পারেনি। বলেছিল, কেন, তোমার কি খুব অসুবিধে হচ্ছে কোথাও, কোনোরকম হস্তক্ষেপ করছে কেউ কাজে?

হাসান তখন রেগে উঠেছে। তুমি বুঝবে না, বুঝতে চাইবেও না, চাইলে এরকম হত না।

কীরকম, কীরকম হত? বুলুর বুকের ভেতরে হতাশা ব্যাকুল হয়ে ওঠে বলে, আমি তো তোমার কোনো কাজে বাধা দিই না, বলো কী অসুবিধা হচ্ছে?

অসুবিধা? হাসান তখন ফুঁসে উঠতে চেয়েছে। বলেছে, অসুবিধা তুমি, তুমি আমাকে ঘেন্না করছ, আমি তোমার কাছে অসহ্য। কিন্তু সেকথা বলো না- তোমার আবার অসাধারণ সহ্য করবার ক্ষমতা যে। বুঝতে পারি, তুমি বাধ্য হয়ে সহ্য করছ আমাকে, উপায় থাকলে অন্যকিছু করে ফেলতে। বুলু স্তব্ধ হয়ে শুনেছে। মুখে কিছু বলেনি, কিন্তু তখন বুকের ভেতরে আরেক বুলু মাথা কুটে মরেছে—না, কোনো উপায়ের কথা ভাবিনি আমি, তোমাকে ঘেন্না করার মতো সাহস নেই আমার-সে সাহস আমার কোনোদিন হবে না। তুমি বিশ্বাস করো।

তবু দিনে দিনে, ধাপে ধাপে- অলক্ষ্যে, অগোচরে সরে আসতে হয়েছে। এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে হয়তোবা পরস্পরকে দেখা যায়, কণ্ঠস্বরও শোনা যায়, কিন্তু হাতে হাত রাখা আর যায় না। একের হৃদয়ের ধ্বনি অন্যের হৃদয়ে আর বাজে না।

অথচ বুলু ক্রমাগত মানিয়ে চলতে চেয়েছে। তার মনে কতবার ঘেন্নার কুটিল আবর্ত পাক খেয়ে উঠতে চেয়েছে। কতবার ঈর্ষা ক্রুদ্ধ সাপের মতো ফণা তুলতে চেয়েছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত সে কিছুই করেনি।

কারণ সেই যে ভয়। মনের অগোচরে সে ভয়ানক শূন্যতার ভয় বুকে বাসা বেঁধে আছে। বড় সাহসে বুক বেঁধে সে হাসানের হাতে হাত রেখেছিল। বড়বেশি পবিত্র আর শুভ্র ভেবেছিল হাসানের ভালোবাসাকে। বাবা মা ভাই বোন আত্মীয় পরিজন কোনোকিছু দেখেনি সে। বেপরোয়া মাথা তুলে বড়বেশি বিশ্বাসে স্থিরকণ্ঠে জানিয়েছিল আব্বাকে যে, হাসান তাকে সুখী করবে। আব্বা তাই ভেবেছেন, রাখীও তাই ভেবে এসেছে— কিন্তু এখন? এখন কেমন করে বুঝতে দেবে সবাইকে যে জীবনের সবটাই তার ভুল, সবকিছু তার ব্যর্থ।

তাই সে আব্বাকে জানতে দিতে চায় না। মনি মারা যাওয়ার পর থেকে আব্বা এমনিতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কোনো উৎসাহ নেই তার, কোনো নতুন উদ্যোগ আর দেখা যায় না। সবকিছুতেই তার একটা শিথিল নিরুৎসাহ ভাব। আর সম্ভবত সবকিছুতেই তার বিশ্বাস। বুলু বোঝে, অবিশ্বাস আর কাউকে নয়, অবিশ্বাস শুধু বুলুকে। তাই মাঝে মাঝে বিচিত্ৰ চোখে বুলুর দিকে তাকিয়ে দেখেন। মনে হয়, কিছু যেন জিজ্ঞেস করবেন। আর বুলুকে তখন মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়। সহজ হাসিতে অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতে হয়। সে চেষ্টা করছে সর্বক্ষণ, আব্বা যেন বোঝেন সাধারণ দাম্পত্য-কলহ ছাড়া তার মেয়ের জীবনে অন্য কোনো অশান্তি নেই।

রাখীকে নিয়ে অবশ্যি সে দুর্ভাবনা হয় না। মনে হয় না রাখীর মনে ঐ ধরনের কোনো প্রশ্ন জেগেছে কখনো। সে তো নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। দিনের পর দিন কেমন যেন আলগা হয়ে নিজেরে আলাদা জগতে সরে যাচ্ছে সে। কে জানে হয়তোবা চাকরি করলে মেয়েরা অমনি আলগা হয়ে যায়। বাইরের জগতের সঙ্গে ঘরের জগৎটাকে আর মেলাতে পারে না। রাখীর দিকেও যখন একেক দিন বিচিত্র চোখে আব্বা তাকিয়ে দেখেন, তখন মনে হয়, রাখীর সম্পর্কেও হয়তোবা আব্বার অবিশ্বাস। হ্যাঁ অবিশ্বাস, কিন্তু মুখে কিছু বলেন না।

বলতে চান না। কে জানে হয়তো আব্বা সবকিছু নিয়ে মেলানো কোনো ভবিষ্যতের চেহারা দেখছেন— সে চেহারার কথা তিনি আর কাউকে জানাতে চান না।

অবিশ্বাস বড় সর্বনাশ জিনিস। সুখ হোক, শান্তি হোক, আকাঙ্ক্ষা হোক, স্মৃতি হোক, সবকিছু অবিশ্বাস ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে।

অথচ আব্বার গভীর বিশ্বাস ছিল। বিশ্বাস ছিল নিজের ওপর, সন্তানদের ওপর, ভবিষ্যতের ওপর। আর তাই সবার ওপর নিঃসংশসয়ে নির্ভর করেছিলেন। মনি বড়বেশি স্বাধীনতা পেয়েছিল, তার কোনো আগ্রহে আব্বা বাধা দিতে চাননি। বড়মেয়ের ইচ্ছেতে বাধ সাধেননি কখনো, রাখীর চাওয়া অপূর্ণ থাকেনি। আর আজ?

বুলুর মনে হয়, আব্বা শুধু দূরের দর্শক। নিজের বিশ্বাসের সৌধ ধসে পড়ে যাচ্ছে আর তাই তিনি দেখছেন।

আব্বার সম্মুখে বুলুর দাঁড়াতে সাহস হয় না। যদি আব্বা বলে বসেন, বুলু, তুই কেন এলি আমাকে সান্ত্বনা দিতে, তোর নিজের দিকে চেয়ে দ্যাখ্, কোথায় তোর সেই বিশ্বাস? বড় বিশ্বাস নিয়ে না তুই ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছিলি? মুঠো ভরে ধরেছিলি সাধ আর আনন্দকে? কোথায় তোর সেই সাধ আর আনন্দ?

বুলু সেজন্য দেখে। শুধুই দেখতে হয়— নিজেকে, হাসানকে, কখনো আব্বাকে আর কখনোবা রাখীকে। কিছু বলার নেই তার।

তার নিঃশব্দ চলাফেরা আর তাকিয়ে থাকা দেখে পারভিন একেক দিন বলে, বুবু তুমি আর ঘরের মধ্যে থেকো না— একবার বের হও— বের হয়ে দ্যাখো। বাইরের পৃথিবীর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিও না। আমার মনে হয়, এতে তুমি নিজেকেই মারছ— এতে কোনো লাভ নেই বুবু!

বুলুকে হাসতে হয় জবাবে। পারভিনের অমন আকুল মিনতি শুনে হাসি পায় শুধু। পারভিন দেখাতে চায় বোধহয় কিছু। কিন্তু বাইরের জগতে সবাই তো গিয়েছে। সে নিজে কি নিজের বৃত্তের বাইরে চলে যায়নি? আর মনি? কে জানে, বোধহয় বাইরে কিছু বেশি চলে গিয়েছিল বলে নিজেরও বৃত্তে ফেরার আর পথ খুঁজে পেল না। তার নিজের সম্পর্কে মনে হয়, যে নিজের ঘরের ভেতরে ঢুকতেই পারল না কখনো, সে বাইরে আর যাবে কোথায়?

এতসব কথা পারভিনকে বলা যায় না। শুধু পারভিনকে কেন, কাউকেই বলা যায় না। তাই সে হাসে- হাসে আর নিঃশব্দে নিজেকে সরিয়ে নেয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *